Showing posts with label শহীদ. Show all posts
Showing posts with label শহীদ. Show all posts

16 February 2010

নতুন তথ্য দেননি মোহাইমেন, মামলা যাচ্ছে সিআইডিতে




বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম | তারিখ: ১৭-০২-২০১০


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যা-লয়ের ছাত্র এ এ এম মহিউদ্দিনের হত্যা-কারীদের সনাক্ত বা হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ। রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন গতকাল মঙ্গলবারও নতুন কোনো তথ্য দেননি হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী মোহাইমেনুল ইসলাম। এ কারণে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তরের জন্য গতকাল রেলপুলিশ আবেদন করেছে।

রেলওয়ের পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোহাইমেনের পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষ হলে আগামী শনিবার থেকে সিআইডি এ মামলার তদন্ত শুরু করবে। উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে মামলাটি মঙ্গলবার সিআইডিতে দেওয়ার জন্য আমি আবেদন করেছি।’

গত বৃহস্পতিবার রাতে ষোলশহর রেলস্টেশনে রাজনীতিবিজ্ঞানের ছাত্র মহিউদ্দিন নৃশংসভাবে খুন হন। পরদিন নিহতের বাবা মো. ফজলুল কাদের বাদী হয়ে চট্টগ্রামের রেলওয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী মোহাইমেন। হত্যাকাণ্ডের আগে একই স্থানে সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন তিনি। ঘটনার পর তিনি তিন দিন আত্মগোপনে ছিলেন। গত রোববার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এম আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একদল কর্মকর্তা গতকাল পাঁচলাইশ থানায় গিয়ে মোহাইমেনকে প্রায় এক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে তাঁরা মোহাইমেনকে নিয়ে ষোলশহর স্টেশনের ঘটনাস্থলে যান। সেখানে মোহাইমেন হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর ঘটনার বর্ণনা দেন।

ডিআইজি আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মোহাইমেন কিছু তথ্য এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে আমার সন্দেহ হচ্ছে। তাঁর এড়িয়ে যাওয়া কথাগুলো আমরা বের করার চেষ্টা করছি। আশা করি, পাঁচ দিনের রিমান্ডে সেটা বেরিয়ে আসবে।’

মানববন্ধন আজ: মোহাইমেনের মুক্তি দাবি এবং তাঁর ওপর নির্যাতন-হয়রানি বন্ধের দাবিতে সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের পক্ষ থেকে আজ বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।


খবরের লিংক

14 February 2010

চট্টগ্রামে মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী মোহাইমেন গ্রেপ্তার




বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম | তারিখ: ১৫-০২-২০১০




মোহাইমেন


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এ এ এম মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী মোহাইমেনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে পটিয়ার মইজ্যারটেক এলাকা থেকে তাঁকে আটক করেছিল গোয়েন্দা পুলিশ। ঘটনার পর থেকে মোহাইমেন আত্মগোপনে ছিলেন।

ডিবি কার্যালয়ে মোহাইমেন প্রথম আলোকে জানান, গত বৃহস্পতিবার ষোলশহর রেলস্টেশনে প্রথমে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়। সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচতে তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পেছন পেছন সন্ত্রাসীরা তাঁকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে তাদের একজন বলে, ‘ও না, ও না’। এ কারণে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। তবে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁর মাথা ও হাত জখম হয়। তাঁর মাথায় ছয়টি সেলাই পড়েছে।

হামলাকারীদের চেনেন কি না—জানতে চাইলে মোহাইমেন বলেন, ‘আমি কাউকে চিনি না। তবে আমার মনে হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি না করাটা অপরাধ। এ কারণে আমার ওপর এই হামলা চালানো হতে পারে।’

আত্মগোপনে কেন ছিলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাইমেন বলেন, ‘ভয় ও আতঙ্কে আমি আত্মগোপন করি। কারণ, প্রকাশ্যে থাকলে মহিউদ্দিন খুন হওয়ার ঘটনায় একদিকে পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারে; আরেকদিকে শিবির আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে পারে।’

মোহাইমেন বলেন, ‘ষোলশহর এলাকায় আমিও টিউশনি করি। তবে আমি মহিউদ্দিনকে চিনতাম না। ঘটনার দিন আমি ষোলশহর স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তখন সে আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। ট্রেন আসতে দেরি হওয়ায় আমি আমার ব্যাগটি রেখে পাশের দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম এবং মোবাইল ফোনে আমার এক বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। এ সময় মাফলার দিয়ে মুখ ও গলা পেঁচানো চারজন যুবক আমার ওপর হামলা চালায়। আমি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করি। পরে চার সন্ত্রাসীর পেছনে থাকা অন্য একজন “ও না, ও না” বললে সবাই থেমে যায়।’

মোহাইমেন বলেন, ‘তারপর আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখি, আমার পাশে যে যুবকটি দাঁড়িয়ে ছিল, সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে ওই যুবক মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এরপর কী ঘটেছে, আমি জানি না। শুধু জেনেছি, ওই হতভাগ্য যুবকের নাম মহিউদ্দিন। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।’

মোহাইমেন বলেন, ‘আহত অবস্থায় আমি কোনোমতে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে পাঁচলাইশ থানার কাছে একটি ক্লিনিকে যাই। এর আগে আমার ভাই মোমেনুল ইসলামের মোবাইলে ফোন করে ঘটনা জানাই। তিনিও ক্লিনিকে চলে আসেন। সেখানে মাথায় ছয়টি সেলাই এবং হাতে ব্যান্ডেজ করা হয়। চিকিত্সা শেষে আমি বোনের বাকলিয়ার বাসা চিশতি মনজিলে যাই। সেখানে শনিবার দিন পর্যন্ত ছিলাম। আত্মীয়স্বজনের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় আমাকে শনিবার সন্ধ্যার দিকে পটিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।’

একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে তাঁর ছবি প্রচার সম্পর্কে মোহাইমেন বলেন, ‘এটা ঠিক নয়। কারণ, কোনো টিভি চ্যানেল আমার কাছে আসেনি বা ছবি নেয়নি। আমি আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় কেউ আমার ছবি তুলতে পারেনি।’

নগর পুলিশের কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী মোহাইমেন। তাঁকে পাওয়ায় আমরা এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে অনেক তথ্য পাব বলে আশা করছি।’ তিনি রাত ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এর আগে গতকাল বিকেলে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র মোহাইমেনের সন্ধানে নগরের বাকলিয়ায় তাঁর বোনের বাসায় যায়। সেখানে তাঁকে না পেয়ে তাঁর ভাই মোমেনুল ইসলামকে আনা হয়। এর পরই পুলিশ মোহাইমেনকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ওঠে।
চার ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে মোহাইমেন সবার ছোট। তাঁর বাবা অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম কুতুবি মারা গেছেন। দুই বোনের সঙ্গে তাঁর মা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন।


খবরের লিংক

13 February 2010

চট্টগ্রামে মহিউদ্দিন খুনঃ হত্যায় অংশ নেয় তিনজন, প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন দুজন




একরামুল হক, চট্টগ্রাম | তারিখ: ১৪-০২-২০১০


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞানের ছাত্র এ এ এম মহিউদ্দিন ওরফে মাসুম হত্যাকাণ্ডে তিনজন অংশ নিয়েছিল। ওই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরও দুজন ছাত্র। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে এমনই তথ্য পেয়েছে পুলিশ। পুলিশ এখন ওই প্রত্যক্ষদর্শী দুই ছাত্রকে খুঁজছে।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর স্টেশনে মহিউদ্দিনকে কুপিয়ে ও ইট দিয়ে থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ওই সময় তিনি টিউশনি থেকে ক্যাম্পাসে ফিরতে স্টেশনে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী দুজন হলেন বিবিএ (ব্যবস্থাপনা) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোহাইমেনুল ইসলাম ও আলাওল হলের আবাসিক ছাত্র ফয়সল। মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের পর শাটল ট্রেনে করে ফয়সল ক্যাম্পাসে চলে যান। তিনি ক্যাম্পাসে গিয়ে মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ড এবং হত্যাকারীদের সম্পর্কে হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. বাবুল আকতারকে জানিয়েছিলেন।

সহকারী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার প্রথম আলোকে জানান, ‘মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী মোহাইমেনুল ইসলাম ও ফয়সল। বৃহস্পতিবার রাতেই ফয়সলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘাতক দলের সদস্যসংখ্যা সম্পর্কে আমরা ধারণা পেয়েছি। তিনজন যুবক মুহূর্তের মধ্যে মহিউদ্দিনকে খুন করে পালিয়ে যায়। তবে এর পর থেকে ফয়সলকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’

পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘মোহাইমেনুলকে পাওয়া গেলে মহিউদ্দিন হত্যাকারীদের সম্পর্কে আমরা সুনির্দিষ্ট ধারণা পাব বলে আশা করছি। এএসপি সার্কেলকে দেওয়া ফয়সলের তথ্যও পুলিশের তদন্তে কাজে লাগবে।’

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শহরে টিউশনি শেষে বৃহস্পতিবার রাতে ষোলশহর স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মহিউদ্দিন। সন্ত্রাসীরা স্টেশনসংলগ্ন মসজিদের সামনে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে। ওই সময় মহিউদ্দিনের পাশে ছিলেন মোহাইমেনুল ও ফয়সল। ঘটনার পর থেকে মোহাইমেনুলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর মুঠোফোনটিও বৃহস্পতিবার রাত থেকে বন্ধ।

পাঁচলাইশ থানার পুলিশ স্টেশন থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মহিউদ্দিনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। পুলিশ এ সময় তাঁর কাছে থাকা একটি ব্যাগ উদ্ধার করে। ব্যাগে খাতা, নোটবই, ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত একটি বই ও একটি মোবাইল ফোন অপারেটরের নিবন্ধন ফরম পাওয়া যায়।

বই, খাতা ও নোটবইয়ে মোইমেনুলের নাম ছিল। ফলে প্রথমে পুলিশ লাশ মোহাইমেনুলের বলে ধারণা করেছিল। পরে অবশ্য পুলিশ নিশ্চিত হয়, ব্যাগটির মালিক মোহাইমেনুল এবং নিহত যুবক হচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞানের এমএর ছাত্র মহিউদ্দিন।

মোহাইমেনুলের ব্যাগে পাওয়া মোবাইল ফোনের নিবন্ধন ফরমটি বিবিএ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আরেক ছাত্রীর নামে। ওই ছাত্রী লাশ শনাক্ত করতে বৃহস্পতিবার রাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেলের জরুরি বিভাগে ছুটে যান। মোহাইমেনুল খুন হয়েছেন মনে করে তিনি হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

মোহাইমেনুলের ওই সহপাঠিনী গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোহাইমেনুলকে আমি দুই বছর ধরে চিনি। তাঁর বাড়ি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। একটি দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমি বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেলের জরুরি বিভাগে ছুটে যাই। কিন্তু লাশটি মোহাইমেনুলের ছিল না বলে নিশ্চিত হয়ে আমি বাসায় চলে যাই।’

এক প্রশ্নের জবাবে ওই ছাত্রী জানান, ‘মোহাইমেনুল কোথায় আছেন, আমি জানি না। তবে শুক্রবার দুপুরে একটি চ্যানেলে মাথায় ব্যান্ডেজ দেওয়া অবস্থায় তাঁর ছবি দেখানো হয়েছে।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে ওই ছাত্রী জানান, ছাত্রশিবির দূরের কথা, মোহাইমেনুল কোনো রাজনীতি করতেন না। মহিউদ্দিন ও মোহাইমেনুলকে রাজনীতির সঙ্গে এভাবে জড়ানো দুঃখজনক।

খুনিদের ধরতে বিশেষ দল: মহিউদ্দিনের হত্যাকারীদের ধরতে গতকাল রাতে হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার বাবুল আকতারকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) বনজ কুমার মজুমদার জানান, মৌখিকভাবে এই চৌকস দলটি গঠন করা হয়েছে। এর অন্য সদস্যরা হলেন, রেলওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফ, কোতোয়ালি থানার মহসিন ও পাঁচলাইশ থানার আজিজ।


খবরের লিংক

ফারুকের পরিবারের জন্য অটোরিকশা

জয়পুরহাট প্রতিনিধি | তারিখ: ১৩-০২-২০১০


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের ক্যাডারদের হাতে নিহত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হোসেনের পরিবারকে একটি নতুন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দিয়েছে জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগ।

জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ গতকাল শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার খোর্দ্দ সগুনা গ্রামে ফারুকের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা ফজলুর রহমানের হাতে এই অটোরিকশা তুলে দেন। এ সময় তিনি ব্যক্তিগতভাবে ফজলুর রহমানের হাতে ১০ হাজার টাকাও দেন।

জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা গতকাল দুপুরে ফারুকের বাড়িতে গেলে তাঁর বাবা-মা ও বোনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ফারুকের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে মোনাজাত করেন।

ঋণ মওকুফের আহ্বান: ফারুক হোসেনের পরিবারের নেওয়া ৬৭ হাজার টাকা শিক্ষাঋণ মওকুফের জন্য তাঁর মা হাসনা বেগম গত বৃহস্পতিবার গ্রামীণ ব্যাংকের জয়পুরহাটের দোগাছী বাজার শাখায় আবেদন করেন। এই আবেদন নওগাঁ আঞ্চলিক শাখার প্রধান কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।


খবরের লিংক

12 February 2010

শোকের সাগরে ভেসে গেল সুখ-স্বপ্ন




একরামুল হক ও মাইনউদ্দিন হাসান, চকরিয়া (কক্সবাজার) থেকে | তারিখ: ১৩-০২-২০১০



চার সন্তানের পড়াশোনার খরচের জোগান দিতে গিয়ে রাজারবিল গ্রামের ছোট মাটির ভিটার জরাজীর্ণ ঘরটি সংস্কার পর্যন্ত করতে পারেননি ফজলুল কাদের। ২০০২ সালে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন সংস্থার (বিএডিসি) ভান্ডাররক্ষকের চাকরি হারান তিনি। অন্ধকার নেমে আসে সংসারে। তিন হাজার টাকা বেতনে বেসরকারি পরিবহন কোম্পানির টিকিট বিক্রির চাকরি নেন। তিন লাখ টাকা ঋণ করতে হয়েছে সন্তানদের লেখাপড়া আর সংসারের খরচ জোগাতে।


মহিউদ্দিনের শোকার্ত মা-বাবাঃ ছবি: প্রথম আলো


এসব এখন বারবার মনে আসছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত ছাত্র এ এ এম মহিউদ্দিনের বাবার। রাজনীতি বিজ্ঞানের এমএর ছাত্র ছিলেন মহিউদ্দিন। বড় ছেলেকে হারিয়ে কেবল বিলাপ করছিলেন মা হাছিনা আক্তার। ‘২০০২ সালের ১ নভেম্বর মতিউর রহমান নিজামী (তখনকার কৃষিমন্ত্রী) আমার স্বামীসহ এক হাজার ১০০ লোককে চাকরিচ্যুত করেন। হঠাত্ চাকরি চলে যাওয়ায় সংসারে অভাব-অনটন দেখা দেয়। বাধ্য হয়ে পাঁচ বছর পরিবহন কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। আমার মানিকও (মহিউদ্দিন) এসএসসি পাস করার পর টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাত।’

আবার বিলাপ শুরু করেন মা, ‘ও আঁর মানিক, তুই হোডে গিলিগই...। ও আল্লাহ আঁর পোয়ার কী দোষ গজ্জিলদে। কিয়েরলাই আঁর পোয়ারে মারি ফালাইয়েদে...।’ প্রতিবেশীরাও চোখের পানি আটকে রাখতে পারছিল না। গুমোট হয়ে উঠেছিল কক্সবাজারের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর রাজারবিল গ্রামের নোয়াপাড়ার পরিবেশ।

মা-বাবার বড় ছেলে হিসেবে সংসারের হাল ধরার কথা তো মহিউদ্দিনের। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে ভালো একটা চাকরি, ছোট ভাইবোনদের গড়ে তোলার—সব স্বপ্ন নিয়ে গতকাল বিকেলে মহিউদ্দিন আলো-বাতাসের বাইরে চলে গেলেন। তাঁর দাফন যেন একটি পরিবারের আশা-আকাঙ্ক্ষার দাফন।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম থেকে ছেলের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন বাবা ফজলুল কাদের। মহিউদ্দিনকে একনজর দেখতে গ্রাম ও আশপাশের এলাকার কয়েক হাজার নারী-পুরুষ বাড়ির সামনে, আঙিনায় অপেক্ষা করছিল। বাড়ির উঠোনে তাঁর লাশ নামাতেই ওঠে কান্নার রোল। নিজেদের সংযত রাখতে পারেননি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে আসা পুলিশ সদস্যরাও।

আদরের সন্তানের নিথর দেহের পাশে বসে বিলাপ করছিলেন ফজলুল কাদের, ‘আমি আর আমার সন্তানেরা জীবনে কারোর ক্ষতি করিনি। আমি না খেয়ে, না পরে ছেলেদের মানুষ করার চেষ্টা করেছি। হে আল্লাহ, এই কোন কঠিন পরীক্ষায় আমি পড়েছি। এর কি কোনো বিচার হবে না?’

গতকাল বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় মহিউদ্দিনকে। এর আগে সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মহিউদ্দিনের লাশের ময়নাতদন্ত হয়। দুপুরে পুলিশ পাহারায় বাবা ও ভাই আবদুল্লাহ আল মামুনসহ আত্মীয়রা লাশ গ্রহণ করেন।

মহিউদ্দিনের মামা মো. আলমগীর জানান, ‘ভাগ্নেটাকে নিয়ে বোন ও দুলাভাইয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। সন্ত্রাসীরা কেন তাঁকে মেরেছে, জানি না। তাঁর লাশ নিয়ে রাজনীতিও হচ্ছে।’ তিনি বলেন, মহিউদ্দিনের বাবা চাকরি হারানোর পর পরিবারের সবাই চারদলীয় জোট সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। আওয়ামী লীগের প্রতি তাঁদের সমর্থন ছিল। মহিউদ্দিন সক্রিয় রাজনীতি করতো না, তবে তিনি ছাত্রলীগের সমর্থক ছিলেন। ওর বদ্ধমূল ধারণা ছিল, জামায়াত আবার ক্ষমতায় গেলে বাবা চাকরি ফিরে পাবেন না।’

পারিবারিক সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে এসএসসি পাসের পর মহিউদ্দিন চট্টগ্রাম নৌবাহিনী কলেজে ভর্তি হন। কলেজ জীবনে বেশির ভাগ সময় থেকেছেন চট্টগ্রাম শহরে ছোট খালার বাসায়। তখন থেকে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে টিউশনি করতেন মহিউদ্দিন।

২০০২ সালে বাবা চাকরি হারালে মহিউদ্দিনের ভাগ্যে ভালো শার্ট-প্যান্ট কম জুটেছে। ২০০৯ সালের ১৬ আগস্ট চাকরি ফিরে পান ফজলুল কাদের। পরিবারেও ধীরে ধীরে সচ্ছলতা ফিরে আসছিল।

কাঁদতে কাঁদতে মা হাছিনা আক্তার জানান, ‘২৯ জানুয়ারি মানিকের (মহিউদ্দিন) সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়। আমার বোনের দেওয়া কাপড় দিয়ে শার্ট বানিয়ে ওই দিন তাঁকে দিয়েছিলাম।’

খালাতো ভাই সাহাবউদ্দিন নিহত মহিউদ্দিনের জরাজীর্ণ ঘর দেখিয়ে বলেন, ‘আমার খালার ঘরটি আংশিক টিনের, আংশিক শণের। ভেতরে মাটির দেয়াল।’

মহিউদ্দিনের অন্য দুই ভাইয়ের মধ্যে আবদুল্লাহ আল মামুন আইন বিষয়ে (সম্মান) পড়ছেন। ছোট ভাই আবদুল্লাহ আল ছগীর এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন। একমাত্র বোন ফৌজিয়া ফারিয়া অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী।
ছগীর গতকাল সারা দিন কেঁদেছেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘আমার ভাইয়ার শত্রু থাকতে পারে, এটা বিশ্বাস হয় না। কেউ পরিকল্পিতভাবে ভাইয়াকে খুন করেছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহিউদ্দিনের এক নিকটাত্মীয় বলেন, ‘আলাওল হল ছেড়ে দিতে শিবির ক্যাডাররা তাঁকে চাপ দিয়েছিলেন বলে শুনেছি। শিবিরের ওই ক্যাডারদের পুলিশ গ্রেপ্তার করলে তাঁর হত্যার রহস্য বেরিয়ে আসবে।’

মহিউদ্দিনের আত্মীয়দের অভিযোগ, তাঁর হত্যাকাণ্ডে ছাত্রশিবির জড়িত। আলাওল হলে ওঠার পর থেকে শিবির ক্যাডাররা তাঁকে হুমকি দিচ্ছিলেন। ঘাতকেরা ক্যাম্পাসের পরিবর্তে ষোলশহর স্টেশনকে বেছে নেয় এবং পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করে। খুনিরা অন্ধকারে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করেন, যাতে কোনো সাক্ষী না থাকে।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার জেড এ মোরশেদ গত বুধবার ষোলশহরে মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শিবির জড়িত থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন।

দাফন: গতকাল বিকেল পারিবারিক কবরস্থানে মহিউদ্দিনের লাশ দাফনের সময় সংরক্ষিত মহিলা আসনের আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাংসদ সাফিয়া খাতুন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, পৌরসভার মেয়র জাফর আলম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।


খবরের লিংক

চট্টগ্রামে শিবিরের মিছিলে লাঠিপেটা পুলিশের

চট্টগ্রাম, ফেব্র"য়ারি ১২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- নিহত শিক্ষার্থী এএএম মহিউদ্দিনকে নিজেদের কর্মী দাবি করে লাশ চেয়ে শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীতে বের করা ছাত্র শিবিরের মিছিলে লাঠিপেটা করে সংগঠনটির অর্ধশত কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এদিকে শিবিরের দাবি নাকচ করে মহিউদ্দিনের বাবা বলেছেন, তার পরিবার আওয়ামী লীগের সমর্থক।

বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর ষোলশহর রেল স্টেশনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মহিউদ্দিনকে।

মহিউদ্দিনের লাশ চেয়ে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াতে ইসলামী নেতা শাহজাহান চৌধুরীর নেতৃত্বে ৫ শতাধিক শিবির নেতা-কর্মী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা মর্গের সামনের রাস্তায় সমাবেশ করে।

এরপর শিবিরকর্মীরা মিছিল নিয়ে এগোলে জামাল খান মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। ওই সময় শিবিরকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছুড়লে পুলিশ পাল্টা লাঠিপেটা করে ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।

প্রায় ১৫-২০ মিনিট দুই পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। পুলিশি ধাওয়ায় শিবিরকর্মীরা জামাল খান ও আশকার দীঘির পাড়ের বিভিন্ন ভবনে ঢুকলে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়।

পুলিশ ৫০ জন শিবিরকর্মীকে আটক করেছে বলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতায়ালি অঞ্চল) কাজী হেলালউদ্দিন সাংবাদিকদের জানান।

সংঘর্ষের সময় কাজির দেউরী ও জামাল খান এলাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তবে দুপুর সোয়া ১টা থেকে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক।

এদিকে জামায়াত-শিবিরের লাশ চাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রলীগ নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

বেলা সাড়ে ১১টার সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আনিসুজ্জামান ইমনের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীর মিছিলটি নগরীর জিইসি মোড় থেকে শুরু হয়ে ২ নম্বর গেইট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।

ছাত্রলীগ মহিউদ্দিনকে তাদের সমর্থক বলে দাবি করে আসছে।

শিবিরের দাবি নাকচ

ছাত্র শিবির মহিউদ্দিনকে তাদের কর্মী দাবি করলেও মহিউদ্দিনের বাবা মো. ফজলুল কাদের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার পরিবার আওয়ামী লীগের সমর্থক। তাদের কেউ জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন।

"আমার ছেলে শিবির করতো না। আমরা আওয়ামী লীগ সমর্থক। আমার ছেলের লাশ নিয়ে কেউ রাজনৈতিক ফায়দা লুটুক, এটা আমি চাই না", বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন তিনি।

ফজলুল জানান, তিনি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে স্টোর কিপার হিসেবে চাকরি করেন।

"২০০২ সালে জোট সরকারের আমলে আমাকে কোনো কারণ ছাড়াই আমায় বরখাস্ত করা হয়। পরে হাইকোর্টে মামলা করে রায় আমার পক্ষে এলে ৬ মাস আগে পুনরায় যোগদান করি।"

মহিউদ্দিনের ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুনও বলেন, তার ভাই শিবির করতেন না।

তিনি জানান, তাদের তিন ভাই এক বোনের মধ্যে মহিউদ্দিন সবার বড়।

মহিউদ্দিনের হল আলাওল হলের প্রাধ্যক্ষ হোসাইন কবিরও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দরিদ্র পরিবারের ছেলে মহিউদ্দিন ছিলো সাদাসিধে। শিবিরের রাজনীতিতে তাকে যুক্ত হতে দেখা যায়নি।

মামলা ও হলে তল্লাশি

মহিউদ্দিন হত্যায় তার বাবা ফজলুল কাদের বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে রেলওয়ে (জিআরপি) থানায় একটি মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাতনামা ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।

শুক্রবার দুপুর ১২টায় চমেক হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে মহিউদ্দিনের লাশ তার পরিবার গ্রামের বড়িতে নিয়ে গেছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে পুলিশ তল্লাশি চালালেও কোনো অস্ত্র উদ্ধার কিংবা কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে পুলিশ জানায়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এএডি/এমসি/এমআই/১৩৪৪ ঘ.


খবরের লিংক

মহিউদ্দিনের লাশ নিতে চমেকের সামনে বিপুলসংখ্যক জামায়াত-শিবির কর্মীর ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম | তারিখ: ১২-০২-২০১০


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত ছাত্র মহিউদ্দিনের লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য নগরের প্রবর্তক মোড়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়েছেন বিপুলসংখ্যক জামায়াত-শিবির কর্মী। এ সময় তারা পুলিশের কাছে লাশ দাবি করে। কিন্তু পুলিশ তাদের লাশ না দেওয়ায় তারা সেখানেই গায়েবানা জানাজা আদায় করে। এরপর সেখান থেকে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ষোলশহর রেলস্টেশনে এ এ এম মহিউদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই সময় তিনি স্টেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
মহিউদ্দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র। তাঁর বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায়। তিনি আলাওল হলের আবাসিক ছাত্র।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চার-পাঁচজন মুখোশধারী সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং পাথর দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ থেঁতলে তাঁকে খুন করে। তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সন্ত্রাসীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।


খবরের লিংক

11 February 2010

এবার চট্টগ্রামে ছাত্র হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম | তারিখ: ১২-০২-২০১০



নিহত এ এ এম মহিউদ্দিন। চটগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের এমএর ছাত্র



ঢাকা ও রাজশাহীর পর এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ষোলশহর রেলস্টেশনে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই সময় তিনি স্টেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

নিহত ছাত্রের নাম এ এ এম মহিউদ্দিন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের এমএর ছাত্র। তাঁর বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায়। তিনি আলাওল হলের আবাসিক ছাত্র।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চার-পাঁচজন মুখোশধারী সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং পাথর দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ থেঁতলে তাঁকে খুন করে। তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সন্ত্রাসীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।

ষোলশহর রেলস্টেশনের মাস্টার জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘রাত সাড়ে আটটার দিকে কিছু লোক ছোটাছুটি করছিল। মুহূর্তেই দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেখানে আমি রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখি।’
পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরজু বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মহিউদ্দিনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিত্সকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার জেড এ মোরশেদ গতরাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মরদেহটি মহিউদ্দিনের বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলের ৩৩৮ নম্বর রুমের আবাসিক ছাত্র। টিউশনি করতে তিনি শহরে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে শিবির কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে।’

পুলিশ জানায়, মহিউদ্দিনের সঙ্গে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। তা ছাড়া তাঁর ব্যাগে একটি বই ও কিছু খাতাপত্র পাওয়া গেছে।

পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, রাতে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নেওয়ার আগে মহিউদ্দিনের রক্তভেজা প্যান্টের পকেট থেকে একটি চিঠি উদ্ধার করা হয়েছে। চিঠিতে মহাজোট সরকারের কাছে তাঁর প্রত্যাশার কথা উল্লেখ ছিল।

চিঠিতে লেখা ছিল, ‘বহু প্রতীক্ষার নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন গত ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের পূর্বে যথারীতি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। বিএনপির দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও স্লোগানের চেয়ে আওয়ামী লীগের দিনবদলের সনদ বা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সনদকে মানুষ বেশি সমর্থন দিয়েছে।’

মহিউদ্দিনের খালু জয়নাল আবেদীন ও তাঁর সহপাঠী ফজলুল হাসান রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃতদেহ শনাক্ত করেন। এ সময় মহিউদ্দিনের অন্য আত্মীয়স্বজনও কান্নায় ভেঙে পড়েন। জয়নাল আবেদীন বলেন, মহিউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলের আবাসিক ছাত্র। পরিবারের আর্থিক অনটনের কারণে সম্প্রতি ষোলশহরে একটি টিউশনি নিয়েছিল সে। রাতে টিউশনি শেষে ক্যাম্পাসে ফিরতে শাটল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিল।

আলাওল হলের প্রাধ্যক্ষ মো. মাহমুদ মোর্শেদ গতকাল রাত ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ৩৩৮ নম্বর কক্ষ মহিউদ্দিনের নামে বরাদ্দ। তবে ওই সময় কক্ষ বন্ধ ছিল বলে প্রাধ্যক্ষ জানান।

তাঁর খালাতো ভাই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র মতিউর রহমান বলেন, মহিউদ্দিন সক্রিয় রাজনীতি না করলেও ছাত্রলীগের সমর্থক ছিল। মহিউদ্দিনের বাবা মো. ফজলুল কাদের বান্দরবানের লামায় কৃষি বিভাগে কর্মরত। তিনি গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত একটা) চট্টগ্রামে আসেননি। এ ঘটনায় মামলাও হয়নি।

ক্যাম্পাসে শিবিরের মিছিল: নিহত ছাত্রের নাম মোহাইমেনুল ইসলাম দাবি করে গতকাল রাতে শিবির বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেছে। তাঁরা দাবি করে, মোহাইমেনুল তাদের সংগঠনের কর্মী। গতকাল রাতে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে তল্লাশি শুরু করে। ইউএনবি জানায়, ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ।


খবরের লিংক

10 February 2010

দারিদ্র্য দমাতে পারেনি, বর্বরতার কাছে হার


আসাদুল ইসলাম, জয়পুরহাট | তারিখ: ১০-০২-২০১০


বাড়িজুড়ে দারিদ্র্যের ছাপ। ঘর বলতে একটি মাটির ছাপরা। মাটির ঘরের সঙ্গে লাগোয়া বাঁশের বেড়ায় তৈরি একটা ছোট্ট কুঠিঘর। সেখানে একটা কাঠের চৌকি। বাড়িতে এলে ফারুক এখানে থাকতেন।
গতকাল জয়পুরহাট জেলার সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের খোর্দ্দ সগুনা গ্রামে ফারুকের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বাড়ির পাশে তাঁর কবর খোঁড়া হচ্ছে। নির্বাক হয়ে বসে আছেন বাবা ফজলুর রহমান। বিলাপ করছেন মা হাছনা বানু আর দুই বোন।

বাবা ফজলুর রহমানের একমাত্র ছেলে ফারুক হোসেন। তাঁর লেখাপড়ার জন্য দেড় বিঘা জমি বন্ধক রেখেছেন বাবা। আর এক বিঘায় আবাদ করে কোনো রকমে সংসার চালান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ তো চলে না। তাই তিন বছর আগে সদর উপজেলার দোগাছী গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৬৭ হাজার টাকা শিক্ষাঋণ নিয়েছেন বাবা। তিন মাস পর পর গ্রামীণ ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে তুলে ছেলেকে দিতেন। ২ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার টাকা তোলা হয়। সেই টাকা নিয়ে ফারুক বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। হয়তো আবার আসতেন তিন মাস পর। কিন্তু ফারুক ফিরে এসেছেন গতকাল। লাশ হয়ে।




ছেলে ফারুক ছিল তাঁর আশার ধন। সেই ছেলের লাশ কাঁধে নিয়ে কবরে নামাতে হবে বাবা ফজলুর রহমানকে। এই ভার বাবা সইবেন কী করেঃ ছবি: প্রথম আলো


গত সোমবার সন্ধ্যায় চাচি আলতা বানুর মোবাইলে ফোন করে ফারুক কথা বলেন মা হাছনা বানুর সঙ্গে। এটাই ছিল ফারুকের সঙ্গে মায়ের শেষ যোগাযোগ। হাছনা বানু জানান, ‘ফোনে ছেলে বলেছে, মা একটু ধৈর্য ধর। বাবাকে বোঝাও, আর একটা বছর কষ্ট কর। পড়া শেষ হলে একটা চাকরি যেভাবেই হোক জোগাড় করতে পারলে সংসার নিয়ে আর তোমাদের চিন্তা করতে হবে না।’

প্রতিবেশী দাদা আবদুস ছাত্তার বলেন, ‘বাড়িতে এলে ফারুক সবারই খোঁজখবর নিত। খুব ভদ্র ছিল। গরিব ঘরের হলেও সে গ্রামের গর্ব ছিল।’ তিনি বলেন, ‘ফজলুর আর্থিক অবস্থা খুবই করুণ। অনেক সময় খেয়ে না-খেয়ে দিন পার করে। ছেলেটাকে নিয়েই ছিল তার যত আশা।’

বাবা ফজলুর রহমান জানান, তাঁরা ভোটের সময় নৌকায় ভোট দিতেন। ছেলেকেও নৌকায় ভোট দিতে বলতেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ফারুক ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, তা তিনি জানতেন না।
গতকাল দুপুরে ফারুকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশীরা সব ছুটে এসছে। সবার চোখে পানি। দরিদ্র কৃষক ফজলুর রহমানের তিন সন্তান। বড় মেয়ে আছমা বেগমের বিয়ে হয়েছে। তারপর ছেলে ফারুক। তাঁর ছোট বোন ফারজানা বেগম। তাঁরও বিয়ে হয়েছে।

ফারজানা ভাইয়ের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। মাঝে মাঝে চিত্কার দিয়ে বলছেন, ‘ও ভাই, তুমি কোথায়? আমাদের এমন কেন হলো?’

আর মা! ‘হামার বাবা কোটে হারে গেলরে। কোন্ দুষমন মোর বাবাক মারি ফেলে দিল। মোর বাবা গত মঙ্গলবার ট্যাকা লিয়ে গেল। আর কয়ে গেল আর এক বছর পড়লেই পড়া শেষ করে চাকরি করে গ্রামীণ ব্যাংকের লোন শোধ করমো। বাবার মুককোনা একনিই হামাক এ্যানা দেখাও।’ সান্ত্বনা দিতে গিয়ে ফারুকের মায়ের বিলাপ শুনে প্রতিবেশীরাও কান্নায় ভেঙে পড়ছে।

ফারুকের সহপাঠী গ্রামের সুফল হোসেন জানান, ফারুক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে ভর্তি হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ২০০২ সালে ছোট মাঝিপাড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করে। তারপর জয়পুরহাট তালীমুল ইসলাম স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০০৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে সম্মান (অনার্স) শ্রেণীতে ভর্তি হন। ক্লাস ওয়ান থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ফারুক কখনো দ্বিতীয় হননি।

সুফল বলেন, ‘সকাল নয়টার দিকে টেলিভিশনে ফারুকের মৃত্যুর খবর পাই। তারপর বাড়ি গিয়ে ফারুকের মাকে বলি, চাচি ফারুকের কোনো খবর পেয়েছেন? তখন পর্যন্ত তাঁরা কিছুই জানতে পারেননি। বেলা ১১টার দিকে তাঁরা মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হন।’

ছোট মাঝিপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক হযরত আলী জানান, ‘এ রকম একটি মেধাবী ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে খুন হবে, এটা ভাবা যায় না। দরিদ্র এই পরিবারটির এখন কী হবে, ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।’


খবরের লিংক