টিপু সুলতান ও একরামুল হক | তারিখ: ১৪-১২-২০১০
দশ ট্রাক অস্ত্র চালান এ দেশে আনা এবং তা খালাস পর্যন্ত পুরোটাই জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে হয়েছে। অধিকতর তদন্তে এর প্রমাণ পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি।
অস্ত্রের চালান আনার বিষয়টি তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী আগে থেকে জানতেন বলে তদন্তে কিছু সাক্ষ্য ও তথ্য পাওয়া গেছে। তাই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে এমন ইঙ্গিত দিয়ে সিআইডি আদালতে প্রতিবেদনও দাখিল করেছে। সিআইডির একটি সূত্র প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছে।
ইতিমধ্যে জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে এ মামলায় দুই দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রকৃত সত্য গোপন এবং দায়সারা তদন্তের মাধ্যমে মূল দোষীদের রক্ষার চেষ্টা করেছেন।
এ অবস্থায় অস্ত্রের চালানের সঙ্গে ‘হাওয়া ভবনের’ কারও কারও সম্পৃক্ততা ছিল বলে সন্দেহ সরকারি মহলের। প্রসঙ্গত, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে বেশ প্রভাব ছিল হাওয়া ভবনের। চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে দেওয়া এ মামলার অন্যতম আসামি হাফিজুর রহমানের জবানবন্দিতে হাওয়া ভবনের প্রসঙ্গটি এসেছে। হাফিজ বলেন, অস্ত্র চালানটি এ দেশে আনার মাস খানেক আগে উলফার সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়া ঢাকার বনানীতে অবস্থিত হাওয়া ভবনে যান। হাফিজকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে পরেশ বড়ুয়া এনএসআইয়ের পরিচালক (নিরাপত্তা) উইং কমান্ডার (অব.) সাহাবউদ্দিন আহমদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা বলে হাওয়া ভবনের ভেতরে যান। পরেশ বড়ুয়া বলেছিলেন, অস্ত্র চালান যাতে নির্বিঘ্নে আসতে পারে, সে জন্য সাহাবউদ্দিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে; তিনি হাওয়া ভবনের লোক। দুই ঘণ্টা পর হাওয়া ভবন থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে পরেশ বড়ুয়া হাফিজকে জানান, সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে।
জানা গেছে, হাফিজের এই জবানবন্দির পর হাওয়া ভবনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়। তবে এখন পর্যন্ত তদন্তে হাওয়া ভবন বা ওই ভবনের প্রধান ব্যক্তি তারেক রহমানের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আমলযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। অবশ্য হাফিজও প্রথম দফায় গত বছরের ২ মার্চ দেওয়া জবানবন্দিতে পরেশ বড়ুয়ার হাওয়া ভবনে যাওয়া-সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেননি। হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে দুই দফায় জিজ্ঞাসাবাদেও এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য তদন্তকারীরা পাননি বলে জানা গেছে। তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কেউ কেউ মনে করেন, ভালোভাবে তদন্ত হলে তারেক রহমানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলতে পারে। তাই এখন এ বিষয়টি তদন্তে গুরুত্ব পাচ্ছে।
সাবেক অতিরিক্ত শিল্পসচিবও সন্দেহভাজন: শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে সংরক্ষিত এলাকা সিইউএফএল জেটিতে অস্ত্র খালাস হয় ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে। তখনকার শিল্পমন্ত্রী নিজামীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিন ওই রাতে সিইউএফএলের গেস্টহাউসে ছিলেন। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে বলে সিআইডি সূত্র জানিয়েছে।
এ মামলায় মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) কামালউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্র খালাসের রাতে সেখানকার গেস্টহাউসে অবস্থান করা সম্পর্কে তখন নুরুল আমিন তদন্তকারীদের বলেছিলেন, তিনি কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। যাত্রাবিরতির অংশ হিসেবে তিনি ওই রাতে সিইউএফএলের গেস্টহাউসে ওঠেন। পিপির মতে, চট্টগ্রাম শহর বাদ দিয়ে এত দূরে কর্ণফুলী নদীর ওপারে যাত্রাবিরতি কোনো হিসাবে মেলে না।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের তখনকার সচিব শোয়েব আহমেদ আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, নুরুল আমিন কবে, কখন সেখানে গেছেন, চট্টগ্রাম সফর কর্মসূচি কীভাবে করলেন, তা তিনি জানতেন না। বিষয়টি তিনি শিল্পমন্ত্রী নিজামীকে বলেছিলেন। তখন নিজামী বলেছিলেন, ‘আপনি তো সরকারি কাজে বেশ কিছুদিন বিদেশে ছিলেন, এ সময় নুরুল আমিন সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। সেভাবেই হয়তো তিনি এ ট্যুরে গিয়ে থাকবেন।’ শোয়েব আহমেদ বলেন, নুরুল আমিন ছিলেন নিজামীর অত্যন্ত আস্থাভাজন।
নিজামী আগেই জানতেন!: পিপি কামালউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সিইউএফএলের দুই কর্মকর্তা, সাবেক শিল্পসচিব ও বিসিআইসির চেয়ারম্যানের জবানবন্দি পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, নিজামী ও নুুরুল আমিন অস্ত্রের চালান আসার বিষয়টি আগে থেকে জানতেন। তাই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ধারণা করা হচ্ছে, সিইউএফএলের জেটিঘাটে অস্ত্র খালাস নির্বিঘ্ন করতে নিজামীর আস্থাভাজন নুুরুল আমিনকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল। তা ছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে সংরক্ষিত এ এলাকায় অস্ত্র খালাসের ঘটনা ধরা পড়ার পরও এ ব্যাপারে বিভাগীয় তদন্ত বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে দেননি নিজামী। যা ইতিমধ্যে সাবেক শিল্পসচিব ও বিসিআইসির চেয়ারম্যান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন। তাঁরা বলেন, তখন অস্ত্র আটকের ঘটনায় শিল্প মন্ত্রণালয়কে জড়িয়ে খবর প্রকাশের পরও কোনো ব্যাখ্যা বা ব্যবস্থা নিতে দেননি শিল্পমন্ত্রী নিজামী। বরং তিনি বলেছিলেন, এ বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ অবগত আছে। সরকার সব ব্যবস্থা নিচ্ছে।
গত ৭ অক্টোবর শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা শোয়েব আহমেদ চট্টগ্রামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, অবৈধ সমরাস্ত্রের বিশাল চালানটি ধরা পড়ার দুই দিন পর (৪ এপ্রিল, ২০০৪) শিল্পমন্ত্রী নিজামীকে জানাতে গেলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এ বিষয়ে সবকিছু অবগত আছি।’
শোয়েব আহমেদ আরও বলেন, অস্ত্র আটকের পর যে তিন মাস তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ে ছিলেন, তাতে তাঁর মনে হয়েছে, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। মন্ত্রীর কথাবার্তা এবং অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিনের রহস্যজনক আচরণ দেখে মনে হয়েছে, পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
বাবর ও ওমর ফারুকের তৎপরতা: মহানগর আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) কামালউদ্দিন আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, বাবর ও ওমর ফারুক ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার মূল হোতাদের বাঁচানোর জন্য সক্রিয় ছিলেন। তদন্তে এ ব্যাপারে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।
২০০৪ সালের এই অস্ত্র আটকের ঘটনায় গঠিত সরকারি তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব ওমর ফারুক। কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন এনএসআইয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এনামুর রহমান চৌধুরী, ডিজিএফআইয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শামসুল ইসলাম ও সিআইডির ডিআইজি ফররুখ আহাম্মদ।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর এনামুর রহমান চৌধুরী ও ২০ সেপ্টেম্বর ফররুখ আহাম্মদ আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, জোট সরকার আমলে তদন্তে এই অবৈধ অস্ত্র চালানের সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থার সম্পৃক্ততার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে লুৎফুজ্জামান বাবর, ওমর ফারুক ও রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী তৎপর ছিলেন।
ফখরুখ আহাম্মদ আরও বলেন, এ ঘটনায় এনএসআইয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জড়িত থাকার কথা তিনি তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী আমাকে বলেন, অনেক ব্যাপারে ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট জড়িত থাকে। এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। ১৯৯৬ সালে কক্সবাজারে এক ট্রলার অস্ত্র ধরা পড়ে। খোঁজ নিয়ে দেখেন, সে ব্যাপারে কোনো মামলাও হয়নি। কাজেই জাতীয় স্বার্থে আমাদের একটু বুঝে-শুনে কাজ করতে হবে। আমি কমিটি করে দিয়েছি। স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করেন। উনাকে সব কিছু বলা আছে।’
সিআইডি সূত্র জানায়, বাবরকে এ পর্যন্ত দুই দফায় রিমান্ডে ঢাকায় সিআইডি সদর দপ্তরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে খুব বেশি তথ্য বের করা যায়নি। এ ছাড়া ওমর ফারুককে দুই দফায় সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এনএসআইয়ের চার কর্মকর্তা জড়িত: এই অস্ত্র চালান আনার সঙ্গে যে এনএসআইয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জড়িত, তা চারদলীয় জোট সরকার আমলেই মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত প্রধান আসামি হাফিজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলেছিলেন। তখন তা গোপন করা হয় বলে অভিযোগ আছে।
পরে অধিকতর তদন্ত শুরু হওয়ার পর গত বছর ২ মার্চ হাফিজ চট্টগ্রামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এনএসআইয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা ছাড়াও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) তৎকালীন পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দারের সম্পৃক্ততার কথা বলেন। এরপর রেজ্জাকুল হায়দার, তৎকালীন এনএসআইয়ের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাবউদ্দিন, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন ও মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রেজ্জাকুল হায়দার ও লিয়াকত ছাড়া অন্য সবাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আর এনামুর রহমান চৌধুরী এ ঘটনায় সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এনামুর রহমানও বলেন, অস্ত্রের চালানের সঙ্গে এনএসআইয়ের এক কর্মকর্তার জড়িত থাকার কথা তদন্তের শুরুতেই বেরিয়ে আসে। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির বৈঠকে আলোচনাও হয়। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনে তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, উলফার জন্য অস্ত্র চালানটি এ দেশে আনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ায় এনএসআইয়ের মহাপরিচালক আবদুর রহিম, পরিচালক সাহাবউদ্দিন ও উপপরিচালক লিয়াকত যুক্ত ছিলেন। আর এ ক্ষেত্রে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এবং দুবাইভিত্তিক পাকিস্তানি ব্যবসায়িক গ্রুপ এআরওয়াইয়ের যোগসাজশ ছিল। এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবরকে চট্টগ্রাম পাঠানো হয় অস্ত্র বহনের জন্য ট্রাক ভাড়া করার জন্য। আকবর জবানবন্দিতে বলেছেন, ট্রাকগুলো ভাড়া করা হয়েছিল মৌলভীবাজার পর্যন্ত মালামাল পরিবহনের জন্য। আর অস্ত্র খালাসের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন মেজর লিয়াকত। উইং কামন্ডার সাহাবউদ্দিন শুরু থেকে পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকলেও ঘটনার রাতে অসুস্থতার অজুহাতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এ অস্ত্র চালান আনার ঘটনায় আর্থিকভাবে লাভবানও হয়েছেন। তবে কে কত টাকা পেয়েছেন, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য বের করা যায়নি এখনো।
আদালতের সাত পর্যবেক্ষণ: মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, আদালতের পর্যবেক্ষণে জোট আমলের তদন্তে সাতটি দুর্বলতার কথা উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কোন জলযানে (জাহাজ) করে কোত্থেকে অস্ত্রগুলো বাংলাদেশে আনা হয়েছে, কারা এনেছে, চট্টগ্রামের সিইউএফএল জেটিঘাটে কার নির্দেশে অস্ত্র খালাস হয়েছে ইত্যাদি।
জোট সরকার আমলে তদন্ত শেষে আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে এ মৌলিক বিষয়গুলোর কোনো উল্লেখ ছিল না। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার অধিকতর তদন্তের নির্দেশে আদালত এ সাতটি পর্যবেক্ষণের কথা বলেন। সেটা বিবেচনায় রেখে ২০০৭ সালের ২০ নভেম্বর থেকে অধিকতর তদন্ত শুরু করে সিআইডি।
মামলাটির তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে দাবি করা হলেও কবে নাগাদ সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে তা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সিআইডির কর্মকর্তারা।
অস্ত্র উলফার, এসেছে চীন থেকে: চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে দাখিল করা সিআইডির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অধিকতর তদন্তে জানা গেছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম) জন্য এসব অস্ত্র, গোলাবারুদ আনা হয়। চীনের সমরাস্ত্র কারখানা নর্থ ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (নরিনকো) থেকে অস্ত্রগুলো সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশের এনএসআই ও ডিজিএফআই তৎকালীন কতিপয় কর্মকর্তা এই অস্ত্র সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন।
তবে কোন জলযানের মাধ্যমে অস্ত্রগুলো বাংলাদেশে আনা হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। এ ব্যাপারে তদন্ত অব্যাহত আছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
সিআইডির একটি সূত্র জানায়, এত দিন পর কোন জাহাজে অস্ত্র এসেছে, তা বের করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। আসামি হাফিজ জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, রাতের বেলায় বঙ্গোপসাগরে অস্ত্র খালাস করা হয়। তখন ওই জাহাজের নাম কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল।
উলফার মাত্র একজন আসামি: বিশাল এই অস্ত্রের চালান আনার সঙ্গে জড়িত উলফার সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়াকে এ মামলায় আসামি করা হবে। এরই মধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁর নাম-ঠিকানা যাচাই করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, তাঁরা পরেশ বড়ুয়াকে পেলে গ্রেপ্তার করবেন।
কিন্তু এ ঘটনায় জড়িত উলফার আর কারও নাম এখন পর্যন্ত তদন্তে উদ্ঘাটন করা যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে যে পাঁচজন উলফা সদস্যকে ধরে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়, তাদেরও নাম-পরিচয় বের করতে পারেনি সিআইডি। যদিও তাঁদের শনাক্ত করার মতো ব্যক্তি হাফিজ, মেজর লিয়াকত বা আকবর গ্রেপ্তার আছেন। জানা গেছে, লিয়াকতের চাপের মুখেই পুলিশ এসব উলফা সদস্যকে ছেড়ে দিয়েছিল। এ ছাড়া হাফিজের সঙ্গে আবুল হোসেন নামে যে ব্যক্তি ট্রাক ভাড়া করতে গিয়েছিলেন, তাঁর পরিচয়ও বের করতে পারেনি সিআইডি।
এসব প্রশ্নের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি শুধু বলেছেন, তদন্ত চলছে। উলফার আর কারও নাম এলে তাদেরও আসামি করা হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি সহকারী পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অধিকতর তদন্তে অনেক অগ্রগতি রয়েছে। আদালত যে সাতটি নির্দেশনা দিয়েছেন, অধিকতর তদন্তে ইতিমধ্যে ছয়টি নির্দেশনার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এর বাইরে তদন্ত কর্মকর্তা আর কিছু বলতে রাজি হননি।