Showing posts with label জামাতি বাণিজ্য. Show all posts
Showing posts with label জামাতি বাণিজ্য. Show all posts

4 May 2011

যুবকের প্রতারণা: গ্রাহকদের ২১০০ কোটি টাকা ফেরত দিতে কমিশন হচ্ছে

আবুল কাশেম

বহুল আলোচিত যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) প্রতারিত গ্রাহকদের ২১০০ কোটি টাকা ফেরত দিতে কমিশন গঠন করছে সরকার। যুবকের প্রতারিত দুই লাখ ৬৭ হাজার ৩৩০ জন গ্রাহকের পাওনা ২১৪৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা আগামী দুই বছরের মধ্যে পরিশোধে কাজ করবে এ কমিশন। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, যুবক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দখলে নিয়ে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে তা বিক্রি করে পাওয়া অর্থ থেকে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধের উদ্যোগ নেবে কমিশন।

জানা গেছে, দুই সদস্যের এ কমিশনের চেয়ারম্যান হচ্ছেন বিসিএস ১৯৭৭ ব্যাচের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব রফিকুল ইসলাম। আর সদস্য পদে যোগ দেবেন প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের সদস্য মজনুন হাসান। আজ অর্থ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী এ কমিশন গঠন করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় শক্তি প্রয়োগ করে প্রতারিত গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষমতাও দেওয়া হবে কমিশনকে। কমিশন দুই বছরের মধ্যে প্রতারিত গ্রাহকদের ২২০০ টাকা ফেরত দেওয়ার কাজ শেষ করবে। বৃহস্পতিবার এ কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি হবে। কমিশনের চেয়ারম্যান পদে অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব রফিকুল ইসলামকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আর সদস্য পদে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের সদস্য মজনুন হাসানকে।'

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কমিশন গঠন সম্পর্কে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'একটি দীর্ঘমেয়াদি (তিন বছর) পূর্ণকালীন এক অথবা তিন সদস্যের একটি কার্যকর কমিশন অবিলম্বে গঠন করা প্রয়োজন।' প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দ্রুত গতিতে এবং উপযুক্ত ক্ষমতায়নের মাধ্যমে গঠিত নতুন কমিশনের প্রথম কাজ হতে পারে আইনসিদ্ধ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যুবক ও যুবকসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং এর তালিকাভুক্ত অন্যান্য সম্পত্তির ওপর কমিশন নিয়োজিত ব্যক্তিদের দখল ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। দীর্ঘমেয়াদি পূর্ণকালীন কমিশনকে একটি উপযুক্ত কাঠামোর মাধ্যমে জনবল, আর্থিক সংস্থান, অফিস ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করে বিজ্ঞপ্তি প্রচারের পর প্রথম কর্তব্য হিসেবে কমিশন চেয়ারম্যান যুবক ও যুবকসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারেন। নবগঠিত কমিশনের চেয়ারম্যানকে হাইকোর্টের একজন বিচারপতি অথবা সরকারের সচিবের পদমর্যাদায় বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। কমিশন তদন্ত কমিটির সুপারিশ আমলে নিয়ে কাজ করবে। এ ছাড়া কমিশন প্রয়োজনে অধিকতর তদন্তও করতে পারে। এ জন্য কমিশনকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়া হবে।

ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি সংবাদমাধ্যমে যুবকের গ্রাহকদের তথ্য প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিলে যুবক হাউজিং অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড ও যুবকসংশ্লিষ্ট অন্য চারটি প্রতিষ্ঠানের দুই লাখ ৬৭ হাজার ৩৩০ জন গ্রাহক দালিলিক প্রমাণসহ মোট ২১৪৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা পাওনা দাবি করে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ রয়েছে। অবশ্য ২০০৬ সালে অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রমের দায়ে যুবকের কর্মকাণ্ড বাতিল করার সময় বেসরকারি এই সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছিল, ২০০৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই লাখ ৬৭ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে তারা ৩৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা জমা নিয়েছে।

১৯৯৪ সালে সদস্যদের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের মধ্য দিয়ে যুবক এর কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৯৭ সালে জয়েন্ট স্টক কম্পানিজে নিবন্ধন পাওয়ার পর যুবক প্রায় ২০ ধরনের ব্যবসা শুরু করে। ২০০৬ সাল নাগাদ সংস্থাটি টেলিকমিউনিকেশন, হাউজিং অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট, পর্যটন, স্বাস্থ্য, সিরামিকস, সামুদ্রিক খাদ্য, আইটি, নার্সারি, এগ্রো-বায়োটেক ইন্ডাস্ট্রি ও ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের ব্যবসা শুরু করে। ২০০৬ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আলাদা তদন্তে যুবকের গ্রাহকদের প্রতারিত হওয়ার ঘটনা বেরিয়ে আসে। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ ও তাদের ঋণ দেওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে এক সপ্তাহের সময় দিয়ে ২০০৬ সালের মে মাসে যুবককে নোটিশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০০৬ সালের জুলাই মাসে আমানতকারীসহ অন্যদের সব অর্থ ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে ওই সময়সীমা ২০০৭ সালের মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক যুবকের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনেও নথি পাঠায়। তবে কমিশন বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলে নথি ফেরত দেয়। পরে যুবকের গ্রাহকদের জমা করা অর্থ পরিশোধ ও হয়রানি বন্ধ, সম্পত্তি হস্তান্তরে স্থগিতাদেশ এবং প্রশাসক নিয়োগ করে স্থায়ী সমাধানের জন্য ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তদন্ত কমিশন গঠন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয় অর্থমন্ত্রীর কাছে।

25 April 2011

সংগ্রাম সম্পাদকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা

Mon, Apr 25th, 2011 4:49 pm BdST

ঢাকা, এপ্রিল ২৫ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক আবুল আসাদকে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রাণনাশের হুমকির মামলায় আদালতে তলব করা হয়েছে।

সোমবার এ পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এ বি সিদ্দিকের দায়ের করা মামলায় এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম এ জি এম আল মাসুদ।

মামলার আরজিতে বলা হয়, বাদির বকেয়া বেতন- ভাতা বাবদ ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৬ টাকা না দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি তাকে প্রাণনাশ করার হুমকি দিচ্ছেন। বাদির একমাত্র মেয়ের চিকিৎসার জন্য পাওনা টাকা চাইতে গেলে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বলা হয়, "কোন টাকা দেয়া হবে না। মামলা করে টাকা নেন।"

আগামি ১ জুন আবুল আসাদকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য দিন রাখা হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান বাদির আইনজীবী এস এম দৌলত-ই-খুদা।

মামলার আরজিতে আরো উল্লেখ করা হয়, হুমকির বিষয়ে বাদি গত ৫ এপ্রিল রমনা থানায় আবুল আসাদের বিরুদ্ধে একটি সাধারন ডায়েরি করেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/পিবি/কেএমএস/১৬৫০ ঘ.

11 April 2011

'বিদ্যুতের বেড়া দিয়ে ওরা মানুষ মারার কল বসাইছে': আবাসন প্রকল্পে জঙ্গি কার্যক্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক

চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া। আনুমানিক ৫০ গজ পর পর ছোট সাইনবোর্ড। লাল কালিতে লেখা 'বিপজ্জনক, বিদ্যুতায়িত তারের বেড়া'। জ্যানোভ্যালি পিংক সিটি কর্তৃপক্ষ এভাবেই নিরাপত্তার নামে ত্রাসব্যবস্থা গড়ে তুলেছে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায়। এ আতঙ্কে আরো যোগ হয়েছে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খিলক্ষেতের ডুমনি এলাকায় গজারিগাছের খুঁটির বেড়া দিয়ে তাতে বেআইনিভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ
দিয়েছে পিংক সিটি কর্তৃপক্ষ। ফলে যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে প্রাণহানির মতো বড় ধরনের ঘটনা। পিংক সিটির চারপাশে বিদ্যুতায়িত কাঁটাতারের বেড়ার পাশাপাশি আছে ক্লোজ সার্কিট।

গতকাল সোমবার দুপুর। ডুমনির পাতড়া এলাকা থেকে মাছ ধরতে পিংক সিটির দক্ষিণ পাশে এসেছেন রহিম উদ্দিন, জয়নাল ও আবদুল্লাহ। জাল দিয়ে মাছ ধরে একটু বিশ্রাম নিতে তাঁরা যেখানে বসেন, এর পাশ ঘেঁষেই চলে গেছে পিংক সিটির বিদ্যুতায়িত বেড়া। বিষয়টি না জেনে জয়নাল হোসেন তারের বেড়া ধরতেই প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান মাটিতে। অন্যরা শরীর ম্যাসেজ করে জয়নালকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বাড়িতে নেওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ সময় রহিম উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে কালের কণ্ঠের কাছে পিংক সিটিকে অভিযুক্ত করে বলেন, 'বিদ্যুতের বেড়া দিয়ে ওরা মানুষ মারার কল বসাইছে, ধরলেই মরতে হইব। আর একটুর লাইগ্যা জয়নাল জানে বাঁইচ্যা গেছে।' আবদুল্লাহ বলেন, 'কারেন্টের শট (শক) খাইয়া আমাগো এলাকার আরো একজন মরার দশা হইছিল। আগে অনেকেই গরুর ঘাস কাটতে এখানে আসলেও এখন এই কারেন্টের ভয়ে কেউ আসতে চায় না।' তারের বেড়ার পাশ ঘেঁষেই ধানক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করছেন ষাটোর্ধ্ব আলী আজগর। তিনি বলেন, 'তারের বেড়ায় কারেন্ট লাগানোর পর থেকে দুই মাইল ঘুরে ধানক্ষেতে আসতে হয়। পিংক সিটির ভেতরে কাউকে যাইতে দেয় না। হুনছি এইডার ভিতরে জঙ্গিদের নাকি আস্তানা বানাইছে।' ডুমনি এলাকার লোকজন অভিযোগ করে, পিংক সিটির চারপাশে সীমানাপ্রাচীরের বাইরে আলাদা যে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে, তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।
জঙ্গিদের ঘাঁটি : 'বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জোর করে মানুষের জমি দখল করে পিংক সিটি বানাইছে। এটার ভেতরে কোনো মানুষজন যাইতে দেয় না। সেখানে অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা বেশি দেখা যায়। এলাকার অনেকেই কইয়া বেড়ায়, পিংক সিটির ভেতরে নাকি জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।' ডুমনি গ্রামের বাসিন্দা আজগর আলী এ কথা বলেন কালের কণ্ঠের প্রতিবেদককে।

খিলেক্ষেত এলাকায় আরো অনেকে বলে, জঙ্গি এবং সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি পিংক সিটি। তাদের ভাষ্য, হাউজিং ব্যবসার নামে পিংক সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সাবেক শিবির ক্যাডার সালাহউদ্দিন ডুমনি এলাকায় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বানিয়েছেন। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, সালাহউদ্দিন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে মৌলবাদীদের নিয়ে বড় ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন এবং তাদের মাধ্যমে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালনার বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিভিন্ন সূত্র মতে, সালাহউদ্দিনের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের অনেক পলাতক আসামি ও সন্ত্রাসীকে পিংক সিটিতে ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের ডুমনি এলাকার জমি দখলকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসীও মুখ খোলার সাহস পায় না। স্থানীয় লোকজন জানায়, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী লালন ছাড়াও ফ্ল্যাট বিক্রির নামে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে এই সালাহউদ্দিন প্রতারণার ফাঁদে ফেলছেন অনেক নিরীহ মানুষকে। ফ্ল্যাট কেনার পর দখল চাইতে গিয়ে সালাহউদ্দিনের সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার শিকার হচ্ছেন অনেক ক্রেতা।
জমি দখল করেই যাচ্ছে : পিংক সিটির মালিক সন্ত্রাসীদের গডফাদার সালাহউদ্দিন ও তাঁর প্রকল্প ম্যানেজার, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সন্ত্রাসী লোকজনসহ আমিন মোহাম্মদের তফসিল বর্ণিত জমিতে জোরপূর্বক বালি দিয়ে ভরাটের চেষ্টা চালায়। দায়িত্বরত লোকজন বাধা দিলে তারা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে জমি ছেড়ে চলে যেতে বলে। জিডিতে বলা হয়েছে, পিংক সিটি কর্তৃপক্ষ দাঙ্গাবাজ ও ভয়ানক সন্ত্রাসী। তাদের কাজই হচ্ছে অন্যের জমি জোর করে দখল ও আত্মসাৎ করা।

আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের অভিযোগ, পিংক সিটির পাশে তাদের ২৬৮ শতাংশ জমি রয়েছে। এটি দখল করতে সালাহউদ্দিন আহমেদ সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা জমির নিচু অংশে বালি ফেলে ভরাট করে নিজেদের আওতায় নিতে চাচ্ছেন। এ বিষয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন করা হয়েছে এবং মন্ত্রী পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে না বলে জানায় আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ।

সালাহউদ্দিন আহমেদ নর্থ-সাউথ সোসাইটির আবাসন প্রকল্পের জমি অবৈধ দখলে নেওয়ার জন্যও মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নর্থ-সাউথ সোসাইটি কর্তৃপক্ষ কালের কণ্ঠকে বলেছে, তাদের প্রায় ৬৫ বিঘা জমি রয়েছে পিংক সিটির আবাসন প্রকল্পের পাশে। এ জমি দখল করতে সালাহউদ্দিন ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। সোসাইটির মালিকপক্ষ আরো বলছে, রাস্তার পাশে ১০ কাঠার অধিক এবং সোসাইটির ভেতরে নিচু জায়গায় বালু ফেলে পিংক সিটি দখলে নিয়েছে। প্রকল্পের ভেতরে ১০ শতক জমিতে ভবনও নির্মাণ করেছেন পিংক সিটির দখলবাজ মালিক।
গুঁড়িয়ে দেয় আনসার ক্যাম্প : এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন সূত্র মতে, পিংক সিটির তিন শতাধিক সদস্যের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী আছে, যারা নিয়মিত মহড়া দেয়। তাদের অধিকাংশের মুখে দাড়ি। বাঁশিতে ফুঁ পড়লেই অস্ত্রসহ পিংক সিটি থেকে তারা বেরিয়ে আসে। সম্প্রতি কমপক্ষে দুই শতাধিক সশস্ত্র ক্যাডার আনসার ক্যাম্পে হামলা চালায়। তারা বুলডোজারসহ রাতের আঁধারে হামলা চালিয়ে আনসার ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দিয়ে পাঁচ বিঘার বেশি জমি দখল করে নেয়। হামলায় আনসার সদস্য দেলোয়ার হোসেন ও আবদুল মালেক গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ পিংক সিটির তিন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়। পিংক সিটিতে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটেই যাচ্ছে। গত ২৭ জানুয়ারি পিংক সিটির ভেতরে এক অজ্ঞাতপরিচয় যুবক খুন হন। খিলক্ষেত থানার পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় থানায় একটি মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।

5 April 2011

শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারের উপদেষ্টা ছয় শিক্ষক!

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি | তারিখ: ০৬-০৪-২০১১

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন শিক্ষক। চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারের এই কোচিং সেন্টারের নাম ইনডেক্স বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টার।

জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির এই কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে। তবে কোচিং সেন্টারের পরিচিতিমূলক বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, এটি পরিচালনা করছে চিটাগাং ইউনির্ভাসিটি স্টুডেন্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) মো. আলাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ভর্তি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত থাকার কোনো নিয়ম নেই। নৈতিকভাবেও এটা সমর্থনযোগ্য নয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিবির পরিচালিত ইনডেক্স কোচিং সেন্টারের সাত উপদেষ্টার ছয়জনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁরা হলেন, অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আবুল কালাম আযাদ, দর্শন বিভাগের মোজাম্মেল হক, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের কাজী মু. বরকত আলী, ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তানভীর মু. হায়দার আরিফ এবং মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের মুহাম্মদ জাফর। সাত উপদেষ্টার অন্যজন হলেন ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সাবেক শিক্ষক মুহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ। এঁদের সবাই ক্যাম্পাসে জামায়াতপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত।

জানা গেছে, কোচিং সেন্টারের পরিচালনা পরিষদের চারজনই ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। পরিচালনা পর্ষদের প্রধান হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুস্তফা সাকের উল্লাহ। অন্যরা হলেন সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দীন, শামছুদ্দিন ও আবুল ফজল।
এ বিষয়ে জানতে আবুল কালামের মোবাইলে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মুহাম্মদ জাফর ও বরকত আলী সভায় ব্যস্ত আছেন জানিয়ে পরে যোগাযোগ করতে বলেন। কামাল উদ্দিন ও মোজাম্মেল হকের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আর তানভীর শিক্ষাছুটিতে বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন।

কোচিং সেন্টারের পরিচালক শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরামর্শের জন্য শিক্ষকদের উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে। কোচিং সেন্টারের কোনো প্রয়োজনে আমরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ জন্য তাঁদের কোনো সম্মানী দেওয়া হয় না।’

23 March 2011

কর ফাঁকিতে অভিযুক্ত মীর কাশেম

Wed, Mar 23rd, 2011 4:50 pm BdST

ঢাকা, মার্চ ২৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- কর ফাঁকির একটি মামলায় জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শূরার সদস্য মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়েছে।

বুধবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জহুরুল হকের আদালতে অভিযোগ গঠন হয়।

দিগন্ত মিডিয়া লি. ও কেয়ারী লিমিটিডের চেয়্যারম্যান মীর কাশেম ওই সময় আদালতে ছিলেন।

আদালতে অভিযোগ পড়ে শোনানোর পর কাশেম নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

অভিযোগ গঠনের পর আদালত আগামী ১০ এপ্রিল বিচার শুরুর দিন ঠিক করেছে। সেদিন সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে।

মীর কাশেম মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করলেও তা নাকচ করেন বিচারক।

গত বছরের ১৯ অগাস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উপকর কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান এ মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় বলা হয়, ২০০৫ থেকে ২০০৬ করবর্ষে মীর কাশেম ২৭ লাখ ৮৫ হাজার ১১৮ টাকার ৩৭ পয়সা আয়ের তথ্য গোপন করে ৮ লাখ ৯০ হাজার ৬১ টাকা কর ফাঁকি দেন।

মামলা দায়েরের তিন দিন পর ২২ অগাস্ট কাশেম হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/পিবি/এলএন/এমআই/১৬৪০ ঘ.

16 March 2011

ইসলামী ব্যাংকের বিজ্ঞাপন প্রতারণা: বিশ্বকাপের শোভাবর্ধন

অমিতোষ পাল

রাজধানীর পাঁচতারা হোটেল সোনারগাঁওয়ের পাশে সন্ধ্যায় দাঁড়ালেই দেখা যায় বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে সৌন্দর্যবর্ধনের বাহারি আয়োজন। আলোর ঝলকানি। একদিকে রিকশা, আরেকদিকে গ্রামবাংলার মনোরম দৃশ্যসংবলিত বিশাল বিলবোর্ড, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে লাল-নীল আলোকসজ্জা, এসবের সঙ্গে বল, হাতপাখা ইত্যাদির প্রদর্শন। আর এর সব কিছুতেই শোভা পাচ্ছে ইসলামী ব্যাংকের প্রচারণাসংবলিত বিজ্ঞাপন।

কেবল সোনারগাঁও হোটেল এলাকায়ই নয়, রাজধানীজুড়েই সৌন্দর্যবর্ধনের এমন দৃশ্য বিরাজমান। এ কাজটি করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। মাত্র ৭৫টি স্থানের অনুমতি নিয়ে পুরো নগরীই বিজ্ঞাপনে ঢেকে ফেলেছে তারা। বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে অন্তত ৬৫৪টি স্থানে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করছে। সে হিসাবে ৫৭৯টি বিজ্ঞাপনই করা হয়েছে অবৈধভাবে। পাশাপাশি ১০০টি বাসের গায়েও তারা লাগিয়েছে নিজেদের বিজ্ঞাপন। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রদর্শনে ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) অনুমোদন ও নির্ধারিত কর (ট্যাঙ্) পরিশোধের নিয়ম থাকলেও তারা সেটা করেনি। এগুলো উচ্ছেদ করতে গেলে বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের মাধ্যমে ডিসিসিকে উল্টো চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক রাষ্ট্রপতির কাছে কর মওকুফের আবেদন করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।

ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে তারা কর মওকুফ করিয়ে নিতে পারলে ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু এখানে ডিসিসির ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। নিয়মানুযায়ী ট্যাঙ্ দিতেই হবে। এ ব্যাপারে ডিসিসির বিউটিফিকেশন সেলের সদস্যসচিব ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ইসলামী ব্যাংক অবৈধভাবে অনেক বেশি বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে। আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে তাদের কয়েক দফা চিঠি দিয়েছি। বৈঠকও হয়েছে। এখন তারা বলছে, রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ট্যাঙ্ মওকুফ করিয়ে নেবে। আমি বলেছি, আপনারা আগে ট্যাঙ্ জমা দেন। পরে রাষ্ট্রপতির মওকুফপত্র দেখালে আমরা ট্যাঙ্রে টাকা ফেরত দিয়ে দেব। এটা বলার পরও তারা সময় নিচ্ছে।'

ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম অনুমোদন ছাড়াই বেশি বিজ্ঞাপন ব্যবহারের অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, 'আমরা কিছু টাকা দিয়েছি। কিন্তু যেহেতু এটা বিশেষ আয়োজন উপলক্ষে করা, এ জন্য চেষ্টা করছি রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমতাবলে ট্যাঙ্ মওকুফ করিয়ে নিতে। বিসিবিও আমাদের আশ্বাস দিয়েছে।' আর বাসে বিজ্ঞাপন ব্যবহারের ব্যাপারে তিনি বলেন, ১০০ বাসে নয়, ৩০টিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় থাকলেও বিসিবি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালের কারসাজিতে সৌন্দর্যবর্ধনের সুযোগ পেয়ে যায় ইসলামী ব্যাংক। এ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনাও হয়েছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকের অর্থ এ দেশের জঙ্গি অর্থায়নের কাজে ব্যয় হয়। এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান কিভাবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে পুঁজি করে নির্বিচারে নিজেদের বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ পেল, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। একটি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বকাপ শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এ ব্যাপারে বিসিবি সভাপতি মোস্তফা কামালের সঙ্গে মোবাইল ফোনে তিন দিন ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

অসাধুতা : অবৈধভাবে বিজ্ঞাপন প্রচারের বিষয়টিকে অনেকেই ইসলামী ব্যাংকের চরম অসাধুতা হিসেবে দেখছে। তারা বলছে, জামায়াতে ইসলামীর মতোই অপকৌশলে লিপ্ত হয়েছে তাদের অর্থায়নকারী ব্যাংকটি। জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংক সৌন্দর্যবর্ধনের অনুমতি পাওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড-ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে ডিসিসি আপত্তি জানায়।

ডিসিসির ভাষ্য, ঢাকা মহানগরীতে বিজ্ঞাপনযুক্ত বিলবোর্ড-ব্যানার স্থাপন করতে হলে ডিসিসির অনুমোদন নিতে হয় এবং নিয়ম অনুযায়ী ট্যাঙ্ পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক বিসিবির দোহাই দিয়ে করমুক্তি চায়। এ নিয়ে চিঠি চালাচালির একপর্যায়ে ইসলামী ব্যাংক ৭৫টি স্থানে বিলবোর্ড ও সৌন্দর্যবর্ধনকারী সামগ্রী সংযুক্ত করার জন্য ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে। কিন্তু ডিসিসির বিউটিফিকেশন সেলের কর্মীরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখতে পান, বাস্তবে অন্তত ৬৫৪টি স্থানে ইসলামী ব্যাংকের বিজ্ঞাপন লাগানো হয়েছে। এর জন্য যে পরিমাণ জায়গা ইসলামী ব্যাংক ব্যবহার করেছে, তার ট্যাঙ্ হিসাব করলে দাঁড়ায় এক কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু তারা ট্যাঙ্ পরিশোধ না করে টালবাহানা করছে। ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম বিদেশে অবস্থানের অজুহাত দেখিয়ে কয়েক দফা সময় নেন। একপর্যায়ে বিজ্ঞাপনের সংখ্যা কমিয়ে ৩২১টি করে এক কোটি ২০ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা ট্যাঙ্ দিতে সম্মত হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটাও তারা পরিশোধ করেনি। সংখ্যা কমানোর কথা বললেও আগের বিজ্ঞাপনগুলোই বহাল আছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুট জায়গা ব্যবহারের জন্য মাসে ১০০ টাকা করে ট্যাঙ্ দেওয়ার নিয়ম। সঠিকভাবে হিসাব করলে ডিসিসির অন্তত আড়াই কোটি টাকা এ খাত থেকে আয় হতো বলে জানান সংস্থার একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, 'অবৈধভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার ছাড়াও ইসলামী ব্যাংক অনুমতি ছাড়াই আগারগাঁওয়ের ব-দ্বীপে বিশাল আকৃতির একটি ক্রিকেট বল নির্মাণ শুরু করে। ডিসিসি বাধা দিলে বিভিন্ন জায়গা থেকে তদবির আসতে থাকে। এ ঘটনায় বিসিবি সভাপতি মোস্তফা কামাল ঢাকার মেয়রকে ডেকে নিয়ে ইসলামী ব্যাংককে ছাড় দেওয়ার অনুরোধ জানান। পরে বিজয় সরণির বিমান চত্বরের পাশে এক মাসের জন্য দুই লাখ টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে ক্রিকেট বল নির্মাণের অনুমতি দেয় ডিসিসি। ওই বলের গায়েও শোভা পাচ্ছে ইসলামী ব্যাংকের বিজ্ঞাপন।'

৭৫-এর জায়গায় ৬৫৪ : ইসলামী ব্যাংক ১৩টি স্থানে গেট, ১৯টি স্থানে বেলুন, ৪০টি স্থানে ক্যানভাস বোর্ড ও কাটআউট এবং তিনটি মোড়ে নিয়ন সাইনে তাদের বিজ্ঞাপন ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছিল। বাস্তবে তারা ৬৫৪টি স্থানে বিজ্ঞাপন দিয়েছে, যা অনুমোদনের চেয়ে সাত-আট গুণ বেশি। ডিসিসির হিসাব অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংক ৭৩টি ক্যানভাস, ৭১টি মেগাসাইন, ১০টি নৌকা, ৩৭৫টি ফেস্টুন, চারটি টপগেট, তিনটি বক, ৮২টি বৈদ্যুতিক পোলের বেলসাইন, ১০টি রিকশা, ১২টি পাখাসংবলিত কাটআউট ও ১৪টি বলে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। এ ছাড়া সাভারের বিএনপি নেতা কফিল উদ্দিনের মালিকানাধীন হানিফ এন্টারপ্রাইজের হানিফ পরিবহনের ১০০টি বাসে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইমেজ ব্যবহার করে ইসলামী ব্যাংকের বিজ্ঞাপন যুক্ত করা হয়েছে। ডিসিসির পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শকরা ক্যামেরায় এগুলোর ছবিও তুলে রেখেছেন।

2 March 2011

আল-কায়েদা ও জেএমবি যোগাযোগ: আরসিইউডি জঙ্গিগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক, সমন্বয়কারী

টিপু সুলতান | তারিখ: ০২-০৩-২০১১

আবদুর রশিদ চৌধুরী। আরসিইউডির চেয়ারম্যান। ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম উদ্যোক্তা। এআরওয়াইয়ের বাংলাদেশে প্রস্তাবিত টেলিভিশনের সাবেক প্রধান

ধর্মভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের আড়ালে মূলত জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা ও দেশি-বিদেশি জঙ্গি সংগঠনের সমন্বয়ের কাজ করছে রিসার্চ সেন্টার ফর ইউনিটি ডেভেলপমেন্ট (আরসিইউডি)। কথিত গবেষণাপ্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রশিদ চৌধুরী ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম উদ্যোক্তা। এ ছাড়া তিনি ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিমের ঘনিষ্ঠজন। সেই সূত্রে আবদুর রশিদ দুবাইভিত্তিক পাকিস্তানি কোম্পানি এআরওয়াইয়ের বাংলাদেশে প্রস্তাবিত টেলিভিশনের প্রধানের দায়িত্ব পান। এআরওয়াই পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ছাড়াও আল-কায়েদা ও তালেবানের মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সহযোগী বলে অভিযোগ আছে।
আবদুর রশিদ দাবি করেন, আরসিইউডির মাধ্যমে তাঁরা সারা বিশ্বের মুসলিম ঐক্য নিয়ে কাজ করতেন। তবে প্রথম আলোর হাতে আসা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আরসিইউডি থেকে বিভিন্ন সময়ে নিষিদ্ধঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জন্য সদস্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, আরসিইউডি মূলত জামায়াতুল মুসলেমিন নামের অপর একটি ধর্মভিত্তিক সংগঠনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। আবার জেএমবি ও ইয়েমেনভিত্তিক আল-কায়েদার মধ্যে সংযোগ ও সমন্বয়কারী হিসেবে আরসিইউডির নাম এসেছে। এই সংগঠনের অন্তত তিন সদস্য গত বছর ইয়েমেনে আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হন। তাঁদের মধ্যে আবদুর রশিদের জামাতা তেহজীব করিমও রয়েছেন। আর তেহজীব ও তাঁর বড় ভাই রাজীব করিম দুজনই বাংলাদেশে জেএমবির সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের সঙ্গে আল-কায়েদার আরব উপদ্বীপের নেতা আনোয়ার আল-আওলাকির সরাসরি যোগাযোগ ছিল বলে রাজীব যুক্তরাজ্যের আদালতে বলেছেন। গত সোমবার রাজীব যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমান উড়িয়ে দেওয়াসহ সন্ত্রাসমূলক চারটি অভিযোগে ব্রিটিশ আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ১৮ মার্চ তাঁর সাজা ঘোষণা করা হবে।

যেভাবে সন্ধান: জঙ্গি তৎপরতার ওপর অনুসন্ধান করতে সিলেটে গিয়ে ২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে আরসিইউডির ব্যাপারে প্রথম তথ্য পান এই প্রতিবেদক। সিলেট অঞ্চলে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিযুক্ত এক কর্মকর্তা শুধু জানান, সংগঠনটির কার্যালয় ধানমন্ডিতে। ওই কর্মকর্তা বিষয়টি তখন ঢাকায় নিজ দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। ২০০৯ সালের মার্চে ওই দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার প্রধানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘আরসিইউডির বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে।’

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের শুরুর দিকে আরসিইউডির জন্ম। তবে আবদুর রশিদ বলেছেন, এটি ২০০৩-০৪ সালে যৌথ মূলধনি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে (জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অ্যান্ড ফার্মস) নিবন্ধিত হয়। শুরুতে এর কার্যালয় ছিল রাজধানীর ধানমন্ডির ৭ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে। ২০০৬ সালের শেষ দিকে সেখান থেকে আরসিইউডির কার্যালয় স্থানান্তর করা হয় আজিমপুরে।

প্রায় এক বছরের চেষ্টার পর গত বছরের ৪ জুন এ প্রতিবেদক আরসিইউডির চেয়ারম্যান আবদুর রশিদের সাক্ষাৎ পান। সর্বশেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কয়েক দফা কথা হয়েছে। প্রতিবারই তিনি জেএমবি ও জামায়াতুল মুসলেমিনের সঙ্গে আরসিইউডির সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন।

রশিদ দাবি করেন, আরসিইউডি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এখানে সপ্তাহে এক দিন সক্রিয় সদস্যদের নিয়ে বৈঠক, ধর্মীয় আলোচনা বা তালিম এবং মাঝেমধ্যে সভা-সেমিনার, কর্মশালার আয়োজন করা হতো। এখন আর এটি সক্রিয় নয় বলে তিনি দাবি করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত বছর গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবির আমির সাইদুর রহমান বলেছেন, আরসিইউডি মূলত জামায়াতুল মুসলেমিনের একটি এনজিও। এর মূল কাজ হচ্ছে, মূল সংগঠনের জন্য কর্মী সংগ্রহ ও উগ্র ধর্মীয় মতবাদে উদ্বুদ্ধ করা।

ইয়েমেনে আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া মাইনুদ্দীন শরিফ বলেছেন, আরসিইউডির কার্যালয় আজিমপুরে আবদুর রশিদের বাসার নিচের তলায়।

আবদুর রশিদ বলেন, ‘ধানমন্ডি অফিস বন্ধের পর কিছুদিন কেউ কেউ আমার বাসায়ও আসত। নিচতলা খালি ছিল, তাই সেখানে বসত। বেশি লোক হতো না। ২০-২৫ জন করে লোক একত্র হতো। তরুণেরাই বেশি আসত, বয়স্কও কিছু লোক থাকত।’

আরসিইউডি থেকে জেএমবির সামরিক কমান্ডার: ২০০৮ সালের ১৫ নভেম্বর রাজধানীর মিরপুরের কালশী থেকে জেএমবির কথিত সামরিক শাখার কমান্ডার হানিফ ওরফে কালামকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, তখন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে হানিফ জানান, তিনি জামায়াতুল মুসলেমিনের সদস্য হিসেবে আরসিইউডিতে যুক্ত হন। আরসিইউডির সভায় জামায়াতুল মুসলেমিনের পরিচয়ে জেএমবির লোকজন যেত। তারা সেখান থেকে ধর্মের প্রতি বেশি আবেগপ্রবণদের জেএমবিতে সদস্য হতে অনুপ্রাণিত করত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জামাআতুল মুসলেমিনের সদস্যরা আসতেন আরসিইউডির কার্যালয়ে। হানিফ ও তাঁর সহপাঠী জাহিদ ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময় আরসিইউডির এজাজের (পরে জেএমবির নেতা) দাওয়াতে জেএমবিতে যোগ দেন। তাঁরা তিনজনই জামায়াতুল মুসলেমিনের সদস্য ছিলেন। গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে হানিফ বলেন, ‘জেএমবিতে যোগ দেওয়ার পরপর আমাকে এহসার হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আমি পার্থিব কাজকর্ম ছেড়ে সাংগঠনিক কাজে সম্পৃক্ত হই।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জেএমবির আমির সাইদুর রহমানও গত বছর রিমান্ডে বলেছেন, হানিফ আরসিইউডি থেকে জেএমবিতে এসেছেন।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বৈঠক: জিজ্ঞাসাবাদে হানিফের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরসিইউডির মূল কার্যালয়ে ছাড়াও রাজধানীতে একেক সপ্তাহে একেক স্থানে বৈঠক হতো। এর মধ্যে ভাষানটেক এলাকায় এজাজের বাসা, বাড্ডায় লিটনের বাসা, গ্রিন রোড এলাকায় রেজোয়ানের (এখন ইয়েমেনের কারাগারে বন্দী) বাসায়, পুরান ঢাকায় রিপনের বাসা, বনানী ডিওএইচএসে মাহমুদার বাসা অন্যতম। হানিফ জানান, কাঁচপুর ব্রিজ ও মেঘনা ব্রিজের মধ্যবর্তী স্থানে আরসিইউডির একটি শাখা অফিস আছে।

আরসিইউডির চেয়ারম্যান রশিদ দাবি করেন, হানিফকে তিনি চেনেন না। হানিফ যাঁদের নাম বলেছেন, তাঁদেরও চেনেন না। তবে তিনি স্বীকার করেন, আরসিইউডিতে সাপ্তাহিক আলোচনা হতো। এর মধ্যে বনানী ডিওএইচএসে বদরুন রশিদের বাসায় শুধু নারী সদস্যদের নিয়ে তালিম হতো। বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্ত্রী বদরুন রশিদ মারা গেছেন।
আরসিইউডির চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে আরও বলেন, ধানমন্ডির অফিসে প্রতি মাসে তিন-চারটি বৈঠক হতো। প্রতি বৈঠকে ২০-২৫ জন থাকত; তারা তরুণ, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। আলোচকদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিও থাকতেন।

এসব আলোচনায় কারা বয়ান করতেন এবং কারা আসত—এ প্রশ্নের জবাবে রশিদ বলেন, ‘সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল।’ কিন্তু এখানে এমন আলোচনা হবে বা কবে, কখন হবে, তা মানুষ কীভাবে জানত—এ প্রশ্ন করলে তিনি চুপ থাকেন।

জেএমবিকে সহায়তা: সূত্র জানায়, জেএমবির আমির সাইদুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে বলেছেন, আরসিইউডির পক্ষ থেকে জেএমবিকে বেশ কিছু জিহাদি বই ছাপিয়ে দেওয়া হয়। ইয়েমেনের আল-কায়েদার সঙ্গে জেএমবির যোগাযোগ তৈরি, ইয়েমেনের নাগরিক আহমেদের সঙ্গে বৈঠক, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য পাহাড়ে জমি কিনতে কয়েক দফায় ৭৪ লাখ টাকা অনুদান—সবই করে দেন আরসিইউডির সায়েফ ও সাদ্দাম।

তবে আরসিইউডির চেয়ারম্যান এসব অস্বীকার করেছেন। কিন্তু ইয়েমেনে আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ঢাকার মাইনুদ্দীন শরিফও সম্প্রতি গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, আরসিইউডিতে সাদ্দাম নামের একজনকে তিনি চিনতেন। মাইনুদ্দীন এ প্রতিবেদককে বলেছেন, তিনি আবদুর রশিদের জামাতা তেহজীব করিমের মাধ্যমে ২০০৬ সালে আরসিইউডির সঙ্গে যুক্ত হন। রশিদের বাসার নিচতলায় তাঁদের বৈঠক হতো।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মাইনুদ্দীন ঢাকায় একটি গোয়েন্দা সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, আরসিইউডি দেশে একটা নাশকতার পরিকল্পনা করছিল, এটা টের পাওয়ার পর তিনি আর সেখানে যাননি।

কে এই রেজাউল রাজ্জাক: আবদুর রশিদ প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, আরসিইউডির মূল উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করা রেজাউল রাজ্জাক। তবে রেজাউল কাগজপত্রে কোনো পদে ছিলেন না। তিনি আরও জানান, ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলার পর এক রাতে রেজাউলকে ধানমন্ডির বাসা থেকে প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থা তুলে নিয়ে যায়। ওই রাতেই রেজাউলের স্ত্রী তাঁকে টেলিফোনে তা জানান। পাঁচ-ছয় দিন পর রেজাউলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। রেজাউল পরে রশিদকে বলেছিলেন, গোয়েন্দারা তাঁকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।

আবদুর রশিদ স্বীকার করেছেন, তিনি ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালে একজন উদ্যোক্তা ছিলেন। ইসলামী ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ব্যাংকের দেশি উদ্যোক্তাদের তালিকায় আবদুর রশিদ চৌধুরীর নাম আছে। তবে কোনো ছবি নেই। তিনি জানান, তাঁর মতো রেজাউল রাজ্জাকের বাবা আবদুর রাজ্জাক লস্করও ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। সেই সূত্রে লস্করের সঙ্গে রশিদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। রশিদ জানান, রেজাউল রাজ্জাক ঢাকায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এআইইউবি) শিক্ষক।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি এআইইউবি কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে জানায়, রেজাউল রাজ্জাক গত বছরের জুন থেকে আর সেখানে নেই। তাঁর স্থানীয় কোনো ঠিকানাও নেই। চাকরির ফাইলে তাঁর আমেরিকার ঠিকানা দেওয়া আছে।

আরেকটি সূত্র জানায়, গত বছর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে রেজাউলের ব্যাপারে এআইইউবিতে খোঁজখবর নেওয়া হয়। এরপর তিনি সেখানকার চাকরি ছেড়ে দেন। রেজাউল রাজ্জাক এখন ইসলামী ব্যাংকিং নিয়ে পিএইচডি করতে মালয়েশিয়ায় আছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

আবদুর রশিদ জানান, আরসিইউডির সেক্রেটারি হলেন আবুল কালাম আল আজাদ (৩৫)। তিনি পিএইচডি করতে ২০০৬-০৭ সালের দিকে সস্ত্রীক বিদেশে যান। তাঁর আগে আবুল কালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। রশিদ দাবি করেন, কালাম কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, তাঁর বাড়ি কোথায়, সেটা তিনি ভুলে গেছেন। আরসিইউডির আর কে কে ছিলেন, সেটা তাঁর মনে নেই। কাগজপত্র সব সেক্রেটারি কালামের কাছে রয়েছে। এ ছাড়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকও আরসিইউডিতে জড়িত, তাঁর নামও ভুলে গেছেন বলে দাবি করেন রশিদ।
কাগজপত্র নিয়ে লুকোচুরি: সংগঠনের সদস্য ও কর্মকর্তাদের নামের তালিকা ও অন্যান্য কাগজপত্র দেখতে চাইলে আবদুর রশিদ দাবি করেন, সেগুলো তাঁর কাছে নেই। তিনি গত বছরের ৪ জুন বলেছিলেন, ২০০৬ সালে র্যাবের একটি দল ধানমন্ডিতে আরসিইউডি কার্যালয়ে গিয়ে কাগজপত্র দেখে আসে। এরপর ভয় পেয়ে অফিস সেক্রেটারি চলে গেছেন। সংগঠনের কাগজপত্র তাঁর কাছে। অফিস সেক্রেটারির নাম-ঠিকানা ভুলে গেছেন বলে দাবি করেন আবদুর রশিদ। তিনি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বলেছেন, সংগঠনের কাগজপত্র তাঁর কাছে নেই, সেক্রেটারি আবুল কালামের কাছে আছে।

কিন্তু আপনার বাসায়ও তো বৈঠক হতো, সেখানে কারা অংশ নিত? এ প্রশ্নের জবাবে রশিদ বলেন, ‘কারা আসে কারা যায়, তার হিসাব রাখার জন্য আমরা একটি রেজিস্টার খাতা বানাই। যারা যারা আলোচনায় আসত, সবাই নামধাম লিখত। পরে যে ওই খাতাটা কোথায় গেল, সেটা বলতে পারি না।’

এআরওয়াইয়ের সঙ্গে সংযোগ: চট্টগ্রামে আটক ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাবউদ্দিন আহমদ আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, ২০০৪ সালে অস্ত্রের চালান ধরা পড়ার আগে এআরওয়াইয়ের দুই কর্মকর্তা দুই দফায় ঢাকায় এসে এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিমের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁদের একজন এআরওয়াই ডিজিটাল নেটওয়ার্কের (এর অধীন আটটি টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নাম সালমান ইকবাল।

সাহাবউদ্দিন আদালতকে বলেছেন, ঢাকায় আসার পর এনএসআইয়ের তৎকালীন এক কর্মকর্তার বেয়াই ও এআরওয়াইয়ের সালমান ইকবাল টিভি চ্যানেলের জন্য নির্ধারিত স্থান (সাইট) পরিদর্শন করতে যান।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, এনএসআইয়ের কর্মকর্তার ওই বেয়াই হলেন আরসিইউডির আবদুর রশিদ চৌধুরী। আবদুর রশিদ প্রথম আলোর কাছে তা স্বীকার করে বলেন, আবদুর রহিম তাঁর পূর্বপরিচিত। রহিমই তাঁকে এআরওয়াই টেলিভিশনের বাংলাদেশের প্রধান হিসেবে যুক্ত করান। সালমান ইকবালের সঙ্গে হোটেল শেরাটনে বৈঠকের কথাও স্বীকার করেন তিনি। অবশ্য শেষ পর্যন্ত এআরওয়াই টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে চালু হয়নি।

4 February 2011

ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জাকাতের টাকা সংগ্রহের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জাকাতের টাকা সংগ্রহ ও তা রাজনৈতিক দলের জন্য ব্যয় করার অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ করেছে জাকাত বোর্ড ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ব্যাংকিং নীতি না মেনে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছ থেকে এত দিন ধরে সংগ্রহ করা অর্থ সরকারের জিম্মায় ফেরত নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে সংস্থা দুটি। এ ছাড়া এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংস্থা দুটি অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জাকাত বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাকাত সংগ্রহের জন্য আমরা ইসলামী ব্যাংকে হিসাব খুলি। এই হিসাব থেকে পাওয়া অর্থ শরিয়ত মোতাবেক আমরা আটটি খাতে ব্যয় করি। ইসলামী ব্যাংক সরকারি ব্যাংক হিসাবের আদলে নিজেরাও হিসাব খোলে। সেই হিসাবে প্রাপ্ত টাকা তারা নিজেদের মতো করে ১৫টি খাতে ব্যয় করে। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি।'

16 January 2011

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত: গবেষণা, বই জালিয়াতি ও ভুয়া সনদ দিয়ে পদোন্নতির চেষ্টা

কুদরাত-ই-খুদা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় | তারিখ: ১৭-০১-২০১১

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অন্যের গবেষণাপত্র ও বই জালিয়াতি করে নিজের নামে প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে। এসব প্রকাশনা দেখিয়ে তিনি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার চেষ্টাও করছেন। তিনি আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু ইউনুছ খান মুহম্মদ জাহাঙ্গীর। ক্যাম্পাসে তিনি জামায়াতপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। এর আগে ২০০১ সালে এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উঠলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর কাগজপত্র তলব করেছিল।

জানা গেছে, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক ও একজন গবেষক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগকারী ব্যক্তিরা হলেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম ও রেজাউল করিম এবং কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষক মোস্তাক মোহাম্মদ ও এ এস মোহাম্মদ আলী।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, আবু ইউনুছ খান মুহম্মদ জাহাঙ্গীর বিভিন্ন ব্যক্তির গবেষণাপত্র, প্রকাশিত বইয়ের কোনো কোনো অংশ হুবহু ও কোনো অংশ আংশিক ঘুরিয়েফিরিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মালিকানাধীন বা প্রতিষ্ঠানের জার্নালে নিজের নামে প্রবন্ধ আকারে প্রকাশ করেছেন। তাঁরা প্রকাশিত এমন সাতটি প্রবন্ধের বিষয়ে অভিযোগ আনেন।

অভিযোগে বলা হয়, ওই সব প্রবন্ধ দেখিয়ে মুহম্মদ জাহাঙ্গীর ২০০৯ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আবেদন করেন। আবেদনপত্রে সংযুক্ত ফাজিল পরীক্ষার নম্বরপত্রে উল্লিখিত ‘পাস’ ফলাফলকে তিনি দ্বিতীয় বিভাগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা বেআইনী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর আগে ঠিক একই ধরনের ঘটনায় (‘পাস’ ফলাফল বদলে প্রথম বিভাগ উল্লেখ করায়) একই বিভাগের শিক্ষক মুজিবর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত হয়েছিলেন।

দুদকে কাগজপত্র তলব: বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ১৯৯৭ সালে মুহম্মদ জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালের জুলাই মাসে তিনি একই বিভাগের অধীনে এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তি হন। একই সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি না নিয়ে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) অধীনে পরিচালিত অগ্রণী স্কুলে আরবি বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি সাত বছর বিনা ছুটিতে সরকারি বেতন-ভাতা ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেলোশিপ গ্রহণ করেছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্টে অবৈধ। অভিযোগকারী ব্যক্তিরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী চাকরি করা কোনো ব্যক্তি এমফিল বা পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হলে অবশ্যই তাঁকে কমপক্ষে এক বছরের শিক্ষাকালীন ছুটি নিতে হবে। তিনি তা করেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, দুদক ২০০১ সালে তাঁর এসব কাগজপত্র তলব করেছিল। কিন্তু কিছুদিন পর বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এলে বিষয়টি আর এগোয়নি। দুদকে কাগজপত্র তলব করার বিষয়টি আবু ইউনুছ খান মুহম্মদ জাহাঙ্গীর স্বীকারও করেছেন।

দ্বিতীয় তদন্ত কমিটি: গত ৬ ডিসেম্বর সিন্ডিকেট কৃষি অনুষদের ডিন সোহরাব আলীকে আহ্বায়ক করে উচ্চতর কমিটি গঠন করে। কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এর আগেও এসব অভিযোগ তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মাহবুবর রহমানকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করেছিল। মাহবুবর রহমানের সঙ্গে গতকাল মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ওই কমিটির কাছে আবু ইউনুছ খান মুহম্মদ জাহাঙ্গীর তাঁর দোষ স্বীকার করেছিলেন। কমিটি সুপারিশসহ প্রতিবেদনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে জমাও দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য কৃষি অনুষদের ডিন সোহরাব আলীকে আহ্বায়ক করে আরেকটি কমিটি করেছে।

আবু ইউনুছ খান মুহম্মদ জাহাঙ্গীরের সঙ্গে গতকাল বিকেলে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে রোববার (আজ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেন। তখনই তাঁর বক্তব্য জানা জরুরি বলে জানালে তিনি অভিযোগগুলো শোনেন এবং সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহান বলেন, আগের কমিটি সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিয়েছে। এখনকার কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

1 January 2011

৪০ হাজার রপ্তানির পোশাক জব্দ: দুবাইতে বসে ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি!

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম | তারিখ: ০২-০১-২০১১

দক্ষিণ আফ্রিকায় রপ্তানির জন্য প্রস্তুত ৪০ হাজার শার্ট (শিশু পোশাক) ছিনতাইয়ের অভিযোগে পুলিশ দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। চট্টগ্রামের একটি গুদাম ও ঢাকার উত্তরা থেকে ছিনতাই হওয়া সব পোশাকও উদ্ধার করা হয়েছে। চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর আটজন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সাজ্জাদ হোসেন দুবাইতে বসে এই ছিনতাইয়ের সমন্বয় করেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া সন্ত্রাসীর নাম রুবেল ও কাভার্ড ভ্যানের চালক মোহাম্মদ জহির। এঁদের মধ্যে রুবেল পলাতক আসামি সাজ্জাদের বাহিনীর সদস্য। রুবেলের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা আছে। তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তাকারীদের এখন হত্যার হুমকি দিচ্ছেন সাজ্জাদ।

সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে শহরতলির আতুরার ডিপোর পশ্চিম হাজিপাড়ার জনৈক বাহাদুরের গুদাম থেকে ছিনতাই হওয়া সাড়ে সাত হাজার শার্ট জব্দ করা হয়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রুবেল তিনতলা গুদাম ভবন থেকে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ পুকুরটি ঘেরাও করে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আজ রোববার আদালতে আবেদন করা হবে। বাকি সাড়ে ৩২ হাজার শার্টসহ একটি কাভার্ড ভ্যান গত শুক্রবার ঢাকার উত্তরা থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় চালক জহিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চান্দগাঁও থানার খতিজা এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড এক্সেসরিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৪০ হাজার তৈরি শার্ট পার্শ্ববর্তী মোনেনো ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইনে পাঠানো হয়। পোশাক পরিবহনের সময় সিঅ্যান্ডবি রাস্তার মাথায় তিন সন্ত্রাসী গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ওই গাড়িটি পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল দুটি মোটরসাইকেল আরোহীসহ আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী।

সূত্র জানায়, সাজ্জাদের নির্দেশে তাঁর জুনিয়র বাহিনীর প্রধান সরওয়ার ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দেন। তাঁর বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় তিনটি হত্যাসহ আটটি মামলা আছে। ছিনতাইয়ে অংশ নেওয়া আরও তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন, তিনটি হত্যাসহ নয়টি মামলার আসামি মহিন, একাধিক মামলার আসামি মেক্সন ও টিটন। এদের মধ্যে মহিন ও মেক্সন অস্ত্র পরিচালনায় পারদর্শী। খতিজা এন্টারপ্রাইজের পরিচালক জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় রপ্তানি করতে স্কুলের শিশুদের জন্য ৪০ হাজার শার্ট তৈরি করা হয়। জাহাজীকরণের আগেই সন্ত্রাসীরা তৈরি পোশাকবাহী গাড়িটি ছিনতাই করে।

চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর আট খুনের মামলায় শিবির ক্যাডার সাজ্জাদসহ চার সন্ত্রাসীর মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ২০০৮ সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের একটি আদালতে এই রায় দেওয়া হয়। রায়ের আগেই সাজ্জাদ দুবাইতে পালিয়ে যান।

বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সাজ্জাদ দুবাইতে বসে ৪০ হাজার শার্ট ছিনতাইয়ের সমন্বয় করেন। পুলিশ তাদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। তাঁর বাহিনীর একজন গ্রেপ্তার হওয়ায় সাজ্জাদ স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে ফোন করে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন।

ওসি দাবি করেন, ‘আমরা সাজ্জাদের জুনিয়র বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত করেছি। এরা বায়েজিদ ও পাঁচলাইশ এলাকায় ব্যাপক চাঁদাবাজি ও শিল্পাঞ্চলে ছিনতাই-ডাকাতি করছে। এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাজ্জাদের বাহিনীর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমরা যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত আছি। কারণ, মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে সাজ্জাদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন।’

13 December 2010

সাবেক শিল্পসচিব শোয়েব আহমেদের জবানবন্দি: ‘দেশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে অবগত’

| তারিখ: ১৪-১২-২০১০

[১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব শোয়েব আহমেদ গত ৭ অক্টোবর চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সাক্ষী হিসেবে দেওয়া তাঁর এ জবানবন্দি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো—]

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল অবৈধ অস্ত্র আটক করার সময় আমি শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলাম। ২ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমাকে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামান ফোন করেন। তিনি জানান, গত রাতে চট্টগ্রাম সিইউএফএল ঘাটে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র আটক হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের লোকজন সেগুলো ঘিরে রেখেছে। সেখানে তারা কাউকে যেতে দিচ্ছে না। সিইউএফএলের এমডি আমাকে ফোনে এসব জানিয়েছেন।’

আমি জিজ্ঞেস করি, ওখানে কি সিইউএফএলের নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন উপস্থিত ছিল না? তাঁদের উপস্থিতিতে সেখানে অবৈধ অস্ত্রের ট্রলার কীভাবে ভিড়ল? আর কীভাবেই সে অস্ত্র আনলোড হলো? জবাবে

ইমামুজ্জামান বললেন, ‘এটা তো আমারও প্রশ্ন।’

আমি তাঁকে নির্দেশনা দিই, বিসিআইসির চেয়ারম্যান হিসেবে সিইউএফএলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্পৃক্ততা ও শৈথল্য আছে কি না, তা নিরূপণ করতে হবে। ... প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পর আপনি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন। ...

আমি ইমামুজ্জামানকে জিজ্ঞেস করি, এ বিষয় আপনি আর কাকে জানিয়েছেন? তিনি জবাব দেন, ‘আমি মন্ত্রী মহোদয়কেও বিষয়টি জানিয়েছি।’...

৪ এপ্রিল (২০০৪) সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে আমি অফিসে যাই। সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টায় আমি শিল্পমন্ত্রী (মতিউর রহমান নিজামী) মহোদয়ের কক্ষে যাই। আমি নিজেই আলাপ শুরু করি। আমি বলি, শুক্রবার ইমামুজ্জামান সাহেব ফোন করেছিলেন। তিনি আমাকে সিইউএফএল ঘাটে অস্ত্র আটকের ব্যাপারে জানিয়েছেন। আমার কথা শেষ করতে না করতেই তিনি (নিজামী) বলেন, ‘আমি এ বিষয় সবকিছু অবগত আছি।’

আমি মন্ত্রীকে বলি, আমি ইমামুজ্জামান সাহেবকে নির্দেশ দিয়েছি সিইউএফএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। তাঁকে এটাও নির্দেশ দিয়েছি, যেন গৃহীত ব্যবস্থা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেন। আজ ইমামুজ্জামান সাহেব আসবেন এবং গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে জানাবেন।

মন্ত্রী মহোদয় আমাকে বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সরাসরি অ্যাকশনে নেমেছে। তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছে। সিইউএফএলের কেউ জড়িত কি না, তা তারাই বের করতে পারবে। শিল্প মন্ত্রণালয়কে আলাদাভাবে কিছু করতে হবে না।’

তখন আমি বলি, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এ সম্পর্কে খবরগুলো দেখেছি, তাতে শিল্প মন্ত্রণলয়কে জড়িয়ে খবর পরিবেশিত হয়েছে। এই বিষয়ে আমাদের অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এ জন্যই আমি বিসিআইসির চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছি ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রণালয়কে জানাতে। আমি মনে করি, তা দরকার আছে।

এ পর্যায়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের হাইয়েস্ট অথরিটিও (সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ) এ বিষয়ে অবগত আছেন। সরকার সব ব্যবস্থা নিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনি কি মনে করেন আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি নাই?’

শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপের সময় বলি, বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে ঘটনার রাতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব নুরুল আমিন সিইউএফএলের রেস্টহাউসে অবস্থান করছিলেন। তাঁর সেখানে অবস্থান সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। তিনি কবে, কখন এই ট্যুর প্রোগ্রাম করেন, তাও আমি জানি না। ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে তিনি কীভাবে ট্যুর প্রোগ্রাম করলেন, তাও বুঝতে পারলাম না।

তখন মন্ত্রী বলেন, ‘আপনি তো সরকারি কাজে বেশ কিছুদিন বিদেশে ছিলেন, এ সময় অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিন সাহেবই তো সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। সেভাবেই হয়তো তিনি এ ট্যুরে গিয়ে থাকবেন।’

আমি বললাম, আজ রোববার, তিনি এখনো ফেরেননি। সিইউএফএলের এত বড় ঘটনা সম্পর্কে তিনি ঘটনাস্থলে অবস্থান করা সত্ত্বেও কিছুই জানাননি। একটা ফোন পর্যন্ত করেননি। আমি অফিসে এসে শুনলাম, তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে সিইউএফএল থেকে কক্সবাজার চলে গেছেন।

মন্ত্রী মহোদয় বলেন, ‘এটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার।’

আমি বলেছি, এত বড় একটা ঘটনার সময় তাঁর সেখানে অবস্থান এবং কিছু না জানানোটা যথার্থ মনে করি না। এর জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন। সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’

এরপর আমি আমার কক্ষে চলে যাই। আধা ঘণ্টা পর মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামান আমার দপ্তরে আসেন। তিনি জানান, ‘স্যার সিইউএফএলের এমডিকে সামগ্রিক বিষয়ে একটি রিপোর্ট জরুরি ভিত্তিতে প্রদান করতে বলেছি।’

আমি জানতে চাই, এ রিপোর্ট কবে নাগাদ পাবেন? তিনি বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাঠাতে বলেছি।’

এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম। কারণ তিনি আমাকে আলাদাভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেননি। এটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। আমি ইমামুজ্জামানকে তখনি মন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিই। ভেবেছিলাম, হয়তো তিনি বুঝিয়ে বললে মন্ত্রী ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন।

প্রায় ২০-২৫ মিনিট পর ইমামুজ্জামান আমার কক্ষে ফিরে এসে বলেন, ‘মন্ত্রীকে অনেক বোঝালাম। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কাজ করছে বিধায়, মন্ত্রী মহোদয় আলাদা কোনো ব্যবস্থা নিতে মানা করেছেন।’

বুঝতে পারলাম মন্ত্রী আমাকে যা বলেছেন, তাঁকেও তাই বলেছেন।

তিন-চার দিন পর ইমামুজ্জামান আমাকে ফোন করে জানান, সিইউএফএল থেকে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। রিপোর্টে অস্ত্র আটক বিষয়ে কিছুই বলা নেই। সে রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর মতো নয়। এই রিপোর্ট অত্যন্ত দায়সারা গোছের।

অস্ত্র আটকের পরে ১৫-২০ দিন অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিনের সঙ্গে আমার কোনো দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। তিনি যে ঢাকায় ফেরেন, তাও জানতে পারিনি। তিনি এমনিতেই আমার কক্ষে খুব একটা আসতেন না। একটা স্পর্শকাতর ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়ে সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছিল, আর ঘটনার সময় তিনি সিইউএফএলে অবস্থান করছিলেন, অথচ সে ব্যাপারে তিনি আমার কাছে তাঁর কোনো অবস্থান ব্যাখ্যা করেননি। তিনি যে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদ করেছেন, সেটাও আমার জানা নেই। ...তিনি মন্ত্রীর (নিজামী) অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন। মন্ত্রীই তাঁকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসেন। তিনি মূলত রেলওয়ের ক্যাডারের। ...

অস্ত্র আটকের পর মে ও জুন মাসে আমি কয়েকটি দেশ সফর করি সরকারি কাজে। জুন মাসে (২০০৪) ইন্দোনেশিয়া থেকে ফেরার পর একদিন আলাপের সময় শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাকে বলেছিলাম সরকার এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, স্বরাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি হয়েছে। তারা তাদের কার্যক্রমও গ্রহণ করেছে। আমি তো মনে করি, সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থাই নিয়েছে।’

আমি বিনীতভাবে বললাম, আমি এখনো মনে করি বিসিআইসির পক্ষ থেকে যা করা দরকার ছিল, তা করা হয়নি। তার ফলে শিল্প মন্ত্রণালয়ও এ ক্ষেত্রে কিছু করতে পারছে না। প্রতি-উত্তরে কিছুটা বিরক্তির স্বরে তিনি (নিজামী) বলেন, ‘দেশের সরকার তো একটাই। আলাদা আলাদাভাবে এখানে কী করার আছে?’

এরপর শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বদলি হওয়ার আগ পর্যন্ত মন্ত্রীর সঙ্গে আমার এ বিষয়ে আর কোনো আলাপ হয়নি। আমার মনে হয়েছিল, তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপছন্দ করেন। ২৮ জুলাই (২০০৪) আমাকে অপ্রত্যাশিতভাবে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। ...বদলির সময় শিল্প মন্ত্রণালয়ে আমার চাকরির মেয়াদ ছিল মাত্র ১০ মাসের। ...

অস্ত্র আটকের পর যে তিন মাস আমি শিল্প মন্ত্রণালয়ে ছিলাম, সেই তিন মাসে আমার কাছে বারবার মনে হয়েছে, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার, কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা হচ্ছে।

শিল্পমন্ত্রীর কথাবার্তা ও অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিনের রহস্যজনক আচরণ দেখে মনে হয়েছে, পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ...

সিইউএফএল জেটি কেবল ওই সার কারখানার কাজেই ব্যবহূত হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অবৈধ অস্ত্রবাহী ট্রলার সিইউএফএলের জেটিতে কীভাবে ভিড়ল, সেই প্রশ্নের উত্তর আমি আজও খুঁজে পাইনি। সেটা আমার কাছে এখনো রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে।

এই আমার জবানবন্দি। আমি স্বেচ্ছায় এ বক্তব্য প্রদান করলাম।

দশ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলা: নিজামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, সন্দেহে হাওয়া ভবন

টিপু সুলতান ও একরামুল হক | তারিখ: ১৪-১২-২০১০

দশ ট্রাক অস্ত্র চালান এ দেশে আনা এবং তা খালাস পর্যন্ত পুরোটাই জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে হয়েছে। অধিকতর তদন্তে এর প্রমাণ পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি।

অস্ত্রের চালান আনার বিষয়টি তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী আগে থেকে জানতেন বলে তদন্তে কিছু সাক্ষ্য ও তথ্য পাওয়া গেছে। তাই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে এমন ইঙ্গিত দিয়ে সিআইডি আদালতে প্রতিবেদনও দাখিল করেছে। সিআইডির একটি সূত্র প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছে।

ইতিমধ্যে জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে এ মামলায় দুই দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রকৃত সত্য গোপন এবং দায়সারা তদন্তের মাধ্যমে মূল দোষীদের রক্ষার চেষ্টা করেছেন।

এ অবস্থায় অস্ত্রের চালানের সঙ্গে ‘হাওয়া ভবনের’ কারও কারও সম্পৃক্ততা ছিল বলে সন্দেহ সরকারি মহলের। প্রসঙ্গত, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে বেশ প্রভাব ছিল হাওয়া ভবনের। চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে দেওয়া এ মামলার অন্যতম আসামি হাফিজুর রহমানের জবানবন্দিতে হাওয়া ভবনের প্রসঙ্গটি এসেছে। হাফিজ বলেন, অস্ত্র চালানটি এ দেশে আনার মাস খানেক আগে উলফার সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়া ঢাকার বনানীতে অবস্থিত হাওয়া ভবনে যান। হাফিজকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে পরেশ বড়ুয়া এনএসআইয়ের পরিচালক (নিরাপত্তা) উইং কমান্ডার (অব.) সাহাবউদ্দিন আহমদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা বলে হাওয়া ভবনের ভেতরে যান। পরেশ বড়ুয়া বলেছিলেন, অস্ত্র চালান যাতে নির্বিঘ্নে আসতে পারে, সে জন্য সাহাবউদ্দিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে; তিনি হাওয়া ভবনের লোক। দুই ঘণ্টা পর হাওয়া ভবন থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে পরেশ বড়ুয়া হাফিজকে জানান, সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে।

জানা গেছে, হাফিজের এই জবানবন্দির পর হাওয়া ভবনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়। তবে এখন পর্যন্ত তদন্তে হাওয়া ভবন বা ওই ভবনের প্রধান ব্যক্তি তারেক রহমানের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আমলযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। অবশ্য হাফিজও প্রথম দফায় গত বছরের ২ মার্চ দেওয়া জবানবন্দিতে পরেশ বড়ুয়ার হাওয়া ভবনে যাওয়া-সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেননি। হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে দুই দফায় জিজ্ঞাসাবাদেও এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য তদন্তকারীরা পাননি বলে জানা গেছে। তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কেউ কেউ মনে করেন, ভালোভাবে তদন্ত হলে তারেক রহমানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলতে পারে। তাই এখন এ বিষয়টি তদন্তে গুরুত্ব পাচ্ছে।

সাবেক অতিরিক্ত শিল্পসচিবও সন্দেহভাজন: শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে সংরক্ষিত এলাকা সিইউএফএল জেটিতে অস্ত্র খালাস হয় ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে। তখনকার শিল্পমন্ত্রী নিজামীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিন ওই রাতে সিইউএফএলের গেস্টহাউসে ছিলেন। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে বলে সিআইডি সূত্র জানিয়েছে।
এ মামলায় মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) কামালউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্র খালাসের রাতে সেখানকার গেস্টহাউসে অবস্থান করা সম্পর্কে তখন নুরুল আমিন তদন্তকারীদের বলেছিলেন, তিনি কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। যাত্রাবিরতির অংশ হিসেবে তিনি ওই রাতে সিইউএফএলের গেস্টহাউসে ওঠেন। পিপির মতে, চট্টগ্রাম শহর বাদ দিয়ে এত দূরে কর্ণফুলী নদীর ওপারে যাত্রাবিরতি কোনো হিসাবে মেলে না।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের তখনকার সচিব শোয়েব আহমেদ আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, নুরুল আমিন কবে, কখন সেখানে গেছেন, চট্টগ্রাম সফর কর্মসূচি কীভাবে করলেন, তা তিনি জানতেন না। বিষয়টি তিনি শিল্পমন্ত্রী নিজামীকে বলেছিলেন। তখন নিজামী বলেছিলেন, ‘আপনি তো সরকারি কাজে বেশ কিছুদিন বিদেশে ছিলেন, এ সময় নুরুল আমিন সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। সেভাবেই হয়তো তিনি এ ট্যুরে গিয়ে থাকবেন।’ শোয়েব আহমেদ বলেন, নুরুল আমিন ছিলেন নিজামীর অত্যন্ত আস্থাভাজন।

নিজামী আগেই জানতেন!: পিপি কামালউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সিইউএফএলের দুই কর্মকর্তা, সাবেক শিল্পসচিব ও বিসিআইসির চেয়ারম্যানের জবানবন্দি পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, নিজামী ও নুুরুল আমিন অস্ত্রের চালান আসার বিষয়টি আগে থেকে জানতেন। তাই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ধারণা করা হচ্ছে, সিইউএফএলের জেটিঘাটে অস্ত্র খালাস নির্বিঘ্ন করতে নিজামীর আস্থাভাজন নুুরুল আমিনকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল। তা ছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে সংরক্ষিত এ এলাকায় অস্ত্র খালাসের ঘটনা ধরা পড়ার পরও এ ব্যাপারে বিভাগীয় তদন্ত বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে দেননি নিজামী। যা ইতিমধ্যে সাবেক শিল্পসচিব ও বিসিআইসির চেয়ারম্যান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন। তাঁরা বলেন, তখন অস্ত্র আটকের ঘটনায় শিল্প মন্ত্রণালয়কে জড়িয়ে খবর প্রকাশের পরও কোনো ব্যাখ্যা বা ব্যবস্থা নিতে দেননি শিল্পমন্ত্রী নিজামী। বরং তিনি বলেছিলেন, এ বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ অবগত আছে। সরকার সব ব্যবস্থা নিচ্ছে।

গত ৭ অক্টোবর শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা শোয়েব আহমেদ চট্টগ্রামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, অবৈধ সমরাস্ত্রের বিশাল চালানটি ধরা পড়ার দুই দিন পর (৪ এপ্রিল, ২০০৪) শিল্পমন্ত্রী নিজামীকে জানাতে গেলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এ বিষয়ে সবকিছু অবগত আছি।’

শোয়েব আহমেদ আরও বলেন, অস্ত্র আটকের পর যে তিন মাস তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ে ছিলেন, তাতে তাঁর মনে হয়েছে, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। মন্ত্রীর কথাবার্তা এবং অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিনের রহস্যজনক আচরণ দেখে মনে হয়েছে, পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

বাবর ও ওমর ফারুকের তৎপরতা: মহানগর আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) কামালউদ্দিন আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, বাবর ও ওমর ফারুক ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার মূল হোতাদের বাঁচানোর জন্য সক্রিয় ছিলেন। তদন্তে এ ব্যাপারে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।

২০০৪ সালের এই অস্ত্র আটকের ঘটনায় গঠিত সরকারি তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব ওমর ফারুক। কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন এনএসআইয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এনামুর রহমান চৌধুরী, ডিজিএফআইয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শামসুল ইসলাম ও সিআইডির ডিআইজি ফররুখ আহাম্মদ।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর এনামুর রহমান চৌধুরী ও ২০ সেপ্টেম্বর ফররুখ আহাম্মদ আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, জোট সরকার আমলে তদন্তে এই অবৈধ অস্ত্র চালানের সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থার সম্পৃক্ততার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে লুৎফুজ্জামান বাবর, ওমর ফারুক ও রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী তৎপর ছিলেন।

ফখরুখ আহাম্মদ আরও বলেন, এ ঘটনায় এনএসআইয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জড়িত থাকার কথা তিনি তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী আমাকে বলেন, অনেক ব্যাপারে ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট জড়িত থাকে। এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। ১৯৯৬ সালে কক্সবাজারে এক ট্রলার অস্ত্র ধরা পড়ে। খোঁজ নিয়ে দেখেন, সে ব্যাপারে কোনো মামলাও হয়নি। কাজেই জাতীয় স্বার্থে আমাদের একটু বুঝে-শুনে কাজ করতে হবে। আমি কমিটি করে দিয়েছি। স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করেন। উনাকে সব কিছু বলা আছে।’

সিআইডি সূত্র জানায়, বাবরকে এ পর্যন্ত দুই দফায় রিমান্ডে ঢাকায় সিআইডি সদর দপ্তরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে খুব বেশি তথ্য বের করা যায়নি। এ ছাড়া ওমর ফারুককে দুই দফায় সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এনএসআইয়ের চার কর্মকর্তা জড়িত: এই অস্ত্র চালান আনার সঙ্গে যে এনএসআইয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জড়িত, তা চারদলীয় জোট সরকার আমলেই মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত প্রধান আসামি হাফিজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলেছিলেন। তখন তা গোপন করা হয় বলে অভিযোগ আছে।

পরে অধিকতর তদন্ত শুরু হওয়ার পর গত বছর ২ মার্চ হাফিজ চট্টগ্রামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এনএসআইয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা ছাড়াও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) তৎকালীন পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দারের সম্পৃক্ততার কথা বলেন। এরপর রেজ্জাকুল হায়দার, তৎকালীন এনএসআইয়ের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাবউদ্দিন, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন ও মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রেজ্জাকুল হায়দার ও লিয়াকত ছাড়া অন্য সবাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আর এনামুর রহমান চৌধুরী এ ঘটনায় সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এনামুর রহমানও বলেন, অস্ত্রের চালানের সঙ্গে এনএসআইয়ের এক কর্মকর্তার জড়িত থাকার কথা তদন্তের শুরুতেই বেরিয়ে আসে। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির বৈঠকে আলোচনাও হয়। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনে তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, উলফার জন্য অস্ত্র চালানটি এ দেশে আনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ায় এনএসআইয়ের মহাপরিচালক আবদুর রহিম, পরিচালক সাহাবউদ্দিন ও উপপরিচালক লিয়াকত যুক্ত ছিলেন। আর এ ক্ষেত্রে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এবং দুবাইভিত্তিক পাকিস্তানি ব্যবসায়িক গ্রুপ এআরওয়াইয়ের যোগসাজশ ছিল। এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবরকে চট্টগ্রাম পাঠানো হয় অস্ত্র বহনের জন্য ট্রাক ভাড়া করার জন্য। আকবর জবানবন্দিতে বলেছেন, ট্রাকগুলো ভাড়া করা হয়েছিল মৌলভীবাজার পর্যন্ত মালামাল পরিবহনের জন্য। আর অস্ত্র খালাসের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন মেজর লিয়াকত। উইং কামন্ডার সাহাবউদ্দিন শুরু থেকে পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকলেও ঘটনার রাতে অসুস্থতার অজুহাতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এ অস্ত্র চালান আনার ঘটনায় আর্থিকভাবে লাভবানও হয়েছেন। তবে কে কত টাকা পেয়েছেন, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য বের করা যায়নি এখনো।

আদালতের সাত পর্যবেক্ষণ: মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, আদালতের পর্যবেক্ষণে জোট আমলের তদন্তে সাতটি দুর্বলতার কথা উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কোন জলযানে (জাহাজ) করে কোত্থেকে অস্ত্রগুলো বাংলাদেশে আনা হয়েছে, কারা এনেছে, চট্টগ্রামের সিইউএফএল জেটিঘাটে কার নির্দেশে অস্ত্র খালাস হয়েছে ইত্যাদি।

জোট সরকার আমলে তদন্ত শেষে আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে এ মৌলিক বিষয়গুলোর কোনো উল্লেখ ছিল না। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার অধিকতর তদন্তের নির্দেশে আদালত এ সাতটি পর্যবেক্ষণের কথা বলেন। সেটা বিবেচনায় রেখে ২০০৭ সালের ২০ নভেম্বর থেকে অধিকতর তদন্ত শুরু করে সিআইডি।

মামলাটির তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে দাবি করা হলেও কবে নাগাদ সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে তা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সিআইডির কর্মকর্তারা।

অস্ত্র উলফার, এসেছে চীন থেকে: চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে দাখিল করা সিআইডির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অধিকতর তদন্তে জানা গেছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম) জন্য এসব অস্ত্র, গোলাবারুদ আনা হয়। চীনের সমরাস্ত্র কারখানা নর্থ ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (নরিনকো) থেকে অস্ত্রগুলো সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশের এনএসআই ও ডিজিএফআই তৎকালীন কতিপয় কর্মকর্তা এই অস্ত্র সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন।

তবে কোন জলযানের মাধ্যমে অস্ত্রগুলো বাংলাদেশে আনা হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। এ ব্যাপারে তদন্ত অব্যাহত আছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

সিআইডির একটি সূত্র জানায়, এত দিন পর কোন জাহাজে অস্ত্র এসেছে, তা বের করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। আসামি হাফিজ জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, রাতের বেলায় বঙ্গোপসাগরে অস্ত্র খালাস করা হয়। তখন ওই জাহাজের নাম কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল।

উলফার মাত্র একজন আসামি: বিশাল এই অস্ত্রের চালান আনার সঙ্গে জড়িত উলফার সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়াকে এ মামলায় আসামি করা হবে। এরই মধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁর নাম-ঠিকানা যাচাই করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, তাঁরা পরেশ বড়ুয়াকে পেলে গ্রেপ্তার করবেন।

কিন্তু এ ঘটনায় জড়িত উলফার আর কারও নাম এখন পর্যন্ত তদন্তে উদ্ঘাটন করা যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে যে পাঁচজন উলফা সদস্যকে ধরে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়, তাদেরও নাম-পরিচয় বের করতে পারেনি সিআইডি। যদিও তাঁদের শনাক্ত করার মতো ব্যক্তি হাফিজ, মেজর লিয়াকত বা আকবর গ্রেপ্তার আছেন। জানা গেছে, লিয়াকতের চাপের মুখেই পুলিশ এসব উলফা সদস্যকে ছেড়ে দিয়েছিল। এ ছাড়া হাফিজের সঙ্গে আবুল হোসেন নামে যে ব্যক্তি ট্রাক ভাড়া করতে গিয়েছিলেন, তাঁর পরিচয়ও বের করতে পারেনি সিআইডি।

এসব প্রশ্নের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি শুধু বলেছেন, তদন্ত চলছে। উলফার আর কারও নাম এলে তাদেরও আসামি করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি সহকারী পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অধিকতর তদন্তে অনেক অগ্রগতি রয়েছে। আদালত যে সাতটি নির্দেশনা দিয়েছেন, অধিকতর তদন্তে ইতিমধ্যে ছয়টি নির্দেশনার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এর বাইরে তদন্ত কর্মকর্তা আর কিছু বলতে রাজি হননি।

4 December 2010

'বাবা বেঁচে থাকতেও আমি অনাথ': মেয়ের মামলায় কুলিয়ারচর জামায়াতের আমির গ্রেপ্তার

নাসরুল আনোয়ার, হাওরাঞ্চল

'জীবনে বাবার আদর পাইনি। বাবা ভরণ-পোষণ না করায় টাকার অভাবে লেখাপড়া করতে পারিনি। আমার অতিলোভী বাবা বিনা কারণে মাকে বঞ্চিত রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। বাবা বেঁচে থাকতেও অনাথের মতো আমাকে বড় হতে হয়েছে। ইসলামী আদর্শের নেতা হয়েও তিনি স্ত্রী-কন্যার প্রতি অবিচার করেছেন। বাবার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে তাই বাধ্য হয়েছি।' কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট সৈয়দ মহিউদ্দিনের মেয়ে সৈয়দা নুসরাত জাহান মীম (১৯) গতকাল শনিবার বিকেলে কালের কণ্ঠের কাছে এভাবেই তাঁর ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন।

সৈয়দা নুসরাত জাহান মীমের করা মামলায় পুলিশ তাঁর বাবা সৈয়দ মহিউদ্দিনকে (৫৫) গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বেসরকারি সংস্থা ইসলামী মানবিক উন্নয়ন সংস্থার কুলিয়ারচরের কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করে গতকাল আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে নিজ কন্যার দায়ের করা ভরণ-পোষণের মামলায় গাজীপুর জেলা জজ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। মহিউদ্দিনের গ্রামের বাড়ি কুলিয়ারচরের পালতিমা গ্রামে।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৬ সালে সংঘটিত একটি হত্যা মামলায় সৈয়দ মহিউদ্দিনের যাবজ্জীবন সাজা হয়। ১৩ বছর সাজা ভোগের পর ১৯৮৯ সালে তিনি জেল থেকে বেরিয়ে আসেন। সৈয়দ মহিউদ্দিন ১৯৯২ সালে প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহারের অনুমতি ছাড়াই বাজিতপুর পৌরসভার চারবাড়ি এলাকার লুৎফুন্নাহার দিনাকে বিয়ে করেন। পরে পারিবারিক আদালতে খোরপোষ ও বিনা অনুমতিতে বিয়ে করার অভিযোগ এনে ১৯৯৭ সালে শামসুন্নাহার আদালতে মামলা দায়ের করলে তৃতীয় সিনিয়র সহকারী জজ আদালত সৈয়দ মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে দেনমোহর ও ভরণ-পোষণ বাবদ এক লাখ ৬৭ হাজার টাকার ডিক্রি জারি করেন। শামসুন্নাহারের অভিযোগ, সৈয়দ মহিউদ্দিন আজ পর্যন্ত ডিক্রির টাকা পরিশোধ করেননি। এ ছাড়া মহিউদ্দিনের ঔরসজাত একমাত্র মেয়ে সৈয়দা নুসরাত জাহান মীমের কোনো ধরনের দায়িত্ব তিনি নেননি। বাবার স্নেহ-আদর ছাড়াই মেয়েটি বড় হয়। অভিযোগে আরো জানা যায়, ২০০৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মহিউদ্দিন ঢাকায় এফিডেভিটের মাধ্যমে মেয়ে মীমকে ত্যাজ্য ও সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত ঘোষণা করেন। মীম মামলা করায় তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন।

আদালত সূত্র জানায়, সৈয়দা নুসরাত জাহান বাবার বিরুদ্ধে গাজীপুর তৃতীয় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ২০০৭ সালের ১০ জুলাই মামলা করেন। ২০০৯ সালের ২৩ জুলাই আদালত মেয়ের ভরণ-পোষণ বাবদ মহিউদ্দিনকে ৯ লাখ ১২ হাজার টাকা দেওয়ার রায় (ডিক্রি) দেন। রায়ের বিরুদ্ধে মহিউদ্দিন গাজীপুর জেলা জজ আদালতে আপিল করলে চলতি বছরের ১৮ মে আদালত দোতরফা সূত্রে আপিল খারিজ করেন। সূত্রমতে, রায় দেওয়ার পর এক বছর দুই মাস পার হয়ে গেলেও মহিউদ্দিন মেয়ের পাওনা পরিশোধ করেননি। পরে বাদী মীম তৃতীয় সহকারী জজ আদালতে মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ চেয়ে আরেকটি আবেদন করলে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

সৈয়দা শামসুন্নাহার জানান, তিনি সফিপুর আনসার একাডেমীতে চাকরি করতেন। মহিউদ্দিন আনসার কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করিয়ে রেখেছেন। পরে বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে তিনি গাজীপুরের একটি সোয়েটার কারখানায় ১২ বছর চাকরি করে মীমকে লালন-পালন করেন। তিনি বলেন, 'ইসলামের লেবাসধারী ব্যক্তি হয়েও মহিউদ্দিন আমাদের সঙ্গে জঘন্য প্রতারণা করেছেন। টাকা-পয়সার অভাবে মেয়েটিকে লেখাপড়া করাতে পারিনি। আমরা তাঁর নানা অত্যাচার-অবিচারের প্রতিবাদ করায় তিনি আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতেও দ্বিধা করেননি। তাঁর জন্য আমাদের মা-মেয়ের জীবন তছনছ হয়ে গেছে।'

কুলিয়ারচর উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি সৈয়দ আবুল কালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মহিউদ্দিন স্ত্রী-কন্যার প্রতি অবিচার করেছেন। আদালতের নির্দেশনাও অমান্য করেছেন। আমরা এ ঘটনার নিন্দা ও মহিউদ্দিনের শাস্তি দাবি করছি।'

গাজীপুর জেলা আইনগত সহায়তা প্রদান কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এম নাজিম উদ্দিন বলেন, 'মেয়েটি (মীম) অসহায় বলে আমরা বিনা খরচে আইনি সহায়তা দিয়েছি।'
জামায়াত নেতা জেলহাজতে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি, ইসলামী মানবিক উন্নয়ন সংস্থার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ইসহাক মিয়া বলেন, 'রাজনৈতিক কারণে তিনি গ্রেপ্তার হননি। মেয়ের দায়ের করা মামলায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে।' কুলিয়ারচর থানার ওসি মো. মুঈদ চৌধুরী জানান, মেয়ের দায়ের করা মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় জামায়াত নেতা মহিউদ্দিনকে আটক করা হয়েছে। একটি হত্যা মামলায় মহিউদ্দিন যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করেন বলে ওসি নিশ্চিত করেন।

23 November 2010

জামায়াত-নিয়ন্ত্রিত কাফেলায় হাজিদের কোরবানির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

এস এম রানা, চট্টগ্রাম

১৭৬ জন হাজির কাছ থেকে কোরবানির পশুর দাম হিসেবে ৩০০ রিয়াল (প্রায় ছয় হাজার টাকা) করে আদায়ের পর ওই টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে একটি হজ কাফেলার বিরুদ্ধে। এ কাফেলা পরিচালনাকারী ইসকপ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিয়ন্ত্রিত 'সমাজকল্যাণ পরিষদ'। হাজিরা অভিযোগ করেছেন, কোরবানির পশুর টাকা আত্মসাৎ করার পাশাপাশি তাঁদের নিম্নমানের খাবার ও পানি সরবরাহ করা হয়েছে। রাখা হয়েছে আবাসিক হোটেলে।

সৌদি আবর থেকে মোবাইল ফোনে জাহাঙ্গীর আলম, আমিনুল হাছানসহ একাধিক হাজি কালের কণ্ঠকে জানান, দেশে থাকতেই ইসকপ তাঁদের কাছ থেকে কোরবানির পশুর জন্য ৩০০ রিয়াল করে নেয়। কিন্তু কোরবানি না দিয়ে সেই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তাঁরা। অবশ্য ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের হজ ও ট্রাভেলস বিভাগের কর্মকর্তা ইকবাল ফারুকী চৌধুরী এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ইকবাল ফারুকী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'হাজিদের টাকা আত্মসাতের প্রশ্নই ওঠে না। কোরবানির পশুর টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে_এটা কেউ প্রমাণ করতে পারলে তাঁকে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।'

জানা গেছে, চট্টগ্রাম জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের উদ্যোগে গঠিত ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ আগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিয়ে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করত। সেই ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদই এখন ইসকপ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামে লাইসেন্স নিয়ে হজ কাফেলা পরিচালনা করছে। চট্টগ্রামে জামায়াতের রুকন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবু তাহের ইসকপের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আফসার উদ্দীন চৌধুরী সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এবার যাত্রার আগে ইসকপ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের পক্ষ থেকে ১৭৬ জন হজযাত্রীকে জানানো হয়েছিল, ইসকপ অলাভজনক হজ কাফেলা। তাই প্রাথমিকভাবে হাজিদের কাছ থেকে জনপ্রতি দুই লাখ ৮০ হাজার করে নেওয়া হলেও হজ থেকে ফিরে আসার পর ব্যয় হিসাব করে উদ্বৃত্ত টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু দেশে ফেরার আগেই পানি, খাবার, বাসস্থান ও কোরবানি নিয়ে হাজিদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কাফেলার তত্ত্বাবধানকারী শফিউল আলম সোবহানী কালের কণ্ঠকে বলেন, পশু কোরবানি নিয়ে হাজিদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ায় তাঁদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলা হয়েছে। নিম্নমানের পানি ও খাবার সরবরাহ এবং হাজিদের আবাসিক হোটেলে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, হজ কাফেলায় কোনো সমস্যা নেই।

8 November 2010

অস্বচ্ছ ব্যয়ের অভিযোগ: ফাউন্ডেশনকে কোনো অর্থ না দিতে ইসলামী ব্যাংককে নির্দেশ

মনজুর আহমেদ | তারিখ: ০৯-১১-২০১০

ইসলামী ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের অস্বচ্ছ অর্থ ব্যয়ের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোম্পানির সামাজিক কল্যাণের (সিএসআর) নামে এই তহবিল ব্যয় করা হয়ে থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই অস্বচ্ছ ব্যয় ঠেকাতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ফাউন্ডেশনকে আর কোনো অর্থ বরাদ্দ না দিতে ইসলামী ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে।
পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত ফাউন্ডেশনকে ইসলামী ব্যাংক কী পরিমাণ অর্থ দিয়েছে এবং সেই অর্থ কোথায়, কীভাবে ব্যয় হয়েছে, তা পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিবন্ধন ছাড়াই ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে (এমআরএ) বলবে বলেও জানা গেছে।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শনে দেখা গেছে, সিএসআর তহবিল থেকে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করে ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন। এ বিষয়ে ক্ষুদ্রঋণ তদারকি সংস্থা এমআরএ ফাউন্ডেশনকে অনুমোদন না দিলেও ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে তারা। এমনকি এমআরএ ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনার বিষয়টি নাকচ করার পরও ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন তা মানছে না।
শরিয়াহ অনুসারে হালাল বলে বিবেচিত হয় না—এমন অর্থ প্রতিবছর ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ফাউন্ডেশনকে দিয়ে থাকে। এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেয় না ইসলামী ব্যাংক।
এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকে ফাউন্ডেশনের নামে আটটি ব্যাংক হিসাবে প্রাপ্ত লাভ, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, রাজশাহীতে কমিউনিটি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, হোমিও ক্লিনিকে লগ্নি করা অর্থের ওপর আয় ও ভাড়া আয়, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া যাকাতের অর্থ এবং অনুদান ফাউন্ডেশনে জমা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের পাঁচটি খাত থেকে আয় এই ফাউন্ডেশনে দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে (’০৭ সালের কিছু অর্থসহ) এসব খাত থেকে ৫০ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যাংকের আয় হয়। যার মধ্যে কোম্পানি কর (করপোরেট ট্যাক্স) দেওয়া হয় ২১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। প্রতিরক্ষা বাহিনীর গলফ ক্লাবে দেওয়া হয় ৩০ লাখ টাকা। আর বাকি ২৮ কোটি এক লাখ টাকা ফাউন্ডেশনকে দেওয়া হয়।
২০০৯ সালে এমন আয়ের পরিমাণ ছিল তিন কোটি ২৯ লাখ টাকা। যার মধ্যে এক কোটি ২৭ লাখ টাকা কোম্পানি কর এবং বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৫৭ লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা দেওয়া হয় ফাউন্ডেশনকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এসব অর্থের খরচের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে সামাজিক কল্যাণমূলক কাজের কথা উল্লেখ থাকলেও তহবিলের আর্থিক বিবরণী নেই। কিন্তু ব্যাংকের সাধারণ শেয়ারহোল্ডার ও আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্য বিস্তারিত আর্থিক প্রতিবেদনের প্রয়োজনীতা রয়েছে।
একজন বিদেশি দানবীর নাম প্রকাশ না করে বাংলাদেশের সিডর এলাকার জন্য ১৩ কোটি ডলার দান করেন। এই দান নিতে সরকার ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) মধ্যে চুক্তি হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে এই অর্থের মধ্যে ৪৫ লাখ ডলার বা ৩০ কোটি ৭৬ লাখ টাকার অনুদান ব্যবস্থাপনার জন্য (কৃষি কর্মসূচির আওতায়) আইডিবি ও ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে চুক্তি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর অর্থায়ন যথাযথ প্রক্রিয়ায় হচ্ছে কি না বা সরকারের কোনো সংস্থা তার দেখভাল করছে কি না তা স্পষ্ট নয়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবু নাসের মোহাম্মদ আব্দুজ যাহের প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোন কারণে আমাদের এমন চিঠি দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে পরিষ্কার হতে পারছি না, তাই এখনই কোনো মতামত দিতে পারছি না।’ তিনি আশা করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সহসাই তাঁদের কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্ঘাটিত তথ্য জানাবেন। তাহলে তাঁরাও এর সত্যতা যাচাই করতে পারবেন।
তবে আব্দুজ যাহের বলেন, ‘আমরা আমাদের শেয়ারধারী ও আমানতকারীদের কাছে কোনো অস্পষ্টতা বা অস্বচ্ছতা রাখি নাই। সবকিছুই তাঁদের কাছে পরিষ্কার করা হয়েছে।’

24 September 2010

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাউবো অফিসে হামলা: ছাত্রলীগের সঙ্গে সাবেক এক শিবির কর্মীও অংশ নেয়!

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ৩৫ কোটি টাকার দরপত্র গ্রহণের নির্ধারিত সময়ের পরে দরপত্র জমা দেওয়া নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের সাবেক এক কর্মীর অংশ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়ের করা মামলায় ওই শিবির কর্মীকে আসামিও করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতেই জেলা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মনির হোসেন বকুলকে গ্রেপ্তার করেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও রাজশাহী পাউবো সার্কেল অফিসে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত দরপত্র গ্রহণের শেষ সময় ছিল। নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৩ ঘণ্টা পর জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাকিবুল হাসান বিরুসহ ১০-১২ জনের একটি দল পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসে গিয়ে দুটি দরপত্র জমা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কর্মকর্তারা জমা নিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁরা পুলিশের উপস্থিতিতেই নির্বাহী প্রকৌশলীর টেবিলের কাচ ভাঙচুর করেন। এ গ্রুপে ছাত্রলীগের জেলা পর্যায়ে কয়েকজন নেতাসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাত্রশিবিরের সাবেক কর্মী শহীদও ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, শহরের উসকাঠিপাড়া গ্রামের তোবজুল হকের ছেলে শহীদ দীর্ঘ দিন শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিল। সম্প্রতি ছাত্রলীগের সঙ্গে মেশা শুরু করে শহীদ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খলিলুর রহমান সদর থানায় বৃহস্পতিবার রাতে দ্রুত বিচার আইনে যে মামলা করেছেন তাতে চারজন এজাহারভুক্ত আসামির মধ্যে শহীদও রয়েছে। মামলায় চারজনের বাইরে ১০-১২ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে। সদর থানার ওসি জানান, এ হামলার ঘটনায় মামলার পর পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতেই মহারাজপুর মেলা এলাকা থেকে জেলা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মনির হোসেন বকুলকে গ্রেপ্তার করেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকবাল মাহমুদ খান খান্না বলেন, 'শহীদসহ আরো কয়েকজন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত নয়, এরা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।'

22 September 2010

যুবকের এক প্রতিষ্ঠানের কাছেই এক লাখ ৯০ হাজার গ্রাহকের পাওনা ১৭৫০ কোটি টাকা: অর্থের হিসাব মেলাতেই শেষ কমিশনের মেয়াদ

মনজুর আহমেদ | তারিখ: ২৩-০৯-২০১০

যুবকের লাখ লাখ গ্রাহক ও তাঁদের জমা করা অর্থের হিসাব করতেই সরকার গঠিত কমিশনের প্রথম দফার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এক দফা মেয়াদ বাড়ানো হলেও তারও এক মাস চলে গেছে হিসাব মেলাতেই। এখনো হিসাব করছে কমিশন।

সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, যুবকের একটি প্রতিষ্ঠান হাউজিং অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের এক লাখ ৯০ হাজার গ্রাহকের প্রায় এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকা জমা রাখার দাবিসংক্রান্ত তথ্য তালিকাভুক্ত করতে পেরেছে কমিশন। বহুমাত্রিক প্রতারণার মাধ্যমে নানা ধরনের ফন্দিফিকির তৈরি করে জনগণের কাছ থেকে অর্থ তুলে নিয়েছিল আলোচিত এই যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি বা যুবক এবং এর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

বিগত বিএনপি সরকারের সময় অবৈধ ব্যাংকিং কর্মকাণ্ডের অভিযোগে যুবকের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সে সময় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একটি গোয়েন্দা সংস্থা নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করেও প্রতারিত জনগণের অর্থ ফেরত দিতে পারেনি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুবকের গ্রাহকের জমা করা অর্থ পরিশোধ ও হয়রানি বন্ধ, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি হস্তান্তরে স্থাগিতাদেশ ও প্রশাসক নিয়োগ করে স্থায়ী সমাধানের ক্ষেত্রে তদন্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠন করে ২৬ জানুয়ারি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে এই কমিশনের সভাপতি করা হয়।

কমিশন শুরুতেই গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে যুবকের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জমা করা অর্থের তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানায়। লিখিত তথ্য জমা হওয়ার পর দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকে অবস্থিত কমিশনের দপ্তরে কাগজের বিরাট পাহাড় জমে গেছে। লাখ লাখ গ্রাহক ও তাঁদের জমা করা অর্থের হিসাব করতেই কমিশনের মেয়াদ ১২০ দিন অতিক্রান্ত হয়ে যায়। মেয়াদ নতুন করে আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। তবে নতুন মেয়াদের এক মাস প্রায় শেষ হলেও এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ডজনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসাব তৈরির কাজ শেষ করতে পারছেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদের সময় যুবকের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। গতকাল বুধবার সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত জানিয়ে মতামত চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের যেসব সংস্থা এজাতীয় প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন দেয়, তাদের এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে, যাতে জনগণকে প্রতারিত না হতে হয়।’ তিনি একই সঙ্গে জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘অনুমোদিত তফসিলি ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক, নিবন্ধিত এনজিও ছাড়া কারও কাছে জনগণের টাকা খাটানো বা জমা রাখা উচিত নয়।’

এদিকে কমিশনের দেওয়া বিভিন্ন নির্দেশ যুবক কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করছে না বলেও জানা গেছে। আবার কমিশন গত ১৯ মে অর্থ মন্ত্রণালয়কে এক চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছে, যুবক ও যুবকসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে কোনো স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করতে না পারে, সে জন্য আদালতের মাধ্যমে স্থগিতাদেশ পেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপের কথা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়নি। বরং যুবক কর্তৃপক্ষ এটি বন্ধ করতে মন্ত্রণালয়ে চেষ্টা করছে।

এর আগে কমিশন নিজেই গত ৬ ও ১২ মে দুটি সংবাদপত্রে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে যুবক ও যুবকসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কেউ যাতে কোনো লেনদেন না করে, সম্পত্তি ক্রয় বা হস্তান্তর বা স্থানান্তর-সম্পর্কিত চুক্তি না করে, সে বিষয়ে জনগণকে সতর্ক করে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তরের সংবাদ পেয়েই কমিশন অর্থ মন্ত্রণালয়কে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেয়।
সূত্র জানায়, কমিশন গত ৪ মে যুবকের মালিকপক্ষকে ৩০ মে তদন্ত কমিশনের সামনে উপস্থিত থাকতে নোটিশ দেয়। একই সঙ্গে যুবক ও যুবকসংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের শাখা বা অফিসের ঠিকানাসহ তালিকা, শাখাভিত্তিক গ্রাহকের জমা নেওয়া অর্থের পরিমাণ (প্রত্যেক গ্রাহকের নাম, ঠিকানা ও জমা করা অর্থের পরিমাণ পৃথকভাবে) উল্লেখ করা, যুবক ও যুবকসংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণ ও সংযুক্ত ছকে বর্ণিত তথ্যাদির সমর্থনে হলফনামা আনতে বলা হয়। প্রথম দফায় না এলেও দ্বিতীয় দফায় যুবক তাদের প্রতিনিধি পাঠায়।
যুবকের একটি সূত্র জানায়, গ্রাহকের অর্থ পরিশোধে উৎসাহ জোগাতে কমিশনের সভাপতি তাঁদের মালিকপক্ষের সঙ্গে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও করেন। সেখানে তাঁদের পরামর্শ দেওয়া হয়, ফেনী ও বাগেরহাটের নয় হাজার গ্রাহকের তালিকা তৈরি হয়েছে। তাঁদের অর্থ পরিশোধ করে দেওয়া হোক। এর জন্য কমিশন সচিবালয় যেসব তথ্য পেয়েছে, তা নমুনা হিসেবে যুবককে দেওয়া হয়। কিন্তু কয়েক মাস হলেও নানা অজুহাতে অর্থ পরিশোধ করেনি যুবক।

জানা গেছে, এই দুটি জেলার গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়া সম্পর্কে যুবক কমিশনকে ১৪ আগস্ট একটি চিঠি দেয়। এতে বলা হয়েছে, জেলার অফিসগুলো খোলার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর জন্য বকেয়া ভাড়া পরিশোধ ও কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করা দরকার। সংগঠক ও সংগ্রাহক কোড ও সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের নাম ছাড়া তথ্য যাচাই করা সম্ভব নয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে চুক্তির মূল কপি প্রয়োজন হবে। তারা বলেছে, কী আছে এবং কী নেই, তা অফিস খোলার পরই বলা সম্ভব। অফিস না খুলে এর কিছুই যাচাই করা সম্ভব নয়।

জানা গেছে, যুবক কমিশনের কাছে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা দিয়েছে। তালিকায় যুবক বলেছে, দেশের একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের ৫৭ ভাগ মালিকানা রয়েছে তাদের। কিন্তু কমসংখ্যক শেয়ারধারকেরা অবৈধভাবে এই চ্যানেলটি ভোগদখল করে চালাচ্ছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা ছিল এ ক্ষেত্রে।

উল্লেখ্য, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৬ সালের ২৪ মে অবৈধ ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়ে যুবককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে যুবকের জবাব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় যুবকের সব ধরনের আমানত নেওয়া, ঋণ বিতরণ ইত্যাদি কর্মকাণ্ড বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি সাধারণ জনগণের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ সুদ ও লভ্যাংশসহ ফেরত দিতে ২০০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০০৭ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত যুবক জনগণের অর্থ ফেরত দেয়নি।

21 September 2010

পাকিস্তান থেকে আকাশপথে আসে জাল মুদ্রা: সেই মজুমদারের খোঁজে গোয়েন্দারা

টিপু সুলতান | তারিখ: ২২-০৯-২০১০

পাকিস্তানকেন্দ্রিক মুদ্রা আন্তদেশীয় জালিয়াত চক্রের এ দেশের অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক সোলায়মান মজুমদারকে এখন খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। প্রতিবেশী একটি দেশ থেকেও মজুমদারের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে।
অভিযোগ আছে, মজুমদার পাকিস্তানের একটি সংস্থার সহায়তায় বাংলাদেশে বসে ভারত ও নেপালে জাল মুদ্রা বিপণনের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া এ দেশের ধর্মভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদেরও এই তৎপরতায় যুক্ত করা এবং জঙ্গিদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এই মজুমদার গত ফেব্রুয়ারি মাসে এক সহযোগীসহ একবার ধরা পড়লেও পাঁচ সপ্তাহের মাথায় জামিনে বেরিয়ে পাকিস্তান চলে যান। এরপর আবার তিনি পাকিস্তান থেকে জাল ভারতীয় রুপি ও মার্কিন ডলার ছাপিয়ে আকাশপথে বাংলাদেশ হয়ে ভারত ও নেপালে বাজারজাতের কারবার শুরু করেন। এ ব্যাপারে নানা তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার পর একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মজুমদারকে ধরার জন্য মাঠে নামে।
জানতে চাইলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মজুমদার এখন এ দেশেই আছেন বলে গোয়েন্দা-তথ্য রয়েছে। তাঁকে ধরতে গত দুই সপ্তাহে বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি অভিযান চালানো হয়েছে। এরই মধ্যে চক্রটির দুই সদস্য ধরাও পড়েছেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মুদ্রা জালিয়াত চক্রের তৎপরতা সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মজুমদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, পাকিস্তানের একটি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে মজুমদার এ দেশে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও হরকাতুল জিহাদের (হুজি) মতো জঙ্গি সংগঠনকেও ভারতীয় জাল মুদ্রার কারবারে সম্পৃক্ত করেছেন। কয়েক বছরে বাংলাদেশ ও ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া জাল মুদ্রার কারবারিদের কাছ থেকে উভয় দেশের গোয়েন্দারা এ তথ্য পান। এ ছাড়া এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবির আমির মাওলানা সাইদুর রহমান ও শুরা সদস্য রফিকুল ইসলাম ওরফে জোবায়েরের কাছ থেকেও এ ব্যাপারে তথ্য পায় পুলিশ। ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর ঢাকায় বনশ্রী ও মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেএমবির মুদ্রা জালিয়াত চক্রের কয়েকজনকে।
মূলত বর্তমান সরকারের আমলে মুদ্রা জালিয়াত চক্রের কয়েকজন পাকিস্তানি নাগরিক ধরা পড়ার পর এই মজুমদার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পায় ডিবি। ডিবি চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে বিপুল ভারতীয় জাল মুদ্রাসহ এ চক্রের একজন বড় নেতা আবদুল মান্নানকে এবং পরদিন এই চক্রের এ দেশীয় প্রধান সোলায়মান মজুমদারকে গ্রেপ্তার করে। মজুমদারের বাড়ি কুমিল্লা সদরের (দক্ষিণ) ধামাইতরী গ্রামে। ঢাকার কাপাসিয়ায় ১০০ বিঘা জমির ওপর তাঁর বাগানবাড়ি আছে।
কার্যকর জিজ্ঞাসাবাদ হয়নি: ডিবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারের পর মজুমদারকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। কিন্তু মজুমদার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত জানাশোনা না থাকায় রিমান্ডে তাঁর কাছ থেকে বেশি তথ্য বের করা যায়নি।
গ্রেপ্তারের পাঁচ সপ্তাহের মাথায় গত মার্চ মাসে মজুমদার ও তাঁর সহযোগী মান্নান জামিনে বেরিয়ে পালিয়ে যান। এরপর তাঁকে ধরার জন্য গোয়েন্দা পুলিশ মামলার হাজিরার দিন আদালতে ওত পেতে থেকেও তাঁকে পায়নি।
আমাদের আদালত প্রতিবেদক জানান, মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, মজুমদার প্রতি মাসে মামলার হাজিরা দিতেন। সর্বশেষ গত ৪ জুলাইও তাঁর হাজিরা ছিল, এরপর ২৮ আগস্ট। তাঁর পক্ষে আইনজীবী সময় প্রার্থনা করেন।
ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার মাহাবুবর রহমান জানান, গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার হওয়া মজুমদারের সহযোগী রফিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, মজুমদার আদালতে না গিয়েই মামলার হাজিরা দিতেন। নিম্নপদস্থ কর্মীদের টাকা দিয়ে তিনি এ ব্যবস্থা করেন।
কর্মকর্তারা জানান, ইতিপূর্বে গ্রেপ্তার হওয়া পাকিস্তানের নাগরিক মোহাম্মদ দানিশ ও সাব্বির আলী, ভারতের রুবিনা হোসেন একই চক্রের সদস্য। এই চক্রের পাকিস্তানি সদস্যরা ওই দেশে জাল মুদ্রা বানিয়ে মজুমদারের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতে পাঠাত।
বিমানবন্দর থেকে সীমান্ত পর্যন্ত নেটওয়ার্ক: এই জালিয়াত চক্রের কাজের ধরন সম্পর্কে জানা যায়, দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকাসহ সব বড় শহর এবং সীমান্ত এলাকায় এসব চক্রের জোরালো নেটওয়ার্ক রয়েছে। বিমানবন্দরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাজ হলো মুদ্রাগুলো নিরাপদে বিমানবন্দর থেকে শহরে নির্দিষ্টজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আর সেই ব্যক্তির কাজ হলো ভেতরের চাহিদা অনুযায়ী মুদ্রা রেখে, বাকি মুদ্রাগুলো সীমান্তে চালান করে দেওয়া।
ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার মাহাবুবুর রহমান জানান, ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হওয়া রফিক রিমান্ডে জানিয়েছেন, চক্রটি মূলত পাকিস্তানে জাল মুদ্রা ছাপিয়ে আকাশপথে বাংলাদেশ ও নেপালে নিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে তারা বেশির ভাগই পাকিস্তানি বিমান সংস্থার কোনো কোনো বৈমানিক বা কর্মীকে ব্যবহার করে। তারা কখনো পাকিস্তান থেকে সরাসরি আবার কখনো দুবাই হয়ে ফ্লাইটে মুদ্রার চালান আনে। রফিক জানিয়েছেন, সম্প্রতি তাঁরা ২০ কার্টন জাল মুদ্রা এনেছেন আকাশপথে। একেকটি কার্টনে এক লাখ রুপি বা ডলার থাকে। রফিকের কাছ থেকে এমন এক কার্টনসহ মোট এক লাখ ১০ হাজার ভারতীয় রুপি উদ্ধার করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এ চক্রের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে সবচেয়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। ঢাকা থেকে সীমান্ত হয়ে ভারত পর্যন্ত এসব মুদ্রা পাঠানোর কাজে মজুমদারের অধীন আরও ১০ জন বড় নেতা রয়েছে। তাদের বলা হয় পাইকার। এ রকম অন্তত ১০ জন পাইকারকে গোয়েন্দারা শনাক্ত করেছেন। এদের মধ্যে রফিক, মাহতাব, ফয়সাল, আমান অন্যতম। রফিক এখন রিমান্ডে। ফয়সাল ও আমান ইতিপূর্বে গ্রেপ্তার হলেও জামিন নিয়ে পালিয়ে গেছে।

25 August 2010

বিডি ফুডের হেরোইন পাচার: মোমিন ছাড়া পাঁচ আসামিকে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ

প্রশান্ত কর্মকার | তারিখ: ২৫-০৮-২০১০

পণ্য রপ্তানির আড়ালে লন্ডনে ৭৫ কেজি হেরোইন পাচারের মামলায় বিডি ফুডের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা মোমিন ছাড়া বাকি পাঁচ আসামিকে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দ্বিতীয় দফায় সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন এ আদেশ দেন।

আদালত সূত্র জানায়, বিডি ফুডের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা মোমিনসহ যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চাওয়া হয় তাঁরা হলেন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন, ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক মিঠু, কর্মচারী নাজমুল হায়দার বুলবুল, অভিযুক্তদের আরেক কোম্পানি গ্রিন হ্যাভেনের মালিক আবুল বাশার সেলিম ও তাঁর সহযোগী কাজী জাফর রেজা। বদরুদ্দৌজা তাঁর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন বাতিল করার আবেদন করেন। আদালত তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে বাকি পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার আদেশ দেন।

আদালতের আদেশ অনুসারে আসামি আবুল বাসার ও জাফর রেজাকে আজ বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মইনউদ্দিন ও আবু বকর সিদ্দিকীকে ২৬ আগস্ট জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর নাজমুল হায়দার বুলবুল একই ঘটনায় দায়ের মতিঝিল থানার মামলায় কারাগারে আটক থাকায় তাঁকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

সূত্র জানায়, চার বছর ফাইলবন্দী থাকার পর সিআইডি বদরুদ্দোজা মোমিনসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য গত ১ মার্চ আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। আদালত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিলে আসামিরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। এরপর সে আদেশ স্থগিত হয়ে যায়।

এরপর গত ২৬ মে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক এরশাদ আলীকে পরিবর্তন করে পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ হোসেনকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সিআইডির এই পরিদর্শক মোহাম্মদ হোসেন গত ২৯ জুন বদরুদ্দৌজা মোমিনসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। সিআইডির আবেদনে বলা হয়, এই মামলায় জড়িত আসামি বদরুদ্দৌজা মোমিন, মো. মাইনুদ্দিন, কাজী জাফর রেজা, মোখলেসুর রহমান, আবু বকর সিদ্দিক ও আবুল বাসার জামিনে আছেন। এ মামলায় পাচার করা হেরোইনের উৎস, মামলার ঘটনায় জড়িত অন্যান্য সহযোগী আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করাসহ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। মহানগর হাকিম ৪ জুলাই আবেদনটি গ্রহণ করেন।

মামলাটি এ পর্যন্ত পাঁচ দফা তদন্তকারী বদলের পর এখন ষষ্ঠ তদন্তকারী মামলাটি তদন্ত করছেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া বদরুদ্দোজা মোমিনসহ ১০ আসামির নয়জন জামিনে আছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামলার আলামত হিসেবে লন্ডনে আটক হেরোইন পরীক্ষাসহ অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের জন্য তদন্ত কর্মকর্তার যুক্তরাজ্য যাওয়ার অনুমতি না মেলায় তদন্ত প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে। এরপর মামলাটি ফাইলবন্দী অবস্থায় পড়ে ছিল। ফলে তারিখের পর তারিখ পড়লেও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আর জমা হয়নি আদালতে। এই ফাঁকে মামলায় গ্রেপ্তার করা নয় আসামি জামিনে মুক্তি পান।

আদালত সূত্র জানায়, লন্ডনের দুটি সমুদ্রবন্দর দিয়ে সবজি ও ঘরের মেঝেতে ব্যবহার করা যায় এমন টাইলস রপ্তানির আড়ালে ৭৫ কেজি হেরোইন উদ্ধারের পর ২০০৬ সালের ২১ এপ্রিল সিআইডির সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট দীপক গুপ্ত বাদী হয়ে রাজধানীর মতিঝিল ও সূত্রাপুর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করেন। এসব মামলায় বিডি ফুডসের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা মোমিন, কর্মচারী নাজমুল হায়দার বুলবুল, ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক মিঠু, ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন, তাঁদের সহযোগী বিমানের কার্গো-শ্রমিক নয়ন ও অভিযুক্তদের আরেক কোম্পানি গ্রিন হ্যাভেনের মালিক আবুল বাশার সেলিম ও তাঁর সহযোগী কাজী জাফর রেজা, দেলোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান ভূঁইয়া ও ইমদাদুল হক আজাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রধান আসামি বদরুদ্দোজা ২০০৮ সালের ৮ জুন মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছাড়া পান। এর পরপরই জামিন পান রেজা, মাইনুদ্দিন, নয়ন ও আবু বকর।

বিডি ফুডসের ব্যবস্থাপক মাইনুদ্দিন, কর্মচারী নাজমুল হায়দার বুলবুল, বিমানের কার্গো-শ্রমিক নয়ন ও গ্রিন হ্যাভেনের অংশীদার কাজী জাফর রেজা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাঁদের জবানবন্দিতে স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে, হেরোইন পাচারের সঙ্গে বিডি ফুডসের মালিকসহ গ্রেপ্তার হওয়া সবাই জড়িত ছিলেন।

বিডি ফুডসের চেয়ারম্যান বরুদ্দোজা মোমিনকে ২০০৬ সালের ১৪ মে রাতে গ্রেপ্তার করে কয়েক দফায় ১৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি পুলিশ।

22 August 2010

বাংলাদেশ বিমান, কাবোর উড়োজাহাজ এবং ৮৩-বিস

আলমগীর সাত্তার

কাবোর উড়োজাহাজটি নিয়ে কিছু বলার আগে, বাংলাদেশ বিমানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের একটি বক্তব্য নিয়ে একটু আলোচনা করতে চাই।

বিমানের চেয়ারম্যান দাবি করেছেন, বিমান একটি পাবলিক লিমিটেড কম্পানি। বিমানসংক্রান্ত সব সিদ্ধান্তই বিমানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং সদস্যরাই কেবল গ্রহণ করার অধিকার রাখেন। বেসামরিক পরিবহন সংস্থার মন্ত্রীর বিমানের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার কোনো এক্তিয়ার নেই। কিন্তু সবাই জানে, যেকোনো পাবলিক লিমিটেড কম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে ওই কম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের কথা শুনতে হয়। পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্যদের নির্বাচিত করেন শেয়ারহোল্ডাররা। বিমান পাবলিক লিমিটেড কম্পানি হলেও এর শতভাগ শেয়ারের মালিক আমাদের সরকার। এ ক্ষেত্রে বিমানের পরিচালনা পর্ষদকে সরকারের সব নির্দেশ অবশ্যই মেনে চলতে হবে। সরকার একজনকে বিমান এবং সিভিল এভিয়েশন বিভাগ দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়েছেন, যাকে আমরা মন্ত্রী বলে জানি। তাই বিমানের পরিচালনা পর্ষদকে ওই মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশ মানতে হবে। আবার মন্ত্রী মহোদয়ও জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে দায়বদ্ধ। বাংলাদেশ বিমানের মালিক এখনো এ দেশেরই জনগণ। ১৯ আগস্ট এটিএন নিউজ চ্যানেলে কথাগুলো ভালো করেই বুঝিয়ে বলেছেন মন্ত্রী মহোদয়। আমি শুধু কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করলাম। এর কারণ পাঠকদের সবাই তো আর এটিএন নিউজ চ্যানেলে মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্য শোনেননি।

এবার লিজে আনা কাবোর উড়োজাহাজ সম্পর্কে কিছু কথা বলা যাক।

উড়োজাহাজ যাতে নিরাপদে চলাচল করতে পারে সে জন্য আইকাও (ICAO) ১৯০ দেশের জন্য কিছু নিয়মনীতি করে দিয়েছে। বাংলাদেশসহ এই ১৯০ দেশের সিভিল এভিয়েশন বিভাগ ওই নিয়মনীতিগুলো আন্তর্জাতিক আইন বলে মেনে চলে।

ভিন্নদেশ থেকে উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার এবং দেওয়ার ব্যাপারে আইকাও সে নিয়মনীতি করে দিয়েছে, তার ৮৩-বিস (83-bis) ধারায় বলা হয়েছে : ভিন্ন দেশ থেকে উড়োজাহাজ লিজের মাধ্যমে আনতে হলে উড়োজাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান এবং লিজ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান বা এয়ারলাইনের মধ্যে সবরকমের শর্তাবলি উল্লেখ করে একটি এমওইউ (mou = memorandum of understanding) স্বাক্ষর করতে হবে। এ ছাড়া যে দেশ থেকে উড়োজাহাজ আনয়ন করা হবে সে দেশের সিভিল এভিয়েশন এবং লিজ গ্রহণকারী দেশের সিভিল এভিয়েশন অথরিটির মধ্যে আলাদাভাবে আরো একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে হবে। এই চুক্তিকে বলা হয় এমওএ (MOA = Memorandum of agreement)। ওই চুক্তিতে উড়োজাহাজের এয়ারওয়ার্দিনেস, পাইলটদের যোগ্যতাসহ বিস্তারিত তথ্য থাকে। প্রতিটি উড়োজাহাজে দুই কপি করে ওই উড়োজাহাজের ফ্লাইট ম্যান্যুয়াল (Flight manual) রাখা সব দেশেই বাধ্যতামূলক। ওই ম্যান্যুয়ালে উড়োজাহাজটির সম্পূর্ণ ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা থাকে। ৮৩-বিস ধারা অনুযায়ী লিজ গ্রহণকারী দেশের সিভিল এভিয়েশন বিভাগকে উড়োজাহাজটির এক কপি ফ্লাইট ম্যান্যুয়াল সরবরাহ করতে হয়। আমার জানা মতে, কাবো উড়োজাহাজটি লিজে আনয়নের সময় ৮৩-বিস ধারা অনুযায়ী কোনো চুক্তি আমাদের সিভিল এভিয়েশন বিভাগের সঙ্গে করা হয়নি। তাই কাবোর উড়োজাহাজটির সঠিক ইতিহাস আমাদের জানা নেই।

পত্রপত্রিকার মাধ্যমে দেশবাসী জানে, কাবোর উড়োজাহাজটি অতিশয় পুরনো। চার বছর যাবৎ এই অ্যারোপ্লেনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। অ্যারোপ্লেন অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখতে হলেও কতগুলো নিয়মনীতি মানতে হয়। আলোচিত অ্যারোপ্লেনটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকার সময় কি সে নিয়মনীতি মনে চলেছিল, তাও আমাদের জানা নেই।

আমার কথা হলো, এমন পুরনো দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা অ্যারোপ্লেনটি জোড়াতালি দিয়ে ঠিক করে সম্মানিত হাজিদের পরিবহন করা কি ঠিক কাজ করা হবে? হাজিদের পরিবহন করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্লেনটি বিধ্বস্ত হলে এবং তাতে করে পাঁচ শর অধিক হাজি মারা গেলে বর্তমান সরকারের সুনাম কোন পর্যায়ে পেঁৗছবে, সে বিষয়ে শুধু বিমানের মন্ত্রী মহোদয় নন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও চিন্তা করে দেখতে অনুরোধ করব।

আমি আমাদের বেসামরিক পরিবহন মন্ত্রীকে একটি বিষয়ে সতর্ক করে দিতে চাই যে, দীর্ঘকাল বিমানে পাইলট হিসেবে চাকরি করতে গিয়ে আমি দেখেছি, হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার আগে বিমানের নিজস্ব প্লেনগুলোর যান্ত্রিক ত্রুটি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। ফলে ওই প্লেনগুলো উড্ডয়ন ক্ষমতা হারিয়ে ভূমিতেই স্থান করে নেয়। এমনটা তো ইচ্ছে করেই করা হয়, যাতে করে শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে দ্বিগুণ ভাড়ায় বিদেশ থেকে লিজে উড়োজাহাজ আনতে বাধ্য হয়। এ বছর এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এর আছে আবার দুটি কারণ! প্রথমটি হলো, বিমানে বর্তমানে আছেন একজন চিফ ইঞ্জিনিয়ার, যিনি জামায়াতে ইসলামী দলের রুকন পর্যায়ের নেতা। এই রুকনের আছে আবার বেশ কিছু অনুসারী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর প্রচেষ্টা হিসেবে সরকারের জন্য নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে তারা চাইবে। দ্বিতীয় কারণ, কাবোর উড়োজাহাজসংক্রান্ত ব্যাপারে মাননীয় মন্ত্রী তাঁর সততার কারণে অনেক শত্রু সৃষ্টি করেছেন। এই শত্রুরা অনেক ক্ষমতাধর। তাদের সবার নামোল্লেখ করে মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আমার নিজের বিপদের মাত্রা বৃদ্ধি করতে চাই না।