Showing posts with label ট্রাইবুন্যাল. Show all posts
Showing posts with label ট্রাইবুন্যাল. Show all posts

8 November 2010

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রেস ব্রিফিং: পাবনায় নিজামীসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ মিলেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাবনায় টানা তিন দিন তথ্যানুসন্ধান শেষে ঢাকায় ফিরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা আবদুস সুবাহান, মাওলানা ইসহাক, মাওলানা ইদ্রিসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে একাত্তরে সংঘটিত নানা অপরাধের প্রমাণ মিলেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত সে সময়ে নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।

গতকাল সোমবার ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের কক্ষে এ প্রেস ব্রিফিং হয়। এতে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী জানান, তদন্তের অংশ হিসেবে গত ৪ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের চারজন আইনজীবীসহ সাত সদস্যের দল পাবনা এলাকায় যান। সেখানে তাঁরা ঈশ্বরদী, পাকশী, সাঁথিয়া, আতাইকুলাসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থিত বধ্যভূমি পরিদর্শন করেন। তদন্ত দলকে এলাকাবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধীদের আস্তানা, টর্চার সেল ও ক্যাম্পগুলো ঘুরে-ফিরে দেখান। এ এলাকা থেকে ৫৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষীরা জানিয়েছেন, একাত্তরে এসব জায়গায় ৯৭৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে। নানা কায়দায় নির্যাতন ও হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হতো। সে সময় ৪০ জন নারীকেও ধর্ষণ করা হয়।

তদন্তকারী দলে ছিলেন প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর আলী, আলতাফ উদ্দিন আহমেদ, আবদুর রহমান হাওলাদার, সৈয়দ হায়দার আলী, তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক, আলতাফুর রহমান ও ইদ্রিস আলী। প্রেস ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুসহ অন্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হায়দার আলী জানান, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সঠিক সময়েই প্রতিবেদন দেওয়া হবে। অন্যদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'চূড়ান্ত তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেলেই তাঁদের গ্রেপ্তারের জন্য আবেদন করা হবে।'

6 November 2010

তদন্তদলের কাছে সাক্ষ্য: নিজামীর নির্দেশে সাঁথিয়ায় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চলে

পাবনা ও আঞ্চলিক প্রতিনিধি

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গণহত্যা, লুট, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্তদল। এ ছাড়া জামায়াত নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা আবদুস সুবাহান, রফিক উন-নবী বাবলু, মাওলানা ইসাহাক আলীসহ আরো কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ট্রাইব্যুনালের তদন্তদল গতকাল শনিবার নিজামীর নিজ এলাকা সাঁথিয়ার বিভিন্ন বধ্যভূমি ও গণকবর পরিদর্শনের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাক্ষ্য গ্রহণের পর স্থানীয় ডাকবাংলোয় প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান। এর আগে তদন্তদল সাঁথিয়ার ডেমরা বাউসগাড়ি, ধুলাউড়ি, করমজা, শহীদনগর গ্রামে গণকবর ও বধ্যভূমি, রাজাকার-আলবদর ক্যাম্প পরিদর্শন এবং মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের স্বজনদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। তদন্তদলের কাছে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিজামী-সাত্তার গং সাঁথিয়ার অনেক মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করে। পাশাপাশি অর্থের লোভ দেখিয়ে অনেককে তাদের দলে ভেড়ায়।
গণকবর পরিদর্শনকালে তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, স্থানীয় প্রবীণ ও জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষ্য থেকে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ১৪ মে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসর আসাদ রাজাকারের নেতৃত্বে ডেমরার বাউসগাড়ি গ্রামে এক রাতেই প্রায় ৯০০ মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করা হয়। ঘাতকরা হিন্দু ও মুসলমানদের পৃথক লাইনে দাঁড়
করিয়ে ব্রাশফায়ার করে। পৃথক গর্ত করে তাদের মাটিচাপা দেওয়া হয়। একইভাবে ধুলাউড়ি ও করমজা গ্রামেও প্রায় ২০০ মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনাসহ এ অঞ্চলের সব গণহত্যার সঙ্গে মতিউর রহমান নিজামীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা এসব ঘটনায় নিজামীর সহচর হিসেবে মাওলানা আবদুস সুবাহান, মাওলানা ইসাহাক আলী, মোহম্মদ রফিক উন নবী, আবদুস সাত্তারসহ আরো অনেকের নাম প্রকাশ করে।
তদন্তদল সাঁথিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার জামালউদ্দিনসহ ২০ শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাক্ষ্য গ্রহণ করে। তাঁরা জানান, কেবল সাঁথিয়া নয়, পাবনা জেলার সব গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিজামী দায়ী।

5 November 2010

ঈশ্বরদী ও পাকশীতে তদন্তদল: নিজামী-সুবহানের অপকর্মের অনেক প্রমাণ

পাবনা ও ঈশ্বরদী প্রতিনিধি

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনার ঈশ্বরদী ও পাকশীর বিভিন্ন জায়গায় গণহত্যা, লুট, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগের অনেক ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আলবদর-রাজাকারদের নেতৃত্বদানকারী জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও মাওলানা আবদুস সুবহান এবং মাওলানা ইসহাক আলী, খোদা বঙ্ খান প্রমুখ এসব অপকর্মের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। তাঁদের নির্দেশে মসজিদ থেকে পবিত্র কোরআন শরিফ পড়ার সময় ডেকে নিয়েও মানুষকে খুন করা হয়। এর যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তদল গতকাল শুক্রবার ঈশ্বরদীর বিভিন্ন বধ্যভূমি ও গণকবর পরিদর্শন এবং মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাক্ষ্য গ্রহণ করে। পরে পাবনা সার্কিট হাউসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তদন্তদলের সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ হায়দার আলী এসব কথা জানান।

এর আগে তদন্তদলের কাছে ঈশ্বরদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সহকারী কমান্ডার (অর্থ) তহুরুল আলী মোল্লাসহ মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা জানান, ঈশ্বরদী স্টেশন রোডে বর্তমানে যেখানে বাটার শোরুমটি রয়েছে, সেটি ১৯৭১ সালে রাজাকারদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ঈশ্বরদীর বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষকে ওই ক্যাম্পে ধরে এনে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হতো। পরে প্রেসক্লাবের পেছনের নিচু জমিতে লাশগুলো পুঁতে রাখা হতো। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের নেতারা জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও মওলানা আবদুস সুবহান সপ্তাহে কমপক্ষে দুদিন ওই ক্যাম্পে এসে অবস্থান করে রাজাকারদের দিকনির্দেশনা দিতেন। তাঁদের দুজনের নির্দেশেই ঈশ্বরদীতে ব্যাপক গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকার-আলবদররা।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ৯ মাসে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা ঈশ্বরদীর রেলওয়ে কলোনির পাম্প হাউস এলাকার বধ্যভূমিতেই কমপক্ষে ৫০০ মানুষকে হত্যা করে। এ ছাড়া প্রেসক্লাবের পেছনের জায়গা, ভূতের গাড়ি বধ্যভূমি, পাকশী রেলওয়ে বধ্যভূমি, চন্দ্রপ্রভা স্কুলসংলগ্ন এলাকায়ও বহু মানুষকে হত্যা করা হয়।

তদন্তদলের সদস্যরা দুপুরে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন বধ্যভূমি ও গণকবর পরিদর্শন শেষে পাকশীতে যান। পাকশী রেলওয়ে বধ্যভূমি এলাকায় তাঁরা এক পরিবারের পাঁচ শহীদের কবর পরিদর্শন করেন। বিকেলে তদন্তদলের সদস্যরা মাছদিয়া ও মাছুপাড়া গণকবর পরিদর্শন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এর আগে ঈশ্বরদী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল কার্যালয়ে ঈশ্বরদীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তদন্তদল ঈশ্বরদী ও পাকশীর মোট ২০ শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান, অ্যাডভোকেট সৈয়দ হায়দার আলী, আবদুর রহমান হাওলাদার ও আলতাফ উদ্দিন এবং তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান, জে এম আলতাফুর রহমান, এস এম ইদ্রিস আলী ও দলনেতার একান্ত কর্মকর্তা কাশেমসহ তদন্তদল গতকাল সকালে ঈশ্বরদী মুক্তিযোদ্ধা সংসদে আসে। এ সময় সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান শরিফ তাঁদের স্বাগত জানান। তদন্তদল গতকাল ঈশ্বরদী শহর ও পাকশী ইউনিয়নের সাতটি বধ্যভূমি পরিদর্শন করে।

তদন্তদলের সদস্যরা আজ শনিবার সকালে সাঁথিয়া ও ডেমরার আলবদর-রাজাকার ক্যাম্প চিহ্নিতকরণ, পরিদর্শন ও স্থানীয় লোকজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন। দুপুরে তাঁরা ধুলাউড়ি ও করমজার বধ্যভূমি, গণকবর, আলবদর-রাজাকার ক্যাম্প চিহ্নিতকরণ, পরিদর্শন ও সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন।

সাক্ষীদের নিরাপত্তা
সাক্ষীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন_এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান সাংবাদিকদের জানান, সুনির্দিষ্টভাবে তাঁদের কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। তা ছাড়া জেলা পুলিশ সুপারসহ প্রতিটি থানার ওসিকে সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানের নির্দেশ দেওয়া আছে। এ ছাড়া সরকার সাক্ষীদের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত একটি আইন করার কথা ভাবছে।

রাজাকার-আলবদরদের সংখ্যা জানা নেই
পাবনায় রাজাকার-আলবদরের সংখ্যা কত এর কোনো পরিসংখ্যান দিতে পারেনি পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড বা অন্য কেউ। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, পাবনা জেলায় হাতে গোনা কয়েকজন রাজাকার ছিল। আর আলবদর ছিল প্রায় ৫০ জনের মতো। তাদের অনেকেই মারা গেছে। বর্তমানে জীবিত আছে সাত থেকে আটজনের মতো। তবে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান কালের কণ্ঠকে বলেন, পাবনায় রাজাকার-আলবদরের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। যতই দিন যাচ্ছে, তালিকা ততই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

28 September 2010

সাঈদীর আইনজীবীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

Mon, Sep 27th, 2010 5:10 pm BdST

টাঙ্গাইল, সেপ্টেম্বর ২৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানহানী ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে টাঙ্গাইলে মামলা দায়ের হয়েছে।

সোমবার সকালে মুখ্য বিচারিক হাকিম 'ক' অঞ্চল আদালতে মামলাটি দায়ের করা করেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. ফজলুল হক বীরপ্রতীক।

মামলার শুনানি শেষে আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন বিচারক কাউছার আহমেদ।

মামলার আবেদনে বাদী বলেন, "১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশ স্বাধীন করে। এই বিষয়টি বিবাদী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম অবগত থাকার পরও মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করার উদ্দেশ্যে চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও মতিউর রহমান নিজামীদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করছেন। এর মধ্য দিয়ে কার্যত তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সংবিধান ও সরকারকেই অস্বীকার করছেন।

গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানির এক পর্যায়ে ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম বলেন, ''একাত্তর সালে যুদ্ধ হয়েছে পাকিস্তানের সাথে ভারতের। মুজিবনগর সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা বলা হয়নি।"

উক্ত বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিচারপতি নিজামুল হকসহ অনেকে।

মামলার আবেদনে বাদী আরো বলেন, "বিবাদীর এ বক্তব্য গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিবাদীর এ বক্তব্যে প্রমাণিত হয় বিবাদী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, সরকার ও প্রচলিত আইনকে অস্বীকার করে রাষ্ট্রদ্রোহীতামূলক অপরাধ করে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছেন।"

মামলা দায়েরের পর জেলার মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। পরে তারা ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/কিউএইচ/কেএমএস/১৭০০ ঘ.

'হুঁশিয়ার, কাসেম সাব আ গেয়া'

Tue, Sep 28th, 2010 2:46 pm BdST

আল আমীন দেওয়ান
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম, সেপ্টেম্বর ২৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামে রাজাকার-আল বদরদের প্রধান নির্যাতন কেন্দ্র ছিলো আন্দরকিল্লার ফরেস্ট গেটের টেলিগ্রাফ হিল রোডের ডালিম হোটেল।

মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর তত্ত্বাবধানে চলতো ওই নির্যাতন কেন্দ্র। সেখানে হাত-পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় পিটিয়ে ভেঙে দেওয়া হতো বন্দিদের হাত-পা। ইট দিয়ে থেতলে দেওয়া হতো মুখ।

একাত্তরে ছাত্রসংঘের নেতা এবং বর্তমানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য মীর কাসেমের সঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত ইসলামীর বর্তমান নায়েবে আমির আফসার উদ্দিনও এ নির্যাতন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে ছিলেন বলে মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি।

যদিও তারা দুজনই একাত্তরে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল কয়েকদিন আগেই ডালিম হোটেলসহ চট্টগ্রামে গণহত্যা ও নির্যাতনের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে। তদন্ত দল জানায়, মীর কাসেমের বিরুদ্ধে অভিযোগের পক্ষে সাক্ষ্য পাওয়া গেছে।

নির্যাতন কেন্দ্রটিতে বন্দি থাকা তৎকালীন চট্টগ্রাম জয়বাংলা বাহিনীর উপ-প্রধান মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং কয়েকজন নির্যাতিতের স্বজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন একাত্তরের কথা।

নির্যাতন কেন্দ্রে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ২৩ দিন ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। একাত্তরের ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রামের কদমতলীর বাড়ি থেকে তাকে ধরে আনে বদর বাহিনীর সদস্যরা। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে মুক্তি পান তিনি।

নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে জাহাঙ্গীর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "নির্যাতনে অর্ধমৃত মুক্তিযোদ্ধাদের হাতের লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আফসার উদ্দিন গর্ব করে বলতো- 'রাজাকার দেখেছিস, আমি রাজাকার'। নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অর্ধমৃত মুক্তিযোদ্ধা ও অন্য বন্দিদের মেরে ফেলতে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেখিয়ে দিতো সে।"

জাহাঙ্গীর জানান, বন্দি অবস্থায় আফসার উদ্দিন একদিন তাকে রেডিওতে স্বাধীনতাবিরোধী একটি কথিকা পাঠ করতে বলেন। জাহাঙ্গীর অস্বীকৃতি জানালে তার ওপর আরো ভয়াবহ নির্যাতন চলে।

নিজের থেতলে দেওয়া ঠোঁট দেখিয়ে এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, "আফসার উদ্দিন এখন এই দেশেই রাজনীতি করছে। তাকে ধরে জিজ্ঞেসাবাদ করা হলে প্রমাণের জন্য তদন্ত দলের বেশি কষ্ট করতে হবে না। প্রয়োজনে আমার মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।"

"মীর কাসেম যখন ডালিম হোটেলে আসতো, তখন বদর সদস্যরা পাহারায় থাকা অন্যদের বলত 'কাসেম সাব আ গেয়া, তোম লোক বহুত হুঁশিয়ার'। সে আসার পর বন্দিরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়তো।"

হৃদরোগে ভুগছেন জাহাঙ্গীর। এর মধ্যেই বললেন, "এখনো বেঁচে আছি এই কুলাঙ্গারদের কুকীর্তির সাক্ষী হয়ে। আফসার উদ্দিনকে আমার মুখোমুখি করলে মীর কাসেম আলীর অপকীর্তির প্রমাণ সেই হাজির করবে।"

নির্যাতন কেন্দ্রে এ পীযূষ দাস নামে একজন ভয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে জানিয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, তাকে দিয়ে লাশ সরানো হতো।

"মীর কাসেম এলে ঘোষণা দিতো পীযূষই। তবে পরে তাকেও মেরে ফেলা হয়", বলেন তিনি।

একাত্তরের ২৫ নভেম্বর গণতন্ত্রী পার্টির চট্টগ্রাম জেলার তখনকার সভাপতি সাইফুদ্দিন খানসহ সাত জনকে ডালিম হোটেলে রাজাকাররা ধরে নিয়ে আসে। পরে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের মুক্ত করে।

সাইফুদ্দিন খানের স্ত্রী নূরজাহান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "হাত-পা বেঁধে আমার স্বামীসহ সব বন্দিদের বীভৎস নির্যাতন করা হতো। এখানে নির্যাতন করে করে মেরে ফেলা হয় অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে।"

নুরজাহান খানের ভাই রেজা আহম্মদ বলেন, "কেন্দ্রটির তত্ত্বাবধানে থাকা সেই সময়ের ছাত্রসংঘের নেতা মীর কাসেম আলীর নির্দেশেই ডালিম হোটেলে মুক্তিযোদ্ধা ও অন্য বন্দিদের ওপর নির্যাতন চালানো হতো।"

গত শনিবার এই ডালিম হোটেলে নূরজাহান খান ও রেজা আহম্মেদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের কাছে একাত্তরে রাজাকার ও আল বদর বাহিনীর মানবতাবিরোধী বিভিন্ন বীভৎসতার সাক্ষ্য দেন।

তবে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আফসারউদ্দিন নিজেকে উল্টো মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন।

তিনি সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। তখন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে কিছু না করার জন্য আমিই অনুরোধ করেছিলাম।"

নিজেকে মুক্তিযাদ্ধা দাবি করলে কীভাবে রাজাকারদের অনুরোধ করেন- প্রশ্ন করা হলে কেনো উত্তর দেননি এ জামায়াত নেতা।

তিনি বলেন, "সে সময় আমি ফরিদপুর ছিলাম। সাংবাদিকরা এসব নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করছে।"

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এএডি/এএনএস/এমআই/১৪৩৬ ঘ.

26 September 2010

যুদ্ধাপরাধ বিচার আদালতকে উড়িয়ে দিলেন সাকা

Fri, Sep 24th, 2010 11:42 pm BdST

চট্টগ্রাম, সেপ্টেম্বর ২৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের গ্রহণযোগ্যতা ও ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছেন, এটা কিসের আদালত?

একাত্তরের অপরাধ তদন্তে শুক্রবার ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের চট্টগ্রামে আসার পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কোনো অ্যাক্ট নেই, সিআরপিসি নেই, এটা কিসের আদালত?

তদন্ত দল রাউজান উপজেলার বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার সাক্ষ্য পাওয়ার পর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এসে নগরীর নিজ বাসভবন গুডস হিলে রাত ৮টার দিকে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন।

মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দিন কাদের অবশ্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। তার দাবি, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের আরো বলেন, "ট্রাইবুন্যাল এমন কোনো সার্কাস দেখাবে না যাতে বিচার ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্যতা হারায়। বিচার ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্যতা হারালে সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশের স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।"

ট্রাইবুনালের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, "ট্রাইব্যুনাল আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে করবে না কেন?"

এ বক্তব্যের ব্যাখা দিয়ে সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের বলেন, "আমি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুজনেরই একটা ঝুঁকি আছে। ৭১ সালে আমরা দুজনই হিন্দুস্থান যাই নি এবং আমাদের কোনো মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেই। তাই ট্রাইবুন্যালের সামনে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছি।"

দেশে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার অনুকূল পরিবেশ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, "সরকারকে দায়িত্বশীল বক্তব্য দিতে হবে। সরকার এমন কোনো পথে হাঁটবে না যাতে চট্টগ্রামের মানুষ নিজেদের জাতীয় সত্ত্বা থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রয়াস পায়।"

ট্রাইবুন্যালের তদন্ত পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, "৩৯ বছরে যে ঘটনার সাক্ষী-প্রমাণ পাওয়া গেল না তারা ছয় ঘণ্টায় তার প্রমাণ পেয়ে গেলেন?"

ট্রাইব্যুনালকে সঠিক তদন্তের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "ট্রাইব্যুনাল যেন স্থায়ী থাকে। কয়েকটি বিচার করে যেন তাদের কাজ শেষ না হয়।"

কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে একাত্তরের ১৩ এপ্রিল রাউজানের গহিরায় তার বাড়িতেই হত্যা করা হয়। একই এলাকায় সালাউদ্দিন কাদেরের বাড়ি।

নতুন চন্দ্র সিংহের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন কি না� এমন প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, "৭১ সালের এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে আমি পাকিস্তান চলে যাই। যাওয়ার আগে ঢাকায় শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম।"

"মরহুম ফজলুল কাদের চৌধুরীর জ্যৈষ্ঠ সন্তান হিসেবে আমি গর্ব বোধ করি। আমার বাবা অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিলেন। তখন আমি কোনো রাজনীতি করতাম না", বলেন তিনি।

চট্টগ্রামকে সা�প্রদায়িক স�প্রীতির শহর হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বিনীত অনুরোধ করছি, যেন এমন কোনো উস্কানি দেওয়া না হয় যাতে সা�প্রদায়িক স�প্রীতি নষ্ট হয়।"

নূতন চন্দ্র সিংহের বড় ছেলে সত্য রঞ্জন সিংহ ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে তার প্রস্তাবক ছিলেন দাবি করে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশনে সেই ফরম রক্ষিত আছে।

রাউজান থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো হত্যা মামলার বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।

সত্য রঞ্জন সিংহ ১৯৭২ সালের ২৯ জানুয়ারি নূতন চন্দ্রকে হত্যার অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের ও তার বাবা ফজলুল কাদেরকে আসামি করে রাউজান থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সম্পর্কে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, "যতদূর জেনেছি তারা আমার প্রতিপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। কোনো সাধারণ মানুষের সাক্ষ্য নেননি। নিহতের পরিবারের কেউ বলেননি আমি ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল ঘটনাস্থলে ছিলাম। প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহ বলেছেন তারা শুনেছেন।

তদন্ত দলের কাছে নূতন চন্দ্রের হত্যার ঘটনা তুলে ধরেন তার ছেলে প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহ।

ফজলুল কাদের চৌধুরীকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, "শুনেছি এতে প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহ জড়িত ছিলেন।

"শুধু একজনের বাবার হত্যার বিচার করলে হবে না। আমিও বাবা হত্যার বিচার চাই।"

ফজলুল কাদের মুক্তিযুদ্ধের পর কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গত ২৫ মার্চ তদন্ত সংস্থা, আইনজীবী প্যানেল ও ট্রাইব্যুনাল গঠনের ঘোষণা দিলে বহু প্রতীক্ষিত এই বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এরপর বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজমীসহ দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল তাদের গ্রেপ্তার রাখারও নির্দেশ দিয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/সিএম/এএডি/এজে/জিএনএ/১১৩৬ ঘ.

একদিনে শতাধিক হিন্দুকে হত্যা

Fri, Sep 24th, 2010 10:32 pm BdST

মিন্টু চৌধুরী
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম, সেপ্টেম্বর ২৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- একাত্তরের ১৩ এপ্রিল রাউজানের তিনটি এলাকায় দিনভর পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুসলিম লীগের সশস্ত্র কর্মী ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা হত্যা করে শতাধিক হিন্দু নর-নারীকে।

সেদিন কুণ্ডেশ্বরী, জগৎমল্ল ও ঊনসত্তর পাড়ার হামলায় নিহত হয় কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহসহ ১০৭ জন।

হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁেচ যাওয়া কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও তাদের স্বজন শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দিয়েছেন সেদিনের সে ঘটনার বিবরণ।

ঘটনা ৩৯ বছর আগের হলেও তা যেন তাদের কাছে 'এইতো সেদিনের'। সে স্মৃতি মনে উঠলে আজও তারা শিউরে ওঠেন, হয়ে পড়েন হতবিহ্বল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের কাছে 'কোথায়-কীভাবে' সেদিন পাকবাহিনী তাদের এদেশীয় দোসরদের সহায়তায় ওই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিলো শুক্রবার তা বর্ণনা করে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তারা।

রাউজানের দুটি স্থানের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার বাবা তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে।

সালাউদ্দিন কাদের অবশ্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। তার দাবি, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে ছিলেন।

একাত্তরের ১৩ এপ্রিল সকালে কুণ্ডেশ্বরীতে নিজ বাড়িতে নূতন চন্দ্র সিংহকে, দুপুরে এর তিন কিলোমিটার দূরে জগৎমল্ল পাড়ায় একই পরিবারের সাতজনসহ ৩৭ জন নারী-পুরুষ এবং বিকাল ৫টার দিকে পাহাড়তলীর ঊনসত্তর পাড়ায় ৬৯ জনকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের শিকার সকলেই সংখ্যালঘু হিন্দু স�প্রদায়ের।

কুণ্ডেশ্বরী ওষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নূতন চন্দ্র সিংহকে নিজ বাড়ির জগদ্ধাত্রী মন্দিরের সামনে হত্যা করা হয় বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে জানিয়েছেন তার বড় ভাইয়ের ছেলে ভূপতি চন্দ্র সিংহ (৬৩)।

নূতন চন্দ্র সিংকে গুলি করে হত্যার স্থানটি দেখিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, "একাত্তরের ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাক আর্মিদের সঙ্গে নিয়ে কুণ্ডেশ্বরী ভবনে আসে। এসময় আর্মিরা কাকার (নূতন সিং) সঙ্গে কথা বলে সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যায়।

"কিন্তু সে (সাকা চৌধুরী) রাউজান কলেজ ক্যাম্প থেকে ১০টার দিকে দুই গাড়ি সেনা নিয়ে কুণ্ডেশ্বরী ভবনে আসে। এসময় তারা ভবনের গেইট ভেঙ্গে প্রবেশ করে।"

তখন সাকা চৌধুরীর সঙ্গে স্থানীয় মুসলিম লীগ সদস্য ও রাজাকার আবদুল মাবুদ, নবাব মিয়া, গোলাম আলী, এলাহী বক্স ও আবদুস সালাম ছিলো বলে জানান ভূপতি সিংহ।

তিনি বলেন, "সে সময় আমি প্রাণভয়ে ভবন থেকে এক-দেড় কিলোমিটার দূরে বিনাজুরী গ্রামে আশ্রয় নেই। পরে তিনটি গুলির শব্দ শুনতে পাই এবং তার কিছু পরে ঘটনাস্থলে আসি।

কুণ্ডেশ্বরী ভবনের প্রবেশ পথের অদূরে পুকুর পাড়ে তার 'কাকাকে দাহ করা হয়' বলে কন্নাজড়িত কণ্ঠে জানান ভূপতি সিংহ।

নূতন চন্দ্র সিংহর ছেলে প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সাকা চৌধুরীই পাক বাহিনীকে আমাদের বাড়িতে এনে বাবাকে গুলি করে হত্যা করিয়েছিলো।"

রঞ্জন সিংহ জানান, ঘটনার দুই দিন আগে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তিনি দেশ ত্যাগ করেন। তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আমানত খাঁ চৌধুরী তাদেরকে এ তথ্য জানান।

মল্লপাড়ায় ৩৭ জন হত্যার সাক্ষী জোৎস্নাপ্রভা

কুণ্ডেশ্বরীর দুই কিলোমিটার দূরে জগৎমল্ল পাড়ার ৮০ বছর বয়সী জোৎস্নাপ্রভা এখন আর আগের মতো শুনতে পান না, চোখেও দেখেন না ভালভাবে।

একাত্তরের ১৩ এপ্রিল দুপুরে স্বামীসহ সাতজনকে হারিয়েছেন তিনি। তার চোখের সামনে ৩৭ জনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয়। নির্মম ওই স্মৃতি নিয়ে আজও বেঁচে আছেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যার পর ফেরার পথে সাকা চৌধুরী ও তার অনুগতরা পাকবাহিনীকে এনে এ হত্যাযজ্ঞ চালায়।

শুক্রবার দুপুরে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত দল যখন জোৎস্নাপ্রভার বাড়িতে পৌঁছায় তখনো তিনি বারান্দায় বসা। অনেক কষ্টে স্মৃতি হাতড়ে তদন্ত দলের কাছে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।

তার স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, জ্যোৎস্নাপ্রভা চৌধুরীর বাড়ির উঠানে সেদিন জড়ো করা হয়েছিলো প্রায় ৪০ জনকে। পরে তাদের ব্রাশ ফায়ার করা হয়। গুলির শব্দে লাশের স্তুপের ওপর পড়ে জ্ঞান হারিয়ে প্রাণে বেঁচে যান জ্যোৎস্নাপ্রভা; হারান স্বামীসহ সাতজনকে।

তার বাড়ির অদূরে শহীদ ৩৫ জনের নামফলক সম্বলিত একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। তদন্ত দল ও উপস্থিত সাংবাদিকরা শহীদদের স্মরণে শুক্রবার সেখানে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।

ঊনসত্তর পাড়ায় দাহর পরিবর্তে মাটিচাপা

ঊনসত্তর পাড়ার মহাজন বাড়ির পুকুর ঘাট সংলগ্ন পাড় দেখিয়ে অজিত মহাজন (৫৫) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এখানেই ৭০-৭২ জন নারী-পুরুষকে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করা হয়।"

ব্রাশ ফায়ারে অজিতের বাবা যোগেশ মহাজন, বড় ভাই রণজিত মহাজনসহ হিন্দু স�প্রদায়ের ৬৯ জন প্রাণ হারান।

অজিত মহাজন জানান, পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের ভয়ে ওই হিন্দু পাড়ার সব যুবক পালিয়ে থাকায় নিহত ৬৯ জনকে ধর্মীয় মতে দাহ করা হয়নি। মহাজন বাড়ির ওই পুকুর সংলগ্ন একটি খাড়িতেই কোনরকমে মাটিচাপা দেওয়া হয়।

হত্যাকাণ্ডের সময় তার মা হরিলতা মহাজন ও বৌদি মিনতি মহাজনকে পুকুরের একপাশে বসিয়ে রাখা হয়েছিলো বলেও তিনি জানান।

অিজিত বলেন, "স্থানীয় মুসলিম লীগের নেতারা পাকিস্তানি বাহিনীকে আমাদের পাড়ায় নিয়ে এসে এ হত্যাকাণ্ড চালায়।"

তবে ওই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া পাক বাহিনীর এ দেশীয় দোসরদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।

অজিত অভিযোগ করেন, ঊনসত্তর পাড়ায় হত্যাকাণ্ডে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এখনো কোনো স্বীকৃতি পায়নি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমসি/এজে/জিএনএ/১০৩০ ঘ.

'জবাইয়ে সেই দৃশ্য এখনো তাড়া করে'

Sun, Sep 26th, 2010 2:35 pm BdST

আল আমীন দেওয়ান
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম, সেপ্টেম্বর ২৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- একাত্তরের ১০ নভেম্বর। এখন যা পাহাড়তলী বধ্যভূমি নামে পরিচিত, সেখানে এক এক করে জবাই করা হচ্ছিলো বাঙালিদের। জবাইয়ের দৃশ্য গুণতে গুণতে জ্ঞান হারাতে বসেছিলেন প্রাণে বেঁচে যাওয়া সেই সময়ের ওয়াসার মালামাল সরবরাহকারী গোফরান ভূঁইয়া।

বধ্যভূমির কাছেই টিলার ওপর জঙ্গলে বসে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ১২শ ৫২টি জবাইয়ের দৃশ্য দেখেছিলেন তিনি। দেখেছিলেন অসংখ্য মৃত মানুষ এনে স্তূপ করতে।

পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা সেদিন চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর বধ্যভূমিতে হত্যা করেছিল কয়েক হাজার বাঙালিকে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল শনিবার ওই বধ্যভূমিতে যায়, সাক্ষ্য নেয় প্রত্যক্ষদর্শী বিভিন্ন জনের।
গোফরান ভূঁইয়ার বয়স এখন ৬৮ বছর। একাত্তরের ১০ নভেম্বর ভোরে পাহাড়তলীর পাঞ্জাবী লেইন এলাকায় আকবর শাহ মাজারের নিচে নিজের মুদি দোকান থেকে বিহারিরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। বধ্যভূমি থেকে পালিয়ে তিনি পাহাড়ের জঙ্গলে আশ্রয় নেন। নিরাপদ স্থানে সরে পড়তে অপেক্ষা করতে থাকেন রাত নামার।

গোফরান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ঘুমের মধ্যে আজও সেই জবাই দৃশ্য দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দেয়। লাইনে দাঁড় করিয়ে একসঙ্গে ৫-১০ জন করে জবাই করছিলো বিহারিরা। কিছু সময় পরপর লাশ এনে জড়ো করছিলো বধ্যভূমিতে।"

"গুনেছিলাম তখন ১২শ ৫২টি জবাই দৃশ্য। এখনো মনে আছে", বলেন তিনি। এর পরপরই বললেন, "আমার জায়গা জমি-টাকাপয়সা যা আছে সব দিয়ে দেবো। এই বিচারের জন্য আমি সব করতে রাজি আছি।"

গোফরান ছাড়া আরো কয়েকজন জানালেন সেই সময়ের কথা। ১০ নভেম্বর বর্তমান চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা থেকে সাবেক রেল কর্মচারী কাজী আমিনুল ইসলাম ও তার বড় ভাই কাজী আনোয়ার হোসেনসহ মোট ৪০ জনকে বধ্যভূমিতে ধরে আনে বিহারিরা। তবে পরিচিত বিহারীর সহায়তায় প্রাণে বাঁচেন তারা।

আমিনুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সেদিন চোখের সামনে অনেককে জবাই হতে দেখেছি।"

স্বজন হারানো মুক্তিযোদ্ধা গাজী সালেহ উদ্দিন ঊনচল্লিশ বছর ধরে আগলে রেখেছেন একটি ছবি; বধ্যভূমিতে কঙ্কালের স্তূপের।

একাত্তরের ১০ নভেম্বর পাঞ্জাবী লেইন এলাকা থেকেই তার ছোটভাই, চাচা ও দুই চাচাতো ভাইসহ ১২০ জনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। বয়সে ছোট হওয়ায় তার ছোটভাই গাজী কামাল উদ্দিন বেঁচে গেলেও বাকিরা কেউ ফিরে আসেনি।

ছেলের খোঁজে বেরিয়ে বাবা আলী করিমও হারিয়ে যান চিরতরে। তাকেও হত্যা করা হয় এই বধ্যভূমিতে। কারো লাশও উদ্ধার করা যায়নি।

সালেহ উদ্দিন সাদা কালো ওই ছবি দেখেন, আর ভাবেন, হয়তো ছবির এই কঙ্কাল স্তূপেই আছে তার বাবা, চাচা ও দুই চাচাতো ভাইয়ের দেহাবশেষ।

সালেহ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বধ্যভূমিতে লাশের পর লাশ ছোট টিলার মত স্তূপ হয়ে পড়ে ছিলো দিনের পর দিন।

তিনি জানালেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের শুরুর দিকে ছবিটি তুলেছিলেন ফখরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এএডি/এমআই/১৪৩০ ঘ.

চট্টগ্রামে মানবতাবিরোধী অপরাধ: সাকার পর এবার অভিযোগ মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে

নূপুর দেব, চট্টগ্রাম

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পর এবার জামায়াতে ইসলামী নেতা মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে একাত্তর সালে চট্টগ্রামে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম মহানগরীর টেলিগ্রাফ হিল রোডে তৎকালীন 'ডালিম হোটেল' ছিল মীর কাসেম আলীর টর্চার সেল। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাসহ নিরীহ বাঙালি লোকজনকে ধরে নিয়ে গিয়ে তিনতলা এ হোটেলে নির্যাতন করা হতো। নির্যাতনের পর অনেককে হত্যা করে লাশ গুম করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাসেম আলীর বিরুদ্ধে গতকাল শনিবার একাত্তরের মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তদলের কাছে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীসহ অনেকে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য দেন।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তদলের সদস্য অ্যাডভোকেট জেয়াদ আল মালুম গতকাল দুপুরে সার্কিট হাউসে সংবাদ সম্মেলনোত্তর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তদন্তে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত দুই দিনের তদন্তে তাঁদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলোর পক্ষে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণও পাওয়া গেছে।

তদন্ত চলাকালে চট্টগ্রামে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী অবস্থান করার কোনো প্রভাব তদন্তে পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রভাব-প্রতিপত্তি বা হুমকি-ধমকিতে অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কার্যক্রমকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দুজনকে গ্রেপ্তার করা হবে কি না জানতে চাইলে জেয়াদ আল মালুম জামায়াতের পাঁচ শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, এর আগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের বিরুদ্ধেও একই প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।

এর আগে তদন্তদল সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তিন দফায় নগরীর কাটা পাহাড়ে ডালিম হোটেল (বর্তমানে মহামায়া ডালিম ভবন) টর্চার সেল, পাহাড়তলী বধ্যভূমি ও ফয়'স লেকে মহিলাদের টর্চার সেল এবং গণকবর এলাকা পরিদর্শন করে। সে সময় এসব স্থানে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান, নির্যাতিত ও নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তারা কথা বলে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রত্যক্ষদর্শী লোকজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে তদন্তদল। তিন দিন চট্টগ্রামে অবস্থানের পর গতকাল বিকেলে তদন্তদল ঢাকার উদ্দেশে চট্টগ্রাম ত্যাগ করে।
ডালিম হোটেল টর্চার সেল পরিদর্শনকালে তদন্তদলের কাছে একাত্তরের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা তুলে ধরেছেন এই টর্চার সেলে নির্যাতনের শিকার ন্যাপ নেতা সাইফুদ্দিন খানের স্ত্রী প্রত্যক্ষদর্শী নুরজাহান খান। তিনি বলেন, একাত্তরের ২৫ নভেম্বর ভোরে নগরীর পশ্চিম মাদারবাড়ী ৬ নম্বর আজিজ কলোনির বাসায় তাঁর স্বামীসহ অন্তত ৩৫ জন পরদিন যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ভোর রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে তাঁর স্বামীসহ সাতজনকে ধরে চোখে কালো কাপড় ও হাত বেঁধে নিয়ে যায় টর্চার সেলে। হানাদারদের সবার মুখে ছিল 'মাংকি ক্যাপ'। তিনি বলেন, সবাই জানে এই টর্চার সেলের নেতৃত্ব দেন মীর কাসেম আলী। তিনি তখন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা ছিলেন। নুরজাহান খান বলেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি স্বামীর দেখা পাননি। দেশ স্বাধীনের পর ফিরে আসা স্বামীর শরীরে নির্যাতনের অনেক চিহ্ন ছিল।

নুরজাহান খানের ভাই রেজা আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, টর্চার সেলে তিনি সাইফুদ্দিন খানকে দেখতে যেতেন। তিনি তাঁর ভগি্নপতিকে সিগারেট দিয়ে গেলে এর আগুন দিয়ে সাইফুদ্দিন খানের মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। রেজা সিদ্দিকী বলেন, 'যখনই যেতাম, দেখতাম হাত বাঁধা ও মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা। একেকটা রুম যেন একেকটা টর্চার সেল। তাঁর কাছে শুনেছি, খাওয়ার পানি খুঁজলে প্রস্রাব এনে দিত।'

এরপর তদন্তদল সকাল পৌনে ১০টায় পাহাড়তলী বধ্যভূমি পরিদর্শনে যায়। ১ দশমিক ৭৫ একর জায়গায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম বধ্যভূমি হিসেবে এটি পরিচিত। এ বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধকালে শত শত মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ বাঙালিকে এনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বলে তদন্তদলকে গতকাল জানান প্রজন্ম '৭১ চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. গাজী সালাহউদ্দিন আহমেদ।
বধ্যভূমির বিভিন্ন স্থান দেখিয়ে তদন্তদলকে গাজী সালাহউদ্দিন বলেন, 'একাত্তর সালের ১০ নভেম্বর দুপুর দেড়টায় আমার বাবা আলী করিম, সন্ধ্যায় চাচা আলী হোসেন, আবদুল গোফরান ও আবদুল মান্নানকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে এ বধ্যভূমিতে জবাই করে পাকিস্তানি বাহিনী। তাঁদের লাশ পর্যন্ত পাইনি। এ ছাড়া আমাদের পাঞ্জাবি লেন থেকে ১২০ জনকে নিয়ে সেখানে হত্যা করা হয়। একইভাবে ঝাউতলা রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন দাঁড় করিয়ে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট-দোহাজারীগামী এবং ফিরোজ শাহ কলোনি, বিহারি কলোনিসহ বিভিন্ন এলাকার শত শত লোককে ধরে নিয়ে সেখানে জবাই করার অভিযোগ রয়েছে।'

গাজী সালাহউদ্দিন আরো বলেন, এটি একটি নির্জন এলাকা ছিল। ওই সময় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মাহমুদুর নবী চৌধুরীর (বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাবা) কাছে নিরীহ অনেক লোক গিয়েছিল হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করার জন্য। কিন্তু সে হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হয়নি। যুদ্ধের পর এখানে কঙ্কালের স্তূপ ছিল। উঁচু-নিচু সব টিলা রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। পরে এসব টিলা কেটে সমতল করা হয়।

গাজী সালাহউদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ বধ্যভূমিতেই 'জিয়া বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন' নামে বহুতল একটি ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের স্মৃতিবিজড়িত এ বধ্যভূমি থেকে কয়েক বছর আগেও অনেক কঙ্কাল পাওয়া গেছে। ভবন নির্মাণকাজ শুরুর সময় রাতের আঁধারে অসংখ্য কঙ্কাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখনো মাটি খোঁড়া হলে অনেক কঙ্কাল পাওয়া যাবে। তাই এ বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও সংস্কারের জন্য অবিলম্বে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে নির্যাতনের শিকার হয়েও বেঁচে যাওয়া কাজী আমিনুল ইসলাম তদন্তদলের কর্মকর্তাদের বলেন, তিনি ও তাঁর বড় ভাই কাজী আনোয়ার হোসেনসহ ৪০-৫০ জনকে পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতাল এলাকা থেকে ধরে এ বধ্যভূমিতে নিয়ে আসা হয়। কৌশলে তাঁরা দুই ভাইসহ তিনজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও অন্যদের জবাই করা হয়েছে।

এরপর তদন্তকারী দল সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ফয়'স লেকে যায়। একাত্তরের পুরো সময়ে এ ফয়'স লেকের পাশে অবস্থিত রেলওয়ের 'লগ হাউস'-এ অসংখ্য নারীকে নির্যাতন করা হয়েছিল। অনেককে হত্যার পর আশপাশের পাহাড়সহ ফয়'স লেক এলাকায় গণকবর দেওয়া হয়।

তদন্তদল প্রথমে ফয়'স লেকের সিঁড়িসংলগ্ন গণকবর পরিদর্শন করে। তারপর দেখতে যায় সেই নির্যাতন সেল লগ হাউস। এটি বর্তমানে পর্যটন রেস্টুরেন্ট। সে সময় গাজী সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের উদ্ধৃতি দিয়ে তদন্তদলের কর্মকর্তাদের বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীদের ধরে নিয়ে এসে এই লগ হাউসে পাকিস্তানি বাহিনীর কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হতো। নির্যাতনের পর ফয়'স লেকের পানিতে নামিয়ে সে দৃশ্য দেখত কর্মকর্তারা। আবার পানি থেকে তুলে কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করত। এভাবে পাশবিক নির্যাতনের পর অনেককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর লগ হাউসসহ ফয়'স লেক থেকে নারীদের অনেক পোশাক, ভ্যানিটি ব্যাগ, জুতাসহ বিভিন্ন জিনিস পাওয়া যায়। তবে জীবিত অবস্থায় কাউকে পাওয়া যায়নি।

তদন্ত দল ঢাকা ফিরেছে
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তদল কাজ শেষে ঢাকা ফিরে গেছে। দুই দিনব্যাপী তদন্ত শেষে ফিরে যাওয়ার আগে গতকাল শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন তথ্য দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু।

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মিলনায়তনে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের রাউজান, পাহাড়তলী বধ্যভূমি, ডালিম হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে খুন, ধর্ষণ, বাড়িঘর জ্বালানো ও লুটপাটের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সাক্ষীদের বক্তব্যে সব কিছু উঠে এসেছে। এসব তথ্য আদালতে তুলে ধরা হবে।
গত দুদিনে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত হিসেবে যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্তদলের সদস্যরা জানান, এটি আদালতের বিষয়। নিরপেক্ষভাবে আইনকে সামনে রেখে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে ট্রাইব্যুনাল। তাঁরা আরো জানান, ট্রাইব্যুনাল আইনের ১৯ ধারাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। গত ৩৯ বছর নানা রাজনৈতিক টানাপড়েনের কারণে অভিযুক্তদের বিচার হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, সদস্য অ্যাডভোকেট মোকলেসুর রহমান। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্যানেল আইনজীবী রানাদাশ গুপ্ত, তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মতিউর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম, পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক খান ও এস এম ইদ্রিস।

অ্যাডভোকেট রানাদাশ গুপ্ত কালের কণ্ঠকে জানান, গতকাল বিকেলে বিমানযোগে তদন্তদল চট্টগ্রাম ত্যাগ করে।

24 September 2010

গুডস হিল ছিল টর্চার সেল

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

শুধু রাউজান নয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পুরো চট্টগ্রাম নগরীতে মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী (ফকা চৌধুরী) ও তাঁর ছেলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী) ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর তাঁদের বাসভবন নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকার 'গুডস হিল' মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতনকেন্দ্র বা টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তদলের আজ শনিবার তথ্য সংগ্রহের জন্য সেই গুডস হিলে যাওয়ার কথা রয়েছে।

চট্টগ্রাম শহরে সম্মুখ সমরে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে সাকা চৌধুরী নিজেই নগরীর মোমিন রোডে চেরাগী পাহাড়ের মোড়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ওমর ফারুককে গুলি করেন। এরপর তাঁকে রশি দিয়ে গাড়ির পেছনে বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসা হয় গুডস হিলে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর লাশ ফেলে দেওয়া হয় রাস্তার ওপর। অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ নাগরিককে এখানে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববর্তী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মোজাফফর আহমদ, তাঁর বড় ছেলে শেখ আলমগীর ও ভাতিজা শেখ খুরশিদ আনোয়ারকে বন্দি করে আনা হয়েছিল এই গুডস হিলে। অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর ভাতিজা শেখ খুরশিদ আনোয়ার মুক্তি পেলেও সেখানে মারা যান বাবা ও ছেলে।

মুক্তিযোদ্ধারা আরো জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে তিনটি গোষ্ঠী মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। এদের মধ্যে বিহারি সম্প্রদায় ও বদর বাহিনীর সদস্যরা লোকজনের ধনসম্পদ লুট এবং অগি্নসংযোগ করলেও মানুষ হত্যায় মূল ভূমিকা রেখেছিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তাঁর অনুগতরা। শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে সাকা চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে গুডস হিলে নিয়ে আসতেন।

আর কী ঘোড়ার ডিম সাজা দেবে : সাকা চৌধুরী

রফিকুল বাহার

প্রায় ৬২ বছর আগে ১৯৪৯ সালের ১৩ মার্চ চট্টগ্রাম নগরীর গুডস হিলে জন্ম নেওয়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী হিসেবে অধিক পরিচিত) বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। ১৯৭৯ সাল থেকে ৩২ বছর ধরে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সরাসরি বিরোধিতা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে 'মানবতাবিরোধী অপরাধের'। এ অপরাধ প্রমাণের জন্য গঠিত কমিটি প্রাথমিকভাবে যে ১২ জনের নাম ঘোষণা করেছে, তাঁদের মধ্যে তাঁর নাম রয়েছে ৭ নম্বরে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্তদল গতকাল শুক্রবার তাঁর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে গিয়ে এ অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ফটিকছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী গতকাল বিকেলে কথা বলেছেন কালের কণ্ঠের সঙ্গে।

কালের কণ্ঠ : তদন্তদল চট্টগ্রামে। অথচ আপনি ঢাকায়। আপনার তো আজ চট্টগ্রামেই থাকার কথা ছিল।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী : আমার চট্টগ্রামে থাকার কথা ছিল না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা থাকায় আমাকে ঢাকায় থাকতে হয়েছে। প্রতি বৃহস্পতিবার আমি চট্টগ্রাম চলে যাই, ঢাকায় ফিরি রবিবার। আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম যাচ্ছি।

কালের কণ্ঠ : আপনার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আসছে বলে তদন্ত কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন।

সাকা চৌধুরী : রাজনীতি যখন করি, অভিযোগ আসতেই পারে। ওয়ান-ইলেভেনের পর প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও অনেক গুরুতর অভিযোগ এসেছিল। সংখ্যাঘরিষ্ঠের সমর্থন নিয়ে রাজনীতি করি। স্বাভাবিকভাবেই আমারও অনেক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আছে। আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক এই ট্রাইব্যুনাল কমিটির কার্যক্রম স্থায়ী হওয়া উচিত। আশা করব, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পরে যেসব মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড হয়েছে, তার বিরুদ্ধেও এই তদন্ত কমিটি কাজ করবে।

কালের কণ্ঠ : কুণ্ডেশ্বরীর সেই খুনের ঘটনায় আপনার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ।

সাকা চৌধুরী : (হেসে) হ্যাঁ। উপন্যাস আকারে এই অভিযোগের কাহিনী পড়েছি। এতে রূপবানের কল্পকাহিনীর রূপবান খুঁজে পেয়েছি। এর চেয়ে বেশি সম্পৃক্ত ছিলাম না। তদন্ত কমিটির কৃতিত্বের প্রশংসা করতে হয়। তাদেরকে সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শাওনের পিস্তলের গুলিতে ইব্রাহীম খুন হওয়ার ঘটনা তদন্ত করতে দেওয়া উচিত। কারণ এই ঘটনার কোনো কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। পুলিশ যেখানে এক মাস আগে খুন হওয়া রাজনৈতিক কর্মীর খুনিকে বের করতে পারছে না, সেখানে ৩৯ বছর আগের ঘটনার রহস্য কিভাবে বের করবে?
কালের কণ্ঠ : নিজেই গুলি করে সমাজসেবক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা করেছেন আপনি।

সাকা চৌধুরী : আমার তো কোনো অস্ত্রই ছিল না। গুলি করব কিভাবে। গুলি যদি করেই থাকি, তাহলে অস্ত্র কোত্থেকে এল?

কালের কণ্ঠ : মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার বয়স কত ছিল?

সাকা চৌধুরী : ২০ থেকে ২১ বছর। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম।

কালের কণ্ঠ : আপনার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরীর কারণে পাকিস্তান আর্মির সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।

সাকা চৌধুরী : যোগাযোগ কিভাবে থাকবে? বাবা তো শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান বা মেম্বার ছিলেন না। বরং নির্বাচন নিয়ে ইয়াহিয়ার সঙ্গে ওনার চরম বিরোধ ছিল। আর ইয়াহিয়ার অধীনেই ছিল পাকিস্তান আর্মি।

কালের কণ্ঠ : তাহলে ১৯৭১ সালের এই খুনের অভিযোগের ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?

সাকা চৌধুরী : আমি মনে করি, সরকার '৭১ সালের সেই সব নৃশংস ঘটনার সমাধান চায়। আবার সরকারের একটি উদ্দেশ্যও আছে। সেই উদ্দেশ্য আস্তে আস্তে দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার হবে। যারা আমার ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মতো ওই ৯ মাসে ইন্ডিয়া যাননি, মুক্তিযোদ্ধার সনদ গ্রহণ করেননি, তাদের সবার অবস্থা আমার মতো। আমরা সবাই মানবতাবিরোধী ঝুঁকিতে আছি।
কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আপনি বিশ্বাস করেন না?

সাকা চৌধুরী : বিশ্বাসের সুযোগ নেই। ছাত্রজীবনে রাজনীতি করিনি। তবে আমার বন্ধু-বান্ধব সবাই সে সময় ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন করেছে। আমার বাসা ছিল ছাত্রলীগের আড্ডাখানা। আমাদের গাড়ি নিয়ে ছাত্রলীগের অনেকে নির্বাচন করতে গেছে। আমি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি ১৯৭৮ সালে।

কালের কণ্ঠ : তদন্ত কমিটি যদি প্রমাণ পায় আর বিচারে আপনার সাজা হয়?

সাকা চৌধুরী : হলে হবে। উদ্বিগ্ন বা উৎকণ্ঠিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। রাজনীতিবিদের সবচেয়ে বড় সাজা হলো নির্বাচনী পরাজয়। আজ পর্যন্ত পার্লামেন্ট নির্বাচনে হারিনি। আর কী ঘোড়ার ডিম সাজা দেবে। আমাকে সাজা দেওয়ার এই উৎসাহকে চট্টগ্রামের মানুষ বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ হিসেবেই দেখবে। ৩২ বছর ধরে চট্টগ্রামবাসীসহ সারা দেশের মানুষ আমার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে। এমন কী ঘটনা ঘটেছে যে তাদের আস্থার সংকট দেখা দেবে?

কালের কণ্ঠ : আপনার সবচেয়ে বড় দোষ কী বলে আপনি মনে করেন?

সাকা চৌধুরী : আমি যা বিশ্বাস করি, তা নির্দ্বিধায় বলে ফেলি। এতে দু-চারজন মনে কষ্ট পেতে পারে। এই নিয়ে পরে আমি দুঃখিত হই।

কালের কণ্ঠ : আপনার কোন গুণ মানুষকে আকৃষ্ট করে?

সাকা চৌধুরী : নিজের গুণ সম্পর্কে তেমন কিছু বলতে পারব না। তবে কোনো কিছু সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে পড়াশোনা করে বলার চেষ্টা করি। নেহায়েত গলাবাজির স্বার্থে গলাবাজি কম করি।

চৌধুরীর ছেলে আমাকে মারধর করেছিল : সাংবাদিক নিজাম

এস এম আজাদ

১৯৭১ সালে সাকা পরিবারের হাতে নির্যাতিতদের একজন আজকের সিনিয়র সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমেদ। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সে কর্মরত নিজামের ধারণা, তিনিই হয়তো এখন একমাত্র জীবিত ব্যক্তি যাঁকে নিজ হাতে অত্যাচার করেছিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী। চট্টগ্রাম নগরীর একটি পোড়া বাড়ি থেকে তাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে। গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক নিজাম স্মৃতি হাতড়ে জানান সেই দুঃসহ নির্যাতনের কথা।

৫ জুলাই ১৯৭১। চট্টগ্রাম শহরের হাজী লেনের একটি আধপোড়া বাড়ি। সেখানে এক সহযোগীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিন তরুণ। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল। হঠাৎ 'হ্যান্ডসআপ' শব্দ শুনে লাফিয়ে ওঠেন তাঁরা। সাদা পোশাকধারী কয়েকজন ও দুজন পাকিস্তানি সৈন্য তাঁদের আটক করে নিয়ে যায় গুডস হিলে। পাহাড়ের ওপর অবস্থিত ওই বাড়ির মালিক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের সময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাড়িটি স্থানীয় লোকজনের কাছে 'টর্চার সেল' হিসেবেই পরিচিত ছিল। বাড়িটিতে তিন তরুণকে উপস্থিত করার পর সেখানে চেয়ার ছেড়ে উঠে টুপি-পরা এক লোক বলেন, "শালা, তোরা মুক্তিযোদ্ধা হইছিস? তোরা 'জয় বাংলা' 'জয় বাংলা' বলছিস। আর হিন্দুরা ধুতি নাড়ছে...।" ওই লোক তেড়ে গিয়ে তরুণদের একজনকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এভাবে টানা ৯ দিন আটকে রেখে নির্যাতন আর পাঁচ মাস কারাগারে আটকে রাখা হয় তাঁদের। এ তিনজনেরই একজন নিজামউদ্দিন আহমেদ। টুপি-পরা লোকটি তাঁকেই মারধর করেছিলেন। নিজাম তখন চট্টগ্রাম কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র।

নিজাম উদ্দিন জানান, ১৯৭১ সালে তিনি তাঁর বাবা জহিরউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকায় থাকতেন। তাঁর বাবা ছিলেন মুসলিম হাই স্কুলের শিক্ষক। তাঁদের গ্রামের বাড়ি লোহাগাড়া থানার আদুনগর গ্রামে। ওই এলাকায় সিদ্দিক নামের এক তরুণ গিয়ে সহায়তা চান নিজামউদ্দিনের কাছে। তাঁরা জানতে পারেন সিদ্দিকের বাড়ি ঢাকায়। তিনি ভারতে গিয়ে 'হিট অ্যান্ড রান' প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। প্রত্যক্ষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে চান সিদ্দিক।

সিদ্দিকের সঙ্গে একজোট হন নিজামউদ্দিন, নন্দনকানন এলাকার সিরাজ উদ্দিন ও সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম ওরফে জুলু পাগলা। তাঁরা হাজী লেনের একটি পোড়া বাড়িতে আড্ডা দিতেন। রেকি করতেন। ৫ জুলাই দুপুর থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না সিদ্দিককে। সন্ধ্যায় রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনীর লোকজন বাড়িটি ঘেরাও করে ধরে নিয়ে যায় অন্য তিনজনকে। ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে নিজামউদ্দিনদের কাছে থাকা দুটি গ্রেনেড ও একটি রাইফেল নিয়ে যায় হানাদার বাহিনীর দোসররা।

নিজামউদ্দিন বলেন, "ঘটনার সময় অন্যদের সম্বোধনে জানতে পারি, আমাদের ধরে নেওয়ার দলে ছিলেন একজন 'চৌধুরীর পোয়া'। আমি তখন তরুণ ছাত্র। কাউকে ভালোমতো চিনতাম না। তবে বুঝছি ওই 'চৌধুরীর পোয়া' ছিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বা তাঁর ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, তখন তিনি বেশি অ্যাকটিভ ছিলেন। টর্চার সেল গুডস হিলে এ 'চৌধুরীর পোয়া' আমাকে মারধরও করেছেন।"

নিজামউদ্দিন বলেন, 'ফজলুল কাদের চৌধুরী আমাকে মারধর করে অন্যদের হাতে তুলে দেন। এরপর আমাকে আলাদা করে অন্য একটি ঘরে নিয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত নির্যাতন চালানো হয়। পেছন দিকে হাত দুটো বেঁধে পেটানো হয় আমাকে। পালাবদল করে চলে এ মারধর। রাত ১২টার দিকে ঘরের সামনের গ্যারেজে নিয়ে তিনজনকেই আধবসা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়। এভাবেই ছিলাম সারা রাত, পরের দিন।'

নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে নিজামউদ্দিন আরো বলেন, পরের দিন ৬ তারিখ সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাদা পোশাকে পাকিস্তানি বাহিনীর ফিল্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (এফআইইউ) কয়েকজন তাঁদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামের খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুমে। সেখানে নেওয়ার পর থেকে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় তাঁদের ওপর। ওই ক্যাম্পে ১৩ জুলাই পর্যন্ত রাখা হয় তাঁদের। সেখানে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর পাহারা বদল হতো। দায়িত্ব শুরু করার সময় সেন্ট্রি মারধর করে তার কাজ শুরু করত। তাঁদের এক সহযোদ্ধা সিদ্দিকের পরিণতি সম্পর্কে নিজামউদ্দিন স্মৃতি হাতড়ে বলেন, 'পরে জানতে পারি, এক প্রতারকের ফাঁদে পড়ে সিদ্দিক। ওই প্রতারকের নাম ইউসুফ। সে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে রাজাকারদের চর হিসেবে কাজ শুরু করে। সে সিদ্দিককে বোঝায়, শান্তি কমিটির কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিলে তাঁর কোনো সমস্যা থাকবে না। ৫ জুলাই সিদ্দিক ইউসুফের সঙ্গে গুডস হিলে গিয়ে আটক হন। তাঁকে টর্চার করে আমাদের সম্পর্কে তথ্য পায় তাঁরা। ওই তথ্যের ভিত্তিতেই চৌধুরীর পোয়ার নেতৃত্বে পোড়া বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।'

নিজামউদ্দিন বলেন, '১৩ জুলাই রাতে ট্রাকে করে তিনজনকেই চট্টগ্রাম কারাগারের গেটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জুলু পাগলাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সিরাজকে আলাদা কক্ষে পাঠানো হয়। আমাকে রাখা হয় ফাঁসির আসামির সেলে। অন্ধকার কক্ষ। টয়লেটের ব্যবস্থাও ছিল না। দুর্বিষহ কষ্টে কাটে পাঁচটি মাস।' ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে কারাগার থেকে ছাড়া পান নিজাম ও সিরাজ।
এক প্রশ্নের জবাবে নিজামউদ্দিন বলেন, 'আমার ওপর অত্যাচারের বিচার আমি চাই। এত দিন বিচার চাওয়ার মতো পরিবেশ ছিল না। শত বছর পরেও তাদের বিচার সম্ভব।'
ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজামউদ্দিন বলেন, 'আমার ওপর নির্যাতনের কথা একসময় আমি বলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কারণ, এসব কথা শুনলে ওই সময়ের দালালের বাচ্চারা মজা পায়। এতে লাভ হয় না। তবে বিচারের স্বার্থে এখন কথা বলতে চাই। তখন রাজাকারদের হাতে কত মানুষ মারা গেছেন, কত মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট হয়েছে। এ তুলনায় আমার বিচারের দাবি কিছুই নয়। আমি সব অপরাধেরই বিচার চাই।'

'সাকার নেতৃত্বে গণহত্যা হয়েছে': সাক্ষ্য দিলেন ১৭ জন

নূপুর দেব ও জাহেদুল আলম, রাউজান ঘুরে এসে

'একাত্তর সালে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জড়িত থাকার অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। আরো অভিযোগ আসছে। সব অভিযোগ সমন্বয় করে কাল (শনিবার) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে তুলে ধরা হবে।' একাত্তরের মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তদলের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে এ কথা বলেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তদল চট্টগ্রামের রাউজানে গিয়ে গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করেছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত তিন দফায় মোট ১৭ জনের সাক্ষ্য নেন এই দলের সদস্যরা। এ সময় সংবাদকর্মী বা অন্য কাউকে সেখানে উপস্থিত থাকতে দেওয়া হয়নি। হত্যাকাণ্ড, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধের বিষয়ে তদন্ত কমিটির কাছে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহতের স্বজন, নির্যাতনের শিকার পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।

সাক্ষ্য দান শেষে ৭০ বছর বয়সী প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমার বাবা নূতন চন্দ্র সিংহকে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল হারুন ও বর্তমানের বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেছিলেন। রাজাকাররা যেকোনো ক্ষতি করতে পারে_এই আশঙ্কা থেকেই তাঁরা এই পরামর্শ দিয়েছিলেন। সে সময় আমাদের বাড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্যসহ ২৭ জন শিক্ষক আশ্রয় নিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকাল ১০টায় আমার বাবাকে যখন পাকিস্তানি আর্মিরা টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে আসে, তখন তিনি মন্দিরে প্রার্থনা করছিলেন। মন্দিরের সামনেই তাঁকে ব্রাশফায়ার করা হয়। এরপর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বন্দুক দিয়ে গুলি করে বাবার মৃত্যু নিশ্চিত করে। আমি আমার বাবা হত্যার বিচার চাই।'

তদন্তদল আজ শনিবার সংবাদ সম্মেলনের আগে চট্টগ্রাম মহানগরীর গনি বেকারি এলাকায় অবস্থিত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাসভবন গুডস হিলসহ বধ্যভূমি পরিদর্শন করবে। গতকাল তদন্তদল রাউজানের কুণ্ডেশ্বরী নূতন সিংহের বাড়ি, জগৎ মল্লপাড়া ও ঊনসত্তরপাড়ার লোকজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে।

এদিকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্তদলের কাছে সাক্ষ্য না দিতে তাঁর অনুসারীরা এলাকাবাসীকে হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হুমকি দিয়ে বলা হয়, এর পরিণতি ভয়াবহ হবে। হুমকির বিষয়টিও তদন্ত কমিটির কাছে তুলে ধরেন সাক্ষ্যদাতারা। গতকাল সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে বেশ কিছু যুবক সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জগৎ মল্লপাড়ায় গিয়ে মহড়া ও হুমকি দেয়। বৃহস্পতিবার রাতেও তারা একইভাবে হুমকি দেয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এলাকাবাসী জানিয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল বিকেলে একসঙ্গে এখানে ৩৫ জনকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়।

পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রাউজানের তিনটি এলাকায় তদন্তদল সাক্ষ্য গ্রহণ করে।

তদন্তদলের নেতৃত্ব দেন অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু। এ ছাড়া ছিলেন অ্যাডভোকেট জিয়াদ আল মালুম, মোখলেছুর রহমান, রানা দাশগুপ্ত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মতিউর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম, দুই পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক ও ইদ্রিস আলী।

দানবীর, সমাজসেবক ও শ্রী কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহের বাড়িতে এক ঘণ্টা সাক্ষ্য গ্রহণের পর তদন্তদল যায় পাশের জগৎ মল্লপাড়ায়। যুদ্ধাহত জ্যোৎস্না বালা চৌধুরীসহ পাঁচজন এ সময় নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরেন। পরে জ্যোৎস্না বালা চৌধুরী বলেন, 'আমার স্বামী কিরণ চন্দ্র চৌধুরী, দেবর, সন্তানসহ সাতজনকে শান্তি কমিটির সভা আছে বলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায় স্থানীয় রাজাকাররা। ওই দিনই তাদেরসহ মোট ৩৫ জনকে হত্যা করা হয়।' আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বাদল কৃষ্ণ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, তাঁর শ্বশুর মধুসূদনকে একই দিন ঘর থেকে ঢেকে নিয়ে হত্যা করা হয়।

দুপুর ১টার দিকে ঊনসত্তরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। এখানে ১১ জন তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে ৯ জন বিধবা নারী ও দুজন পুরুষ। স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় চড়ে এসব সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে হাজির হন। সাগর বালা, প্রভা বালা, শান্তি পাল, উর্মিলা পাল, বাসন্তি ঘোষ, বীরেন্দ্র বড়ুয়া ও মিনতি মহাজন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বিস্তারিত বর্ণনা দেন। স্কুলের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তদন্তদল হেঁটে পাশের সতীশ মহাজনের বাড়ির বধ্যভূমি দেখতে যায়। এ সময় তদন্তদলকে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে পাহাড়তলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ ইব্রাহীম আঙুল দেখিয়ে বলেন, পুকুরের পাশে একটি ছোট খাল ছিল। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় ৭০ জন নারী-পুরুষকে ঘর থেকে ঢেকে এনে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। তাদের সবাই ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বী। হত্যার পর সৎকার না করে মাটিচাপা দেওয়া হয়। সাকা চৌধুরীর নেতৃত্বে এই গণহত্যা হয়েছে। এর আগে ইব্রাহীম তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দেন।

হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক এই কাহিনী শোনার পর তদন্তদলের সদস্যরা উপস্থিত এলাকাবাসীর কাছে জানতে চান, তারা এই গণহত্যার বিচার চান কি না। সমস্বরে সবাই জবাব দেন, 'আমরা অবশ্যই বিচার চাই।' তারপর বধ্যভূমির সামনে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

ঊনসত্তরপাড়ায় গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধের সামনে দাঁড়িয়ে তদন্তদলের সদস্যরা স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। তখন পূর্ব গুজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্বাস উদ্দিন বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি এলাকায় অবস্থান করছিলাম। ১২ এপ্রিল দুপুরে চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়তলী হয়ে রাউজান যাওয়ার পথে জগন্নাথবাড়ির বটগাছের সামনে ফজলুল কাদের চৌধুরী, তাঁর ছেলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর গাড়ি আটকে রাখে এলাকাবাসী। গাড়ি থেকে নামিয়ে তাঁদের জুতা নিক্ষেপ করে এলাকাবাসী। পরদিন ঊনসত্তরপাড়ায় সতীশ মহাজনের বাড়িতে স্থানীয় রাজাকার রাজ্জাক, পেয়ারু, ইউসুফ, মুকতুল হোসেন, ইসমাইলসহ বেশ কয়েকজন ওই এলাকার ৭০ জন নিরীহ নারী-পুরুষকে হত্যা করে। এদের মধ্যে ৫১ জনের নাম পাওয়া গেছে।

22 September 2010

সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ মিলেছে

পিরোজপুর প্রতিনিধি

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পিরোজপুরে তদন্ত চালিয়ে এ বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তদল এ কথা জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাঈদীর বিরুদ্ধে দুটি মামলায় অপরাধ সংঘটনের স্থান পরিদর্শন এবং সাক্ষ্য গ্রহণের পর তদন্তদলের সদস্যরা এ কথা বলেন।

তিন দিনের তদন্ত শেষে পিরোজপুর ত্যাগ করার আগে গতকাল বুধবার সকালে প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, 'মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সাঈদীর সম্পৃক্ততার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে এখনি সবকিছু খোলাখুলিভাবে বলা যাচ্ছে না।' তিনি জানান, তিন দিনের তদন্তে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পাঁচ হাজার গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। পরিদর্শক শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, বেঁচে যাওয়া ৩৮ প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী একাত্তরের বিভীষিকাময় লোমহর্ষক চিত্রের বর্ণনা করেছেন। সবকিছু রেকর্ড করা হয়েছে। প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের মতো পিরোজপুর জেলায়ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩-এর ৩ (২) ধারার অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীর সদস্যরা নিজেরা এবং তাদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী পিরোজপুরের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগি্নসংযোগসহ অন্যান্য অপরাধ সংঘটন করে। এ-সংক্রান্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।

হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, পিরোজপুরে যে তদন্ত কার্যক্রম চলছে তা আন্তর্জাতিকমানের। যথেষ্ট স্বচ্ছতা ও সততার সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলার অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করেছে। তিনি আরো জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুর জেলায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে হত্যা করার প্রমাণ তাঁরা পেয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, পিরোজপুরে সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার দুই বাদীকে হুমকি দেওয়ায় দুই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বাদীদের নিরাপত্তা বিধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সাঈদীকে আটক রাখা নিয়ে আবেদনের শুনানি ১২ অক্টোবর
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে কারাগারে আটক রাখতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর আগামী ১২ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। অসুস্থতার কারণে গতকাল বুধবার কারা কর্তৃপক্ষ সাঈদীকে হাজির না করায় ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী দিন ধার্য করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে বলা হয়েছে, সাঈদীকে আটক রাখার নির্দেশ দেওয়া না হলে তিনি বিদেশে পালিয়ে যাবেন।

21 September 2010

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার: জামায়াতের চার নেতার মুক্তির আবেদন খারিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ২২-০৯-২০১০

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার মুক্তি চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল ওই চার নেতার পক্ষে করা চারটি আবেদনই খারিজ করে দেন। একই সঙ্গে আরও দুটি আবেদন উপস্থাপন করা হয়নি বলে খারিজ করে দেওয়া হয়।

গতকাল সকালে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে কড়া নিরাপত্তা-ব্যবস্থায় ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তবে তাঁকে আটক রাখার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের (প্রসিকিউটর) করা আবেদনে সন্তুষ্ট না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল সম্পূরক আবেদন দিতে বলে শুনানি মুলতবি করেন। সাঈদীকে আজ বুধবার হাজির করারও নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তবে কারা সূত্রগুলো গতকাল রাতে জানিয়েছে, সাঈদী অসুস্থতা বোধ করায় তাঁকে আজ হাজির করা হবে না।

নিজামীসহ চার জামায়াত নেতার পক্ষে করা ছয়টি আবেদনের ওপর গতকাল শুনানি হয়। অভিযোগ গঠনের আগে ট্রাইব্যুনালের সব কার্যক্রম স্থগিত করাসহ তিনটি আবেদন খারিজ করা হয়। অপর দুটি আবেদনের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে করা পল্লবী ও কেরানীগঞ্জ থানায় করা দুটি মামলার নথিপত্র মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে পাঠানো এবং ট্রাইব্যুনালে তাঁদের করা আবেদন ও অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের অনুলিপি (সার্টিফাউড কপি) সরবরাহের আবেদন ছিল। এ ছাড়া চারজনের পক্ষে মনোনীত ব্যক্তিকে মামলা পরিচালনার ক্ষমতা অর্পণ (লেটার অব অথরিটি) এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ২৬ জুলাই জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে পৃথক দুটি আবেদন উপস্থাপন করা হয়নি বিবেচনায় খারিজ করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ: গতকাল শুনানির শুরুতে সাঈদীর পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য ওকালতনামা জমা দেন আইনজীবী তাজুল ইসলাম। এরপর সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানিতে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, ‘যে মামলার অভিযোগ পড়ব, তা সাধারণ কোনো মামলা নয়।’ তিনি বলেন, ‘একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধকালে অপরাধ সংগঠনকারী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ওরফে দেলু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন এজাজের সঙ্গে দেখা করে পাকিস্তান রক্ষা করার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার অঙ্গীকার করেন। ক্যাপ্টেন এজাজের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক তৈরি করার পর তিনি স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন নিয়ে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনী গঠন করে নিজেদের পাকিস্তানি বাহিনীর সহায়ক বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁরা স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করে পিরোজপুরসহ আশপাশের এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নাগরিকদের হত্যা, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও ধর্ষণের উদ্দেশে নারীদের পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে জোর করে তুলে দিয়ে অপরাধ সংঘটন করেন।’

হায়দার আলী আরও বলেন, দেলু ও তাঁর সহযোগীরা ১৯৭১ সালের ৮ মে আনুমানিক দুপুর তিনটায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সমর্থনকারী, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের আলমগীর পশারী, মাহবুব পশারী, চান মিয়া পশারী ও জাহাঙ্গীর পশারীদের (সাং-চিতলিয়া, থানা ও জেলা পিরোজপুর) বাড়ি ঘেরাও করেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে বাড়ি-ঘরে অনুপ্রবেশ করে ঘরে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করেন তাঁরা। তাঁরা বাড়িঘর পুড়িয়ে দেন। ২ জুন আনুমানিক ১০টার সময় দেলুর নেতৃত্বে অন্য অপরাধীরা পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে টেংরাখালী গ্রামের পূর্ব সীমানায় উমেদপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ায় যান। তাঁরা গ্রামটি ঘেরাও করে প্রত্যেক ঘরে অনুপ্রবেশ করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে তাদের উচ্ছেদ করতে বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। অপরাধী রাজাকার বাহিনী পিরোজপুর এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সঙ্গে নিয়ে মুক্তিবাহিনীকে হত্যা করার নামে গ্রামের নিরীহ শান্তিপ্রিয় নাগরিক, বুদ্ধিজীবী, ছাত্রদের হত্যা করে লাশ গুম করে রাখেন ও যুবতীদের ধরে এনে পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে অমানুষিক নির্যাতন ও ধর্ষণ করে হত্যা করেছেন বলে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।

শুনানিতে সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের ৩(২) ধারার আওতায় অন্তর্ভুক্ত। ১৯৭৩ সালের আইনের ১১(৫) ধারা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তদন্তের বৃহত্তর স্বার্থে তাঁকে আটক বা গ্রেপ্তার রাখা একান্ত প্রয়োজন। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রার্থনা করছি। এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ১১(৫) ধারা অনুযায়ী যুক্তি নেই। জবাবে হায়দার আলী বলেন, আইনের ধারাগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অপরাধের তদন্ত চলাকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা যেকোনো সময় এ ধরনের অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, সে ব্যক্তিকে আটক বা গ্রেপ্তার করার জন্য আবেদন করতে পারবেন। সাঈদীকে আটক রাখার ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। তদন্তের বৃহত্তর স্বার্থে তাঁকে আটক রাখা দরকার।

ট্রাইব্যুনাল বলেন, সাঈদীকে আটক বা গ্রেপ্তার রাখার উদ্দেশ্য কী তার যুক্তি (গ্রাউন্ড) বর্ণনা করতে হবে। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালকে সন্তুষ্ট করতে হবে। হায়দার আলী বলেন, আবেদনে বিষয়টি রয়েছে, তবে তা যথাযথ স্থানে উল্লেখ নেই। ট্রাইব্যুনাল বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা (ট্রাইব্যুনাল) সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আবেদন যথাযথভাবে পেশ করুন। ট্রাইব্যুনালের এক সদস্য বলেন, সাক্ষ্য-প্রমাণ পাচ্ছেন, তাহলে কেন তাঁকে কারাগারে (কাস্টডি) রাখতে হবে।

এরপর ট্রাইব্যুনাল শুনানি মুলতবি করে সাঈদীকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

অপর চারজনের আবেদন: জামায়াতের চার নেতার বিরুদ্ধে গত ২৬ জুলাই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইবুন্যাল। তবে অন্য মামলায় ওই সময় তাঁরা কারাগারে আটক থাকায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল না করে ফেরত পাঠায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে ২ আগস্ট ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় তাঁদের। ওই দিন পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাঁদের কারাগারে আটক রাখার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ আদেশ প্রত্যাহারসহ চারজনের পক্ষে ছয়টি আবেদন করা হয় আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে। বেলা ১১টা ২৮ মিনিট থেকে ১২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল ছয় আবেদনের ওপর শুনানি গ্রহণ করেন ও আদেশ দেন।

ছয় আবেদন: শুনানির শুরুতে আইনজীবী তাজুল ইসলাম চার জামায়াত নেতার পক্ষে একাধিক আইনজীবী মামলা পরিচালনা করবেন বলে জানান। এরপর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ সাঈদ বলেন, লেটার অব অথরিটি দেওয়ার জন্য (মামলা পরিচালনার ক্ষমতা অর্পণপত্র) আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল বলেন, ওকালতনামা দেওয়া হয়েছে। এরপরও এটি কেন প্রয়োজন? পরে আইনজীবী আবেদনটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানালে ট্রাইব্যুনাল তা উত্থাপিত হয়নি বলে খারিজ করে দেন।

আরেক কৌঁসুলি গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী গত ২৬ জুলাই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ প্রত্যাহারের আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যখন কার্যকর হয়নি, তখন তা প্রত্যাহারের কী প্রয়োজন? তদন্ত চলছে। আইন অনুযায়ী পরোয়ানা জারি করা যায়। জবাবে গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, অভিযোগ গঠনের আগেই ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়। এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনাকে মনে রাখতে হবে, কী ঘটনার অভিযোগে বিচার হচ্ছে? এখানে একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে। এ আবেদনটিও উত্থাপিত হয়নি বলে খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল।

শেষ পর্যায়: জামায়াতে ইসলামীর চারজনের পক্ষে আইনজীবী ফখরুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের আলোকে সংবিধানের প্রথম সংশোধনী হয়। তৎকালীন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর আইন ও সংবিধান সংশোধনের বিলটি সংসদে পেশ করেন। ওই সময় তিনি সংসদে বলেছিলেন, পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যই আইন। এ ভূখণ্ডে ১৯৭১ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। এ সময় ট্রাইব্যুনাল ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, যুদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে। ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বিষয়টি রয়েছে। জবাবে ফখরুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে যুদ্ধ শব্দটি নেই। এ বিতর্কের পর ফখরুল বলেন, পল্লবী ও কেরানীগঞ্জের যে দুটি মামলা ট্রাইব্যুনালে এসেছে তার কার্যক্রম স্থগিত থাকা প্রয়োজন। এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, এখানে কোনো মামলা আসেনি। এ বিষয়ে কোনো ধরনের কার্যক্রম ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন নেই। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনাল কোনো আদেশ দিয়ে হাকিম আদালত (ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট) থেকে মামলা আনেনি।

এরপর আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনালে মামলা এসেছে। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। এ দুটি মামলার নথিপত্র মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে পাঠানোর আরজি জানান তিনি। ট্রাইব্যুনাল বলেন, এ ধরনের মামলা ট্রাইব্যুনালের কাছে নেই। তাই আবেদন খারিজ করা হলো। একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল মন্তব্য করেন ‘আপনারা নতুন, আইনটিও নতুন, আমরাও নতুন। সময়মতো সব ঠিক হয়ে যাবে।’

পিরোজপুরে একাত্তরে ৩০ হাজার মানুষ হত্যা, দাবি তদন্তদলের

Mon, Sep 20th, 2010 11:24 pm BdST

পিরোজপুর, সেপ্টেম্বর ২০ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকার-আলবদরদের হাতে পিরোজপুরে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ হত্যার তথ্য পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল।

সোমবার জেলার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের স্থান ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ওপর দ্বিতীয় দফা সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথমদিন চার সদস্যের তদন্ত দল প্রধান এ দাবি করেন।

গত ১৮ অগাস্ট তদন্ত দল প্রথম পিরোজপুরে আসে। এ সময় তারা দু'দিনে ৩৫ জনের সাক্ষ্য নেন এবং জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

তারা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের পৃথক দু'টি মামলায় ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

তদন্ত দলের প্রধান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট (এএসপি) মো. হেলাল জানান, পিরোজপুরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৯ হাজার ৯০৬ জনকে হত্যার তথ্য পাওয়া গেছে।

তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুরের পাড়েরহাট, জিয়ানগরসহ এ অঞ্চলে কয়েক হাজার মানুষ হত্যা করা হয়েছে। জেলায় মোট ১২টি বদ্ধভূমি রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর বাহিনী এ অঞ্চলে অন্তত তিনশ নারীর ওপর নির্যাতন চালায়।

এছাড়া তারা তৎকালীন মহকুমা শহরে ট্রেজারিসহ প্রত্যন্ত এলাকায় ৩৫টি বাড়িতে লুটপাট ও ১৪৬টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বলে জানান তিনি।

তদন্ত দলের অপর তিন সদস্য হলেন- সিআইডির ইন্সপেক্টর ওয়ায়দুল্লাহ, নূর হোসেন ও শাহজাহান।

সোমবার তদন্ত দল জিয়ানগর উপজেলার পাড়েরহাট রাজলক্ষ্মী উচ্চ বিদ্যালয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের পৃথক দু'টি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ করে।

সাঈদীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সময় গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে মামলা দু'টি করা হয়।

এর মধ্যে সদর উপজেলার বাদুরা গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা সইজউদ্দীন পশারীর ছেলে মানিক পশারী গত ২০০৯ সালের ১২ অগাস্ট মুখ্য বিচার বিভাগীয় হাকিম আদালতে সাঈদীসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

একই বছরের ৩১ অগাস্ট জিয়ানগর উপজেলার টেংরাখালী গ্রামের জমিরউদ্দিনের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম একই অভিযোগে সাঈদী ও তার ভাই মোস্তফা সাঈদীসহ চারজনের বিরুদ্ধে অপর মামলাটি করেন।

গত ২৯ জুন জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।

সোমবার তদন্ত দল সদরের বলেশ্বর খেয়াঘাট বধ্যভূমি, হুলারহাট স্টিমারঘাট বধ্যভূমি, মণ্ডলপাড়া গণহত্যার স্থান, তেজদাসকাঠী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বধ্যভূমি, জুজখোলা বধ্যভূমি পরিদর্শন করে।

সন্ধ্যায় তারা পিরোজপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

তদন্ত দলের প্রধান জানান, মঙ্গলবার তারা স্বরূপকাঠী উপজেলার কুরিয়ানা পেয়ারা বাগান বদ্ধভূমি পরিদর্শন করবেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/জেবি/ডিডি/এইচএ/২৩১০ ঘ.

20 September 2010

যেকোনো মুহূর্তে গ্রেপ্তার হতে পারেন গোলাম আযম

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমকে যেকোনো মুহূর্তে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক। বেইলি রোডের নতুন কার্যালয়ে গতকাল রবিবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত অগ্রগতি ও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রথম পর্যায়ে মূলত মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত শীর্ষ ২০ চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর ব্যাপারে তদন্ত চলছে। সেক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। গোলাম আযম পূর্ব পাকিস্তান রক্ষা কমিটির উদ্যোক্তা ছিলেন। স্বাধীনতার পরও তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁর আদেশে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগসহ বিভিন্ন অপকর্ম সংঘটন করতে আলবদর, রাজাকারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও জামালপুরের তদন্তকাজ শেষ হয়েছে। এসব এলাকার নির্যাতিতরা তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা ও সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আব্দুর রাজ্জাক জানান, তদন্ত কর্মকর্তারা ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ির আমবাগানসংলগ্ন একটি কূপ পরিদর্শন করেছেন। সেখানে ১৯৭১ সালে মানুষ হত্যা করে পুঁতে রাখা হয়েছিল। আরেক অভিযুক্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে পিরোজপুরে অনুসন্ধান চলেছে। জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ব্যাপারেও অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। সারা দেশেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
বেইলি রোডের কার্যালয়ে গতকাল দুপুরে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে এএসপি মো. নুরুল ইসলাম ও ইন্সপেক্টর শ্যামল চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, একাত্তরে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের হোতা ছিলেন গোলাম আযম। তাঁর সার্বিক নেতৃত্বেই সব কিছু হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন জমা হবে। তারপর পরোয়ানা জারির মাধ্যমে তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাবে।
যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রসঙ্গে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রথম পর্যায়ে ২০ জনের যে তালিকা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে চারজন কারাগারে আছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁদের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের গুরুত্ব অনুধাবন করে এ তালিকা করা হয়েছে।

15 September 2010

তদন্ত দলের কাছে সাক্ষ্য: কামারুজ্জামানের নির্দেশেই ক্যাম্পে চলত নির্যাতন ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা

শেরপুর প্রতিনিধি

'আমি নয়আনী বাজার আলবদর টর্চার ক্যাম্পের পাহারাদার ছিলাম। আর কামারুজ্জামান ছিলেন আলবদরদের হর্তাকর্তা। তাঁর নির্দেশেই লোকজনকে আলবদররা এই ক্যাম্পে ধরে এনে নির্যাতন করত। নির্যাতন শেষে অনেককে শেরী ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হতো। শহীদ গোলাম মোস্তফাকেও কামারুজ্জামানের নির্দেশে আলবদররা হত্যা করে।'
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের কাছে এভাবেই গতকাল বুধবার সাক্ষ্য দেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কামারুজ্জামানের সহচর, নয়আনী বাজার এলাকার টর্চার কেন্দ্রের পাহারাদার, আলবদর সদস্য মোহন মুন্সী।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্তে গতকাল শেরপুর অঞ্চলের বিভিন্ন বধ্যভূমি, টর্চার সেল ও গণহত্যার স্থান পরিদর্শন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের সদস্যরা। এ সময় তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের সময় ভুক্তভোগী ও এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
আলবদর সদস্য মোহন মুন্সী ছাড়াও সাক্ষ্য দেন বীরপ্রতীক জহুরুল হক মুন্সী, ইতিহাসবিদ পণ্ডিত ফসিহুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা তালাপতুফ হুসেন মঞ্জু, শামসুন্নাহার বেগম, ভাষাসৈনিক আবদুর রশিদ, আবুল কাশেম, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম নেতা আক্তারুজ্জামান, আমজাদ হোসেন, ইউনুস কসাই, জিয়াউল হক বিএসসি প্রমুখ।
সাক্ষ্যদানকালে আলবদর সদস্য মোহন মুন্সী বলেন, 'আমি সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ডিউটি করতাম। দিনে যাদেরকে ধরে আনা হতো তাদেরকে চোখ, হাত-পা বেঁধে সিঁড়ির নিচে ফেলে রাখা হতো। দোতলায় কামারুজ্জামান সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে শলাপরামর্শের পর রাতে গাড়িতে করে তাদেরকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হতো। মাঝে-মধ্যে এই ক্যাম্পে পাকিস্তানি আর্মি কমান্ডার ক্যাপ্টেন রিয়াজ আসতেন। কামারুজ্জামান তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করতেন। এ ক্যাম্পে কামারুজ্জামানের সহযোগীদের মধ্যে ছিল_কামরান, নাসির, জয়নাল আবদীন, আবদুল্লা, মাহমুদসহ আরো অনেকে।' মোহন মুন্সী তাঁর অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা এবং কামারুজ্জামানসহ সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবি করেন।
বীরপ্রতীক জহুরুল হক মুন্সী বলেন, 'একাত্তরের ৯ ডিসেম্বর আমি যখন জামালপুরের পিটিআইয়ের পাকিস্তানি আর্মি ক্যাম্পে সারেন্ডারপত্র নিয়ে যাই, তখন সেখানে কামারুজ্জামানকে দেখতে পাই। তিনি দোভাষীর কাজ করেছিলেন। তাঁর নির্দেশে তখন আমাকে হাত-পা বেঁধে উপুড় করে টানিয়ে, হাতে-পায়ে সুঁই ঢুকিয়ে, দাঁত ভেঙে নির্যাতন করা হয়েছিল। তাঁর নির্দেশেই শেরপুরে আলবদর, রাজাকার ও পাকিস্তানি আর্মি গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগি্নসংযোগ করেছিল।'
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার রাশেদুজ্জামান বলেন, 'একাত্তরে আমি সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। একদিন সকাল ১১টার দিকে দেখি আমাদের বাড়ির পাশে (সদর থানার সামনে) পাঁচ যুবককে চোখে-মুখে কালো কাপড়, হাত পিছমোড়া করে বেঁধে একটি জিপে করে আনা হয়েছে। পরে লিচুগাছের নিচে দাঁড় করিয়ে তাদেরকে গুলি করে হত্যা করে সেখানেই গর্ত করে মাটিচাপা দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধারা সেখান থেকে তাদের হাড়গোড় তুলে কবরস্থানে দাফন করেন।'
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তারা গতকাল সকালে শেরপুর শহরের উপকণ্ঠে 'শেরী ব্রিজ' এলাকার বধ্যভূমি, শহরের রঘুনাথ বাজার এলাকায় শনি বিগ্রহ মন্দিরের পুরোহিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল, সদর থানার সম্মুখের বধ্যভূমি ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্প নয়আনী বাজার এলাকায় সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাসা, সূর্যদি ও ঝাউগড়া, ঝিনাইগাতির আহম্মদ নগর এবং শ্রীবরদীর জগৎপুর গণহত্যাস্থল পরিদর্শন করে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেন। পরে বিকেলে তাঁরা শেরপুর সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা এডিশনাল এসপি মতিউর রহমান বলেন, 'আমরা মুক্তিযুদ্ধকালে শেরপুর অঞ্চলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অনেক অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের সত্যতা পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলা সম্ভব নয়।' জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেয়েছেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'তাঁর বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ এসেছে।'
গত মঙ্গলবার দুই দিনের সফরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল শেরপুরে যায়। তদন্ত দলে রয়েছেন_প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট জেয়াদ-আল-মালুম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মতিউর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার মো. নুরুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক মো. আবদুর রেজ্জাক খান, প্রসিকিউটর প্রশাসনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান খান ও ক্যামেরাম্যান কনস্টেবল প্রবীর ভট্টাচার্য।

7 September 2010

জামায়াত নেতাদের মুক্তির জন্য হুমকিদাতা গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০৭-০৯-২০১০

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গ্রেপ্তার হওয়া শীর্ষ নেতাদের মুক্তির জন্য হুমকিদাতা মারুফ রায়হানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আজ মঙ্গলবার তাঁকে নীলফামারী থেকে গ্রেপ্তার করে।

রাজধানীর ডিবি কার্যালয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার এ কে এম শহীদুল এক সংবাদ সম্মেলনে হুমকিদাতা মারুফ রায়হানকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, মারুফের বাড়ি নীলফামারীর শেরপুর উপজেলার নতুন বাবু পাড়ার সাদ্দাম মোড়ে। সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। মারুফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। এলাকায় তাঁর একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দোকান আছে।

এ কে এম শহীদুল আরও জানান, কোন সাইবার ক্যাফে থেকে ই-মেইলটি পাঠানো হয়েছিল, ডিবি পুলিশ তা চিহ্নিত করেছে। এ ছাড়া ই-মেইলে হুমকি দেওয়ার সময় যে তিনটি মুঠোফোনের নম্বর উল্লেখ করা হয়েছিল, তার সূত্র ধরেই নীলফামারী থেকে মারুফকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারকে ই-মেইলে হুমকি দিয়ে বলা হয়, ‘জামায়াতের গ্রেপ্তার হওয়া শীর্ষ নেতাদের ঈদের আগে মুক্তি দেওয়া না হলে গুরুত্বপূর্ণ ভবন উড়িয়ে দেওয়া হবে।’ ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ৩১ আগস্ট ই-মেইলটি দেখতে পান এবং ওই দিনই রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে রমনা থানাকে বিষয়টি জানানো হয়।

31 August 2010

জামায়াতের চার নেতার মুক্তি দাবি: গুরুত্বপূর্ণ ভবন উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০১-০৯-২০১০

ঈদের আগে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় চার নেতাকে মুক্তি দেওয়া না হলে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন উড়িয়ে দেওয়া হবে বলে একটি ই-মেইল বার্তায় হুমকি দেওয়া হয়েছে। আইন কমিশনের ই-মেইল ঠিকানায় গত ২৫ আগস্ট এ বার্তাটি পাঠানো হয়। গতকাল মঙ্গলবার এই বার্তাটি দেখে তাৎক্ষণিক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়কে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তবে এতে ই-মেইল প্রেরকের পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিজস্ব সাইট না থাকায় আইন কমিশনের ঠিকানায় ই-মেইলটি পাঠানো হয়েছে।

আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইন কমিশনের ঠিকানায় ই-মেইলটি এসেছে। এতে ঈদের আগে চার নেতাকে মুক্তি না দেওয়া হলে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবন উড়িয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো. শাহিনুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’

ই-মেইলটি: বাংলায় লেখা ই-মেইল বার্তায় চার জাতীয় নেতা বলতে মানবতাবিরোধী অপরাধসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে আটক চার জামায়াত নেতাকে বোঝানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়, ‘আমাদের জাতীয় চার নেতাকে এই ঈদের আগে মুক্তি না দিলে ঈদের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন উড়িয়ে দেওয়া হবে এবং আপনাদের ওপর, পুলিশের ওপর, হামলা চালানো হবে।’ শিরোনামে লেখা হয়েছে, ‘একযোগে হামলা করা হবে’। ৎধনবুধভরংযষরসরঃবফ—মসধরষ.পড়স এই ঠিকানা থেকে পাঠানো ই-মেইল বার্তায় প্রেরকের জায়গায় এম ডি এম টি লেখা রয়েছে।