Showing posts with label প্রথম আলো. Show all posts
Showing posts with label প্রথম আলো. Show all posts

22 April 2011

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ফরিদপুরে গ্রেপ্তার

ফরিদপুর অফিস | তারিখ: ২২-০৪-২০১১

নাশকতামূলক চক্রান্তে জড়িত থাকার সন্দেহে ইজ্জত আলী (৫৫) নামের জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য এবং সাতক্ষীরা জামায়াতের সাবেক আমির। এ ছাড়া তিনি সাতক্ষীরা ইসলামি কমিউনিটি হাসপাতালের চেয়ারম্যান।

আজ শুক্রবার ভোরে ফরিদপুরের শহরতলির আরামবাগ এতিমখানা পরিচালিত একটি গেস্টহাউস থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুনীল কুমার কর্মকার জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারের কথা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার প্রথম আলোকে জানান, ইসলামি কমিউনিটি হাসপাতালকে ভিত্তি করে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে ফরিদপুরকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তের অংশ হিসেবে ইজ্জত আলী জেলার জামায়াতের নেতাদের সংঘবদ্ধ করে আসছিলেন।

তবে জেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম দাবি করেছেন, আজ ঝিনাইদহে ইসলামি কমিউনিটি হাসপাতালের নির্মাণ-সংক্রান্ত এক সভায় যোগ দিতে তিনিসহ দিনাজপুর ইসলামি কমিউনিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আকতারউদ্দীন মোল্লা ও মানিকগঞ্জ ইসলামি কমিউনিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. রহিসউদ্দীন গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুর আসেন। তাঁরা ওই দিন বিকেলে ফরিদপুর শহরটি ঘুরে দেখেন এবং রাতে আরামবাগ এতিমখানা পরিচালিত রেস্ট হাউসে অবস্থান করেন। পুলিশ সেখান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এদিকে তাঁকে গ্রেপ্তারের পরপরই ওই গেস্ট হাউসে অবস্থানকারী অন্য দুই জামায়াত নেতা আজ সকালেই তড়িঘড়ি করে ফরিদপুর ত্যাগ করেন।

এদিকে জেলা জামায়াতের আমির দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ইজ্জত আলীকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।

21 April 2011

ডুয়েটে শিবির নেতাকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার

ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি | তারিখ: ২১-০৪-২০১১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারকে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য করায় ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) একজন শিক্ষার্থীকে আজ বৃহস্পতিবার এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ লোকমান তড়িত্ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের নেতা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটি লোকমানকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর তাঁর চারিত্রিক সনদে এ শাস্তির কথা উল্লেখ থাকবে বলেও কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়।

উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারকে নিয়ে লোকমান আপত্তিকর মন্তব্য করেন। ঘটনার জের ধরে ওই দিন রাতে শিবিরের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতিসহ পাঁচ শিবির কর্মীকে আটক করে। পরদিন ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ছয় শিবির কর্মী ও অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় মামলা করা হয়।

5 April 2011

শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারের উপদেষ্টা ছয় শিক্ষক!

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি | তারিখ: ০৬-০৪-২০১১

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন শিক্ষক। চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারের এই কোচিং সেন্টারের নাম ইনডেক্স বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টার।

জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির এই কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে। তবে কোচিং সেন্টারের পরিচিতিমূলক বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, এটি পরিচালনা করছে চিটাগাং ইউনির্ভাসিটি স্টুডেন্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) মো. আলাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ভর্তি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত থাকার কোনো নিয়ম নেই। নৈতিকভাবেও এটা সমর্থনযোগ্য নয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিবির পরিচালিত ইনডেক্স কোচিং সেন্টারের সাত উপদেষ্টার ছয়জনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁরা হলেন, অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আবুল কালাম আযাদ, দর্শন বিভাগের মোজাম্মেল হক, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের কাজী মু. বরকত আলী, ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তানভীর মু. হায়দার আরিফ এবং মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের মুহাম্মদ জাফর। সাত উপদেষ্টার অন্যজন হলেন ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সাবেক শিক্ষক মুহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ। এঁদের সবাই ক্যাম্পাসে জামায়াতপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত।

জানা গেছে, কোচিং সেন্টারের পরিচালনা পরিষদের চারজনই ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। পরিচালনা পর্ষদের প্রধান হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুস্তফা সাকের উল্লাহ। অন্যরা হলেন সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দীন, শামছুদ্দিন ও আবুল ফজল।
এ বিষয়ে জানতে আবুল কালামের মোবাইলে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মুহাম্মদ জাফর ও বরকত আলী সভায় ব্যস্ত আছেন জানিয়ে পরে যোগাযোগ করতে বলেন। কামাল উদ্দিন ও মোজাম্মেল হকের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আর তানভীর শিক্ষাছুটিতে বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন।

কোচিং সেন্টারের পরিচালক শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরামর্শের জন্য শিক্ষকদের উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে। কোচিং সেন্টারের কোনো প্রয়োজনে আমরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ জন্য তাঁদের কোনো সম্মানী দেওয়া হয় না।’

29 March 2011

ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়: পাঁচ শিবির নেতা ও কর্মীর রিমান্ডের আবেদন

ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি | তারিখ: ২৯-০৩-২০১১

ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতিসহ গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ শিবিরকর্মীকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে জয়দেবপুর থানা পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবার নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য এবং এ নিয়ে ছাত্রলীগকর্মীর ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের নেতা মোহাম্মদ লোকমান ও গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ শিবিরকর্মীর শাস্তির দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। উপাচার্য এম সবদার আলী গতকাল সোমবার আবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জয়দেবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ শিবিরকর্মীর সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের নেতা মোহাম্মদ লোকমান ফেসবুকে শেখ হাসিনার পরিবারকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় শনিবার রাতে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘাত বাধে। এতে ছাত্রলীগের কর্মীরা তিন শিবিরকর্মীকে মারধর করেন। অপরদিকে শিবিরের সভাপতির হামলায় ছাত্রলীগের এক কর্মী জখম হন। ওই দিন রাতেই পুলিশ ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতিসহ পাঁচজন শিবিরকর্মীকে আটক করে। গত রোববার ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জয়দেবপুর থানায় ছয়জন শিবিরকর্মী ও অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। একই দিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

17 March 2011

উল্লাপাড়া জামায়াতের আমিরসহ নয় নেতা গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিরাজগঞ্জ ও উল্লাপাড়া প্রতিনিধি | তারিখ: ১৮-০৩-২০১১

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌর শহরের আবু হুরাইরা এতিমখানা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা জামায়াতের আমিরসহ নয় নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম জানান, গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের জন্মদিনের উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং আজ শুক্রবার উল্লাপাড়ার মার্চেন্টস পাইলট স্কুল ও কলেজের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান ভণ্ডুল করতে গোপন বৈঠক হচ্ছিল। সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বেলা ১১টার দিকে আবু হুরাইয়া এতিমখানায় অভিযান চালিয়ে নয় জামায়াত নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাঁদের কাছ থেকে পাঁচটি জেহাদি বই উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া জামায়াত নেতারা হলেন উল্লাপাড়া উপজেলা জামায়াতের আমির মো. শাহজাহান আলী, পৌর জামায়াতের আমির মো. খায়রুল ইসলাম, সেক্রেটারি মো. সরোয়ার হোসেন, বড়হর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আবদুল লতিফ, পূর্ণিমাগাতী ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আবদুল খালেক, উপজেলা জামায়াতের কার্যকরী সদস্য গোলাম মোস্তফা, শাহজাদপুর উপজেলার নরিনা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপার মো. আবুল বাশার, আমিনুল ইসলাম এবং জামায়াতের রুকন সদস্য মো. শাহাদৎ হোসেন।

ওসি তাজুল জানান, গ্রেপ্তারের পর সবাইকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের পর অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লাপাড়া থানাহাজতে জামায়াত নেতা শাহজাহান আলী তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আত্মশুদ্ধির জন্য নিয়মিত বৈঠক হিসেবে তাঁরা মিলিত হয়েছিলেন।

12 March 2011

প্রতারণা করে শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়াচ্ছে ফুলকুঁড়ি আসর

কুদরাত-ই-খুদা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় | তারিখ: ১৩-০৩-২০১১

রাজশাহী নগরের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতারণা ও কৌশলের আশ্রয় নিয়ে শিশু সংগঠন ‘ফুলকুঁড়ি আসরে’ ভেড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফুলকুঁড়ি আসর ছাত্রশিবির পরিচালিত শিশু সংগঠন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। অভিভাবকেরা এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

শিক্ষক, অভিভাবক ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে নগরের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে শ্রেণীকক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে ফুলকুঁড়ি আসরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন। পরে শিক্ষার্থীদের হাতে সদস্য ফরম ধরিয়ে দেন। এই ফরমে ফুলকুঁড়ি আসরের পরিচিতি, আদর্শ ও উদ্দেশ্য, মূলমন্ত্র, স্লোগানসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ রয়েছে। একই সঙ্গে রয়েছে সদস্য হওয়ার আবেদনপত্র। ফুলকুঁড়ি আসরের কেন্দ্রীয় প্রধান পরিচালক বরাবর ওই আবেদনপত্রে লেখা রয়েছে, ‘ভাইয়া, আস্সালামু আলাইকুম। আমি ফুলকুঁড়ি আসরের আদর্শ, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচির সাথে একমত হয়ে এর সদস্য হতে চাই। আমার অভিভাবকের এতে কোন আপত্তি নেই। আমি নিজে এ সংগঠনের নিয়ম শৃংখলা ও আইন মেনে চলবো এবং অন্যের কাছে ফুলকুঁড়ির আহ্বান পৌঁছে দিতে চেষ্টা করবো।’ আবেদনপত্রে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামসহ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, টেলিফোন বা মুঠোফোন, ই-মেইল, অভিভাবকের স্বাক্ষর ইত্যাদি বিষয় পূরণের জন্য নির্ধারিত জায়গা রাখা হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক জানান, ১৭ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের অনুমতি না নিয়েই বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন কয়েকজন তরুণ। তাঁরা শ্রেণীকক্ষে গিয়ে ‘সুন্দর হাতের লেখা’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। পরে বিজয়ীদের পুরস্কারও দেওয়া হয়। এরপর ফুলকুঁড়ি আসরের উদ্দেশ্য বর্ণনা করে সদস্য ফরম ধরিয়ে দেওয়া হয়। কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে ফরম পূরণ করে নেওয়ার পর অভিভাবকদের স্বাক্ষরের জন্য নির্ধারিত জায়গায় শিক্ষার্থীদের দিয়েই স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়। নগরের অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা এই কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক জানান, অভিভাবকদের না জানিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এভাবে ফুলকুঁড়ি আসরের সদস্য ফরম পূরণ করানো অবশ্যই অন্যায়। আবার অভিভাবকদের স্বাক্ষরও করিয়ে নেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। অভিভাবকেরা এ ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে একে মিথ্যাচার ও প্রতারণা হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

বিশিষ্ট নাট্যকার এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের সভাপতি মলয় ভৌমিক বলেন, ফুলকুঁড়ি আসর যে জামায়াত-শিবিরের শিশু সংগঠন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই করে নিজেদের সংগঠনে ভেড়ানোর মাধ্যমে জামায়াত-শিবিরের ‘নীল নকশা’ বাস্তবায়ন করাই তাঁদের উদ্দেশ্য।

ফুলকুঁড়ি আসরের সদস্য ফরমের শেষ পৃষ্ঠায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হিসেবে ‘১১৪/২, সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোড, মৌচাক, ঢাকা-১২১৭’ লেখা রয়েছে। সেখানে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোন নম্বর, ই-মেইল ও ওয়েবসাইটের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে উল্লিখিত মুঠোফোন নম্বরে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

ফুলকুঁড়ি আসর ছাত্রশিবির পরিচালিত সংগঠন কি না, সে ব্যাপারে শুক্রবার রাতে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে রাজশাহী মহানগর শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ফুলকুঁড়ি আসর একটি শিশু সংগঠন। ফুলকুঁড়ি আসর তাদের মতো করে কাজ করে আর আমরা আমাদের মতো করে কাজ করি। ফুলকুঁড়ি আসরের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ততা নেই বলে তিনি দাবি করেন।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, কোমলমতি শিশুদের দলে ভেড়ানোর জন্য প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

2 March 2011

আল-কায়েদা ও জেএমবি যোগাযোগ: আরসিইউডি জঙ্গিগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক, সমন্বয়কারী

টিপু সুলতান | তারিখ: ০২-০৩-২০১১

আবদুর রশিদ চৌধুরী। আরসিইউডির চেয়ারম্যান। ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম উদ্যোক্তা। এআরওয়াইয়ের বাংলাদেশে প্রস্তাবিত টেলিভিশনের সাবেক প্রধান

ধর্মভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের আড়ালে মূলত জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা ও দেশি-বিদেশি জঙ্গি সংগঠনের সমন্বয়ের কাজ করছে রিসার্চ সেন্টার ফর ইউনিটি ডেভেলপমেন্ট (আরসিইউডি)। কথিত গবেষণাপ্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রশিদ চৌধুরী ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম উদ্যোক্তা। এ ছাড়া তিনি ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিমের ঘনিষ্ঠজন। সেই সূত্রে আবদুর রশিদ দুবাইভিত্তিক পাকিস্তানি কোম্পানি এআরওয়াইয়ের বাংলাদেশে প্রস্তাবিত টেলিভিশনের প্রধানের দায়িত্ব পান। এআরওয়াই পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ছাড়াও আল-কায়েদা ও তালেবানের মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সহযোগী বলে অভিযোগ আছে।
আবদুর রশিদ দাবি করেন, আরসিইউডির মাধ্যমে তাঁরা সারা বিশ্বের মুসলিম ঐক্য নিয়ে কাজ করতেন। তবে প্রথম আলোর হাতে আসা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আরসিইউডি থেকে বিভিন্ন সময়ে নিষিদ্ধঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জন্য সদস্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, আরসিইউডি মূলত জামায়াতুল মুসলেমিন নামের অপর একটি ধর্মভিত্তিক সংগঠনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। আবার জেএমবি ও ইয়েমেনভিত্তিক আল-কায়েদার মধ্যে সংযোগ ও সমন্বয়কারী হিসেবে আরসিইউডির নাম এসেছে। এই সংগঠনের অন্তত তিন সদস্য গত বছর ইয়েমেনে আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হন। তাঁদের মধ্যে আবদুর রশিদের জামাতা তেহজীব করিমও রয়েছেন। আর তেহজীব ও তাঁর বড় ভাই রাজীব করিম দুজনই বাংলাদেশে জেএমবির সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের সঙ্গে আল-কায়েদার আরব উপদ্বীপের নেতা আনোয়ার আল-আওলাকির সরাসরি যোগাযোগ ছিল বলে রাজীব যুক্তরাজ্যের আদালতে বলেছেন। গত সোমবার রাজীব যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমান উড়িয়ে দেওয়াসহ সন্ত্রাসমূলক চারটি অভিযোগে ব্রিটিশ আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ১৮ মার্চ তাঁর সাজা ঘোষণা করা হবে।

যেভাবে সন্ধান: জঙ্গি তৎপরতার ওপর অনুসন্ধান করতে সিলেটে গিয়ে ২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে আরসিইউডির ব্যাপারে প্রথম তথ্য পান এই প্রতিবেদক। সিলেট অঞ্চলে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিযুক্ত এক কর্মকর্তা শুধু জানান, সংগঠনটির কার্যালয় ধানমন্ডিতে। ওই কর্মকর্তা বিষয়টি তখন ঢাকায় নিজ দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। ২০০৯ সালের মার্চে ওই দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার প্রধানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘আরসিইউডির বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে।’

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের শুরুর দিকে আরসিইউডির জন্ম। তবে আবদুর রশিদ বলেছেন, এটি ২০০৩-০৪ সালে যৌথ মূলধনি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে (জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অ্যান্ড ফার্মস) নিবন্ধিত হয়। শুরুতে এর কার্যালয় ছিল রাজধানীর ধানমন্ডির ৭ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে। ২০০৬ সালের শেষ দিকে সেখান থেকে আরসিইউডির কার্যালয় স্থানান্তর করা হয় আজিমপুরে।

প্রায় এক বছরের চেষ্টার পর গত বছরের ৪ জুন এ প্রতিবেদক আরসিইউডির চেয়ারম্যান আবদুর রশিদের সাক্ষাৎ পান। সর্বশেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কয়েক দফা কথা হয়েছে। প্রতিবারই তিনি জেএমবি ও জামায়াতুল মুসলেমিনের সঙ্গে আরসিইউডির সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন।

রশিদ দাবি করেন, আরসিইউডি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এখানে সপ্তাহে এক দিন সক্রিয় সদস্যদের নিয়ে বৈঠক, ধর্মীয় আলোচনা বা তালিম এবং মাঝেমধ্যে সভা-সেমিনার, কর্মশালার আয়োজন করা হতো। এখন আর এটি সক্রিয় নয় বলে তিনি দাবি করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত বছর গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবির আমির সাইদুর রহমান বলেছেন, আরসিইউডি মূলত জামায়াতুল মুসলেমিনের একটি এনজিও। এর মূল কাজ হচ্ছে, মূল সংগঠনের জন্য কর্মী সংগ্রহ ও উগ্র ধর্মীয় মতবাদে উদ্বুদ্ধ করা।

ইয়েমেনে আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া মাইনুদ্দীন শরিফ বলেছেন, আরসিইউডির কার্যালয় আজিমপুরে আবদুর রশিদের বাসার নিচের তলায়।

আবদুর রশিদ বলেন, ‘ধানমন্ডি অফিস বন্ধের পর কিছুদিন কেউ কেউ আমার বাসায়ও আসত। নিচতলা খালি ছিল, তাই সেখানে বসত। বেশি লোক হতো না। ২০-২৫ জন করে লোক একত্র হতো। তরুণেরাই বেশি আসত, বয়স্কও কিছু লোক থাকত।’

আরসিইউডি থেকে জেএমবির সামরিক কমান্ডার: ২০০৮ সালের ১৫ নভেম্বর রাজধানীর মিরপুরের কালশী থেকে জেএমবির কথিত সামরিক শাখার কমান্ডার হানিফ ওরফে কালামকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, তখন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে হানিফ জানান, তিনি জামায়াতুল মুসলেমিনের সদস্য হিসেবে আরসিইউডিতে যুক্ত হন। আরসিইউডির সভায় জামায়াতুল মুসলেমিনের পরিচয়ে জেএমবির লোকজন যেত। তারা সেখান থেকে ধর্মের প্রতি বেশি আবেগপ্রবণদের জেএমবিতে সদস্য হতে অনুপ্রাণিত করত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জামাআতুল মুসলেমিনের সদস্যরা আসতেন আরসিইউডির কার্যালয়ে। হানিফ ও তাঁর সহপাঠী জাহিদ ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময় আরসিইউডির এজাজের (পরে জেএমবির নেতা) দাওয়াতে জেএমবিতে যোগ দেন। তাঁরা তিনজনই জামায়াতুল মুসলেমিনের সদস্য ছিলেন। গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে হানিফ বলেন, ‘জেএমবিতে যোগ দেওয়ার পরপর আমাকে এহসার হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আমি পার্থিব কাজকর্ম ছেড়ে সাংগঠনিক কাজে সম্পৃক্ত হই।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জেএমবির আমির সাইদুর রহমানও গত বছর রিমান্ডে বলেছেন, হানিফ আরসিইউডি থেকে জেএমবিতে এসেছেন।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বৈঠক: জিজ্ঞাসাবাদে হানিফের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরসিইউডির মূল কার্যালয়ে ছাড়াও রাজধানীতে একেক সপ্তাহে একেক স্থানে বৈঠক হতো। এর মধ্যে ভাষানটেক এলাকায় এজাজের বাসা, বাড্ডায় লিটনের বাসা, গ্রিন রোড এলাকায় রেজোয়ানের (এখন ইয়েমেনের কারাগারে বন্দী) বাসায়, পুরান ঢাকায় রিপনের বাসা, বনানী ডিওএইচএসে মাহমুদার বাসা অন্যতম। হানিফ জানান, কাঁচপুর ব্রিজ ও মেঘনা ব্রিজের মধ্যবর্তী স্থানে আরসিইউডির একটি শাখা অফিস আছে।

আরসিইউডির চেয়ারম্যান রশিদ দাবি করেন, হানিফকে তিনি চেনেন না। হানিফ যাঁদের নাম বলেছেন, তাঁদেরও চেনেন না। তবে তিনি স্বীকার করেন, আরসিইউডিতে সাপ্তাহিক আলোচনা হতো। এর মধ্যে বনানী ডিওএইচএসে বদরুন রশিদের বাসায় শুধু নারী সদস্যদের নিয়ে তালিম হতো। বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্ত্রী বদরুন রশিদ মারা গেছেন।
আরসিইউডির চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে আরও বলেন, ধানমন্ডির অফিসে প্রতি মাসে তিন-চারটি বৈঠক হতো। প্রতি বৈঠকে ২০-২৫ জন থাকত; তারা তরুণ, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। আলোচকদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিও থাকতেন।

এসব আলোচনায় কারা বয়ান করতেন এবং কারা আসত—এ প্রশ্নের জবাবে রশিদ বলেন, ‘সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল।’ কিন্তু এখানে এমন আলোচনা হবে বা কবে, কখন হবে, তা মানুষ কীভাবে জানত—এ প্রশ্ন করলে তিনি চুপ থাকেন।

জেএমবিকে সহায়তা: সূত্র জানায়, জেএমবির আমির সাইদুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে বলেছেন, আরসিইউডির পক্ষ থেকে জেএমবিকে বেশ কিছু জিহাদি বই ছাপিয়ে দেওয়া হয়। ইয়েমেনের আল-কায়েদার সঙ্গে জেএমবির যোগাযোগ তৈরি, ইয়েমেনের নাগরিক আহমেদের সঙ্গে বৈঠক, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য পাহাড়ে জমি কিনতে কয়েক দফায় ৭৪ লাখ টাকা অনুদান—সবই করে দেন আরসিইউডির সায়েফ ও সাদ্দাম।

তবে আরসিইউডির চেয়ারম্যান এসব অস্বীকার করেছেন। কিন্তু ইয়েমেনে আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ঢাকার মাইনুদ্দীন শরিফও সম্প্রতি গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, আরসিইউডিতে সাদ্দাম নামের একজনকে তিনি চিনতেন। মাইনুদ্দীন এ প্রতিবেদককে বলেছেন, তিনি আবদুর রশিদের জামাতা তেহজীব করিমের মাধ্যমে ২০০৬ সালে আরসিইউডির সঙ্গে যুক্ত হন। রশিদের বাসার নিচতলায় তাঁদের বৈঠক হতো।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মাইনুদ্দীন ঢাকায় একটি গোয়েন্দা সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, আরসিইউডি দেশে একটা নাশকতার পরিকল্পনা করছিল, এটা টের পাওয়ার পর তিনি আর সেখানে যাননি।

কে এই রেজাউল রাজ্জাক: আবদুর রশিদ প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, আরসিইউডির মূল উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করা রেজাউল রাজ্জাক। তবে রেজাউল কাগজপত্রে কোনো পদে ছিলেন না। তিনি আরও জানান, ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলার পর এক রাতে রেজাউলকে ধানমন্ডির বাসা থেকে প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থা তুলে নিয়ে যায়। ওই রাতেই রেজাউলের স্ত্রী তাঁকে টেলিফোনে তা জানান। পাঁচ-ছয় দিন পর রেজাউলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। রেজাউল পরে রশিদকে বলেছিলেন, গোয়েন্দারা তাঁকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।

আবদুর রশিদ স্বীকার করেছেন, তিনি ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালে একজন উদ্যোক্তা ছিলেন। ইসলামী ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ব্যাংকের দেশি উদ্যোক্তাদের তালিকায় আবদুর রশিদ চৌধুরীর নাম আছে। তবে কোনো ছবি নেই। তিনি জানান, তাঁর মতো রেজাউল রাজ্জাকের বাবা আবদুর রাজ্জাক লস্করও ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। সেই সূত্রে লস্করের সঙ্গে রশিদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। রশিদ জানান, রেজাউল রাজ্জাক ঢাকায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এআইইউবি) শিক্ষক।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি এআইইউবি কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে জানায়, রেজাউল রাজ্জাক গত বছরের জুন থেকে আর সেখানে নেই। তাঁর স্থানীয় কোনো ঠিকানাও নেই। চাকরির ফাইলে তাঁর আমেরিকার ঠিকানা দেওয়া আছে।

আরেকটি সূত্র জানায়, গত বছর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে রেজাউলের ব্যাপারে এআইইউবিতে খোঁজখবর নেওয়া হয়। এরপর তিনি সেখানকার চাকরি ছেড়ে দেন। রেজাউল রাজ্জাক এখন ইসলামী ব্যাংকিং নিয়ে পিএইচডি করতে মালয়েশিয়ায় আছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

আবদুর রশিদ জানান, আরসিইউডির সেক্রেটারি হলেন আবুল কালাম আল আজাদ (৩৫)। তিনি পিএইচডি করতে ২০০৬-০৭ সালের দিকে সস্ত্রীক বিদেশে যান। তাঁর আগে আবুল কালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। রশিদ দাবি করেন, কালাম কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, তাঁর বাড়ি কোথায়, সেটা তিনি ভুলে গেছেন। আরসিইউডির আর কে কে ছিলেন, সেটা তাঁর মনে নেই। কাগজপত্র সব সেক্রেটারি কালামের কাছে রয়েছে। এ ছাড়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকও আরসিইউডিতে জড়িত, তাঁর নামও ভুলে গেছেন বলে দাবি করেন রশিদ।
কাগজপত্র নিয়ে লুকোচুরি: সংগঠনের সদস্য ও কর্মকর্তাদের নামের তালিকা ও অন্যান্য কাগজপত্র দেখতে চাইলে আবদুর রশিদ দাবি করেন, সেগুলো তাঁর কাছে নেই। তিনি গত বছরের ৪ জুন বলেছিলেন, ২০০৬ সালে র্যাবের একটি দল ধানমন্ডিতে আরসিইউডি কার্যালয়ে গিয়ে কাগজপত্র দেখে আসে। এরপর ভয় পেয়ে অফিস সেক্রেটারি চলে গেছেন। সংগঠনের কাগজপত্র তাঁর কাছে। অফিস সেক্রেটারির নাম-ঠিকানা ভুলে গেছেন বলে দাবি করেন আবদুর রশিদ। তিনি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বলেছেন, সংগঠনের কাগজপত্র তাঁর কাছে নেই, সেক্রেটারি আবুল কালামের কাছে আছে।

কিন্তু আপনার বাসায়ও তো বৈঠক হতো, সেখানে কারা অংশ নিত? এ প্রশ্নের জবাবে রশিদ বলেন, ‘কারা আসে কারা যায়, তার হিসাব রাখার জন্য আমরা একটি রেজিস্টার খাতা বানাই। যারা যারা আলোচনায় আসত, সবাই নামধাম লিখত। পরে যে ওই খাতাটা কোথায় গেল, সেটা বলতে পারি না।’

এআরওয়াইয়ের সঙ্গে সংযোগ: চট্টগ্রামে আটক ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাবউদ্দিন আহমদ আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, ২০০৪ সালে অস্ত্রের চালান ধরা পড়ার আগে এআরওয়াইয়ের দুই কর্মকর্তা দুই দফায় ঢাকায় এসে এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিমের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁদের একজন এআরওয়াই ডিজিটাল নেটওয়ার্কের (এর অধীন আটটি টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নাম সালমান ইকবাল।

সাহাবউদ্দিন আদালতকে বলেছেন, ঢাকায় আসার পর এনএসআইয়ের তৎকালীন এক কর্মকর্তার বেয়াই ও এআরওয়াইয়ের সালমান ইকবাল টিভি চ্যানেলের জন্য নির্ধারিত স্থান (সাইট) পরিদর্শন করতে যান।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, এনএসআইয়ের কর্মকর্তার ওই বেয়াই হলেন আরসিইউডির আবদুর রশিদ চৌধুরী। আবদুর রশিদ প্রথম আলোর কাছে তা স্বীকার করে বলেন, আবদুর রহিম তাঁর পূর্বপরিচিত। রহিমই তাঁকে এআরওয়াই টেলিভিশনের বাংলাদেশের প্রধান হিসেবে যুক্ত করান। সালমান ইকবালের সঙ্গে হোটেল শেরাটনে বৈঠকের কথাও স্বীকার করেন তিনি। অবশ্য শেষ পর্যন্ত এআরওয়াই টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে চালু হয়নি।

12 February 2011

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: ফারুক হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতি, তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে নোটিশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি | তারিখ: ১২-০২-২০১১

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ও গণিত বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির অভিযোগে তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তিন দিন আগে এ নোটিশ জারি করা হলে গতকাল শুক্রবার রাতে বিষয়টি জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন উপকমিশনার (রাজশাহী-পূর্ব) প্রলয় কান্তি সরকার, সহকারী পুলিশ কমিশনার এম শাখাওয়াত হোসেন ও মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা মতিহার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, সোহেল রানা বর্তমানে মতিহার থানায় কর্মরত থাকলেও শাখাওয়াত হোসেন বর্তমানে গোপালগঞ্জ ও প্রলয় কান্তি সরকার মাগুরা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কারণ দর্শানোর নোটিশ রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বর্তমান কর্মস্থলে পাঠানো হয়েছে।

16 January 2011

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত: গবেষণা, বই জালিয়াতি ও ভুয়া সনদ দিয়ে পদোন্নতির চেষ্টা

কুদরাত-ই-খুদা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় | তারিখ: ১৭-০১-২০১১

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অন্যের গবেষণাপত্র ও বই জালিয়াতি করে নিজের নামে প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে। এসব প্রকাশনা দেখিয়ে তিনি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার চেষ্টাও করছেন। তিনি আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু ইউনুছ খান মুহম্মদ জাহাঙ্গীর। ক্যাম্পাসে তিনি জামায়াতপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। এর আগে ২০০১ সালে এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উঠলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর কাগজপত্র তলব করেছিল।

জানা গেছে, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক ও একজন গবেষক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগকারী ব্যক্তিরা হলেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম ও রেজাউল করিম এবং কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষক মোস্তাক মোহাম্মদ ও এ এস মোহাম্মদ আলী।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, আবু ইউনুছ খান মুহম্মদ জাহাঙ্গীর বিভিন্ন ব্যক্তির গবেষণাপত্র, প্রকাশিত বইয়ের কোনো কোনো অংশ হুবহু ও কোনো অংশ আংশিক ঘুরিয়েফিরিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মালিকানাধীন বা প্রতিষ্ঠানের জার্নালে নিজের নামে প্রবন্ধ আকারে প্রকাশ করেছেন। তাঁরা প্রকাশিত এমন সাতটি প্রবন্ধের বিষয়ে অভিযোগ আনেন।

অভিযোগে বলা হয়, ওই সব প্রবন্ধ দেখিয়ে মুহম্মদ জাহাঙ্গীর ২০০৯ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আবেদন করেন। আবেদনপত্রে সংযুক্ত ফাজিল পরীক্ষার নম্বরপত্রে উল্লিখিত ‘পাস’ ফলাফলকে তিনি দ্বিতীয় বিভাগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা বেআইনী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর আগে ঠিক একই ধরনের ঘটনায় (‘পাস’ ফলাফল বদলে প্রথম বিভাগ উল্লেখ করায়) একই বিভাগের শিক্ষক মুজিবর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত হয়েছিলেন।

দুদকে কাগজপত্র তলব: বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ১৯৯৭ সালে মুহম্মদ জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালের জুলাই মাসে তিনি একই বিভাগের অধীনে এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তি হন। একই সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি না নিয়ে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) অধীনে পরিচালিত অগ্রণী স্কুলে আরবি বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি সাত বছর বিনা ছুটিতে সরকারি বেতন-ভাতা ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেলোশিপ গ্রহণ করেছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্টে অবৈধ। অভিযোগকারী ব্যক্তিরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী চাকরি করা কোনো ব্যক্তি এমফিল বা পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হলে অবশ্যই তাঁকে কমপক্ষে এক বছরের শিক্ষাকালীন ছুটি নিতে হবে। তিনি তা করেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, দুদক ২০০১ সালে তাঁর এসব কাগজপত্র তলব করেছিল। কিন্তু কিছুদিন পর বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এলে বিষয়টি আর এগোয়নি। দুদকে কাগজপত্র তলব করার বিষয়টি আবু ইউনুছ খান মুহম্মদ জাহাঙ্গীর স্বীকারও করেছেন।

দ্বিতীয় তদন্ত কমিটি: গত ৬ ডিসেম্বর সিন্ডিকেট কৃষি অনুষদের ডিন সোহরাব আলীকে আহ্বায়ক করে উচ্চতর কমিটি গঠন করে। কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এর আগেও এসব অভিযোগ তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মাহবুবর রহমানকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করেছিল। মাহবুবর রহমানের সঙ্গে গতকাল মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ওই কমিটির কাছে আবু ইউনুছ খান মুহম্মদ জাহাঙ্গীর তাঁর দোষ স্বীকার করেছিলেন। কমিটি সুপারিশসহ প্রতিবেদনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে জমাও দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য কৃষি অনুষদের ডিন সোহরাব আলীকে আহ্বায়ক করে আরেকটি কমিটি করেছে।

আবু ইউনুছ খান মুহম্মদ জাহাঙ্গীরের সঙ্গে গতকাল বিকেলে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে রোববার (আজ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেন। তখনই তাঁর বক্তব্য জানা জরুরি বলে জানালে তিনি অভিযোগগুলো শোনেন এবং সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহান বলেন, আগের কমিটি সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিয়েছে। এখনকার কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

8 January 2011

খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে জেএমবির প্রশিক্ষণকেন্দ্র: খালেদা জিয়াকে হত্যার চেষ্টায় জড়িত একজনসহ পাঁচ জঙ্গি গ্রেপ্তার

বিশেষ প্রতিনিধি | তারিখ: ২৮-০৯-২০০৯

এবার খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) প্রশিক্ষণকেন্দ্রের সন্ধান পেয়েছে র্যাব। সেখান থেকে জেএমবির চট্টগ্রাম বিভাগের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা আবদুর রহিম ওরফে জাহিদ ওরফে সাইফুল্লাহকে (২৬) গ্রেপ্তারের পর র্যাব বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আরও চারজন জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

কয়েক দিন ধরে অভিযান চালিয়ে খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা ও গাজীপুর থেকে এই জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ২০টি ডেটোনেটর, দেশীয় প্রযুক্তিতে গ্রেনেড তৈরির ১৪টি লোহার খোল, এক প্যাকেট বিস্ফোরক (প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ), বোমা তৈরির আরও কিছু উপাদান ও ৪৯টি ধর্মীয় পুস্তক উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজন জঙ্গিকে গতকাল রোববার ঢাকায় র্যাব সদর দপ্তরে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়। এঁদের মধ্যে আবদুর রহিম গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর কুমিল্লার চান্দিনায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমাবেশে বোমা হামলা প্রচেষ্টায় জড়িত ছিলেন বলে সাংবাদিকদের সামনে স্বীকার করেছেন। রহিমের বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার থানার ছুটনা গ্রামে। বাবার নাম জয়নাল আবেদীন।

র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে বলেন, র্যাব গোয়েন্দা তত্পরতার মাধ্যমে তথ্য পায় যে জেএমবি পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা থানার শান্তিপুরে দুর্গম পাহাড়ে চার একর জমি নিয়ে প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করেছে। এরপর গত শনিবার র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার একটি দল চট্টগ্রামের র্যাব-৭-এর সহায়তায় খাগড়াছড়ির ওই পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে রহিমকে গ্রেপ্তার করে।

বড় পর্দায় ওই জঙ্গি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের আলোকচিত্র সাংবাদিকদের দেখানো হয়। তাতে দেখা যায়, পাহাড়ের ওপর একটি পুরোনো মাটির ঘর ও একটি নতুন টিনের ঘর আছে। আশপাশে কোনো জনবসতি নেই।

র্যাব জানায়, রহিম তথ্য দিয়েছেন, জেএমবির আমির মাওলানা সাইদুর রহমানের নির্দেশে ও শুরা সদস্য সাহেদ ওরফে ওসমানের তত্ত্বাবধানে এই প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। সাত-আট মাস আগে মাটিরাঙ্গার শান্তিপুরের আল মদিনা পোলট্রি ফার্মের মালিক দেলোয়ার হোসেন ওরফে সজীবের (৩২) মাধ্যমে এই জমি কেনা হয়।

কর্নেল মিজানুর রহমান বলেন, রহিমকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার রাত আড়াইটায় মাটিরাঙ্গা থেকে দেলোয়ার ও তাঁর পোলট্রি ফার্মের কর্মচারী ইউনুস আলীকে (২০) র্যাব গ্রেপ্তার করে। দুজনই জেএমবির সাধারণ সদস্য (গায়েরে এহসার)। তাঁদের বাড়ি মাটিরাঙ্গার শান্তিপুরে।

রহিমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ভোরে র্যাবের পৃথক দল গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে দেলোয়ার হোসেন ওরফে দুলাল (২৩) এবং কুমিল্লা সদর থানার দীঘিরপাড় এলাকা থেকে মনির ওরফে রিপনকে (২৫) গ্রেপ্তার করে। র্যাব জানায়, এই দুজনও জেএমবির সাধারণ সদস্য। এর মধ্যে দেলোয়ারের বাড়ি শেরপুরের নকলা থানার গোয়ালেরকান্দা গ্রামে। রিপনের বাড়ি কুমিল্লায়।

র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার হওয়া রহিম জেএমবির আত্মঘাতী বোমা হামলা পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নে দায়িত্বশীলদের একজন। তিনি ২০০৮ সালে কুমিল্লায় এক অভিযানে র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে বোমা মেরে পালিয়ে যান। তাঁর বিরুদ্ধে দেবিদ্বার থানায় তিনটি মামলা আছে।

গ্রেপ্তারকৃত রহিম গতকাল র্যাব সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তাঁকে তিন দিন আগে মাটিরাঙ্গায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে। তিনি ২০০৪ সালে কুমিল্লার জনৈক তানজিমের মাধ্যমে জেএমবিতে যোগ দেন। সংগঠনের সিদ্ধান্তে ২০০৫ সালে মাটিরাঙ্গায় আল-মদিনা পোলট্রি খামারে তিনি চাকরি নেন।

রহিম জানান, জেএমবির বর্তমান শুরা সদস্য ও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রধান ওসমানের নির্দেশে তাঁরা গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর কুমিল্লার চান্দিনায় নির্বাচনী সমাবেশে বোমা হামলা করে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং এর আগে স্থানীয় মোস্তাক ওরফে মোশাররফের বাড়িতে বোমা মজুদ করেন। কিন্তু ওই দিন র্যাবের অভিযানের মুখে পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। তাঁদের সঙ্গী নাঈম ধরা পড়েন। রহিম ও ওসমান র্যাবের ওপর বোমা ছুড়ে পালিয়ে যান।

1 January 2011

৪০ হাজার রপ্তানির পোশাক জব্দ: দুবাইতে বসে ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি!

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম | তারিখ: ০২-০১-২০১১

দক্ষিণ আফ্রিকায় রপ্তানির জন্য প্রস্তুত ৪০ হাজার শার্ট (শিশু পোশাক) ছিনতাইয়ের অভিযোগে পুলিশ দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। চট্টগ্রামের একটি গুদাম ও ঢাকার উত্তরা থেকে ছিনতাই হওয়া সব পোশাকও উদ্ধার করা হয়েছে। চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর আটজন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সাজ্জাদ হোসেন দুবাইতে বসে এই ছিনতাইয়ের সমন্বয় করেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া সন্ত্রাসীর নাম রুবেল ও কাভার্ড ভ্যানের চালক মোহাম্মদ জহির। এঁদের মধ্যে রুবেল পলাতক আসামি সাজ্জাদের বাহিনীর সদস্য। রুবেলের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা আছে। তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তাকারীদের এখন হত্যার হুমকি দিচ্ছেন সাজ্জাদ।

সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে শহরতলির আতুরার ডিপোর পশ্চিম হাজিপাড়ার জনৈক বাহাদুরের গুদাম থেকে ছিনতাই হওয়া সাড়ে সাত হাজার শার্ট জব্দ করা হয়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রুবেল তিনতলা গুদাম ভবন থেকে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ পুকুরটি ঘেরাও করে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আজ রোববার আদালতে আবেদন করা হবে। বাকি সাড়ে ৩২ হাজার শার্টসহ একটি কাভার্ড ভ্যান গত শুক্রবার ঢাকার উত্তরা থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় চালক জহিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চান্দগাঁও থানার খতিজা এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড এক্সেসরিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৪০ হাজার তৈরি শার্ট পার্শ্ববর্তী মোনেনো ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইনে পাঠানো হয়। পোশাক পরিবহনের সময় সিঅ্যান্ডবি রাস্তার মাথায় তিন সন্ত্রাসী গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ওই গাড়িটি পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল দুটি মোটরসাইকেল আরোহীসহ আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী।

সূত্র জানায়, সাজ্জাদের নির্দেশে তাঁর জুনিয়র বাহিনীর প্রধান সরওয়ার ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দেন। তাঁর বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় তিনটি হত্যাসহ আটটি মামলা আছে। ছিনতাইয়ে অংশ নেওয়া আরও তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন, তিনটি হত্যাসহ নয়টি মামলার আসামি মহিন, একাধিক মামলার আসামি মেক্সন ও টিটন। এদের মধ্যে মহিন ও মেক্সন অস্ত্র পরিচালনায় পারদর্শী। খতিজা এন্টারপ্রাইজের পরিচালক জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় রপ্তানি করতে স্কুলের শিশুদের জন্য ৪০ হাজার শার্ট তৈরি করা হয়। জাহাজীকরণের আগেই সন্ত্রাসীরা তৈরি পোশাকবাহী গাড়িটি ছিনতাই করে।

চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর আট খুনের মামলায় শিবির ক্যাডার সাজ্জাদসহ চার সন্ত্রাসীর মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ২০০৮ সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের একটি আদালতে এই রায় দেওয়া হয়। রায়ের আগেই সাজ্জাদ দুবাইতে পালিয়ে যান।

বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সাজ্জাদ দুবাইতে বসে ৪০ হাজার শার্ট ছিনতাইয়ের সমন্বয় করেন। পুলিশ তাদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। তাঁর বাহিনীর একজন গ্রেপ্তার হওয়ায় সাজ্জাদ স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে ফোন করে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন।

ওসি দাবি করেন, ‘আমরা সাজ্জাদের জুনিয়র বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত করেছি। এরা বায়েজিদ ও পাঁচলাইশ এলাকায় ব্যাপক চাঁদাবাজি ও শিল্পাঞ্চলে ছিনতাই-ডাকাতি করছে। এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাজ্জাদের বাহিনীর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমরা যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত আছি। কারণ, মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে সাজ্জাদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন।’

21 December 2010

জিহাদি বইসহ তিন শিবিরকর্মী গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ২১-১২-২০১০

পুরান ঢাকার সৈয়দ হাসান আলী লেনের একটি বাড়ি থেকে জিহাদি বই ও সিডিসহ তিন শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক আবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাঁর নেতৃত্বে একটি দল ২০/২ সৈয়দ হাসান আলী লেনের ছয়তলা বাড়ির চতুর্থ তলার একটি মেসে অভিযান চালায়। সেখানকার একটি কক্ষ থেকে শিবিরকর্মী মহিউদ্দিন, আমজাদ হোসেন ও রিফাতকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁদের থানায় নেওয়া হয়।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এঁরা ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী। তাঁরা কক্ষের সামনে বিশাল আকারের বঙ্গবন্ধুর ছবি টানিয়ে রাখতেন। তাঁদের কক্ষে জিহাদি বই ছাড়াও পর্ন সিডি পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

19 December 2010

চট্টগ্রামে রাজপথে নেই জামায়াত-শিবির

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম | তারিখ: ২০-১২-২০১০

চট্টগ্রাম জেলা জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রশিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের রাজপথে সক্রিয় নয় জামায়াত। রাজপথে নামলেই ধরপাকড় হতে পারে—এমন আশঙ্কায় জামায়াত-শিবির রাজপথে নামছে না বলে জানা গেছে।

নগর জামায়াতের আমির শামসুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের ধরপাকড়ের কারণে আমরা রাস্তায় নামতে পারছি না। রাজপথে নামলেই পুলিশ আমাদের পেটায়। সরকার আমাদের মাঠে নামতে দিচ্ছে না। এ জন্য আমরা কিছু কৌশল নিয়েছি। তবে আমরা শিগগির রাজপথে নামব।’

দলীয় সূত্র জানায়, জামায়াত চট্টগ্রামে কৌশলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ এবং শিবির-নিয়ন্ত্রিত কলেজগুলোয় যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে কৌশলে পোস্টার লাগানো হচ্ছে। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ জামায়াতের নেতাদের মুক্তি চেয়ে ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম কলেজ এবং হাজী মুহাম্মদ মুহসীন কলেজে অসংখ্য পোস্টার লাগিয়েছে। এ ছাড়া শিবিরের রাজনীতির প্রতি নতুন প্রজন্মকে আকর্ষণের লক্ষ্যে দুই কলেজে টাঙানো হয়েছে শতাধিক ব্যানার। শিবির-নিয়ন্ত্রিত কলেজ দুটিতে অন্য কোনো দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম নেই। অতীতের মতো মিছিল-সমাবেশ নেই কেন, জানতে চাইলে শিবিরের চট্টগ্রাম কলেজ শাখার সভাপতি মোহাম্মদ হারুন বলেন, ‘আমাদের দাওয়াতি কাজ চলছে। শিবির মিছিল সর্বস্ব সংগঠন নয়।’

জামায়াতের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলস্টেশনে মহিউদ্দিন নামের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র খুন হন। শিবির তাঁকে নিজেদের কর্মী দাবি করে পরদিন নগরে মিছিল বের করে। জামালখান মোড়ে পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ সেখান থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে সুরার সদস্য আহসান উল্লাহসহ শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।

যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে গত ১১ এপ্রিল সিরাজদ্দৌলা সড়কের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সমাবেশ ডাকে জামায়াত। সমাবেশে যোগ দিতে চট্টগ্রামে আসেন মুজাহিদ। তাঁকে ঠেকাতে একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচি দেয় কয়েকটি মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন। ফলে সমাবেশ না করেই পুলিশ পাহারায় চট্টগ্রাম ছাড়েন মুজাহিদ। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন আন্দরকিল্লা মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে জামায়াত। সেখানে পুলিশের সঙ্গে আবার জামায়াতের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। জামায়াতের দাবি, এ দুই ঘটনায় পুলিশ তাঁদের অন্তত ৩০০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। সর্বশেষ ৭ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের সামনে থেকে গ্রেপ্তার হন জামায়াতের ১০ নেতা-কর্মী। এসব ঘটনার পর আর রাজপথে নামেনি জামায়াত।

13 December 2010

সাবেক শিল্পসচিব শোয়েব আহমেদের জবানবন্দি: ‘দেশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে অবগত’

| তারিখ: ১৪-১২-২০১০

[১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব শোয়েব আহমেদ গত ৭ অক্টোবর চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সাক্ষী হিসেবে দেওয়া তাঁর এ জবানবন্দি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো—]

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল অবৈধ অস্ত্র আটক করার সময় আমি শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলাম। ২ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমাকে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামান ফোন করেন। তিনি জানান, গত রাতে চট্টগ্রাম সিইউএফএল ঘাটে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র আটক হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের লোকজন সেগুলো ঘিরে রেখেছে। সেখানে তারা কাউকে যেতে দিচ্ছে না। সিইউএফএলের এমডি আমাকে ফোনে এসব জানিয়েছেন।’

আমি জিজ্ঞেস করি, ওখানে কি সিইউএফএলের নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন উপস্থিত ছিল না? তাঁদের উপস্থিতিতে সেখানে অবৈধ অস্ত্রের ট্রলার কীভাবে ভিড়ল? আর কীভাবেই সে অস্ত্র আনলোড হলো? জবাবে

ইমামুজ্জামান বললেন, ‘এটা তো আমারও প্রশ্ন।’

আমি তাঁকে নির্দেশনা দিই, বিসিআইসির চেয়ারম্যান হিসেবে সিইউএফএলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্পৃক্ততা ও শৈথল্য আছে কি না, তা নিরূপণ করতে হবে। ... প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পর আপনি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন। ...

আমি ইমামুজ্জামানকে জিজ্ঞেস করি, এ বিষয় আপনি আর কাকে জানিয়েছেন? তিনি জবাব দেন, ‘আমি মন্ত্রী মহোদয়কেও বিষয়টি জানিয়েছি।’...

৪ এপ্রিল (২০০৪) সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে আমি অফিসে যাই। সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টায় আমি শিল্পমন্ত্রী (মতিউর রহমান নিজামী) মহোদয়ের কক্ষে যাই। আমি নিজেই আলাপ শুরু করি। আমি বলি, শুক্রবার ইমামুজ্জামান সাহেব ফোন করেছিলেন। তিনি আমাকে সিইউএফএল ঘাটে অস্ত্র আটকের ব্যাপারে জানিয়েছেন। আমার কথা শেষ করতে না করতেই তিনি (নিজামী) বলেন, ‘আমি এ বিষয় সবকিছু অবগত আছি।’

আমি মন্ত্রীকে বলি, আমি ইমামুজ্জামান সাহেবকে নির্দেশ দিয়েছি সিইউএফএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। তাঁকে এটাও নির্দেশ দিয়েছি, যেন গৃহীত ব্যবস্থা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেন। আজ ইমামুজ্জামান সাহেব আসবেন এবং গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে জানাবেন।

মন্ত্রী মহোদয় আমাকে বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সরাসরি অ্যাকশনে নেমেছে। তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছে। সিইউএফএলের কেউ জড়িত কি না, তা তারাই বের করতে পারবে। শিল্প মন্ত্রণালয়কে আলাদাভাবে কিছু করতে হবে না।’

তখন আমি বলি, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এ সম্পর্কে খবরগুলো দেখেছি, তাতে শিল্প মন্ত্রণলয়কে জড়িয়ে খবর পরিবেশিত হয়েছে। এই বিষয়ে আমাদের অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এ জন্যই আমি বিসিআইসির চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছি ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রণালয়কে জানাতে। আমি মনে করি, তা দরকার আছে।

এ পর্যায়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের হাইয়েস্ট অথরিটিও (সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ) এ বিষয়ে অবগত আছেন। সরকার সব ব্যবস্থা নিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনি কি মনে করেন আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি নাই?’

শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপের সময় বলি, বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে ঘটনার রাতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব নুরুল আমিন সিইউএফএলের রেস্টহাউসে অবস্থান করছিলেন। তাঁর সেখানে অবস্থান সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। তিনি কবে, কখন এই ট্যুর প্রোগ্রাম করেন, তাও আমি জানি না। ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে তিনি কীভাবে ট্যুর প্রোগ্রাম করলেন, তাও বুঝতে পারলাম না।

তখন মন্ত্রী বলেন, ‘আপনি তো সরকারি কাজে বেশ কিছুদিন বিদেশে ছিলেন, এ সময় অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিন সাহেবই তো সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। সেভাবেই হয়তো তিনি এ ট্যুরে গিয়ে থাকবেন।’

আমি বললাম, আজ রোববার, তিনি এখনো ফেরেননি। সিইউএফএলের এত বড় ঘটনা সম্পর্কে তিনি ঘটনাস্থলে অবস্থান করা সত্ত্বেও কিছুই জানাননি। একটা ফোন পর্যন্ত করেননি। আমি অফিসে এসে শুনলাম, তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে সিইউএফএল থেকে কক্সবাজার চলে গেছেন।

মন্ত্রী মহোদয় বলেন, ‘এটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার।’

আমি বলেছি, এত বড় একটা ঘটনার সময় তাঁর সেখানে অবস্থান এবং কিছু না জানানোটা যথার্থ মনে করি না। এর জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন। সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’

এরপর আমি আমার কক্ষে চলে যাই। আধা ঘণ্টা পর মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামান আমার দপ্তরে আসেন। তিনি জানান, ‘স্যার সিইউএফএলের এমডিকে সামগ্রিক বিষয়ে একটি রিপোর্ট জরুরি ভিত্তিতে প্রদান করতে বলেছি।’

আমি জানতে চাই, এ রিপোর্ট কবে নাগাদ পাবেন? তিনি বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাঠাতে বলেছি।’

এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম। কারণ তিনি আমাকে আলাদাভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেননি। এটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। আমি ইমামুজ্জামানকে তখনি মন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিই। ভেবেছিলাম, হয়তো তিনি বুঝিয়ে বললে মন্ত্রী ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন।

প্রায় ২০-২৫ মিনিট পর ইমামুজ্জামান আমার কক্ষে ফিরে এসে বলেন, ‘মন্ত্রীকে অনেক বোঝালাম। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কাজ করছে বিধায়, মন্ত্রী মহোদয় আলাদা কোনো ব্যবস্থা নিতে মানা করেছেন।’

বুঝতে পারলাম মন্ত্রী আমাকে যা বলেছেন, তাঁকেও তাই বলেছেন।

তিন-চার দিন পর ইমামুজ্জামান আমাকে ফোন করে জানান, সিইউএফএল থেকে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। রিপোর্টে অস্ত্র আটক বিষয়ে কিছুই বলা নেই। সে রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর মতো নয়। এই রিপোর্ট অত্যন্ত দায়সারা গোছের।

অস্ত্র আটকের পরে ১৫-২০ দিন অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিনের সঙ্গে আমার কোনো দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। তিনি যে ঢাকায় ফেরেন, তাও জানতে পারিনি। তিনি এমনিতেই আমার কক্ষে খুব একটা আসতেন না। একটা স্পর্শকাতর ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়ে সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছিল, আর ঘটনার সময় তিনি সিইউএফএলে অবস্থান করছিলেন, অথচ সে ব্যাপারে তিনি আমার কাছে তাঁর কোনো অবস্থান ব্যাখ্যা করেননি। তিনি যে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদ করেছেন, সেটাও আমার জানা নেই। ...তিনি মন্ত্রীর (নিজামী) অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন। মন্ত্রীই তাঁকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসেন। তিনি মূলত রেলওয়ের ক্যাডারের। ...

অস্ত্র আটকের পর মে ও জুন মাসে আমি কয়েকটি দেশ সফর করি সরকারি কাজে। জুন মাসে (২০০৪) ইন্দোনেশিয়া থেকে ফেরার পর একদিন আলাপের সময় শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাকে বলেছিলাম সরকার এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, স্বরাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি হয়েছে। তারা তাদের কার্যক্রমও গ্রহণ করেছে। আমি তো মনে করি, সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থাই নিয়েছে।’

আমি বিনীতভাবে বললাম, আমি এখনো মনে করি বিসিআইসির পক্ষ থেকে যা করা দরকার ছিল, তা করা হয়নি। তার ফলে শিল্প মন্ত্রণালয়ও এ ক্ষেত্রে কিছু করতে পারছে না। প্রতি-উত্তরে কিছুটা বিরক্তির স্বরে তিনি (নিজামী) বলেন, ‘দেশের সরকার তো একটাই। আলাদা আলাদাভাবে এখানে কী করার আছে?’

এরপর শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বদলি হওয়ার আগ পর্যন্ত মন্ত্রীর সঙ্গে আমার এ বিষয়ে আর কোনো আলাপ হয়নি। আমার মনে হয়েছিল, তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপছন্দ করেন। ২৮ জুলাই (২০০৪) আমাকে অপ্রত্যাশিতভাবে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। ...বদলির সময় শিল্প মন্ত্রণালয়ে আমার চাকরির মেয়াদ ছিল মাত্র ১০ মাসের। ...

অস্ত্র আটকের পর যে তিন মাস আমি শিল্প মন্ত্রণালয়ে ছিলাম, সেই তিন মাসে আমার কাছে বারবার মনে হয়েছে, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার, কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা হচ্ছে।

শিল্পমন্ত্রীর কথাবার্তা ও অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিনের রহস্যজনক আচরণ দেখে মনে হয়েছে, পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ...

সিইউএফএল জেটি কেবল ওই সার কারখানার কাজেই ব্যবহূত হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অবৈধ অস্ত্রবাহী ট্রলার সিইউএফএলের জেটিতে কীভাবে ভিড়ল, সেই প্রশ্নের উত্তর আমি আজও খুঁজে পাইনি। সেটা আমার কাছে এখনো রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে।

এই আমার জবানবন্দি। আমি স্বেচ্ছায় এ বক্তব্য প্রদান করলাম।

দশ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলা: নিজামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, সন্দেহে হাওয়া ভবন

টিপু সুলতান ও একরামুল হক | তারিখ: ১৪-১২-২০১০

দশ ট্রাক অস্ত্র চালান এ দেশে আনা এবং তা খালাস পর্যন্ত পুরোটাই জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে হয়েছে। অধিকতর তদন্তে এর প্রমাণ পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি।

অস্ত্রের চালান আনার বিষয়টি তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী আগে থেকে জানতেন বলে তদন্তে কিছু সাক্ষ্য ও তথ্য পাওয়া গেছে। তাই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে এমন ইঙ্গিত দিয়ে সিআইডি আদালতে প্রতিবেদনও দাখিল করেছে। সিআইডির একটি সূত্র প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছে।

ইতিমধ্যে জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে এ মামলায় দুই দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রকৃত সত্য গোপন এবং দায়সারা তদন্তের মাধ্যমে মূল দোষীদের রক্ষার চেষ্টা করেছেন।

এ অবস্থায় অস্ত্রের চালানের সঙ্গে ‘হাওয়া ভবনের’ কারও কারও সম্পৃক্ততা ছিল বলে সন্দেহ সরকারি মহলের। প্রসঙ্গত, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে বেশ প্রভাব ছিল হাওয়া ভবনের। চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে দেওয়া এ মামলার অন্যতম আসামি হাফিজুর রহমানের জবানবন্দিতে হাওয়া ভবনের প্রসঙ্গটি এসেছে। হাফিজ বলেন, অস্ত্র চালানটি এ দেশে আনার মাস খানেক আগে উলফার সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়া ঢাকার বনানীতে অবস্থিত হাওয়া ভবনে যান। হাফিজকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে পরেশ বড়ুয়া এনএসআইয়ের পরিচালক (নিরাপত্তা) উইং কমান্ডার (অব.) সাহাবউদ্দিন আহমদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা বলে হাওয়া ভবনের ভেতরে যান। পরেশ বড়ুয়া বলেছিলেন, অস্ত্র চালান যাতে নির্বিঘ্নে আসতে পারে, সে জন্য সাহাবউদ্দিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে; তিনি হাওয়া ভবনের লোক। দুই ঘণ্টা পর হাওয়া ভবন থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে পরেশ বড়ুয়া হাফিজকে জানান, সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে।

জানা গেছে, হাফিজের এই জবানবন্দির পর হাওয়া ভবনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়। তবে এখন পর্যন্ত তদন্তে হাওয়া ভবন বা ওই ভবনের প্রধান ব্যক্তি তারেক রহমানের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আমলযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। অবশ্য হাফিজও প্রথম দফায় গত বছরের ২ মার্চ দেওয়া জবানবন্দিতে পরেশ বড়ুয়ার হাওয়া ভবনে যাওয়া-সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেননি। হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে দুই দফায় জিজ্ঞাসাবাদেও এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য তদন্তকারীরা পাননি বলে জানা গেছে। তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কেউ কেউ মনে করেন, ভালোভাবে তদন্ত হলে তারেক রহমানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলতে পারে। তাই এখন এ বিষয়টি তদন্তে গুরুত্ব পাচ্ছে।

সাবেক অতিরিক্ত শিল্পসচিবও সন্দেহভাজন: শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে সংরক্ষিত এলাকা সিইউএফএল জেটিতে অস্ত্র খালাস হয় ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে। তখনকার শিল্পমন্ত্রী নিজামীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিন ওই রাতে সিইউএফএলের গেস্টহাউসে ছিলেন। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে বলে সিআইডি সূত্র জানিয়েছে।
এ মামলায় মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) কামালউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্র খালাসের রাতে সেখানকার গেস্টহাউসে অবস্থান করা সম্পর্কে তখন নুরুল আমিন তদন্তকারীদের বলেছিলেন, তিনি কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। যাত্রাবিরতির অংশ হিসেবে তিনি ওই রাতে সিইউএফএলের গেস্টহাউসে ওঠেন। পিপির মতে, চট্টগ্রাম শহর বাদ দিয়ে এত দূরে কর্ণফুলী নদীর ওপারে যাত্রাবিরতি কোনো হিসাবে মেলে না।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের তখনকার সচিব শোয়েব আহমেদ আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, নুরুল আমিন কবে, কখন সেখানে গেছেন, চট্টগ্রাম সফর কর্মসূচি কীভাবে করলেন, তা তিনি জানতেন না। বিষয়টি তিনি শিল্পমন্ত্রী নিজামীকে বলেছিলেন। তখন নিজামী বলেছিলেন, ‘আপনি তো সরকারি কাজে বেশ কিছুদিন বিদেশে ছিলেন, এ সময় নুরুল আমিন সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। সেভাবেই হয়তো তিনি এ ট্যুরে গিয়ে থাকবেন।’ শোয়েব আহমেদ বলেন, নুরুল আমিন ছিলেন নিজামীর অত্যন্ত আস্থাভাজন।

নিজামী আগেই জানতেন!: পিপি কামালউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সিইউএফএলের দুই কর্মকর্তা, সাবেক শিল্পসচিব ও বিসিআইসির চেয়ারম্যানের জবানবন্দি পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, নিজামী ও নুুরুল আমিন অস্ত্রের চালান আসার বিষয়টি আগে থেকে জানতেন। তাই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ধারণা করা হচ্ছে, সিইউএফএলের জেটিঘাটে অস্ত্র খালাস নির্বিঘ্ন করতে নিজামীর আস্থাভাজন নুুরুল আমিনকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল। তা ছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে সংরক্ষিত এ এলাকায় অস্ত্র খালাসের ঘটনা ধরা পড়ার পরও এ ব্যাপারে বিভাগীয় তদন্ত বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে দেননি নিজামী। যা ইতিমধ্যে সাবেক শিল্পসচিব ও বিসিআইসির চেয়ারম্যান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন। তাঁরা বলেন, তখন অস্ত্র আটকের ঘটনায় শিল্প মন্ত্রণালয়কে জড়িয়ে খবর প্রকাশের পরও কোনো ব্যাখ্যা বা ব্যবস্থা নিতে দেননি শিল্পমন্ত্রী নিজামী। বরং তিনি বলেছিলেন, এ বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ অবগত আছে। সরকার সব ব্যবস্থা নিচ্ছে।

গত ৭ অক্টোবর শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা শোয়েব আহমেদ চট্টগ্রামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, অবৈধ সমরাস্ত্রের বিশাল চালানটি ধরা পড়ার দুই দিন পর (৪ এপ্রিল, ২০০৪) শিল্পমন্ত্রী নিজামীকে জানাতে গেলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এ বিষয়ে সবকিছু অবগত আছি।’

শোয়েব আহমেদ আরও বলেন, অস্ত্র আটকের পর যে তিন মাস তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ে ছিলেন, তাতে তাঁর মনে হয়েছে, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। মন্ত্রীর কথাবার্তা এবং অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিনের রহস্যজনক আচরণ দেখে মনে হয়েছে, পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

বাবর ও ওমর ফারুকের তৎপরতা: মহানগর আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) কামালউদ্দিন আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, বাবর ও ওমর ফারুক ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার মূল হোতাদের বাঁচানোর জন্য সক্রিয় ছিলেন। তদন্তে এ ব্যাপারে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।

২০০৪ সালের এই অস্ত্র আটকের ঘটনায় গঠিত সরকারি তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব ওমর ফারুক। কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন এনএসআইয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এনামুর রহমান চৌধুরী, ডিজিএফআইয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শামসুল ইসলাম ও সিআইডির ডিআইজি ফররুখ আহাম্মদ।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর এনামুর রহমান চৌধুরী ও ২০ সেপ্টেম্বর ফররুখ আহাম্মদ আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, জোট সরকার আমলে তদন্তে এই অবৈধ অস্ত্র চালানের সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থার সম্পৃক্ততার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে লুৎফুজ্জামান বাবর, ওমর ফারুক ও রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী তৎপর ছিলেন।

ফখরুখ আহাম্মদ আরও বলেন, এ ঘটনায় এনএসআইয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জড়িত থাকার কথা তিনি তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী আমাকে বলেন, অনেক ব্যাপারে ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট জড়িত থাকে। এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। ১৯৯৬ সালে কক্সবাজারে এক ট্রলার অস্ত্র ধরা পড়ে। খোঁজ নিয়ে দেখেন, সে ব্যাপারে কোনো মামলাও হয়নি। কাজেই জাতীয় স্বার্থে আমাদের একটু বুঝে-শুনে কাজ করতে হবে। আমি কমিটি করে দিয়েছি। স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করেন। উনাকে সব কিছু বলা আছে।’

সিআইডি সূত্র জানায়, বাবরকে এ পর্যন্ত দুই দফায় রিমান্ডে ঢাকায় সিআইডি সদর দপ্তরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে খুব বেশি তথ্য বের করা যায়নি। এ ছাড়া ওমর ফারুককে দুই দফায় সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এনএসআইয়ের চার কর্মকর্তা জড়িত: এই অস্ত্র চালান আনার সঙ্গে যে এনএসআইয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জড়িত, তা চারদলীয় জোট সরকার আমলেই মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত প্রধান আসামি হাফিজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলেছিলেন। তখন তা গোপন করা হয় বলে অভিযোগ আছে।

পরে অধিকতর তদন্ত শুরু হওয়ার পর গত বছর ২ মার্চ হাফিজ চট্টগ্রামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এনএসআইয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা ছাড়াও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) তৎকালীন পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দারের সম্পৃক্ততার কথা বলেন। এরপর রেজ্জাকুল হায়দার, তৎকালীন এনএসআইয়ের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাবউদ্দিন, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন ও মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রেজ্জাকুল হায়দার ও লিয়াকত ছাড়া অন্য সবাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আর এনামুর রহমান চৌধুরী এ ঘটনায় সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এনামুর রহমানও বলেন, অস্ত্রের চালানের সঙ্গে এনএসআইয়ের এক কর্মকর্তার জড়িত থাকার কথা তদন্তের শুরুতেই বেরিয়ে আসে। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির বৈঠকে আলোচনাও হয়। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনে তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, উলফার জন্য অস্ত্র চালানটি এ দেশে আনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ায় এনএসআইয়ের মহাপরিচালক আবদুর রহিম, পরিচালক সাহাবউদ্দিন ও উপপরিচালক লিয়াকত যুক্ত ছিলেন। আর এ ক্ষেত্রে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এবং দুবাইভিত্তিক পাকিস্তানি ব্যবসায়িক গ্রুপ এআরওয়াইয়ের যোগসাজশ ছিল। এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবরকে চট্টগ্রাম পাঠানো হয় অস্ত্র বহনের জন্য ট্রাক ভাড়া করার জন্য। আকবর জবানবন্দিতে বলেছেন, ট্রাকগুলো ভাড়া করা হয়েছিল মৌলভীবাজার পর্যন্ত মালামাল পরিবহনের জন্য। আর অস্ত্র খালাসের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন মেজর লিয়াকত। উইং কামন্ডার সাহাবউদ্দিন শুরু থেকে পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকলেও ঘটনার রাতে অসুস্থতার অজুহাতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এ অস্ত্র চালান আনার ঘটনায় আর্থিকভাবে লাভবানও হয়েছেন। তবে কে কত টাকা পেয়েছেন, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য বের করা যায়নি এখনো।

আদালতের সাত পর্যবেক্ষণ: মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, আদালতের পর্যবেক্ষণে জোট আমলের তদন্তে সাতটি দুর্বলতার কথা উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কোন জলযানে (জাহাজ) করে কোত্থেকে অস্ত্রগুলো বাংলাদেশে আনা হয়েছে, কারা এনেছে, চট্টগ্রামের সিইউএফএল জেটিঘাটে কার নির্দেশে অস্ত্র খালাস হয়েছে ইত্যাদি।

জোট সরকার আমলে তদন্ত শেষে আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে এ মৌলিক বিষয়গুলোর কোনো উল্লেখ ছিল না। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার অধিকতর তদন্তের নির্দেশে আদালত এ সাতটি পর্যবেক্ষণের কথা বলেন। সেটা বিবেচনায় রেখে ২০০৭ সালের ২০ নভেম্বর থেকে অধিকতর তদন্ত শুরু করে সিআইডি।

মামলাটির তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে দাবি করা হলেও কবে নাগাদ সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে তা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সিআইডির কর্মকর্তারা।

অস্ত্র উলফার, এসেছে চীন থেকে: চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে দাখিল করা সিআইডির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অধিকতর তদন্তে জানা গেছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম) জন্য এসব অস্ত্র, গোলাবারুদ আনা হয়। চীনের সমরাস্ত্র কারখানা নর্থ ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (নরিনকো) থেকে অস্ত্রগুলো সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশের এনএসআই ও ডিজিএফআই তৎকালীন কতিপয় কর্মকর্তা এই অস্ত্র সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন।

তবে কোন জলযানের মাধ্যমে অস্ত্রগুলো বাংলাদেশে আনা হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। এ ব্যাপারে তদন্ত অব্যাহত আছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

সিআইডির একটি সূত্র জানায়, এত দিন পর কোন জাহাজে অস্ত্র এসেছে, তা বের করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। আসামি হাফিজ জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, রাতের বেলায় বঙ্গোপসাগরে অস্ত্র খালাস করা হয়। তখন ওই জাহাজের নাম কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল।

উলফার মাত্র একজন আসামি: বিশাল এই অস্ত্রের চালান আনার সঙ্গে জড়িত উলফার সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়াকে এ মামলায় আসামি করা হবে। এরই মধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁর নাম-ঠিকানা যাচাই করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, তাঁরা পরেশ বড়ুয়াকে পেলে গ্রেপ্তার করবেন।

কিন্তু এ ঘটনায় জড়িত উলফার আর কারও নাম এখন পর্যন্ত তদন্তে উদ্ঘাটন করা যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে যে পাঁচজন উলফা সদস্যকে ধরে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়, তাদেরও নাম-পরিচয় বের করতে পারেনি সিআইডি। যদিও তাঁদের শনাক্ত করার মতো ব্যক্তি হাফিজ, মেজর লিয়াকত বা আকবর গ্রেপ্তার আছেন। জানা গেছে, লিয়াকতের চাপের মুখেই পুলিশ এসব উলফা সদস্যকে ছেড়ে দিয়েছিল। এ ছাড়া হাফিজের সঙ্গে আবুল হোসেন নামে যে ব্যক্তি ট্রাক ভাড়া করতে গিয়েছিলেন, তাঁর পরিচয়ও বের করতে পারেনি সিআইডি।

এসব প্রশ্নের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি শুধু বলেছেন, তদন্ত চলছে। উলফার আর কারও নাম এলে তাদেরও আসামি করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি সহকারী পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অধিকতর তদন্তে অনেক অগ্রগতি রয়েছে। আদালত যে সাতটি নির্দেশনা দিয়েছেন, অধিকতর তদন্তে ইতিমধ্যে ছয়টি নির্দেশনার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এর বাইরে তদন্ত কর্মকর্তা আর কিছু বলতে রাজি হননি।

10 November 2010

শিবিরের আরও ১৮ জন গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট | তারিখ: ১১-১১-২০১০

সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় শিবিরের আরও ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত সিলেট নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এই সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৬৫।

সর্বশেষ দফায় গ্রেপ্তার হওয়া শিবিরের ১৮ নেতা-কর্মীর মধ্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ নেতা-কর্মী রয়েছেন। তাঁরা হলেন বাহারুল ইসলাম, ওয়াহিদুল ইসলাম, ফয়সল মাহমুদ সাকিব খান, সায়েম আল মাসুম, নুরুল ইসলাম, জাকির, মিজানুর রহমান, সানাউল্লাহ সানি, মাসুদ ও ইসলাম উদ্দিন। পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া বাকি আটজনকে কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এদিকে গত মঙ্গলবার র্যা বের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ১৩ জনকে গতকাল বুধবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

সিলেট কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নারায়ণ দত্ত বলেন, সংঘর্ষের পর পুলিশ ও র্যা ব পৃথকভাবে অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি কার্যক্রম চলাকালে নবাগত শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়ানোকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশসহ ৩০ জন আহত হয়।

9 November 2010

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ: ছাত্রশিবিরের দুই নেতাসহ বহিষ্কার ৬, গ্রেপ্তার ৪১

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট | তারিখ: ১০-১১-২০১০

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে সংঘর্ষের ঘটনায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের কলেজ শাখার সভাপতি, সেক্রেটারিসহ ছয়জনকে কলেজ থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ শিবিরের আরও ৪১ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৪৭।
কলেজ প্রশাসন সূত্র জানায়, কলেজের অধ্যক্ষ ওসুল আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক হয়। প্রাথমিকভাবে ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সর্বসম্মতভাবে তাঁদের সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বহিষ্কৃতরা হলেন শিবিরের মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষার্থী নাসিফ রিয়াজুজ্জামান, সেক্রেটারি পঞ্চম বর্ষের সাজ্জাদ হোসেন, একই বর্ষের শিবিরকর্মী মারুফ শাহরিয়ার, চতুর্থ বর্ষের সাইফুদ্দিন খালেদ ও সালাউদ্দিন কাদের এবং তৃতীয় বর্ষের শাহরিয়ার শফিক।

এদিকে গত সোমবার রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সিলেট নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় ২৮ জনকে। তাঁরা হলেন মো. ছালে আহমদ, মো. কামরুল হাসান, মো. সাহেদ আহমদ, মো. রফিকুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম, ফয়জুর রহমান, ফয়েজ আহমদ, সাইফুর রহমান, ফারুক আহমদ, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. ছানা উল্লাহ, মো. মাসুদুর রহমান, মো. শফিকুল ইসলাম, ইসলাম উদ্দিন, আবদুল হান্নান, লায়েক হোসেন, কামরান হোসাইন, মো. মাহমুদুর রহমান, রাহাত নূর, মো. ইসলাম উদ্দিন, কামরান আহমদ, শামসির আহমদ, মাসুম খান, ইমতিয়াজ হোসেন, সেবুল উদ্দিন, মামুন খান, মো. মসুমুল হক, মো. আহবাবুর রহমান।

সিলেট কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক নারায়ণ দত্ত জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় সোমবার রাতে দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশকে মারধরের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি এবং মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ অপর মামলাটি করে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া ৩৪ জনকে এ দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এদিকে র্যা বের সদস্যরা গতকাল নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে শিবিরের আরও ১৩ জন কর্মীকে আটক করে। রাতে সিলেট কোতোয়ালি থানায় তাঁদের সোপর্দ করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন আফজল হোসেন, কুদরতুল ইসলাম, মো. জাহিদুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম, জিয়াউদ্দিন, নজরুল ইসলাম, রাসেল আহমদ, শিহাবউদ্দিন, রেজাউল করিম, জাহিদুর রহমান, শাখাওয়াত হোসেন, আবদুল বাতেন ও আবুল হাসনাত।

কোতোয়ালি থানায় কর্তব্যরত উপপরিদর্শক (এসআই) রোকনউদ্দিন বলেন, আটক ১৩ জন শিবিরকর্মীকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

8 November 2010

আহত ৩০, শিবিরের ছয় নেতা-কর্মী আটক ফরিদপুর মেডিকেলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ, ওসমানী মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট ও ফরিদপুর অফিস | তারিখ: ০৯-১১-২০১০

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে গতকাল সোমবার ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের দলে বেড়ানোকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় শিবিরের মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতিসহ ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের এক পক্ষের হামলায় অপর পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় কলেজের ছাত্রাবাসের ১৪টি কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়।
ওসমানী মেডিকেল কলেজের প্রশাসন, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয় ৫ নভেম্বর। নতুন শিক্ষার্থীদের দলে বেড়ানোকে কেন্দ্র করে গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ছাত্রলীগ ও শিবিরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বাগিবতণ্ডা হয়। এরপর উভয় পক্ষ ক্যাম্পাসে শক্তি বৃদ্ধি করে। শিবিরের মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি নাফিস রিয়াজুজ্জামান ও কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল বিরুনি ১০টার দিকে হাতাহাতি ও বাগিবতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
এর পরপরই শিবিরের ৩০ থেকে ৪০ জন নেতা-কর্মী সংগঠিত হয়ে কলেজ করিডরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালান। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কলেজ ক্যানটিনে অবস্থান নেন। এ সময় শিবিরের নেতা-কর্মীরা কলেজ মিলনায়তনের সামনে প্রদর্শনী স্টল, দেয়ালপত্রিকাসহ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক প্রচারণার স্ট্যান্ড ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা শিবিরের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।
সংঘর্ষে ছাত্রলীগের মেডিকেল কলেজ শাখার সহসভাপতি রতিন হালদার, সাংগঠনিক সম্পাদক মোশাররফ হোসেনসহ ২২ জন নেতা-কর্মী আহত হন। তাঁদের মধ্যে ওই দুই নেতা এবং কর্মী পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী শাহেদ হোসেন, শামসুল আরেফিন ও আয়নুল মাহমুদ, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসাদ, সাফিন ও মল্লিককে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অপর শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সংঘর্ষে শিবিরের ছয়জন কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন শান্ত, মাহমুদ, জালাল, সাজেদুল, খালেদ ও ইমরান। তাঁদের সিলেটের বিভিন্ন বেসরকারি হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
খবর পেয়ে পুলিশ ও র্যা বের সদস্যরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ বেধড়ক লাঠিপেটা শুরু করলে ছাত্রলীগ ও শিবিরের কর্মীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। পুলিশের লাঠিপেটায় একটি জাতীয় দৈনিকের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও কয়েকজন অভিভাবক আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কলেজ শাখার শিবিরের সভাপতি নাফিস রিয়াজুজ্জামান, শিবিরকর্মী শিক্ষানবিশ চিকিৎসক নাজমুল হোসেন ও আবদুল্লাহ ইউসুফ জামিল, পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল সাদাত, তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জালাল হোসেন ও প্রথম বর্ষের ছাত্র হাসান মুরাদকে আটক করে। কলেজ ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ লোহার রড, দা, হকিস্টিক ও ক্রিকেটের স্ট্যাম্প উদ্ধার করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিবিরের একজন নেতা জানান, নতুন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিতে গেলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গত বৃহস্পতিবার থেকে বাধা দিয়ে আসছেন। সোমবারও (গতকাল) বাধা দেওয়ায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। শিবিরের এই নেতার দাবি, সংঘর্ষে তাঁদের অন্তত ১০ জন কর্মী আহত হয়েছেন।
মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল বেরুনি খান বলেন, ভর্তি-কার্যক্রম বানচাল করতে শিবির পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে।
সিলেট কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুজিবুর রহমান জানান, উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার সময় লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল ফরহাদ হোসেনের মাথায় ইট লেগেছে। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ মৃদু লাঠিপেটা করে। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার নওরোজ আহমদ বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষের দেওয়া অভিযোগ অনুযায়ী পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে। ক্যাম্পাসে পুুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কলেজের উপাধ্যক্ষ হারুন-উর-রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ওই ঘটনায় ঘণ্টা খানেক ভর্তি-কার্যক্রম বন্ধ ছিল। একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংঘর্ষের ঘটনায় সিলেট কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, গত রোববার ছিল কলেজের ১৫তম ব্যাচের কোর্স সমাপনী অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে রাত দুইটার দিকে ছাত্রলীগের মেডিকেল কলেজ শাখার এক পক্ষের কয়েকজন কর্মী কলেজের শহীদ মিনারে আড্ডা দিচ্ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, রাত আড়াইটার দিকে দাউদ চৌধুরীর (মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক) নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে শহীদ মিনারে অবস্থানরত কর্মীদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। এরপর তাঁরা ছাত্রাবাসের কক্ষে কক্ষে গিয়ে বেশ কয়েকজন ছাত্রকে ঘুম থেকে তুলে মারধর করেন। এ সময় হামলাকারীরা ছাত্রাবাসের ১৪টি কক্ষের জানালার কাচ ও আসবাব ভাঙচুর করেন।
হামলায় ১৫ জন আহত হন। আহত ছাত্রদের মধ্যে আটজনকে ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অবশিষ্ট সাতজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, আহত ছাত্রদের অনুরোধে তাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
শিক্ষার্থীরা জানান, রাত সাড়ে তিনটার দিকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ স ম জাহাঙ্গীর চৌধুরী ক্যাম্পাসে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। সকালে পুলিশ ছাত্রাবাসের সব কক্ষে তল্লাশি চালায়।
আহত ছাত্রদের দাবি, হামলাকারীরা ছয়টি মুঠোফোন সেট ও একটি ল্যাপটপ লুটে নিয়ে গেছে।
এ নিয়ে গতকাল কলেজের একাডেমিক কমিটির জরুরি সভা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঘটনার তদন্তে কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক নাজির আহম্মেদকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটি গতকাল থেকেই কাজ শুরু করেছে।
ছাত্রলীগের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি হূদয় রঞ্জন বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনাকে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বলা যাবে না। তবে কলেজে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
দাউদ চৌধুরী বলেন, ‘রোববার রাতের ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। আমি ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই।’
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ স ম জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, কলেজের পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাতক্ষীরা, রাজশাহীতে শিবিরের সাতজন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা ও রাজশাহী | তারিখ: ০৯-১১-২০১০

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের ছয়জন নেতা-কর্মীকে রোববার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে রাজশাহী কলেজ শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক নেতাকে গতকাল সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আশাশুনি উপজেলার জামায়াতে ইসলামীর কার্যালয়ে থেকে রোববার রাতে গোপনে বৈঠক করার সময় ছাত্রশিবিরের ছয়জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আশাশুনি থানার ওসি ফজলুর রহমান জানান, গতকাল তাঁদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় রাজশাহী কলেজ শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ আলমকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অস্বচ্ছ ব্যয়ের অভিযোগ: ফাউন্ডেশনকে কোনো অর্থ না দিতে ইসলামী ব্যাংককে নির্দেশ

মনজুর আহমেদ | তারিখ: ০৯-১১-২০১০

ইসলামী ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের অস্বচ্ছ অর্থ ব্যয়ের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোম্পানির সামাজিক কল্যাণের (সিএসআর) নামে এই তহবিল ব্যয় করা হয়ে থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই অস্বচ্ছ ব্যয় ঠেকাতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ফাউন্ডেশনকে আর কোনো অর্থ বরাদ্দ না দিতে ইসলামী ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে।
পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত ফাউন্ডেশনকে ইসলামী ব্যাংক কী পরিমাণ অর্থ দিয়েছে এবং সেই অর্থ কোথায়, কীভাবে ব্যয় হয়েছে, তা পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিবন্ধন ছাড়াই ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে (এমআরএ) বলবে বলেও জানা গেছে।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শনে দেখা গেছে, সিএসআর তহবিল থেকে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করে ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন। এ বিষয়ে ক্ষুদ্রঋণ তদারকি সংস্থা এমআরএ ফাউন্ডেশনকে অনুমোদন না দিলেও ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে তারা। এমনকি এমআরএ ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনার বিষয়টি নাকচ করার পরও ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন তা মানছে না।
শরিয়াহ অনুসারে হালাল বলে বিবেচিত হয় না—এমন অর্থ প্রতিবছর ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ফাউন্ডেশনকে দিয়ে থাকে। এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেয় না ইসলামী ব্যাংক।
এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকে ফাউন্ডেশনের নামে আটটি ব্যাংক হিসাবে প্রাপ্ত লাভ, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, রাজশাহীতে কমিউনিটি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, হোমিও ক্লিনিকে লগ্নি করা অর্থের ওপর আয় ও ভাড়া আয়, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া যাকাতের অর্থ এবং অনুদান ফাউন্ডেশনে জমা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের পাঁচটি খাত থেকে আয় এই ফাউন্ডেশনে দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে (’০৭ সালের কিছু অর্থসহ) এসব খাত থেকে ৫০ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যাংকের আয় হয়। যার মধ্যে কোম্পানি কর (করপোরেট ট্যাক্স) দেওয়া হয় ২১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। প্রতিরক্ষা বাহিনীর গলফ ক্লাবে দেওয়া হয় ৩০ লাখ টাকা। আর বাকি ২৮ কোটি এক লাখ টাকা ফাউন্ডেশনকে দেওয়া হয়।
২০০৯ সালে এমন আয়ের পরিমাণ ছিল তিন কোটি ২৯ লাখ টাকা। যার মধ্যে এক কোটি ২৭ লাখ টাকা কোম্পানি কর এবং বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৫৭ লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা দেওয়া হয় ফাউন্ডেশনকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এসব অর্থের খরচের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে সামাজিক কল্যাণমূলক কাজের কথা উল্লেখ থাকলেও তহবিলের আর্থিক বিবরণী নেই। কিন্তু ব্যাংকের সাধারণ শেয়ারহোল্ডার ও আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্য বিস্তারিত আর্থিক প্রতিবেদনের প্রয়োজনীতা রয়েছে।
একজন বিদেশি দানবীর নাম প্রকাশ না করে বাংলাদেশের সিডর এলাকার জন্য ১৩ কোটি ডলার দান করেন। এই দান নিতে সরকার ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) মধ্যে চুক্তি হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে এই অর্থের মধ্যে ৪৫ লাখ ডলার বা ৩০ কোটি ৭৬ লাখ টাকার অনুদান ব্যবস্থাপনার জন্য (কৃষি কর্মসূচির আওতায়) আইডিবি ও ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে চুক্তি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর অর্থায়ন যথাযথ প্রক্রিয়ায় হচ্ছে কি না বা সরকারের কোনো সংস্থা তার দেখভাল করছে কি না তা স্পষ্ট নয়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবু নাসের মোহাম্মদ আব্দুজ যাহের প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোন কারণে আমাদের এমন চিঠি দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে পরিষ্কার হতে পারছি না, তাই এখনই কোনো মতামত দিতে পারছি না।’ তিনি আশা করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সহসাই তাঁদের কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্ঘাটিত তথ্য জানাবেন। তাহলে তাঁরাও এর সত্যতা যাচাই করতে পারবেন।
তবে আব্দুজ যাহের বলেন, ‘আমরা আমাদের শেয়ারধারী ও আমানতকারীদের কাছে কোনো অস্পষ্টতা বা অস্বচ্ছতা রাখি নাই। সবকিছুই তাঁদের কাছে পরিষ্কার করা হয়েছে।’