নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০৬-০৭-২০১০
যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রতিহত করতে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করেছিল জামায়াত। এই কমিটি বিচারবিরোধী প্রচারণার জন্য বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণ ও পরিকল্পনা তৈরি করে। গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে থাকা জামায়াতের তিন নেতা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানান।
জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত রোববার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা কার্যালয়ে এর আগে থেকেই জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পল্টন থানায় দায়ের করা পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় তাঁদের হেফাজতে নেওয়া হয়। এই থানায় দায়ের হওয়া তিনটি মামলার প্রতিটিতে তাঁদের প্রত্যেকের নয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
সূত্র জানায়, জামায়াতের আমিরকে ফাঁসি কার্যকর হওয়া জেএমবি নেতা সিদ্দিকুর রহমান বাংলাভাই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি কেন বাংলাভাইকে মিডিয়ার সৃষ্টি বলে দাবি করেছিলেন। নিজামি বলেছেন, বাংলাভাই মিডিয়ার সৃষ্টি এ কথা তিনি বলেননি। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা তাঁকে জামায়াতের মুখপাত্র হিসেবে প্রকাশিত দৈনিকের খবর দেখালে তিনি নীরব থাকেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেরার জবাবে জামায়াতের নেতারা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধ মামলায় সরকার কাদের জড়াতে পারে তার একটি তালিকা জামায়াত করেছিল। ওই তালিকা সম্পর্কে তাঁরা পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা দেন।
সূত্র জানায়, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে চট্টগ্রাম সার কারখানা থেকে এক হাজার ১৮২ টন রক সালফার ভুয়া ভাউচারে বেরিয়ে আসা প্রসঙ্গে নিজামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নিজামী ওই সময় শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। পুলিশের জেরার জবাবে নিজামী বলেন, তিনি বিষয়টি শুনেছিলেন, কিন্তু কোনো হদিস করতে পারেননি। অভিযোগ আছে, ওই সব রক সালফার জঙ্গিদের হাতে চলে যায়।
Showing posts with label জঙ্গি. Show all posts
Showing posts with label জঙ্গি. Show all posts
5 July 2010
19 March 2010
দেশব্যাপী নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলার উদ্যোগ
আহমেদ দীপু ও মনজুরুল আহসান
যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে সরকার আধাসামরিক বাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে দেশব্যাপী নিরাপত্তাবলয় তৈরি করতে যাচ্ছে। নাশকতার আশঙ্কায় সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পুলিশের পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিডিআরকে আরো সতর্কাবস্থায় সীমান্ত পাহারা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এনজিওর টাকা যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচারে জনমত সৃষ্টি এবং স্থানীয় জনগণকে সচেতন করার জন্য সব শ্রেণী ও পেশার মানুষকে নিয়ে জেলায় জেলায় কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
এসব প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রসচিব আব্দুস সোবহান সিকদার গত বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। শুধু পুলিশের একার পক্ষে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থাকে কাজে লাগাতে বলা হয়েছে। অপরাধীরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে, সে জন্য বিডিআরকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তদন্ত সেলে কাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তা চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে শিগগিরই তদন্ত কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হবে। একইভাবে অল্প সময়ের মধ্যেই বিচারিক সেলের কর্মকর্তাদের নিয়োগও সম্পন্ন হবে।
চলতি মাসেই যুদ্ধাপরাধের বিচারকাজ শুরু করতে তদন্ত এবং প্রসিকিউশন সেলে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। বিচারকাজ পরিচালনার জন্য পুরনো হাইকোর্ট ভবনের সংস্কারকাজ চলছে বলে জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের কাছে তথ্য আছে, সরকার যাতে যুদ্ধাপরাধের বিচারকাজ শুরু করতে না পারে, এ জন্য বিশেষ একটি গোষ্ঠী দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলার ষড়যন্ত্র করছে। কিছু এনজিওর আর্থিক সহায়তায় যুদ্ধাপরাধীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি চক্র বিভিন্ন স্থানে হামলা চালাতে পারে।
স্থানীয় এই চক্রটির সঙ্গে বিশেষ একটি দেশের জঙ্গি সংগঠনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। সংগঠনের একাধিক সদস্য বাংলাদেশে গ্রেপ্তারও হয়েছে। গ্রেপ্তার জঙ্গিদের দেওয়া তথ্য আমলে নিয়েই সরকার প্রতিরোধব্যবস্থা হিসেবে নিরাপত্তাবলয় তৈরি করছে। এই বলয়ে আধাসামরিক বাহিনী হিসেবে বিডিআর, পুলিশ, গ্রামপুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
আরো জানা গেছে, সরকারের কাছে খবর আছে, ষড়যন্ত্রকারী চক্রটি দেশের যেকোনো গ্যাসক্ষেত্র, গ্যাসের সঞ্চালন লাইন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড, বড় বড় বিপণিকেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ সন্ত্রাসীরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরীহ মানুষের সঙ্গে মিশে আছে। তারা যেকোনো সময় গ্রাম থেকে বেরিয়ে এসে হামলা চালিয়ে আবার গ্রামে ফিরে যেতে পারে। আবার কেউ কেউ সীমান্ত পার হয়ে অন্য দেশে আত্দগোপন করতে পারে।
এসব মোকাবিলার ক্ষেত্রে আনসার-ভিডিপি এবং কমিউনিটি পুলিশকে কাজে লাগানো হবে। গ্রামের কোনো এলাকায় অপরিচিত কাউকে ঘোরাফেরা করতে দেখলে বা সন্দেহজনক কাউকে দেখা গেলেই স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে খবর দিতে বলা হয়েছে। এ ধরনের লোকজনকে ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করাসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য গ্রামের সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ১৪ দলের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ জাতি'_এই স্লোগান নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত শোভাযাত্রা করেছে। আজ ১৯ ও কাল ২০ মার্চ ঢাকা থেকে নীলফামারী পর্যন্ত তারা শোভাযাত্রা করবে। একইভাবে তারা সারা দেশে শোভাযাত্রা করবে। একই উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগও সারা দেশে সাংগঠনিক সফরে বের হবে। ১৪ দলের পক্ষ থেকে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করার জন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের চিঠি দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য রাজধানীতে সমাবেশ করা হবে। এরপর থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে গণসংযোগের কর্মসূচি পালন শেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে প্রতিটি জেলায় কমিটি গঠন করা হবে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এনজিওগুলোর টাকা যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত জোট সরকারের সময় জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ সমাজকল্যাণমন্ত্রী থাকার সময় নিবন্ধন নেওয়া এনজিওগুলোর কার্যক্রম ঘনিষ্ঠভাবে মনিটর করা হচ্ছে। এ ছাড়া ওই সময়ে এনজিও ব্যুরোর কাছে নিবন্ধন নেওয়া বেসরকারি সংস্থাগুলোর বিদেশ থেকে আনা টাকা যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হচ্ছে কি না সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। চারদলীয় জোট সরকারের সময় ৪৭৫টি বেসরকারি সংস্থা এনজিও ব্যুরোর কাছ থেকে নিবন্ধন নেয় বলে জানা গেছে।
ব্যাংকের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনের নামে বিদেশ থেকে টাকা আসার প্রমাণ সরকারের হাতে আছে। এ ধরনের কাজে জড়িত থাকার জন্য বেশ কিছু হিসাব নম্বর এরই মধ্যে ফ্রিজ করা হয়েছে। ব্যাংক হিসাবের বাইরে হুন্ডির মাধ্যমেও জঙ্গি সংগঠনগুলোর কাছে বিদেশ থেকে টাকা আসছে। এই টাকা জঙ্গিদের হাতে পেঁৗছে গেছে এবং তারা তা ব্যয় করা শুরু করেছে বলেও জানা গেছে। কোথায়, কিভাবে এই টাকা ব্যবহার হচ্ছে, সে বিষয়ে অনুসন্ধান করছেন বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, এনজিওর টাকা যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী কাজে ব্যবহার হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু ব্যাংক আছে যারা ধর্মীয় নাম ব্যবহার করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ওই সব ব্যাংকের ওপর কঠোর নজর রাখতে বলা হয়েছে।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় খুন, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগের সঙ্গে জড়িতদের আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ আইনে বিচার করা হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে শিগগিরই তদন্ত সংস্থা ও আইনজীবী প্যানেলের নিয়োগ দেওয়া হবে।
খবরের লিংক
যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে সরকার আধাসামরিক বাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে দেশব্যাপী নিরাপত্তাবলয় তৈরি করতে যাচ্ছে। নাশকতার আশঙ্কায় সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পুলিশের পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিডিআরকে আরো সতর্কাবস্থায় সীমান্ত পাহারা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এনজিওর টাকা যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচারে জনমত সৃষ্টি এবং স্থানীয় জনগণকে সচেতন করার জন্য সব শ্রেণী ও পেশার মানুষকে নিয়ে জেলায় জেলায় কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
এসব প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রসচিব আব্দুস সোবহান সিকদার গত বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। শুধু পুলিশের একার পক্ষে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থাকে কাজে লাগাতে বলা হয়েছে। অপরাধীরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে, সে জন্য বিডিআরকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তদন্ত সেলে কাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তা চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে শিগগিরই তদন্ত কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হবে। একইভাবে অল্প সময়ের মধ্যেই বিচারিক সেলের কর্মকর্তাদের নিয়োগও সম্পন্ন হবে।
চলতি মাসেই যুদ্ধাপরাধের বিচারকাজ শুরু করতে তদন্ত এবং প্রসিকিউশন সেলে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। বিচারকাজ পরিচালনার জন্য পুরনো হাইকোর্ট ভবনের সংস্কারকাজ চলছে বলে জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের কাছে তথ্য আছে, সরকার যাতে যুদ্ধাপরাধের বিচারকাজ শুরু করতে না পারে, এ জন্য বিশেষ একটি গোষ্ঠী দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলার ষড়যন্ত্র করছে। কিছু এনজিওর আর্থিক সহায়তায় যুদ্ধাপরাধীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি চক্র বিভিন্ন স্থানে হামলা চালাতে পারে।
স্থানীয় এই চক্রটির সঙ্গে বিশেষ একটি দেশের জঙ্গি সংগঠনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। সংগঠনের একাধিক সদস্য বাংলাদেশে গ্রেপ্তারও হয়েছে। গ্রেপ্তার জঙ্গিদের দেওয়া তথ্য আমলে নিয়েই সরকার প্রতিরোধব্যবস্থা হিসেবে নিরাপত্তাবলয় তৈরি করছে। এই বলয়ে আধাসামরিক বাহিনী হিসেবে বিডিআর, পুলিশ, গ্রামপুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
আরো জানা গেছে, সরকারের কাছে খবর আছে, ষড়যন্ত্রকারী চক্রটি দেশের যেকোনো গ্যাসক্ষেত্র, গ্যাসের সঞ্চালন লাইন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড, বড় বড় বিপণিকেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ সন্ত্রাসীরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরীহ মানুষের সঙ্গে মিশে আছে। তারা যেকোনো সময় গ্রাম থেকে বেরিয়ে এসে হামলা চালিয়ে আবার গ্রামে ফিরে যেতে পারে। আবার কেউ কেউ সীমান্ত পার হয়ে অন্য দেশে আত্দগোপন করতে পারে।
এসব মোকাবিলার ক্ষেত্রে আনসার-ভিডিপি এবং কমিউনিটি পুলিশকে কাজে লাগানো হবে। গ্রামের কোনো এলাকায় অপরিচিত কাউকে ঘোরাফেরা করতে দেখলে বা সন্দেহজনক কাউকে দেখা গেলেই স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে খবর দিতে বলা হয়েছে। এ ধরনের লোকজনকে ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করাসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য গ্রামের সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ১৪ দলের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ জাতি'_এই স্লোগান নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত শোভাযাত্রা করেছে। আজ ১৯ ও কাল ২০ মার্চ ঢাকা থেকে নীলফামারী পর্যন্ত তারা শোভাযাত্রা করবে। একইভাবে তারা সারা দেশে শোভাযাত্রা করবে। একই উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগও সারা দেশে সাংগঠনিক সফরে বের হবে। ১৪ দলের পক্ষ থেকে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করার জন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের চিঠি দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য রাজধানীতে সমাবেশ করা হবে। এরপর থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে গণসংযোগের কর্মসূচি পালন শেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে প্রতিটি জেলায় কমিটি গঠন করা হবে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এনজিওগুলোর টাকা যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত জোট সরকারের সময় জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ সমাজকল্যাণমন্ত্রী থাকার সময় নিবন্ধন নেওয়া এনজিওগুলোর কার্যক্রম ঘনিষ্ঠভাবে মনিটর করা হচ্ছে। এ ছাড়া ওই সময়ে এনজিও ব্যুরোর কাছে নিবন্ধন নেওয়া বেসরকারি সংস্থাগুলোর বিদেশ থেকে আনা টাকা যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হচ্ছে কি না সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। চারদলীয় জোট সরকারের সময় ৪৭৫টি বেসরকারি সংস্থা এনজিও ব্যুরোর কাছ থেকে নিবন্ধন নেয় বলে জানা গেছে।
ব্যাংকের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনের নামে বিদেশ থেকে টাকা আসার প্রমাণ সরকারের হাতে আছে। এ ধরনের কাজে জড়িত থাকার জন্য বেশ কিছু হিসাব নম্বর এরই মধ্যে ফ্রিজ করা হয়েছে। ব্যাংক হিসাবের বাইরে হুন্ডির মাধ্যমেও জঙ্গি সংগঠনগুলোর কাছে বিদেশ থেকে টাকা আসছে। এই টাকা জঙ্গিদের হাতে পেঁৗছে গেছে এবং তারা তা ব্যয় করা শুরু করেছে বলেও জানা গেছে। কোথায়, কিভাবে এই টাকা ব্যবহার হচ্ছে, সে বিষয়ে অনুসন্ধান করছেন বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, এনজিওর টাকা যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী কাজে ব্যবহার হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু ব্যাংক আছে যারা ধর্মীয় নাম ব্যবহার করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ওই সব ব্যাংকের ওপর কঠোর নজর রাখতে বলা হয়েছে।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় খুন, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগের সঙ্গে জড়িতদের আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ আইনে বিচার করা হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে শিগগিরই তদন্ত সংস্থা ও আইনজীবী প্যানেলের নিয়োগ দেওয়া হবে।
খবরের লিংক
15 March 2010
নিউইয়র্কে আইনমন্ত্রীঃ লস্কর-ই-তাইয়েবার সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক রয়েছে
নিউইয়র্ক প্রতিনিধি | তারিখ: ১৫-০৩-২০১০
আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, ‘জামায়াতপন্থীদের জাতিসংঘের সামনে বিক্ষোভ করে কোনো লাভ হবে না। যুদ্ধাপরাধের জন্য তাঁদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতেই হবে। বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার সম্পর্ক রয়েছে।’
নিউইয়র্কে প্রবাসীদের উদ্যোগে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। নিউইয়র্ক শহরের জ্যামাইকাতে গতকাল শনিবার ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের পর জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো আর রাজনীতি করতে পারবে না। বিষয়টি নিয়ে সরকার আদালতের ব্যাখ্যার অপেক্ষায় রয়েছে। এরপর নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে জামায়াত আর নিবন্ধন পাবে না।
এদিকে ২৬ মার্চের মধ্যেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে বলে মন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ বিচারের জন্য সব অবকাঠামোগত প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। তিনজন বিচারকের সমন্বয়ে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে।
খবরের লিংক
নিউইয়র্ক প্রতিনিধি | তারিখ: ১৫-০৩-২০১০
আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, ‘জামায়াতপন্থীদের জাতিসংঘের সামনে বিক্ষোভ করে কোনো লাভ হবে না। যুদ্ধাপরাধের জন্য তাঁদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতেই হবে। বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার সম্পর্ক রয়েছে।’
নিউইয়র্কে প্রবাসীদের উদ্যোগে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। নিউইয়র্ক শহরের জ্যামাইকাতে গতকাল শনিবার ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের পর জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো আর রাজনীতি করতে পারবে না। বিষয়টি নিয়ে সরকার আদালতের ব্যাখ্যার অপেক্ষায় রয়েছে। এরপর নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে জামায়াত আর নিবন্ধন পাবে না।
এদিকে ২৬ মার্চের মধ্যেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে বলে মন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ বিচারের জন্য সব অবকাঠামোগত প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। তিনজন বিচারকের সমন্বয়ে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে।
খবরের লিংক
6 March 2010
পার্বত্য অঞ্চলের গহিন জঙ্গলে জঙ্গিদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ
উম্মুল ওয়ারা সুইটি
জঙ্গি সংগঠনগুলো এবার তাদের গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য বেছে নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের গহিন অরণ্য ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে র্যাব-পুলিশের কড়া নজরদারি এড়াতেই তারা এ কৌশল নিয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জঙ্গিরা ফের বড় ধরনের হামলার জন্য গেরিলা প্রশিক্ষণ জোরদার করেছে। ওই সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ১৫টির বেশি জঙ্গি সংগঠনের ২৫টিরও বেশি অস্থায়ী প্রশিক্ষণ ক্যাম্প রয়েছে। এসব ক্যাম্প পরিচালনার পাশাপাশি জঙ্গি সংগঠনগুলো সেখানে অভিনব কায়দায় সদস্য সংগ্রহ করছে।
সম্প্রতি পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন উপজেলা এবং কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া ঘুরে জানা গেছে, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি), হরকত-ই-তৈয়বা, হরকাতুল মুজাহিদ, হিজবুত তাওহীদ, মিয়ানমারের ন্যাশনাল ইউনাইটেড ফ্রন্ট অব আরাকান, আরাকান রোহিঙ্গা ইনটেলিজেন্স ফোর্স, ইফতেদাতুল আল মুসলিমিন, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন, আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন, ইসলামী তুলবা মুভমেন্টসহ ১৫টি জঙ্গি সংগঠন দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় গেরিলা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি জেলা, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকায় জঙ্গি তৎপরতা সম্পর্কে গত সপ্তাহে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা আলাদা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। দেশের জঙ্গি তৎপরতার ওপর গত এক বছরে এ নিয়ে তিন দফা প্রতিবেদন দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের বিচারকাজ শুরু হলে জঙ্গি হামলার পাশাপাশি স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি কিংবা দেশকে অশান্ত করতে অপতৎপরতা চালাতে পারে_এ আশঙ্কায় সরকারও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু গতকাল রবিবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু হলে স্বাধীনতাবিরোধী পক্ষ নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করতে পারে, এটা আমরা আশঙ্কা করছি। বিচারকাজকে বাধাগ্রস্ত করতে এরা জঙ্গি তৎপরতাসহ বিভিন্ন গোপন ষড়যন্ত্র করতে পারে_এ আশঙ্কা সরকারের রয়েছে। সেই হিসেবে ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সীমান্ত এলাকাগুলোতে সতর্কাবস্থা নেওয়া হবে। জঙ্গি নির্মূলে সরকার বদ্ধপরিকর।'
কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে বান্দরবানে সন্দেহভাজন বাংলাদেশি জঙ্গি ও রোহিঙ্গা মিলিয়ে দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাটিরাঙার একটি ক্যাম্প থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'গত কয়েক মাসে এখানে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তৎপরতার আলামত দেখা যাচ্ছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঘুনধুমের ধলা পাহাড়ে একটি জঙ্গি গেরিলা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে জিহাদি বইপুস্তক পাওয়া গেছে। কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এখনো আমরা এ বিষয়ে বেশ সতর্ক। কোনো ধরনের তথ্য পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালাই।'
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু যোগাইন্যা থেকে থানচি পর্যন্ত ২৭১ কিলোমিটারের মধ্যে ১৭২ কিলোমিটার অরক্ষিত ওই এলাকার গহিন পাহাড়ি জঙ্গলেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পগুলো গড়ে উঠেছে। এদের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হওয়ায় অনেক সময় অভিযানের আগেই তাদের কাছে খবর পেঁৗছে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তারা সে স্থান ত্যাগ করে। এ কারণে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে প্রশিক্ষণের স্থান নির্দিষ্ট করা গেলেও প্রশিক্ষক বা নেতাদের ধরা যায় না।
নাইক্ষ্যংছড়ি, টেকনাফ, উখিয়া, ঘুনধুম, তুমব্রু ঘুরে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প রয়েছে। সাত-আট মাস ধরে এসব ক্যাম্পে চলছে গেরিলা প্রশিক্ষণ।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের আবুল হাসান বলেন, '১৯৮৫ সালে প্রথম নাইক্ষ্যংছড়িতে জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের কথা জানাজানি হয়। উপজেলার গহিন পাহাড়ি এলাকা ঘুনধুম ইউনিয়নের তমব্রুতে দুটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে উঠেছিল। ২০০৫ ও ২০০৬ সালে বিডিআর ও পুলিশের অভিযানে নাইক্ষ্যংছড়িতে সাত-আটটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের হদিস পাওয়া যায় এবং সেসব ক্যাম্প থেকে বিভিন্ন প্রকারের আধুনিক অস্ত্র ধরা পড়ে। মাঝখানে কিছুদিন চুপচাপ থাকলেও কয়েক মাস ধরে আবারও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।'
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন বাজারে এক চায়ের দোকানে একটি রাবার বাগানের সুপারভাইজার জসিম ও আরিফসহ উপস্থিত সবাই প্রায় একবাক্যে বলেন, সেখানে মূল সমস্যা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ। তাঁরা বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে এলাকায় নতুন নতুন লোকের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। তারা কোথায় যাচ্ছে, কোন এলাকা থেকে এসেছে কেউ জানে না। শোনা যাচ্ছে বাইশারী, আলীক্ষ্যং, পানছড়ি, দোছড়ি, তমব্রু ও ঘুনধুমের দুর্গম পাহাড়ি জঙ্গলে গেরিলা প্রশিক্ষণ চলছে।'
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ইউনিয়নের এক তরুণ জানান, এখানকার জঙ্গিরা প্রথমে ইসলামী নীতি-আদর্শের ভিত্তিতে দেশ গড়ার জন্য জিহাদে অংশ নেওয়ায় উদ্বুদ্ধ করতে খুব গোপনে পরিবারের প্রধান ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। তরুণ ও কিশোর রয়েছে এমন দরিদ্র পরিবারকে টার্গেট করে আর্থিক সহযোগিতা দেয়। দলে গেলে পুরো পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংগঠনগুলো এখন স্থানীয়ভাবেই সদস্য সংগ্রহ করছে।
টেকনাফ বন্দরে আসা বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলার বাসিন্দা হারুন, ইব্রাহিম শর্মাসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এসব এলাকা থেকে কয়েক দফায় অস্ত্রসহ মিয়ানমারের আরাকানি জঙ্গি এবং বাংলাদেশি বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা ধরা পড়েছে।
টেকনাফের কুতুপালং ক্যাম্পের একজন ভলান্টিয়ার (মাঝি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'এখানে চার-পাঁচটি গ্রুপ কাজ করে। আরাকানি জঙ্গি সংগঠন এবং বাংলাদেশের কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে এখানকার গ্রুপগুলোর যোগাযোগ রয়েছে।' প্রতিনিয়ত মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা রোহিঙ্গারা কোনো কাজকর্ম না পেয়ে এসব জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
উখিয়ার কুতুপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোল্লা ফজলে রাবি্ব জানান, কুতুপালং ক্যাম্পের জঙ্গি কানেকশনের কথা সবাই জানে। স্থানীয় বাসিন্দারা বেশ আতঙ্কে রয়েছে। গত মাসেও অস্ত্রসহ ধরা পড়েছে কয়েকজন।
খবরের লিংক
জঙ্গি সংগঠনগুলো এবার তাদের গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য বেছে নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের গহিন অরণ্য ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে র্যাব-পুলিশের কড়া নজরদারি এড়াতেই তারা এ কৌশল নিয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জঙ্গিরা ফের বড় ধরনের হামলার জন্য গেরিলা প্রশিক্ষণ জোরদার করেছে। ওই সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ১৫টির বেশি জঙ্গি সংগঠনের ২৫টিরও বেশি অস্থায়ী প্রশিক্ষণ ক্যাম্প রয়েছে। এসব ক্যাম্প পরিচালনার পাশাপাশি জঙ্গি সংগঠনগুলো সেখানে অভিনব কায়দায় সদস্য সংগ্রহ করছে।
সম্প্রতি পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন উপজেলা এবং কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া ঘুরে জানা গেছে, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি), হরকত-ই-তৈয়বা, হরকাতুল মুজাহিদ, হিজবুত তাওহীদ, মিয়ানমারের ন্যাশনাল ইউনাইটেড ফ্রন্ট অব আরাকান, আরাকান রোহিঙ্গা ইনটেলিজেন্স ফোর্স, ইফতেদাতুল আল মুসলিমিন, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন, আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন, ইসলামী তুলবা মুভমেন্টসহ ১৫টি জঙ্গি সংগঠন দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় গেরিলা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি জেলা, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকায় জঙ্গি তৎপরতা সম্পর্কে গত সপ্তাহে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা আলাদা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। দেশের জঙ্গি তৎপরতার ওপর গত এক বছরে এ নিয়ে তিন দফা প্রতিবেদন দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের বিচারকাজ শুরু হলে জঙ্গি হামলার পাশাপাশি স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি কিংবা দেশকে অশান্ত করতে অপতৎপরতা চালাতে পারে_এ আশঙ্কায় সরকারও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু গতকাল রবিবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু হলে স্বাধীনতাবিরোধী পক্ষ নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করতে পারে, এটা আমরা আশঙ্কা করছি। বিচারকাজকে বাধাগ্রস্ত করতে এরা জঙ্গি তৎপরতাসহ বিভিন্ন গোপন ষড়যন্ত্র করতে পারে_এ আশঙ্কা সরকারের রয়েছে। সেই হিসেবে ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সীমান্ত এলাকাগুলোতে সতর্কাবস্থা নেওয়া হবে। জঙ্গি নির্মূলে সরকার বদ্ধপরিকর।'
কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে বান্দরবানে সন্দেহভাজন বাংলাদেশি জঙ্গি ও রোহিঙ্গা মিলিয়ে দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাটিরাঙার একটি ক্যাম্প থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'গত কয়েক মাসে এখানে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তৎপরতার আলামত দেখা যাচ্ছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঘুনধুমের ধলা পাহাড়ে একটি জঙ্গি গেরিলা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে জিহাদি বইপুস্তক পাওয়া গেছে। কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এখনো আমরা এ বিষয়ে বেশ সতর্ক। কোনো ধরনের তথ্য পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালাই।'
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু যোগাইন্যা থেকে থানচি পর্যন্ত ২৭১ কিলোমিটারের মধ্যে ১৭২ কিলোমিটার অরক্ষিত ওই এলাকার গহিন পাহাড়ি জঙ্গলেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পগুলো গড়ে উঠেছে। এদের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হওয়ায় অনেক সময় অভিযানের আগেই তাদের কাছে খবর পেঁৗছে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তারা সে স্থান ত্যাগ করে। এ কারণে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে প্রশিক্ষণের স্থান নির্দিষ্ট করা গেলেও প্রশিক্ষক বা নেতাদের ধরা যায় না।
নাইক্ষ্যংছড়ি, টেকনাফ, উখিয়া, ঘুনধুম, তুমব্রু ঘুরে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প রয়েছে। সাত-আট মাস ধরে এসব ক্যাম্পে চলছে গেরিলা প্রশিক্ষণ।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের আবুল হাসান বলেন, '১৯৮৫ সালে প্রথম নাইক্ষ্যংছড়িতে জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের কথা জানাজানি হয়। উপজেলার গহিন পাহাড়ি এলাকা ঘুনধুম ইউনিয়নের তমব্রুতে দুটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে উঠেছিল। ২০০৫ ও ২০০৬ সালে বিডিআর ও পুলিশের অভিযানে নাইক্ষ্যংছড়িতে সাত-আটটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের হদিস পাওয়া যায় এবং সেসব ক্যাম্প থেকে বিভিন্ন প্রকারের আধুনিক অস্ত্র ধরা পড়ে। মাঝখানে কিছুদিন চুপচাপ থাকলেও কয়েক মাস ধরে আবারও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।'
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন বাজারে এক চায়ের দোকানে একটি রাবার বাগানের সুপারভাইজার জসিম ও আরিফসহ উপস্থিত সবাই প্রায় একবাক্যে বলেন, সেখানে মূল সমস্যা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ। তাঁরা বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে এলাকায় নতুন নতুন লোকের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। তারা কোথায় যাচ্ছে, কোন এলাকা থেকে এসেছে কেউ জানে না। শোনা যাচ্ছে বাইশারী, আলীক্ষ্যং, পানছড়ি, দোছড়ি, তমব্রু ও ঘুনধুমের দুর্গম পাহাড়ি জঙ্গলে গেরিলা প্রশিক্ষণ চলছে।'
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ইউনিয়নের এক তরুণ জানান, এখানকার জঙ্গিরা প্রথমে ইসলামী নীতি-আদর্শের ভিত্তিতে দেশ গড়ার জন্য জিহাদে অংশ নেওয়ায় উদ্বুদ্ধ করতে খুব গোপনে পরিবারের প্রধান ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। তরুণ ও কিশোর রয়েছে এমন দরিদ্র পরিবারকে টার্গেট করে আর্থিক সহযোগিতা দেয়। দলে গেলে পুরো পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংগঠনগুলো এখন স্থানীয়ভাবেই সদস্য সংগ্রহ করছে।
টেকনাফ বন্দরে আসা বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলার বাসিন্দা হারুন, ইব্রাহিম শর্মাসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এসব এলাকা থেকে কয়েক দফায় অস্ত্রসহ মিয়ানমারের আরাকানি জঙ্গি এবং বাংলাদেশি বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা ধরা পড়েছে।
টেকনাফের কুতুপালং ক্যাম্পের একজন ভলান্টিয়ার (মাঝি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'এখানে চার-পাঁচটি গ্রুপ কাজ করে। আরাকানি জঙ্গি সংগঠন এবং বাংলাদেশের কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে এখানকার গ্রুপগুলোর যোগাযোগ রয়েছে।' প্রতিনিয়ত মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা রোহিঙ্গারা কোনো কাজকর্ম না পেয়ে এসব জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
উখিয়ার কুতুপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোল্লা ফজলে রাবি্ব জানান, কুতুপালং ক্যাম্পের জঙ্গি কানেকশনের কথা সবাই জানে। স্থানীয় বাসিন্দারা বেশ আতঙ্কে রয়েছে। গত মাসেও অস্ত্রসহ ধরা পড়েছে কয়েকজন।
খবরের লিংক
28 February 2010
পাকিস্তানিসহ পাঁচ জঙ্গি গ্রেপ্তার, একজন বিমান ছিনতাইকারী!
নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০১-০৩-২০১০
পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশে মুহাম্মদের দুই সদস্যসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শনিবার গভীর রাতে রাজধানীর মিরপুর রোড থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এদের মধ্যে একজন পাকিস্তানি নাগরিক, যিনি লস্কর-ই-তাইয়েবার সহযোগী সংগঠন জইশে মুহাম্মদের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বলে উল্লেখ করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজন হচ্ছেন রেজোয়ান আহমেদ (২৬), নান্নু মিয়া ওরফে বেলাল মণ্ডল ওরফে বিল্লাল (৩৫), ইমাদ উদ্দিন ওরফে মুন্না (১৮), সাদেক হোসেন ওরফে খোকা (১৯) ও আবু নাসের মুন্সী (২৮)।
র্যাব জানায়, রেজোয়ান আহমেদ পাকিস্তানি নাগরিক। তিনি জইশে মুহাম্মদের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী। জইশের অন্য সদস্য নান্নু মিয়া ওরফে বেলাল সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডু থেকে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত এবং এ জন্য ১০ বছর ভারতের কারাগারে ছিলেন। বেলাল নিজেকে বাংলাদেশের নাগরিক বলে দাবি করলেও তাৎক্ষণিকভাবে র্যাব তা নিশ্চিত হতে পারেনি।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, বাকি তিনজন এঁদের এখানকার সহযোগী বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে। র্যাব সূত্র আরও জানায়, এসব জঙ্গি মূলত বাংলাদেশে বসে ভারতে নাশকতার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির কাজ পরিচালনা করেন।
গতকাল রোববার র্যাব সদর দপ্তরে আটক জঙ্গিদের গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়। এ সময় র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল এস এম মতিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল, নাশকতামূলক কার্যক্রম চালানোর জন্য মিরপুর রোডের সুকন্যা টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে জইশে মুহাম্মদের কিছু প্রশিক্ষিত জঙ্গি অবস্থান করছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাত সাড়ে তিনটায় র্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-২-এর একটি যৌথ দল সুকন্যা টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে (৫/এফ) অভিযান চালিয়ে রেজোয়ান, ইমাদ উদ্দিন, সাদেক হোসেন ও নাসেরকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের কাছ থেকে দুটি পাকিস্তানি ও একটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট, ধারালো চাকু, কম্পিউটারের সিপিইউ, পরিচয়পত্র ও বৈদেশিক মুদ্রা আটক করা হয়।
কর্নেল এস এম মতিউর রহমান বলেন, ওই চারজনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার ভোর সাড়ে পাঁচটায় নিউমার্কেট-সংলগ্ন ফুটওভারব্রিজের পাশ থেকে নান্নু মিয়া ওরফে বেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই চক্রের আরেক সদস্য পাকিস্তানি জঙ্গি জওয়াদকে ধরা যায়নি। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে। সুকন্যা টাওয়ারের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা দুটি পাসপোর্টের একটি জওয়াদের।
র্যাব সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের মধ্যে রেজোয়ানের বাড়ি পাকিস্তানের করাচির ক্লিফটনের দিল্লি কলোনি এলাকায়। তাঁর পাসপোর্টেও এই ঠিকানা লেখা রয়েছে। র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রেজোয়ান হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় পারদর্শী। তিনি আরপিজি (রকেটচালিত গ্রেনেড), ভারী মেশিনগান ও স্নাইপার রাইফেলসহ বিভিন্ন অস্ত্র চালনা এবং চলন্ত রেলে বোমা হামলার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। আত্মঘাতী হামলা চালাতেও প্রস্তুত রেজোয়ান।
র্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে রেজোয়ান আরও জানান, তিনি ঢাকায় অবস্থান করে জইশের আঞ্চলিক সমন্বয় এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশে সদস্য সংগ্রহ করার দায়িত্ব পালন করতেন। র্যাব সূত্র জানায়, রেজোয়ান সাড়ে তিন বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তিনি বৈধ ভিসা নিয়ে এ দেশে ঢোকেন।
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া বেলাল জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, তাঁর বাড়ি সিলেটের কোতোয়ালি থানার দরমপুর নামের এক জায়গায়। তবে তাঁর দেওয়া এ ঠিকানা সঠিক কি না, র্যাব এখনো তা যাচাই করতে পারেনি।
সংবাদ ব্রিফিংয়ের পর বেলাল সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ভারতের আসামের গুয়াহাটিতে বিয়ে করেছেন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিদের বাংলাদেশ হয়ে ভারতে যাতায়াতে সহায়তা করাই তাঁর কাজ ছিল বলে দাবি করেন বেলাল। তিনি সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে এসব জঙ্গিকে আনা-নেওয়া করতেন। বেলাল আরও বলেন, ১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর কাঠমান্ডুতে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের বিমান ছিনতাইয়ে তিনি জড়িত ছিলেন। এ জন্য তিনি ১০ বছর গুয়াহাটি কারাগারে আটক ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতের বসিরহাটে আরও চারটি মামলা রয়েছে। তাই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েই পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
র্যাব কর্মকর্তারাও বেলাল সম্পর্কে প্রায় একই তথ্য দিয়ে বলেছেন, আট মাস আগে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট কয়েকটি ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, ভারতীয় ওই বিমান ছিনতাইয়ে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিরা জড়িত ছিল। তারা ১৮০ জন যাত্রীসহ বিমানটি অমৃতসর, লাহোর ও দুবাই হয়ে আফগানিস্তানের কান্দাহারে নিয়ে যায়। পরে ভারতের কারাগার থেকে পাকিস্তানের হরকাতুল আনসারের তত্কালীন মহাসচিব মাসুদ আজহার (পরে জইশে মুহাম্মদের প্রতিষ্ঠাতা), আহমেদ ওমর সাইদ শেখ (পরে মার্কিন সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্ল অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) ও আল-উমর মুজাহিদীনের নেতা মুশতাক আহমেদ জারগারকে (ভারতীয় নাগরিক) মুক্তি দিয়ে নিরাপদে আফগানিস্তানে যাওয়ার সুযোগ দিলে ওই বিমান ছিনতাইয়ের অবসান হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া অন্য তিনজনের মধ্যে ইমাদ উদ্দিন ও সাদেক হোসেন আপন ভাই এবং আবু নাসের তাঁদের চাচাতো ভাই। নাসের জঙ্গিদের স্থানীয় গাইড হিসেবে কাজ করতেন। আর ইমাম ও সাদেক অন্য বিভিন্ন কাজে সহায়তা করতেন।
র্যাবের আইন ও জনসংযোগ শাখার কমান্ডার এম সোহায়েল প্রথম আলোকে বলেন, এই তিনজন মূলত পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিদের এ দেশে আশ্রয় পেতে সহযোগিতা করেছেন। ইমাদের বাবা মহিউদ্দিন ঢাকায় পাকিস্তানি জঙ্গিদের একজন বড় আশ্রয়দাতা। তাঁরা ঢাকার নিজস্ব অ্যাপার্টমেন্ট ও চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের বাড়িতে বিভিন্ন সময়ে বিদেশি জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছিলেন।
কমান্ডার এম সোহায়েল জানান, মহিউদ্দিন এখন পলাতক। তিনি আগে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং এখন হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭ নম্বর বড়কুল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। মহিউদ্দিনের ভাই সালাহউদ্দিনও পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনিও পলাতক।
এদিকে একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রেজোয়ান ও বেলালকে কয়েক দিন আগেই একটি গোয়েন্দা সংস্থা আটক করেছিল। তবে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই রোববার অন্য তিনজনসহ তাঁদের গণমাধ্যমের সামনে উপস্থিত করা হয়।
পিটিআইকে উদ্ধৃত করে প্রভাবশালী দ্য হিন্দু পত্রিকা জানিয়েছিল, ২০০০ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনায় বাংলাদেশ সীমান্তের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বেলালকে। ওই খবরে বলা হয়, বেলাল ওই ছিনতাই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী এবং এ ঘটনায় আটক চতুর্থ ব্যক্তি। তাঁকে ওই বছরের জুনে আসাম পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে তাঁর নামে আরও অভিযোগ ছিল। এদিকে সন্ত্রাসবাদবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘সাউথ এশিয়ান টেররিজম পোর্টাল’-এ বলা হয়েছে, বেলাল পুলিশের কাছে স্বীকার করেছিলেন, তিনি আসামের ৪০ জন মুসলিম যুবককে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে হরকাত-উল-মুজাহিদীনের প্রশিক্ষণ নিতে সহায়তা করেন।
আমাদের হাজীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বিএনপির উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান মোল্লা বলেছেন, মহিউদ্দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপিতে যোগ দেন। এখন তিনি বিএনপির বড়কুল ইউনিয়ন শাখার সভাপতি। ঢাকার বসুন্ধরা সিটিতে তাঁর একটি জুতার দোকান আছে। মিরপুর রোডে রয়েছে নিজস্ব বাড়ি। মহিউদ্দিন সম্পর্কে এর বেশি তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন বিএনপির এই নেতা।
এ দিকে গতকাল চেষ্টা করেও মহিউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোনসেট বন্ধ ছিল। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, গতকালও তাঁকে নিজ গ্রামে দেখা গেছে।
খবরের লিংক
পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশে মুহাম্মদের দুই সদস্যসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শনিবার গভীর রাতে রাজধানীর মিরপুর রোড থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এদের মধ্যে একজন পাকিস্তানি নাগরিক, যিনি লস্কর-ই-তাইয়েবার সহযোগী সংগঠন জইশে মুহাম্মদের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বলে উল্লেখ করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজন হচ্ছেন রেজোয়ান আহমেদ (২৬), নান্নু মিয়া ওরফে বেলাল মণ্ডল ওরফে বিল্লাল (৩৫), ইমাদ উদ্দিন ওরফে মুন্না (১৮), সাদেক হোসেন ওরফে খোকা (১৯) ও আবু নাসের মুন্সী (২৮)।
র্যাব জানায়, রেজোয়ান আহমেদ পাকিস্তানি নাগরিক। তিনি জইশে মুহাম্মদের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী। জইশের অন্য সদস্য নান্নু মিয়া ওরফে বেলাল সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডু থেকে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত এবং এ জন্য ১০ বছর ভারতের কারাগারে ছিলেন। বেলাল নিজেকে বাংলাদেশের নাগরিক বলে দাবি করলেও তাৎক্ষণিকভাবে র্যাব তা নিশ্চিত হতে পারেনি।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, বাকি তিনজন এঁদের এখানকার সহযোগী বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে। র্যাব সূত্র আরও জানায়, এসব জঙ্গি মূলত বাংলাদেশে বসে ভারতে নাশকতার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির কাজ পরিচালনা করেন।
গতকাল রোববার র্যাব সদর দপ্তরে আটক জঙ্গিদের গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়। এ সময় র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল এস এম মতিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল, নাশকতামূলক কার্যক্রম চালানোর জন্য মিরপুর রোডের সুকন্যা টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে জইশে মুহাম্মদের কিছু প্রশিক্ষিত জঙ্গি অবস্থান করছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাত সাড়ে তিনটায় র্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-২-এর একটি যৌথ দল সুকন্যা টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে (৫/এফ) অভিযান চালিয়ে রেজোয়ান, ইমাদ উদ্দিন, সাদেক হোসেন ও নাসেরকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের কাছ থেকে দুটি পাকিস্তানি ও একটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট, ধারালো চাকু, কম্পিউটারের সিপিইউ, পরিচয়পত্র ও বৈদেশিক মুদ্রা আটক করা হয়।
কর্নেল এস এম মতিউর রহমান বলেন, ওই চারজনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার ভোর সাড়ে পাঁচটায় নিউমার্কেট-সংলগ্ন ফুটওভারব্রিজের পাশ থেকে নান্নু মিয়া ওরফে বেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই চক্রের আরেক সদস্য পাকিস্তানি জঙ্গি জওয়াদকে ধরা যায়নি। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে। সুকন্যা টাওয়ারের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা দুটি পাসপোর্টের একটি জওয়াদের।
র্যাব সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের মধ্যে রেজোয়ানের বাড়ি পাকিস্তানের করাচির ক্লিফটনের দিল্লি কলোনি এলাকায়। তাঁর পাসপোর্টেও এই ঠিকানা লেখা রয়েছে। র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রেজোয়ান হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় পারদর্শী। তিনি আরপিজি (রকেটচালিত গ্রেনেড), ভারী মেশিনগান ও স্নাইপার রাইফেলসহ বিভিন্ন অস্ত্র চালনা এবং চলন্ত রেলে বোমা হামলার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। আত্মঘাতী হামলা চালাতেও প্রস্তুত রেজোয়ান।
র্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে রেজোয়ান আরও জানান, তিনি ঢাকায় অবস্থান করে জইশের আঞ্চলিক সমন্বয় এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশে সদস্য সংগ্রহ করার দায়িত্ব পালন করতেন। র্যাব সূত্র জানায়, রেজোয়ান সাড়ে তিন বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তিনি বৈধ ভিসা নিয়ে এ দেশে ঢোকেন।
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া বেলাল জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, তাঁর বাড়ি সিলেটের কোতোয়ালি থানার দরমপুর নামের এক জায়গায়। তবে তাঁর দেওয়া এ ঠিকানা সঠিক কি না, র্যাব এখনো তা যাচাই করতে পারেনি।
সংবাদ ব্রিফিংয়ের পর বেলাল সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ভারতের আসামের গুয়াহাটিতে বিয়ে করেছেন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিদের বাংলাদেশ হয়ে ভারতে যাতায়াতে সহায়তা করাই তাঁর কাজ ছিল বলে দাবি করেন বেলাল। তিনি সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে এসব জঙ্গিকে আনা-নেওয়া করতেন। বেলাল আরও বলেন, ১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর কাঠমান্ডুতে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের বিমান ছিনতাইয়ে তিনি জড়িত ছিলেন। এ জন্য তিনি ১০ বছর গুয়াহাটি কারাগারে আটক ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতের বসিরহাটে আরও চারটি মামলা রয়েছে। তাই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েই পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
র্যাব কর্মকর্তারাও বেলাল সম্পর্কে প্রায় একই তথ্য দিয়ে বলেছেন, আট মাস আগে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট কয়েকটি ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, ভারতীয় ওই বিমান ছিনতাইয়ে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিরা জড়িত ছিল। তারা ১৮০ জন যাত্রীসহ বিমানটি অমৃতসর, লাহোর ও দুবাই হয়ে আফগানিস্তানের কান্দাহারে নিয়ে যায়। পরে ভারতের কারাগার থেকে পাকিস্তানের হরকাতুল আনসারের তত্কালীন মহাসচিব মাসুদ আজহার (পরে জইশে মুহাম্মদের প্রতিষ্ঠাতা), আহমেদ ওমর সাইদ শেখ (পরে মার্কিন সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্ল অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) ও আল-উমর মুজাহিদীনের নেতা মুশতাক আহমেদ জারগারকে (ভারতীয় নাগরিক) মুক্তি দিয়ে নিরাপদে আফগানিস্তানে যাওয়ার সুযোগ দিলে ওই বিমান ছিনতাইয়ের অবসান হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া অন্য তিনজনের মধ্যে ইমাদ উদ্দিন ও সাদেক হোসেন আপন ভাই এবং আবু নাসের তাঁদের চাচাতো ভাই। নাসের জঙ্গিদের স্থানীয় গাইড হিসেবে কাজ করতেন। আর ইমাম ও সাদেক অন্য বিভিন্ন কাজে সহায়তা করতেন।
র্যাবের আইন ও জনসংযোগ শাখার কমান্ডার এম সোহায়েল প্রথম আলোকে বলেন, এই তিনজন মূলত পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিদের এ দেশে আশ্রয় পেতে সহযোগিতা করেছেন। ইমাদের বাবা মহিউদ্দিন ঢাকায় পাকিস্তানি জঙ্গিদের একজন বড় আশ্রয়দাতা। তাঁরা ঢাকার নিজস্ব অ্যাপার্টমেন্ট ও চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের বাড়িতে বিভিন্ন সময়ে বিদেশি জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছিলেন।
কমান্ডার এম সোহায়েল জানান, মহিউদ্দিন এখন পলাতক। তিনি আগে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং এখন হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭ নম্বর বড়কুল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। মহিউদ্দিনের ভাই সালাহউদ্দিনও পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনিও পলাতক।
এদিকে একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রেজোয়ান ও বেলালকে কয়েক দিন আগেই একটি গোয়েন্দা সংস্থা আটক করেছিল। তবে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই রোববার অন্য তিনজনসহ তাঁদের গণমাধ্যমের সামনে উপস্থিত করা হয়।
পিটিআইকে উদ্ধৃত করে প্রভাবশালী দ্য হিন্দু পত্রিকা জানিয়েছিল, ২০০০ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনায় বাংলাদেশ সীমান্তের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বেলালকে। ওই খবরে বলা হয়, বেলাল ওই ছিনতাই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী এবং এ ঘটনায় আটক চতুর্থ ব্যক্তি। তাঁকে ওই বছরের জুনে আসাম পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে তাঁর নামে আরও অভিযোগ ছিল। এদিকে সন্ত্রাসবাদবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘সাউথ এশিয়ান টেররিজম পোর্টাল’-এ বলা হয়েছে, বেলাল পুলিশের কাছে স্বীকার করেছিলেন, তিনি আসামের ৪০ জন মুসলিম যুবককে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে হরকাত-উল-মুজাহিদীনের প্রশিক্ষণ নিতে সহায়তা করেন।
আমাদের হাজীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বিএনপির উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান মোল্লা বলেছেন, মহিউদ্দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপিতে যোগ দেন। এখন তিনি বিএনপির বড়কুল ইউনিয়ন শাখার সভাপতি। ঢাকার বসুন্ধরা সিটিতে তাঁর একটি জুতার দোকান আছে। মিরপুর রোডে রয়েছে নিজস্ব বাড়ি। মহিউদ্দিন সম্পর্কে এর বেশি তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন বিএনপির এই নেতা।
এ দিকে গতকাল চেষ্টা করেও মহিউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোনসেট বন্ধ ছিল। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, গতকালও তাঁকে নিজ গ্রামে দেখা গেছে।
খবরের লিংক
3 February 2008
কামরানের ওপর গ্রেনেড হামলা চালানোর কথা স্বীকার করলেন হান্নান
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
সিলেটের মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ওপর গ্রেনেড হামলা চালানোর কথা স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ। হরকাতুল জিহাদের একাংশের নেতা মুফতি হান্নানকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে।
সিআইডি সুত্র জানায়, সিলেট গুলশান হোটেলের সামনে মেয়র কামরানের ওপর হামলা চালাতে গ্রেনেড সরবরাহ করেন মুফতি হান্নান। হরকাতুল জিহাদের ক্যাডার শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপনের হাতে তিনি চারটি গ্রেনেড তুলে দিয়েছিলেন।
সিআইডির আবেদনের পারিপ্রেক্ষিতে গ্রেনেড হামলা মামালায় সিলেটের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত গত বুধবার মুফতি হান্নানের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত তাঁকে সিআইডি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
সিলেটে সিআইডির পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) জুবায়ের আহমেদ জানান, গতকাল শনিবার বিকেল চারটায় মুফতি হান্নানকে সিলেটের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে কারাগারে নেওয়া হয়। তিনি জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেনেড হামলা চালানোর কথা স্বীকার করেন।
২০০৪ সালের ৭ আগস্ট রাতে ওই গ্রেনেড হামলায় ঘটনাস্থলে নিহত হন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং আহত হন ২০ জন।
সিলেটের মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ওপর গ্রেনেড হামলা চালানোর কথা স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ। হরকাতুল জিহাদের একাংশের নেতা মুফতি হান্নানকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে।
সিআইডি সুত্র জানায়, সিলেট গুলশান হোটেলের সামনে মেয়র কামরানের ওপর হামলা চালাতে গ্রেনেড সরবরাহ করেন মুফতি হান্নান। হরকাতুল জিহাদের ক্যাডার শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপনের হাতে তিনি চারটি গ্রেনেড তুলে দিয়েছিলেন।
সিআইডির আবেদনের পারিপ্রেক্ষিতে গ্রেনেড হামলা মামালায় সিলেটের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত গত বুধবার মুফতি হান্নানের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত তাঁকে সিআইডি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
সিলেটে সিআইডির পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) জুবায়ের আহমেদ জানান, গতকাল শনিবার বিকেল চারটায় মুফতি হান্নানকে সিলেটের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে কারাগারে নেওয়া হয়। তিনি জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেনেড হামলা চালানোর কথা স্বীকার করেন।
২০০৪ সালের ৭ আগস্ট রাতে ওই গ্রেনেড হামলায় ঘটনাস্থলে নিহত হন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং আহত হন ২০ জন।
Subscribe to:
Posts (Atom)