Showing posts with label জনকণ্ঠ. Show all posts
Showing posts with label জনকণ্ঠ. Show all posts

7 July 2010

হুমায়ুন আজাদ হত্যা

'এক মুরতাদ ছিল। আমরা তাকে সরিয়ে দিয়েছি। এদেশে সরিয়ে দিলে নানা ঝামেলা হতো। তাই বিদেশে নিয়ে রিয়ে দিয়েছি।' প্রথিতযশা লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের জার্মানিতে মৃত্যুবরণ করার পর এ কথা বলেছিলেন দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী। এর ভিডিও ফুটেজ গোয়েন্দাদের হাতে
গাফফার খান চৌধুরী ॥ "এক মুরতাদ ছিল। আমরা তাকে সরিয়ে দিয়েছি। এ দেশে সরিয়ে দিলে নানা ঝামেলা হতো। তাই বিদেশে নিয়ে সরিয়ে দিয়েছি।" প্রথাবিরোধী প্রথিতযশা বহুমাত্রিক লেখক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ জঙ্গী হামলায় আহত হয়ে জার্মানিতে মৃতু্যবরণ করার পর এ কথা বলেছিল গ্রেফতারকৃত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় জামায়াতের নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। অধ্যাপক আজাদ হত্যার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট। হুমায়ুন আজাদ মারা যাওয়ার পর জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীরা মিষ্টি খেয়ে আনন্দ-উলস্নাস করেছিল। প্রথম মিষ্টিটি খেয়েছিল গ্রেফতারকৃত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। রিমান্ডে নিজের বক্তব্য ও মিষ্টি খাওয়ার দৃশ্যসংবলিত ভিডিও দেখানোর পরমুহূর্তেই ঘেমে অস্থির হয়ে অসুস্থতার ভান করে মাটিতে শুয়ে পড়ে সাঈদী। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৬ বছর পর বহুল আলোচিত হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলা নতুন করে গতি পাচ্ছে।

এ মামলায় সাঈদীকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের একুশে বইমেলায় হুমায়ুন আজাদের উপন্যাস 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' গ্রন্থে ধর্মের লেবাসধারী মৌলবাদীদের আসল চেহারা প্রকাশ পায়। এছাড়া মৌলবাদীদের রক্তলোলুপ মূল চেহারা প্রকাশ পাওয়ায় বেকায়দায় পড়ে জামায়াতে ইসলামী। এর বিহিত করতে জামায়াতের কেন্দ্র্রীয় কমান্ড জরম্নরী সভাও করে। সেই সভাতেই এ বিষয়ে স্থায়ী সমাধানের পথ খোঁজা হয়। ওই সভায় জেএমবি, হুজিসহ বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের শীর্ষনেতারা উপস্থিত ছিল। সভায় অধ্যাপক আজাদকে 'মুরতাদ' হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মুফতি হান্নান বলেছে, মুরতাদের শাসত্মি তাকে কতল করা। এরপরই স্থায়ী সমাধানের পথ হিসেবে অধ্যাপক আজাদকে হত্যার পরিকল্পনা হয়। সে মোতাবেক কাজ করতে থাকে জঙ্গীরা। প্রাথমিক পর্যায়ে অধ্যাপক আজাদকে মানসিকভাবে ঘায়েল করতে বার বার হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু তাতে কোন কাজ না হলে সর্বশেষ সিদ্ধানত্ম মোতাবেক জঙ্গীরা হুমায়ুন আজাদকে হত্যার পরিকল্পনা বাসত্মবায়নে মাঠে নামে। দিনৰণ ঠিক করতে থাকে হামলার। সে মোতাবেক ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রম্নয়ারি একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের জিহাদী ভাইয়েরা (জঙ্গীরা) অধ্যাপক আজাদের ওপর হামলা চালায়। গুরম্নতর আহত অবস্থায় অধ্যাপক আজাদকে উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে পরে তাঁকে সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে পাঠানো হয়। ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট জার্মানির মিউনিখে তাঁর রহস্যজনক মৃতু্য ঘটে।

পরবর্তীতে হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় জেএমবির আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য মিজানুর রহমান শাওনকে ২০০৫ সালের ১৭ এপ্রিল গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে শাওন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। সিএমএম আদালতের বিচারক শফিক আনোয়ারের আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে শাওন বলেছে, রাজধানীর সবুজবাগের ঝিলপারের বাসায় জেএমবির শূরা কমিটির সভায় হুমায়ুন আজাদকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। সভায় ফাঁসিতে মৃতু্য কার্যকর হওয়া শায়খ রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ অনেকেই উপস্থিত ছিল। হত্যার দায়িত্ব দেয়া হয় জেএমবির সামরিক শাখার কমান্ডার আতাউর রহমান সানিকে। হুমায়ুন আজাদকে হত্যার জন্য আতাউর রহমান সানি, শহীদ, শাওন, আব্দুল আউয়াল ও আরও কয়েকজনকে নিয়ে একটি শক্তিশালী স্কোয়াড গঠন করা হয়। সেই স্কোয়াডটিই অধ্যাপক আজাদকে হত্যা করে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যাকা-ের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী সরাসরি জড়িত। হুমায়ুন আজাদ হত্যা পরিকল্পনাটি জামায়াতের জানা ছিল। তাদের পরিকল্পনায়ই হুমায়ুন আজাদকে হত্যা করে জঙ্গীরা। জামায়াতের চূড়ানত্ম নির্দেশের পরই জঙ্গীরা হামলা চালায় হুমায়ুন আজাদের ওপর। দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মুখ থেকেই হুমায়ুন আজাদ হত্যার সঙ্গে জামায়াতের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ পায়।

এছাড়া হুজিপ্রধান মুফতি হান্নানও গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে হুমায়ুন আজাদ হত্যাকা-ের সঙ্গে জামায়াতের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। হত্যাকা-ের পর বহু নাটক সাজানোর চেষ্টা হয়েছিল। ২০০৪ সালের এপ্রিলে রাজধানীর বাসাবোর এক জনসভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের ডাকা হরতাল সফল করতেই পরিকল্পিতভাবে একজন শিৰকের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। হামলার সঙ্গে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ জড়িত বলেও তিনি অভিযোগ করেছিলেন। ওই দিনই মামলার তদনত্মভার চলে যায় সিআইডি পুলিশের কাছে। এর পরদিন থেকেই তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা শুরম্ন হয়। সর্বশেষ ২০০৭ সালের ১৫ নবেম্বর অধ্যাপক আজাদ হত্যাচেষ্টা মামলায় শায়খ আব্দুর রহমান, তার ভাই আতাউর রহমান সানি, আনোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান মিনহাজ ও নূর মোহাম্মদকে আসামি করে সিআইডির ইন্সপেক্টর কাজী আব্দুল মালেক আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের মৃতু্যর পর হুমায়ুন আজাদ সম্পর্কে সাঈদীর দেয়া বক্তব্য ও জামায়াত-শিবির এবং জঙ্গীদের মিষ্টি বিতরণের দৃশ্যসংবলিত ভিডিও দেখানো হয়েছে সাঈদীকে। ভিডিও দেখে সাঈদী বাকরম্নদ্ধ হয়ে যান। এরপর তাৎৰণিক ঘেমে অস্থির সাঈদী অসুস্থতার ভান ধরে শুয়ে পড়ে।