Showing posts with label জিজ্ঞাসাবাদ. Show all posts
Showing posts with label জিজ্ঞাসাবাদ. Show all posts

11 December 2010

রিমান্ডে মুফতি হান্নানের তথ্য: জোট আমলে তাঁকে সহযোগিতা করতেন মাওলানা মুহীউদ্দীন

মাসুদ কার্জন

জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান দাবি করেছেন, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে জোটের শরিক দলের নেতা মাওলানা মুহীউদ্দীন খান তাঁকে নানাভাবে সহায়তা করেন। হান্নানের নামে দায়ের করা শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানোর ক্ষেত্রেও মুহীউদ্দীনের ভূমিকা ছিল। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নান রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছেন বলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র মতে, বানিয়ারচর গির্জায় বোমা হামলাসহ জঙ্গি বিষয়ে নানা তথ্য যাচাই করতে হান্নানকে মালিবাগ সিআইডি সদর দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পাশপাশি তাঁর মদদদাতাদের ব্যাপারে জানার চেষ্টা চলছে। গত মঙ্গলবার গোপালগঞ্জ থেকে মুফতি হান্নান ও তাঁর সহযোগী আরিফ হাসান সুমনকে ঢাকায় সিআইডি সদর দপ্তরে আনা হয়।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দ কালের কণ্ঠকে জানান, শুধু বানিয়ারচর গির্জায় হামলার মামলাই নয়, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন বিষয়েও মুফতি হান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জানতে চাওয়া হচ্ছে তাঁর মদদদাতাদের ব্যাপারেও।

জানা গেছে, হান্নান জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, 'আগের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিভিন্ন বোমা হামলার মামলায় ফেরার হই। পরে চারদলীয় জোট সরকারের সময় আবারও সক্রিয় হয়ে প্রকাশ্যে আসি। ওই জোটের শরিক বিশেষ করে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতাদের কাছ থেকে সহমর্মিতা পাই। তৎকালীন ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা মাসিক মদীনার সম্পাদক মাওলানা মুহীউদ্দীন খান এ ক্ষেত্রে অনেক সহযোগিতা করেছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফেরার অবস্থায় তাঁর সঙ্গে কয়েকবার দেখাও করি। ওই সময় তিনি সরকারের প্রভাবশালী অনেকের কাছে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করে দিয়েছিলেন। কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রেখে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলাটি রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানোর ক্ষেত্রে তিনি অনেক সাহায্য করেছিলেন।'

সিআইডি সূত্রে জানা যায়, বর্তমান ওলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কার্যকরী সভাপতি মুহীউদ্দীন খানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন আফগানিস্তান ফেরত 'যোদ্ধা' মুফতি হান্নান।

হান্নান আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আহত হয়েছিলেন। পরে দেশে ফিরে হরকাতুল জিহাদ গঠনে ভূমিকা রাখেন। জানা যায়, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানভিত্তিক বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। ২১ আগস্টের হামলাসহ চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন গ্রেনেড হামলায় তাঁর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে।

সূত্র জানায়, বানিয়ারচর গির্জায় বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় যথাক্রমে ৭ ও ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয় হান্নান ও তাঁর সহযোগীর। ঈদের আগে এ দুই জঙ্গিকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর অঞ্চলের বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত তা মঞ্জুর করেছিলেন। কিন্তু ওই সময় তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। মঙ্গলবার একই আদালতে হাজির করে হাকিমকে অবহিত করে তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়। সূত্র মতে, মুফতি আবদুল হান্নান ও আরিফ হাসান সুমন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বানিয়ারচর গির্জায় বোমা হামলা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়ায় তাঁদের এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ মামলার অন্য আসামি শনাক্তসহ তথ্য যাচাইয়ে তাঁদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে
২০০১ সালের ৩ জুন সাপ্তাহিক প্রার্থনার দিনে বানিয়ারচর ক্যাথলিক গির্জায় বোমা বিস্ফোরণে ১০ জন নিহত ও অর্ধশত মানুষ আহত হয়। এ ব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা দুটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ১৪ জন করে। সিআইডি প্রায় ১০ বছর ধরে তদন্ত করলেও মূল আসামি শনাক্তসহ তদন্তকাজ শেষ হয়নি।

9 October 2010

যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে কৌশলী ভূমিকার আশ্বাস দিয়েছিল বিএনপি: জিজ্ঞাসাবাদে কামারুজ্জামানের তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

গ্রেপ্তার হওয়ার আগে যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকানোর বিষয় নিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছিল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের। বিএনপি নেতারা প্রথম দিকে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে না হলেও কৌশলী ভূমিকা রাখার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছিলেন। গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কামারুজ্জামান এ তথ্য দিয়েছেন।

কামারুজ্জামানের দেওয়া তথ্যের কথা উল্লেখ করে গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রথম দফায় জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর নানা পরিকল্পনা এঁটেছিল জামায়াত-শিবির। ইসলামী ছাত্রশিবিরকে চাঙ্গা করে তাদের দিয়ে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দায়িত্বও বণ্টন করে দেওয়া হয়েছিল নেতা-কর্মীদের মধ্যে। লক্ষ্য ছিল, যেকোনো প্রকারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানো। তাদের ধারণা ছিল, অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারলেই যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়ায় অন্তত ধীরগতি আসবে। এসব কিছুর মধ্যস্থতাকারী ছিলেন কামারুজ্জামান।

পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার উপপরিদর্শক জিল্লুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, দুই দিনের রিমান্ডে এনে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে কামারুজ্জামান স্বীকার করেছেন, দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ার পরপরই তিনি নিজ উদ্যোগে কিছু পদক্ষেপ নেন। ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠালগ্নে জড়িত থাকার সুবাদে সংগঠনটির ওপর তাঁর আলাদা নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। ওই সুবাদে শিবিরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে করণীয় ঠিক করে দায়িত্বও ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন কামারুজ্জামান। পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা ও আইনজীবীর সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে একাধিকবার কথা হয়েছিল তাঁর। যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে সহযোগিতা ছাড়াও গ্রেপ্তার বা বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হলে আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতার ব্যাপারে কথা হয়েছিল ওই নেতার সঙ্গে।
গোয়েন্দারা জানান, বিএনপির সিনিয়র অনেক নেতাই যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে প্রকাশ্যে না হলেও কৌশলী ভূমিকা রাখার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছিলেন বলে দাবি করেছেন কামারুজ্জামান।

সূত্রমতে, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে কামারুজ্জামানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বিএনপি ছাড়াও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি তাদের সহযোগিতা চেয়েছিলেন কি না। কামারুজ্জামান তা অস্বীকার করেন। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদকারীরা হিযবুত তাহ্রীরের নেতাদের দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও দেখিয়ে আবার জানতে চান, 'কে মিথ্যা বলছেন, ওনারা, না আপনি?' এ কথা শুনে আর কিছু বলেননি কামারুজ্জামান।

সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে জামায়াতের কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কারাগার থেকে নেওয়া হয়। কখনো দুজনকে পাশাপাশি বসিয়ে আবার কখনো আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদকারীরা একপর্যায়ে কাদের মোল্লার কাছে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চান। কাদের মোল্লা দাবি করেন, এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। পরে তাঁকে এ-সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজ ও পত্রিকার কাটিং দেখানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা জানতে চান, এসব লোককে তিনি চেনেন কি না। কাদের মোল্লা নেতিবাচক উত্তর দেন। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা তখন বলেন, যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।

25 July 2010

ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার পরিকল্পনা ছিল শিবিরের, রিমান্ডে নেতাদের দেওয়া তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে বড় ধরনের নাশকতার প্রস্তুতি নিয়েছে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। নাশকতার পরিকল্পনার মধ্যে আছে মহাসড়ক অবরোধ করে হাজার পাঁচেক গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে এবং রেললাইনের স্লিপার তুলে ফেলে অন্তত এক মাসের জন্য ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও অন্যান্য স্থানের যোগাযোগব্যবস্থা অচল করে দেওয়া। এ জন্য অস্ত্র, বোমা ও বিস্ফোরক সংগ্রহ করেছেন শিবিরের নেতা-কর্মীরা। গত এক সপ্তাহে ঢাকা-রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা শিবির নেতা-কর্মীরা জিজ্ঞাসাবাদে এ রকম তথ্য দিয়েছেন বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র দাবি করেছে।

সূত্র জানায়, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১০ হাজার লোক জড়ো করে যানবাহন আটকে পাঁচ হাজার গাড়ির চাবি কেড়ে নেওয়া এবং রেললাইনের স্লিপার উপড়ে ফেলাসহ নানা পরিকল্পনার কথা ফাঁস করেছে আটক শিবির ক্যাডাররা। শিবিরের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক মিয়া মুজাহিদ জিজ্ঞাসাবাদে জানান, নাশকতার কাজে অর্থ সহায়তা করছেন মিশন গ্রুপের পরিচালক মীর সাখাওয়াত। এ ছাড়া রিমান্ডে থাকা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদও জিজ্ঞাসাবাদে শিবিরের পরিকল্পনা সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছেন। তিনি শিবিরের অনেক ক্যাডারের নামও প্রকাশ করেছেন বলে সূত্রটি দাবি করেছে।

পুলিশ জানায়, দেশে হরতাল আহ্বান করার পরিকল্পনাও ছিল শিবিরের। শিবির নেতা মিয়া মুজাহিদ গোয়েন্দাদের জানান, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সড়ক অবরোধ করে গাড়ির চাবি কেড়ে নেওয়ার মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। একই সঙ্গে ঢাকায় প্রবেশের অন্য পথগুলোতেও অবরোধের পরিকল্পনা ছিল। এমনকি রেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য কিছু জায়গায় লাইন থেকে স্লিপার তুলে ফেলার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ নাশকতার পরিকল্পনা সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছেন। পরে পুলিশ অভিযানে নেমে শিবিরের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছে অনেক অবৈধ অস্ত্র আছে বলে গ্রেপ্তার হওয়া শিবির ক্যাডাররা স্বীকার করেছে। একটি অস্ত্র উদ্ধারও করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কিছু বোমা তারা নষ্ট করে ফেলেছে বলে দাবি করলেও তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, তাদের সর্বশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া শিবির ক্যাডার আবদুল্লাহ ওমর নাসির ওরফে শাহাদত হোসেনের কাছ থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার হয়। ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল শুক্রবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস-সংলগ্ন কাজলা এলাকা থেকে শাহাদতকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই রাতেই ডিবির একটি দল রাজধানীর ৪৩/এ দক্ষিণ সায়েদাবাদে শিবিরের গোপন অফিসে অভিযান চালায়। ছয়তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় শিবিরের অফিস কাম মেসের ড্রয়িং রুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। পরে টিভি-বাক্সের ভেতর থেকে ম্যাগাজিনসহ একটি নাইন এমএম পিস্তল উদ্ধার করা হয়। শাহাদত নিজে ঢাকায় এসে অস্ত্রটি দলের এক নেতার কাছে রেখেছিল বলে পুলিশকে তথ্য দেয়। ওই মেস থেকেই ফরিদুল কবীর নামের আরেক শিবির ক্যাডারকেও আটক করে পুলিশ।
ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার এস এম রফিকুল ইসলাম জানান, শাহাদত ভয়ংকর এক সন্ত্রাসী। উদ্ধার করা অস্ত্রটি সে-ই রাজশাহী থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে।

গোয়েন্দা পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুলনার সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ারের ভাই শিবিরের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক মিয়া মুজাহিদকে এর আগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মিয়া মুজাহিদ নাশকতার পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম। গোয়েন্দাদের তিনি জানান, নাশকতার কাজে অর্থ সহায়তা করেছেন মিশন গ্রুপের উদ্যোক্তা পরিচালক মীর সাখাওয়াত। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় মীর সাখাওয়াত এবং সাবেক শিবির নেতা শাকিল আহমেদ ও আবদুল্লাহ আল মাসুমকে। রিমান্ডে নিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দা পুলিশ।

22 July 2010

ভাগ্নে শহীদ আবারও তিন দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) বর্তমান সাংগঠনিক প্রধান ভাগ্নে শহীদ ওরফে আনোয়ার আলম খোকাকে তৃতীয়বারের মতো তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে বগুড়া বিচার বিভাগীয় আদালতে হাজির করে পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড চাইলে বিচারক মো. হাসানুজ্জামান তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাকে তিন দফায় মোট ১১ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হলো।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. আবদুর রশীদ সরকার বলেন, গত তিন দিনের রিমান্ডে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য না পাওয়ায় আবারও তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ভাগ্নে শহীদকে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় নেওয়ার কথা রয়েছে। এ জন্য আবারও তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রথম দফায় অস্ত্র মামলায় বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশ ১৪ জুলাই ভাগ্নে শহীদকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৬ জুলাই বগুড়া থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১৮ জুলাই আবারও ভাগ্নে শহীদকে বগুড়ায় নিয়ে আসা হয়। এরপর ১৯ জুলাই একই মামলায় দ্বিতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। গতকাল আবারও একই মামলায় আরো তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হলো। পুলিশ সদর দপ্তরের বিশেষ গোয়েন্দা শাখা ও বগুড়া জেলা পুলিশ ১২ জুলাই সন্ধ্যায় যৌথ অভিযান চালিয়ে বগুড়া-রংপুর বাইপাস সড়কের ছিলিমপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাস থেকে একটি পিস্তল ও তিনটি গুলিসহ ভাগ্নে শহীদকে গ্রেপ্তার করে।

কালিহাতীতে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার ৭
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পটল গ্রাম থেকে গতকাল জঙ্গি সন্দেহে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন গাইবান্ধার তুলসীঘাটের হাফেজ ইসমাইল, একই এলাকার নূরুন্নবী শেখ, হজরত আলী, গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের আবদুল করিম, দুর্গাপুরের আজিজুর রহমান, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম ও টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার পৌলী গ্রামের শাহাবুদ্দীন।

20 July 2010

জিজ্ঞাসাবাদে জামায়াত নেতারা: তারেক দুর্নীতিবাজ বলেই জোটের আজ এ পরিণতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

তারেক জিয়া চরম দুর্নীতিবাজ, তাঁর জন্যই বিএনপি-জামায়াত জোটের এই পরিণতি। তারেক বিএনপির কাণ্ডারি হলে ভবিষ্যতে এই দলটির সঙ্গে রাজনীতির মাঠে থাকা জামায়াতের জন্য হয়তো অসম্ভব হবে। রিমান্ডে থাকা জামায়াত নেতারা বিএনপির সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ককে এভাবেই মূল্যায়ন করেছেন বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র জানায়, বিএনপি ও জামায়াত দুটি দুই মেরুর দল হলেও সম্পর্ক কিভাবে হলো তা জামায়াত নেতাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে জামায়াত নেতারা বলেন, একটি পর্যায় পর্যন্ত গিয়ে আগানো সম্ভব হচ্ছিল না। অনেক জায়গায় রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোও কঠিন ছিল তাদের জন্য। এসব কাটিয়ে উঠতে এবং রাজনৈতিকভাবে জামায়াতের অবস্থান শক্তিশালী করতেই বিএনপির সঙ্গে জোট বাধা হয়। জামায়াত নেতারা আরো বলেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই জামায়াতকে প্রকাশ্যে রাজনীতির সুযোগ দিয়েছিলেন। তাই তাঁরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। পরে জামায়াত নিজের মতো করে চলার চেষ্টা করে।

সূত্রমতে, বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের ফলাফল মূল্যায়ন করতে গিয়ে জামায়াত নেতারা বলেছেন, লাভ-ক্ষতি দুটোই হয়েছে। লাভ হলো তাঁরা সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়েছেন। আর ক্ষতি হলো, বিএনপির ব্যাপক দুর্নীতির কারণে জামায়াতের গায়ে গন্ধ লেগেছে। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা জানতে চান, বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে সরকারি চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে জামায়াত না বিএনপি লাভবান বেশি। তবে এই প্রশ্নের জবাবে তাঁরা চুপ করে থাকেন। জিজ্ঞাসাবাদকারীদের একজন এ সময় বলেন, তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায় জামায়াত লাভবান বেশি। 'এ ছাড়া আপনাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে।' তার পর নেতারা কোনো উত্তর দেননি।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জিজ্ঞাসাবাদকালে গোয়েন্দাদের কাছে দাবি করেন,
'জামায়াতে যোগদানের পর আমার ভাবমূর্তি খারাপ হয়েছে। একসময় বিশ্বের ৫০টি দেশে ওয়াজ করেছি। সৌদি বাদশাহর অতিথি হয়ে কয়েকবার সৌদি আরব সফর করেছি। আগে দেশের কোথাও ওয়াজ হলে এক এক বছর আগে লোকজন আমাকে বুকিং দিত। আর এখন ওয়াজ করতে গেলে লোকজন দা-লাঠি নিয়ে তাড়া করে। ওয়াজ মাহফিলের মঞ্চে ভাঙচুর চালায়।'

সাঈদীর দেওয়া এই বক্তব্য সম্পর্কে নিজামী ও মুজাহিদ জানান, সাঈদী অনেক আগে থেকেই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। দলের নেতারা ছাড়া অন্য কেউ তা জানত না। '৮০ সালের দিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতা করে খ্যাতি অর্জন করে 'ইত্তেহাদুল উম্মাহ' নামের একটি সংগঠনের আড়ালে সাঈদী জামায়াতের হয়ে কাজ করতেন। তখন তিনি জামায়াতের 'রুকন' ছিলেন এবং '৮৯ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে বহাল ছিলেন। কিন্তু কখনো তাঁকে প্রকাশ্য রাজনীতিতে ডাকা হতো না। চারদিকে নামডাক বেড়ে যাওয়ার পর ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন সাঈদীকে তাদের দলে টানার চেষ্টা করে। তখন সাঈদীকে জামায়াতের 'শুরা সদস্য' করে প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আনা হয়।

সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া ঠেকাতে জামায়াত বিশেষ একটি টিমও গঠন করেছিল। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি তাদের সঙ্গে না থাকায় তিন নেতা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিন জামায়াত নেতার মধ্যে নিজামী ও সাঈদী মানসিকভাবে খুবই দুর্বল প্রকৃতির বলেও জিজ্ঞাসাবাদকারী সূত্রে জানা গেছে।

19 July 2010

আনোয়ারুল যেভাবে ভাগ্নে শহীদ

মাসুদ কার্জন

'জিহাদের প্রথম চেতনা লাভ করি ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার চৌরঙ্গি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে পড়াকালে। শিবির থেকেই জিহাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হই। ওই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করি। বাবা আবদুল কাইয়ুম স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। ১৯৯৮ সালে দূরসম্পর্কের এক মামার কাছ থেকে জেএমবিতে যোগ দেওয়ার ডাক পাই। প্রথমে গায়েরি এহসার, পরে ২০০১ সালে জেএমবির এহসার সদস্য পদে পদোন্নতি পাই। চলে যাই রংপুর শহরে। ওইখানে কখনো চা বিক্রেতা বা ফেরিওয়ালা আবার কখনো সাইকেল মেকারের ছদ্মবেশ নিয়ে সংগঠনের জন্য কাজ করেছি। সর্বশেষ ২০০৯ সালে জেএমবির শুরা সদস্য ও উত্তরাঞ্চলের দায়িত্ব পাই।'

জেএমবিতে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এভাবেই নিজের সম্পর্কে বলে জেএমবির সামরিক বা অপারেশনাল কমান্ডার আনোয়ারুল আলম ওরফে নাজমুল ওরফে ভাগ্নে শহীদ।

বাবার দেওয়া নাম আনোয়ারুল থেকে ভাগ্নে শহীদ হয়ে ওঠার কাহিনী, বাংলা ভাইয়ের সংস্পর্শে আসা, ক্রমে ভয়ংকর হয়ে ওঠার কাহিনী ছাড়াও সর্বশেষ জেএমবির আমির সাইদুরের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার নানা কাহিনী বর্ণনা করেছে নাজমুল ওরফে ভাগ্নে শহীদ। বগুড়া থেকে ঢাকায় আনার পর মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে জেএমবির আমির সাইদুর রহমান ও জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় তিন নেতার মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। রবিবার সকালে আবার তাকে বগুড়ায় পাঠানো হয়। বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আবদুর রশিদ সরকার জানান, ভাগ্নে শহীদকে ঢাকার কোনো মামলার জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে। পরে আবারও ঢাকায় পাঠানো হবে তাকে।

সূত্র জানায়, আনোয়ারুল আলম বাদ দিয়ে তার নাম কেন ভাগ্নে শহীদ হয়_এ রকম প্রশ্নের জবাবে তার দাবি, প্রথম দাওয়াত আসে জেএমবির তৎকালীন এহসার সদস্য মামা তরিকুলের মাধ্যমে। ফলে জেএমবির পুরনো সদস্যরা তাকে ভাগ্নে বলে সম্বোধন করত। পরে বাংলা ভাইও তাকে ভাগ্নে বলে সম্বোধন করত। ফলে আনোয়ারুল পাল্টে ভাগ্নে শহীদ বনে যায় সে। এমনকি জেএমবির আমির সাইদুর রহমান তার আপন ভায়রা হলেও তিনিও তাকে মাঝেমধ্যে ভাগ্নে শহীদ বলে সম্বোধন করতেন। শহীদের দাবি, দীর্ঘদিন তার মামা তরিকুলের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। তার ধারণা, তরিকুল দেশে নেই। থাকলেও জেএমবিতে সক্রিয় নয়।
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ভাগ্নে শহীদ জেএমবির মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও সাহসী বলে পরিচিত। সাইদুর দাওয়াতি কার্যক্রমে বিশ্বাসী হলেও শহীদ অপারেশনাল কর্মকান্ডে বিশ্বাসী। সাহসের কারণেই বাংলা ভাইয়ের কাছাকাছি আসা বা জেএমবিতে তার উত্থান হয় দ্রুত।

২০০১ সালে এহসার সদস্য হওয়ার পর প্রথমে রংপুর জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। ২০০২ সালে ওই শহরের আলমনগরের একটি মেসে বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় তার। ১০ জন এহসার সদস্যের উদ্দেশে বাংলা ভাই বক্তৃতা করেছিল সেখানে। কিছুদিন পর তার দায়িত্ব পড়ে দিনাজপুর জেলায়। ২০০৩ সালে পার্বতীপুর থানার পুলিশ জেএমবির কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। ওই সময় বাংলা ভাই, শায়খ আবদুর রহমানসহ জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতারা সেখানে যায়। পুলিশের হাতে আটক জেএমবির সদস্যদের জামিন করানোর দায়িত্ব পড়ে ভাগ্নে শহীদের ওপর। তাকে দেওয়া দায়িত্ব পালনে খুশি হয়ে বাংলা ভাই তাকে সঙ্গে নিয়ে নেয়। ২০০৪ সালে রাজশাহীর বাগমারায় বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে কথিত সর্বহারানিধন শুরু হলেও পুরো সময়টি সে বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে ছিল। ওই সময় বাংলা ভাইয়ের স্পোকসম্যানের দায়িত্ব পালন করেছিল সে। এ ছাড়া বাগমারার 'হামিরকুৎসা' ক্যাম্পের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। বাগমারায় গাছে ঝুলিয়ে মানুষ হত্যাসহ সব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও বাংলা ভাইয়ের সহযোগী হিসেবে সে কাজ করে। এর মধ্যে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে টাঙ্গাইলে ব্র্যাক অফিস ও পাবনার চাটমোহরে গ্রামীণ ব্যাংকের অফিসে ডাকাতিতে অংশ নেয় সে।

বাংলা ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে কথা বা বক্তৃতা ছাড়াও রাজশাহী শহরের আলোচিত মোটরসাইকেল শোডাউনে উপস্থিত থেকে ওই ঘটনার পুরো সমন্বয় করেছিল ভাগ্নে শহীদ। তরিকুলের ভাগ্নের সাহসিকতার জন্য বাংলা ভাইও তাকে আদর করে ভাগ্নে বলে ডাকত। শহীদ নামটিও বাংলা ভাইয়ের দেওয়া। পরিস্থিতি খারাপ হলে রাজশাহী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আসে তারা।

বাংলা ভাই, শায়খ রহমানসহ ছয় জঙ্গির ফাঁসির পর ভাগ্নে শহীদের পরিচয় ঘটে সাইদুর রহমানের সঙ্গে। সাইদুর তার সাহস দেখে ২০০৯ সালে শুরা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেন। এ ছাড়া সাইদুর তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী লুৎফুন্নাহারের ছোট বোনকে ভাগ্নে শহীদের সঙ্গে বিয়ে দেন। ভাগ্নে শহীদ বরাবর আন্ডারগ্রাউন্ড জীবন যাপন করলেও ৩০ বছর বয়সেই তিনটি বিয়ে করে। তিন স্ত্রীর তিনটি সন্তানও আছে।

বোমা বা বিস্ফোরক সম্পর্কে কিভাবে ধারণা হলো জানতে চাইলে সে দাবি করে, রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় একটি মেসে মোল্লা ওমরের (কুমিল্লায় নিহত) কাছে বোমা বানানোর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ হয়েছিল তার। ২০০৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করে সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে সে। তার দাবি, ঘটনার আগে সংগঠনের কাজে দিনাজপুরে ছিল সে। আতাউর রহমান সানির ফোন পেয়ে সে ঢাকায় আসে। রাতে এসে খিলগাঁও জেএমবির একটি মেসে উঠে। ওই রাতেই সানিই প্রথম হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার পরিকল্পনার কথা তাকে জানায়। সকালে নামাজ শেষে বাজার থেকে রামদা কিনে আনে তারা। আগে থেকেই ছোট কয়েকটি বোমা বানানো ছিল। পুরো ঘটনার তদারকি করেছিল সানি। সন্ধ্যার আগে থেকেই তারা বাংলা একাডেমী চত্বরে গিয়ে থাকে। ড. হুমায়ুন আজাদ কোথায় বসেন, কখন বের হন_এসব বিষয় সানি আগেই রেকি করে রেখেছিল। ঘটনার দিন শুধু দায়িত্ব ছিল হুমায়ুন আজাদ কখন বের হন তা অনুসরণ করা। ওই সময় সানি ছাড়াও তার সঙ্গে নরুল্লাহ, শামীম, মিনহাজও উপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে শামীমই প্রথম হুমায়ুন আজাদকে আঘাত করে। তার কাজ ছিল শুধু বোমা ফাটানো।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ভাগ্নে শহীদ ময়মনসিংহে চারটি সিনেমা হলে একযোগে বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গেও জড়িত। জেএমবির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ভাগ্নে শহীদ দাবি করে, বর্তমানে কোনো শুরা কমিটি নেই তাদের। মাত্র দুজন শুরা সদস্য বাইরে আছেন। এর মধ্যে মাহফুজ বা হাতকাটা মাহফুজকে সংগঠনবিরোধী কাজে জড়িত থাকায় সাইদুর রহমান আগেই পদাবনতি দিয়েছিলেন। শহীদের ধারণা, মাহফুজ দেশে নেই। এ ছাড়া আরেক সদস্য শাহেদ মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। দাওয়াতি কার্যক্রম না চালানোয় সদস্যসংখ্যাও কমে আসছে।

ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, সাইদুরের ধারণা, তার গ্রেপ্তারের পেছনে ভাগ্নে শহীদের হাত ছিল। এ ছাড়া গত ছয় মাস উত্তরাঞ্চল থেকে আসা চাঁদার টাকা তাকে দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল শহীদ। আমির হওয়ার ইচ্ছা নিয়েই শহীদ এসব করেছিল। এসব নিয়ে তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। শনিবার রাতে সাইদুর ও ভাগ্নে শহীদকে মুখোমুখি করা হলে ভাগ্নে শহীদকে উদ্দেশ করে সাইদুর বলেন, 'তোমার কাছে যা আছে ওনাদের দিয়ে দাও।' উত্তরে শহীদ বলে, 'আপনার নির্দেশে আগেই তো সব ফেলে দিয়েছি।' এ সময় ভাগ্নে শহীদকে সাইদুর বলেন, 'তোমার তো ইলেম নাই, আমির হবা কিভাবে?' এ কথা শুনে ভাগ্নে শহীদ বলে, 'এসব ভুল ধারণা_আপনি এখনো দলের আমির।

18 July 2010

দুয়ারীপাড়ার মামলায় রিমান্ডে নিজামী

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজধানীর পল্লবীর দুয়ারীপাড়ার গণহত্যার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রমনা থানায় দায়ের হওয়া ফারুক হোসেন হত্যা মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল শনিবার বিকেলে নিজামীকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর গণহত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মো. নূরুল ইসলাম সিদ্দিকী তাঁকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানালে মহানগর হাকিম মোয়াজ্জেম হোসেন পাঁচ দিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।
এ ছাড়া হাকিম শামীমা পারভীন উত্তরা থানার মামলায় গত ৩০ জুন মঞ্জুর হওয়া তিন দিনের রিমান্ডে নিজামীকে নেওয়ার ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছেন। উত্তরা থানায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গণহত্যা মামলায় জামায়াত আমিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এদিকে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে জেএমবির শীর্ষ নেতা সাইদুর রহমানের পাশাপাশি শুক্রবার রাতে জেএমবির বর্তমান প্রধান ভাগ্নে শহীদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সাইদুরের মুখোমুখি করার পর ভাগ্নে শহীদ জানায়, ঢাকায় বোমারু মিজান গ্রেপ্তার হলে সে নিজের কাছে থাকা বিস্ফোরক ও বোমা পানিতে ফেলে দেয়। মুজাহিদের মুখোমুখি করা হলে ভাগ্নে শহীদ দাবি করে, জামায়াত নেতাদের নির্দেশেই সে জেএমবিতে যোগ দিয়েছিল। নিজেকে শিবিরের সাবেক বড় নেতা দাবি করে শহীদ বলে, বাংলা ভাইকে বাঁচাতে নিজামী বলেছিলেন, বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি। এর পর দিনই শহীদ জামায়াত নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিল।

জেএমবি নেতা সাইদুর রহমানকে গতকাল আরো তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। কদমতলী থানায় সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে নতুন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। এর আগে একই মামলায় ১২ জুলাই তাকে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।

17 July 2010

জামায়াত নেতাদের মুখোমুখি করা হবে ভাগ্নে শহীদকে, গণহত্যার কথা জানতে সিআইডি কর্মকর্তারা আলোকদীতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের ১২ জন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ছাড়াও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবীদের ওপর হামলার পরিকল্পনা ছিল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির। সেই সঙ্গে উত্তরাঞ্চলে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্ননা ছিল তাদের। জামায়াত ইসলামীর নেতারা এসব ঘটনায় নেপথ্য ভূমিকা পালন করছিলেন। জেএমবির সামরিক কমান্ডার গ্রেপ্তারকৃত ভাগ্নে শহীদ এসব তথ্য দিয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করতে গতকাল শুক্রবার তাকে ঢাকায় আনা হয়। মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে রিমান্ডে থাকা জামায়াতের শীর্ষ তিন নেতা ও জেএমবির আমির সাইদুরের মুখোমুখি করা হবে ভাগ্নে শহীদকে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার আগে বগুড়া থেকে ঢাকায় আনার পর ভাগ্নে শহীদকে আলাদাভাবে একদফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে তার দেওয়া বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। গত রাতেই তাকে জেএমবি ও জামায়াত নেতাদের মুখোমুখি করার কথা।

এদিকে ঢাকার পল্লবীর দুয়ারীপাড়ার আলোকদী গ্রামে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির একটি দল গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সিআইডির চার সদস্যের দলটি ছয় ঘণ্টার বেশি সময় ওই গ্রামে অবস্থান করে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক নুরুল ইসলাম সিদ্দিকী ছাড়াও বিশেষ পুলিশ সুপার শেখ মারুফ হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিউর রহমানসহ চারজন সেখানে যান। মতিউর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, বিকেল ৪টায় তাঁরা ঘটনাস্থল যান। কমপক্ষে ২০ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা।

অপর একটি সূত্র জানায়, গণহত্যার ঘটনায় তদন্তকারী দল ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দেয়। অনেক প্রত্যক্ষদর্শী তদন্তকারীদের কাছে ঘটনার বর্ণনার পাশাপাশি আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার আগ্রহও প্রকাশ করেন। তদন্তকারীদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অনেকে কেঁদেও ফেলেন। কেউ কেউ আবার নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামানদের ফাঁসির দাবিতে স্লোগানও দেন।

এই মামলায় রিমান্ডে থাকা জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের ভূমিকা, তাঁদের দলীয় পদবি ইত্যাদি নানা বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে। সিআইডি কর্মকর্তারা জামায়াতের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত দৈনিক সংগ্রামের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রকাশিত বেশ কিছু কপি সংগ্রহ করেছেন।

সাইদুর বনাম জামায়াত নেতারা : গোয়েন্দা কার্যালয়ে জেএমবির আমির সাইদুর ও জামায়াতের তিন নেতার মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। সূত্র জানায়, সাইদুর গতকালও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদকে উদ্দেশ করে বলেন, তিনি ইসলামী আন্দোলন করেন কিন্তু ইসলামী কোনো শিক্ষা নেই। সাইদুর দাবি করেন, নবী করিম (সা.) সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। কিন্তু জামায়াত নেতারা আলিশান বাড়ি ও গাড়িতে চড়েন। এ কথা শুনে মুজাহিদ সাইদুরের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, এখন উটের যুগ নেই, তাই গাড়িতে ঘুরতে হয়। মুজাহিদ দাবি করেন, তিনি যে গাড়িটি ব্যবহার করেন, তা পার্টির দেওয়া। আর পার্টি থেকে প্রতি মাসে তাঁকে চলার জন্য ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

একইভাবে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর কাছেও রাজধানীর অভিজাত এলাকায় তাঁর বাড়ির কাহিনী জানতে চান সাইদুর। আবার জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে উদ্দেশ্য করে সাইদুর বলেন,
'আপনার হাটবাজারে ক্যানভাস করার কথা কেউ ভোলেনি। আপনি সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী। এখন নিজের মতো করে ইসলামের ব্যাখা দিয়ে চলছেন।'

বগুড়া পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ভাগ্নে শহীদ : জেএমবি ১০ বছরের সাংগঠনিক পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া ও বাগমারা (রাজশাহী) প্রতিনিধি | তারিখ: ১৭-০৭-২০১০

১০ বছরের সাংগঠনিক পরিকল্পনা নিয়ে তাঁরা মাঠে নেমেছেন। ওই পরিকল্পনায় নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ—জেএমবির ভেঙে পড়া সাংগঠনিক কমান্ড পুনর্গঠনের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তাঁরা একটি রাজনৈতিক দলের কাছে সহায়তা চেয়েছিলেন। কিন্তু কৌশলগত কারণে দলটি তাঁদের ফিরিয়ে দেয়। জেএমবির ভারপ্রাপ্ত আমির আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ বগুড়ায় রিমান্ড চলাকালে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানান।

জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, শায়খ আবদুর রহমান, বাংলা ভাইসহ জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর মাওলানা সাইদুর রহমান দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেন। তাঁর গ্রেপ্তারের পর ভাগ্নে শহীদও একই পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে থাকেন। এ জন্য তাঁরা একটি রাজনৈতিক দলের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু কৌশলগত কারণে দলটি তাঁদের ফিরিয়ে দেয়।

বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) হুমায়ুন কবির বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ভাগ্নে শহীদের দেওয়া তথ্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ভাগ্নে শহীদকে গত সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর কাছ থেকে তিনটি গুলিসহ একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি মামলা হয়েছে। এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত বুধবার তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আবদুর রশিদ জানান, জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিনে ভাগ্নে শহীদ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিলেও এখন আর মুখ খুলছেন না তিনি। এসএসসি পাস ভাগ্নে শহীদ ইসলামি ও জিহাদি বই ছাড়াও প্রচুর বই পড়েছে।

এসপি হুমায়ুন কবির জানান, ভাগ্নে শহীদের বিরুদ্ধে কতগুলো মামলা রয়েছে, তা জানার জন্য সারা দেশের থানাগুলোতে জরুরি বেতার বার্তা পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, ময়মনসিংহে সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ মামলাসহ সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে চারটি মামলার তথ্য জানা গেছে। মামলাগুলো ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।

এসপি আরও জানান, দলের সাংগঠনিক প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর ভাগ্নে শহীদ সব নেতাকে কিছুদিন আত্মগোপনে থেকে জনগণের সঙ্গে মিশে সদস্য সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর তিনি নিজেও আত্মগোপনের জন্য ঢাকায় চলে যান। কিছুদিন এক আত্মীয়র বাড়িতে আত্মগোপন করে থাকেন তিনি। সেখান থেকে দিনাজপুর ফেরার পথে ভাগ্নে শহীদ বগুড়ায় গ্রেপ্তার হন।

বাগমারার মূর্তিমান আতঙ্ক ভাগ্নে শহীদ: ‘ভাগ্নে শহীদ, কিলার মোস্তাকসহ অন্য জঙ্গিরা আমাকে বাড়ি থেকে ধরে টর্চার সেলে (নির্যাতনকেন্দ্র) নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আমার পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে নির্যাতন চালায় শহীদ। আমার হাতের সব আঙুল থেঁতলে দেওয়া হয়। আমি তাঁর পায়ে ধরে বলি, স্যার, আমি সর্বহারা নই, কেউ আপনাদের মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। কিন্তু তার পরও আমাকে রেহাই দেয়নি শহীদ।’ কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই ভাগ্নে শহীদের নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন রাজশাহীর বাগমারার হাসানপুরের ফজলুর রহমান।

এলাকাবাসী জানান, ভাগ্নে শহীদ বাগমারায় ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। তাঁর গ্রেপ্তারের খবরে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে স্বস্তি নেমে আসে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভাগ্নে শহীদ সব সময় বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। তাঁদের মতে, জঙ্গি আতাউর রহমান সানি ও জামাই আবদুল আওয়ালের চেয়েও বেশি ভয়ংকর ছিলেন ভাগ্নে শহীদ।
আবদুস সালাম নামের নির্যাতিত এক ব্যক্তি বলেন, শহীদের নেতৃত্বে হামিরকুৎসা নির্যাতনকেন্দ্রে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে।

কালুপাড়ার রফিকুল ইসলাম বলেন, ভাগ্নে শহীদের নেতৃত্বে তাঁকে বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়। টর্চার সেলে নিয়ে ভাগ্নে শহীদ তাঁর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালান। নির্যাতন চালিয়ে তাঁকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, বাংলা ভাই বাগমারা থেকে চলে যাওয়ার পর শহীদ দলের হাল ধরেন। এলাকার ক্যাডারদের সঙ্গে তিনিই নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জেএমবি নিষিদ্ধ হওয়ার পরও শহীদের বাগমারায় যাতায়াত ছিল। ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলার আগে বাগমারায় যে গোপন বৈঠক হয়েছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন শহীদ। তাঁরা এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও তাঁদের দপ্তরে পাঠিয়েছিলেন।

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুণ অর রশিদ জানান, ওই সময় ভাগ্নে শহীদের কী ধরনের তৎপরতা ছিল, তা তাঁর জানা নেই। কারণ তিনি ওই সময় এ থানায় ছিলেন না। তবে ভাগ্নে শহীদের নামে থানায় কোনো মামলা বা অভিযোগ রয়েছে কি না, তা খোঁজ করে দেখা হচ্ছে।

16 July 2010

মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ চলছে: জঙ্গি হামলায় জামায়াতের হাত

নিজস্ব প্রতিবেদক


'মুখে ইসলামী শাসনের কথা বলেন! ইসলামের কোথায় সুদের কথা বলা আছে? কিন্তু আপনি সুদ নিতে ও দিতে উৎসাহিত করেছেন। সরকারের শিল্প ও কৃষিমন্ত্রী থাকাকালে আপনি কি একবারের জন্যও সুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন? এর পরও বলবেন আপনি ইসলামী শাসনের পক্ষে?'
মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের সময় এভাবেই জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে ঘায়েল করলেন জেএমবির আমির সাইদুর রহমান। মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে জেএমবির সাইদুর, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের শীর্ষ এক কর্মকর্তা গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, দু-এক দিনের মধ্যে পুলিশের ওপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় কদমতলী থানায় দায়েরকৃত মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখাতে আদালতে আবেদন করা হবে। এ ছাড়া গত ২৩ মে দয়াগঞ্জ মোড়ে পুলিশের ওপর আরেকটি জঙ্গি হামলার ঘটনায় আসামি হবেন জামায়াত নেতারা। জঙ্গিদের এসব হামলার ঘটনায় জামায়াত নেতাদের সম্পৃক্ততা মিলেছে। জেএমবি-জামায়াত কানেকশন নিশ্চিত হওয়ার পরই এ সিদ্বান্ত নেওয়া হচ্ছে।

জামায়াত নেতারা যে জেএমবি জঙ্গিদের মদদদাতা, তা অনেকাংশে পরিষ্কার। এর অনেক তথ্যপ্রমাণও তাদের হাতে আছে। নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী ছাড়াও জঙ্গি ঘটনায় কামারুজ্জামান আসামি হবেন। জামায়াত বা অন্য কারো নাম এলে তাঁদেরও আসামি করা হবে। এ ছাড়া বগুড়া থেকে গ্রেপ্তারকৃত জেএমবির আরেক নেতা ভাগ্নে শহীদকেও জামায়াত নেতাদের মুখোমুখি করা হতে পারে।

অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের সময় পল্লবীর দুয়ারিপাড়ায় আলোকদি গ্রামে গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগি্নসংযোগের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটির তদন্ত এবং আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ১০ সদস্যের বিশেষ একটি সেল গঠন করেছে। রিমান্ডে থাকা দুই আসামি জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও পাওয়া গেছে বলে সিআইডি সূত্র দাবি করেছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শেখ মো. মারুফ হাসান কালের কণ্ঠকে জানান, গ্রেপ্তারকৃত কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

জেএমবি ও জামায়াত নেতাদের মুখোমুখি : পুলিশের সূত্র জানায়, জামায়াত নেতাদের সঙ্গে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে সাইদুর চাঞ্চল্যকর আরো অনেক তথ্য ফাঁস করেছেন। বুধবার রাতে একপর্যায়ে নিজামী সাইদুরকে উদ্দেশে করে বলেন, 'আপনি বোমা মেরে ইসলামী আন্দোলনের ক্ষতি করেছেন।' তা শুনে সাইদুর বলেন, 'এসব বলবেন না। ২০০৬ সালে আল-ফালাহ গলিতে ডেকে এনেছিলেন কেন? আপনার স্বাক্ষরিত চিঠি পেয়ে আল-ফালাহ গলিতে এসেছিলাম। জামায়াতের সিদ্ধান্তেই জেএমবির আমির হয়েছিলাম। তা কি ভুলে গেছেন?'

এসব শুনে মতিউর রহমান নিজামী চুপ মেরে যান। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদকারীরা নিজামীর কাছে সাইদুরের দেওয়া এই বক্তব্যের সত্যতা জানতে চান। নিজামী বলেন, এসব কিছুই তাঁর মনে নেই। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা তখন বলেন, 'ঠিক আছে স্যার, মনে পড়লে পরে শোনা যাবে।'

জিজ্ঞাসাবাদকারীরা এ পর্যায়ে বলেন, মন্ত্রী তো মুজাহিদ সাহেবও ছিলেন। তখন সাইদুর মুজাহিদকে উদ্দেশে করে বলেন, 'আপনি তো সমাজকল্যাণমন্ত্রী ছিলেন। দেশের পতিতালয়গুলো আপনার অধীনে ছিল। আপনি তো একবারের জন্যও এসব অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করেননি। তাহলে আপনি কিসের ইসলামী আন্দোলনের নেতা!'

এসব শুনে চুপ মেরে যান মুজাহিদ। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা বলেন, স্যার, সাইদুর সাহেব কী বলছেন! তখন মুজাহিদ বলেন, এটা দীর্ঘদিনের একটা সমস্যা। এটা তো একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। এ সময় সাইদুর বলেন, "আপনি একবারের জন্য উদ্যোগ বা মন্ত্রিসভার বৈঠকে কি তুলেছিলেন? না পারলেও চেষ্টা তো করতে পারতেন? এসব 'জেনাহ' ঘটনার কোনো দায় আপনি এড়াতে পারেন না। ইসলাম ও কোরআন-হাদিসের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে আপনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিতেন। কিন্তু তা করেননি। আপনাকে কিভাবে ইসলামী আন্দোলনের নেতা বলব?" এ সময় মুজাহিদ ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, 'সাইদুর, বেশি বাড়াবাড়ি করিয়ো না। তোমাকেও আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের পরিণতি বরণ করতে হবে।' সাইদুর বলেন, 'তা তো হবেই। আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের পরিণতির জন্য তো আপনারাই দায়ী। জেএমবির কি সব জেলায় নেটওয়ার্ক ছিল নাকি যে তারা দেশব্যাপী বোমা হামলা করবে? আপনাদের নির্দেশ ও সহযোগিতা ছাড়া ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা কখনোই সম্ভব হতো না।'

এসব শুনে মুজাহিদ আর কোনো কথা বলেননি।

পল্লবীর গণহত্যা : মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার অভিযোগে পল্লবী থানায় দায়েরকৃত মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার পাঁচ দিনের রিমান্ডের গতকাল ছিল প্রথম দিন। সিআইডি সূত্র জানায়, এই মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিউর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ সেল তাঁদের টানা জিজ্ঞাসাবাদ করছে। মামলার তদন্ত নিয়ে সিআইডি গতকাল বিকেলে মালিবাগ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনও করেছে। মামলার তদারকি কর্মকর্তা শেখ মারুফ জানান, গুরুত্বপূর্ণ এই মামলাটি সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে মামলার বাদী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মোল্লার সঙ্গে কথা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলা হবে। এ ছাড়া তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছেও অনেক তথ্যপ্রমাণ আছে, যা তদন্তে সহায়ক হবে।

এদিকে জিজ্ঞাসাবাদকারীদের একটি সূত্র জানায়, বুধবার রাত থেকেই কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। এই মামলা ছাড়াও যুদ্ধাপরাধসংক্রান্ত ঘটনার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কাদের মোল্লা সরাসরি উত্তর দিলেও কামারুজ্জামান উত্তর দিতে চান না। অনেক সময় জিজ্ঞাসাবাদকারীদের পাল্টা প্রশ্ন করেন।

15 July 2010

জিজ্ঞাসাবাদে ভাগ্নে শহীদ: একটি দলের সহযোগিতা নিতে চাইছিল জেএমবি

বগুড়া অফিস

জেএমবির বর্তমান সাংগঠনিক প্রধান আনোয়ার আলম খোকা ওরফে ভাগ্নে শহীদের নেতৃত্বে সংগঠনের সদস্যরা দেশে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ভাগ্নে শহীদ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, নাশকতা চালাতে তারা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা নেওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সমপ্রতি ওই দলটি সরকারের টার্গেটে পড়ে যাওয়ায় তারা সরাসরি জেএমবিকে সহযোগিতা করতে চায়নি। এ কারণে জেএমবি হামলা চালানোর জন্য কিছুটা দেরি করার সিদ্ধান্ত নেয়।

বগুড়ার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, 'জেএমবি দেশের ১২ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির 'হিটলিস্ট' তৈরি করেছিল। ভাগ্নে শহীদ লিস্টের সবার নাম প্রকাশ করেছে। তালিকার সবাই রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে সমপৃক্ত। জেএমবির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসত।'

কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ভাগ্নে শহীদকে গতকাল বগুড়ার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে পাঠানো হয়। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানালে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগেই শহীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও গুলি রাখার অভিযোগে অস্ত্র আইনে বগুড়া সদর থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। জামাই রফিকসহ ভাগ্নে শহীদের অন্য পাঁচ সহযোগীকে গাইবান্ধার আদালতে পাঠিয়ে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে নাশকতা সৃষ্টি ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানায় দুটি মামলা হয়েছে। আদালত জঙ্গিদের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করার পর পুলিশ ও জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলের কর্মকর্তারা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন।

বগুড়ার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ভাগ্নে শহীদ জানিয়েছে, জেএমবির সাবেক আমির শায়খ আব্দুর রহমানের সময় তৈরি করা ১০ বছরের কর্মপরিকল্পনা অনুসারে তারা কার্যক্রম চালাচ্ছিল। দলে একজনের অনুপস্থিতিতে বা কারো মৃত্যু হলে তৈরি হয় নতুন নেতৃত্ব। কিন্তু কাজ চলে পুরনো পরিকল্পনা অনুসারে। সমপ্রতি পুলিশের অভিযান জোরদার হওয়ায় জেএমবির শীর্ষ নেতারা ছদ্মবেশে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে নতুন সদস্য তৈরির কাজে নামে। গ্রামের লোকজনকে দলে ভেড়ানোর জন্য মাঠে নামে তারা। দুর্গম এলাকাগুলোতে আস্তানা করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পেঁৗছানোই ছিল তাদের টার্গেট।'

পুলিশ সুপার জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ভাগ্নে শহীদ বলেছে, সে কখনো নিজে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না। অন্যের ফোন ব্যবহার করে সাংকেতিক ভাষায় তারা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। জেএমবির আমির সাইদুর গ্রেপ্তার হওয়ার পর ঢাকা থেকে তার কাছে মোবাইলে মেসেজ আসে, হুজুর অসুস্থ। সব কর্মকাণ্ড বন্ধ। মোবাইলের সিম বন্ধ করে দাও। পরে কথা হবে। ওই মেসেজ পর্যায়ক্রমে সবার কাছে পেঁৗছে যায়।

ভাগ্নে শহীদ নিজেকে এসএসসি পাস বলে দাবি করলেও পুলিশ জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন সম্পর্কে তার ভালো ধারণা রয়েছে। সে ভারতসহ কয়েকটি দেশে কমান্ডো ট্রেনিং নিয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে শহীদ দিনাজপুর থেকে ঢাকায় গিয়ে এক সপ্তাহ এক আত্দীয়ের বাড়িতে ছিল। সেই আত্দীয় সরকারের একটি বিশেষ বাহিনীতে কর্মরত। তার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু হয়েছে।

জামাই রফিকও ছিল মোস্ট ওয়ান্টেড
ভাগ্নে শহীদের মতো পুলিশের তালিকায় মোস্ট ওয়ান্টেড হিসেবে ছিল জামাই রফিকের নাম। জেএমবির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে ছিল রফিক। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ছদ্মবেশে সে অবস্থান করেছে দিনের পর দিন। জিজ্ঞাসাবাদে রফিক জানায়, ফেরিওয়ালা বা রিকশাওয়ালা সেজে সে পুলিশের সামনে দিয়েই ঘুরেছে।

জামাই রফিক ওরফে হাসান (২৮) এবং জেএমবির গাইবান্ধা জেলার প্রধান জয়পুরহাট জেলার সদর উপজেলার গিয়াস ওরফে রাসেল (২৫) সম্পর্কে ভায়রা ভাই। তারা দুজন প্রেম করে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নের আয়শা সিদ্দিকা ও সুমি বেগমকে বিয়ে করে। আয়শা ও সুমি মামাতো-ফুফাতো বোন। সেই সূত্রে রফিক ও গিয়াস প্রায় এক মাস আগে জামাই হিসেবে পৌরসভার প্রধান পাড়ায় রাজা মাস্টারের বাড়ি ১১ শ টাকায় ভাড়া নেয়। আয়শা ও সুমি বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় বাড়িওয়ালাকে জানায়, তাদের স্বামীরা ওষুধ কম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি।

বাসার মালিক রাজা মিয়ার স্ত্রী লাইজু বেগম কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি কখনো ভাড়াটিয়া মহিলাদের মুখ দেখতে পাননি। সব সময় তারা বোরকায় মুখ ঢেকে বাড়ির বাইরে ও ঘরের মধ্যে চলাফেরা করত। তাদের স্বামীরা প্রতিদিন ভোরে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়ে গভীর রাতে ফিরত। পুলিশ গত মঙ্গলবার রাতে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ধারালো অস্ত্র ও জিহাদি বই উদ্ধার করে। তবে অভিযানের সময় রফিকের স্ত্রী আয়শা এবং রাসেলের স্ত্রী সুমি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

আমাদের গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, জামাই রফিকসহ গাইবান্ধা থেকে আটক পাঁচ জেএমবি জঙ্গিকে গতকাল বুধবার সিনিয়র বিচারিক হাকিম আজিজুর রহমানের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জামাই রফিক ছাড়া অন্য চার জঙ্গি হলো_গিয়াস উদ্দিন ওরফে রাসেল (২৫), এহসার সদস্য শাকিল (২২), আব্দুল মজিদ (৫০) ও সাবেক সেনা সদস্য আনোয়ার হোসেন ওরফে আর্মি আনোয়ার (৪৮)। পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন জানান, আটক জেএমবি জঙ্গিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

রিমান্ডে সাইদুরের মুখোমুখি নিজামী-মুজাহিদ-সাঈদী: ঝগড়া করতে গিয়ে অজানা তথ্য ফাঁস

মাসুদ কার্জন

'আপনারা তো ইসলাম নিয়ে ব্যবসা করেন। আপনাদের মধ্যে কোনো এলেম নাই। কর্মীদের ভেতরে-ভেতরে জিহাদ করার কথা বলেন আর নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার ধান্ধা করেন। আমি আজ জঙ্গি নেতা আর আপনারা সাধু সেজেছেন, না? এমন কিছু কি আছে, যা আপনাদের কথা ছাড়া করেছি?'

নিষিদ্ধ ঘোষিত জামা'আতুল মুজাহিদীনের (জেএমবির) আমির সাইদুর রহমান জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে উদ্দেশ করে এভাবেই এক চোট নিলেন মঙ্গলবার রাতে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের সময়। ওই রাতে ছিল তাঁদের দ্বিতীয় দফা মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ। মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী, মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ছাড়াও জেএমবির সাইদুরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মনিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলায় তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। অন্য এক কর্মকর্তা জানান, এর আগে জেএমবির আমির সাইদুর ও জামায়াত নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্যই তাঁদের মুখোমুখি করা হচ্ছে।
জঙ্গি তৎপরতা ছাড়াও সম্প্রতি দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি চেষ্টার সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে গোয়েন্দাদের হাতে_এসবও যাচাই-বাছাই চলছে।

জিজ্ঞাসাবাদকারীদের একটি সূত্র জানায়, এ দফায় রিমান্ডে সাইদুরকে বেশ উৎফুল্ল দেখায়। তিনি জোর গলায় বলছেন, একটি কথাও মিথ্যা বলব না। জেলখানা থেকে আসার আগে চুল-দাড়িতে মেহেদিও মেখে এসেছেন তিনি।

মঙ্গলবার বিকেলে কারাগার থেকে তাঁকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে এনে সন্ধ্যার পর কিছুক্ষণের জন্য নিজামী ও মুজাহিদের মুখোমুখি করা হয়। দ্বিতীয় দফা ওই রাতেই ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত তাঁকে তিন জামায়াত নেতার মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ চলে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এ সময় জিজ্ঞাসাবাদ করার কোনো প্রয়োজনই হয়নি। তাঁরা নিজেরাই কথাকাটাকাটি করে অজানা অনেক তথ্য দিয়েছেন। তবে সাইদুরের ক্ষোভ বেশি মুজাহিদের প্রতি। তাঁদের প্রথম দেখা হওয়ার সময় সাইদুর নিজ থেকেই হাত বাড়িয়ে জামায়াতের তিন নেতার সঙ্গে করমর্দন করেন। নিজামী ও সাঈদী করমর্দন করলেও মুজাহিদ অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলেন।
সূত্র মতে, সাইদুর জামায়াতের তিন নেতাকে দেখা মাত্রই নানা কথা বলতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মুজাহিদ বলেন, 'সাইদুর সাহেব, এসব কী বলতে শুরু করেছেন?' উত্তরে সাইদুর বলেন, 'কেন, ভুলে গেছেন, ১৯৯১ সালে জামায়াত অফিসের দোতলায় কী বলেছিলেন আপনি?' মুজাহিদ বলেন, 'আপনার সঙ্গে আমার সর্বশেষ কবে দেখা হয়েছে তাই তো খেয়াল নাই।' সাইদুর বলেন, 'ওই যে সময় আপনি বলেছিলেন, একাত্তরে জামায়াতের কাজের মধ্যে সমন্বয় ছিল না। সমন্বয় থাকলে আজ জামায়াতের ওপর কেউ মাথাচাড়া দিতে পারত না। '৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের কাজকর্মগুলোও ঠিকভাবে সম্পন্ন হয়নি।' এ সময় মুজাহিদ ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, 'এসব কোনো আলাপ হয়নি আপনার সঙ্গে।' সাইদুর বলেন, 'খেয়াল করার চেষ্টা করেন, সব মনে করতে পারবেন। ওই দিন আপনি আমাকে কমলা দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন।' এ সময় মুজাহিদ মাথা নিচু করে থাকেন।

মুজাহিদ সাইদুরকে উদ্দেশ করে আরো বলেন, 'আপনাকে তো জামায়াত থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। আপনার সঙ্গে আলাপ করব কেন?' সাইদুর তখন ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, 'আবার মিথ্যা কথা বলছেন! আমাকে বহিষ্কার করেছেন এরকম কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারবেন আপনারা? আমার ছেলে শামীম জেএমবির বোমা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পরও তো আপনাদের সবার সঙ্গে দেখা করেছি। তখন আপনারা সবাই মিলে আমাকে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে বলেছিলেন।' সাইদুর বলেন, 'আপনারা আমাকে জঙ্গি বলেন আবার যোগাযোগ করে সাহায্য চান। আপনাদের মতো আমি না। আমার ধর্ম আছে। আমি এক ধর্মে বিশ্বাস করি। আমি জেএমবির দায়িত্ব নেওয়ার পর একটি ঘটনাও ঘটতে দিইনি। আপনারা তো ক্ষমতার জন্য সব কিছু্ই করেন। নারী নেতৃত্ব হারামের কথা বলেন, আবার ক্ষমতা পেতে নারীর পায়ের নিচে বসে থাকেন। এসবের জন্য আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে।'

এ সময় জিজ্ঞাসাবাদকারীরা সাইদুরকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, 'আপনার সব রাগ তো দেখি মুজাহিদ সাহেবের ওপর। এর কারণ কী? সাইদুর বলেন, 'সব নষ্টের মূলে তো উনি।' জিজ্ঞাসাবাদকারীরা বলেন, নিজামী সাহেব তো তাহলে ভালো। সাইদুর দাবি করেন, 'ওনাদের সবাই এক রকম। কেউ একটু কথা বেশি বলেন, কেউ কম।' সাইদুর বলতে থাকেন, 'দুই দিন আগে কোর্ট হাজতে নিজামী সাহেবের সঙ্গে দেখা হয়েছিল আমার। এ সময় তো নিজামী সাহেব আমার কাছে দোয়া চেয়ে বলেছিলেন, আপনি কি আসলেই পুলিশকে এসব বলছেন?'

দীর্ঘক্ষণ নীরবে পাশে বসে থাকা নিজামী নীরব থাকলেও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাইদুরের এসব কথা শুনে মুখ খোলেন। সাইদুরকে উদ্দেশ করে বলেন, 'এসব কী বলছেন আপনি? তখন সাইদুর আরেক দফা সাঈদীর ওপর ক্ষেপে যান। বলেন,
'আপনি বড় ওয়াজ করনেওয়ালা হয়েছেন। আপনার মধ্যে কোনো এলেম আছে নাকি! আপনার পেশাই হচ্ছে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করা। আপনি খুলনার জাকির সাহেবের ব্যাগ টেনে টেনে এখন বড় ওয়াজ করনেওয়ালা হয়েছেন, টাকা কামিয়েছেন। এটা কি কেউ ভুলে গেছে মনে করেন?'
এসব শুনে সাঈদী আর কথা বাড়াননি।

এ সময় জিজ্ঞাসাবাদকারীদের মধ্যে একজন সাঈদীর ওয়াজ করনেওয়ালা হওয়ার কাহিনী জানতে চান সাইদুরের কাছে। সাইদুর বলেন,
'সাঈদী সাহেবের কাজ ছিল খুলনার জাকির সাহেবের ব্যাগ-পোটলা টানা। জাকির সাহেব কোথাও গেলে সাঈদী ব্যাগ নিয়ে আগেই সেখানে পেঁৗছে যেতেন। কিংবা কোনো সময় জাকির সাহেবের মঞ্চে উঠতে দেরি হলে সাঈদী আগে মঞ্চে উঠে যেতেন। তিনি শ্রোতাদের কিছুক্ষণের জন্য শান্ত রাখতে ওয়াজ করতেন কিংবা জাকির সাহেব চা বা খাবার খেতে গেলে সেই ফাঁকে সাঈদী ওয়াজ করতেন। এভাবেই সাঈদী সাবেহ বড় ওয়াজ করনেওয়ালা হয়ে গেছেন। পরে জাকির সাহেবেরও সঙ্গে সাঈদী বেইমানি করেছেন। আসলে গলার জোরে এ পর্যন্ত আসা আর কী।
সাইদুর দাবি করেন, সাঈদী অনেক সময় ওয়াজের মধ্যেও মিথ্যা কথা বলেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে হাজারো মিথ্যা উপমা হাজির করেন।

14 July 2010

নিজামী-মুজাহিদ ও সাইদুরকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় দুই নেতাকে জেএমবিপ্রধান সাইদুর রহমানের মুখোমুখি করে একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন গোয়েন্দারা। সাইদুর রহমানকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে আনা হয়। পরে সন্ধ্যায় তাঁকে জামায়াত নেতাদের মুখোমুখি করা হয়। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সাইদুরকে দেখামাত্র জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ মাথা নিচু করে ফেলেন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার তৌহিদুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, ডিবি পুলিশ বিকেল ৩টায় জেএমবির আমির সাইদুর রহমানকে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নিয়ে গেছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সাইদুরকে কারাগার থেকে মিন্টো রোডে নিয়ে আলাদাভাবে বসানো হয়। আগে রিমান্ডে দেওয়া তাঁর স্বীকারোক্তিগুলো এ সময় তাঁকে শোনানো হয়। সাইদুরকে জানানো হয়, তিনি জামায়াত নেতাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার যেসব কথা বলেছেন, সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে জামায়াত নেতারা বলেছেন, তাঁরা কিছুই জানেন না। কখনো আবার তাঁরা নীরব থেকেছেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সাইদুরের কাছে জানতে চান, তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন কি না। জবাবে সাইদুর দাবি করেন, তাঁর দেওয়া কোনো তথ্যই মিথ্যা নয়।

জিজ্ঞাসাবাদকারীরা জানতে চান, সাইদুর এসব কথা জামায়াত নেতা নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদীর সামনে বলতে পারবেন কি না। সাইদুর হ্যাঁ-সূচক জবাব দিলে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনজনের মধ্যে কার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো। সাইদুর বলেন, 'নিজামী সাহেবের সঙ্গে আমার পুরনো সম্পর্ক। তিনি অনেক ঠাণ্ডা প্রকৃতির লোক। মুজাহিদ সাহেব অনেক সময় নিজের কথা থেকে সরে যান। আর সাঈদী সাহেবের সঙ্গে একাধিকবার কাজের ব্যাপারে কথা হয়েছে। তিনি একরোখা লোক।'

সাইদুর রহমানকে পরে নিজামী ও মুজাহিদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সাইদুরকে দেখামাত্র দুই জামায়াত নেতা মাথা নিচু করে ফেলেন। তাঁদের দেখে সাইদুরই প্রথম কথা বলা শুরু করেন। জামায়াতের দুই নেতাকে সালাম দিয়ে তাঁদের সঙ্গে হাত মেলানোর চেষ্টা করেন তিনি। তখন একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, 'হুজুর, আপনারা সবাই মিলে আমাদের একটু সহযোগিতা করেন।' জামায়াত নেতাদের উদ্দেশে একজন জিজ্ঞাসাবাদকারী বলেন, 'আপনারা তো অনেক কিছু বলতে চাচ্ছেন না, নীরব থাকেন। কিন্তু সাইদুর সাহেব এখনো বলছেন, তিনি সব ঠিক বলেছেন।' এ সময় সাইদুর বলেন, 'হ্যাঁ, সবকিছু ঠিক।'
তিনি মুজাহিদকে দেখিয়ে বলেন, 'উনার কথা ও কাজের অনেক ক্ষেত্রে মিল পাওয়া যায় না। উনি মাঝেমধ্যে নিজের কথা নিজেই উল্টিয়ে ফেলেন।' এ সময় মুজাহিদ চুপ করে থাকেন।

সাইদুর বলতে থাকেন, 'শুধু আমি কেন, শাস্তি হলে আপনার বা আপনাদের দলের অনেকেরই হওয়া উচিত। জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলবেন, আর বিপদে পড়লে চিনবেন না, তা তো হতে পারে না।' সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চলের রুকন বা সদস্য পর্যায়ের ২৫ জামায়াত নেতার জেএমবি সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া জামায়াতের কাছ থেকে জেএমবির অর্থ পাওয়ার তথ্যটিও নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে। এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সাইদুরকে আবারও জামায়াত নেতাদের মুখোমুখি করা হতে পারে।

তিনজনের রিমান্ড বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন : কালের কণ্ঠের সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদক জানান, জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রিমান্ডে নেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং দুটি মামলায় তাঁদের রিমান্ডের আদেশ বাতিল করার জন্য গতকাল হাইকোর্টে আবেদন করেছেন তাঁদের আইনজীবীরা। বিচারপতি সৈয়দ মো. দস্তগীর হোসেন এবং এ কে এম জহিরুল হকের বেঞ্চ আজ বুধবার এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন। তবে ওই আবেদনের ওপর শুনানি না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে এর আগে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ মেনে চলতে বলা হয়েছে।

13 July 2010

রিমান্ডে গোলাম মাওলার মুখোমুখি নিজামী-মুজাহিদ, আজ সাইদুর ও তিন জামায়াত নেতাকে একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ

মাসুদ কার্জন

জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতা_নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদীর সঙ্গে আজ সোমবার মুখোমুখি করা হচ্ছে জেএমবির আমির সাইদুর রহমানকে। এর আগে সাইদুরের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য যাচাই বাছাই করতেই জামায়াত ও জেএমবির নেতাদের একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রথমে আলাদা, পরে পর্যায়ক্রমে একসঙ্গে চারজনকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ওদিকে রবিবার রাতে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ড. সৈয়দ গোলাম মাওলাকে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মুখোমুখি করা হয়।

রমনা থানায় দায়ের করা ফারুক হত্যা মামলায় আদালত গতকাল নিজামীকে চার দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত আগেই নিজামীর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন। পল্টন থানার তিন মামলায় ৯ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল সোমবার তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়।

এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, জেএমবিপ্রধান সাইদুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদে জামায়াত-জেএমবি সম্পর্কের গোপন রহস্য ফাঁস করেন। সরাসরি অর্থ সহায়তা দেওয়া ছাড়াও বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে জেএমবিকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল জামায়াত। উত্তরাঞ্চলে পাঁচটি জেলার জামায়াতের সদস্য (রুকন) পর্যায়ের ২৫ জন একই সঙ্গে সরাসরি জেএমবির জন্য কাজ করছে, সাইদুরের দেওয়া এসব তথ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিতে তাঁদের মুখোমুখি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সাইদুরের মোবাইল কল রেকর্ড থেকে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে তাঁর একাধিকবার যোগাযোগের ব্যাপারে গোয়েন্দাদের কাছে নিশ্চিত তথ্য আছে। মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদকালে এসব তথ্য যাচাই করা হবে। আদালত গতকাল সাইদুরের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

জিজ্ঞাসাবাদকারীদের একটি সূত্র জানায়, মানসিকভাবে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছেন জামায়াত নেতারা। তবে এখনো নিজেকে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছেন মুজাহিদ। নিজামী ও সাঈদী এমনিতে স্বাভাবিক থাকলেও জিজ্ঞাসাবাদের সময় কিছু জানতে চাইলে তাঁরা ভয় পেয়ে যান। অনেক সময় রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার কথা বলেন তাঁরা। বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিভিন্ন সময় তাঁদের নেওয়া পরিকল্পনার কথা জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা প্রথমে দাবি করেন, জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক একটি দল। এ সময় গোয়েন্দারা নানা তথ্য হাজির করেন। তা দেখেই তাঁদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।

জিজ্ঞাসাবাদকারীরা অনেক সময় আলাপের ছলে জামায়াত-শিবির সম্পর্কে জানতে চান তাঁদের কাছে। রবিবার রাতে একপর্যায়ে তাঁদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদকারীরা বলেন, 'আপনাদের ছাত্র সংগঠন শিবির তো প্রতিপক্ষের রগ কাটে।' এ সময় তাঁরা উত্তরে বলেন, 'এসব মিডিয়ার গুজব বা প্রচারণা। অভিযোগ আসার পর এসবের তদন্ত করেও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।' তখন জিজ্ঞাসাবাদকারীরা বলেন, 'আপনারা চাইলে কিছু প্রমাণ হাজির করতে পারি'। প্রথমে তাঁরা চুপ করে থাকেন, পরে উত্তরে জামায়াত নেতারা বলেন, 'আরপিও অনুযায়ী এখন তো শিবির অনেকটা স্বাধীন সংগঠন। ফলে দায়-দায়িত্ব আর জামায়াতের ঘাড়ে পড়ে না।'

পরে জামায়াত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিন নেতাই অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েন। সম্প্রতি জামায়াতের মধ্যে মতবিরোধ আসলে কী জানতে চাইলে তাঁরা তিনজনই মতবিরোধের কথা স্বীকার করেন। তাঁদের দাবি, এসব বিরোধের মূলে হচ্ছে মীর কাসেম আলী। কাসেম আলী এর আগেও একবার বিরোধের সূচনা করেছিল। কাসেম আলী কেন বিরোধ সৃষ্টি করছে_এ রকম প্রশ্নের জবাবে তাঁরা দাবি করেন, টাকার জন্য। এ ছাড়া নেতৃত্বের একটি লোভও আছে তাঁর। তাঁদের গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তেও দলের ভেতরের বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। কামারুজ্জামান ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি হওয়ার ইচ্ছে করেছিলেন। কিন্তু তা না হতে পারায় তিনি একটু আলাদা হয়ে যান। অন্যদিকে জামায়াতের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলের নেতৃত্বে অন্য একটি গ্রুপ আছে। তবে তারা আসলেই তাঁদের মুক্তি চাচ্ছে।

আরেক কর্মকর্তা জানান, জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা গ্রেপ্তারের পর নাশকতার অনেক পরিকল্পনার বিষয়ে তথ্য পেয়েছেন তাঁরা। মহাসড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুরসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছিল জামায়াত-শিবির। তাদের একটি অংশ এখনো সক্রিয়। তারা এখনো বিভিন্ন পরিকল্পনা আঁটছে।

গোলাম মাওলা-নিজামী-মুজাহিদ কুশল বিনিময় : এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, রবিবার রাতে গোলাম মাওলাকে জামায়াতের শীর্ষ দুই নেতার মুখোমুখি করা হয়। দেখা হওয়ামাত্র তাঁরা একে অন্যের সঙ্গে সালাম ও কুশল বিনিময় করেন। এ সময় উপস্থিত গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাঁদের কাছে জানতে চান, 'আপনারা কী পূর্ব পরিচিত?' উত্তরে তারা বলেন, 'খুব বেশি নয়, তবে জানাশোনা আছে। এ সময় গোলাম মাওলার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে জামায়াত নেতাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু কোনো প্রশ্নের পুরোপুরি উত্তর দেননি তাঁরা। প্রশ্ন করলেই জামায়াত নেতারা বলেন, জানা নেই। ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা রবিবার বিকেলে জানান, রিমান্ড শেষে সোমবার সন্ধ্যায় গোলাম মাওলাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল সোমবার কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মতিউর রহমান নিজামীকে সরাসরি কোর্ট-হাজতে নিয়ে রাখা হয়। কিছুক্ষণ পরই মহানগর হাকিম আলী হোসাইনের আদালতে রমনা থানার মামলার শুনানি শুরু হয়। মামলার তদন্তকারী মতিউর রহমান নিজামীকে আগে মঞ্জুর করা চার দিনের রিমান্ডের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করেন। এ সময় নিজামীর আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক সুস্থতাসাপেক্ষ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন। আদালত নিজামীর আইনজীবীর আবেদন নাকচ করে তাঁকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার অনুমতি দেন।

10 July 2010

হিযবুত-জামায়াত গোপন বৈঠকের সমন্বয়ক ছিলেন কামারুজ্জামান

মাসুদ কার্জন

'জেএমবি বা হুজি জঙ্গি হলে হিযবুত তাহরীর হাইয়েস্ট ওর্ডার-এর জঙ্গি সংগঠন। হিযবুত তাহরীর ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে আসলে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই, যা আছে তা হলো আবরণগত। সবার আলটিমেট গোল বা চূড়ান্ত লক্ষ্য সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা।' নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশের সিনিয়র উপদেষ্টা রিমান্ডে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম মাওলা জিজ্ঞাসাবাদে এ রকম মন্তব্যই করেছেন বলে গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র দাবি করেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে অধ্যাপক গোলাম মাওলা স্বীকার করেছেন, সম্প্রতি জামায়াতের সঙ্গে তাদের ঐক্য গড়ে উঠেছিল। জামায়াতের আগ্রহেই এই ঐক্য হয়। সর্বশেষ ৩০ জুন জামায়াত নেতাদের সঙ্গে হিযবুত তাহরীরের গোপন যে বৈঠকে হয়, এর সমন্বয় করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। তবে বৈঠকে গোলাম মাওলা বা কামারুজ্জামান কেউই উপস্থিত ছিলেন না। তারা দুজনেই বৈঠকের খুঁটিনাটি সব কিছুই জানতেন। বৈঠকটির আলোচ্যসূচির মধ্যে ছিল যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকাতে করণীয় বা সরকারকে অস্থিতিশীল। হিযবুতের লক্ষ্য সংগঠনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি বেগবান করা।

এদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গতকাল রমনা থানার ফারুক হোসেন হত্যা মামলায় চার দিনের রিমান্ড নেওয়ার অনুমতি পেয়েছে পুলিশ। আদালত আগেই এই মামলায় তাঁদের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন। অপর দিকে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীকে পল্টন থানায় দায়েরকৃত তৃতীয় মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপকমিশনার মাহাবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য বা গোপন সম্পর্কের বিষয় নিশ্চিত হতে খুব তাড়াতাড়িই রিমান্ডে থাকা জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতার মুখোমুখি করা হবে গোলাম মাওলাকে। হিযবুতের 'থিং ট্যাংক' হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক গোলাম মাওলা শুধু দিকনির্দেশনা দিতেন। সরাসরি কোনো বৈঠক বা কর্মসূচিতে তিনি তেমন উপস্থিত থাকতেন না।

সূত্র জানায়, গতকাল জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হিযবুত তাহরীর সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় গোলাম মাওলার কাছে। তখন তাঁর মন্তব্য ছিল, এই সংগঠনের কর্মী-সমর্থকরা কখনো পটকা বা ককটেল ফাটাবে না। করলে তারা বিমান ছিনতাই করবে। তবে আপাতত সংগঠনের লোকবল বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছিল। ভালো অবস্থানে যাওয়ার আগে তাদের কোমর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তাদের সাংগঠনিক অবস্থা একেবারেই নড়বড়ে।

নিজের সম্পর্কে জানতে চাইলে গোলাম মাওলা বলেন, তাঁর শিক্ষাজীবনে কখনো দ্বিতীয় হওয়ার কোনো রেকর্ড নেই। এসএসসি ও এইচএসসি দুটিতে স্ট্যান্ড করেছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স দুটিতেই প্রথম শ্রেণীতে প্রথম। পরে ১৯৮৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের ওপর পড়ালেখা করতে কমনওয়েলথের বৃত্তি নিয়ে লন্ডন যান। লন্ডনে জুলফিকার, ফিরোজ ও সালেহ নামে তিন প্রবাসী বাঙালির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় তাঁর। তাদের মাধ্যমে এ সংগঠনের দীক্ষা নেন। পরে তারা কয়েকটি সেমিনার ও ধর্মীয় আলোচনা সভায় নিয়ে যায় তাঁকে। বিদেশি ধর্মতাত্তি্বকদের আধ্যাত্দিক আলোচনা শুনে তিনি তখন থেকেই খেলাফত রাষ্ট্র কায়েমের চিন্তা শুরু করেছিলেন। পরে ১৯৯৩ সালে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরেই সংগঠন করার বিষয়টি নিয়ে ড. মহিউদ্দিন, মামুনুর রশীদ আনসারীসহ বিভিন্ন শিক্ষিত ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে ২০০১ সালে হিযবুত তাহরীর গঠন করেন। উত্তরায় ইসলামিক হেরিটেজ নামে একটি এনজিওর অফিসের একটি কক্ষ তাঁদের সংগঠনের জন্য দেওয়া হয়। ওই কক্ষে বসেই বৈঠক করতেন তাঁরা। লন্ডন থেকে টাকাও আসত ইসলামিক হেরিটেজের মাধ্যমে। তবে নিষিদ্ধ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা তৎপরতা গোপন করে ফেলেন।

যুক্তরাজ্যে পড়ালেখা করতে গিয়ে ওই দেশের মেয়েকে বিয়ে করেন তিনি। ঢাকায় ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার পাশাপাশি ঢাকায় ইংরেজি মাধ্যমের একটি স্কুল পরিচালনা করেন। নিজের তিন সন্তানের সবাই ইংরেজি মাধ্যমে পড়ছে_তারপরও অন্যদের কেন ইসলামী শাসনের স্বপ্ন দেখান এ রকম প্রশ্ন করলে নীরব থাকেন গোলাম মাওলা।

সূত্রমতে, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে হিযবুত তাহরীরের সম্পর্ক জানতে চাইলে গোলাম মাওলা জানান, জামায়াতের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক অনেক পুরনো। হিযবুতের যাত্রা শুরুর পর জামায়াত-শিবির প্রথম তাঁদের সমর্থন দেয়। শুরুতে ঢাকার কাঁটাবন এলাকার একটি ভবনে গোপন পাঠচক্র করত হিযবুত তাহরীর। ওই জায়গাটি জামায়াতই তাদের দিয়েছিল। হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো কয়েকজন শিক্ষকের সংশ্লিষ্টতা আছে। ওই সব শিক্ষক জামায়াতের সঙ্গেও সম্পৃক্ত।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে জামায়াতে ইসলামী নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই ছকের অংশ হিসেবেই বিভিন্ন ইস্যু তৈরি ও বিরোধী দলের ছত্রচ্ছায়ায় দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টার পরিকল্পনা করছিল। অজঙ্গি সংগঠনগুলো চাঙ্গা করতে বেশকিছু পদক্ষেপও নিয়েছিল জামায়াত। এ জন্য আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। প্রথম দফায় রাজশাহী, সিলেট ও চট্টগ্রামকে আন্দোলনের ক্ষেত্র বানোনোর চেষ্টা করছিল তারা। এর অংশ হিসেবে হিযবুত জামায়াত গোপন বৈঠক করে। গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, এ ব্যাপারে কিছু তথ্য তাঁদের কাছে আছে।

মুজাহিদ-সাঈদীর পছন্দ কারাগার : আদালত সূত্র জানায়, পল্টন থানার তিন মামলায় ৯ দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শনিবার বিকেলে মুজাহিদ ও সাঈদীকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে নিয়ে আসা হয়। তাঁদের প্রথমে হাকিমের এজলাসে না তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু পরে সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মহানগর হাকিম আবদুল মজিদের এজলাসে তুলে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। তাঁদের আইনজীবী মশিউল আলম, আবদুর রাজ্জাক, এস এম কামাল উদ্দিন তাঁদের একটানা রিমান্ডের পর পরই আবারও রিমান্ডে না নিয়ে কারাগারে পাঠানোর আবেদন জানান। তাঁরা আদালতে বলেন, পল্টন থানার তিন মামলায় একটানা রিমান্ডের মুখোমুখি হয়ে তাঁরা খুব ক্লান্ত এবং গুরুতর অসুস্থ। এ পর্যায়ে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হোক। কারাগারে সুস্থ হয়ে ওঠার পর এ মামলায় তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। আদালতের আগের আদেশ অনুযায়ী তাঁরা দুজনের সুচিকিৎসার আবেদন জানিয়ে বলেন, তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করছেন।

এ আবেদনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এম এ কামরুল হাসান খান আসলাম ও অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান লিখন বলেন, এ রিমান্ড আগেই মঞ্জুর হয়ে আছে। তাই ওই রিমান্ড বিষয়ে বক্তব্য রাখার তেমন কোনো সুযোগ নেই। তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়লে অবশ্যই তদন্ত কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নেবেন। এ মুহূর্তে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। এ সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মুজাহিদ ও সাঈদী বলেন, তাঁরা ভীষণ অসুস্থ। তাঁদের কোনো প্রকার চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। সাঈদী বলেন, রিমান্ডে নিয়ে তাঁকে একনাগাড়ে অনেকক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে তাঁর কষ্ট হচ্ছে। দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আবেদন নাকচ করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। এরপর তাঁদের আইনজীবীরা পল্টন থানার তিন মামলায় মহানগর হাকিম মোস্তফা শাহরিয়ারের আদালতে তাঁদের জন্য জামিন চান। দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তা নাকচ করে দেন।

9 July 2010

সাইদুরের রিমান্ড মঞ্জুর শিগগিরই জামায়াত নেতাদের মুখোমুখি

নিজস্ব প্রতিবেদক

জঙ্গি সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হতে রিমান্ডে থাকা জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতাকে জেএমবির আমির মাওলানা সাইদুর রহমানের মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ। কদমতলী থানার একটি মামলায় আদালত সাইদুর রহমানের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। গোয়েন্দা পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। দু-এক দিনের মধ্যেই নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে সাইদুর রহমানকে ঢাকার মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে এনে জামায়াত নেতাদের মুখোমুখি করা হবে।

এ ছাড়া আরেক নিষিদ্ধ সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা কারাবন্দি মুফতি হান্নানকে জামায়াত নেতাদের মুখোমুখি করা হতে পারে। তাকে রিমান্ডের আবেদন জানাবে পুলিশ। জামায়াত নেতাদের মুখোমুখি করা হবে রিমান্ডে থাকা হিযবুত তাহ্রীরের সিনিয়র উপদেষ্টা গোলাম মওলাকেও।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মামলায় গত ২৯ জুন জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাঁদের একাধিক মামলায় মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, রিমান্ডে থাকাকালে সাইদুর জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছিল, জামায়াত নেতারা গত মে মাসে রাজধানীতে গোপন বৈঠক করে। এ সময় জেএমবি, হিযবুত তাহ্রীর ও হুজির নেতারা উপস্থিত ছিল। ওই বৈঠকটির মূল লক্ষ্য ছিল জঙ্গিদের মাধ্যমে নাশকতা ঘটিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করা এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। বৈঠকের পর জামায়াতে ইসলামী জেএমবিকে মোটা অঙ্কের টাকাও দিয়েছিল নাশকতা ঘটাতে। কিন্তু গোয়েন্দারা আগাম তথ্য পাওয়ায় জামায়াতের ওই পরিকল্পনা সফল হয়নি। এসব বিষয়ে নিজামী ও মুজাহিদকে সাইদুর রহমানের মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একই সঙ্গে জামায়াত ও জেএমবি করছেন_এমন ২৫ জামায়াত নেতাকে গ্রেপ্তারে খুব শিগগিরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি চাওয়া হবে। জেএমবির আমির সাইদুর গ্রেপ্তার পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে জামায়াতের জঙ্গি কানেকশনের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য দেন। এ ছাড়া সাইদুরের মোবাইল কললিস্টে জামায়াতের অনেক নেতার সঙ্গে তার যোগাযোগের বিষয়ে প্রমাণ পায় গোয়েন্দারা। যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকাতে জামায়াত নেতারা তার সহযোগিতা চেয়েছিল বলেও তথ্য দিয়েছিল সাইদুর। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে।

জামায়াত নেতাদের সঙ্গে পলাতক হুজি নেতা মাওলানা আবু বক্করের যোগাযোগের ব্যাপারে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছেন। জানা গেছে, হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ হওয়ার পরই তাদের সঙ্গে জামায়াতের তাদের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে।

8 July 2010

প্রকাশ্যে জামায়াত গোপনে জেএমবি একাধিকবার যৌথ মহড়া!জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতার রিমান্ড চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ্যে জামায়াত, গোপনে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদীন (জেএমবি) করছেন জামায়াতে ইসলামীর অন্তত ২৫ জন রুকন পর্যায়ের সদস্য। এসব রুকন দেশের উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, দিনাজপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতা। এ ছাড়া জেএমবি ও জামায়াতের 'স্বাস্থ্য বিভাগের' যৌথ মহড়ার ব্যাপারে নানা তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

রিমান্ডে থাকা জামায়াত ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এসব তথ্য উঠে আসে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া এসব তথ্যের চুলচেরা বিশ্লেষণের জন্য খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জেএমবির আমির সাইদুর রহমানের সঙ্গে জামায়াতের তিন নেতাকে মুখোমুখি করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

পল্টন থানার ওসি শহিদুল হক গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে জানান, জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। বৃহস্পতিবার থেকে আবার নতুন মামলায় তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

সূত্র মতে, এর আগে জেএমবি প্রধান সাইদুর রহমান গ্রেপ্তার হলে তাঁকে কয়েকদফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের সাবেক আমির থেকে সর্বশেষ তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির আমির ছিলেন। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে জামায়াত-জেএমবির অজানা সম্পর্কের অনেক কিছুই খোলাসা করে দিয়েছেন তিনি। সাইদুরকে জিজ্ঞাসাবাদের সব কিছু ভিডিওতে ধারণ করে রাখা হয়। জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে সাইদুর জানিয়েছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেএমবির সদস্যের একসঙ্গে একাধিকবার মহড়া হয়েছে। এসব মহড়া সাধারণত ঘরোয়া পরিবেশে হয়েছিল। শারীরিক কসরত ছাড়াও ক্ষুদ্রাস্ত্র চালনার পদ্ধতি শেখানো হয় এসব মহড়ায়।

গতকাল পৃথকভাবে জামায়াতের তিন নেতাকে জেএমবি-জামায়াতের যৌথ মহড়ার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনজনই এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। পরে তিনজনকে পাশাপাশি বসিয়ে সাইদুরের বক্তব্য সংবলিত ভিডিও চালিয়ে দেখানো হয়। তখন তিনজনের একজন প্রশ্ন তোলেন, সাইদুর যে সব সত্য বলেছে, তাঁর প্রমাণ কী? জিজ্ঞাসাবাদকারীরা তখন বলেন, সাইদুর তাঁর দলের সব কর্মকাণ্ড ভিডিওতে ধারণ করতেন। গ্রেপ্তারের সময় যৌথ মহড়ার একাধিক ভিডিও সিডি উদ্ধার করা হয়েছে তাঁর কাছ থেকে। সেগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে আছে। চাইলে আপনাদের দেখনো যেতে পারে। তখন তিনজনের কেউ এ বিষয়ে কথা বাড়াতে আগ্রহী হননি।

পরের দফায় জিজ্ঞাসাবাদে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার জামায়াতের ২৫ রোকনের জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা তিন নেতাকে জানানো হয়। তখন তাঁরা যুক্তি দেখান, কেউ তাঁদের অজান্তে কিছু করলে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কারো কিছু করার থাকে না। কারণ জামায়াতের কর্মী সংখ্যা অনেক। তখন গোয়েন্দাদের সংগৃহীত জামায়াত-শিবির সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য তাঁদের সামনে উপস্থাপন করা হয়, যেখানে সাংগঠনিক পরিষ্কার নির্দেশনা আছে যে দলের কোনো কর্মী কোনো কাজ করলে অবশ্যই শীর্ষ নেতাদের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি ছাড়া কেউ কোনো কাজ করলে অবশ্যই তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। পরে ২৫ রোকনের নাম-পরিচয় তাঁদের সামনে তুলে ধরা হয়। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা তখন তিন নেতার কাছে জানতে চান, ওই ২৫ জনকে তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে কি না। জবাবে তাঁরা বলেন, জেলা পর্যায়ের সব নেতাকে তাঁরা সরাসরি চেনেন না বা চেনা সম্ভব নয়।

জিজ্ঞাসাবাদকারীরা সাইদুরের দেওয়া তথ্যের পাশাপাশি ২৫ জনের বর্তমান দলীয় অবস্থাও তুলে ধরেন। সেখানে দেখা যায়, ওই ২৫ জন এখনো সরাসরি জামায়াতের রাজনীতি করছেন।

সূত্র জানায়, এর কিছুক্ষণ পরে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মুখোমুখি করা হয় সূত্রাপুর থানার একটি মামলায় রিমান্ডে থাকা জেএমবির এহসার সদস্য সৈকতকে। সৈকত মুজাহিদের সামনেই বলতে থাকেন, 'আপনার দলের অনেকেই তো আমাদের দল করছে। বিভিন্ন জেলায় গিয়ে বিভিন্ন সময় আপনার দলের লোকজনের সহযোগিতাও পেয়েছি। তাঁরা তো আমাদের জিহাদ চালিয়ে যেতে উৎসাহও যুগিয়েছেন।'
মুজাহিদ প্রথমে সৈকতকে ধমকাতে থাকলেও পরে এসব কথা শুনে চুপসে যান।

7 July 2010

জামায়াতের লক্ষ্য ইসলামী কোয়ালিশন সরকার: রিমান্ডে সেই ভিডিও দেখে ঘামতে থাকেন নিজামী

মাসুদ কার্জন

ভবিষ্যতে বাংলাদেশে 'ইসলামী কোয়ালিশন সরকার' ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। এ ধারণা মাথায় রেখেই তাদের দল সব কাজ করে যাচ্ছে। জঙ্গি বা ছোট ছোট ইসলামী দলকে তাদের অর্থ সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশ্যও তাই। তাদের ধারণা, ছোট ছোট এসব ইসলামী বা জঙ্গি সংগঠন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা পেলে চূড়ান্তভাবে জামায়াতেরই লাভ। কারণ তাদের সবার লক্ষ্য এক। জামায়াতের ধারণা, সময়ের বিবর্তনে এসব জঙ্গি বা ছোট ছোট ইসলামী দল তাদের 'এক ছাতা'র নিচেই আসতে বাধ্য। জামায়াতের শীর্ষ তিন নেতাকে গতকাল মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

এদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ প্রথমবারের মতো যুদ্ধাপরাধের দায় স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি তিন শীর্ষ নেতা দাবি করেছেন, বাংলাদেশে জামায়াতের অর্থনৈতিক ভিত অনেক শক্ত। তাদের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা আয় হয়। এর মধ্য থেকে বছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকে শুধু জামায়াতে ইসলামীর জন্য। এ টাকা দলের বিভিন্ন খাতে খরচ হয়। এ ছাড়া 'স্বাস্থ্য বিভাগ' নামে জামায়াতের বিশাল প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী থাকার কথাও স্বীকার করেছেন তাঁরা।

পল্টন থানার অপারেশন অফিসার শাহাজালাল গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা, ভাঙচুর এবং রাষ্ট্রপতির গাড়িবহরে হামলা, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ঘটনায় পৃথক দুটি মামলায় জামায়াতের তিন নেতাকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মুজাহিদ ও জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গত জুন মাসে পল্টনে পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের করা আরেকটি মামলায় আজ বুধবার আবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে। অন্যদিকে দলের আমির মতিউর রহমান নিজামীকে রাষ্ট্রপতির গাড়িবহরে হামলা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

পুলিশ সূত্র জানায়, জামায়াতের তিন নেতাকে কখনো পৃথকভাবে আবার কখনো পাশাপাশি বসিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য আরেকজনের কাছে যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মামলা ছাড়াও দেশে জঙ্গি তৎপরতা ও এর উত্থান, যুদ্ধাপরাধ এবং এর বিচার বাধাগ্রস্ত করতে জামায়াতের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়েও তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

জিজ্ঞাসাবাদকারী পুলিশের একটি সূত্র জানায়, তিনজনের মধ্যে নিজামী অনেক কম কথা বলেন। কিছু জানতে চাইলে স্বীকার বা অস্বীকার কিছুই করতে চান না তিনি। প্রশ্নের উত্তরে অনেক সময় জানা নেই, খেয়াল নেই_এ ধরনের কথা বলে উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। গতকাল প্রথমে নিজামীকে নিজের সম্পর্কে বলতে বলেন জিজ্ঞাসাবাদকারীরা। এ সময় তিনি জানান, বাংলা মিডিয়ামের শিক্ষা বলতে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত, পরে তিনি মাদ্রাসা লাইনে পড়েছেন। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রসংঘের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে জামায়াতে চলে আসেন। স্বাধীনতার পর প্রকাশ্যে জামায়াতের রাজনীতি করা না গেলেও তাঁদের দলের তৎপরতা থেমে থাকেনি। ওই সময় তাঁরা কর্মী বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে গোপনে কাজ করেছেন। জিয়াউর রহমানের সরকার আসায় তাঁরা নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয় নিজামীর কাছে। যথারীতি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। একপর্যায়ে শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে অস্ত্র খালাসের সময় ওই মন্ত্রণালয়ের সচিবের চট্টগ্রামে রহস্যজনক উপস্থিতির কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি নীরব হয়ে যান। পরে জেএমবি বা জঙ্গি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানতে চাওয়া হলেও তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদকারীরা সাইদুর ও বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের দেওয়া স্বীকারোক্তির ভিডিও ক্লিপিংস তাঁর সামনে তুলে ধরেন। সূত্র জানায়, এসব ভিডিও দেখে ঘামতে শুরু করেন নিজামী। পরে কিছুক্ষণের জন্য তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ বন্ধ রাখা হয়।

এদিকে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ প্রথমবারের মতো যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি দাবি করেন, এ জন্যই দলের গ্রহণযোগ্যতার মাত্রা অনেক কমে গেছে। পরে তাঁর কাছে জামায়াতের স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনিই পদাধিকার বলে এ বিভাগের প্রধান। প্রথমে এ রকম বিভাগ থাকার কথা বেমালুম চেপে যান তিনি। পরে উপস্থাপন করা হয় সাবেক জামায়াত নেতা সাইদুরের স্বীকারোক্তির ভিডিও ক্লিপিংস। তখন কিছু তথ্য দেন তিনি। একসময় জামায়াতের এ বিভাগটির নাম ছিল তালিম বিভাগ। পরে জানাজানি হতে শুরু করলে ১৯৯৪ সালে নাম বদলে 'স্বাস্থ্য বিভাগ' করা হয়।

সূত্রমতে, জামায়াতের এ বিভাগের প্রত্যেককে শারীরিক কসরতের নামে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রথমে সিলেটের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভাগটির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। পরে পর্যায়ক্রমে তা দেশের সীমান্ত ও পাহাড়ি এলাকায় বিস্তার ঘটে। ফলে অনেক সীমান্ত এলাকায় জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত।

এদিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় টিএসপি কারখানা থেকে এক হাজার ১৮২ টন রক সালফার পাচারের ঘটনায় আরো নতুন তথ্য মিলেছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। টিএসপি কারখানা থেকে চুরির পর তা আনা হয়েছিল চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ঝাউতলা আহলে হাদিস মসজিদে। সেখান থেকে কাঠের বাক্সে করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। মসজিদ থেকে তা বণ্টনের দায়িত্বে ছিলেন মোহাম্মদ উল্লাহ। তিনি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর নিকটাত্দীয়। একসময় তিনি 'রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন'-এর (আরএসও) সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল। পরে জামিনে ছাড়া পান। এখন দেশের বাইরে আছেন তিনি।

6 July 2010

চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় নিজামীকে জিজ্ঞাসাবাদ


নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০৭-০৭-২০১০

চট্টগ্রামে আটক ১০ ট্রাক অস্ত্রের ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। নিজামী ওই সময় শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, নিজামী বেশির ভাগ প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি।

মতিউর রহমান নিজামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত রোববার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা কার্যালয়ে এর আগে থেকেই জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাজতে তাঁদের রাখা হয়েছে। পল্টন থানায় দায়ের করা তিনটি মামলার প্রতিটিতে তাঁদের প্রত্যেককে নয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এদিকে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজাহারুল ইসলামসহ আটজনের আগাম জামিন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। চার মাসের জন্য এ জামিন মঞ্জুর করা হয়।

গোয়েন্দা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, নিজামীর কাছে ১০ ট্রাক অস্ত্রের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি ওই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলেছেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমীন অস্ত্র খালাসের রাতে চট্টগ্রামের সিএফএল রেস্টহাউসে ছিলেন। নিজামীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি ওই কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন কি না। নিজামী গোয়েন্দা পুলিশকে জানান, ওই কর্মকর্তা ব্যক্তিগত সফরে গিয়ে সেখানে রাত কাটান।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নিজামীর কাছে জানতে চান, চট্টগ্রাম সার কারখানার গুদাম থেকে এক হাজার ১৮২ টন রক সালফার চুরির ঘটনার তদন্ত কেন শেষ করা হয়নি। চুরি হওয়া ওই সব রক সালফার জেএমবির হাতে চলে যায়। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবির নেতা সাইদুর রহমান অনেক রক সালফার ফেলে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। নিজামী এ ব্যাপারে কোনো উত্তর দেননি।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতের নেতাদের বক্তব্য থেকে তাঁরা জানতে পেরেছেন, জামায়াতে ইসলামীতে ‘তালিম বিভাগ’ নামে একটি শাখা ছিল। এ শাখায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। ’৯০-এর পর ওই শাখার নাম বদল করে স্বাস্থ্য শাখা রাখা হয়। শাখার সদস্যরা ক্ষুদ্র অস্ত্রের প্রশিক্ষণ পান। জেএমবির নেতা সাইদুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদে এ সম্পর্কে আরও তথ্য দিয়ে বলেছেন, প্রশিক্ষণ-সুবিধার জন্য এসব শাখা পাহাড়ি অঞ্চলে গড়ে তোলা হয়েছিল। গ্রেপ্তার হওয়া জামায়াতের নেতারা জিজ্ঞাসাবাদের সময় এ বিষয়ে কোনো উত্তর দেননি বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে তাঁর বিভিন্ন স্থানে দেওয়া ভাষণের রেকর্ড শোনানো হয়। ওই ভাষণে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার বিষয়টিকে সমর্থন করেছিলেন এবং হুমায়ুন আজাদকে মুরতাদ ঘোষণা করেন। নারী নেতৃত্ব নিয়েও সাঈদীকে তাঁর ভাষণের রেকর্ডও শোনানো হয়। তিনি বলেন, তিনি অত রাজনীতি বোঝেন না। লোকজন তাঁকে ভালোবেসে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, জামায়াত পরিচালিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বাৎসরিক আয়-ব্যয় নিয়ে তথ্য দিয়েছেন জামায়াতের নেতারা। তাঁদের তথ্য অনুযায়ী জামায়াতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা আয় হয়। এসব আয়ের একটি বড় অংশ জামায়াত ও এর অঙ্গসংগঠনের পেছনে ব্যয় হয়ে থাকে।

জামিন মঞ্জুর: পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজাহারুল ইসলামসহ আটজনের আগাম জামিন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। চার মাসের জন্য এ জামিন মঞ্জুর করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিচারপতি আফজাল হোসেন আহমেদ ও মুহাম্মদ আবদুল হাফিজের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তাঁদের আগাম জামিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে কেন তাঁদের স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না, তা তিন সপ্তাহের মধ্যে জানতে চেয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট লোকজনের প্রতি রুল জারি করা হয়।

জামিন পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন—সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান, প্রচার সম্পাদক তাসনীম আলম, আইনবিষয়ক সম্পাদক জসিমউদ্দিন সরকার, ঢাকা মহানগর সহকারী সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম, জামায়াতের নেতা মিজানুর রহমান, ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আনিসুর রহমান ও সেক্রেটারি মো. ওবায়েদ। গতকাল আটজন আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন জানান। তাঁদের পক্ষে আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, বেলায়েত হোসেন ও সরকারপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির মামলা পরিচালনা করেন।

উল্লেখ্য, জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ২৯ জুন তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশের উপপরিদর্শক এমদাদুল হক শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন।

যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে ১০ সদস্যের কমিটি!রিমান্ডে জামায়াতের তিন নেতার তথ্য

মাসুদ কার্জন

বহুল আলোচিত যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের কথা স্বীকার করেছেন পুলিশের রিমান্ডে থাকা জামায়াতের স্থানীয় তিন নেতা। তাঁরা জানান, ব্যারিস্টার রাজ্জাকের নেতৃত্বে এই কমিটির কাজ তাদের (জামায়াত) পক্ষে জনমত গড়ে তোলা। প্রাথমিকভাবে এ কাজের জন্য ৬৬ লাখ টাকার তহবিলও বরাদ্দ আছে। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধ ইস্যু নিয়ে জামায়াতের মধ্যে বিদ্যমান নানা বিরোধের কথাও স্বীকার করেছেন জামায়াত নেতারা। তাঁরা তিনজনই দাবি করেন, গ্রেপ্তারের পর এ বিরোধ আরো মাথাচাড়া দিতে পারে।

জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে রিমান্ডে নিয়ে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গতকাল সোমবারও তাঁদের কখনো একা, কখনো একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

'জেএমবি, জঙ্গি বা বাংলা ভাই সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই।' পুলিশ জামায়াতের সঙ্গে জেএমবির যোগাযোগের প্রসঙ্গ উত্থাপন করতেই অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে এমন মন্তব্য করেন রিমান্ডে থাকা জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী। পরে 'বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি'_মন্ত্রী থাকাকালীন নিজামীর বক্তব্যসংবলিত পত্রিকার কাটিং ও ভিডিও ক্লিপিংস উপস্থাপন করে পরবর্তী সময়ের ঘটনাপ্রবাহের প্রসঙ্গ তুললে তিনি বিব্রত বোধ করেন। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা তখন জানতে চান, সরকারের মন্ত্রী থেকে এ রকম মন্তব্য বাংলা ভাইকে বাঁচানোর জন্য কি না। এ প্রশ্ন শুনে নীরব হয়ে যান নিজামী। এ প্রসঙ্গে আর কথা বলতে চাননি তিনি। সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিজামীকে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনা এভাবেই বর্ণনা করলেন। বাংলা ভাই, জেএমবি ছাড়াও চারদলীয় জোট সরকারের আমলে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় টিএসপি কারখানা থেকে এক হাজার ১৮২ টন রক-সালফার (এক ধরনের বিস্ফোরক) গায়েব হওয়ার ঘটনায় নিজামীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এসব বিস্ফোরক পরে জেএমবির হাতে যায়। তা দিয়ে জেএমবি বোমা তৈরি করেছিল বলে এর আগে জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবির প্রধান সাইদুর গোয়েন্দাদের জানিয়েছে।
এদিকে রিমান্ডে থাকা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট লেখক ড. হুমায়ুন আজাদকে হত্যাচেষ্টার প্ররোচনার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে। এ ব্যাপারে তাঁকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে সংশ্লিষ্টতা মিলেছে বলে সূত্রগুলো দাবি করেছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, রবিবার রাত ২টা পর্যন্ত নিজামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে সোমবার সকালে তিনজনকে পাশাপাশি বসিয়ে কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশের একাধিক দল তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। একেক দল একেকটি বিষয় নিয়ে তাঁদের আলাদা আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

সূত্রমতে, মতিউর রহমান নিজামী শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে পতেঙ্গার টিএসপি কারখানা থেকে রক-সালফার গায়েব হওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই সময় কারখানাটির স্টোর ইন-চার্জ ছিলেন আহলে হাদিস নেতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসাদুল্লাহ আল গালিবের ভাতিজা জেএমবির এহসার সদস্য সালাফি। বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক গায়েব হওয়ার ঘটনায় মামলা হয় এবং সালাফি গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু ওই মামলাটি বেশি দূর এগোয়নি।

গতকাল জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মতিউর রহমান নিজামীর কাছে কেন এই মামলাটির এ রকম পরিণতি হয়েছিল, জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, মামলা দেখভালের দায়িত্ব তো পুলিশের। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা পাল্টা প্রশ্ন করেন, 'আপনার মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা কারখানা থেকে এত বড় একটি চুরির ঘটনা ঘটল, আপনি তা ছাড় দিলেন কেন?' নিজামী জবাব দেন, 'ব্যস্ততার কারণে সবকিছুর খোঁজ রাখা সম্ভব ছিল না।' জিজ্ঞাসাবাদকারীরা প্রশ্ন করেন, 'ব্যস্ততা, না ইচ্ছাকৃত?' তখন অনেকটা চুপ হয়ে যান নিজামী। তাঁকে জানানো হয়, বিপুল পরিমাণ এসব বিস্ফোরক পরে জেএমবির হাতে যায়। জেএমবি প্রধান সাইদুর রহমানও জিজ্ঞাসাবাদে এ ব্যাপারে অনেক কথা জানিয়েছেন। সাইদুর বিস্ফোরকের কিছু অংশ বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেওয়ার কথাও গোয়েন্দাদের জানিয়েছে।

পুলিশ জানায়, সালাফিকে মতিউর রহমান নিজামীই চাকরি দিয়েছিলেন। কেন তাকে ওই কারখানায় চাকরি দিয়েছিলেন_এমন প্রশ্নেরও সঠিক জবাব দিতে পারেননি নিজামী।

জামায়াতের শীর্ষ কোনো নেতার সুপারিশ ছাড়া বাংলাদেশের কেউ মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না। কিন্তু জেএমবির অনেক সদস্যই মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ধরা পড়ার পর জেএমবির একাধিক সদস্য জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকেও এ তথ্য দিয়েছে। বর্তমানে জেএমবির শুরা সদস্য শাহেদ মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। সে এখন জেএমবির আমির পদের দাবিদার। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব জঙ্গিদের ভর্তির বিষয়ে জামায়াত নেতারা কেন সুপারিশ করেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে নিজামী বলেন, 'বিষয়টি আমার জানা নেই।'

সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর কাছে হুমায়ুন আজাদ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু কোনো কথা বলেননি তিনি। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা তখন সাঈদীকে উদ্দেশ করে বলেন, 'হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলায় তো আপনি খুশি হয়েছিলেন।' সাঈদী বলেন, 'তা কি হয় নাকি?' তখন তাঁর একটি 'ওয়াজ'-এর ক্যাসেট বের করা হয়। ক্যাসেটটিতে হুমায়ুন আজাদকে কাফের, ইসলামের শত্রু বলে আখ্যা দিয়েছিলেন সাঈদী। এর কিছু দিন পরই একুশে বইমেলা চলাকালে বাংলা একাডেমীর সামনে তাঁর ওপর হামলা হয়। হামলার পর সাঈদী তাঁর ওয়াজে বলেছিলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কাফের ছিল, তার শাস্তি হয়েছে।' ক্যাসেট শুনে সাঈদী পরক্ষণে বলেন, 'ওয়াজের সময় কথা প্রসঙ্গে অনেক কিছুই বলতে হয়।' জিজ্ঞাসাবাদকারীরা বলেন, 'তাহলে কি ওয়াজ মাহফিলের নামে আপনি রাজনীতি করেন?' পরে সাঈদীকে শোনানো হয় তাঁর ওয়াজ মাহফিলের আরেকটি ক্যাসেট। যেখানে তিনি বলছেন_'ইসলামের জন্য সশস্ত্র জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।' কেন এই কথা তিনি প্রচার করেন জানতে চাইলে সাঈদী কোরআন-হাদিসের ব্যাখ্যা দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন।

হাজতে কথাকাটাকাটি : সূত্র জানায়, ডিবির হাজতখানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে জেএমবির এহসার সদস্য সৈকতকে। রবিবার এই এহসার সাঈদীকে দেখেই ক্ষেপে যান। সাঈদীকে উদ্দেশ করে গালিগালাজ শুরু করেন। তাঁকে কাফের আখ্যা দেয়। সৈকত বলে, 'আপনি ওয়াজ করেন একরকম আর কাজ করেন নিজের সুবিধামতো।' এ ছাড়া সৈকত নিজামীর পেছনে নামাজ পড়তেও অস্বীকৃতি জানায়। এক কর্মকর্তা জানান, রবিবার রাতে নামাজের সময় হলে নিজামী নামাজে দাঁড়ান। অন্য আসামিরা নিজামীর পেছনে নামাজে দাঁড়ালেও সৈকত নিজামীকে ইসলামের লেবাসধারী আখ্যা দিয়ে তাঁর পেছনে নামাজ না পড়ে আলাদাভাবে নামাজ আদায় করে।