Showing posts with label কুষ্টিয়া. Show all posts
Showing posts with label কুষ্টিয়া. Show all posts

5 November 2010

ঈশ্বরদী ও পাকশীতে তদন্তদল: নিজামী-সুবহানের অপকর্মের অনেক প্রমাণ

পাবনা ও ঈশ্বরদী প্রতিনিধি

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনার ঈশ্বরদী ও পাকশীর বিভিন্ন জায়গায় গণহত্যা, লুট, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগের অনেক ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আলবদর-রাজাকারদের নেতৃত্বদানকারী জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও মাওলানা আবদুস সুবহান এবং মাওলানা ইসহাক আলী, খোদা বঙ্ খান প্রমুখ এসব অপকর্মের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। তাঁদের নির্দেশে মসজিদ থেকে পবিত্র কোরআন শরিফ পড়ার সময় ডেকে নিয়েও মানুষকে খুন করা হয়। এর যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তদল গতকাল শুক্রবার ঈশ্বরদীর বিভিন্ন বধ্যভূমি ও গণকবর পরিদর্শন এবং মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাক্ষ্য গ্রহণ করে। পরে পাবনা সার্কিট হাউসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তদন্তদলের সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ হায়দার আলী এসব কথা জানান।

এর আগে তদন্তদলের কাছে ঈশ্বরদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সহকারী কমান্ডার (অর্থ) তহুরুল আলী মোল্লাসহ মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা জানান, ঈশ্বরদী স্টেশন রোডে বর্তমানে যেখানে বাটার শোরুমটি রয়েছে, সেটি ১৯৭১ সালে রাজাকারদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ঈশ্বরদীর বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষকে ওই ক্যাম্পে ধরে এনে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হতো। পরে প্রেসক্লাবের পেছনের নিচু জমিতে লাশগুলো পুঁতে রাখা হতো। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের নেতারা জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও মওলানা আবদুস সুবহান সপ্তাহে কমপক্ষে দুদিন ওই ক্যাম্পে এসে অবস্থান করে রাজাকারদের দিকনির্দেশনা দিতেন। তাঁদের দুজনের নির্দেশেই ঈশ্বরদীতে ব্যাপক গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকার-আলবদররা।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ৯ মাসে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা ঈশ্বরদীর রেলওয়ে কলোনির পাম্প হাউস এলাকার বধ্যভূমিতেই কমপক্ষে ৫০০ মানুষকে হত্যা করে। এ ছাড়া প্রেসক্লাবের পেছনের জায়গা, ভূতের গাড়ি বধ্যভূমি, পাকশী রেলওয়ে বধ্যভূমি, চন্দ্রপ্রভা স্কুলসংলগ্ন এলাকায়ও বহু মানুষকে হত্যা করা হয়।

তদন্তদলের সদস্যরা দুপুরে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন বধ্যভূমি ও গণকবর পরিদর্শন শেষে পাকশীতে যান। পাকশী রেলওয়ে বধ্যভূমি এলাকায় তাঁরা এক পরিবারের পাঁচ শহীদের কবর পরিদর্শন করেন। বিকেলে তদন্তদলের সদস্যরা মাছদিয়া ও মাছুপাড়া গণকবর পরিদর্শন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এর আগে ঈশ্বরদী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল কার্যালয়ে ঈশ্বরদীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তদন্তদল ঈশ্বরদী ও পাকশীর মোট ২০ শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান, অ্যাডভোকেট সৈয়দ হায়দার আলী, আবদুর রহমান হাওলাদার ও আলতাফ উদ্দিন এবং তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান, জে এম আলতাফুর রহমান, এস এম ইদ্রিস আলী ও দলনেতার একান্ত কর্মকর্তা কাশেমসহ তদন্তদল গতকাল সকালে ঈশ্বরদী মুক্তিযোদ্ধা সংসদে আসে। এ সময় সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান শরিফ তাঁদের স্বাগত জানান। তদন্তদল গতকাল ঈশ্বরদী শহর ও পাকশী ইউনিয়নের সাতটি বধ্যভূমি পরিদর্শন করে।

তদন্তদলের সদস্যরা আজ শনিবার সকালে সাঁথিয়া ও ডেমরার আলবদর-রাজাকার ক্যাম্প চিহ্নিতকরণ, পরিদর্শন ও স্থানীয় লোকজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন। দুপুরে তাঁরা ধুলাউড়ি ও করমজার বধ্যভূমি, গণকবর, আলবদর-রাজাকার ক্যাম্প চিহ্নিতকরণ, পরিদর্শন ও সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন।

সাক্ষীদের নিরাপত্তা
সাক্ষীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন_এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান সাংবাদিকদের জানান, সুনির্দিষ্টভাবে তাঁদের কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। তা ছাড়া জেলা পুলিশ সুপারসহ প্রতিটি থানার ওসিকে সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানের নির্দেশ দেওয়া আছে। এ ছাড়া সরকার সাক্ষীদের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত একটি আইন করার কথা ভাবছে।

রাজাকার-আলবদরদের সংখ্যা জানা নেই
পাবনায় রাজাকার-আলবদরের সংখ্যা কত এর কোনো পরিসংখ্যান দিতে পারেনি পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড বা অন্য কেউ। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, পাবনা জেলায় হাতে গোনা কয়েকজন রাজাকার ছিল। আর আলবদর ছিল প্রায় ৫০ জনের মতো। তাদের অনেকেই মারা গেছে। বর্তমানে জীবিত আছে সাত থেকে আটজনের মতো। তবে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান কালের কণ্ঠকে বলেন, পাবনায় রাজাকার-আলবদরের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। যতই দিন যাচ্ছে, তালিকা ততই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

28 September 2010

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: শিবির-ছাত্রদলের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ১৬ নেতা-কর্মী আহত

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল সোমবার ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি শাহীন, ছাত্রদলের সভাপতি ওমর ফারুক, ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুজার গিফারী গাফফারসহ তিন পক্ষের অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত শাহীন, সাদ্দাম হোসেন হলের শিবিরের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাসুদ ও ছাত্রলীগকর্মী মিন্টুকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অন্যরা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ গতকাল রাতে সাদ্দাম হোসেন হলে তল্লাশি চালিয়ে তিন ছাত্রকে আটক করেছে।
সংঘর্ষের পর ছাত্রদল কুষ্টিয়া-খুলনা সড়ক অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, ঈদের ছুটির পর গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে জড়ো হয়। তাদের কেউ কেউ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অশালীন কথাবার্তা বলতে থাকে। ছাত্রলীগের এক কর্মী এসব শুনে তাদের দলীয় টেন্টে গিয়ে জানালে উত্তেজিত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দেয়। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা শিক্ষক সমিতির অফিসসহ বিভিন্ন শিক্ষকের কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেয়। দৌড়ে পালানোর সময় ছাত্রদলের সভাপতি ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, সহসভাপতি সোহাগ এবং কর্মী রতন, সোহেল ও আনিছ আহত হন। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে পুনরায় অনুষদ ভবনের কাছে আসে। সেখানে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের না পেয়ে পাশেই শিবিরের টেন্টে দাঁড়িয়ে থাকা নেতা-কর্মীর ওপর হামলা চালায়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহীন, সাদ্দাম হলের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাসুদসহ কমপক্ষে ১০ জন অহত হন। গুরুতর আহত শাহীন ও মাসুদকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে এবং পরে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শিবির সভাপতি আহত হওয়ার খবর আবাসিক হলগুলোতে পেঁৗছালে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা হোসেন হলের সামনে জড়ো হতে থাকে। পরে তারা সাদ্দাম হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আবুজার গিফারী গাফফার, কর্মী মিন্টু, শফিকসহ পাঁচজন আহত হন। গুরুতর আহত মিন্টুকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে এবং পরে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, সংঘর্ষের সময় শিবিরের এক ক্যাডার হলের ছাদ থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীকে লক্ষ্য করে গুলিও করে।
এদিকে সংঘর্ষের জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক প্রায় আধাঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। এ সময় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ছাত্রদল সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন, 'ছাত্রলীগের ক্যাডাররা কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের ওপর হামলা করে।' তবে ছাত্রলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর ছাত্রদল ও শিবিরের ক্যাডাররা হামলা চালালে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
কুষ্টিয়া সদরের এএসপি হালিম বলেন, 'আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে।' বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুবুল আরফিন বলেন, পরিস্থিতি শান্ত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট রয়েছে।