Showing posts with label চট্টগ্রাম. Show all posts
Showing posts with label চট্টগ্রাম. Show all posts

4 May 2011

দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা: নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

বহুল আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির সিনিয়র এএসপি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান চৌধুরীর করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম এইচ এম ফজলুল বারী গতকাল বুধবার তা মঞ্জুর করেন।

অস্ত্র আটকের ঘটনায় অস্ত্র এবং চোরাচালান আইনে করা দুটি মামলায়ই জামায়াতের এই শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

ঢাকা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চট্টগ্রাম আনা হলে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে_এ আশঙ্কায় নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি চান তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত নিজামীকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।

এর আগে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান চৌধুরী গতকাল দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিভিন্ন আসামি ও সাক্ষীর দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মতিউর রহমান নিজামীর ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। তাই তাঁকে গ্রেপ্তার দেখাতে আবেদন জানিয়েছিলাম। কয়েক দিনের মধ্যে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।'

উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত মতিউর রহমান নিজামী বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। গত বছর ২১ জুলাই পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ২০০৪ সালে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের সময় নিজামী তৎকালীন জোট সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের শুনানির সময় অতিরিক্ত মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম সেন্টু আদালতে বলেন, 'শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সিইউএফএল জেটি ঘাটে খালাসের সময় নিজামী এ ব্যাপারে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেননি। এমনকি সিইউএফএলসহ সরকারি বিভিন্ন মাধ্যম তাঁর কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনো অনুমতি না দিয়ে তাদের নিবৃত্ত করেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় নিজামী ঘটনায় জড়িত।'

গতকাল সকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে গিয়ে গভর্নমেন্ট রেকর্ড অফিসারের (জিআরও) কাছে নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনপত্র জমা দেন। এরপর তা মহানগর হাকিম এইচ এম ফজলুল বারীর খাস কামরায় নিয়ে যাওয়া হলে তিনি প্রকাশ্য আদালতে শুনানির নির্দেশ দেন। পরে বিকেলে প্রকাশ্যে শুনানি শেষে আবেদন গ্রহণ করা হয়।

প্রসঙ্গত ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলী থানাধীন সিইউএফএল জেটি ঘাট থেকে দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে করা দুটি মামলা আদালতের নির্দেশে তিন বছর ধরে সিআইডি অধিকতর তদন্ত করছে। আগামী ১৫ মের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ২০ জন সাক্ষী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

অধিকতর তদন্ত শুরু হওয়ার পর সিআইডি নিজামী ও লুৎফুজ্জামান বাবর ছাড়াও এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, পরিচালক উইং কমান্ডার শাহাবুদ্দিন, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, ফিল্ড অফিসার আকবর হোসেন খান, সরকারি সার কারখানা সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহসীন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এনামুল হককে গ্রেপ্তার করেছে।

5 April 2011

শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারের উপদেষ্টা ছয় শিক্ষক!

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি | তারিখ: ০৬-০৪-২০১১

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন শিক্ষক। চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারের এই কোচিং সেন্টারের নাম ইনডেক্স বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টার।

জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির এই কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে। তবে কোচিং সেন্টারের পরিচিতিমূলক বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, এটি পরিচালনা করছে চিটাগাং ইউনির্ভাসিটি স্টুডেন্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) মো. আলাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ভর্তি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত থাকার কোনো নিয়ম নেই। নৈতিকভাবেও এটা সমর্থনযোগ্য নয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিবির পরিচালিত ইনডেক্স কোচিং সেন্টারের সাত উপদেষ্টার ছয়জনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁরা হলেন, অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আবুল কালাম আযাদ, দর্শন বিভাগের মোজাম্মেল হক, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের কাজী মু. বরকত আলী, ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তানভীর মু. হায়দার আরিফ এবং মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের মুহাম্মদ জাফর। সাত উপদেষ্টার অন্যজন হলেন ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সাবেক শিক্ষক মুহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ। এঁদের সবাই ক্যাম্পাসে জামায়াতপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত।

জানা গেছে, কোচিং সেন্টারের পরিচালনা পরিষদের চারজনই ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। পরিচালনা পর্ষদের প্রধান হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুস্তফা সাকের উল্লাহ। অন্যরা হলেন সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দীন, শামছুদ্দিন ও আবুল ফজল।
এ বিষয়ে জানতে আবুল কালামের মোবাইলে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মুহাম্মদ জাফর ও বরকত আলী সভায় ব্যস্ত আছেন জানিয়ে পরে যোগাযোগ করতে বলেন। কামাল উদ্দিন ও মোজাম্মেল হকের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আর তানভীর শিক্ষাছুটিতে বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন।

কোচিং সেন্টারের পরিচালক শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরামর্শের জন্য শিক্ষকদের উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে। কোচিং সেন্টারের কোনো প্রয়োজনে আমরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ জন্য তাঁদের কোনো সম্মানী দেওয়া হয় না।’

16 March 2011

কারমাইকেল ও কক্সবাজার কলেজে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষ, আহত ৪০, গ্রেপ্তার ৩৩ শিবিরকর্মী

কালের কণ্ঠ ডেস্ক

স্নাতক শ্রেণীর নবীন ছাত্রছাত্রীদের স্বাগত জানানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল মঙ্গলবার রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও কক্সবাজার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির সংঘর্ষে মোট ৮০ জন আহত এবং ৩৩ শিবিরকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৯ মার্চ পর্যন্ত কারমাইকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে ছাত্রছাত্রীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রংপুর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, গতকাল স্নাতক প্রথম বর্ষের নবীন ছাত্রদের স্বাগত জানানোর জন্য ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে মিছিল করে। কিন্তু ছাত্রশিবির স্বাগত মিছিল না করে বহিরাগত পরিবেষ্টিত হয়ে ক্যাম্পাসে সভা করতে থাকে। ছাত্রলীগকর্মীরা এ সময় ছাত্রশিবির নেতাদের কাছে বহিরাগতদের বের করে দেওয়ার অনুরোধ জানালে উভয় পক্ষে কথা কাটাকাটি ও পরে সংঘর্ষ হয়। পরে উভয় সংগঠন পরস্পরকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া দেয়। এ সময় শিবিরকর্মীরা জিএল ছাত্রাবাস থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে ছাত্রলীগকর্মী শিশির, সুমন ও কামালকে বেধড়ক পেটায়। তারা দৃক নিউজের রংপুর সংবাদদাতা সেলিম মাহফুজকে মারধর করে এবং অন্য সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এতে ১০ সাংবাদিকসহ ৪০ জন আহত হয়। এ ঘটনায় সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও পার্শ্ববর্তী লালবাগ এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পুলিশ মহানগর শিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক আলামীন হাসান, মহানগর শাখার দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান তুহিন, জিএল হোস্টেল শাখার সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিসহ শিবিরের ২১ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে ১৯ মার্চ পর্যন্ত কলেজ বন্ধ এবং গতকাল সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে চারটি ছাত্রাবাসের ছাত্রদের হলত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার সূত্রপাত অনুসন্ধানে কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাককে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

ঘটনার জন্য উভয় ছাত্র সংগঠন পরস্পরকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছে। এ ঘটনায় কলেজ ও আশপাশের এলাকায় দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় বিপুল পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

এদিকে আমাদের কক্সবাজার অফিস জানিয়েছে, সেখানকার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে গতকাল সকালে প্রথম বর্ষ স্নাতকের নবীন ছাত্রদের স্বাগত জানানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরকর্মীদের মধ্যে দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পুলিশ, সংবাদকর্মীসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সলিমুর রহমানসহ পাঁচজনকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১২ শিবির ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়ার জন্য কলেজের প্রশাসনিক ভবনের গেটে শিবির ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয়। শিবিরকর্মীরা রীতিমতো ল্যাপটপ নিয়ে বসে শিক্ষার্থীদের ছবি ও নামধাম তালিকাভুক্ত করা শুরু করে। একপর্যায়ে উভয় ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা লাইনে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ করার চেষ্টা করলে প্রথমে কথা কাটাকাটি এবং পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। শিবিরকর্মীরা বেশ কিছু ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে মারধর করে। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সলিমুর রহমান, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুজিবুল আলমসহ কয়েকজন সাংবাদিক ও পুলিশ সদস্য আহত হন। আহতদের বেশির ভাগই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে। সংঘর্ষের সংবাদ পেয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশ কলেজ ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১২ শিবির ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করে। এ ব্যাপারে আহত পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর উনুমং বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। উল্লেখ্য, প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর এ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটিতে দুই দশক ধরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের আধিপত্য বিরাজ করে আসছিল।

25 February 2011

নেপথ্যে শিবির: অধ্যক্ষের নির্দেশে মুছে গেল হুমায়ুন আজাদের কবিতা

আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম কলেজে লেখক কবি হুমায়ুন আজাদ নিষিদ্ধ! ছাত্রশিবিরের আপত্তির মুখে একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান উপলক্ষে কলেজের পক্ষ থেকে ছাপানো বুকলেটের পঞ্চম কলামে হুমায়ুন আজাদের 'বাঙলা ভাষা : তোমার মুখের দিকে' কবিতাটি স্টিকার দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কবি মাহবুব-উল-আলমের 'ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি' কবিতাটির নিচেই হুমায়ুন আজাদের ছয় লাইনের এ কবিতাটি ছিল। কলেজ অধ্যক্ষের নির্দেশে কবিতাটি মুছে দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

হুমায়ুন আজাদের কবিতাটি মুছে দেওয়ার পর বুকলেটটি ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি কলেজের ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণ করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বুকলেট সম্পাদনা পরিষদের একজন সদস্য ও কলেজ শিক্ষক গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠকে জানান, বুকলেট ছাপা হওয়ার পর শিবিরের নেতারা কবিতাটি নিয়ে অধ্যক্ষের কাছে আপত্তি জানায়। এর পরই অধ্যক্ষ কবিতাটি মুছে ফেলার নির্দেশ দেন।

কবিতা মুছে দেওয়ার কথা স্বীকার করে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখর দস্তিদার গতকাল শুক্রবার ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'স্বল্প সময়ের মধ্যে বুকলেটটি তৈরি করা হয়েছে। বুকলেট সম্পাদনা পরিষদ আমার সঙ্গে আলোচনা না করে কবিতাটি ছাপিয়েছিল। দেশে বড়-বড় কবির ভাষা এবং একুশ নিয়ে বিখ্যাত কবিতা না ছাপিয়ে হুমায়ুন আজাদের কবিতা ছাপানোতে অনেকেই এর সমালোচনা করতে পারেন। তাই বুকলেট থেকে সম্পাদনা পরিষদের প্রধান অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানকে কবিতাটি মুছে দিতে বলেছি।' তবে এ বিষয়ে শিবিরের আপত্তির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

বুকলেট সম্পাদনা পরিষদের প্রধান অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, 'বুকলেটটি তৈরি করার সময় হুমায়ুন আজাদের কবিতাটি দিয়েছিলাম। পরে অধ্যক্ষের নির্দেশে বুকলেটে ছাপানো কবিতাটি মুছে দিয়েছি। অধ্যক্ষ আমাকে বলেছেন, একুশের অনুষ্ঠান উপলক্ষে ছাপানো বুকলেটে ভাষার কবিতা থাকা অপ্রাসঙ্গিক। বরেণ্য কবিদের কবিতা না ছাপিয়ে এটা ছাপালে অযথা বিতর্ক তৈরি হবে।'

চট্টগ্রাম কলেজ শাখা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হোসাইন নুরী বলেন, 'বুকলেট ছাপানোর সঙ্গে শিবিরের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। ছাপানো বুকলেটে কী মুছে দেওয়া হয়েছে তার সঙ্গেও শিবির সম্পৃক্ত ছিল না। এটা অধ্যক্ষ করেছেন।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক শিক্ষক জানান, অধ্যক্ষ শিবিরের আপত্তির মুখে হুমায়ুন আজাদের কবিতাটি স্টিকার দিয়ে মুছে দিয়েছেন। শিবির আপত্তি না জানালে বুকলেট থেকে হুমায়ুন আজাদের কবিতাটি মুছে দেওয়া হলো কেন? কবিতাটি না মুছে বুকলেটটি ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণ করতে পারতেন না?

1 January 2011

৪০ হাজার রপ্তানির পোশাক জব্দ: দুবাইতে বসে ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি!

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম | তারিখ: ০২-০১-২০১১

দক্ষিণ আফ্রিকায় রপ্তানির জন্য প্রস্তুত ৪০ হাজার শার্ট (শিশু পোশাক) ছিনতাইয়ের অভিযোগে পুলিশ দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। চট্টগ্রামের একটি গুদাম ও ঢাকার উত্তরা থেকে ছিনতাই হওয়া সব পোশাকও উদ্ধার করা হয়েছে। চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর আটজন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সাজ্জাদ হোসেন দুবাইতে বসে এই ছিনতাইয়ের সমন্বয় করেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া সন্ত্রাসীর নাম রুবেল ও কাভার্ড ভ্যানের চালক মোহাম্মদ জহির। এঁদের মধ্যে রুবেল পলাতক আসামি সাজ্জাদের বাহিনীর সদস্য। রুবেলের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা আছে। তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তাকারীদের এখন হত্যার হুমকি দিচ্ছেন সাজ্জাদ।

সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে শহরতলির আতুরার ডিপোর পশ্চিম হাজিপাড়ার জনৈক বাহাদুরের গুদাম থেকে ছিনতাই হওয়া সাড়ে সাত হাজার শার্ট জব্দ করা হয়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রুবেল তিনতলা গুদাম ভবন থেকে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ পুকুরটি ঘেরাও করে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আজ রোববার আদালতে আবেদন করা হবে। বাকি সাড়ে ৩২ হাজার শার্টসহ একটি কাভার্ড ভ্যান গত শুক্রবার ঢাকার উত্তরা থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় চালক জহিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চান্দগাঁও থানার খতিজা এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড এক্সেসরিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৪০ হাজার তৈরি শার্ট পার্শ্ববর্তী মোনেনো ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইনে পাঠানো হয়। পোশাক পরিবহনের সময় সিঅ্যান্ডবি রাস্তার মাথায় তিন সন্ত্রাসী গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ওই গাড়িটি পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল দুটি মোটরসাইকেল আরোহীসহ আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী।

সূত্র জানায়, সাজ্জাদের নির্দেশে তাঁর জুনিয়র বাহিনীর প্রধান সরওয়ার ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দেন। তাঁর বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় তিনটি হত্যাসহ আটটি মামলা আছে। ছিনতাইয়ে অংশ নেওয়া আরও তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন, তিনটি হত্যাসহ নয়টি মামলার আসামি মহিন, একাধিক মামলার আসামি মেক্সন ও টিটন। এদের মধ্যে মহিন ও মেক্সন অস্ত্র পরিচালনায় পারদর্শী। খতিজা এন্টারপ্রাইজের পরিচালক জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় রপ্তানি করতে স্কুলের শিশুদের জন্য ৪০ হাজার শার্ট তৈরি করা হয়। জাহাজীকরণের আগেই সন্ত্রাসীরা তৈরি পোশাকবাহী গাড়িটি ছিনতাই করে।

চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর আট খুনের মামলায় শিবির ক্যাডার সাজ্জাদসহ চার সন্ত্রাসীর মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ২০০৮ সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের একটি আদালতে এই রায় দেওয়া হয়। রায়ের আগেই সাজ্জাদ দুবাইতে পালিয়ে যান।

বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সাজ্জাদ দুবাইতে বসে ৪০ হাজার শার্ট ছিনতাইয়ের সমন্বয় করেন। পুলিশ তাদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। তাঁর বাহিনীর একজন গ্রেপ্তার হওয়ায় সাজ্জাদ স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে ফোন করে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন।

ওসি দাবি করেন, ‘আমরা সাজ্জাদের জুনিয়র বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত করেছি। এরা বায়েজিদ ও পাঁচলাইশ এলাকায় ব্যাপক চাঁদাবাজি ও শিল্পাঞ্চলে ছিনতাই-ডাকাতি করছে। এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাজ্জাদের বাহিনীর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমরা যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত আছি। কারণ, মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে সাজ্জাদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন।’

27 December 2010

হাটহাজারীতে বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে: আক্রমণের কৌশল বদলে সংগঠিত হচ্ছে জেএমবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও হাটহাজারী প্রতিনিধি

কৌশল পরিবর্তনের মাধ্যমে সারা দেশে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। এ ক্ষেত্রে তারা আগের পন্থা 'আক্রমণ' থেকে পিছিয়ে এসেছে। এখন শুধু 'দাওয়াত'-এর মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ করছে তারা। তবে আত্মরক্ষার্থে সংগঠনের সদস্যদের নিজেদের সঙ্গে বোমা রাখতে পারবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকলে এই বোমার ব্যবহার করতে হবে।

শক্তিশালী পাঁচটি বোমাসহ চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা পুলিশের হাতে গত রবিবার গ্রেপ্তার জেএমবি সদস্য শামীম হাসান (২২) পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। মাসুম নামের এক যুবক বর্তমানে চট্টগ্রামে জেএমবিকে সংগঠিত করছে বলে শামীমের দাবি। আর শামীম এই দলে বোমা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করত। ইতিমধ্যে মাসুম ও শামীম ১১ জনকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছে। শামীমকে ২০০৮ সালে একটি জঙ্গি মামলায় সাত বছরের সাজা দিয়েছিলেন আদালত।

এদিকে হাটহাজারীর জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা গ্রেনেড আকৃতির পাঁচটি বোমা গতকাল সোমবার নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কর্ণফুলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুর রশিদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি দল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করে।

আমিনুর রশিদ জানান, মূলত লোহার পাইপের ভেতরে করে বোমাগুলো বানানো হয়। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হলেও এসব বোমা খুবই শক্তিশালী। ধারণা করা হচ্ছে, বাইরে থেকে এসব বোমা বানিয়ে হাটহাজারীতে আনা হয়েছিল।

হাটহাজারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে জানান, পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার শামীমসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হামলার শিকার পুলিশের এসআই ওমর ফারুক বাদী হয়ে এসব মামলা করেন। বিস্ফোরক আইন ও সন্ত্রাস দমন অধ্যাদেশে করা এসব মামলায় শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

জেএমবির সদস্য হিসেবে শামীম যাদের নাম প্রকাশ করেছে তাদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। এর মধ্যে হাটহাজারী উপজেলার ফটিকা গ্রামের মনোয়ার ও মোশাররফ নামে দুজনকে শনাক্ত করা গেছে। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ জেএমবির বাকি সদস্যদের নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

শামীমের দেওয়া বিভিন্ন তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, চার বছর ধরে জেএমবির সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করছে শামীম। প্রাথমিক অবস্থায় লালমনিরহাট এলাকায় জেএমবির হয়ে তৎপরতা চালালেও পরে তাকে নীলফামারীর জলঢাকা এলাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল। গত নভেম্বরের মাঝামাঝিতে জেএমবি নেতা মাসুম তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসে।

ওসির ভাষ্য মতে, শামীম পুলিশকে জানিয়েছে আপাতত কোনো নাশকতার জন্য নয়, আত্মরক্ষার্থে এসব বোমা তাদের আস্তানায় রাখা হয়েছিল। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে একটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। সংগঠনের অর্থের জোগান দিত মাসুম। তবে কখন, কিভাবে এই টাকা আসত তা সে জানত না।

19 December 2010

চট্টগ্রামে রাজপথে নেই জামায়াত-শিবির

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম | তারিখ: ২০-১২-২০১০

চট্টগ্রাম জেলা জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রশিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের রাজপথে সক্রিয় নয় জামায়াত। রাজপথে নামলেই ধরপাকড় হতে পারে—এমন আশঙ্কায় জামায়াত-শিবির রাজপথে নামছে না বলে জানা গেছে।

নগর জামায়াতের আমির শামসুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের ধরপাকড়ের কারণে আমরা রাস্তায় নামতে পারছি না। রাজপথে নামলেই পুলিশ আমাদের পেটায়। সরকার আমাদের মাঠে নামতে দিচ্ছে না। এ জন্য আমরা কিছু কৌশল নিয়েছি। তবে আমরা শিগগির রাজপথে নামব।’

দলীয় সূত্র জানায়, জামায়াত চট্টগ্রামে কৌশলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ এবং শিবির-নিয়ন্ত্রিত কলেজগুলোয় যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে কৌশলে পোস্টার লাগানো হচ্ছে। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ জামায়াতের নেতাদের মুক্তি চেয়ে ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম কলেজ এবং হাজী মুহাম্মদ মুহসীন কলেজে অসংখ্য পোস্টার লাগিয়েছে। এ ছাড়া শিবিরের রাজনীতির প্রতি নতুন প্রজন্মকে আকর্ষণের লক্ষ্যে দুই কলেজে টাঙানো হয়েছে শতাধিক ব্যানার। শিবির-নিয়ন্ত্রিত কলেজ দুটিতে অন্য কোনো দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম নেই। অতীতের মতো মিছিল-সমাবেশ নেই কেন, জানতে চাইলে শিবিরের চট্টগ্রাম কলেজ শাখার সভাপতি মোহাম্মদ হারুন বলেন, ‘আমাদের দাওয়াতি কাজ চলছে। শিবির মিছিল সর্বস্ব সংগঠন নয়।’

জামায়াতের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলস্টেশনে মহিউদ্দিন নামের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র খুন হন। শিবির তাঁকে নিজেদের কর্মী দাবি করে পরদিন নগরে মিছিল বের করে। জামালখান মোড়ে পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ সেখান থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে সুরার সদস্য আহসান উল্লাহসহ শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।

যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে গত ১১ এপ্রিল সিরাজদ্দৌলা সড়কের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সমাবেশ ডাকে জামায়াত। সমাবেশে যোগ দিতে চট্টগ্রামে আসেন মুজাহিদ। তাঁকে ঠেকাতে একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচি দেয় কয়েকটি মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন। ফলে সমাবেশ না করেই পুলিশ পাহারায় চট্টগ্রাম ছাড়েন মুজাহিদ। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন আন্দরকিল্লা মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে জামায়াত। সেখানে পুলিশের সঙ্গে আবার জামায়াতের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। জামায়াতের দাবি, এ দুই ঘটনায় পুলিশ তাঁদের অন্তত ৩০০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। সর্বশেষ ৭ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের সামনে থেকে গ্রেপ্তার হন জামায়াতের ১০ নেতা-কর্মী। এসব ঘটনার পর আর রাজপথে নামেনি জামায়াত।

13 November 2010

জামায়াতি এনজিওতে শিক্ষা দেন সরকারি পিটিআই প্রশিক্ষক!

তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার

কক্সবাজারে জামায়াত-শিবির নেতাদের মাধ্যমে পরিচালিত এনজিও 'ওয়ার্ল্ড অ্যাসেম্বলি ফর মুসলিম ইয়ুথ_ওয়ামি'-এর হয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সরকারি প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) অনেক শিক্ষক। গতকাল শুক্রবার থেকে শহরের একটি আবাসিক হোটেলের সম্মেলন কক্ষে শুরু হয়েছে তিন দিনের একটি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান। প্রথম দিনে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন পিটিআইয়ের তিনজন প্রশিক্ষক। টাকার বিনিময়ে তাঁরা প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
কক্সবাজার পিটিআইয়ের তত্ত্বাবধায়ক রফিকুল ইসলাম তালুকদার এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ইনস্টিটিউটের বাইরে এ ধরনের কোনো কর্মসূটিতে যেতে চাইলে আমাকে জানানো দরকার। কিন্তু আমাকে কেউ কিছু জানায়নি।'
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজনে যাবতীয় দায়িত্ব পালন করছেন জামায়াত-শিবিরের দায়িত্বশীল নেতা-কর্মীরা।কক্সবাজারের হোটেল অ্যালবাট্রসের হলরুম ও প্রশিক্ষণার্থীদের থাকার রুম ভাড়া নেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন মাওলানা সাবি্বর নামের এক জামায়াত নেতা।
হোটেলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ওয়ামির নামে তিন দিনের জন্য আমাদের হোটেলের হলরুম এবং ১০টি কক্ষ ভাড়া নেওয়া হয়েছে। মাওলানা সাবি্বর নামে একজন এ কাজে আমাদের কাছে এসেছিলেন।'
গতকাল প্রশিক্ষণ দেন পিটিআইয়ের সন্তোষ কুমার দে, উত্তম কুমার দাশগুপ্ত ও শামসুল আহসান। প্রশিক্ষক উত্তম কুমার দাশগুপ্ত কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রতিটি বিষয়ে ৫০০ টাকা করে ভাতার বিনিময়ে আমরা ওয়ামির প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে থাকি। আমরা বাংলা, ইংরেজি, গণিতসহ বিভিন্ন বিষয় পড়াই।' এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সরকারি ছুটির দিনে আমরা এসব করে থাকি, তাই অনুমতি নিই না।'
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ওয়ামি ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি নিবন্ধিত হয়। তবে জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে ওয়ামি কক্সবাজারে কাজ শুরু করে। বিশেষ করে এনজিওটি মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় রোহিঙ্গাদের নানা সুযোগ-সুবিধার জন্যই কর্মসূচি নিয়ে থাকে। বিভিন্ন সময় শিক্ষক-ছাত্রদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। শিক্ষাবিষয়ক প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত এসব কর্মসূচিতে জামায়াত-শিবিরকর্মী ও সমর্থক ছাড়া অন্য কেউ থাকে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
জেলা জামায়াতের একজন প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'এটা আসলে জামায়াতেরই এনজিও। আবদুল্লাহ তাহেরের মাধ্যমে যার যাত্রা, তা জামায়াতের হবে না তো আওয়ামী লীগের হবে?'
গতকাল থেকে যে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে ওয়ামির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, সেটি 'পিটিআই' কর্মসূচি। তবে পিটিআই কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা এ ব্যাপারে অবহিত নন বলে জানিয়েছেন।
বর্তমানে ওয়ামির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগর শিবিরের সাবেক সভাপতি আলমগীর মুহাম্মদ ইউসুফ। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের দাওয়া বিভাগের সেক্রেটারিও ছিলেন। ইউসুফ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ওয়ামি কঙ্বাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ, নাইক্ষ্যংছড়ি, রামু ও কঙ্বাজার সদরে ওয়ামি একাডেমি নাম দিয়ে শিক্ষা সম্প্রসারণের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। তারই অংশ হিসেবে আমরা ওয়ামি একাডেমীর শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করি। পিটিআইয়ের প্রশিক্ষকরাই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালিয়ে থাকেন।' ওয়ামির সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি চুপ থাকেন।
কঙ্বাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) হুমায়ুন কবির বলেন, 'আমি রীতিমতো বিস্মিত। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক কিভাবে বিনা অনুমতিতে এ রকম এনজিওর কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন?' বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান।

দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার নাসিরের রহস্যময় কুমিল্লাযাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

৩৭ মামলার আসামি, দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার নাসিরকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে! গতকাল শুক্রবার তাকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানোর উদ্দেশে সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম কারাগার থেকে পুলিশ পাহারায় বের করে নেওয়া হয়। কিন্তু তাকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি কুমিল্লা কারাগারে প্রায় আট ঘণ্টা পর পেঁৗছেছে বলে জানা গেছে।
কুমিল্লায় নেওয়ার পথে পুলিশ পাহারায় জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত নগরীর চকবাজার এলাকার আল হেরা হোটেলে কয়েকজন সহযোগীর সঙ্গে নাসির বৈঠক করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ও হোটেল কর্তৃপক্ষ এ বৈঠকের অভিযোগ অস্বীকার করলেও তাদের বক্তব্যে অমিল পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গতকাল শুক্রবার হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তেমন কোনো যানজট ছিল না। চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লার দূরত্ব ১২৮ কিলোমিটার। এটুকু দূরত্ব যেতে আট ঘণ্টা সময় লাগার কথা নয় বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার রফিকুল কাদের গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শিবির ক্যাডার নাসিরকে আরো তিনজন বন্দিসহ সকালে পুলিশ পাহারায় কুমিল্লা পাঠানো হয়েছে। পথিমধ্যে সে কিছু করেছে কি-না তা আমাদের জানার কথা নয়। কারণ তাকে আনা নেওয়ার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা এসব দেখাশোনা করেন।'

অন্যদিকে কুমিল্লা কারাগারের ডেপুটি জেলার সাখাওয়াত হোসেন জানান, বিকেল ৪টার দিকে নাসির পুলিশ পাহারায় কুমিল্লা কারাগারে পেঁৗছে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম আদালতে বিচারাধীন একটি মামলায় হাজির করাতে গত বুধবার সন্ধ্যায় নাসিরকে কুমিল্লা কারাগার থেকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে কারাগারে আছে নাসির। চট্টগ্রাম কারাগারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে শাস্তিস্বরূপ ২০০৯ সালের মে মাসে তাকে সর্বশেষ কুমিল্লা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এর আগেও তাকে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা কারাগারে বেশ কয়েকবার স্থানান্তর করা হয়েছে। এসব আনা-নেওয়ার পথে ইতিপূর্বে একাধিকবার চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকার হোটেল কস্তুরিকা ও আল হেরাতে নাসির বৈঠক করেছে। এমনকি ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ ও মুক্তিযোদ্ধা গোপাল কৃষ্ণ মুহরিকে হত্যার জন্য নাসির এ হোটেলের নিচে অবস্থিত খাবার হোটেল কস্তুরিকায় অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে নির্দেশ দিয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে।

হোটেল কস্তুরিকার মালিক তসবি জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছিল, নাসির প্রায়ই এখানে বৈঠক করত। এক ব্যবসায়ীকে ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত বছর গ্রেপ্তার হওয়া তসবি জাহাঙ্গীর বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ১০টার দিকে সাদা মাইক্রোবাস নিয়ে পুলিশের একটি দল চকবাজার উর্দু গলির হোটেল আল হেরার সামনে অবস্থান নেয়। দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত পুলিশের মাইক্রোবাসটি সেখানেই ছিল। এ সময় সেখানে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যদের কাছে এ প্রতিবেদক তাঁদের অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে তাঁরা জানান, মোবাইল চুরির তদন্ত করতে তাঁরা এখানে এসেছেন। এর পরই তড়িঘড়ি করে সেখান থেকে সরে পড়েন পুলিশ সদস্যরা।

পরে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের ওই দলের নেতৃত্বে থাকা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আল হেরা হোটেলের পঞ্চম তলার একজন বোর্ডারের একটি প্যান্ট চুরি হয়েছে। আমি ওই প্যান্ট চুরির বিষয়ে তদন্ত করার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম।' মাত্র একটি প্যান্ট চুরির ঘটনার জন্য তিন থেকে চার ঘণ্টা ওই হোটেলে অবস্থানের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'তিন ঘণ্টা নয়, আমি দেড় ঘণ্টা সেখানে ছিলাম। কাজ শেষ করে চলে এসেছি।' শিবির ক্যাডার নাসির সেখানে ছিল কি-না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'কোনো নাছিরকে আমি চিনি না।'

গতকাল বিকেলে আল হেরা হোটেলের ম্যানেজার বাবু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পুলিশ বিশেষ কাজে এখানে এসেছিল।' বিশেষ কাজটি কি প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'এত কিছু বলতে পারব না কারণ তখন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন আমির হোসেন। তবে আমি শুনেছি পাঁচতলার একজন বোর্ডারের মালামাল চুরির ঘটনার তদন্তে পুলিশ এখানে এসেছিল।' ওই হোটেলের কয়েকজন কর্মচারীর কাছে জানতে চাইলে তাঁরা জানান, নাসির হোটেলে আসেনি।

11 October 2010

চবিতে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ফের সক্রিয় শিবিরের 'মশার কয়েল শুভেচ্ছা

রাজীব নন্দী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে দুই বছর ধরে। কিন্তু বহাল তবিয়তে সাংগঠনিক কাজ করে যাচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির। ভর্তি পরীক্ষার তথ্য ও পরীক্ষার ফলাফল জানিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম থেমে নেই তাদের। কৌশল পাল্টিয়ে প্রতিবছরের প্রথম বর্ষের ভর্তিচ্ছুদের জন্য দেওয়া 'লাল গোলাপ শুভেচ্ছা' এবার পরিণত হয়েছে, 'মশার কয়েল শুভেচ্ছা'য়! বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসনও এসব জানে।

জানা গেছে, শাহজালাল হলে ২২ জন শিবিরের সাথী দায়িত্ব পালন করছে। হল শাখার সভাপতির নাম শামসুদ্দীন ফরহাদ। গ্রামের বাড়ি ফেনী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ভর্তি পরীক্ষায় ফেনী থেকে আসা বেশির ভাগ ভর্তিচ্ছুর 'সুবিধা-অসুবিধা' দেখভাল করার দায়িত্ব বর্তেচ্ছে তাঁর ওপর। খোঁজ-খবর নেওয়া, দাওয়াতি কার্যক্রম, বায়তুল মাল আদায় সবই চলছে। তবে ব্যতিক্রমী আয়োজনটি হচ্ছে হলের যেসব কক্ষে ভর্তিচ্ছুরা আছে, সেই কক্ষগুলোতে গিয়ে শিবিরের পক্ষ থেকে একটি করে মশার কয়েল দিয়ে আসা হচ্ছে! এভাবেই প্রথমবর্ষে ভর্তি হয়নি কিন্তু শিবিরের ক্যাডার আর নেতাদের হাতে চিহ্নিত হয়ে গেছে অনেক ভর্তিচ্ছু।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, শুধু শাহজালাল হলেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি ছাত্র হলেই চলছে শিবিরের গোপন-প্রকাশ্য তৎপরতা। শিবিরের ঘাঁটি বলে পরিচিত সোহরাওয়ার্দী হলে 'স্কলার্স ফোরাম' নাম দিয়ে চলছে শিবিরের ভর্তি পরীক্ষা সহযোগিতা। এ এফ রহমান আলাওল হলে শিবিরের কার্যক্রম তেমন নেই।

শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শামসুদ্দীন আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মশার কয়েল দেওয়া তো দোষের কিছু না।' রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ক্যাম্পাসে আমরা কোনো বৈঠক বা সাংগঠনিক সভা করছি না। 'তবে শিবিরের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ডা. ফখরুদ্দীন মানিক সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরে সাংগঠনিক সফরে এসেছেন। নগর জামায়াত কার্যালয়েই বাধ্য হয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সভা করেছিলাম।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলা অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিবিরের সাথী পর্যায়ের এক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, কেন্দ্রীয় সেক্রেটারির সঙ্গে সর্বশেষ সভায় আমরা বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। এসবের মধ্যে আছে_চবির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অন্তত দুই হাজার শিক্ষার্থীকে সাংগঠনিক আওতায় কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা, গোপনে বায়তুল মাল আদায়ের কৌশল নির্ধারণ, চারটি ফ্যাকাল্টির শিবিরের কমিটি পুনর্নির্ধারণ আর সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রের সঙ্গে লোকাল ইউনিটের দূরত্ব ও বিদ্রোহের প্রবণতা কমাতে ঘন ঘন কেন্দ্রীয় নেতাদের সফর ইত্যাদি।

প্রক্টরিয়াল বডি ও হল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ আসাদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা বিভিন্ন সময় শিবিরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুনি। সব সময় চেষ্টা করি এসব বন্ধ করতে। কিন্তু বর্তমানে চারটি ছাত্র হলে শিবির-ছাত্রলীগ সহাবস্থানে আছে। চাইলেও আমাদের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব হয় না।'

শাহজালাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক এস এম সালামত উল্লা ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শিবিরের রেজাল্টশিট টানানোর আগে ছাত্রলীগও টানিয়েছিল। ছাত্র সংগঠনের কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা ছাত্রলীগের রেজাল্টশিট ছিঁড়ে ফেলি। শিবিরের বিষয়টিও আমরা একইভাবে দেখব। কিন্তু গোপনে তৎপরতা কিংবা রুমে রুমে গিয়ে কেউ যদি শিবিরের পক্ষে কাজ করে তা ঠেকাব কেমন করে? শিবির যদি গরু জবাই করে বড় করে মেজবান দেয়, তা টের পাওয়া যায়, মশার কয়েল দিয়ে এলে তা কিভাবে টের পাব?

7 October 2010

দশ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলা সাবেক শিল্পসচিবের জবানবন্দি: নিজামী জানান দেশের ‘হাইয়েস্ট অথরিটি’ অবগত আছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম | তারিখ: ০৮-১০-২০১০

চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার (সিইউএফএল) জেটিঘাটে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় শিল্প মন্ত্রণালয়কে জড়িয়ে খবর প্রকাশের পরও কোনো ব্যাখ্যা বা ব্যবস্থা নিতে দেননি তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী। বরং মন্ত্রণালয়ের সচিব শোয়েব আহাম্মদ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললে নিজামী জবাবে বলেছিলেন, এ বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ অবগত আছে। সরকার সব ব্যবস্থা নিচ্ছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা শোয়েব আহাম্মদ গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য জানান।

তৎকালীন শিল্পসচিব শোয়েব আহাম্মদ জবানবন্দিতে বলেন, ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন সিইউএফএল জেটিঘাটে খালাসের সময় অবৈধ সমরাস্ত্রের বিশাল চালানটি ধরা পড়ে। ৪ এপ্রিল তিনি শিল্পমন্ত্রী নিজামীকে বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমি শিল্পমন্ত্রীর কক্ষে যাই।...বলি, শুক্রবার ইমামুজ্জামান সাহেব (বিসিআইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান) ফোন করেছিলেন। তিনি আমাকে সিইউএফএলের ঘাটে অস্ত্র আটকের ব্যাপারে জানিয়েছেন। আমার কথা শেষ করতে না-করতেই মন্ত্রী বলেন, “আমি এ বিষয় সবকিছু অবগত আছি।” মন্ত্রীকে বলি, ইমামুজ্জামান সাহেবকে নির্দেশ দিয়েছি সিইউএফএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংশ্লিষ্টতা থাকলে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।...তাঁকে এটাও বলি, আজ ইমামুজ্জামান সাহেব আসবেন এবং গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে জানাবেন। তিনি বলেন, তখন শিল্পমন্ত্রী নিজামী তাঁকে বলেছেন, এই অস্ত্র আটক বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও মাঠে নেমেছে। তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছে। সিইউএফএলের কেউ জড়িত কি না, তা তাঁরাই বের করতে পারবেন। এ ব্যাপারে শিল্প মন্ত্রণালয়কে আলাদাভাবে কিছু করতে হবে না।’

শোয়েব আহাম্মদ জবানবন্দিতে বলেন, ‘তখন আমি তাঁকে (নিজামী) বলি, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এ সম্পর্কে যে খবরগুলো দেখেছি, তাতে শিল্প মন্ত্রণালয়কে জড়িয়ে খবর পরিবেশিত হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এ জন্যই আমি বিসিআইসির চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছি ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রণালয়কে জানাতে। আমি মনে করি, তা দরকার আছে। এ পর্যায়ে তিনি (নিজামী) বলেন, “দেশের হাইয়েস্ট অথরিটিও (সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ) এ বিষয়ে অবগত আছে। সরকার সব ব্যবস্থা নিচ্ছে।” তিনি আমাকে আরও বলেন, “আপনি কি মনে করেন, আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি নাই।” ওই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কোনো পূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।’

সাবেক শিল্পসচিব আদালতে বলেন, শিল্পমন্ত্রী নিজামীর সঙ্গে আলাপের সময় তিনি ওই দিনের একটি সংবাদের বিষয়ে বলেছিলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, ঘটনার রাতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব নুরুল আমিন সিইউএফএলের রেস্টহাউসে অবস্থান করছিলেন। এ সম্পর্কে শিল্পসচিব কিছুই জানতেন না। নুরুল আমিন কবে কখন সেখানে গেছেন, চট্টগ্রাম সফর কর্মসূচি কীভাবে করলেন, তাও বুঝতে পারছেন না বলে তিনি নিজামীকে বলেছিলেন। শিল্পসচিব বলেন, ‘মন্ত্রী বলেন, “আপনি তো সরকারি কাজে বেশ কিছুদিন বিদেশে ছিলেন, এ সময় অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিন তো সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। সেভাবেই হয়তো তিনি এ ট্যুরে গিয়ে থাকবেন।” আমি তখন বললাম, আজ রোববার, তিনি এখনো ফিরেননি। সিইউএফএলের এত বড় ঘটনা সম্পর্কে তিনি ঘটনাস্থলে অবস্থান করা সত্ত্বেও কিছুই জানাননি। একটা ফোন পর্যন্ত করেননি। আমি অফিসে এসে শুনলাম, তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে সিইউএফএল থেকে কক্সবাজার চলে গেছেন। তখন মন্ত্রী মহোদয় বলেন, “এটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার।” আমি বলেছি, এত বড় একটা ঘটনার সময় তাঁর সেখানে অবস্থান এবং কিছু না জানানো আমি যথার্থ মনে করি না। তিনি (নিজামী) বলেন, “আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন। সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।” এরপর আমি আমার কক্ষে চলে যাই।’

শোয়েব আহাম্মদ আদালতে বলেন, অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিন পরে ঢাকায় ফিরলেও তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি। তিনি বলেন, নুরুল আমিন মন্ত্রী মহোদয়ের অত্যন্ত আস্থাভাজন লোক ছিলেন। মন্ত্রী মহোদয়ই তাঁকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসেন। তিনি মূলত রেলওয়ের ক্যাডারের অফিসার ছিলেন।

১০ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলায় শোয়েব আহাম্মদ গতকাল বেলা দুইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের আদালতে এই জবানবন্দি দেন। এর আগে তাঁকে এ মামলায় সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।

জবানবন্দিতে সাবেক এই শিল্পসচিব দাবি করেন, ‘অস্ত্র আটকের এ ঘটনা পরদিন সকালে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামান টেলিফোন করে জানান। তাঁকে (ইমামুজ্জামান) জিজ্ঞেস করি, ওখানে কি সিইউএফএলের নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন উপস্থিত ছিল না? তাদের উপস্থিতিতে সেখানে অবৈধ অস্ত্রের ট্রলার কীভাবে ভিড়ল, আর কীভাবেই বা সে অস্ত্রশস্ত্র আনলোড হলো? ইমামুজ্জামান বললেন, “এটা তো আমারও প্রশ্ন।” আমি তাকে নির্দেশনা দিই, বিসিআইসির চেয়ারম্যান হিসেবে সিইউএফএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পৃক্ততা ও শৈথিল্য আছে কি না, তা নিরূপণ করতে হবে। কারণ, এটা আপনার অধীন শিল্প-কারখানা। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পর আপনি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন।’ শোয়েব আহাম্মদ বলেন, এই কথোপকথনে ইমামুজ্জামান জানান, তিনি বিষয়টি এরই মধ্যে শিল্পমন্ত্রীকেও জানিয়েছেন।

জবানবন্দিতে বলা হয়, তিন-চার দিন পর ইমামুজ্জামান সচিব শোয়েব আহাম্মদকে ফোন করে জানান, ‘স্যার, সিইউএফএল থেকে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। রিপোর্টে অস্ত্র আটক বিষয়ে কিছুই বলা নেই। সে রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর মতো নয়। এই রিপোর্ট অত্যন্ত দায়সারা গোছের।’

শোয়েব আহাম্মদ বলেন, ‘জুন মাসে ইন্দোনেশিয়া থেকে ফেরার পর মন্ত্রী একদিন বলেন, “আমি আপনাকে বলেছিলাম, সরকার এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তাদের কার্যক্রমও গ্রহণ করেছে। আমি তো মনে করি, সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থাই নিয়েছে”।’ জবানবন্দিতে সাবেক সচিব আরও বলেন, এরপর এ বিষয়ে শিল্পমন্ত্রী নিজামীর সঙ্গে তাঁর আর কখনো কোনো কথা হয়নি। তাঁর মনে হয়েছিল, নিজামী এ বিষয়ে কথা বলতে অপছন্দ করেন। কিছুদিন পর ২৮ জুলাই (২০০৪) তাঁকে অপ্রত্যাশিতভাবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে বদলি করা হয়।

শোয়েব আহাম্মদ বলেন, অস্ত্র আটকের পর যে তিন মাস তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ে ছিলেন, তাতে তাঁর মনে হয়েছে, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মন্ত্রী মহোদয়ের কথাবার্তা এবং অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিনের রহস্যজনক আচরণ দেখে মনে হয়েছে, পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত মঙ্গলবার বিসিআইসির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামান আদালতে এ মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

6 October 2010

যুদ্ধাপরাধের সাক্ষীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে

আশরাফুল হক রাজীব ও আবদুল্লাহ আল মামুন

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তদলের কাছে যুদ্ধাপরাধের সাক্ষ্য দিয়ে হুমকির মুখে পড়ছেন অনেক সাক্ষী। অনেকে সাক্ষ্য না দিয়েও সম্ভাব্য সাক্ষী হিসেবে 'মৃত্যু পরোয়ানা' পেয়েছেন। সাক্ষীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এক বছর আগে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আজও সে কাজ শেষ হয়নি। তাঁদেরকে দ্রুত রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তদন্তদল সম্প্রতি খুলনা, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামের বধ্যভূমি এবং গণহত্যা সংঘটিত এলাকা পরিদর্শনের সময় শতাধিক ব্যক্তির সাক্ষ্য নেয়।

আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ গত শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে যাঁরা সাক্ষ্য দেবেন তাঁদের রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা দেওয়া হবে। এ জন্য 'উইটনেস প্রটেকশন ল' প্রণয়নের কাজ চলছে। এই আইন প্রণয়নের আগেই সাক্ষীদের নিরাপত্তার প্রয়োজন হলে সরকার তা দেবে।

উদ্যোগ নেওয়ার পর এক বছরেও এই আইন প্রণয়ন করা হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনটির সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। বিদেশে এ ধরনের আইনের মাধ্যমে কাউকে সুরক্ষা দেওয়া হলে শুধু তাঁর দৈহিক নিরাপত্তাই দেওয়া হয় না, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অর্থনৈতিক নিরাপত্তাও দেখা হয়। এসব বিষয় বিবেচনায় আনতে গিয়ে আইন প্রণয়নের কাজে দেরি হচ্ছে।

জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর যুদ্ধাপরাধ প্রমাণের সব আয়োজন শেষ হয়েছে। যুদ্ধাপরাধ তদন্তদল পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলায় গেলে তাদের হাতে নিজামী ও তাঁর দোসরদের অপরাধের প্রমাণপত্র তুলে দেওয়া হবে। শিগগিরই নিজামীর যুদ্ধাপরাধ তদন্তে পাবনা যাবে তদন্তদল। তদন্তদলের সামনে নিজামীর অপরাধ প্রমাণের জন্য সাক্ষ্য দেবেন পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে একজন রাজাকার নিজামীর বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হবেন। নিজামীর একজন নিকটাত্মীয়ও সাক্ষ্য দেবেন। এসব সাক্ষীকে অপরাধ তদন্তদলের সামনে সাক্ষ্য না দেওয়ার জন্য জামায়াত নেতারা হুমকি দিচ্ছেন। সাক্ষীরা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, শুধু নিজামীর সাক্ষীরাই নন, সারা দেশে যাঁরাই যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তাঁদেরকেই হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই খুলনা, ময়মনসিংহে এ ধরনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের রক্ষা করতে না পারলে যুদ্ধাপরাধের বিচার ভণ্ডুল হতে পারে। তাঁর মতে, যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে যাঁরা সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তাঁদেরকে শুধু দৈহিক নিরাপত্তা দিলেই হবে না, তাদের অর্থনৈতিক বিষয়টাও দেখতে হবে। যখনই তাঁদের সাক্ষী করা হচ্ছে, তখনই তাঁরা তাঁদের পেশা ঠিক রাখতে পারছেন না। ব্যবসা করতে পারছেন না। চাকরি-বাকরিতে সমস্যা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাঁদেরকে রক্ষা করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধে পাবনা জেলার সাঁথিয়া থানা কমান্ডার এবং বর্তমানে সাঁথিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান নিজামউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, নিজামী রাজাকার বাহিনীর কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে '৭১ সালে সারা দেশেই অপরাধ করেছেন। তবে এই অঞ্চলের মানুষ হিসেবে তিনি পাবনার বিভিন্ন গণহত্যায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখেন। নিজামউদ্দিন বলেন, 'শিগগিরই নিজামীর বিভিন্ন অপরাধের আলামত সংগ্রহে তদন্তদল আসবে বলে আমাকে জানানো হয়েছে। আমরাও সব প্রস্তুতি শেষ করে রেখেছি। নিজামীর অপরাধ প্রমাণে সাক্ষ্য দেবেন পাঁচজন। এর মধ্যে একজন রাজাকার রয়েছেন। আছেন নিজামীর নিকটাত্মীয়ও। এই পাঁচজনের বাইরেও অনেক সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করা হবে। তদন্তদলের কাছে এসব প্রমাণ হস্তান্তর করার জন্য সিডিতে ধারণ করা হয়েছে। এই সিডিই তদন্তদলের হাতে তুলে দেওয়া হবে।'

জানা গেছে, নিজামীর যুদ্ধাপরাধের পাঁচ সাক্ষীর একজন হচ্ছেন সুমিত্রা বালা সাহা। ১৯৭১ সালের ২ আগস্ট মতিউর রহমান নিজামী তাঁর নিজ গ্রাম মনমথপুর যান। সেখানে খাঁ বাড়িতে স্থানীয় রাজাকার সাত্তারকে নিয়ে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে নিজামী মুক্তিযোদ্ধা এবং হিন্দুদের তালিকা করেন। তালিকা ধরে সুমিত্রা বালার স্বামী বটেশ্বর সাহাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর মতিউর রহমান নিজামীর নির্দেশে নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয় তাঁকে। ১৯৭১ সালে বটেশ্বর সাহার বয়স ছিল ২৫ বছর। গ্রামের শক্ত সুঠাম দেহের যুবক বটেশ্বর ব্যবসা করতেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে এলাকায় মিছিল-মিটিং করতেন। সাঁথিয়া-বেড়া-বাঘাবাড়ী সর্বত্র তাঁর দরাজ স্লোগানে মুখরিত থাকত। বটেশ্বর সাহার হত্যাকাণ্ডে নিজামীর জড়িত থাকার ঘটনা তদন্তদলের সামনে তুলে ধরবেন সুমিত্রা বালা সাহা। নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন পাবনা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।

নিজামীর প্ররোচনায় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন লুৎফর রহমান (লুৎফর রাজাকার বলে পরিচিত)। নিজামীর নির্দেশে তিনি বিভিন্ন অভিযানে অংশ নেন। সেই লুৎফর রাজাকারও সাক্ষ্য দেবেন নিজামীর বিরুদ্ধে। রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর যেসব অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন সেই সব অভিযানের 'শিকারদের' হাজির করা হবে যুদ্ধাপরাধ তদন্তদলের সামনে। লুৎফর রাজাকার কালের কণ্ঠকে বলেন, বিষয়টি টের পেয়ে একটি মহল তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়েছে এবং তিনি বিষয়টি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, যাঁরা সাক্ষী দেবেন, তাঁদের দায়িত্ব পুলিশ নেবে। মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবু সাঈদ গত বৃহস্পতিবার তাঁর পাবনার বাড়িতে কালের কণ্ঠকে বলেন, নিজামীর অপরাধ প্রমাণের সব কাজই শেষ হয়েছে। তবে সমস্যা দেখা দিয়েছে সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিয়ে। সাক্ষীরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। পাবনার প্রশাসন এখনো জামায়াতে ইসলামীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ কারণে তাঁদের ভয় আরো বেশি।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তদল ইতিমধ্যেই চারটি স্থান পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষ্য নিয়েছে। অনেক জায়গায় তাঁদের সহায়তা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী প্যানেল। ২০ মে খুলনার চুকনগরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তের মাধ্যমে অনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ২০ মে কয়েক ঘণ্টায় চুকনগরে ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। তদন্ত ও আইনজীবী দলের সামনে সেই হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী দিয়েছেন ২০ জন প্রত্যক্ষদর্শী। তদন্তদলের কাছে ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী ইউনিয়নের আলাদীপুর গ্রামের সরস্বতী মণ্ডল যখন তাঁর স্বামী ও শ্বশুরের হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন, তখন হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দেওয়ার জন্য সরস্বতী মণ্ডলকে ইতিমধ্যেই শাসানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তদল ১৫ সেপ্টেম্বর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জনের সাক্ষ্য নিতে শেরপুর যায়। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী। সাক্ষ্য দিয়ে শেরপুরের টর্চার সেলের দারোয়ান মোহন মুন্সী সেদিন তদন্তদলকে বলেন, কামারুজ্জামান বদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। শেরপুর থানায় তিনি যা বলতেন তা-ই হতো। সেই মোহন মুন্সীকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। শেরপুর থেকে তদন্তদল যায় ময়মনসিংহে। সেখানে গিয়ে সাক্ষ্য নেওয়া হয় ৩০ জনের। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ইসলামী ছাত্রশিবির নেতা-কর্মীদের হুমকি পেয়েছেন।

তদন্তদল ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের রাউজান সফরে গিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন গণহত্যায় বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। তদন্তদলের সামনে সাক্ষ্য দিয়েছেন শহীদ অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্রের ছেলে প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ। এ ছাড়া জ্যোৎস্না প্রভা চৌধুরীসহ আরো অনেকে সাকা চৌধুরীর অপকর্ম তুলে ধরেন। তদন্তদল রাউজানে সাক্ষ্য নেওয়ার সময় ৫০-৬০ জনের একটি দল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সাফাই গাইতে থাকে। তারা সাকা চৌধুরীর পক্ষে হৈচৈ করতে থাকলে পুলিশ তাদের তাড়িয়ে দেয়। পুলিশের তাড়া খেয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় তারা সাক্ষীদের হুমকি দিয়েছে বলে জানা গেছে।

দশ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলা মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামানের জবানবন্দি: অস্ত্র আটকের কথা জানানোর পর নিজামী ছিলেন নিশ্চুপ ও চিন্তিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম | তারিখ: ০৬-১০-২০১০

চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার (সিইউএফএল) জেটিঘাটে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় বাংলাদেশ রসায়নশিল্প সংস্থাকে (বিসিআইসি) কোনো ব্যবস্থা নিতে দেননি তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী। বিসিআইসির তখনকার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামানের কাছে পুরো ঘটনা জানার পর একেবারে নিশ্চুপ হয়ে যান নিজামী। ইমামুজ্জামানের ভাষায়, ‘তাঁকে (নিজামী) ওই সময় কিছুটা গম্ভীর ও চিন্তান্বিত মনে হয়েছে।’

মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামান গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেন।

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন সিইউএফএল জেটিঘাটে খালাসের সময় অবৈধ সমরাস্ত্রের বিশাল চালানটি ধরা পড়ে। আদালতে ইমামুজ্জামান দাবি করেন, অস্ত্র আটকের ঘটনায় বিসিআইসির চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর বক্তব্য জানার জন্য ২ এপ্রিল সকালে চট্টগ্রামের এক সাংবাদিক ফোন করার পর তিনি ঘটনাটি জানতে পারেন। দুই দিন পর তিনি শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও মন্ত্রণালয়ের সচিব শোয়েব আহমেদের সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত জানান। কিন্তু তাঁরা কোনো দিকনির্দেশনা দেননি।

নিজামীর সঙ্গে দেখা করার বর্ণনা দিয়ে ইমামুজ্জামান আদালতে বলেন, ‘রোববার (৪ এপ্রিল, ২০০৪) সচিবের কক্ষ থেকে বের হয়ে আমি মন্ত্রীর কক্ষে যাই। উনাকে বিষয়টি পুরোপুরি খুলে বলার চেষ্টা করি। আমি অস্ত্র আটকের ব্যাপারে কিছু বলতে না-বলতেই তিনি (নিজামী) বলেন, “আমি বিষয়টা শুনেছি। এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হ্যান্ডেল করছে। সেহেতু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছে। কাজেই আমাদের কোনো কিছু করার প্রয়োজন নেই।” মনে হলো, তিনি (নিজামী) ব্যাপারটা এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে দু-তিনবার জিজ্ঞেস করি, স্যার, এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করতে হবে? স্যার, আপনি কি কোনো তদন্ত টিম গঠন করে দেবেন? তিনি (নিজামী) আমার কথার কোনো জবাব দেননি। হ্যাঁ-না কিছুই বলেননি। এ ব্যাপারে মন্ত্রী একেবারে নিশ্চুপ ছিলেন। তাঁকে ওই সময় কিছুটা গম্ভীর ও চিন্তান্বিত মনে হয়েছে। আমি হতাশ হয়ে মন্ত্রীর কক্ষ থেকে বের হয়ে আসি। আমি ভাবছিলাম, এত বড় একটা ঘটনা ঘটল। অথচ কারও কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পাচ্ছি না।’

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাক্ষী হিসেবে ইমামুজ্জামানের এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান। বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত হাকিমের খাস কামরায় জবানবন্দি নথিভুক্ত করা হয়।

১২ পৃষ্ঠার এই জবানবন্দিতে ইমামুজ্জামান বলেন, ওই অস্ত্রের চালান আটকের রাতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নুরুল আমিন সিইউএফএলে রেস্ট হাউসে ছিলেন। ওই দিন ছিল শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন। রোববার তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ে গিয়ে শিল্পসচিব শোয়েব আহমেদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘তিনি (সচিব) আমাকে কোনো নির্দেশনা দেননি। তিনি বলেন, আমি (সচিব) মন্ত্রী মহোদয়কে বলেছি। এবার আপনিও বলেন। তিনি আপনার মুখেই শুনুক।’

জবানবন্দিতে আরও বলা হয়, অস্ত্র আটক ঘটনায় ইমামুজ্জামান সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়ে পাঠান।

ইমামুজ্জামান বলেন, ‘সিইউএফএলের এমডির কাছে ফোন করে অস্ত্র আটকের পুরো বিষয়টি জানতে চাই। আর আমাকে শুরু থেকে না জানানোর ব্যাপারে কৈফিয়ত তলব করি।...এমডি বলেন, পুরো এলাকাটা ফোর্স ঘিরে রেখেছে। ডিজিএফআই, এনএসআই ও পুলিশের লোকজন আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।...আমি তাঁকে নির্দেশ দিই, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সার্বিক বিষয়ে লিখিত প্রতিবেদন দেবেন।’

জবানবন্দিতে বিসিআইসির সাবেক চেয়ারম্যান ইমামুজ্জামান আরও বলেন, ওই সপ্তাহে তিনি সিইউএফএল থেকে তলবকৃত প্রতিবেদন পান। তাঁর ভাষায়, প্রতিবেদনটি ছিল অত্যন্ত দায়সারা গোছের। অবৈধ অস্ত্র আটক হয়েছে, এমন একটি শব্দ ছিল না তাতে। প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে উল্লেখ ছিল, ‘অবৈধ মালামাল আটক হয়েছে। ডিসি পোর্টের নেতৃত্বে তা আটক করে ফোর্সের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, প্রতিবেদনটি মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এনামুল হকের সই করা ছিল। কিন্তু নিয়ম হলো, বিসিআইসিতে পাঠানো চিঠি বা প্রতিবেদনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সই করবেন।

ইমামুজ্জামান আদালতে বলেন, আরও বিভিন্ন সূত্র থেকে নেওয়া তথ্যসহ এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্তে তাঁর সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। মন্ত্রী, সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব কিংবা অন্য কেউ এ ব্যাপারে বিসিআইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আর কোনো আলোচনা করেননি। তিনি আদালতকে বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে বিসিআইসির অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান সিইউএফএল ঘাটে অবৈধ অস্ত্র আটক হয়। আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। উনারা ব্যাপারটা নিয়ে অনাগ্রহ ও অনীহা দেখিয়েছেন।’

প্রসঙ্গত, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার তদন্ত বেশি দূর এগোতে পারেনি। এক-এগারোর পট পরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নতুন করে তদন্ত শুরু হলে সমরাস্ত্রের এই অবৈধ চালানের সঙ্গে প্রভাবশালী কয়েকজনের সম্পৃক্ততার কথা বেরিয়ে আসে। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার জন্য এসব অস্ত্র আনা হয়েছিল। চীনের সমরাস্ত্র কারখানা থেকে অস্ত্রগুলো আনা ও খালাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা ছিল বলে সিআইডির তদন্ত ও বিভিন্ন সাক্ষীর বক্তব্য থেকে জানা গেছে।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জোট সরকার আমলে সামরিক গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, এনএসআইয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাবউদ্দিন, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন, সিইউএফএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসীন তালুকদার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এনামুল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।

5 October 2010

বাবরের পর এবার নিজামী!

কমল দে, চট্টগ্রাম

বহুল আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর নাম অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। মামলার তদন্তকারী সংস্থা অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অস্ত্র খালাসের ঘটনার সঙ্গে নিজামীর সংশ্লিষ্টতার সাক্ষ্য-প্রমাণ পেয়েছে। সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, নিজামীর বিরুদ্ধে সরকারি সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সংরক্ষিত জেটি ঘাটে অস্ত্রবাহী ট্রলার ভেড়ানো এবং অস্ত্র খালাসের অনুমতির ব্যাপারে অভিযোগ আনা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির একজন কর্মকর্তা জানান, আগস্ট মাসের শেষ দিকে ঢাকার সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে তৎকালীন শিল্পসচিব ড. শোয়েব আহম্মদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তিনি ১৬১ ধারায় জবানবন্দিও দেন। এতে ড. শোয়েব বলেন, সিইউএফএলের জেটিতে অস্ত্র খালাসের বিষয়টি তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীকে জানানো হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, বিষয়টি নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে হবে না।

সিআইডির ওই কর্মকর্তা জানান, ড. শোয়েব এবং বিসিআইসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছেন। ইমামুজ্জামান আজ মঙ্গলবার মহানগর হাকিমের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে পারেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাকিরাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন। এর পর সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের মতো নিজামীকেও গ্রেপ্তার দেখানো হবে (শ্যোন অ্যারেস্ট)।

সূত্রটি আরো জানায়, ড. শোয়েব ও ইমামুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান চৌধুরী। এ ছাড়া অস্ত্র উদ্ধারের রাতে সিইউএফএল রেস্ট হাউসে অবস্থানকারী ভারপ্রাপ্ত শিল্পসচিব নুরুল আমিনকেও সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।

মামলায় সরকার নিয়োজিত কেঁৗসুলি ও মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, '১৬৪ ধারার জবানবন্দি যেকোনো মামলার অন্যতম ভিত্তি। ১৬১ ধারার জবানবন্দিতে সাক্ষীরা কী বলেছেন তা চিন্তা না করে আমরা ১৬৪ ধারার জবানবন্দির অপেক্ষায় আছি। তাঁদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির পর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।'
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামে সিইউএফএল জেটি ঘাট থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ওই সময় শিল্পমন্ত্রী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী। সিইউএফএল শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।

উল্লেখ্য, আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্ত শুরু হলে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহসীন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এনামুল হকসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে গত বছরের ৮ মার্চ থেকে সিআইডি কার্যালয়ে রেখে টানা চার দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করে সিআইডি। সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, সিইউএফএল জেটি ঘাটে অস্ত্র খালাসের বিষয়টি তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো নির্দেশনা না দেওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। কোনো তদন্ত কমিটি গঠন কিংবা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) পর্যন্ত করা হয়নি।

26 September 2010

যুদ্ধাপরাধ বিচার আদালতকে উড়িয়ে দিলেন সাকা

Fri, Sep 24th, 2010 11:42 pm BdST

চট্টগ্রাম, সেপ্টেম্বর ২৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের গ্রহণযোগ্যতা ও ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছেন, এটা কিসের আদালত?

একাত্তরের অপরাধ তদন্তে শুক্রবার ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের চট্টগ্রামে আসার পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কোনো অ্যাক্ট নেই, সিআরপিসি নেই, এটা কিসের আদালত?

তদন্ত দল রাউজান উপজেলার বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার সাক্ষ্য পাওয়ার পর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এসে নগরীর নিজ বাসভবন গুডস হিলে রাত ৮টার দিকে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন।

মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দিন কাদের অবশ্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। তার দাবি, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের আরো বলেন, "ট্রাইবুন্যাল এমন কোনো সার্কাস দেখাবে না যাতে বিচার ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্যতা হারায়। বিচার ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্যতা হারালে সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশের স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।"

ট্রাইবুনালের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, "ট্রাইব্যুনাল আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে করবে না কেন?"

এ বক্তব্যের ব্যাখা দিয়ে সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের বলেন, "আমি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুজনেরই একটা ঝুঁকি আছে। ৭১ সালে আমরা দুজনই হিন্দুস্থান যাই নি এবং আমাদের কোনো মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেই। তাই ট্রাইবুন্যালের সামনে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছি।"

দেশে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার অনুকূল পরিবেশ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, "সরকারকে দায়িত্বশীল বক্তব্য দিতে হবে। সরকার এমন কোনো পথে হাঁটবে না যাতে চট্টগ্রামের মানুষ নিজেদের জাতীয় সত্ত্বা থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রয়াস পায়।"

ট্রাইবুন্যালের তদন্ত পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, "৩৯ বছরে যে ঘটনার সাক্ষী-প্রমাণ পাওয়া গেল না তারা ছয় ঘণ্টায় তার প্রমাণ পেয়ে গেলেন?"

ট্রাইব্যুনালকে সঠিক তদন্তের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "ট্রাইব্যুনাল যেন স্থায়ী থাকে। কয়েকটি বিচার করে যেন তাদের কাজ শেষ না হয়।"

কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে একাত্তরের ১৩ এপ্রিল রাউজানের গহিরায় তার বাড়িতেই হত্যা করা হয়। একই এলাকায় সালাউদ্দিন কাদেরের বাড়ি।

নতুন চন্দ্র সিংহের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন কি না� এমন প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, "৭১ সালের এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে আমি পাকিস্তান চলে যাই। যাওয়ার আগে ঢাকায় শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম।"

"মরহুম ফজলুল কাদের চৌধুরীর জ্যৈষ্ঠ সন্তান হিসেবে আমি গর্ব বোধ করি। আমার বাবা অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিলেন। তখন আমি কোনো রাজনীতি করতাম না", বলেন তিনি।

চট্টগ্রামকে সা�প্রদায়িক স�প্রীতির শহর হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বিনীত অনুরোধ করছি, যেন এমন কোনো উস্কানি দেওয়া না হয় যাতে সা�প্রদায়িক স�প্রীতি নষ্ট হয়।"

নূতন চন্দ্র সিংহের বড় ছেলে সত্য রঞ্জন সিংহ ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে তার প্রস্তাবক ছিলেন দাবি করে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশনে সেই ফরম রক্ষিত আছে।

রাউজান থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো হত্যা মামলার বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।

সত্য রঞ্জন সিংহ ১৯৭২ সালের ২৯ জানুয়ারি নূতন চন্দ্রকে হত্যার অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের ও তার বাবা ফজলুল কাদেরকে আসামি করে রাউজান থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সম্পর্কে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, "যতদূর জেনেছি তারা আমার প্রতিপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। কোনো সাধারণ মানুষের সাক্ষ্য নেননি। নিহতের পরিবারের কেউ বলেননি আমি ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল ঘটনাস্থলে ছিলাম। প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহ বলেছেন তারা শুনেছেন।

তদন্ত দলের কাছে নূতন চন্দ্রের হত্যার ঘটনা তুলে ধরেন তার ছেলে প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহ।

ফজলুল কাদের চৌধুরীকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, "শুনেছি এতে প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহ জড়িত ছিলেন।

"শুধু একজনের বাবার হত্যার বিচার করলে হবে না। আমিও বাবা হত্যার বিচার চাই।"

ফজলুল কাদের মুক্তিযুদ্ধের পর কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গত ২৫ মার্চ তদন্ত সংস্থা, আইনজীবী প্যানেল ও ট্রাইব্যুনাল গঠনের ঘোষণা দিলে বহু প্রতীক্ষিত এই বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এরপর বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজমীসহ দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল তাদের গ্রেপ্তার রাখারও নির্দেশ দিয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/সিএম/এএডি/এজে/জিএনএ/১১৩৬ ঘ.

একদিনে শতাধিক হিন্দুকে হত্যা

Fri, Sep 24th, 2010 10:32 pm BdST

মিন্টু চৌধুরী
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম, সেপ্টেম্বর ২৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- একাত্তরের ১৩ এপ্রিল রাউজানের তিনটি এলাকায় দিনভর পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুসলিম লীগের সশস্ত্র কর্মী ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা হত্যা করে শতাধিক হিন্দু নর-নারীকে।

সেদিন কুণ্ডেশ্বরী, জগৎমল্ল ও ঊনসত্তর পাড়ার হামলায় নিহত হয় কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহসহ ১০৭ জন।

হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁেচ যাওয়া কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও তাদের স্বজন শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দিয়েছেন সেদিনের সে ঘটনার বিবরণ।

ঘটনা ৩৯ বছর আগের হলেও তা যেন তাদের কাছে 'এইতো সেদিনের'। সে স্মৃতি মনে উঠলে আজও তারা শিউরে ওঠেন, হয়ে পড়েন হতবিহ্বল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের কাছে 'কোথায়-কীভাবে' সেদিন পাকবাহিনী তাদের এদেশীয় দোসরদের সহায়তায় ওই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিলো শুক্রবার তা বর্ণনা করে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তারা।

রাউজানের দুটি স্থানের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার বাবা তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে।

সালাউদ্দিন কাদের অবশ্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। তার দাবি, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে ছিলেন।

একাত্তরের ১৩ এপ্রিল সকালে কুণ্ডেশ্বরীতে নিজ বাড়িতে নূতন চন্দ্র সিংহকে, দুপুরে এর তিন কিলোমিটার দূরে জগৎমল্ল পাড়ায় একই পরিবারের সাতজনসহ ৩৭ জন নারী-পুরুষ এবং বিকাল ৫টার দিকে পাহাড়তলীর ঊনসত্তর পাড়ায় ৬৯ জনকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের শিকার সকলেই সংখ্যালঘু হিন্দু স�প্রদায়ের।

কুণ্ডেশ্বরী ওষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নূতন চন্দ্র সিংহকে নিজ বাড়ির জগদ্ধাত্রী মন্দিরের সামনে হত্যা করা হয় বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে জানিয়েছেন তার বড় ভাইয়ের ছেলে ভূপতি চন্দ্র সিংহ (৬৩)।

নূতন চন্দ্র সিংকে গুলি করে হত্যার স্থানটি দেখিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, "একাত্তরের ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাক আর্মিদের সঙ্গে নিয়ে কুণ্ডেশ্বরী ভবনে আসে। এসময় আর্মিরা কাকার (নূতন সিং) সঙ্গে কথা বলে সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যায়।

"কিন্তু সে (সাকা চৌধুরী) রাউজান কলেজ ক্যাম্প থেকে ১০টার দিকে দুই গাড়ি সেনা নিয়ে কুণ্ডেশ্বরী ভবনে আসে। এসময় তারা ভবনের গেইট ভেঙ্গে প্রবেশ করে।"

তখন সাকা চৌধুরীর সঙ্গে স্থানীয় মুসলিম লীগ সদস্য ও রাজাকার আবদুল মাবুদ, নবাব মিয়া, গোলাম আলী, এলাহী বক্স ও আবদুস সালাম ছিলো বলে জানান ভূপতি সিংহ।

তিনি বলেন, "সে সময় আমি প্রাণভয়ে ভবন থেকে এক-দেড় কিলোমিটার দূরে বিনাজুরী গ্রামে আশ্রয় নেই। পরে তিনটি গুলির শব্দ শুনতে পাই এবং তার কিছু পরে ঘটনাস্থলে আসি।

কুণ্ডেশ্বরী ভবনের প্রবেশ পথের অদূরে পুকুর পাড়ে তার 'কাকাকে দাহ করা হয়' বলে কন্নাজড়িত কণ্ঠে জানান ভূপতি সিংহ।

নূতন চন্দ্র সিংহর ছেলে প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সাকা চৌধুরীই পাক বাহিনীকে আমাদের বাড়িতে এনে বাবাকে গুলি করে হত্যা করিয়েছিলো।"

রঞ্জন সিংহ জানান, ঘটনার দুই দিন আগে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তিনি দেশ ত্যাগ করেন। তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আমানত খাঁ চৌধুরী তাদেরকে এ তথ্য জানান।

মল্লপাড়ায় ৩৭ জন হত্যার সাক্ষী জোৎস্নাপ্রভা

কুণ্ডেশ্বরীর দুই কিলোমিটার দূরে জগৎমল্ল পাড়ার ৮০ বছর বয়সী জোৎস্নাপ্রভা এখন আর আগের মতো শুনতে পান না, চোখেও দেখেন না ভালভাবে।

একাত্তরের ১৩ এপ্রিল দুপুরে স্বামীসহ সাতজনকে হারিয়েছেন তিনি। তার চোখের সামনে ৩৭ জনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয়। নির্মম ওই স্মৃতি নিয়ে আজও বেঁচে আছেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যার পর ফেরার পথে সাকা চৌধুরী ও তার অনুগতরা পাকবাহিনীকে এনে এ হত্যাযজ্ঞ চালায়।

শুক্রবার দুপুরে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত দল যখন জোৎস্নাপ্রভার বাড়িতে পৌঁছায় তখনো তিনি বারান্দায় বসা। অনেক কষ্টে স্মৃতি হাতড়ে তদন্ত দলের কাছে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।

তার স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, জ্যোৎস্নাপ্রভা চৌধুরীর বাড়ির উঠানে সেদিন জড়ো করা হয়েছিলো প্রায় ৪০ জনকে। পরে তাদের ব্রাশ ফায়ার করা হয়। গুলির শব্দে লাশের স্তুপের ওপর পড়ে জ্ঞান হারিয়ে প্রাণে বেঁচে যান জ্যোৎস্নাপ্রভা; হারান স্বামীসহ সাতজনকে।

তার বাড়ির অদূরে শহীদ ৩৫ জনের নামফলক সম্বলিত একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। তদন্ত দল ও উপস্থিত সাংবাদিকরা শহীদদের স্মরণে শুক্রবার সেখানে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।

ঊনসত্তর পাড়ায় দাহর পরিবর্তে মাটিচাপা

ঊনসত্তর পাড়ার মহাজন বাড়ির পুকুর ঘাট সংলগ্ন পাড় দেখিয়ে অজিত মহাজন (৫৫) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এখানেই ৭০-৭২ জন নারী-পুরুষকে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করা হয়।"

ব্রাশ ফায়ারে অজিতের বাবা যোগেশ মহাজন, বড় ভাই রণজিত মহাজনসহ হিন্দু স�প্রদায়ের ৬৯ জন প্রাণ হারান।

অজিত মহাজন জানান, পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের ভয়ে ওই হিন্দু পাড়ার সব যুবক পালিয়ে থাকায় নিহত ৬৯ জনকে ধর্মীয় মতে দাহ করা হয়নি। মহাজন বাড়ির ওই পুকুর সংলগ্ন একটি খাড়িতেই কোনরকমে মাটিচাপা দেওয়া হয়।

হত্যাকাণ্ডের সময় তার মা হরিলতা মহাজন ও বৌদি মিনতি মহাজনকে পুকুরের একপাশে বসিয়ে রাখা হয়েছিলো বলেও তিনি জানান।

অিজিত বলেন, "স্থানীয় মুসলিম লীগের নেতারা পাকিস্তানি বাহিনীকে আমাদের পাড়ায় নিয়ে এসে এ হত্যাকাণ্ড চালায়।"

তবে ওই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া পাক বাহিনীর এ দেশীয় দোসরদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।

অজিত অভিযোগ করেন, ঊনসত্তর পাড়ায় হত্যাকাণ্ডে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এখনো কোনো স্বীকৃতি পায়নি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমসি/এজে/জিএনএ/১০৩০ ঘ.

'জবাইয়ে সেই দৃশ্য এখনো তাড়া করে'

Sun, Sep 26th, 2010 2:35 pm BdST

আল আমীন দেওয়ান
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম, সেপ্টেম্বর ২৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- একাত্তরের ১০ নভেম্বর। এখন যা পাহাড়তলী বধ্যভূমি নামে পরিচিত, সেখানে এক এক করে জবাই করা হচ্ছিলো বাঙালিদের। জবাইয়ের দৃশ্য গুণতে গুণতে জ্ঞান হারাতে বসেছিলেন প্রাণে বেঁচে যাওয়া সেই সময়ের ওয়াসার মালামাল সরবরাহকারী গোফরান ভূঁইয়া।

বধ্যভূমির কাছেই টিলার ওপর জঙ্গলে বসে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ১২শ ৫২টি জবাইয়ের দৃশ্য দেখেছিলেন তিনি। দেখেছিলেন অসংখ্য মৃত মানুষ এনে স্তূপ করতে।

পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা সেদিন চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর বধ্যভূমিতে হত্যা করেছিল কয়েক হাজার বাঙালিকে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল শনিবার ওই বধ্যভূমিতে যায়, সাক্ষ্য নেয় প্রত্যক্ষদর্শী বিভিন্ন জনের।
গোফরান ভূঁইয়ার বয়স এখন ৬৮ বছর। একাত্তরের ১০ নভেম্বর ভোরে পাহাড়তলীর পাঞ্জাবী লেইন এলাকায় আকবর শাহ মাজারের নিচে নিজের মুদি দোকান থেকে বিহারিরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। বধ্যভূমি থেকে পালিয়ে তিনি পাহাড়ের জঙ্গলে আশ্রয় নেন। নিরাপদ স্থানে সরে পড়তে অপেক্ষা করতে থাকেন রাত নামার।

গোফরান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ঘুমের মধ্যে আজও সেই জবাই দৃশ্য দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দেয়। লাইনে দাঁড় করিয়ে একসঙ্গে ৫-১০ জন করে জবাই করছিলো বিহারিরা। কিছু সময় পরপর লাশ এনে জড়ো করছিলো বধ্যভূমিতে।"

"গুনেছিলাম তখন ১২শ ৫২টি জবাই দৃশ্য। এখনো মনে আছে", বলেন তিনি। এর পরপরই বললেন, "আমার জায়গা জমি-টাকাপয়সা যা আছে সব দিয়ে দেবো। এই বিচারের জন্য আমি সব করতে রাজি আছি।"

গোফরান ছাড়া আরো কয়েকজন জানালেন সেই সময়ের কথা। ১০ নভেম্বর বর্তমান চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা থেকে সাবেক রেল কর্মচারী কাজী আমিনুল ইসলাম ও তার বড় ভাই কাজী আনোয়ার হোসেনসহ মোট ৪০ জনকে বধ্যভূমিতে ধরে আনে বিহারিরা। তবে পরিচিত বিহারীর সহায়তায় প্রাণে বাঁচেন তারা।

আমিনুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সেদিন চোখের সামনে অনেককে জবাই হতে দেখেছি।"

স্বজন হারানো মুক্তিযোদ্ধা গাজী সালেহ উদ্দিন ঊনচল্লিশ বছর ধরে আগলে রেখেছেন একটি ছবি; বধ্যভূমিতে কঙ্কালের স্তূপের।

একাত্তরের ১০ নভেম্বর পাঞ্জাবী লেইন এলাকা থেকেই তার ছোটভাই, চাচা ও দুই চাচাতো ভাইসহ ১২০ জনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। বয়সে ছোট হওয়ায় তার ছোটভাই গাজী কামাল উদ্দিন বেঁচে গেলেও বাকিরা কেউ ফিরে আসেনি।

ছেলের খোঁজে বেরিয়ে বাবা আলী করিমও হারিয়ে যান চিরতরে। তাকেও হত্যা করা হয় এই বধ্যভূমিতে। কারো লাশও উদ্ধার করা যায়নি।

সালেহ উদ্দিন সাদা কালো ওই ছবি দেখেন, আর ভাবেন, হয়তো ছবির এই কঙ্কাল স্তূপেই আছে তার বাবা, চাচা ও দুই চাচাতো ভাইয়ের দেহাবশেষ।

সালেহ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বধ্যভূমিতে লাশের পর লাশ ছোট টিলার মত স্তূপ হয়ে পড়ে ছিলো দিনের পর দিন।

তিনি জানালেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের শুরুর দিকে ছবিটি তুলেছিলেন ফখরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এএডি/এমআই/১৪৩০ ঘ.

চট্টগ্রামে মানবতাবিরোধী অপরাধ: সাকার পর এবার অভিযোগ মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে

নূপুর দেব, চট্টগ্রাম

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পর এবার জামায়াতে ইসলামী নেতা মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে একাত্তর সালে চট্টগ্রামে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম মহানগরীর টেলিগ্রাফ হিল রোডে তৎকালীন 'ডালিম হোটেল' ছিল মীর কাসেম আলীর টর্চার সেল। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাসহ নিরীহ বাঙালি লোকজনকে ধরে নিয়ে গিয়ে তিনতলা এ হোটেলে নির্যাতন করা হতো। নির্যাতনের পর অনেককে হত্যা করে লাশ গুম করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাসেম আলীর বিরুদ্ধে গতকাল শনিবার একাত্তরের মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তদলের কাছে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীসহ অনেকে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য দেন।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তদলের সদস্য অ্যাডভোকেট জেয়াদ আল মালুম গতকাল দুপুরে সার্কিট হাউসে সংবাদ সম্মেলনোত্তর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তদন্তে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত দুই দিনের তদন্তে তাঁদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলোর পক্ষে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণও পাওয়া গেছে।

তদন্ত চলাকালে চট্টগ্রামে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী অবস্থান করার কোনো প্রভাব তদন্তে পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রভাব-প্রতিপত্তি বা হুমকি-ধমকিতে অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কার্যক্রমকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দুজনকে গ্রেপ্তার করা হবে কি না জানতে চাইলে জেয়াদ আল মালুম জামায়াতের পাঁচ শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, এর আগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের বিরুদ্ধেও একই প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।

এর আগে তদন্তদল সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তিন দফায় নগরীর কাটা পাহাড়ে ডালিম হোটেল (বর্তমানে মহামায়া ডালিম ভবন) টর্চার সেল, পাহাড়তলী বধ্যভূমি ও ফয়'স লেকে মহিলাদের টর্চার সেল এবং গণকবর এলাকা পরিদর্শন করে। সে সময় এসব স্থানে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান, নির্যাতিত ও নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তারা কথা বলে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রত্যক্ষদর্শী লোকজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে তদন্তদল। তিন দিন চট্টগ্রামে অবস্থানের পর গতকাল বিকেলে তদন্তদল ঢাকার উদ্দেশে চট্টগ্রাম ত্যাগ করে।
ডালিম হোটেল টর্চার সেল পরিদর্শনকালে তদন্তদলের কাছে একাত্তরের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা তুলে ধরেছেন এই টর্চার সেলে নির্যাতনের শিকার ন্যাপ নেতা সাইফুদ্দিন খানের স্ত্রী প্রত্যক্ষদর্শী নুরজাহান খান। তিনি বলেন, একাত্তরের ২৫ নভেম্বর ভোরে নগরীর পশ্চিম মাদারবাড়ী ৬ নম্বর আজিজ কলোনির বাসায় তাঁর স্বামীসহ অন্তত ৩৫ জন পরদিন যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ভোর রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে তাঁর স্বামীসহ সাতজনকে ধরে চোখে কালো কাপড় ও হাত বেঁধে নিয়ে যায় টর্চার সেলে। হানাদারদের সবার মুখে ছিল 'মাংকি ক্যাপ'। তিনি বলেন, সবাই জানে এই টর্চার সেলের নেতৃত্ব দেন মীর কাসেম আলী। তিনি তখন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা ছিলেন। নুরজাহান খান বলেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি স্বামীর দেখা পাননি। দেশ স্বাধীনের পর ফিরে আসা স্বামীর শরীরে নির্যাতনের অনেক চিহ্ন ছিল।

নুরজাহান খানের ভাই রেজা আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, টর্চার সেলে তিনি সাইফুদ্দিন খানকে দেখতে যেতেন। তিনি তাঁর ভগি্নপতিকে সিগারেট দিয়ে গেলে এর আগুন দিয়ে সাইফুদ্দিন খানের মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। রেজা সিদ্দিকী বলেন, 'যখনই যেতাম, দেখতাম হাত বাঁধা ও মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা। একেকটা রুম যেন একেকটা টর্চার সেল। তাঁর কাছে শুনেছি, খাওয়ার পানি খুঁজলে প্রস্রাব এনে দিত।'

এরপর তদন্তদল সকাল পৌনে ১০টায় পাহাড়তলী বধ্যভূমি পরিদর্শনে যায়। ১ দশমিক ৭৫ একর জায়গায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম বধ্যভূমি হিসেবে এটি পরিচিত। এ বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধকালে শত শত মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ বাঙালিকে এনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বলে তদন্তদলকে গতকাল জানান প্রজন্ম '৭১ চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. গাজী সালাহউদ্দিন আহমেদ।
বধ্যভূমির বিভিন্ন স্থান দেখিয়ে তদন্তদলকে গাজী সালাহউদ্দিন বলেন, 'একাত্তর সালের ১০ নভেম্বর দুপুর দেড়টায় আমার বাবা আলী করিম, সন্ধ্যায় চাচা আলী হোসেন, আবদুল গোফরান ও আবদুল মান্নানকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে এ বধ্যভূমিতে জবাই করে পাকিস্তানি বাহিনী। তাঁদের লাশ পর্যন্ত পাইনি। এ ছাড়া আমাদের পাঞ্জাবি লেন থেকে ১২০ জনকে নিয়ে সেখানে হত্যা করা হয়। একইভাবে ঝাউতলা রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন দাঁড় করিয়ে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট-দোহাজারীগামী এবং ফিরোজ শাহ কলোনি, বিহারি কলোনিসহ বিভিন্ন এলাকার শত শত লোককে ধরে নিয়ে সেখানে জবাই করার অভিযোগ রয়েছে।'

গাজী সালাহউদ্দিন আরো বলেন, এটি একটি নির্জন এলাকা ছিল। ওই সময় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মাহমুদুর নবী চৌধুরীর (বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাবা) কাছে নিরীহ অনেক লোক গিয়েছিল হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করার জন্য। কিন্তু সে হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হয়নি। যুদ্ধের পর এখানে কঙ্কালের স্তূপ ছিল। উঁচু-নিচু সব টিলা রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। পরে এসব টিলা কেটে সমতল করা হয়।

গাজী সালাহউদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ বধ্যভূমিতেই 'জিয়া বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন' নামে বহুতল একটি ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের স্মৃতিবিজড়িত এ বধ্যভূমি থেকে কয়েক বছর আগেও অনেক কঙ্কাল পাওয়া গেছে। ভবন নির্মাণকাজ শুরুর সময় রাতের আঁধারে অসংখ্য কঙ্কাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখনো মাটি খোঁড়া হলে অনেক কঙ্কাল পাওয়া যাবে। তাই এ বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও সংস্কারের জন্য অবিলম্বে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে নির্যাতনের শিকার হয়েও বেঁচে যাওয়া কাজী আমিনুল ইসলাম তদন্তদলের কর্মকর্তাদের বলেন, তিনি ও তাঁর বড় ভাই কাজী আনোয়ার হোসেনসহ ৪০-৫০ জনকে পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতাল এলাকা থেকে ধরে এ বধ্যভূমিতে নিয়ে আসা হয়। কৌশলে তাঁরা দুই ভাইসহ তিনজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও অন্যদের জবাই করা হয়েছে।

এরপর তদন্তকারী দল সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ফয়'স লেকে যায়। একাত্তরের পুরো সময়ে এ ফয়'স লেকের পাশে অবস্থিত রেলওয়ের 'লগ হাউস'-এ অসংখ্য নারীকে নির্যাতন করা হয়েছিল। অনেককে হত্যার পর আশপাশের পাহাড়সহ ফয়'স লেক এলাকায় গণকবর দেওয়া হয়।

তদন্তদল প্রথমে ফয়'স লেকের সিঁড়িসংলগ্ন গণকবর পরিদর্শন করে। তারপর দেখতে যায় সেই নির্যাতন সেল লগ হাউস। এটি বর্তমানে পর্যটন রেস্টুরেন্ট। সে সময় গাজী সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের উদ্ধৃতি দিয়ে তদন্তদলের কর্মকর্তাদের বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীদের ধরে নিয়ে এসে এই লগ হাউসে পাকিস্তানি বাহিনীর কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হতো। নির্যাতনের পর ফয়'স লেকের পানিতে নামিয়ে সে দৃশ্য দেখত কর্মকর্তারা। আবার পানি থেকে তুলে কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করত। এভাবে পাশবিক নির্যাতনের পর অনেককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর লগ হাউসসহ ফয়'স লেক থেকে নারীদের অনেক পোশাক, ভ্যানিটি ব্যাগ, জুতাসহ বিভিন্ন জিনিস পাওয়া যায়। তবে জীবিত অবস্থায় কাউকে পাওয়া যায়নি।

তদন্ত দল ঢাকা ফিরেছে
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তদল কাজ শেষে ঢাকা ফিরে গেছে। দুই দিনব্যাপী তদন্ত শেষে ফিরে যাওয়ার আগে গতকাল শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন তথ্য দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু।

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মিলনায়তনে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের রাউজান, পাহাড়তলী বধ্যভূমি, ডালিম হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে খুন, ধর্ষণ, বাড়িঘর জ্বালানো ও লুটপাটের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সাক্ষীদের বক্তব্যে সব কিছু উঠে এসেছে। এসব তথ্য আদালতে তুলে ধরা হবে।
গত দুদিনে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত হিসেবে যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্তদলের সদস্যরা জানান, এটি আদালতের বিষয়। নিরপেক্ষভাবে আইনকে সামনে রেখে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে ট্রাইব্যুনাল। তাঁরা আরো জানান, ট্রাইব্যুনাল আইনের ১৯ ধারাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। গত ৩৯ বছর নানা রাজনৈতিক টানাপড়েনের কারণে অভিযুক্তদের বিচার হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, সদস্য অ্যাডভোকেট মোকলেসুর রহমান। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্যানেল আইনজীবী রানাদাশ গুপ্ত, তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মতিউর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম, পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক খান ও এস এম ইদ্রিস।

অ্যাডভোকেট রানাদাশ গুপ্ত কালের কণ্ঠকে জানান, গতকাল বিকেলে বিমানযোগে তদন্তদল চট্টগ্রাম ত্যাগ করে।

24 September 2010

গাড়ি ভাঙচুর, পাঁচ পুলিশ আহত: মহেশখালীতে পুলিশের ওপর জামায়াত কর্মীদের হামলা

মহেশখালী (কক্সবাজার) প্রতিনিধি | তারিখ: ২৫-০৯-২০১০

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার তিন আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা। এ সময় তাঁরা পুলিশের একটি গাড়িও ভাঙচুর করেন। জামায়াতের কর্মীদের ইটের আঘাতে পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন।

পুলিশের আহত সদস্যরা হলেন মহেশখালী থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) শওকত হোসেন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মোহাম্মদ ইউসুফ, কনস্টেবল গোলাম মোস্তফা, গণরায় নেপালি ও অসিত চাকমা। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় তাঁদের মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এদিকে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে আহত এসআই শওকত হোসেন গতকাল শুক্রবার সকালে মহেশখালী থানায় অজ্ঞাতনামা ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মহেশখালী উপজেলা (দক্ষিণ) জামায়াতের আমির মোহাম্মদ জাকের হোসেনের দাবি, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জামায়াতের কোনো নেতা-কর্মী জড়িত নন।

মহেশখালী থানার পুলিশের ভাষ্যমতে, জামায়াতের কর্মীরা গত ১৩ আগস্ট বিকেলে উপজেলার শাপলাপুর বাজারে রাষ্ট্র, সংবিধান ও সরকারবিরোধী লিফলেট বিতরণ করলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা তা জব্দ করেন। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস মহেশখালী থানায় জামায়াতের ১৩ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে মহেশখালী থানার পুলিশ। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার সকালে ওই অভিযোগটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে পুলিশ।

মহেশখালী থানার এসআই শওকত হোসেন জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে তাঁর নেতৃত্বে একদল পুলিশ উপজেলার শাপলাপুর বাজার থেকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি জামায়াতের কর্মী সিরাজুল হক, আবু সুফিয়ান ও আবদুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা শাপলাপুর নতুন ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের সামনে পৌঁছালে জামায়াতের অজ্ঞাতনামা শতাধিক নেতা-কর্মী সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে হামলা চালিয়ে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে তাঁরা গাড়ির চারপাশ ঘিরে আসামি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধাক্কাধাক্কি হয় এবং পেছনে থাকা জামায়াতের কর্মীরা পুলিশের ওপর ইট নিক্ষেপ করেন। পুলিশ দুটি ফাঁকা গুলি ছুড়লে জামায়াতের কর্মীরা সরে দাঁড়ান। পরে পুলিশ দ্রুত গাড়ি নিয়ে থানায় চলে আসে।

মহেশখালী উপজেলা (দক্ষিণ) জামায়াতের আমির মোহাম্মদ জাকের হোসেন প্রথম আলোকে জানান, সম্প্রতি শাপলাপুর বাজারে কে বা কারা লিফলেট বিতরণ করলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা তা জব্দ করেন। জামায়াতের কোনো কর্মী ওই লিফলেট বিতরণের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা ষড়যন্ত্র করে জামায়াতের কর্মীদের আসামি করে মিথ্যা মামলা করেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায়ও জামায়াতের কেউ জড়িত নন।

জাকের হোসেন বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে মাওলানা আবু সুফিয়ান ও সিরাজুল হক জামায়াতের কর্মী। কিন্তু আবদুল কাদের বিএনপির কর্মী।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম কুমার চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

গুডস হিল ছিল টর্চার সেল

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

শুধু রাউজান নয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পুরো চট্টগ্রাম নগরীতে মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী (ফকা চৌধুরী) ও তাঁর ছেলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী) ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর তাঁদের বাসভবন নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকার 'গুডস হিল' মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতনকেন্দ্র বা টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তদলের আজ শনিবার তথ্য সংগ্রহের জন্য সেই গুডস হিলে যাওয়ার কথা রয়েছে।

চট্টগ্রাম শহরে সম্মুখ সমরে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে সাকা চৌধুরী নিজেই নগরীর মোমিন রোডে চেরাগী পাহাড়ের মোড়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ওমর ফারুককে গুলি করেন। এরপর তাঁকে রশি দিয়ে গাড়ির পেছনে বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসা হয় গুডস হিলে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর লাশ ফেলে দেওয়া হয় রাস্তার ওপর। অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ নাগরিককে এখানে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববর্তী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মোজাফফর আহমদ, তাঁর বড় ছেলে শেখ আলমগীর ও ভাতিজা শেখ খুরশিদ আনোয়ারকে বন্দি করে আনা হয়েছিল এই গুডস হিলে। অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর ভাতিজা শেখ খুরশিদ আনোয়ার মুক্তি পেলেও সেখানে মারা যান বাবা ও ছেলে।

মুক্তিযোদ্ধারা আরো জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে তিনটি গোষ্ঠী মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। এদের মধ্যে বিহারি সম্প্রদায় ও বদর বাহিনীর সদস্যরা লোকজনের ধনসম্পদ লুট এবং অগি্নসংযোগ করলেও মানুষ হত্যায় মূল ভূমিকা রেখেছিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তাঁর অনুগতরা। শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে সাকা চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে গুডস হিলে নিয়ে আসতেন।