নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ২৭-০৮-২০১০
হুমায়ুন আজাদ ও তাঁর লেখা উপন্যাস পাক সার জমিন সাদ বাদ সম্পর্কে ২০০৪ সালে জামায়াতের সাংসদ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সংসদে কী বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা সংসদ সচিবালয়ের কাছে জানতে চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, হুমায়ুন আজাদ হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্তের সুবিধার্থে এই তথ্য প্রয়োজন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) থেকে মন্ত্রণালয়ের কাছে এই তথ্য চাওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় তথ্য চেয়ে সংসদ সচিবালয়কে চিঠি দিয়েছে।
লেখক ও অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমীর বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর রাস্তায় ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হামলায় গুরুতর আহত হন। এর এক মাস আগে সংসদে তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মীয় উত্তেজনাকর বক্তব্য দিয়েছিলেন সাঈদী।
সংসদের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সংসদে পাক সার জমিন সাদ বাদকে ইসলামবিরোধী আখ্যায়িত করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। ‘এ ধরনের লেখকদের’ লেখা বন্ধ করতে তিনি ব্লাসফেমি (ধর্মের অবমাননাবিরোধী) আইন প্রণয়নের জন্য তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সেদিন সাঈদী বলেছিলেন, দেশে বিভিন্ন সময়ে আল্লাহ, রাসুল, ইসলাম, কোরআন, সুন্নাহ এবং এর অনুসারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তি ‘অকথ্য ও অশ্রাব্য ভাষায়’ বক্তব্য দিয়ে এবং তাঁদের লেখনীর মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে থাকেন। আর এ ধরনের জঘন্য কাজের জন্য দেশের প্রচলিত আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ফলে তাঁরা এ কাজে আরও উত্সাহিত হয়ে সমাজে ধর্মীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করেন। উদাহরণ হিসেবে সাঈদী পাক সার জমিন সাদ বাদ-এর উল্লেখ করে বলেন, একজন সুস্থ মানুষের পক্ষে এ ধরনের লেখা চিন্তাও করা যায় না। তিনি বলেন, ‘উক্ত লেখার মাধ্যমে হুমায়ুন আজাদ ইসলাম, কোরআন, সুন্নাহ এবং এর অনুসারীদের অত্যন্ত জঘন্যভাবে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে উপস্থাপন করে ইসলাম তথা গোটা মুসলিম উম্মাহকে আঘাত করেছেন, যা অমার্জনীয় অপরাধ।’
দেশে ব্লাসফেমি আইন থাকলে ‘ধর্ম নৈতিকতার দুষমনেরা’ কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে এ ধরনের বলার বা লেখার সাহস পেতেন না মন্তব্য করে জামায়াত নেতা ওই আইন প্রণয়নের তাগিদ দেন।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, সাঈদীর এই বক্তব্য দু-এক দিনের মধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
সন্দেহভাজন জঙ্গি হামলায় আহত হুমায়ুন আজাদ সেরে উঠলেও সে বছরেরই ১১ আগস্ট জার্মানিতে থাকা অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।