সেলিম জাহিদ
বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। জামায়াতের বর্তমান 'বিপদের সময়' বিএনপির 'কার্যত নীরব' ভূমিকাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিএনপির 'কৌশলী অবস্থান' হিসেবে দেখছেন। কারণ তাঁদের হিসেবে, সরকারের কঠোর মনোভাবের কারণে এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে জামায়াত আর লাভবান হবে বিএনপি। ভোটের হিসাব-নিকাশ থেকে ইসলামপন্থী ভোটারদের সমর্থন তখন বিএনপির দিকে ঝুঁকবে এবং বিএনপির ভোটব্যাংক সমৃদ্ধ হবে। এই সরল বিশ্লেষণ থেকেই বিএনপির নীতিনির্ধারকদের একটি অংশ মনে করছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কৌশলী অবস্থান গ্রহণই বিএনপির জন্য রাজনৈতিক দূরদর্শিতা।
বিষয়টি জামায়াতের পক্ষ থেকে আক্ষেপের সঙ্গে নিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। জানা গেছে, পরস্পরের আস্থায় চিড় ধরানো পর্যন্ত না গড়ালেও বিষয়টি দুই পক্ষই যার যার মতো করে পর্যবেক্ষণ করছে। তবে এ স্নায়ুযুদ্ধ এখন পর্যন্ত দল দুটির নীতিনির্ধারক ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসান মোহাম্মদ মনে করেন, বাহাত্তরের সংবিধান সংশোধিত আকারেও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে ইসলামী দলগুলো অবশ্যই একটা ধাক্কা খাবে এবং এই অংশটির বেশির ভাগ শেষ পর্যন্ত বিএনপির দিকেই ঝুঁকবে। তিনি বলেন, 'বিএনপি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করে না, কিন্তু ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাস করে। আমার বিশ্বাস, এ পরিস্থিতিতে বিএনপি কৌশলী হবে। বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াস ভূমিকায় যাবে না।'
ড. হাসান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের প্যানেল সাদা দলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি এক দশক আগে 'জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ : নেতৃত্ব, সংগঠন ও আদর্শ' বিষয়ে থিসিস করেন।
জামায়াত নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফজলুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বাহাত্তরের সংবিধানে ফেরা নিয়ে বিএনপি বাড়াবাড়ি কিছু করবে না। কারণ স্বাভাবিক প্রবণতায় ভোটের রাজনীতিতে আলটিমেট রেজাল্ট তাদের দিকেই যাবে।' বিএনপিতে এই কৌশল সম্পর্কে বলাবলি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
অধ্যাপক ফজলুল হক জামায়াতে ইসলামীর পরামর্শকদের অন্যতম। তিনি জামায়াতের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আমির।
বিএনপির অন্যতম চিন্তাবিদ সাবেক সচিব সাবিহ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কালের কণ্ঠকে তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য না দিয়ে বলেন, 'এ ব্যাপারে আপনি বিএনপি নেতাদের কমেন্টস নিতে পারেন। আমি এ বিষয়ে কথা বলব না।'
কিন্তু বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা জামায়াতের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধের ব্যাপারে মুখ ফুটে কিছু বলতে নারাজ। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্য হচ্ছে, জামায়াত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে না থাকায় সরকার তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তারে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। জামায়াত মাঠে তৎপর থাকলে বিএনপি তাতে নৈতিক সমর্থন দেবে।
আর জামায়াতের পক্ষ থেকে বিএনপির সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধের বিষয় স্বীকার না করে বলা হচ্ছে, এ ধরনের চিন্তা জোটে ফাটল ধরানোর চেষ্টা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকর্মী ফারুক হোসেন হত্যার পর টানা পাঁচ মাস সরকারি খৰ ঝুলে থাকে জামায়াতের ওপর। তখন থেকে পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ এবং সর্বশেষ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তারে জামায়াত এখন কার্যত পর্যুদস্ত। আরো বিপর্যস্ত হলে জামায়াতের পেশাজীবী গোষ্ঠী এবং 'মডারেট' গ্রুপকে কৌশলে বিএনপির সঙ্গে একীভূত করার একটি গোপন মিশন নিয়ে বেশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও চিকিৎসক কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
আরো জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে জামায়াতের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও মতপার্থক্য আছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, বিএনপির একজন প্রভাবশালী আইনজীবী নেতা যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে দলের স্থায়ী কমিটির প্রথম বৈঠকেই বিএনপির অবস্থান যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে রাখার প্রস্তাব করেন। পরে ওই নেতা একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুদ্ধাপরাধীদের (সম্ভাব্য) আইনি সহায়তা দিতে বিএনপির কোনো দলীয় সিদ্ধান্ত নেই বলে জানান। যদিও বিএনপি চেয়ারপারসন দলের সিনিয়র আইনজীবীদের ডেকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতাদের জড়ানো হলে তাঁদের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির ওই নেতার ভূমিকা জানার পর জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা এ প্রতিবেদকের কাছে আক্ষেপ করেছিলেন।
২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী বিএনপি জামায়াতসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে জোট করে আন্দোলন, নির্বাচন ও পরে সরকার গঠন করেছিল। বিগত সংসদ নির্বাচনেও তারা ক্ষমতাসীন মহাজোটের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নেয়।
জানা গেছে, বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা, যাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে; তিনি সম্প্রতি দলীয় প্রধানকে আশ্বস্ত করেছেন যে সাংবিধানিকভাবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বাধাপ্রাপ্ত হলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যেসব ইসলামী দলের সম্পর্ক ছিন্ন হবে, বিএনপি তাদের সঙ্গে সহানুভূতিশীল আচরণ করলে জামায়াতসহ সেসব দল বিএনপির দিকেই ঝুঁকবে। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের পর দলীয় প্রধানের সবুজ সংকেত পেয়ে তিনি এসব ইসলামী দলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
চারদলীয় জোটের শরিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী মনে করেন, ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ হলে আওয়ামী লীগ লাভবান হবে না। তিনি বলেন, 'ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করে আওয়ামী লীগের কী লাভ আমি বুঝি না। এতে বরং বিএনপিরই সুবিধা হবে বেশি।' তাঁর হিসাবে, এতে বিএনপি দলে এবং ভোটে আরো সমৃদ্ধ হবে।
যুদ্ধাপরাধের বিচার সামনে রেখে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের পর ধারণা করা হচ্ছে, তাঁরা কঠিন পরিণতির দিকেই এগোচ্ছেন। বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে '১৫ সদস্যের সাংবিধানিক কমিটি' গঠনের পর দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী সেই পরিণতির দিকে যাচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে সরকার বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলে জামায়াতসহ সব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিষিদ্ধ হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। আর জামায়াতে ইসলামীই দেশের প্রধান ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'জামায়াতের সঙ্গে গলায় গলায় ভাব, আবার রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধ, প্রগতি এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের খোলস গায়ে চড়িয়ে বিএনপি বারবার রাজনৈতিক ফায়দা লুটেছে। সাংবিধানিকভাবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অবসান হলে তাদের ফায়দা লোটার পথ চিরতরে রুদ্ধ হবে।'
এ অবস্থায় যুদ্ধাপরাধের বিচার ও বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরতে সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিএনপি কার্যত কতটা আন্তরিক এবং মাঠে কী ভূমিকা পালন করে, সেটা বোঝার জন্য জামায়াত বিষয়টি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে। জামায়াতের বিভিন্ন স্তরে কথা বলে জানা গেছে, যদিও সংবিধান সংশোধনে গঠিত সর্বদলীয় কমিটিতে বিএনপির অংশগ্রহণে অনীহা প্রকারান্তরে জামায়াতের প্রতি সমর্থনই প্রকাশ করে, তার পরও দলীয় রাজনীতির চরম সংকটে বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে জামায়াত। তবে এটাও জানা গেছে, বিএনপি জামায়াতের এই সংকটকে পুঁজি করছে, নাকি ভেতরে ভেতরে অন্য 'কূটনীতি' করছে_তা নিয়ে জামায়াতের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অল্পবিস্তর সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু দলটির নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে সরকারের প্রচারণা ও জনমত সৃষ্টির তৎপরতা জামায়াতের কর্মীদের যেমন নৈতিকভাবে দুর্বল করছে, তেমনি বিএনপির সঙ্গে দলের দূরত্বও সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ দুঃসময়ে বিএনপিকে তারা যেভাবে কাছে পাওয়ার প্রত্যাশা করেছিল, তা না পেয়ে জামায়াতের ভেতরে নানা সংশয় ও বিভক্তির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত দলের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বিএনপির সঙ্গে সংযোগ রক্ষায় তৎপর ছিলেন।
শীর্ষস্থানীয় পাঁচ নেতা গ্রেপ্তারের পরও রাজনীতির মাঠে জামায়াতের কার্যকর কোনো কর্মসূচি না থাকায় দলটির মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একধরনের হতাশা ও ভীতি বিরাজ করছে। মূল নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্ব সাবধানী আচরণ করছে এবং সাধারণ গোছের কর্মসূচি দিয়ে কর্মীদের চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কাজ করছেন বলে দাবি করেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ জামায়াতের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির ভূমিকা সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তাকে 'দূরভিসন্ধিমূলক' মন্তব্য করে বলেন, 'জোটে ফাটল ধরানোর জন্য কেউ এ ধরনের কথা বলতে পারে।' তাঁর বক্তব্য, 'ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করার ক্ষমতা এ সরকারের নেই। আমরা সে চিন্তা করতেই রাজি না।'
Showing posts with label বিএনপি. Show all posts
Showing posts with label বিএনপি. Show all posts
22 July 2010
5 July 2010
বিএনপির কৌশল: জামায়াতের পাশে থাকলেও দায় নেবে না যুদ্ধাপরাধের
রফিকুল ইসলাম মন্টু
জামায়াতের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের মুক্তি দাবিতে আন্দোলনে দলটির পাশে থাকবে বিএনপি। তবে জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের যে অভিযোগ উঠেছে, এর দায় বিএনপি নেবে না। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের শরিক জামায়াতের এই সংকটে সরাসরি কোনো ভূমিকা না নিয়ে কৌশলে সরকারকে চাপের মুখে রাখার চেষ্টা করবে প্রধান বিরোধী দল। যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব না দেখিয়ে সঠিক বিচারের দাবি নিয়ে অনড় অবস্থানে থাকবে দলটি।
যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকে জামায়াত নেতাদের বাঁচাতেই বিএনপি তাদের মুক্তি দাবি করছে বলে সরকারি দল যে অভিযোগ তুলেছে, তা নাকচ করে দিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা। তাঁরা দাবি করেছেন, এ বিষয়ে বিএনপির ভিন্ন অবস্থান রয়েছে। চারদলীয় জোটের শরিক হিসেবে জামায়াত নেতাদের মুক্তি চেয়েছে বিএনপি। একটি ইস্যুর সঙ্গে আরেকটি ইস্যু সম্পৃক্ত করার পক্ষে নন তাঁরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জামায়াত চারদলীয় জোটের শরিক। দলটির শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থেকে বাঁচানোর জন্য যে আমরা তাঁদের মুক্তি দাবি করেছি, এটা ভাবা ঠিক হবে না। জামায়াত নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করার পর বিএনপি চেয়ারপারসন ও মহাসচিব বিবৃতিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমরা আগেও বলেছি, বিএনপি যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিপক্ষে নয়। তবে এটা হওয়া উচিত সঠিক প্রক্রিয়ায়।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, 'আমরা একটার সঙ্গে আরেকটা ইস্যু গুলিয়ে ফেলতে চাই না। জামায়াত নেতাদের মুক্তি চাওয়া যে যুদ্ধাপরাধের পক্ষ নেওয়া_এটা ভাবা ঠিক হবে না। আমরাও যুদ্ধাপরাধের বিচার চাই। কিন্তু আমাদের দাবি একটাই_এই বিচার যাতে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না হয়। আমরা চাই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিচার।'
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, 'জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা জোটের শরিক একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের মুক্তি চাইতেই পারি। এই মুক্তি দাবির সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের কোনো সম্পর্ক নেই। তাছাড়া সরকার তো এখন যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকেই সরে এসেছে। তারা এখন মানবতাবিরোধী বিচার করতে চায়। তাহলে মির্জা আব্বাসের বাসায় তাণ্ডব, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির ওপর অত্যাচার কোন মানবতার মধ্যে পড়ে?'
দলীয় সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি আলোচনায় আসার পর থেকেই প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ বিষয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করে। চারদলের শরিক জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থাকলেও বিষয়টিকে কৌশলে সমাধান করার চিন্তা করে বিএনপি। সে কারণে এ বিষয়ে দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের প্রথম বক্তব্য ছিল, 'আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচার চাই, তবে এটা যেন রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত না হয়।'
জামায়াতের কারণে যুদ্ধাপরাধের দায় যাতে কোনোভাবেই বিএনপির ঘাড়ে গিয়ে না পড়ে, সে বিষয়ে দলটি সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। শুরু থেকেই তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এরই মধ্যে দলটির নেতারা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়ে সরকারের বক্তব্য স্পষ্ট নয়। তারা এক সময় বলছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথা, আবার বলছে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কথা। এ নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে প্রধান বিরোধী দলের দাবি। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের কয়েকজন নেতা আওয়ামী লীগের ভেতরে অবস্থানকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আগে করার দাবি তুলেছেন।
বিএনপির সূত্রগুলো জানিয়েছে, ধারাছোঁয়ার বাইরে থেকে বিএনপি যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে তাদের অবস্থান ঠিক করবে। তারা সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে অভিযোগ গঠন করা হলে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরবে। একই সঙ্গে সঠিক বিচারের দাবি জানাবে। আর কৌশল হিসেবে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনের বিষয়টি জনগণের সামনে তুলে ধরবে বিএনপি।
সূত্র জানায়, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও জোটের শরিক হিসেবে তারা কোনোভাবেই এ সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন রাখতে চায় না। জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক অপেক্ষাকৃত কম হলেও শীর্ষ পর্যায়ে তাঁদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ রয়েছে। শরিক হিসেবে যেকোনো সংকটে বিএনপি জামায়াতের পাশে থাকলেও যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে দলটি সতর্ক থাকবে বলে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
জামায়াতের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের মুক্তি দাবিতে আন্দোলনে দলটির পাশে থাকবে বিএনপি। তবে জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের যে অভিযোগ উঠেছে, এর দায় বিএনপি নেবে না। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের শরিক জামায়াতের এই সংকটে সরাসরি কোনো ভূমিকা না নিয়ে কৌশলে সরকারকে চাপের মুখে রাখার চেষ্টা করবে প্রধান বিরোধী দল। যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব না দেখিয়ে সঠিক বিচারের দাবি নিয়ে অনড় অবস্থানে থাকবে দলটি।
যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকে জামায়াত নেতাদের বাঁচাতেই বিএনপি তাদের মুক্তি দাবি করছে বলে সরকারি দল যে অভিযোগ তুলেছে, তা নাকচ করে দিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা। তাঁরা দাবি করেছেন, এ বিষয়ে বিএনপির ভিন্ন অবস্থান রয়েছে। চারদলীয় জোটের শরিক হিসেবে জামায়াত নেতাদের মুক্তি চেয়েছে বিএনপি। একটি ইস্যুর সঙ্গে আরেকটি ইস্যু সম্পৃক্ত করার পক্ষে নন তাঁরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জামায়াত চারদলীয় জোটের শরিক। দলটির শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থেকে বাঁচানোর জন্য যে আমরা তাঁদের মুক্তি দাবি করেছি, এটা ভাবা ঠিক হবে না। জামায়াত নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করার পর বিএনপি চেয়ারপারসন ও মহাসচিব বিবৃতিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমরা আগেও বলেছি, বিএনপি যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিপক্ষে নয়। তবে এটা হওয়া উচিত সঠিক প্রক্রিয়ায়।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, 'আমরা একটার সঙ্গে আরেকটা ইস্যু গুলিয়ে ফেলতে চাই না। জামায়াত নেতাদের মুক্তি চাওয়া যে যুদ্ধাপরাধের পক্ষ নেওয়া_এটা ভাবা ঠিক হবে না। আমরাও যুদ্ধাপরাধের বিচার চাই। কিন্তু আমাদের দাবি একটাই_এই বিচার যাতে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না হয়। আমরা চাই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিচার।'
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, 'জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা জোটের শরিক একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের মুক্তি চাইতেই পারি। এই মুক্তি দাবির সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের কোনো সম্পর্ক নেই। তাছাড়া সরকার তো এখন যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকেই সরে এসেছে। তারা এখন মানবতাবিরোধী বিচার করতে চায়। তাহলে মির্জা আব্বাসের বাসায় তাণ্ডব, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির ওপর অত্যাচার কোন মানবতার মধ্যে পড়ে?'
দলীয় সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি আলোচনায় আসার পর থেকেই প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ বিষয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করে। চারদলের শরিক জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থাকলেও বিষয়টিকে কৌশলে সমাধান করার চিন্তা করে বিএনপি। সে কারণে এ বিষয়ে দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের প্রথম বক্তব্য ছিল, 'আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচার চাই, তবে এটা যেন রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত না হয়।'
জামায়াতের কারণে যুদ্ধাপরাধের দায় যাতে কোনোভাবেই বিএনপির ঘাড়ে গিয়ে না পড়ে, সে বিষয়ে দলটি সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। শুরু থেকেই তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এরই মধ্যে দলটির নেতারা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়ে সরকারের বক্তব্য স্পষ্ট নয়। তারা এক সময় বলছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথা, আবার বলছে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কথা। এ নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে প্রধান বিরোধী দলের দাবি। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের কয়েকজন নেতা আওয়ামী লীগের ভেতরে অবস্থানকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আগে করার দাবি তুলেছেন।
বিএনপির সূত্রগুলো জানিয়েছে, ধারাছোঁয়ার বাইরে থেকে বিএনপি যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে তাদের অবস্থান ঠিক করবে। তারা সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে অভিযোগ গঠন করা হলে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরবে। একই সঙ্গে সঠিক বিচারের দাবি জানাবে। আর কৌশল হিসেবে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনের বিষয়টি জনগণের সামনে তুলে ধরবে বিএনপি।
সূত্র জানায়, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও জোটের শরিক হিসেবে তারা কোনোভাবেই এ সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন রাখতে চায় না। জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক অপেক্ষাকৃত কম হলেও শীর্ষ পর্যায়ে তাঁদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ রয়েছে। শরিক হিসেবে যেকোনো সংকটে বিএনপি জামায়াতের পাশে থাকলেও যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে দলটি সতর্ক থাকবে বলে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
1 July 2010
নিজামী-মুজাহিদ-সাঈদীর মুক্তি চেয়েছেন খালেদা
Thu, Jul 1st, 2010 10:03 pm BdST
ঢাকা, জুলাই ০১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বিরোধীদের ওপর 'নিপীড়ন-নির্যাতনের' পথ অবিলম্বে পরিহার করতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি এই আহ্বান জানান।
সেইসঙ্গে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন খালেদা।
তিনি বলেন, ''জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল একটি বৈধ ও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর তিন নেতাকে এক হাস্যকর মামলায় গ্রেপ্তার এবং পরে আরও কয়েকটি মামলায় আটক করে প্রত্যেককে অর্ধ মাসেরও বেশি সময়ের জন্য রিমান্ডে নিয়ে সরকার চরম স্বৈরাচারী পন্থায় রাজনৈতিক নিপীড়নের এক জঘন্য নজির সৃষ্টি করেছে।''
বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই বিবৃতিটি অনুমোদন দেওয়ার পর তা গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খালেদা জিয়া ২৭ জুনের হরতালে গ্রেপ্তার মির্জা আব্বাস, শমসের মবিন চৌধুরী, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ সব নেতা-কর্মীর মুক্তি দাবি করেছেন ওই বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, '' দেশে জুলুম-নির্যাতন, খুন, গুপ্তহত্যা, গ্রেপ্তার ও প্রতিবাদী কন্ঠকে স্তব্ধ করে সরকার দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এতে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।''
এ ব্যাপারে দেশপ্রেমিক সব দল, সংগঠন, শক্তি ও ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান তিনি।
হরতাল কর্মসূচি পালনের সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের শাহজাহানপুরের বাড়িতে ইউনিফর্ম ও সাদা পোষাকধারী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় সরকারি দলের 'হামলা' এবং সাংসদ শহীদউদ্দিন চৌধুরীর এ্যানির ওপর সরকারি ছাত্র সংগঠনের 'হামলার' ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার দাবি করেন খালেদা।
ঢাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর চৌধুরী আলমের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, "হরতালের প্রাক্কালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাদা পোষাকধারী সদস্যরা তাকে আটক করে নিয়ে গেছে।"
বিবৃতিতে তিনি অভিযোগ করেন, ২৭ জুনের হরতালে বিএনপি কোনো ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ বা বোমাবাজির আশ্রয় নেয়নি। বরং সরকারই হরতালের মতো গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে 'আক্রমণ' চালিয়ে ব্যাপক 'সহিংসতার' আশ্রয় নিয়েছে।
এর আগে রাত সোয়া ৮টার দিকে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক শুরু হয়ে তা শেষ হয় রাত ৯টা ৫০ মিনিটে।
এতে দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমেদ, এম শামসুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, সারোয়ারি রহমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, রফিকুল ইসলাম মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৭ জুন সকাল-সন্ধ্যা হরতালের রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকটি হয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএম/এইচএ/২২১৮ ঘ.
ঢাকা, জুলাই ০১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বিরোধীদের ওপর 'নিপীড়ন-নির্যাতনের' পথ অবিলম্বে পরিহার করতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি এই আহ্বান জানান।
সেইসঙ্গে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন খালেদা।
তিনি বলেন, ''জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল একটি বৈধ ও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর তিন নেতাকে এক হাস্যকর মামলায় গ্রেপ্তার এবং পরে আরও কয়েকটি মামলায় আটক করে প্রত্যেককে অর্ধ মাসেরও বেশি সময়ের জন্য রিমান্ডে নিয়ে সরকার চরম স্বৈরাচারী পন্থায় রাজনৈতিক নিপীড়নের এক জঘন্য নজির সৃষ্টি করেছে।''
বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই বিবৃতিটি অনুমোদন দেওয়ার পর তা গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খালেদা জিয়া ২৭ জুনের হরতালে গ্রেপ্তার মির্জা আব্বাস, শমসের মবিন চৌধুরী, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ সব নেতা-কর্মীর মুক্তি দাবি করেছেন ওই বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, '' দেশে জুলুম-নির্যাতন, খুন, গুপ্তহত্যা, গ্রেপ্তার ও প্রতিবাদী কন্ঠকে স্তব্ধ করে সরকার দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এতে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।''
এ ব্যাপারে দেশপ্রেমিক সব দল, সংগঠন, শক্তি ও ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান তিনি।
হরতাল কর্মসূচি পালনের সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের শাহজাহানপুরের বাড়িতে ইউনিফর্ম ও সাদা পোষাকধারী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় সরকারি দলের 'হামলা' এবং সাংসদ শহীদউদ্দিন চৌধুরীর এ্যানির ওপর সরকারি ছাত্র সংগঠনের 'হামলার' ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার দাবি করেন খালেদা।
ঢাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর চৌধুরী আলমের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, "হরতালের প্রাক্কালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাদা পোষাকধারী সদস্যরা তাকে আটক করে নিয়ে গেছে।"
বিবৃতিতে তিনি অভিযোগ করেন, ২৭ জুনের হরতালে বিএনপি কোনো ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ বা বোমাবাজির আশ্রয় নেয়নি। বরং সরকারই হরতালের মতো গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে 'আক্রমণ' চালিয়ে ব্যাপক 'সহিংসতার' আশ্রয় নিয়েছে।
এর আগে রাত সোয়া ৮টার দিকে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক শুরু হয়ে তা শেষ হয় রাত ৯টা ৫০ মিনিটে।
এতে দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমেদ, এম শামসুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, সারোয়ারি রহমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, রফিকুল ইসলাম মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৭ জুন সকাল-সন্ধ্যা হরতালের রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকটি হয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএম/এইচএ/২২১৮ ঘ.
3 April 2010
আইন প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্যঃ জামায়াতকে রক্ষা করতে চায় বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে আপত্তি তুলে বিএনপি জামায়াতকে রক্ষা করতে চায়_মন্তব্য করে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, 'যুদ্ধাপরাধ আর মানবতাবিরোধী অপরাধ সমান কথা। বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার এ নিয়ে মন্তব্য করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে চাইছেন।'
গত শুক্রবার বিএনপির মহাসচিব হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ এবং অগি্নসংযোগের মতো অপরাধ প্রচলিত ফৌজদারি আইনেই করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু একাডেমী আয়োজিত 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-দেশবাসীর দাবি' শীর্ষক আলোচনা সভায় গতকাল শনিবার আইন প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু একাডেমীর আহ্বায়ক হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রমের সভাপতিত্বে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম।
অ্যাডভোকেট কামরুল প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ। অ্যাডভোকেট কামরুল বলেন, তারা আগে থেকেই জানতেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিএনপি সহায়তা ও সমর্থন করবে না। কারণ এ দলের নেতারাই যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয়-প্রশয় দিয়ে রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জিয়াউর রহমানের সময় কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানের প্রধানমন্ত্রী এবং আরেক রাজাকার আলীমের মন্ত্রী হওয়া ও খালেদা জিয়ার সরকারে নিজামী-মুজাহিদের মন্ত্রী হওয়ার উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব এমন কথা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন। আইন প্রতিমন্ত্রী বলেন, খোন্দকার দেলোয়ার একজন বিজ্ঞ আইনজীবী, তাঁর এমন কথা বলা উচিত হয়নি। তিনি জ্ঞানপাপী বলেই এমনটা বলেছেন। বিএনপিতেই যুদ্ধাপরাধী আছে উল্লেখ করে কামরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আলবদর, আলশামসরা যেসব অপরাধ করেছে সবই যুদ্ধাপরাধের পাশাপাশি মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়ে। তাই এ প্রোপটে বিষয় দুটিকে আলাদা করে ব্যাখ্যা করার অবকাশ নেই। তিনি বলেন, সারা দেশে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে আরো ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রয়োজন হতে পারে।
মোহাম্মদ নাসিম বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এসবের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করাও মহাজোটের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল। এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হলে জনগণকে এ সরকার কী জবাব দেবে। তিনি বলেন, আগামী বিজয় দিবস জাতি পালন করবে যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে। তিনি বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংকট মোকাবিলায় জনগণের কাছে আরো সময় প্রার্থনা করে বলেন, আওয়ামী লীগ ২০২১ সাল পর্যন্ত সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। সময় পেলে এ সরকার বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুরের সমান উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
এদিকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান বলেছেন, জাতির কাছে দেওয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সরকার বাস্তবায়ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কোনো ষড়যন্ত্রই তা বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার' বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
খবরের লিংক
যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে আপত্তি তুলে বিএনপি জামায়াতকে রক্ষা করতে চায়_মন্তব্য করে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, 'যুদ্ধাপরাধ আর মানবতাবিরোধী অপরাধ সমান কথা। বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার এ নিয়ে মন্তব্য করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে চাইছেন।'
গত শুক্রবার বিএনপির মহাসচিব হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ এবং অগি্নসংযোগের মতো অপরাধ প্রচলিত ফৌজদারি আইনেই করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু একাডেমী আয়োজিত 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-দেশবাসীর দাবি' শীর্ষক আলোচনা সভায় গতকাল শনিবার আইন প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু একাডেমীর আহ্বায়ক হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রমের সভাপতিত্বে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম।
অ্যাডভোকেট কামরুল প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ। অ্যাডভোকেট কামরুল বলেন, তারা আগে থেকেই জানতেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিএনপি সহায়তা ও সমর্থন করবে না। কারণ এ দলের নেতারাই যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয়-প্রশয় দিয়ে রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জিয়াউর রহমানের সময় কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানের প্রধানমন্ত্রী এবং আরেক রাজাকার আলীমের মন্ত্রী হওয়া ও খালেদা জিয়ার সরকারে নিজামী-মুজাহিদের মন্ত্রী হওয়ার উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব এমন কথা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন। আইন প্রতিমন্ত্রী বলেন, খোন্দকার দেলোয়ার একজন বিজ্ঞ আইনজীবী, তাঁর এমন কথা বলা উচিত হয়নি। তিনি জ্ঞানপাপী বলেই এমনটা বলেছেন। বিএনপিতেই যুদ্ধাপরাধী আছে উল্লেখ করে কামরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আলবদর, আলশামসরা যেসব অপরাধ করেছে সবই যুদ্ধাপরাধের পাশাপাশি মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়ে। তাই এ প্রোপটে বিষয় দুটিকে আলাদা করে ব্যাখ্যা করার অবকাশ নেই। তিনি বলেন, সারা দেশে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে আরো ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রয়োজন হতে পারে।
মোহাম্মদ নাসিম বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এসবের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করাও মহাজোটের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল। এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হলে জনগণকে এ সরকার কী জবাব দেবে। তিনি বলেন, আগামী বিজয় দিবস জাতি পালন করবে যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে। তিনি বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংকট মোকাবিলায় জনগণের কাছে আরো সময় প্রার্থনা করে বলেন, আওয়ামী লীগ ২০২১ সাল পর্যন্ত সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। সময় পেলে এ সরকার বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুরের সমান উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
এদিকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান বলেছেন, জাতির কাছে দেওয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সরকার বাস্তবায়ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কোনো ষড়যন্ত্রই তা বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার' বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
খবরের লিংক
Subscribe to:
Posts (Atom)