Showing posts with label নাশকতা. Show all posts
Showing posts with label নাশকতা. Show all posts

4 May 2011

দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা: নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

বহুল আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির সিনিয়র এএসপি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান চৌধুরীর করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম এইচ এম ফজলুল বারী গতকাল বুধবার তা মঞ্জুর করেন।

অস্ত্র আটকের ঘটনায় অস্ত্র এবং চোরাচালান আইনে করা দুটি মামলায়ই জামায়াতের এই শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

ঢাকা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চট্টগ্রাম আনা হলে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে_এ আশঙ্কায় নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি চান তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত নিজামীকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।

এর আগে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান চৌধুরী গতকাল দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিভিন্ন আসামি ও সাক্ষীর দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মতিউর রহমান নিজামীর ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। তাই তাঁকে গ্রেপ্তার দেখাতে আবেদন জানিয়েছিলাম। কয়েক দিনের মধ্যে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।'

উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত মতিউর রহমান নিজামী বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। গত বছর ২১ জুলাই পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ২০০৪ সালে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের সময় নিজামী তৎকালীন জোট সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের শুনানির সময় অতিরিক্ত মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম সেন্টু আদালতে বলেন, 'শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সিইউএফএল জেটি ঘাটে খালাসের সময় নিজামী এ ব্যাপারে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেননি। এমনকি সিইউএফএলসহ সরকারি বিভিন্ন মাধ্যম তাঁর কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনো অনুমতি না দিয়ে তাদের নিবৃত্ত করেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় নিজামী ঘটনায় জড়িত।'

গতকাল সকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে গিয়ে গভর্নমেন্ট রেকর্ড অফিসারের (জিআরও) কাছে নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনপত্র জমা দেন। এরপর তা মহানগর হাকিম এইচ এম ফজলুল বারীর খাস কামরায় নিয়ে যাওয়া হলে তিনি প্রকাশ্য আদালতে শুনানির নির্দেশ দেন। পরে বিকেলে প্রকাশ্যে শুনানি শেষে আবেদন গ্রহণ করা হয়।

প্রসঙ্গত ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলী থানাধীন সিইউএফএল জেটি ঘাট থেকে দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে করা দুটি মামলা আদালতের নির্দেশে তিন বছর ধরে সিআইডি অধিকতর তদন্ত করছে। আগামী ১৫ মের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ২০ জন সাক্ষী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

অধিকতর তদন্ত শুরু হওয়ার পর সিআইডি নিজামী ও লুৎফুজ্জামান বাবর ছাড়াও এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, পরিচালক উইং কমান্ডার শাহাবুদ্দিন, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, ফিল্ড অফিসার আকবর হোসেন খান, সরকারি সার কারখানা সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহসীন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এনামুল হককে গ্রেপ্তার করেছে।

22 April 2011

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ফরিদপুরে গ্রেপ্তার

ফরিদপুর অফিস | তারিখ: ২২-০৪-২০১১

নাশকতামূলক চক্রান্তে জড়িত থাকার সন্দেহে ইজ্জত আলী (৫৫) নামের জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য এবং সাতক্ষীরা জামায়াতের সাবেক আমির। এ ছাড়া তিনি সাতক্ষীরা ইসলামি কমিউনিটি হাসপাতালের চেয়ারম্যান।

আজ শুক্রবার ভোরে ফরিদপুরের শহরতলির আরামবাগ এতিমখানা পরিচালিত একটি গেস্টহাউস থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুনীল কুমার কর্মকার জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারের কথা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার প্রথম আলোকে জানান, ইসলামি কমিউনিটি হাসপাতালকে ভিত্তি করে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে ফরিদপুরকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তের অংশ হিসেবে ইজ্জত আলী জেলার জামায়াতের নেতাদের সংঘবদ্ধ করে আসছিলেন।

তবে জেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম দাবি করেছেন, আজ ঝিনাইদহে ইসলামি কমিউনিটি হাসপাতালের নির্মাণ-সংক্রান্ত এক সভায় যোগ দিতে তিনিসহ দিনাজপুর ইসলামি কমিউনিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আকতারউদ্দীন মোল্লা ও মানিকগঞ্জ ইসলামি কমিউনিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. রহিসউদ্দীন গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুর আসেন। তাঁরা ওই দিন বিকেলে ফরিদপুর শহরটি ঘুরে দেখেন এবং রাতে আরামবাগ এতিমখানা পরিচালিত রেস্ট হাউসে অবস্থান করেন। পুলিশ সেখান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এদিকে তাঁকে গ্রেপ্তারের পরপরই ওই গেস্ট হাউসে অবস্থানকারী অন্য দুই জামায়াত নেতা আজ সকালেই তড়িঘড়ি করে ফরিদপুর ত্যাগ করেন।

এদিকে জেলা জামায়াতের আমির দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ইজ্জত আলীকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।

1 September 2010

ঢাকার ৩ মামলায় শিবির নেতা মর্তুজা গ্রেপ্তার

Tue, Aug 31st, 2010 8:45 pm BdST

রাজশাহী, অগাস্ট ৩১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম) - ছাত্রশিবিরের সমাজ কল্যাণ ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মর্তুজাকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

তাকে দুই-একদিনের মধ্যে ঢাকায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশ।

পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শিবিরের কেন্দ্রীয় এই নেতাকে মঙ্গলবার কারাগারে পাঠানো হয়।

বিকালে রাজশাহীর রাজপাড়া থানা পুলিশ মর্তুজাকে মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে।

হাকিম জিয়াউর রহমান তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

শনিবার রাতে রাজশাহীর র‌্যাব-৫ এর একটি দল নগরীর বাইপাস এলাকা থেকে মর্তুজাকে আটক করে।

রোববার তাকে রাজপাড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোমবার মর্তুজাকে একদিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

মর্তুজার বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বামনদিঘী গ্রামে।

রাজপাড়া থানার ওসি শহীদুল হক সাংবাদিকদের জানান, মর্তুজার কাছ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

তিনি জানান, মর্তুজাকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ দুই-এক দিনের মধ্যে তাকে ঢাকায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

এর আগে র‌্যাব-৫ রাজশাহীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৩ অগাস্ট মোহাম্মদপুরে শিবিরের একটি মেস থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, বিস্ফোরক ও সাংগঠনিক বইসহ জামায়াতের সহযোগী শিবিরের চার নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা নাশকতার পরিকলপনা করছিলো বলে জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে জানায়। ওই নাশকতার পরিকল্পনার সঙ্গে মর্তুজার সরাসরি স�পৃক্ততা ছিলো।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসবাদে মর্তুজা জানান, জামায়াতের শীর্ষ নেতারা আটকের পর তৃণমূলের কর্মীরা ভীত হয়ে পড়েছে। তাদের মনোবল বাড়াতে এবং মিছিল মিটিং-এ বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহারের জন্য প্রস্তুতি নেয় তারা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/এমএসবি/২০৪৪ ঘ.

31 August 2010

জামায়াতের চার নেতার মুক্তি দাবি: গুরুত্বপূর্ণ ভবন উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০১-০৯-২০১০

ঈদের আগে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় চার নেতাকে মুক্তি দেওয়া না হলে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন উড়িয়ে দেওয়া হবে বলে একটি ই-মেইল বার্তায় হুমকি দেওয়া হয়েছে। আইন কমিশনের ই-মেইল ঠিকানায় গত ২৫ আগস্ট এ বার্তাটি পাঠানো হয়। গতকাল মঙ্গলবার এই বার্তাটি দেখে তাৎক্ষণিক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়কে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তবে এতে ই-মেইল প্রেরকের পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিজস্ব সাইট না থাকায় আইন কমিশনের ঠিকানায় ই-মেইলটি পাঠানো হয়েছে।

আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইন কমিশনের ঠিকানায় ই-মেইলটি এসেছে। এতে ঈদের আগে চার নেতাকে মুক্তি না দেওয়া হলে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবন উড়িয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো. শাহিনুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’

ই-মেইলটি: বাংলায় লেখা ই-মেইল বার্তায় চার জাতীয় নেতা বলতে মানবতাবিরোধী অপরাধসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে আটক চার জামায়াত নেতাকে বোঝানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়, ‘আমাদের জাতীয় চার নেতাকে এই ঈদের আগে মুক্তি না দিলে ঈদের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন উড়িয়ে দেওয়া হবে এবং আপনাদের ওপর, পুলিশের ওপর, হামলা চালানো হবে।’ শিরোনামে লেখা হয়েছে, ‘একযোগে হামলা করা হবে’। ৎধনবুধভরংযষরসরঃবফ—মসধরষ.পড়স এই ঠিকানা থেকে পাঠানো ই-মেইল বার্তায় প্রেরকের জায়গায় এম ডি এম টি লেখা রয়েছে।

26 August 2010

জামায়াতের ঢাকা মহানগর আমির গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ২৬-০৮-২০১০

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর শাখার আমির রফিকুল ইসলাম খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রফিকুলকে গতকাল বুধবার দুপুরে মিরপুরের ১০ নম্বর ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের নিজ বাসা থেকে মিরপুর থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

ডিবির উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রফিকুল ইসলামকে রাজধানীর রমনা থানার ফারুক হত্যা মামলা ও উত্তরা থানার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ২৭ জুন বিএনপির হরতালের আগের রাতে মগবাজারে গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ফারুক নিহত হন। এ ছাড়া উত্তরা থানায় নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহ্রীরের বিরুদ্ধে ওই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাটি হয়। উভয় মামলায় জামায়াতের অপর তিন শীর্ষনেতাও গ্রেপ্তার আছেন।

গ্রেপ্তারের পরপর মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী ওয়াজেদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মতিঝিল, পল্টন, রমনা, শাহবাগসহ বিভিন্ন থানায় পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ছয়টি মামলা আছে। এ ছাড়া ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি তিনি। এই মামলায় জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে গত ২৯ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় এই তিন নেতা গ্রেপ্তারের পর থেকে রফিকুল ইসলাম আত্মগোপনে ছিলেন।

অবশ্য জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, রফিকুল সব মামলায় জামিন নিয়েছেন। কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশ তাঁকে আটক করেছে। এটা আইনের শাসন, বিচার ও মানবাধিকার পরিপন্থী।

রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল মিরপুর, পল্লবী, কাকরাইলসহ রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভ করেছে মহানগর জামায়াত।

20 August 2010

ঝালকাঠিতে বিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুর মামলায় জামায়াত নেতা গ্রেপ্তার

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের বারেদিয়া গ্রাম থেকে জামায়াত নেতা আবু তালেবকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি সদর উপজেলা জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য। গত ১০ আগস্ট বিনয়কাঠি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অভিযোগ কেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চট্টগ্রাম থেকে গ্রেনেড আনে মজিদ বাট: হামলার পর বাকিগুলো পাঠানো হয় কাশ্মীরে

মাসুদ কার্জন

ইতিহাসের বর্বরোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় একাট্টা হয়েছিল দেশি-বিদেশি একাধিক জঙ্গি গোষ্ঠী। তাদের নেপথ্যে নায়ক বা মদদদাতা আছে দেশি-বিদেশি একাধিক প্রভাবশালী মহল। ওই হামলায় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করেছিল তৎকালীন রাষ্ট্রযন্ত্রের একাংশ। চট্টগ্রাম থেকে আসা গ্রেনেডের চালানের একটি অংশ ২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহারের পাশাপাশি আরেকটি অংশ পাঠানো হয়েছিল কাশ্মীরের জঙ্গিদের কাছেও। গ্রেনেড সরবরাহকারীদের একজন কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদীন নেতা আবদুল মজিদ বাট।

২১ আগস্ট হামলার সঙ্গে যোগসূত্র থাকতে পারে চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানেরও। শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খোয়া যাওয়া গ্রেনেডগুলোই ব্যবহার করা হয়েছিল বলে মনে করছেন অনেকেই। ওই সময় রহস্যজনকভাবে ২৪টি গ্রেনেড খোয়া গিয়েছিল। হামলাকারী ও মদদদাতা সবার লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তদন্ত সূত্র ও গ্রেপ্তারকৃতদের পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দি থেকে এসব বিষয় জানা গেছে।

মামলার বর্তমান তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দ কালের কণ্ঠকে জানান, আবদুল মজিদ বাট বিদেশি, কাশ্মীরভিত্তিক একটি জঙ্গি সংগঠনের নেতা। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও ২১ আগস্ট হামলা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র মতে, হামলার মাঠপর্যায়ের তদারকি করেন হুজি নেতা মুফতি হান্নান ও উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই আরেক হুজি নেতা তাজউদ্দিন। তাজউদ্দিনই তাঁর ভাই পিন্টুর মাধ্যমে তৎকালীন সরকারের অংশটির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। হামলার পর তাজউদ্দিনের ভিসা করানো, তাঁকে দেশের বাইরে পাঠানোর পুরো বিষয়টি দেখভাল করেছিলেন প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন তিন সদস্য।

আফগানিস্তানফেরত মুজাহিদীন সাবেক হুজি নেতা মাওলানা সালামের গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, দেশি ও বিদেশি জঙ্গি গোষ্ঠী ছাড়াও ২১ আগস্টের হামলায় তৎকালীন সরকারের একটি অংশের মদদ ছিল। সালামের মতে, ২১ আগস্ট ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলো এসেছিল চট্টগ্রাম থেকে। ভিনদেশি জঙ্গি নেতা মজিদ বাট গ্রেনেডের চালানটি ঢাকায় আনার পর কিছু গ্রেনেড হুজি নেতা তাজউদ্দিনকে দেন। চালানের অবশিষ্ট গ্রেনেড পাঠিয়েছিলেন ভারতের কাশ্মীর মুজাহিদীনের কাছে। আবদুল মজিদ বাট পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের (ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজন্স) ঘনিষ্ঠ। বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বাংলাদেশে তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল।

কিভাবে তৎকালীন সরকারের অংশটি হামলাকারীদের সহযোগিতা করেছিল তার বর্ণনা আছে পুলিশের কাছে দেওয়া মাওলানা সালামের জবাবন্দিতেও। সালামের দাবি, হামলার আগে মার্চ মাসে তাঁরা একটি বৈঠক করেছিলেন মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদের ভেতরে। তিনি ছাড়াও ওই বৈঠকে তাজউদ্দিন, মুফতি হান্নান ও মজিদ বাট উপস্থিত ছিলেন। তাঁর দাবি, ২১ আগস্ট হামলা ও শেখ হাসিনাকে হত্যা করলে দেশে অশান্তি হতে পারে_ওই বৈঠকে তিনি এ প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন। উত্তরে তাজউদ্দিন বলেছিলেন, 'অসুবিধা নাই, বর্তমান সরকারের (বিএনপি-জামায়াত) পুরো সমর্থন পাব।' সালামের দাবি, হামলার আগে মুফতি হান্নানের বাসায় আরো একটি বৈঠক হয়েছিল। পরে তিনি পাকিস্তান চলে যান। দেশে আসার পর তাজউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল একটি গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে। তাজউদ্দিন ওই সময় গোয়েন্দা সংস্থাটির অফিসেই থাকতেন। শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে না পারায় ওই সাক্ষাতে তাজউদ্দিন আক্ষেপ করে বলেছিলেন, 'হামলা করে আসল কাজ হলো না; শুধু বদনাম হলো। সরকারের লোকজনও খুশি হতে পারেন নাই।'

17 August 2010

খাগড়াছড়িতে জেহাদি বইপুস্তকসহ শিবিরের জেলা সভাপতি আটক

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

জেহাদি বইপুস্তক, ঢাকার ম্যাপসহ ইসলামী ছাত্রশিবিরের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি আবু আহমেদকে পুলিশ গতকাল সোমবার দুপুরে পানছড়ি উপজেলা সদর থেকে আটক করেছে। তাকে দণ্ডবিধির ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ।

পানছড়ি থানার ওসি জামাল উদ্দিন জানান, গোপন সভা করার উদ্দেশ্যে পানছড়ি আসার খবর পেয়ে তারা আবু আহমেদকে আটক করেন। সে পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি বা বিশৃঙ্খলা তৈরির উদ্দেশ্যে এখানে এসেছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

আটক শিবির সভাপতির কাছ থেকে বেশ কিছু কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলনে উৎসাহিত করার মতো বইপুস্তক, হাবিল ও কাবিল শিরোনামের একটি সিডি এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের একটি ম্যাপ রয়েছে। এ সময় তার মোটরসাইকেলটিও জব্দ করা হয়। দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি আব্দুল হালিম জানিয়েছেন, এটি তাঁর নিজস্ব মোটরসাইকেল।
খাগড়াছড়ি সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম জানান, আটক শিবিরের জেলা সভাপতি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের ইসলামী ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি খাগড়াছড়ির তবলছড়িতে। জেলায় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তার গোপন মিশন থাকতে পারে।

পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, আটক শিবির সভাপতি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ির সহিংস ঘটনার পর জামায়াত-শিবিরের বেশ কিছু নেতা-কর্মীর সঙ্গে সেও পালিয়েছিল। সম্প্রতি সে জেলায় ফিরে আসে। বেশ কয়েকদিন ধরে পানছড়ির বিভিন্ন স্থানে তার আনাগোনায় পুলিশের সন্দেহ হয়।

11 August 2010

পল্টনে জামায়াত কার্যালয় থেকে ২৫ কর্মী গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর নয়াপল্টনে জামায়াতে ইসলামীর মহানগর অফিসে অভিযান চালিয়ে গতকাল বুধবার ভোরে জামায়াত ও শিবিরের ২৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা সেখানে রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল বলে পুলিশ দাবি করেছে।
পল্টন মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, জামায়াতের মহানগর কার্যালয়ের নিচতলায় অভিযান চালিয়ে ওই ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা গত ১ ও ৩ জুলাই পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। ওই সব ঘটনায় পল্টন থানায় আলাদা দুটি মামলায় হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের অনেকেই ওই সময় ভাঙচুর, অগি্নসংযোগের সঙ্গে জড়িত ছিল। গতকাল দুপুরেই তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজন হলে পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে।
ওসি আরো বলেন, 'কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে রাতে এত লোক থাকতে পারে_এটা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল। নাশকতার উদ্দেশ্যেই হয়তো তারা সেখানে জড়ো হয়েছিল।'
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, কয়েক দিন ধরেই জামায়াতের মহানগর কার্যালয়ে রাতে কর্মীদের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছিল। এ কারণে ওই এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। পরে গতকাল ভোরে অভিযান চালানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো ইকবাল হোসেন, শাহাদত হোসেন, আ. খালেক, শেখ কাওসার, দেলোয়ার হোসেন, নাহিদ জামাল, জসিম উদ্দিন, হুমায়ুন কবির, ইউসুফ, আবুল হোসেন, নুরুন্নবী, মোসলেম উদ্দিন, হাবিবুর রহমান, ইনছান আলী, আলমগীর, আ. মান্নান, লুৎফর রহমান, সাইদুর রহমান, হাদিউল, কামাল, আ. মান্নান, তবিবুর রহমান, মাইনুদ্দিন, সুলতান আহমেদ ও শাহাদত। গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছে, রমজান উপলক্ষে আলোচনা করতে তারা দলীয় কার্যালয়ে জড়ো হয়েছিল। তবে দলীয় কার্যালয়ে রাত কাটানোর ব্যাপারে তারা সদুত্তর দিতে পারেনি।
এদিকে দলের কার্যালয়ে পুলিশের তল্লাশি ও ২৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। এক বিবৃতিতে তিনি দাবি করেন, সকাল ৭টায় প্রায় অর্ধশত পুলিশ অফিসে ঢুকে দলের সাংগঠনিক বৈঠক থেকে ২৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। অথচ তল্লাশি চালিয়ে তারা কোনো কিছুই পায়নি।
আমাদের আদালত প্রতিবেদক জানান, গ্রেপ্তারকৃত ২৫ নেতা-কর্মীকে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ তাদের গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশের কাজে বাধা, বেআইনি মিছিল সমাবেশ করার মামলায় কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে। মহানগর হাকিম মোস্তফা শাহরিয়ার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পুলিশি প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বড় ধরনের কোনো নাশকতা ঘটাতে তারা জামায়াতের মহানগর কার্যালয়ে জড়ো হয়েছিল।

10 August 2010

সিলেটে মিছিলে বাধার জের: জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা বেধড়ক পেটাল পুলিশকে

সিলেট অফিস
'আমরা সচেতন সিলেটবাসী'র ব্যানারে গতকাল মঙ্গলবার সিলেট নগরীতে জামায়াত-শিবিরের বের করা জঙ্গিমিছিলে বাধা দিতে গিয়ে উল্টো বেধড়ক পিটুনির শিকার হয়েছে পুলিশ। নগরীর জিন্দাবাজারে বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে চার পুলিশসহ আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে।

ঘটনার পর পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান শুরু করে। পুলিশের হাতে আটকরা হলেন_মুস্তাফিজুর রহমান, মাওলানা ইমরান আহমদ, জয়নাল আবেদীন, ইয়াহইয়া ও মাওলানা জলিল উদ্দিন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা গতকাল 'আমরা সচেতন সিলেটবাসী'র ব্যানারে বিরাট জঙ্গিমিছিল বের করে। রমজানকে স্বাগত জানিয়ে ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে মিছিলটি বের করা হলেও জামায়াত-শিবিরের লোকজন প্রথম থেকেই ছিল মারমুখী। তারা কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বিকেলে জমায়েত হতে থাকে রেজিস্ট্রি মাঠে। পুলিশ শুরুতে বাধা দিলেও বাধা উপেক্ষা করে তারা সুরমা পয়েন্ট থেকে মিছিল বের করে।

মিছিলটি জিন্দাবাজারের সোনালী ব্যাংকের সামনে আসার পর পুলিশ আবারও বাধা দেয়। কিন্তু মিছিলকারীরা এগোতে থাকলে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। এ সময় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরাও পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তারা পুলিশ সদস্যদের ধরে কিল-ঘুষি মারে, ইট দিয়ে আঘাত করে এবং বেধড়ক পেটায়। হামলায় চার পুলিশ ও সাতজন পথচারী আহত হয়।

আহত পুলিশ সদস্যদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে একটি টিয়ার সেল ছোড়ে। জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা সোনালী ব্যাংকের করপোরেট শাখা ভবন ও একটি টেম্পো ভাঙচুর করেছে। সংঘর্ষের সময় জিন্দাবাজার ও বন্দর বাজার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। পথচারীরা ভয়ে এদিক-ওদিক ছুটতে থাকে।

ঘটনার পর পুলিশ হামলাকারীদের ধরতে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান শুরু করে। সন্ধ্যা ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত ছিল। কোতোয়ালি থানার ওসি খন্দকার নওরোজ আহমদ পুলিশ আহত হওয়ার ঘটনা স্বীকার করে বলেন, 'আমরা পাঁচজনকে আটক করেছি।'

বিস্ফোরক দ্রব্য মামলা: জেএমবির দুই জঙ্গির ৫০ বছর করে কারাদণ্ড

আদালত প্রতিবেদক | তারিখ: ১৫-০৭-২০১০

নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতা সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ও আসাদুজ্জামান পনিরকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় ৫০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক রেজাউল ইসলাম গতকাল বুধবার এ রায় দেন। ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানায় করা মামলায় এই দুই জঙ্গির বিরুদ্ধে সাজার এ আদেশ দেওয়া হয়।

রায় ঘোষণার আগে দুই জঙ্গি সালাউদ্দিন ও আসাদুজ্জামানকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত প্রত্যেককে ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩ ধারায় ৩০ বছর (যাবজ্জীবন) এবং ৪ ধারায় ২০ বছর—মোট ৫০ বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেন। মামলার অপর আসামি শরীফ ওরফে আশরাফুল ওরফে আশরাফ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হওয়ায় তাঁকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। তবে মামলার পর থেকেই তিনি পলাতক।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ শহরের আর কে মিশন রোডের আকুয়া মোড়লবাড়ির নূর মহল থেকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সালাউদ্দিন ও আসাদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব-৯-এর তৎকালীন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, আবদুর রহমানের ভাই আতাউর রহমান সানি, সালাউদ্দিন, আসাদুজ্জামান ও আশরাফুলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। ঝালকাঠির দুই বিচারক হত্যা মামলায় ২০০৭ সালে শায়খ আবদুর রহমান, বাংলা ভাই ও সানির ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এই মামলা থেকে তাঁদের বাদ দেওয়া হয়।

6 August 2010

এক দিনে ১৪ জিডি: জামায়াত নেতা তাহেরের খোঁজে পুলিশি অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক

জামায়াত কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়ের করা ১৪টি জিডির সূত্রে গ্রেপ্তার অভিযান চালাতে পুলিশ গতকাল শুক্রবার রাতে রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ গলিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যায়। তবে ওই সময় সেখানে তাঁকে পাওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, রাত ৯টার দিকে সাদা পোশাকে একদল পুলিশ মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি ঘিরে ফেলে। কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জামায়াতের কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে সেখানে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের কাছে তাহেরের খোঁজ জানতে চান। জামায়াতের কোনো নেতা-কর্মী তাঁর খোঁজ দিতে না পারায় পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

রমনা জোন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার নুরুল ইসলাম গত রাতে কালের কণ্ঠকে জানান, পুলিশের একটি দল জামায়াতের কার্যালয়ে গেলেও তাহেরকে না পেয়ে ফিরে আসে। এ ছাড়া শ্যামলীতে তাঁর বাসার আশপাশেও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল রাতে ১২টা পর্যন্ত ডা. তাহের বাসায় ফেরেননি বলে জানা গেছে।

পুলিশের অপর এক সূত্র জানায়, জামায়াত নেতা তাহেরকে ধরতে গতকাল বিকেল থেকেই প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রসঙ্গত, জামায়াত নেতা তাহেরের বিরুদ্ধে তাঁর নির্বাচনী এলাকাতেই অনেক অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নিজ দলের মধ্যেও তিনি অনেকটা উগ্রপন্থী বলে পরিচিত।

এদিকে দুই দিন আগে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রের প্রতি পরোক্ষ হুমকির অভিযোগে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের বিরুদ্ধে ঢাকা, বগুড়া ও গোপালগঞ্জে ১৪টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারাও জিডি করেছেন বলে জানা গেছে।

আলোচিত এই জামায়াত নেতা সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি রিজার্ভ ফোর্সের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকারকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার হুমকি দেন। তিনি এ-ও বলেন, সময়মতো তাঁদের রিজার্ভ ফোর্স নামানো হবে।

5 August 2010

জঙ্গিদের মতো শিবিরেরও আছে বোমা তৈরির বিশেষ শাখা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

জেএমবি, হুজি বা জঙ্গি সংগঠনগুলোর আদলে নিজেরাই বোমা তৈরি করছে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরাও। এর জন্য শিবিরের প্রশিক্ষিত একটি 'উইং' বা শাখাও রয়েছে। তাদের কাজ হলো, বিস্ফোরক দিয়ে বোমা তৈরি করা। এ ছাড়া শিবিরের সঙ্গে চরমপন্থী সংগঠনগুলোর বোমা বা অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও বিশেষ যোগাযোগ রয়েছে। শিবিরের মধ্যে যারা অস্ত্র ও বিস্ফোরক সম্পর্কিত কাজে পারদর্শী, সংগঠন থেকে তাদের 'ইনসেনটিভ' বা প্রণোদনা দেওয়া হয়। অস্ত্র চালনা ছাড়াও বোমা তৈরিতে পারদর্শী শিবিরের এ রকম কর্মী বাহিনীর সন্ধানে নেমেছেন গোয়েন্দারা।
মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তারকৃত শিবিরের চার নেতার বিরুদ্ধে অস্ত্র, বিস্ফোরক, সন্ত্রাস দমন আইনে মোহাম্মদপুর থানায় পৃথক তিন মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার প্রত্যেককে ৯ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
র‌্যাবের একটি সূত্র জানায়, এর আগে বিভিন্ন সময় জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে শিবিরের যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলেও এবারই প্রথম চরমপন্থীদের সঙ্গে তাদের কানেকশন আবিষ্কার হয়েছে, যা তাদের কাছে একেবারেই নতুন মনে হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করা এবং জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এ সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে এর কিছু আলামতও গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। শিবিরের মেস থেকে উদ্ধারকৃত শাটারগানটি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। এ ধরনের অস্ত্র সাধারণত চরমপন্থীরা ব্যবহার করে। ফলে চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি অনেকটাই স্পষ্ট। এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজন চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে।
সূত্রমতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দখলদারিত্ব বজায় বা নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের চিন্তা মাথায় রেখে শিবির নিজেদের মধ্য থেকে বাছাই করে নিজস্ব বাহিনী বা উইং তৈরি করে। তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। সাধারণত শিবিরের নেতা-কর্মীদের জন্য ধর্মীয় আচার অনুসরণ করা বা সংগঠনের কাছে নিয়মিত রিপোর্ট দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও এই উইংয়ের সদস্যদের জন্য কোনো কিছু বাধ্যতামূলক নয়। তারা অন্য শিবিরকর্মী থেকে আলাদা থাকে। এমনকি শিবিরের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া অন্য কেউ এই উইংয়ের সদস্যদের চেনেও না। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান কালের কণ্ঠকে জানান, উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক দেখে ধারণা করা হচ্ছে, শিবিরের এসব নেতা-কর্মী নিজেরাই বোমা তৈরি করছিল। গ্রেপ্তারকৃতদের সঙ্গে আরো অনেকে থাকতে পারে। এ ধরনের বোমা এর আগে জঙ্গি সংগঠনগুলো তৈরি করত বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ বিষয়ে কিছু ধারণা পাওয়া গেছে। রিমান্ডে এনে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। শিবিরের মধ্যে এ ধরনের সদস্য বা কর্মী যারা আছে, তাদেরও খোঁজা হচ্ছে।
র‌্যাবের অপর একটি সূত্র জানায়, মোহাম্মদপুরের জহুরী মহল্লা থেকে উদ্ধারকৃত ছয়টি বোমাই দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি, যা শিবিরের নেতা-কর্মীরা নিজেরাই বানিয়েছিল। তবে গ্রেপ্তারকৃতরা বোমা তৈরিতে পারদর্শী কি না তা এখনো পরিষ্কার হয়নি। র‌্যাবের অভিযানের সময় শিবিরের ওই মেস থেকে পাঁচ প্যাকেট সালফার, পটাশসহ অন্যান্য বিস্ফোরকদ্রব্য ছাড়াও ১২টি পেনসিল ব্যাটারি, একটি লাল রঙের স্কচটেপ, ২০ গজ সাদা, কালো ও লাল রঙের বৈদ্যুতিক তার উদ্ধার করা হয়। এসব উপাদানের সবই বোমা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া রাজধানীর পান্থপথে স্কয়ার হাসপাতাল এলাকার পেছনের অংশে অস্ত্র বিস্ফোরকের আরেকটি বড় চালান ছিল। র‌্যাবের অভিযানের আগেই তা সরিয়ে ফেলা হয়।
আমাদের আদালত প্রতিবেদক জানান, গ্রেপ্তারকৃত শিবিরের মোহাম্মদপুর থানা শাখার সভাপতি আব্দুল জায়েদ বিন সাবিত, বাঙলা কলেজ শাখার সভাপতি সুলতান মোহাম্মাদ রিপন, মতিঝিল থানা শাখার সাবেক সভাপতি আলমগীর হোসেন এবং জায়েদের সহযোগী ও মোহাম্মদপুর থানার ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মো. ইমরান মাসুমকে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। মোহাম্মদপুর থানায় দায়েরকৃত তিন মামলায় তাদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. আলী হোসাইন তিন মামলায় তিন দিন করে প্রত্যেককে ৯ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

জামায়াত নেতা আবদুল্লাহ তাহের: ‘ফোর্স রিজার্ভ আছে, যথাযথ সময়ে প্রয়োগ করা হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০৫-০৮-২০১০

জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, সময় এলে যথাযথ ব্যক্তি ও সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সরকার সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি করছে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, জামায়াতের দেড় থেকে দুই কোটি সমর্থক রয়েছে। ফোর্স রিজার্ভ আছে, যথাযথ সময় যথাযথ ব্যক্তি ও সরকারের ওপর প্রয়োগ করা হবে।
গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম নামে একটি সংগঠন আয়োজিত ‘সংবিধান সংশোধন: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের বাস্তবতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ।

মওদুদ আহমদ বলেন, সরকার সংবিধান সংশোধনের জন্য যে কমিটি করেছে, তাতে সরকার ও বিরোধী দলের সমান সমান প্রতিনিধিত্ব থাকলে পরিবর্তনটা বাস্তবসম্মত হতো। নইলে ভবিষ্যতের সরকার এসে এটি পরিবর্তন করবে। আসলে সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় চরম ব্যর্থতা ঢাকতে প্রথমে যুদ্ধাপরাধ, তারপর সংবিধান সংশোধন এবং বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দেওয়ার কাজ করছে।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলোকে সরকার সামনে নিয়ে আসছে।

সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, পুলিশ বাড়াবাড়ি করছে। এখন হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টেও সেই রোগ ছড়িয়েছে। তিনি বলেন, সরকার চাইছিল, নিজামী-মুজাহিদ গ্রেপ্তারের পর উত্তেজিত হয়ে কর্মী-সমর্থকেরা ভাঙচুর করবে, রাস্তাঘাট বন্ধ রাখবে আর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে সরকার তাদের ‘ম্যাসাকার’ করবে। কিন্তু জামায়াত সরকারকে সেই সুযোগ দেয়নি। তবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে।

4 August 2010

চার শিবিরক্যাডার গ্রেপ্তার অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছাত্রশিবিরের চার ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করেছেন র‌্যাব গোয়েন্দারা। মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, র‌্যাব মোহাম্মদপুরের আজিজ মহল্লায় শিবিরের মেস থেকে একটি সাটার গান, পাঁচ রাউন্ড গুলি, ছয়টি তাজা বোমা, বিস্ফোরকসহ বোমা তৈরির বিপুল সরঞ্জাম ও জিহাদি বই উদ্ধার করে। র‌্যাব গোয়েন্দারা জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এরই মধ্যে ঢাকাকে চার ভাগে ভাগ করে নাশকতার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এ জন্য তারা অস্ত্র, গোলাবারুদ সংগ্রহ ও মজুদ করছিল। গ্রেপ্তারকৃতরা এ রকম একটি এলাকার দায়িত্বে ছিল। নাশকতা সফল করতে ঢাকার বাইরে থেকে শিবির ক্যাডারদের জড়ো করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে দুর্ধর্ষ কয়েকজন শিবির ক্যাডারের মধ্যে। পুরো বিষয়টি তদারকির দায়িত্বে আছেন শিবিরের কেন্দ্রীয় কয়েক নেতা। এর অংশ হিসেবে বোমা তৈরি করতে চরমপন্থী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিল তারা। বোমা বানানোর জন্য এক চরমপন্থী নেতাকে টাকাও দিয়েছিলেন শিবির নেতারা।

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারকৃতরা হলো_ছাত্রশিবিরের মোহাম্মদপুর থানা শাখার সভাপতি আবদুল জায়েদ বিন সাবিত, বাঙলা কলেজ শাখার সভাপতি সুলতান মোহাম্মাদ রিপন, মতিঝিল থানা শাখার সাবেক সভাপতি আলমগীর হোসেন এবং জায়েদের সহযোগী ও মোহাম্মদপুর থানার ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মো. ইমরান মাসুম। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরের ওই মেস থেকে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন লিফলেট, ১৩টি ব্যাংক স্লিপ, তিনটি চাঁদা আদায়ের রসিদ, একটি বিদেশি কলিং কার্ড, পাঁচটি মোবাইল ফোনসেট (সিমসহ), ১০৫টি সাংগঠনিক বই এবং এক লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান কালের কণ্ঠকে জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের নাশকতার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল।
র‌্যাব সূত্র আরো জানায়, মঙ্গলবার রাতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার রতনপুর গ্রাম থেকে শিবির ক্যাডার আবদুল্লাহ জায়েদ বিন সাবিতকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সাবিত জানায়, শিবিরের কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক গোলাম মর্তুজার নির্দেশে সে কয়েকটি ককটেল ও বিস্ফোরক পান্থপথে অবস্থিত স্কয়ার হাসপাতালের পেছনের এলাকায় মাটির নিচে লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু অভিযান চালিয়ে সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি। পরে সাবিতের দেওয়া তথ্যানুযায়ী মিরপুর ১ নম্বর এলাকা থেকে সুলতান মাহমুদ রিপনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে রিপন জানায়, জামায়াত নেতাদের গ্রেপ্তারের পর কিছু অস্ত্র, বোমা ও বিস্ফোরক তার তত্ত্বাবধানে রাখার জন্য দেওয়া হয়। এগুলো কল্যাণপুরে তাদের একটি মেসে ছিল। ধরা পড়ার ভয়ে কিছুদিন আগে সেগুলো কল্যাণপুর গার্লস স্কুল মাঠের পাশের একটি নর্দমায় ফেলে দেওয়া হয়। রিপন আরো জানায়, সে দুটি অস্ত্র এবং ককটেল বানানোর জন্য বিস্ফোরক ও কিছু টাকা মতিঝিল থানা শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আলমগীর হোসেন রাজুর কাছে দেয়।

তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী র‌্যাব রাতেই পল্টন থেকে রাজুকে আটক করে। সে জানায়, শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম মর্তুজা পল্টনে তার 'নাগরিক রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপারস' অফিসে এসে বলেছিলেন, দলের বড় নেতারা আটক হয়েছে। এতে তৃণমূল সদস্যরা ভীত হয়ে পড়েছে। তাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য এবং বিভিন্ন মিটিং, মিছিলে ব্যবহারের জন্য ককটেল প্রয়োজন।

র‌্যাবের কাছে রাজু আরো জানায়, সর্বহারা দলের নজরুল নামে একজনের সঙ্গে তার পরিচয় আছে। সে ককটেল বানাতে পারে। মর্তুজার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে তা নজরুলকে দিয়েছিল সে।

শিবিরের বক্তব্য : চার শিবির ক্যাডারের গ্রেপ্তারকে সাজানো নাটক বলে দাবি করেছেন শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম ও সেক্রেটারি জেনারেল ডা. ফখরুদ্দীন মানিক। গতকাল এক বিবৃতিতে তাঁরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, র‌্যাব ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অস্ত্র, বোমা ও গানপাউডার রেখে তাদের গ্রেপ্তার করেছে। ছাত্রশিবিরকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে উল্লেখ করে তাঁরা অভিযোগ করেন, কতিপয় গণমাধ্যম বাড়াবাড়ি করছে।

3 August 2010

সাতক্ষীরায় আফগানফেরত জামায়াত নেতা গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় আফগানিস্তানফেরত এক জামায়াত নেতাকে গতকাল মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তার ওই নেতার নাম জিয়াউর রহমান। তাঁর বাড়ি দেবহাটা উপজেলার সখীপুর ইউনিয়নের নারকেলি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবদুল করিম সরদার। তিনি ইউনিয়ন জামায়াতের সদস্য এবং ওয়ার্ড কমিটির সেক্রেটারি।

পুলিশ সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ গতকাল সকালে জিয়াউর রহমানকে দেবহাটার পারুলিয়ায় তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি বেশ কিছুদিন আফগানিস্তানে ছিলেন। এমনকি আফগান যুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন বলে তথ্য রয়েছে। পরে দেশে ফিরে তিনি জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর নামে সদর থানায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রয়েছে।
দেবহাটা থানার ওসি আবদুল বারী জানান, জিয়াউর রহমান অত্যন্ত প্রভাবশালী। জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। তাঁকে আজ বুধবার কোর্টে পাঠিয়ে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে বলে গতকাল রাতে ওসি জানিয়েছেন।

যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করার তৎপরতা: নাশকতা ঠেকাতে রেলের নিরাপত্তা জোরদার

পার্থ সারথি দাস
যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে রেলপথ ও রেল স্টেশনগুলোতে নাশকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যেকোনো নাশকতা ঠেকাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও নিয়েছে। ২৪ ঘণ্টার প্রতিটি মুহূর্তে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে রেলওয়ের তিনটি নিরাপত্তা সংস্থাকে। জনবল সংকট মোকাবিলায় দৈনিক ভিত্তিতে পাহারাদারও নিয়োগ করা হচ্ছে। কমপক্ষে ১০০টি অপরাধপ্রবণ এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে বিশেষভাবে সতর্ক রাখা হয়েছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে রেললাইনে নাশকতার পরিকল্পনা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে এরই মধ্যে এর কিছু আলামত পাওয়ায় রেল কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার ব্যাপারে এ উদ্যোগ নিয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে শিবিরকর্মীরা রাজধানীর সঙ্গে দেশের অন্যান্য স্থানের যোগাযোগ অচল করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। মহাসড়ক অবরোধ করে হাজার পাঁচেক গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে এবং রেললাইনের স্লিপার তুলে দিয়ে মাসখানেক তারা এই অচলাবস্থা বহাল রাখতে চায়। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া শিবিরকর্মীরা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে এমন তথ্যই দিয়েছে।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ২০ ও ২১ জুলাই পর পর তিনটি নাশকতার আলামত পাওয়া গেছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০ জুলাই ফেনীর মুহুরীগঞ্জ থেকে একটু দূরে এবং ২১ জুলাই মুহুরীগঞ্জে রেললাইনের ওপর স্লিপার রেখে দেওয়া হয়। চালক আগেভাগে দেখতে পাওয়ায় দুটো ট্রেন অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। এ ছাড়া একটি লাইনের ফিস প্লেটও খুলে রাখা হয়। এসব আলামত ধরা পড়ায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ লিখিত নোটিশ ও দফায় দফায় টেলিফোনে সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছে।
রেলওয়ে মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে এরপরই পূর্ব ও পশ্চিম জোনের ব্যবস্থাপক, জিআরপি পুলিশ, সুপারিনটেনডেন্ট অব রেলওয়ে পুলিশ (এসআরপি) ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে এ ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়। ২২ জুলাই থেকে এ ব্যপারে চিঠি ও ফোনে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ গত ২৭ জুলাই ঢাকায় ডিআইজির (রেলওয়ে পুলিশ রেঞ্জ) দপ্তরে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় সভায় রেলপথ ও স্টেশনের নিরাপত্তা রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. আখতারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, '২২ জুলাই থেকে আমরা নিরাপত্তার বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিচ্ছি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে রেলের নিরাপত্তা বিঘি্নত করার আশঙ্কা থেকেই আমরা এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। অতীতে নাশকতামূলক ঘটনা ঘটেছে এমন স্থানগুলোতে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। এসব স্থানের নিরাপত্তার ওপর আমরা জোর দিচ্ছি।
জানা গেছে, পাঠানো নির্দেশনায় রেল স্টেশন ও রেলপথে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। রেললাইনের আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা স্লিপার একত্র করে তা নিজেদের আয়ত্তে আনা, স্টেশন বা রেলপথ এলাকায় সন্দেহজনক আচরণকারীদের প্রতি লক্ষ রাখা, কোনো কোনো এলাকায় কম গতিতে ট্রেন চালানো, চালকদের সতর্ক থাকা, কোনো ধরনের নাশকতার ইংগিত পেলে তা নিজে মোকাবিলা করা, তা করতে ব্যর্থ হলে নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আবহিত করে তাদের সহযোগিতা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
নিরাপত্তা রক্ষার জন্য রেল নিরাপত্তা বাহিনী ও জিআরপি (গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ) এবং রেলওয়ে গ্যাংক বিভাগকে সর্বদা সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনটি সংস্থাই জনবল সংকটের কারণে নিরাপত্তার বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর মধ্যে গ্যাংক-এর জনবল সংকট সবচেয়ে বেশি। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের অধীনে কারিগরের নেতৃত্বে ওয়েম্যানদের নিয়ে গঠিত এই গ্যাংক গঠন করতে প্রয়োজনীয় ওয়েম্যান পাওয়া যাচ্ছে না। ওয়েম্যানের চার হাজার ৯০টি পদের মধ্যে দুই হাজার ৯৫টিই শূন্য রয়েছে। নাশকতা ঠেকাতে বিশেষ 'পাহারা' কার্যক্রম চালাতে এখন বিভিন্ন স্থানে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে পাহারাদার নিয়োগ করা হচ্ছে বলে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন।
রেল নিরাপত্তা বাহিনীও জনবল সংকটের কারণে বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিপাকে রয়েছে। সংস্থার কমান্ডান্ট মো. এনামুল হক কালের কণ্ঠকে জানান, আমরা বারবার ওপর মহল থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি পাচ্ছি। আজও (রবিবার) রেলওয়ে পূর্ব বিভাগের ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে এ ধরনের চিঠি পেয়েছি। কিন্তু জনবলের সংকট ও এস্কট দেওয়াসহ অন্যান্য কাজের চাপ থাকায় এই বিশেষ কাজটি করতে গিয়ে আমরা সমস্যায় আছি। তিনি আরো বলেন, সংস্থায় পূর্বাঞ্চলে দুই হাজার ২৪টি পদের মধ্যে ৫০০ পদই শূন্য। একই অবস্থা পশ্চিম জোনেও।
রেল নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমান্ডান্ট (পূর্ব) মো. আমীনুর রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রেলপথের নিরাপত্তা রক্ষায় রেল নিরাপত্তা বাহিনী ও জিআরপি পুলিশকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।'

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ: ক্যাম্পাসে ভাঙচুরে উপাচার্যের মদদপুষ্ট বাহিনী জড়িত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা | তারিখ: ০৪-০৮-২০১০


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল মঙ্গলবার সকালে আবাসিক হল ছেড়ে চলে গেছেন। গতকাল ক্যাম্পাসে কোনো মিছিল-সমাবেশ হয়নি। তবে বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহারসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা ক্যাম্পাসে হামলা-ভাঙচুরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মদদপুষ্ট বাহিনীকে দায়ী করে উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন। 
এদিকে সোমবারের ঘটনায় হাটহাজারী থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা মামলায় ৭০ জন এবং পুলিশের মামলায় ৭৬ জনকে আসামি করা হয়। সোমবার আটক ২৪১ জনের মধ্যে ৫৪ জনকে এ দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক তাঁদের মধ্যে ২৯ জনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তাঁদের মধ্যে ২৪ জন বিস্ফোরক মামলার আসামি।
পুলিশ সূত্র জানায়, কারাগারে পাঠানো আসামিদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সালাহউদ্দিন কাদের ও সাবেক সভাপতি জাবেদ ইকবাল রয়েছেন। অন্যদের বেশির ভাগই শিবিরকর্মী বলে পুলিশ জানায়। পুলিশ দাবি করছে, সাধারণ ছাত্রদের আড়ালে শিবির এবং হিযবুত তাহ্রীরের কিছু কর্মী সোমবার ভাঙচুরে নেতৃত্ব দেন। 
জেলা পুলিশ সুপার জেড এ মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে। 
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘পাঁচ দিন পর্যন্ত আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু সোমবার মুখোশ পরে লাঠি হাতে কিছু চিহ্নিত শিবির ক্যাডার সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঢুকে পড়েন। তাঁদের উদ্দেশ্যই ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করা।’
সংবাদ সম্মেলন: বর্ধিত বেতন-ফি বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে গতকাল বিকেলে নগরের চেরাগী পাহাড়ের ইসলামাবাদী মেমোরিয়াল হলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা সোমবার ক্যাম্পাসে হামলা, ভাঙচুর ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের জন্য উপাচার্যের মদদপুষ্ট বাহিনীকে দায়ী করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিক্ষার্থী রুচি ভট্টাচার্য। 
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘উপাচার্যের মদদপুষ্ট একটি বাহিনী ক্যাম্পাসে ভাঙচুরের ঘটনা সাজিয়ে আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আন্দোলনের প্রথম দিন ২৬ জুলাই মানববন্ধন করে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করেও আমরা ব্যর্থ হই। এ সময় প্রক্টর জসীম উদ্দীনকে স্মারকলিপি দিই। পরে ৩১ জুলাই আবার উপাচার্যকে লিখিতভাবে দাবি-দাওয়া জানানোর চেষ্টা করেও পারিনি।’
গত সোমবার উপাচার্য আবু ইউসুফ বলেছিলেন, ‘আন্দোলনের একটি রোডম্যাপ আছে। তারা আমাকে আগে স্মারকলিপি দেবে, তারপর আলোচনায় বসব। তা না করে সরাসরি আন্দোলনে চলে গেছে। এটা তো হয় না।’
সংবাদ সম্মেলনে বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহার ছাড়াও উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ, ক্যাম্পাসে মত প্রকাশের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং মামলা ও আন্দোলনকারী ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। এসব দাবিতে কাল বৃহস্পতিবার শহীদ মিনার চত্বরে সংহতি সমাবেশের আয়োজন করা হবে।
প্রসঙ্গত, বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহারের দাবিতে ২৬ জুলাই আন্দোলন শুরু হয়। গত সোমবার এই আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। ওই দিন পুলিশ শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে লাঠিপেটা করে। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস শেল ও রাবার গুলি ছুড়ে। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মুখোশধারী কিছু যুবক ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। 
এ পরিস্থিতিতে সোমবার জরুরি সিন্ডিকেট ডেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আর ছাত্রদের ওই দিন বিকেলে এবং ছাত্রীদের গতকাল সকাল ১০টার মধ্যে আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সকালের মধ্যে ছাত্রীরা হল ছেড়ে চলে যান। ফলে নীরবতা নেমে আসে গোটা ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসে গতকাল এক প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। 
শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটার প্রতিবাদ: শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন করেছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রেপ্তার সব ছাত্রের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিসহ পাঁচ দফা দাবিতে মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। এতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যায্য দাবির আন্দোলনে কর্তৃপক্ষ পুলিশ লেলিয়ে শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করছে। দাবি না মেনে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মূল দাবি আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। 
দাবি আদায়ে ৫ আগস্ট আচার্য বরাবর স্মারকলিপি পেশ ও ৭ আগস্ট অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সংহতি সমাবেশ করবে প্রগতিশীল জোট। এর আগে সন্ত্রাসবিরোধী ছয় ছাত্রসংগঠন ও ছাত্র ইউনিয়ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। একই ঘটনার প্রতিবাদে এবং 

2 August 2010

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: মুখে কাপড় বেঁধে ভাঙচুর চালায় শিবির!

কমল দে ও রাশেদুল তুষার, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল শিবিরের নেতা-কর্মীরা মুখে কাপড় বেঁধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাঙচুরের সময় বহদ্দারহাটের আট খুন মামলার আসামি শিবির নেতা মিয়া মোহাম্মদ তৌফিকসহ বেশ কয়েকজন বহিরাগত ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ঘটনাস্থলে অবস্থানকারী ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। শিবির নেতারা তৌফিকসহ বহিরাগতদের উপস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন; তবে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটি পুরোপুরি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন; শিবিরের কথা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, কয়েক দিন ধরে আন্দোলনকারীরা প্রকাশ্যে মিছিল-সমাবেশ করলেও গতকাল হামলা ও ভাঙচুরের সময় সবার মুখ ছিল রুমাল ও কাপড়ে ঢাকা। হাতে লাঠি ও লোহার রড নিয়ে ভাঙচুর চালানোর পর তারা হলে ফিরে যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) শফিকুল ইসলাম হামলার সঙ্গে শিবিরের সংশ্লিষ্টতার কথা পরোক্ষভাবে স্বীকার করে বলেন, 'পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। এর সঙ্গে কোন কোন সংগঠনের কর্মীরা জড়িত ছিল, তা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আবু ইউসুফ বলেন, 'দু-তিন দিন ধরে কিছুসংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র প্রথমে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ব্যানারে ক্যাম্পাসে আন্দোলন সৃষ্টি করে; এরপর শহরে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। কিন্তু আজকে যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তা আমরা কোনো দিন চিন্তাও করতে পারি নাই। হামলার ধরন অনেক পরিকল্পিত। কোনো ছোট দলের পক্ষে এ ধরনের পরিকল্পিত হামলা চালানো সম্ভব নয়। আমার মনে হয়, সাধারণ ছাত্রদের পাশপাশি বহিরাগতরা এখানে এসেছে।'
সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করার জন্য গত রবিবার রাতে পুলিশ কর্মকর্তারা বামপন্থী ছাত্রনেতাদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন। ছাত্রনেতারাও অঙ্গীকার করেছিলেন, তাঁরা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করবেন না। তাই পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছিল কম। ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিবিরের নেতা-কর্মীরা বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দিতে থাকলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পুলিশ কর্মকর্তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই এসব কর্মী মুখে রুমাল ও কাপড় বেঁধে ভাঙচুর শুরু করে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ আসাদুল হক আসাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বহদ্দারহাট এইট মার্ডার মামলার আসামি শিবির নেতা মিয়া মোহাম্মদ তৌফিক ও শাকের সকালেই রেজিস্টার ভবনের সামনে আসে। এর পরই ভাঙচুর শুরু হলে তারা দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়ে। আমি বুঝতে পারছি না, এই দুজন এখানে কেন এসেছিল বা পরে পালিয়ে গেল কেন।'
শিবির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহাম্মদ শামসুদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ঘটনার সঙ্গে শিবির জড়িত ছিল না। শিবিরের কোনো নেতা-কর্মী সেখানে উপস্থিত ছিল বলে কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না।' মিয়া মোহাম্মদ তৌফিক ও শাকের কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিল প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিবির নেতা মিয়া মোহাম্মদ তৌফিক একটি বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনা করেন। ওই হাসপাতালের কাজে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। তিনি যে প্রশাসনিক কাজে এসেছিলেন, রেজিস্টার ভবনে এর প্রমাণ রয়েছে।'
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি প্রবাল মজুমদার বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঘটনায় শিবিরের জড়িত থাকার কোনো খবর আমাদের কাছে আসেনি। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাই আন্দোলন করছে। শিবিরের কথা বলে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে।'
প্রসঙ্গত, বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহারের দাবিতে গত সোমবার থেকে বামধারার ছাত্রসংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে।

ঢাকায় জঙ্গিঘাঁটির খোঁজে: ভাড়াটিয়া ও হোটেল বোর্ডারদের তথ্য সংগ্রহসহ বিশেষ পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে জঙ্গিদের আস্তানাগুলো চিহ্নিত করতে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে পুলিশ। বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে তাদের ভাড়াটিয়া সম্পর্কে তথ্য, আবাসিক হোটেলে অবস্থানকারী বা বোর্ডারদের তথ্য এবং বিদেশি নাগরিকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহসহ ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তর থেকে থেকে ১৩ দফা বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে মহানগরের আটটি বিভাগ ও গোয়েন্দা পুলিশের কাছে এই নির্দেশনা পেঁৗছেছে। নির্দেশনা হাতে পেয়ে পুলিশ কাজও শুরু করেছে। হ্যান্ডবিল ছাপানোর কাজ করছে পুলিশ। এ হ্যান্ডবিল বাড়িওয়ালাদের কাছে পাঠানো ছাড়াও পথচারীদের মধ্যে বিলি করা হবে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এর আগেও রাজধানীতে বাড়ির মালিকদের কাছে এ রকম চিঠি পাঠানো হয়েছিল। বাড়িওয়ালাদের প্রতি নির্দেশ ছিল ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে তথ্য, যেমন ছবি ও জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করে নিকটস্থ থানা পুলিশকে অবহিত করার। পরে সে উদ্যোগে ভাটা পড়ে যায়। এই সুযোগে জঙ্গিরা রাজধানীতে ঘাঁটি বা আস্তানা গড়ে তোলে। গত দুই মাসের ব্যবধানে রাজধানীতে দুটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ।

গত শুক্রবার শাহআলী থানা এলাকার আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। মে মাসে কদমতলীর পূর্ব জুরাইনের জেএমবির আরেকটি শক্তিশালী ঘাঁটির সন্ধান পায় পুলিশ। ওই ঘাঁটিতে অভিযানকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও হয়েছিল জঙ্গিদের। এর আগে শেওড়াপাড়ার একটি বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও গ্রেনেডসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল জেএমবির বোমা বিশেষজ্ঞ মিজান ওরফে বোমারু মিজান। পুলিশ ও সংশ্লিষ্টদের ধারণা, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের এ রকম আরো অনেক ঘাঁটি রাজধানীতে আছে। বাড়িওয়ালারা সচেতন হলে জঙ্গিরা ঘাঁটি গাড়তে সাহস পাবে না।

শুক্রবার উদ্ধার করা অস্ত্র ও বিস্ফোরক সম্পর্কে শাহআলী থানার ওসি আবদুল লতিফ জানান, বাড়ির মালিক ওই ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে কোনো তথ্য না নিয়েই বাড়ি ভাড়া দেন। চার জঙ্গি দাড়ি না রেখে ছদ্মবেশে চলাফেরা করত। মালিক তথ্য নিয়ে ভাড়া দিতে চাইলে তারা হয়তো ওই বাড়িতে আসার সুযোগ পেত না। তবে এ-সংক্রান্ত আইন না থাকায় পুলিশকে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। আপাতত কমিউনিটি বা বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমেই কাজ করবে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (সদর দপ্তর) হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, অনেক ক্ষেত্রে বাড়ির মালিকরা পুলিশের নির্দেশনা মানছেন না। বাড়ির মালিকদের প্রতি আগের নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে কি না তা তদারকির জন্য পুলিশ কাজ শুরু করেছে। রাজধানীর আটটি বিভাগের উপকমিশনারকে এবং সব থানায় বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে। থানা পুলিশ বাড়ির মালিকদের কাছে গিয়ে ভাড়াটিয়া সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার অনুরোধ করবে। এরপর কোনো জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মিললে ওই বাড়ির মালিককেই দায়িত্ব বহন করতে হবে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১৩ দফা নির্দেশনায় জঙ্গি, চরমপন্থী বা সন্ত্রাসীগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে বাড়ির মালিক ছাড়াও কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতা নিতে বলা হয়েছে পুলিশকে। এতে আরো বলা হয়, রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে জঙ্গিদের অবস্থান করার আশঙ্কা আছে। তাই হোটেলগুলো 'হোটেলে অবস্থানকারী বৃত্তান্ত ফরম' যথাযথভাবে পূরণসহ বোর্ডার রেজিস্টার সংরক্ষণ করছে কি না তা তদারক করতে হবে। ঢাকায় যাতে জঙ্গিরা ঢুকতে না পারে সে জন্য রাজধানীর সব কয়টি প্রবেশপথে বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটে চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহজনক যানবাহনে সতর্কতার সঙ্গে বিধি মোতাবেক তল্লাশি চালানোর নির্দেশ রয়েছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা ব্যক্তির কার্যালয় ও বাসভবনে নিরাপত্তা জোরদার, সন্দেহজনক গাড়ি পার্কিং, ভ্রাম্যমাণ দোকান, ভিক্ষুক বা অন্য ছদ্মবেশ ধারণকারী ব্যক্তি, হকার, ফেরিওয়ালাদের সন্দেহজনক মনে হলে তাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে পুলিশকে। এতে আরো বলা হয়, রাজধানীতে ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশেষ নিরাপত্তা ও নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জনসচেতনতার দিকে। এ লক্ষ্যে কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে জঙ্গি তৎপরতা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে ছাত্র-শিক্ষক, স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিয়ম করতে হবে।

পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ কালের কণ্ঠকে জানান, উত্তরা এলাকায় বাড়িওয়ালাদের কাছে বিদেশি নাগরিকদের সম্পর্কে তথ্য সংরক্ষণের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখন একটি হ্যান্ডবিল ছাপা হচ্ছে, যা দু-এক দিনের মধ্যে প্রত্যেক বাড়ির মালিকের কাছে পেঁৗছে দেওয়া হবে। হ্যান্ডবিলে জঙ্গি ও অপরাধ রোধে বাড়ির মালিকদের সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। উত্তরা এলাকায় সেক্টর কল্যাণ সমিতি, থানা পুলিশ, কমিউনিটি পুলিশ এই চিঠি ও হ্যান্ডবিল পেঁৗছানোর দায়িত্ব পালন করবে। কোনো বাড়িতে বিদেশি নাগরিক থাকলে তার ছবি, পাসপোর্ট নম্বর, ভিসার ফটোকপি, কী উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আছে_এসবের তথ্য রাখার জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশি নাগরিক সম্পর্কে ভালো জানেন এমন তিনজনের সাক্ষ্য নিয়ে সেই তথ্য পুলিশকে জানাতে বলা হয়।

উত্তরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবদুল্লা আল মামুন বলেন, 'বিদেশি নাগরিকদের ব্যাপারে উত্তরা ও তুরাগ থানা এলাকার বাড়ির মালিকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার তুরাগের রানা ভোলা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির মালিকরা এসব তথ্য সংরক্ষণ করছেন। আমাদের ইচ্ছা আছে সব বাড়িওয়ালার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে কম্পিউটারাইজড করে রাখা।'

হকারের আড়ালে জঙ্গি
রাজধানীর শাহআলী এলাকার ঘাঁটি থেকে উদ্ধার করা বিস্ফোরক ও অস্ত্রের মালিক চার জেএমবি সদস্য। তাদের গ্রেপ্তার করতে র‌্যাব ও পুলিশের একাধিক টিম ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে অভিযান চালাচ্ছে।

মিরপুর জোনের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ কালের কণ্ঠকে জানান, পালিয়ে যাওয়া ওই চার জঙ্গির বাড়ি বরিশাল জেলায় বলে জানা গেলেও নাম-পরিচয় জানা যায়নি। প্রাথমিক তদন্ত শেষে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি আরো জানান, জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। চার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও গোয়েন্দারা মাঠে নেমেছে। উত্তর বিশিলের ওই বাড়িতে গ্রেনেড তৈরি করে হয়তো বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নিচ্ছিল জঙ্গিরা।

গোয়েন্দা পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সহকারী কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে জানান, বড় ধরনের নাশকতা চালানোর উদ্দেশ্যেই ৮০ কেজি বিস্ফোরক মজুদ করেছিল জঙ্গিরা। যে গান পাউডার উদ্ধার করা হয়েছে তা দিয়ে শক্তিশালী বোমা তৈরি করা সম্ভব। গ্রেনেডটি খুবই শক্তিশালী। ওই বাসার জঙ্গিরা লাইটারে গ্যাস ভরার কাজ করত। মিরপুর এলাকায় ফুটপাতে তাদের দোকান ছিল।

শাহআলী থানার ওসি আবদুল লতিফ জানান, চার যুবক ওই বাসায় কখন ঢুকত, কখন বের হতো তার ঠিক-ঠিকানা ছিল না। তাদের দৃশ্যমান পেশা ছিল হকারি করা।