Showing posts with label আন্তর্জাতিক. Show all posts
Showing posts with label আন্তর্জাতিক. Show all posts

28 March 2011

উইকিলিকসে বাংলাদেশ বিষয়ক নথি: বিডিআর বিদ্রোহে উদ্বিগ্ন ভারত শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ায়

কালের কণ্ঠ ডেস্ক

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল ভারত সরকার। ২০০৯ সালের সংকটজনক ওই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার প্রতি দৃঢ় সমর্থন বজায় রাখে দেশটি। বিডিআর বিদ্রোহের পরপরই ভারতের পররাষ্ট্রসচিব শিবশঙ্কর মেনন দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স স্টিভেন হোয়াইটের সঙ্গে বৈঠক করেন। উইকিলিকসের ফাঁস করা নথি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দু গতকাল রবিবার এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 'বাংলাদেশে ২০০৯ সালে বিদ্রোহের পর হাসিনাকে সমর্থন জুগিয়েছিল ভারত' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের পাঠানো তিনটি গোপনীয় তারবার্তার প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়। পিলখানায় বিডিআর জওয়ানরা ২৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহ করে। দুদিন বাদে ২৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্রসচিব শিবশঙ্কর মেনন নিজ কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স স্টিভেন হোয়াইটকে ডেকে পাঠান।

আলোচনায় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশ রাইফেলসে বিদ্রোহের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি শেখ হাসিনার নবনির্বাচিত সরকারের ওপর এর প্রভাব নিয়ে শঙ্কা ব্যক্ত করেন। এ বিষয়ে স্টিভেন হোয়াইট ২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে একটি তারবার্তা (১৯৪৬৬১ : গোপনীয়) পাঠিয়েছিলেন। সেখানে বলা হয়, বিদ্রোহ চলার সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জিকে টেলিফোন করেন। শেখ হাসিনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চান। তবে সহযোগিতার ধরন সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি। প্রণব মুখার্জি প্রয়োজনে 'সাড়া' দেওয়ার আশ্বাস দেন।

শিবশঙ্কর মেনন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিককে জানান, বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকার লন্ডন, বেইজিং ও টোকিওর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে। বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে ভারতের উদ্বেগ ছিল দুটি। প্রথমত, উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কট্টরপন্থী ধর্মীয় দল জামায়াতে ইসলামী 'ঘোলাপানিতে মাছ
শিকারের' চেষ্টা করতে পারে। ঘটনার সঙ্গে জামায়াত সরাসরি জড়িত_ এমন কথা সরাসরি বলেননি শিবশঙ্কর। তবে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে তিনি জানান, বিডিআর বিদ্রোহ পূর্বপরিকল্পিত এবং ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভরাডুবি ও ধর্মীয় জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বের মধ্যে হতাশা রয়েছে। ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার দ্বিতীয় কারণ হলো_বিদ্রোহের ঘটনা বাংলাদেশে বেসামরিক সরকার ও সেনাবাহিনীর সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিককে শিবশঙ্কর বলেন, বিদ্রোহে অনেক কর্মকর্তাকে হারানো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এতে সমস্যায় পড়তে পারে হাসিনার সরকার। বিদ্রোহী জওয়ানরা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার পর লাশ পয়োনালায় ফেলে দেয় বলে উল্লেখ করেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব। তবে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান মইন উ আহমেদের ওপর ভরসা রেখে বলেন, পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে তিনি সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন।

বিডিআর বিদ্রোহ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দেওয়া বিবৃতির প্রশংসা করেন শিবশঙ্কর মেনন। তিনি পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানোর জন্য ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়মিত যোগাযোগ এবং সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দেন। শিবশঙ্কর আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, প্রথম পর্যায়ের জটিল অবস্থার অবসান হয়েছে, কিন্তু এর পরে কী ঘটবে তা বোঝার জন্য অনেক দিন লাগতে পারে।

বিডিআর বিদ্রোহের প্রায় এক মাস পর ২০০৯ সালের ২৬ মার্চ ওয়াশিংটনে আরেকটি তারবার্তা (১৯৮৯৫২ : গোপনীয়) পাঠায় যুক্তরাষ্ট্রের দিল্লি দূতাবাস। সে সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বলেন, বিদ্রোহের সঙ্গে ধর্মীয় কট্টরপন্থী দলের সম্ভাব্য যোগসূত্র নিয়ে দিল্লি উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, বিদ্রোহের হোতাদের অনেকে আগের বিএনপি সরকারের সময়ে নিয়োগ পায় এবং তাদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্ক রয়েছে।

এর কয়েক দিন পরেই (১৩ এপ্রিল) ভারতের পররাষ্ট্রসচিব শিবশঙ্কর মেনন ঢাকা সফর করেন। দিল্লি ফিরে গিয়ে শিবশঙ্কর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার বারলেইয়ের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। আলোচনায় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের পর বাংলাদেশ নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ওই বৈঠক সম্পর্কে ১৬ এপ্রিল ওয়াশিংটনে একটি তারবার্তা (২০২৬১৫ : গোপনীয়) পাঠায় দূতাবাস।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে আশঙ্কা প্রকাশ করে শিবশঙ্কর বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে উগ্রপন্থীরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকারকে অস্থিতিশীল করতে পারে। এতে ভারতে জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলা চালানোর সুযোগ তৈরি হবে। কোন গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে ভারত সরকার উদ্বিগ্ন_ রাষ্ট্রদূতের এমন প্রশ্নের জবাবে শিবশঙ্কর বলেন, জামায়াতে ইসলামী থেকে শুরু করে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী, বাংলাদেশের (হুজি, বি) মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ রয়েছে।

শিবশঙ্কর বলেন, যদিও খুব মামুলি ইস্যু প্রায়ই বাংলাদেশের রাজনীতিকে হজম করে ফেলে, তার পরও তিনি বিস্মিত, কারণ বিদ্রোহের পর চরম অস্থিতিশীলতা তৈরি হলেও বাংলাদেশের রাজনীতিকরা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বাড়ির মতো কিছু বিষয় নিয়ে ব্যস্ত আছেন। পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের দোদুল্যমানতা নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন ছিল। মেনন ধরে নিয়েছিলেন, বাংলাদেশ সরকার ঠিকমতো কাজ করছে না।

24 September 2010

নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ-বিএনপি আবারও মুখোমুখি

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, নিউইয়র্ক থেকে

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণকে কেন্দ্র করে আবারও মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নিউইয়র্কে ২৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সময় জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে কালো পতাকা প্রদর্শনসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। অন্যদিকে পাল্টা কর্মসূচি হিসাবে আওয়ামী লীগও একই স্থানে শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের সংঘাতময় রাজনীতির কালো মেঘ ভর করেছে সুদূর নিউইয়র্কেও।

এর আগে গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র আগমনকে কেন্দ্র করে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে পূর্বনির্ধারিত পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দরে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনায় মার্কিন মুলুকেও তীব্র সমালোচনার ঝড় বইছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সময় জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে শোডাউন করার চেষ্টা করছে জামায়াতে ইসলামীও। ওইদিন তারা নিউইয়র্ক ও আশপাশের রাজ্যগুলো থেকে ২০টি বাসে করে লোক সমাগম ঘটানোর সব আয়োজন শেষ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ সেপ্টম্বর শনিবার বিকেল ৫টায় (বাংলাদেশ সময় রবিবার ভোর ৩টা) জাতিসংঘের ৬৫তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার কথা। এ ভাষণকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রস্তুতি নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে একটি চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী গোপনে সুযোগ সন্ধানী ভূমিকা নিয়ে মাঠ গরমের প্রস্ততি নেওয়ায় সাধারণ প্রবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।

25 August 2010

বিডি ফুডের হেরোইন পাচার: মোমিন ছাড়া পাঁচ আসামিকে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ

প্রশান্ত কর্মকার | তারিখ: ২৫-০৮-২০১০

পণ্য রপ্তানির আড়ালে লন্ডনে ৭৫ কেজি হেরোইন পাচারের মামলায় বিডি ফুডের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা মোমিন ছাড়া বাকি পাঁচ আসামিকে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দ্বিতীয় দফায় সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন এ আদেশ দেন।

আদালত সূত্র জানায়, বিডি ফুডের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা মোমিনসহ যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চাওয়া হয় তাঁরা হলেন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন, ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক মিঠু, কর্মচারী নাজমুল হায়দার বুলবুল, অভিযুক্তদের আরেক কোম্পানি গ্রিন হ্যাভেনের মালিক আবুল বাশার সেলিম ও তাঁর সহযোগী কাজী জাফর রেজা। বদরুদ্দৌজা তাঁর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন বাতিল করার আবেদন করেন। আদালত তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে বাকি পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার আদেশ দেন।

আদালতের আদেশ অনুসারে আসামি আবুল বাসার ও জাফর রেজাকে আজ বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মইনউদ্দিন ও আবু বকর সিদ্দিকীকে ২৬ আগস্ট জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর নাজমুল হায়দার বুলবুল একই ঘটনায় দায়ের মতিঝিল থানার মামলায় কারাগারে আটক থাকায় তাঁকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

সূত্র জানায়, চার বছর ফাইলবন্দী থাকার পর সিআইডি বদরুদ্দোজা মোমিনসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য গত ১ মার্চ আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। আদালত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিলে আসামিরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। এরপর সে আদেশ স্থগিত হয়ে যায়।

এরপর গত ২৬ মে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক এরশাদ আলীকে পরিবর্তন করে পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ হোসেনকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সিআইডির এই পরিদর্শক মোহাম্মদ হোসেন গত ২৯ জুন বদরুদ্দৌজা মোমিনসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। সিআইডির আবেদনে বলা হয়, এই মামলায় জড়িত আসামি বদরুদ্দৌজা মোমিন, মো. মাইনুদ্দিন, কাজী জাফর রেজা, মোখলেসুর রহমান, আবু বকর সিদ্দিক ও আবুল বাসার জামিনে আছেন। এ মামলায় পাচার করা হেরোইনের উৎস, মামলার ঘটনায় জড়িত অন্যান্য সহযোগী আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করাসহ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। মহানগর হাকিম ৪ জুলাই আবেদনটি গ্রহণ করেন।

মামলাটি এ পর্যন্ত পাঁচ দফা তদন্তকারী বদলের পর এখন ষষ্ঠ তদন্তকারী মামলাটি তদন্ত করছেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া বদরুদ্দোজা মোমিনসহ ১০ আসামির নয়জন জামিনে আছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামলার আলামত হিসেবে লন্ডনে আটক হেরোইন পরীক্ষাসহ অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের জন্য তদন্ত কর্মকর্তার যুক্তরাজ্য যাওয়ার অনুমতি না মেলায় তদন্ত প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে। এরপর মামলাটি ফাইলবন্দী অবস্থায় পড়ে ছিল। ফলে তারিখের পর তারিখ পড়লেও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আর জমা হয়নি আদালতে। এই ফাঁকে মামলায় গ্রেপ্তার করা নয় আসামি জামিনে মুক্তি পান।

আদালত সূত্র জানায়, লন্ডনের দুটি সমুদ্রবন্দর দিয়ে সবজি ও ঘরের মেঝেতে ব্যবহার করা যায় এমন টাইলস রপ্তানির আড়ালে ৭৫ কেজি হেরোইন উদ্ধারের পর ২০০৬ সালের ২১ এপ্রিল সিআইডির সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট দীপক গুপ্ত বাদী হয়ে রাজধানীর মতিঝিল ও সূত্রাপুর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করেন। এসব মামলায় বিডি ফুডসের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা মোমিন, কর্মচারী নাজমুল হায়দার বুলবুল, ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক মিঠু, ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন, তাঁদের সহযোগী বিমানের কার্গো-শ্রমিক নয়ন ও অভিযুক্তদের আরেক কোম্পানি গ্রিন হ্যাভেনের মালিক আবুল বাশার সেলিম ও তাঁর সহযোগী কাজী জাফর রেজা, দেলোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান ভূঁইয়া ও ইমদাদুল হক আজাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রধান আসামি বদরুদ্দোজা ২০০৮ সালের ৮ জুন মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছাড়া পান। এর পরপরই জামিন পান রেজা, মাইনুদ্দিন, নয়ন ও আবু বকর।

বিডি ফুডসের ব্যবস্থাপক মাইনুদ্দিন, কর্মচারী নাজমুল হায়দার বুলবুল, বিমানের কার্গো-শ্রমিক নয়ন ও গ্রিন হ্যাভেনের অংশীদার কাজী জাফর রেজা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাঁদের জবানবন্দিতে স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে, হেরোইন পাচারের সঙ্গে বিডি ফুডসের মালিকসহ গ্রেপ্তার হওয়া সবাই জড়িত ছিলেন।

বিডি ফুডসের চেয়ারম্যান বরুদ্দোজা মোমিনকে ২০০৬ সালের ১৪ মে রাতে গ্রেপ্তার করে কয়েক দফায় ১৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি পুলিশ।

20 August 2010

চট্টগ্রাম থেকে গ্রেনেড আনে মজিদ বাট: হামলার পর বাকিগুলো পাঠানো হয় কাশ্মীরে

মাসুদ কার্জন

ইতিহাসের বর্বরোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় একাট্টা হয়েছিল দেশি-বিদেশি একাধিক জঙ্গি গোষ্ঠী। তাদের নেপথ্যে নায়ক বা মদদদাতা আছে দেশি-বিদেশি একাধিক প্রভাবশালী মহল। ওই হামলায় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করেছিল তৎকালীন রাষ্ট্রযন্ত্রের একাংশ। চট্টগ্রাম থেকে আসা গ্রেনেডের চালানের একটি অংশ ২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহারের পাশাপাশি আরেকটি অংশ পাঠানো হয়েছিল কাশ্মীরের জঙ্গিদের কাছেও। গ্রেনেড সরবরাহকারীদের একজন কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদীন নেতা আবদুল মজিদ বাট।

২১ আগস্ট হামলার সঙ্গে যোগসূত্র থাকতে পারে চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানেরও। শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খোয়া যাওয়া গ্রেনেডগুলোই ব্যবহার করা হয়েছিল বলে মনে করছেন অনেকেই। ওই সময় রহস্যজনকভাবে ২৪টি গ্রেনেড খোয়া গিয়েছিল। হামলাকারী ও মদদদাতা সবার লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তদন্ত সূত্র ও গ্রেপ্তারকৃতদের পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দি থেকে এসব বিষয় জানা গেছে।

মামলার বর্তমান তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দ কালের কণ্ঠকে জানান, আবদুল মজিদ বাট বিদেশি, কাশ্মীরভিত্তিক একটি জঙ্গি সংগঠনের নেতা। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও ২১ আগস্ট হামলা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র মতে, হামলার মাঠপর্যায়ের তদারকি করেন হুজি নেতা মুফতি হান্নান ও উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই আরেক হুজি নেতা তাজউদ্দিন। তাজউদ্দিনই তাঁর ভাই পিন্টুর মাধ্যমে তৎকালীন সরকারের অংশটির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। হামলার পর তাজউদ্দিনের ভিসা করানো, তাঁকে দেশের বাইরে পাঠানোর পুরো বিষয়টি দেখভাল করেছিলেন প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন তিন সদস্য।

আফগানিস্তানফেরত মুজাহিদীন সাবেক হুজি নেতা মাওলানা সালামের গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, দেশি ও বিদেশি জঙ্গি গোষ্ঠী ছাড়াও ২১ আগস্টের হামলায় তৎকালীন সরকারের একটি অংশের মদদ ছিল। সালামের মতে, ২১ আগস্ট ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলো এসেছিল চট্টগ্রাম থেকে। ভিনদেশি জঙ্গি নেতা মজিদ বাট গ্রেনেডের চালানটি ঢাকায় আনার পর কিছু গ্রেনেড হুজি নেতা তাজউদ্দিনকে দেন। চালানের অবশিষ্ট গ্রেনেড পাঠিয়েছিলেন ভারতের কাশ্মীর মুজাহিদীনের কাছে। আবদুল মজিদ বাট পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের (ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজন্স) ঘনিষ্ঠ। বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বাংলাদেশে তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল।

কিভাবে তৎকালীন সরকারের অংশটি হামলাকারীদের সহযোগিতা করেছিল তার বর্ণনা আছে পুলিশের কাছে দেওয়া মাওলানা সালামের জবাবন্দিতেও। সালামের দাবি, হামলার আগে মার্চ মাসে তাঁরা একটি বৈঠক করেছিলেন মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদের ভেতরে। তিনি ছাড়াও ওই বৈঠকে তাজউদ্দিন, মুফতি হান্নান ও মজিদ বাট উপস্থিত ছিলেন। তাঁর দাবি, ২১ আগস্ট হামলা ও শেখ হাসিনাকে হত্যা করলে দেশে অশান্তি হতে পারে_ওই বৈঠকে তিনি এ প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন। উত্তরে তাজউদ্দিন বলেছিলেন, 'অসুবিধা নাই, বর্তমান সরকারের (বিএনপি-জামায়াত) পুরো সমর্থন পাব।' সালামের দাবি, হামলার আগে মুফতি হান্নানের বাসায় আরো একটি বৈঠক হয়েছিল। পরে তিনি পাকিস্তান চলে যান। দেশে আসার পর তাজউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল একটি গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে। তাজউদ্দিন ওই সময় গোয়েন্দা সংস্থাটির অফিসেই থাকতেন। শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে না পারায় ওই সাক্ষাতে তাজউদ্দিন আক্ষেপ করে বলেছিলেন, 'হামলা করে আসল কাজ হলো না; শুধু বদনাম হলো। সরকারের লোকজনও খুশি হতে পারেন নাই।'

5 August 2010

কিছু বিদেশির কারণে উত্তরা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি: ঢাকায় পরবাসে অপকর্ম!

পারভেজ খান

রাজধানীর উত্তরা এলাকাকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য 'ভীষণভাবে হুমকিস্বরূপ' হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। হুমকির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এখানে আফ্রিকা ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের বসবাসকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা থেকে শুরু করে দেশদ্রোহের অভিযোগও। ফলে ৫০টি বাড়ির ওপর রাখা হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। সম্প্রতি র‌্যাব এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে উত্তরার বাড়ির মালিকদের। বিদেশি ভাড়াটিয়াদের ব্যাপারে বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে তথ্যও চেয়েছে র‌্যাব। তবে অনেক বাড়ির মালিকই এখনো তথ্য সরবরাহ করেননি বলে জানা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার উত্তরা থেকে ৭০ লাখ টাকা মূল্যমানের জাল টাকা ও ডলার এবং এসব ছাপানোর যন্ত্রপাতিসহ ক্যামেরুনের নাগরিক ইসোমো হাসান ও ফিলিপাইনের নাগরিক (মহিলা) লিজা হারনানডেজকে র‌্যাব-১ গ্রেপ্তার করেছে। গতকালই তাদের উত্তরা র‌্যাব কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। ইসোমো কালের কণ্ঠকে জানায়, সে ১৪ দিনের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসায় ঢাকায় এসেছিল। ৭ মার্চ তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়। এর পরও সে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করে আসছিল। লিজা তার কোনো পাসপোর্টই দেখাতে পারেনি। তাদের চক্রে ইব্রাহিম মাদি ও ফোয়ান ফেলিক্স রুবেন নামের আরো দুজন সদস্য (ক্যামেরুনের নাগরিক) আছে বলে ইসোমো ও লিজা জানায়। ওই দুজনের ভিসার মেয়াদও শেষ বলে জানায় লিজা।
নজর ৫০ বাড়িতে : র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ সোহায়েল কালের কণ্ঠকে জানান, বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বিদেশি নাগরিকদের নথিপত্র তল্লাশি করে দেখা গেছে, তাদের ৯৫ শতাংশেরই ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। তিনি আরো জানান, উত্তরা এলাকায় যারা অবৈধভাবে অবস্থান করছে, তারা প্রায় সবাই বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের মধ্যে জঙ্গি সম্পৃক্ততাও আছে বলে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকার প্রায় ৫০টি বাড়ির ওপর তাদের নজরদারি রয়েছে। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করে এ অভিযোগের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য কাজ করছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।
নগরীর উত্তরা, গুলশান, বনানী ও বারিধারায় অনেক বিদেশি নাগরিকের বাস। তবে এর মধ্যে বেশি বিদেশি নাগরিকের বসবাস উত্তরায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, উত্তরা এলাকায় প্রায় এক হাজার বিদেশি নাগরিক বসবাস করে। তাদের অধিকাংশই পাকিস্তানি ও আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকার নাগরিক। এই অবৈধ বসবাসকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ২০০ জনের মতো রয়েছে, যাদের ভিসার মেয়াদ দীর্ঘদিন আগেই শেষ হয়ে গেছে। উত্তরায় তাদের আবাসিক বাড়ি (ভাড়া করা) রয়েছে ১০০-র মতো। তারা রাস্তাঘাটে স্বাভাবিক অবস্থায় ধরা পড়লে বলে পাসপোর্ট বাসায় রেখে এসেছে বা হারিয়ে গেছে। কখনো বলে, পাসপোর্ট অ্যাম্বেসিতে আছে। বিদেশি নাগরিক হওয়ায় তাদের সঙ্গে কঠোর হওয়া সম্ভব হয় না। এ ছাড়া তারা অধিকাংশই ইংরেজিতে কথা বলতে পারে না। তাদের আচরণও অতিউগ্র।
গোয়েন্দাদের ধারণা, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া এসব বিদেশি নাগরিকের একটি অংশের সঙ্গে হরকাতুল জিহাদ ও জেএমবিসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাই তারা যেকোনো সময় বড় ধরনের সহিংস ঘটনাও ঘটাতে পারে।
উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর রোডে গতকাল কথা হয় ক্যামেরুনের দুই নাগরিক লাটিমো হাসাইন ও জেরিখ আল-আমিনের সঙ্গে। তাঁরা জানান, তাঁরা বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছেন। লাটিমো জানান, গত ৪ মে তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। চেষ্টা করছেন ভিসার মেয়াদ বাড়াতে। জেরিখের কাছে তাঁর এ দেশে আসার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত ও মারমুখী হয়ে ওঠেন।
উত্তরা আবাসিক এলাকার ১৩ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির নিরাপত্তা কর্মকর্তা আকতার হোসেন জানান, এই বিদেশি নাগরিকদের আচরণ আর তাদের নানান অনৈতিক কর্মকাণ্ড অসহনীয় পর্যায়ে এসে পেঁৗছেছে। প্রতিরাতেই তারা মদ্যপ অবস্থায় এলাকায় হৈচৈ করে পরিবেশ নষ্ট করে। এ ছাড়া নারীঘটিত নানান কেলেঙ্কারি তো রয়েছেই। কাউকে কিছু বলতে গেলেই মারমুখী হয়ে ওঠে। এলাকার আরো কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী জানান, রাতের বেলায় উত্তরার প্রতিটি অলিগলি এই মদ্যপ বিদেশি নাগরিকদের (কৃষ্ণাঙ্গ) দখলে চলে যায়। তারা রিকশা ও ট্যাক্সিচালকদের মারধর করে এবং টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। আর বিভিন্ন বাসায় তারা একত্রিত হয়ে রাতভর হৈচৈ করে।
তথ্য চেয়ে চিঠি : গত ৭ জুলাই র‌্যাব উত্তরার ১, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর সেক্টরের বাড়ির মালিকদের সংগঠনের কর্মকর্তাদের একটি চিঠি দিয়েছে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১-এর উপপরিচালক আহসানুল কবীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে গোয়েন্দা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, চিঠিটি 'বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তার হুমকিস্বরূপ বিদেশিদের (বিশেষত আফ্রিকান ও পাকিস্তানি) অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত হওয়া প্রসঙ্গে।'
চিঠিতে বলা হয়, 'গোয়েন্দা নজরদারি এবং বিভিন্ন সূত্র মারফত খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই বিদেশিদের বেশির ভাগই বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক (সাইবার ক্রাইম, প্রতারণা, হয়রানি, মারামারি, চুরি, চোরাচালান, জাল টাকার ব্যবসা, এনজিওর অন্তরালে দেশদ্রোহী কাজ, নারী পাচার, ধর্মান্তরিত করা ও দেশের প্রচলিত আইন না মেনে চলা) এবং অসামাজিক কার্যক্রমে ( মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন, দেহ ব্যবসা, দেশি সংস্কৃতির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করা, বাড়ির মালিক ও কেয়ারটেকারদের সঙ্গে অশোভন আচরণ) জড়িয়ে পড়েছে। ...তাদের এসব কার্যকলাপ ভীষণভাবে নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।'
চিঠিতে বলা হয়েছে, 'উল্লেখ্য, অত্র এলাকায় বসবাসরত বিশেষত বেশির ভাগ আফ্রিকান নাগরিক অত্যন্ত উগ্র মেজাজের এবং নিয়মনীতির পরিপন্থী সব ধরনের অপকর্মে লিপ্ত বলে বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ। খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরে অবস্থানরত অনেক বিদেশির পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ (বিশেষ করে আফ্রিকানদের) হওয়া সত্ত্বেও তারা অবৈধভাবে বিভিন্ন বাসায় বসবাস করছে, যা প্রচলিত আইনবহির্ভূত।' বাড়ির মালিকদের উদ্দেশে চিঠিতে বলা হয়, 'আপনাদের বাড়িতে অবস্থানরত সব বিদেশির নাম, পেশা, পাসপোর্টের মেয়াদ ও ছবিসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র অত্র ব্যাটালিয়নে প্রদান ও তৎপরবর্তীতে অত্র এলাকায় নতুন কোনো বিদেশি বাসা ভাড়া নিতে এলে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে উপযুক্ত নথিপত্র প্রেরণের জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হলো।'
র‌্যাবের মহাপরিচালক খন্দকার হাসান মাহমুদ কালের কণ্ঠকে জানান, সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি তাদের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থাও এ সমস্যা চিহ্নিত করেছে। এসব অবৈধ বসবাসকারী যে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তার অনেক প্রমাণও হাতেনাতে পাওয়া গেছে এবং ধরাও পড়ছে অনেকে। শুধু উত্তরাবাসী নয়, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
নেই নজরদারি : বিদেশ থেকে কেউ বাংলাদেশে এলে সে কোথায় অবস্থান করছে, কী করছে, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কেউ অবস্থান করছে কি না_এসব দেখাশোনার দায়িত্ব পুলিশের বিশেষ শাখার সিকিউরিটি কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের। র‌্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মূলত এই শাখা নামেই আছে, বাস্তবে তাদের কোনো কর্মকাণ্ড আছে বলে মনে হয় না। তদারকি বা নজরদারি থাকলে এমনটি হওয়ার কথা নয়।
এ ব্যাপারে সিকিউরিটি কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের দায়িত্বরত পুলিশ সুপার আবু সুফিয়ান গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, সীমিত লোকবল নিয়ে হলেও তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব যথাযথভাবেই পালন করে আসছেন। বিদেশি নাগরিকদের ব্যাপারে তাঁদের মাঠপর্যায়ে কাজও চলছে।
মালিকদের সাড়া কম : উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আনসার খান কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারের এ উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। এটি উত্তরাবাসীর একটি সমস্যাও বলা চলে। তিন নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন বাড়ির মালিককে বিদেশি ভাড়াটিয়াদের ব্যাপারে গত ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আনুষঙ্গিক কাগজপত্র পাঠাতে বলা হয়েছিল। অনেকেই পাঠিয়েছেন, তবে সবাই পাঠাননি। এখনো এ ব্যাপারে কাগজপত্র নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
উত্তরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ও বাড়ির মালিক সাবেক সচিব মইন উদ্দীন আহমেদ গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি নিজেও এক বিদেশি দম্পতিকে (লুসাকার) বাড়ি ভাড়া দিয়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাদের চালচলন, কথাবার্তা সবই ছিল রহস্যঘেরা আর সন্দেহজনক। ফলে তিনি তাদের উঠিয়ে দিয়েছেন বলে জানান।
উত্তরায় বাড়ি আছে এমন একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদেশি নাগরিকদের কাছে বাড়ি ভাড়া দিলে তুলনামূলক বেশি ভাড়া পাওয়া যায়_এ আশায়ই তাঁরা অনেকে বিদেশি নাগরিকদের কাছে বাড়ি ভাড়া দেন। কিন্তু দেওয়ার পরই তাঁরা বুঝতে পারেন, সর্বনাশ যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। তাদের কাছে পাসপোর্ট আর ভিসার কাগজ চাইতে গেলে তারা মারমুখী হয়ে ওঠে এবং অনেক সময় হাতাহাতিও হয়।
স্পেশাল ব্রাঞ্চের বিশেষ পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আওরঙ্গজেব মাহবুব গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়গুলো সার্বক্ষণিক মনিটর করে নিয়মিত তালিকা করে থাকে। ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার অভিযোগে প্রতি মাসেই ১৫-২০ জন বিদেশি নাগরিককে তালিকাভুক্ত করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এ ছাড়া পাসপোর্ট আইনে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয় বলে তিনি জানান।
এদিকে তথ্য চেয়ে বাড়ির মালিকদের চিঠি দেওয়া হলেও পর্যাপ্ত সাড়া পাওয়া যায়নি। র‌্যাব-১-এর উপপরিচালক মেজর আহসানুল কবীর গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, এ সমস্যা যেকোনো সময় জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। দেশ বা রাষ্ট্রের স্বার্থেই তাঁরা উত্তরার বিভিন্ন সমিতি কর্মকর্তাদের তাঁদের এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের ব্যাপারে তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, তাঁদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বাদল ও সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান তালুকদার কালের কণ্ঠকে জানান, র‌্যাবের চিঠি পেয়ে তাঁরাও এলাকার প্রতিটি বাড়িতে একাধিকবার করে নোটিশ করেছেন। বেশির ভাগ বাড়িওয়ালা সাড়া দিচ্ছেন না। ১১ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, র‌্যাবের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরাও সমিতির পক্ষ থেকে বিভিন্ন বাড়ির মালিককে পৃথক চিঠি দিয়েছেন।
উত্তরা থানার ওসির সামনেই গতকাল শ্যামল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা এ প্রতিবেদককে জানান, কৃষ্ণাঙ্গরা এলাকায় প্রায়ই ছিনতাই করে। কিছুদিন আগেও তারা সোহেল নামের এক ছাত্রকে মারধর করে তাঁর মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এলাকার একটি আবাসিক হোটেল ছিল এ কৃষ্ণাঙ্গদের আড্ডাস্থল। পরে স্থানীয় মসজিদ কমিটি এ হোটেলটি বন্ধ করে দিয়েছে।

26 July 2010

ওয়েবসাইট ও ফেইসবুকে জামায়াত নেতাদের মুক্তির পক্ষে আন্দোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

'ফ্রি জামায়াত লিডারস' নামে একটি ওয়েবসাইট খুলে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মুক্তির পক্ষে প্রচারণা শুরু করেছে জামায়াত নেতাদের মুক্তি আন্দোলন। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে খোলা হয়েছে বিশেষ পাতা। সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণের আদলে ওই ওয়েবসাইট ও ফেইসবুকের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার ছাড়াও বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তার ও জুলুম-নির্যাতন চলছে বলে দাবি করা হয়েছে।

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগ এ ওয়েবসাইটের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে বলেছে, জামায়াতের শুভাকাঙ্ক্ষীরাই এ ওয়েবসাইট খুলেছে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে জামায়াত-শিবিরের বর্তমান ও সাবেক কর্মীরা এই ওয়েবসাইট ও ফেইসবুকের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। জানা যায়, ১ জুলাই ফ্রি জামায়াত লিডারস (freejamatleaders.com) ডোমেইনটির সার্ভার ইন্টারনেটে নিবন্ধন করা হয়েছে প্রাইভেসি প্রোটেক্টের (privacyprotect.org) নামে। এই সংগঠনের নামে আরো প্রায় তিন হাজার ১৯৭টি ডোমেইন আছে। তবে প্রাইভেসি প্রোটেক্ট ওয়েবসাইটে বলা ডোমেইনের প্রকৃত মালিকের কাছে অ্যাডমিন, টেকনিক্যাল বা বিলিং সংক্রান্ত যোগাযোগে যে অনলাইন ফরম রয়েছে তাতে বলা হয়েছে, 'প্রাইভেসি প্রোটেক্ট কোনো ডোমেইনের মালিক নয়। সংগঠনটি ডাকযোগে আসা চিঠিপত্র ডোমেইনের প্রকৃত মালিকের পক্ষে গ্রহণ করে না।' তবে ডোমেইনটির অ্যাডমিন, টেকনিক্যাল বা বিলিং সংক্রান্ত যোগাযোগের জন্য ঠিকানা দেওয়া হয়েছে : 'PrivacyProtect.org, Domain Admin (contact@privacyprotect.org), P.O. Box 97, Moergestel null, 5066 ZH, NL, Tel. +45.36946676|' জানা গেছে, এ ঠিকানাটি নেদারল্যান্ডসের। ডোমেইন টুলস ডট কমের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রাইভেসি প্রোটেক্ট ডট অর্গ-এর নামে খোলা হলেও নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা দিয়েছে এডবি্লউএসপি (AWSP) সাংকেতিক নামধারী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। আগামী বছরের ১ জুলাই এই ডোমেইনটির নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত শনিবার পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ ব্যক্তি ওই সাইটে ঢুকেছেন। এর মধ্যে ৯২ দশমিক ৬ শতাংশ সাইটটি দেখেছেন বাংলাদেশ থেকে। শনিবার বিকেল ৫টায় ওই সাইটটিতে ব্যানার হেডিংয়ে লেখা ছিল_'এই গ্রেপ্তার নেহাৎ ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছু নয়।' এ ছাড়া সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণের আদলে পৃষ্ঠা বিন্যাসে প্রকাশিত প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল 'রিমান্ড শেষে জেলহাজতে যাওয়ার আগে মাওলানা নিজামী : ইসলাম উৎখাত ও দেশকে করদরাজ্য বানানোর লক্ষ্যেই বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি। জঙ্গি নেতা সাইদুরের সঙ্গে দেখা হওয়া এবং জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য অসত্য।' এ ছাড়া সাইট ব্যবহারকারীরা যেন জামায়াতের নেতাদের মুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর ও মন্তব্য লিখতে পারেন সে সুযোগও এতে রয়েছে।

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সদস্য কামরুল ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সম্ভবত ৩ জুলাই ওই ওয়েবসাইট খোলা হয়েছিল। জামায়াতের শুভাকাঙ্ক্ষীরাই এটি খুলেছে।' তিনি আরো বলেন, ১৩ জুলাই রাত ২টার পর তারা আর ওই সাইটে ঢুকতে পারেননি। তবে আবার কবে তা খোলা হয়েছে তা তিনি জানেন না বলে দাবি করেন। তবে জামায়াত নেতাদের মুক্তি আন্দোলনের ওয়েবসাইটটিতে দেখা গেছে, ২১ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই তারিখে তাতে খবর ও ছবি সংযোজন করা হয়েছে। এর আগে ৩ থেকে ১৩ জুলাই তারিখে খবর ও ছবি সংযোজন করা হয়।

জানা গেছে, এ ওয়েবসাইটের সঙ্গে নিজামী, সাঈদী, মুজাহিদ মুক্তি আন্দোলন নামে ফেইসবুকের একটি পৃষ্ঠার লিঙ্ক রয়েছে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ২৬০ জন ওই পৃষ্ঠা পরিদর্শন করে 'লাইক' অপশনে ক্লিক করেছেন। ফেইসবুকের ডিসকাশন বোর্ডে গত শনিবার পর্যন্ত 'মুক্তি' শিরোনামে ১১টি পোস্ট ছিল। এর মধ্যে একটিতে এ টি এম কামারুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, 'আন্দোলন কখন শুরু হবে? হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আমাদের প্রিয় নেতাদের মুক্ত করতে হবে। দ্রুত করতে হবে। ধৈর্যের সব বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। আর কত ধৈর্য ধরতে হবে?' ফেইসবুক পৃষ্ঠাটিতে শনিবার বিকেল পর্যন্ত ছবির ১০টি অ্যালবাম ও ১৪টি লিংক ছিল। জানা গেছে, গত শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় 'বাংলাদেশ ওয়াচ অস্ট্রেলিয়া ইনকরপোরেটেড' নামে এক সংগঠনের ব্যানারে জামায়াত ও বিএনপির সমর্থকরা মানববন্ধন করা ছাড়াও বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। এ স্মারকলিপির কপি অস্ট্রেলিয়া সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছেও পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও ওয়েবসাইট ও ফেইসবুক ভিত্তিক প্রচারণা চলছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফেইসবুকে নিজামী, সাঈদী ও মুজাহিদ মুক্তি আন্দোলন নামে পৃষ্ঠা 'ভালো লেগেছে' বলে মন্তব্যকারীরা প্রধানত শিবির কর্মী। এ ছাড়া কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ শাখার শিবিরকর্মীরা ফেইসবুকের মাধ্যমে জামায়াত নেতাদের মুক্তির পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

25 July 2010

গোলাম আযমের ছেলের প্রতারণাব্যবসার নামে একজনের কাছ থেকেই হাতিয়েছেন ২৬ হাজার ৮০০ পাউন্ড, যুক্তরাজ্যে মামলা

ফারুক যোশী, ম্যানচেস্টার থেকে

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারের একটি ট্রাভেলস এজেন্সির বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্দসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শহরের লংসাইটে অবস্থিত 'কসম' নামের এই ট্রাভেলস এজেন্সির মালিক হলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছোট ছেলে মোমেন আযমী। তিনি জালিয়াতি ও প্রতারণা করে গ্রাহকদের লক্ষাধিক পাউন্ড হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হাইড শহরের একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর কাছ থেকেই আযমী হাতিয়ে নিয়েছেন ২৬ হাজার ৮০০ পাউন্ড। এ বিষয়ে হাইড পুলিশ স্টেশনে একটি মামলাও করেছেন ওই ব্যবসায়ী। মামলাটির তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে।

মামলা দায়েরকারী নাসির খান সোয়েব গত শনিবার তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইজি সলিউশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ৮৮ জন মুসলি্লকে ওমরা হজের জন্য পাঠাতে তিনি একটি ভালো প্রতিষ্ঠান খুঁজছিলেন। এ খবরটি জেনে মোমেন আযমী তাঁকে ফোন করে একটি ভালো অফার দেন। নিজের ব্যবসায়িক নীতি অনুযায়ী সোয়েব ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে অগ্রিম পাওয়া (ডিপোজিট) অর্থ থেকে চার হাজার পাউন্ড আযমীকে দেন। পরে আরো পাঁচ হাজার পাউন্ড দিলে আযমী তাঁকে কিছু টিকিটের বুকিং রেফারেন্স দেন। এই রেফারেন্স পাওয়ার পর সোয়েব আরো দুই কিস্তিতে ১৭ হাজার ৮০০ পাউন্ড পরিশোধ করেন। অর্থ দেওয়ার পর সন্দেহ হলে তিনি অনলাইনে লিবিয়ান এয়ারলাইনসে খোঁজ নেন। কিন্তু এরকম রেফারেন্সের কোনো হদিস না পেয়ে তিনি এয়ারলাইনসে ফোন করেন। লিবিয়ান এয়ারলাইনস কর্মকর্তারা জানিয়ে দেন যে এরকম রেফারেন্সের কোনো বুকিং তাদের এয়ারলাইনসে নেই। এরপর তিনি আযমীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকে যাওয়ার যুক্তি দেখান।

সোয়েব বলেন, 'সন্দেহ হয় আযমী পরিকল্পিতভাবে লিবিয়ান এয়ারলাইনসের টিকিট বুকিং ফরম্যাট ব্যবহার করে জালিয়াতির উদ্দেশ্যে বুকিং রেফারেন্স তৈরি করেন। এ অবস্থায় আমি এলাকার কিছু মানুষ এমনকি এখানকার জামায়াত সংশ্লিষ্ট কিছু মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ যোগাযোগের পর আযমী ২৬ হাজার ৮০০ পাউন্ডের একটি চেক আমার হাতে তুলে দেন। কিন্তু এই চেক ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়। পরে কমিউনিটির কয়েকজন নেতার উপস্থিতিতেই একটি পেমেন্ট প্লান তৈরি করা হয়, যাতে আযমীর দস্তখত আছে। আযমী এতে উল্লেখ করেন ২২ জুলাই ১০ হাজার পাউন্ড, ১৫ আগস্ট ১০ হাজার পাউন্ড এবং ৩১ আগস্ট আরো ছয় হাজার ৮০০ পাউন্ড পরিশোধ করবেন। কিন্তু প্রথম পেমেন্টের দিনই তিনি কেঁদে-কেটে জানিয়ে দেন তাঁর এখন সে উপায় নেই এবং তিনি অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন না। তিনি এখন চাকরি খুঁজছেন এবং চাকরি পেলে এ অর্থ পরিশোধ করবেন।'

এ অবস্থায় সোয়েব ১৯ জুলাই হাইড পুলিশ স্টেশনে আযমীর বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা করেন।
এ বিষয়ে জানার জন্য মোমেন আযমীকে বারবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

সোয়েব সংবাদ সম্মেলনে জানান, এরই মধ্যে তাঁর ক্লায়েন্টদের জন্য প্রায় ৩৮ হাজার পাউন্ড তাঁকে পরিশোধ করতে হয়েছে। কারণ আগে বুক করা টিকিটের চেয়ে এখন পিক পিরিয়ডে টিকিটের মূল্য অনেক চড়া। নিজের ব্যবসায়িক সুনাম ও ব্যক্তিগত ইমেজ অক্ষুণ্ন রাখতে তিনি বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার করে ক্লায়েন্টদের কাউকে টিকিট কিনে দিয়েছেন, কাউকে অর্থ ফেরত দিতে হয়েছে।

ম্যানচেস্টারের আরো কয়েকজন ব্যবসায়ীর কয়েক হাজার পাউন্ড মোমেন আযমী হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ম্যানচেস্টারের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী জানান, আযমীর কাছে তাঁর পাওনা আছে প্রায় ১৪ হাজার পাউন্ড। লন্ডনের দুটো ট্রাভেলস এজেন্সির একটি পাবে ১৮ হাজার পাউন্ড, অন্যটি পাবে আট হাজার পাউন্ড। গুজরাটের একজন ব্যবসায়ীর পাওনা আছে ১৯ হাজার পাউন্ড।

22 July 2010

গোলাম আযমের দেহরক্ষী ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ

ওমর ফারুক

জামায়াত নেতা গোলাম আযমের দেহরক্ষী ছিল পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ। এক সময় সে দেহরক্ষীর কাজ ছেড়ে দিয়ে সেভেন স্টার গ্রুপে যোগ দিয়ে হত্যা, নির্যাতন ও চাঁদাবাজিতে নেমে পড়ে। ২০০১ সালে সরকার তাকেসহ ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণার পর মোল্লা মাসুদ ভারতে পালিয়ে যায়। এর পর থেকে সে সেখানেই অবস্থান করছে। গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

একটি ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তার মা-বাবার দেওয়া নাম ছিল মাসুদ। মাদ্রাসায় পড়াশোনার কারণে সন্ত্রাসী গ্রুপে যোগ দেওয়ার পর তার নামের আগে 'মোল্লা' শব্দটি বসিয়ে দেওয়া হয়। ফলে তখন থেকেই মাসুদ মোল্লা মাসুদ হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে সে শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের শিষ্য বনে যায়। এভাবে কিছুদিনেই সে হয়ে ওঠে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী।

১৯৯৭ সালের দিকে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, তানভিরুল ইসলাম জয়, টোকাই সাগর, টিক্কা, সেলিম, চঞ্চল ও মোল্লা মাসুদ মিলে গড়ে তোলে সেভেন স্টার গ্রুপ। ওই গ্রুপে কাজ করার কারণে মোল্লা মাসুদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সখ্য গড়ে ওঠে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের। সেই সখ্য আজও রয়েছে বলে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান।

র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউল আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মোল্লা মাসুদ বর্তমানে পার্শ্ববর্তী একটি দেশে আছে বলে জানতে পেরেছি। আমরা তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখছি।'

ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেভেন স্টার গ্রুপের সদস্য সুব্রত বাইন বড় অপারেশনে নিজেই যেত। চঞ্চল, মোল্লা মাসুদ ও টিক্কা সামনে থেকে কাজ করলেও কমিশনের সিংহভাগ যেত সুব্রতর কাছে। সফল অভিযানের ক্রেডিট পেত সুব্রত। অন্যদিকে টিক্কার সঙ্গে জয় আলাদাভাবে অপারেশনে যেত। এসব কারণে ২০০০ সালের দিকে এসে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সুব্রত বাইন একটি রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ হয়ে যাওয়ায় অন্তর্দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করলে সেভেন স্টার গ্রুপ ভেঙে যায়। ওই সময় সন্ত্রাসী আগা শামীমের নেতৃত্বে তৈরি হয় ফাইভ স্টার গ্রুপ। তারা ঢাকা সিটি করপোরেশনের সব ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করত।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যখন গোলাম আযমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে আন্দোলন চরম পর্যায়ে ছিল তখন মোল্লা মাসুদ লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। এর কিছুদিন পর তাকে গোলাম আযমের বডিগার্ড হিসেবে দেখা যায়। কিছুদিন পর আবার লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায় সে। তখন সে টপ টেরর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ৯০ দশকে মোল্লা মাসুদ একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করার পর মগবাজারের সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়। ওই সময় সে ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে জড়ায়। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জিএস পদে নির্বাচনও করে। ওই সময় থেকেই গোলাম আযমের সঙ্গে তার ছিল গভীর সখ্য। সেই সুসম্পর্ক থেকেই গোলাম আযমের বডিগার্ড হয়েছিল সে।

মোল্লা মাসুদের ঘনিষ্ঠ সুব্রত বাইন বরিশাল থেকে ঢাকায় আসে। সে তার মা-বাবার সঙ্গে মগবাজার এলাকায় বসবাস করত। মা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষিকা। মগবাজারের বিশাল সেন্টারের একটি দোকান নিয়ে অন্তর্কোন্দলের কারণে মুরাদ নামের একজনকে হত্যা করে সুব্রত। এটিই ছিল তার প্রথম খুন। সে শেষ খুন করে সন্ত্রাসী মুরগি মিলনকে। সুব্রত বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে প্রথমে ছিল পশ্চিমবঙ্গের তেগেরা এলাকায়। এরপর চলে যায় দমদম, পরে ঠাকুরপুকুর হয়ে কলকাতায়। সে প্রায়ই ঢাকায় আসে। সুব্রত দুই বিয়ে করে। তার প্রথম স্ত্রীর ঘরে এক ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম হয়। ছেলেটি বাকপ্রতিবন্ধী। বর্তমানে দেশের বাইরে সুব্রত ছেলেটিকে নিয়ে বসবাস করছে। বড় মেয়ে মগবাজার এলাকায় সুব্রতর মায়ের সঙ্গে বসবাস করে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আওয়ামী লীগ আমলে কারাগারে থাকার সময় একজন আফ্রিকান মুসলিমের সঙ্গে পরিচয় হয় সুব্রতর। তার কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে সুব্রত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ফতেহ আলী নাম ধারণ করে। এরপর থেকে সে নামাজ ধরে এবং প্রতি শুক্রবার রোজা রাখে। সব সময় তার হাতে তসবিহ দেখা যায়। এখন সুব্রতর বয়স চলি্লশের বেশি। সে কখনো এক জায়গায় দীর্ঘদিন থাকে না। কলকাতায় তার কমপক্ষে ৮-১০টি থাকার জায়গা আছে। সে এক রাত ক্লিনিকে থাকলে পরের রাতে থাকে রেল স্টেশনে। সে নিয়মিত ঢাকায় তার বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। বাহিনীর সদস্যরা প্রতি মাসে ৫০-৬০ লাখ টাকা পাঠায় তার কাছে। এই টাকা লেনদেন করে সিনিয়র ফটো সাংবাদিক নামধারী একজন প্রতিষ্ঠিত হুন্ডি ব্যবসায়ী। ঢাকায় তার শতাধিক কর্মী রয়েছে। ঢাকায় সুব্রতর বেতনভুক্ত সন্ত্রাসী রয়েছে যাদের বেতন ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

কলকাতার স্মাগলার ও হুন্ডি ডিলারদের কারো ঢাকায় বল প্রয়োগের প্রয়োজন হলে তারা সুব্রতর সাহায্য নেয়। সুব্রত ফোন করে সহকর্মীদের করণীয় জানিয়ে দেয়। লোকজন টাকা উদ্ধার করে পাঠিয়ে দেওয়ার পর মোটা অঙ্কের কমিশন পায় সে। একই পন্থায় ঢাকার বিজনেসম্যানদের বকেয়া উদ্ধার করে দেয় সে। সুব্রত ৫০ বিঘা জমি কিনেছে ভারতের নদিয়ায়। সেই জমিতে পুকুর কেটে মাছ চাষও করা হচ্ছে। যেগুলো তত্ত্বাবধান করছে মোল্লা মাসুদ।

12 July 2010

বিদেশি দূতাবাসগুলোতে যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা পাঠানো হচ্ছে : দীপু মনি, বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে নাম গেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে ঢাকায় বিদেশি দূতাবাসগুলোতে যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। তাদের ভিসা না দিতে ঢাকায় বিদেশি মিশনগুলোকে অনুরোধ জানাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল রবিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিবাসন (ইমিগ্রেশন) পুলিশের কাছে চিহ্নিত ৪০ যুদ্ধাপরাধীর ছবিযুক্ত তালিকা পাঠিয়েছে। ইমিগ্রেশন অফিসের বোর্ডে ওই তালিকা সাঁটিয়ে দিতেও বলা হয়েছে। দেশের সব বন্দরে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এ তালিকায় জামায়াতের শীর্ষ নেতা গোলাম আযম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মীর কাসেম আলী, বিএনপির সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নামও রয়েছে।

জানা গেছে, স্থল, নৌ ও আকাশ_কোনো পথেই যাতে যুদ্ধাপরাধীরা পালাতে না পারে, সে লক্ষ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থাগুলো কাজ করছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দরসহ সংশ্লিষ্ট সব জায়গায়ই তালিকা পাঠানো হয়েছে। আদালতে অভিযোগ দায়েরের আগ পর্যন্ত তারা যেন বিদেশে পালাতে না পারে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভিবাসন শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা রবিবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠের কাছে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর তালিকা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, তালিকায় স্থান পাওয়া ব্যক্তিদের কেউ বিদেশে যেতে চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তাদের জানাতে বলা হয়েছে।

আমাদের বেনাপোল প্রতিনিধিও দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোলে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা পাঠানোর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তালিকা পাওয়ার পরপরই বেনাপোল সীমান্ত এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ইমিগ্রেশন পুলিশের পাশাপাশি সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিডিআরকেও রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায়।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আজম খান জানান, তাঁরা ইতিমধ্যে চিহ্নিত ৪০ যুদ্ধাপরাধীর ছবিযুক্ত তালিকা ইমিগ্রেশন অফিসের বোর্ডে সাঁটিয়ে দিয়েছেন। চেকপোস্ট এলাকায় ইমিগ্রেশন পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধীদের দেশ ত্যাগের আশঙ্কায় সরকার ওই তালিকা পাঠাল। তালিকা পাওয়ার পর পাসপোর্ট যাত্রীর চেহারার সঙ্গে ছবি মিলিয়ে যাত্রীকে ভারত গমনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, তালিকায় স্থান পাওয়া চিহ্নিত ৪০ যুদ্ধাপরাধী হলো : জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সাবেক আমির গোলাম আযম, জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নুরুজ্জামান, শেরপুরের কামারুজ্জামান, যশোরের কেশবপুরের শাখাওয়াত হোসেন, রংপুরের এ টি এম আজহারুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার ডা. আবদুল জব্বার, সাতক্ষীরার রিয়াসাত আলী বিশ্বাস, গাজী নজরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আনছার আলী, ফরিদপুরের আব্দুল কাদের মোল্লা, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু মিয়া, ডা. কাজী ইমদাদুল হক, চট্টগ্রামের সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তাঁর ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, মানিকগঞ্জের মীর কাসেম আলী, জয়পুরহাটের আবদুল আলীম, খুলনার কয়রার শাহ মো. রুহুল কুদ্দুস, ঠাকুরগাঁওয়ের মাওলানা আবদুল হাকিম, চুয়াডাঙ্গার মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেটের মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, মাওলানা হাবিবুর রহমান, পাবনার মাওলানা আবুল বাশার মো. সুবহান মিয়া, খুলনার মিয়া গোলাম পরওয়ার, দিনাজপুরের আফতাব উদ্দিন, গাইবান্ধার আবু সালেহ মো. আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়া আজিজ, সিরাজগঞ্জের রফিকুল ইসলাম খান, ময়মনসিংহের ফজলুর রহমান সুলতান, আবদুল মতিন ভঁূইয়া, নোয়াখালীর আমির আহম্মেদ, গোলাম সরোয়ার, চাঁদপুরের এ বি এম খালেক মজুমদার, হবিগঞ্জের সৈয়দ মো. কাওসার, বাগেরহাটের এ কে এম ইউসুফ, টাঙ্গাইলের ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল বাসেদ ও জামালপুরের শাহজাহান।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আসবে। যুদ্ধাপরাধের বিচার ও জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন রাজনীতিককে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশি রাষ্ট্রগুলো কোনো আপত্তি জানিয়েছে কি না_এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাঁদের কাছে কেউ কোনো আপত্তি জানাননি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বিদেশে যাওয়ার জন্য ভিসা পেতে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে আবেদন করতে হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা পেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই ব্যক্তিদের ভিসা না দেওয়ার জন্য বিদেশি দূতাবাসগুলোকে অনুরোধ করতে পারে। গোলাম আযমের পাসপোর্ট সম্পর্কে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাসপোর্ট প্রদানের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।

9 July 2010

সন্দেহভাজন ২৫ যুদ্ধাপরাধীর পাসপোর্ট জব্দ প্রক্রিয়া শুরু: বিদেশি দূতাবাসগুলোতে ছবি ও পাসপোর্ট নম্বরসহ তালিকা পাঠানো হয়েছে

উম্মুল ওয়ারা সুইটি ও প্রতীক ইজাজ

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমসহ সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীদের পাসপোর্ট জব্দ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাঁরা যেন বিদেশ যেতে বা বহির্বিশ্বের সঙ্গে লবিং করতে না পারেন, সে জন্য কড়া নজরদারি আরোপ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোতে সন্দেহভাজনদের ছবি, পাসপোর্ট নম্বরসহ তালিকা পাঠানো হয়েছে। এসব ব্যক্তিকে কোনোভাবেই যেন ভিসা দেওয়া না হয়, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে।

এরই মধ্যে সরকার ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকার ভিত্তিতে ২৫ জন সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীর চলাচলের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

সূত্রমতে, গত ২৬ জুন কালের কণ্ঠে গোলাম আযমের লন্ডন যাওয়া সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশের পরই বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরে আসে। মন্ত্রণালয় থেকে লন্ডনের বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে জানতে চাওয়া হয়, গোলাম আযমের ভিসা পাওয়ার প্রসঙ্গটি কোন পর্যায়ে রয়েছে। মন্ত্রণালয়কে সেখান থেকে জানানো হয়, দুই বছর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য গোলাম আযমের আবেদন নাকচ করা হয়। এরপর যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী গোলাম আযমের ছেলে ও পরিবারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে আদালতে আপিল করা হয়। সম্প্রতি ওই আপিলের রায় গোলাম আযমের পক্ষে যায়। এর ভিত্তিতে তাঁর ভিসা করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পাসপোর্ট অফিসের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, গোলাম আযমের দেশত্যাগ সম্পর্কে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তাদের কাছে তাঁর পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সন্দেহভাজনদের তালিকা দিয়ে বলা হয়েছে, দেশের সব পাসপোর্ট অফিসে যেন তাঁদের পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানো বা নতুন পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।

ওই সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের অক্টোবরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষ থেকে দুর্নীতিবাজ বিবেচিত রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীর তিনটি তালিকা দেওয়া হয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে। এসব ব্যক্তি যেন কোনোভাবেই জাল পাসপোর্ট বা পাসপোর্ট নবায়ন করতে না পারে, সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়।

ওই সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সেসব নির্দেশনা আর কার্যকর না থাকায় গত বছর থেকে এ পর্যন্ত সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ কয়েকজন তাঁদের পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়িয়ে নেন। তবে তাঁরা কেউই অনেকবার চেষ্টা করেও বিদেশে যাওয়ার ভিসা পাননি। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হওয়ার পর বর্তমান সরকার আবারও সন্দেহভাজনদের বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

এদিকে আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গোলাম আযমের বিদেশে যাওয়ার প্রক্রিয়া জানাজানি হওয়ার পর এ নিয়ে সরকার আরো জোর তৎপরতা শুরু করেছে। গত ২৬ জুন সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় মিলে একটি বিশেষ বৈঠক করে। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সন্দেহভাজনদের ওপর নজরদারি বাড়ানো, তাঁদের পাসপোর্ট জব্দ, বাংলাদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোকে সহযোগিতা করার অনুরোধ এবং বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশ জারির।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তারা বিষয়টি আমলে নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত দূতাবাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই দূতাবাসগুলোতে এ অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হবে।

পররাষ্ট্রসচিব মিজারুল কায়েস গত সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীদের কোনো ধরনের সহযোগিতা না করতে দূতাবাসগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। নিউইয়র্ক, অটোয়া, লন্ডনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বাংলাদেশ মিশনগুলোকে এরই মধ্যে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে বিশ্বের সমর্থন আদায়ে মন্ত্রণালয় থেকে চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, 'বিচারের কাজ আমরা অনেকটাই গুছিয়ে এনেছি। সন্দেহভাজনদের বিষয়েও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাঁরা যেন কোনোভাবেই বিদেশ যেতে না পারেন বা বিচারকাজ নষ্ট করতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র করতে না পারেন, তাও দেখা হচ্ছে। আজও (গতকাল) আমরা এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী সংস্থা ও আইনজীবী প্যানেলের সঙ্গে বৈঠক করেছি।'

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, 'সবকিছুই আমাদের নজরে আছে। কে কখন বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছেন, কোথায় ষড়যন্ত্র করছেন_সবকিছুই নজরদারির মধ্যে রয়েছে। আপনারা নিশ্চয় এরই মধ্যে বুঝতে পারছেন, তাঁদের কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে লাগছে না। কেউ পালাতে পারবে না।'

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'এর মধ্যে গোলাম আযমসহ সন্দেহভাজন কয়েকজনের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের ছবিসহ একটি তালিকা সংশ্লিষ্ট সব স্থানে পেঁৗছে দেওয়া হয়েছে। সবার গতিবিধির ওপর মনিটরিং আছে। গোলাম আযমকে গত পাঁচ মাস থেকেই নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। দেশ থেকে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তিনি যুক্তরাজ্য থেকে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই যেতে পারবেন না।'

গতকাল বৃহস্পতিবার গোলাম আযমের মগবাজারের বাসায় বারবার টেলিফোন করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। সকালে তাঁর বাড়ির আশপাশের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গোলাম আযম বেশির ভাগ সময় বাড়িতেই থাকেন। খুব একটা বের হন না। ১০ দিন ধরে এ এলাকায় গণমাধ্যম কর্মীদের আনাগোনা বেড়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। হাফিজ উদ্দিন নামের একজন বলেন, 'ইদানীং গোলাম আযমের বাড়ির সামনে এবং আমাদের এলাকায় অনেক অপরিচিত লোককে দেখা যায়। সবাই ধারণা করছে, তাঁরা বিশেষ কোনো সংস্থার সদস্য হবেন।' তিনি আরো জানান, মতিউর রহমান নিজামীসহ তিন জামায়াত নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে এলাকায় গুজব রয়েছে, গোলাম আযমও গ্রেপ্তার হতে পারেন। তাঁকে মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে দেখা যায়। তবে তাঁকে দেখে এখন বেশ অসুস্থ মনে হয়।

সন্দেহভাজনদের তালিকা : জানা গেছে, নজরদারিতে থাকা ২৫ জন সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে আছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম, জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ, নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সোবহান, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, নায়েবে আমির আব্দুল কাদের মোল্লা, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, সিলেট দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান, এ বি এম খালেক মজুমদার, জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাশেম আলী, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর আমির রফিকুল ইসলাম খান, প্রিন্সিপাল শাহ মোহাম্মদ রুহল কুদ্দুস, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, জামায়াতের চট্টগ্রাম মহানগর আমির মাওলানা শামসুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ বা বাচ্চু রাজাকার, জামায়াতের সাবেক আমির আফতাব উদ্দিন মোল্লা, গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আবু সালেহ মোহাম্মদ আজিজ (ঘোড়া আজিজ)।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠনগুলোর তৎপরতা : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আবারও পথে নেমেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠনগুলো। এসব সংগঠনের পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধের বিচারে ধীরগতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। সংগঠন নেতারা বলেছেন, বিচার নিশ্চিত করতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যুদ্ধাপরাধের বিচার নস্যাৎ করতে অপরাধীরা দেশে ও দেশের বাইরে নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত। সরকারকে আরো কৌশলী হতে হবে।

যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালকে সর্বাত্দক সহযোগিতার জন্য ইতিমধ্যে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করেছে 'ট্রাইব্যুনাল সহায়ক মঞ্চ'। মঞ্চের আহ্বায়ক শাহরিয়ার কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে পারে_এমন তৎপরতা প্রতিরোধে জনমত গঠন ও আইনি সহায়তা পেতে দেশে-বিদেশে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক খ্যাতিমান আইনজীবী যুদ্ধাপরাধের বিচারে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।'

মঞ্চের পক্ষ থেকে গত বুধবার ট্রাইব্যুনালে শীর্ষ ২৫ যুদ্ধাপরাধীর তালিকা ও তাঁদের যুদ্ধাপরাধসহ একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য-উপাত্ত জমা দেওয়া হয়েছে।

শাহরিয়ার কবির বলেন, 'আমরা সাত মন্ত্রণালয়ে ৯ দফা সুপারিশ জমা দিয়েছি। সুষ্ঠু বিচারে সরকারের উচিত ট্রাইব্যুনালে অন্তত ২৫ জন করে তদন্ত কর্মকর্তা ও আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া এবং বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিরাপত্তা বাড়ানো। ট্রাইব্যুনালে একজন উপযুক্ত মুখপাত্র নিয়োগ দিতে হবে। দেশের বিভিন্ন আদালতে দায়ের করা যুদ্ধাপরাধসংক্রান্ত মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারে আনতে হবে সরকারকে।'

দ্রুত বিচার শুরুর দাবি জানিয়েছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম। ফোরাম সভাপতি ও পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার বীর উত্তম বলেন, 'যুদ্ধাপরাধের বিচারে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বা জাতীয় পর্যায়ে কোনো বাধা নেই। কিন্তু অপরাধীরা নানা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই সরকারের উচিত আরো কৌশলী হয়ে বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত না করে দ্রুত সম্পন্ন করা। কারণ বিচারপ্রক্রিয়া পর্যাপ্ত দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে না। এটা আমাদের কাম্য নয়।' তিনি যুদ্ধাপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে আগের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান।

যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। পার্টির সভাপতি মনজুরুল আহসান খান ও সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, জামায়াতের অনেক নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থাকার পরও তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। এ সুযোগে জামায়াত দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে।

5 July 2010

নতুনরূপে লন্ডনের জামায়াতপন্থীরা: বিভ্রান্তিকর প্রচারণা, কাল লোক ভাড়া করে হাইকমিশন ঘেরাও!

লন্ডন সংবাদদাতা

বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করতে লন্ডনের জামায়াত-শিবিরচক্র এখন মরিয়া। গত ২২ জুন 'জাস্টিস কনসার্ন' নামের একটি ভুঁইফোড় সংগঠন গড়ে তারা লন্ডনের লর্ডস হাউসে বিতর্কিত সেমিনারের আয়োজন করেছিল। এর আসল উদ্দেশ্য শেষ মুহূর্তে ফাঁস হয়ে যাওয়ায় উদ্যোগটি ভেস্তে যায়। এবার মাঠে নেমেছে আরেকটি নতুন সংগঠন_'সেইভ বাংলাদেশ'।

জানা গেছে, মতিউর রহমান নিজামীর জামাই ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম ও জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা সমপ্রতি 'সেইভ বাংলাদেশ' গঠন করেন। ২০০৯ সালের ১৯ আগস্ট জামায়াতের এক নেতার নাতি সেইভবিডি ডটকম নামে একটি ডোমেইন নিবন্ধন নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে সেখানে জামায়াতের পক্ষে প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ডোমেইনটি কার নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে, এ-সংক্রান্ত তথ্যও গোপন রাখা হয়েছে। সমপ্রতি এই সাইটকে কেন্দ্র করে শিবিরের সাবেক কর্মীদের দিয়ে 'সেইভ বাংলাদেশ' গঠন করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র মতে, গত ২৯ জুন বাংলাদেশে জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গ্রেপ্তার হওয়ার পর রাতারাতি সংগঠনটি গঠন করা হয়। এরপর সংগঠনের পক্ষ থেকে ২ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজের পর ইস্ট লন্ডন মসজিদসহ যুক্তরাজ্যের সব বড় মসজিদের সামনে জামায়াত নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে উসকানিমূলক বক্তব্যসহ লিফলেট বিলি করা হয়। লিফলেট বিলি করার কাজে সাবেক শিবিরকর্মীদের পাশাপাশি বিএসজিএস নামে জামায়াত মালিকানাধীন একটি কলেজের ছাত্র এবং কর্মচারীদের ব্যবহার করা হয়েছে।

সেইভ বাংলাদেশের নামে প্রচারিত বাংলা ও ইংরেজিতে ছাপা চার রঙা লিফলেটে আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির সমর্থন পাওয়ার আশায় লিফলেটে বিএনপি নেতা তারেক রহমান এবং সমপ্রতি গ্রেপ্তার হওয়া দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিভিন্ন কথা লেখা আছে।
এই লিফলেটের মাধ্যমে 'সেইভ বাংলাদেশ' গ্রেপ্তারকৃত তিন জামায়াত নেতার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামীকাল ৬ জুলাই মঙ্গলবার লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে টেক্সট বার্তা প্রেরণ, গণস্বাক্ষর অভিযান এবং জাতিসংঘসহ বিশ্বের সব মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে স্মারকলিপি পেশ।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল সকাল ১১টায় লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাও করা হবে। জানা গেছে, এই ঘেরাও অনুষ্ঠানে লোকসমাগম ঘটানোর ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। লন্ডনের বাইরের অন্যান্য শহর থেকেও জামায়াতের নেতাকর্মীরা যাতে ঘেরাও অনুষ্ঠানে যোগ দেন, এজন্য সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এর পাশাপাশি গত বছর টায়ার-৪ ভিসার অধীনে পড়তে গিয়ে বিপদে পড়া ছাত্রদেরকেও নানা সুবিধার বিনিময়ে ঘেরাও অনুষ্ঠানে যোগ দিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ঘণ্টাপ্রতি ১০ পাউন্ড প্রদান এবং দুপুরের খাওয়া এবং যাতায়াত খরচের বিনিময়ে অনেক ছাত্রই এই ঘেরাও কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছেন বলে জানা যায়।

নর্থ লন্ডন কলেজের ছাত্র মেহেদি আহমেদ এই প্রতিবেদককে জানান, 'তাঁরা প্রতিঘণ্টায় ১০ পাউন্ড দেবে বলে জানিয়েছে। আমরা অনেকেই এরকম আমন্ত্রণ পেয়েছি। তবে সবাই ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করেছি।' লন্ডন ইস্ট ব্যাংক কলেজের ছাত্র মহিউদ্দিন চৌধুরী রাসেল বলেন, 'জামায়াতের সঙ্গে জড়িত লোকেরা জানিয়েছে, ঘণ্টাপ্রতি ১০ পাউন্ডই শুধু নয়, আগামী দিনেও আন্দোলন এবং জনমত তৈরিতে কাজে লাগলে বিপদে-আপদে তারা আমাদের সাহায্য করবেন। তবে তাঁদের এই আহ্বানে কতজন ছাত্র যাবেন বলা মুশকিল। এই প্রজন্ম রাজাকারদের ঘৃণা করে।'

ব্রিট কলেজের ছাত্র সারওয়ার হোসেনও স্বীকার করেছেন, তাদের কলেজের কিছু ছাত্রকে এরকম প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, 'ছাত্ররা আর্থিক দুর্দশায় আছে। তাই টাকা দিয়ে হয়তো তারা কিছু ছাত্রকে সঙ্গে নিতে পারবে। কিন্তু আমি যাদেরকে চিনি, তাদের অনেকেই বলেছে, না খেয়ে থাকবে, কিন্তু তবুও জামায়াতের সঙ্গে শো-ডাউনে যাবে না।'

অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, এসব কর্মসূচিতে লন্ডন জামায়াতের বড় নেতারা দৃশ্যত সামনে আসবেন না, বরং সাবেক শিবিরকর্মী এবং তরুণ জামায়াত নেতাদের মাধ্যমে বিভিন্ন নামে আরো সংগঠন তৈরি করে তাঁরা ভবিষ্যতে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

3 July 2010

বিশেষ সাক্ষাৎকার: যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের এখনই উপযুক্ত সময়, পিটার কাস্টার্স




তারিখ: ০৪-০৭-২০১০


বুদ্ধিজীবী ও সমাজবদলের কর্মী পিটার কাস্টার্সের জন্ম ১৯৫০ সালে, হল্যান্ডের ছোট্ট শহর রুরমন্সে। ১৯৭৩ থেকে ’৭৬ সাল পর্যন্ত পিপলস ডেইলি, দ্য নিউ আমস্টারডামসসহ হল্যান্ডের প্রধান জাতীয় দৈনিকগুলোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। তেভাগা আন্দোলনে নারী, এশীয় বাজারে পুঁজি ও নারী শ্রম, নারীবাদী তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা-বই লিখেছেন। বাংলাদেশের ফ্ল্যাড অ্যাকশন প্লানের (ফ্যাপ) পরিবেশগত নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে যে দুটি সম্মেলন হয়েছে, তার সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য বর্তমানে ইইউ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থায় বাংলাদেশের পক্ষে ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইফতেখার মাহমুদ

প্রথম আলো  একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী?
পিটার কাস্টার্স  বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে, তার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংহতি জানাতেই আমার বাংলাদেশে আসা। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও এই বিচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের বাংলাদেশি দোসরদের গণহত্যা মানবতার বিরুদ্ধেও একটি বড় অপরাধ। মানবজাতির অংশ হিসেবে আমরা এর বিচার দেখতে চাই। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) সমর্থন আদায়ের বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য জরুরি। কেননা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশ যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশকে চাপ দিতে পারে, যেখানে বাংলাদেশের অনেক শ্রমিক কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্র এই বিচারের পক্ষে কোনো অবস্থান নেবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ফলে এই বিচারকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করতে হলে বাংলাদেশকে ইইউর সমর্থন পেতে হবে। ইইউ সমর্থন দিলে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমর্থন আদায় সহজ হবে। এ ক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতা থাকলেও কূটনৈতিক পর্যায়ে চেষ্টা করলেও তা কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব নয়।

প্রথম আলো  বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে অনেকে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উদ্যোগ হিসেবে মনে করে।
পিটার কাস্টার্স  একাত্তর সালে যেসব রাজনৈতিক দল যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী প্রধান। তারাই গণহত্যাকারীদের সংগঠন আলবদর ও আলশামস গঠন করেছিল। রাজনৈতিকভাবে জামায়াত সব সময়ই ফ্যাসিবাদী শাসনের সমর্থক ছিল। পাকিস্তানের সামরিক শাসন, আশির দশকে এরশাদের স্বৈরশাসনেরও সমর্থক ছিল জামায়াত। জামায়াতের রাজনৈতিক আদর্শ হচ্ছে ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে মানুষের মনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা। স্বাধীনতার বিরোধিতা করা এই দলটি স্বাধীন বাংলাদেশে বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। তাদের যে আর্থিক ও সাংগঠনিক শক্তি রয়েছে, তা অন্য যেকোনো দলের চেয়ে ভালো। মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ ঠেকাতে হলে জামায়াতে ইসলামীকে আগে ঠেকাতে হবে।

প্রথম আলো  জামায়াত তো গণতান্ত্রিক শাসনামলে রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার হয়েছে। দেশের অন্যতম প্রধান দলও তারা।
পিটার কাস্টার্স  জামায়াতের মতো একটি ফ্যাসিবাদী দলের সঙ্গে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর ঐক্য করা উচিত হয়নি। কেননা তারা যখনই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার হয়েছে, তখনই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। এসবের পক্ষে তারা সব সময়ই যুক্তি দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে সাধারণ মানুষের ওপর জেএমবির নেতা সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাইয়ের নির্যাতন শুরু হলে তা সরকার থেকে প্রথমে অস্বীকার করা হয়। কিন্তু পরে বাংলা ভাইয়ের উত্থানের পেছনে জামায়াতের ভূমিকা জানা গেছে। সবগুলো মৌলবাদী দল ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জামায়াতের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে।

প্রথম আলো  জামায়াতকে ফ্যাসিবাদী দল বলছেন কেন?
পিটার কাস্টার্স  ইউরোপের ফ্যাসিবাদী দলগুলোর সঙ্গে জামায়াতের আচরণের মিল রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাজিরা পরিকল্পিতভাবে পুরো একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী ও জাতিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। এটাই ফ্যাসিবাদের মূল বৈশিষ্ট্য। যুদ্ধ বা সংঘাতের সময় মানুষের মৃত্যু আর ফ্যাসিবাদী গণহত্যার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। যেমন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাজিরা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পরিকল্পিতভাবে মানুষ হত্যা করত। একাত্তরের গণহত্যা, নিরীহ মানুষের বাড়িতে আগুন লাগানো, আলবদর ও আলশামস বাহিনী তৈরি করে তাদের মাধ্যমে বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যার পেছনে জামায়াত ছিল। ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা হয়েছে তখনো অনেক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছিল তারা। এরশাদের সামরিক শাসনের সুযোগে তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সন্ত্রাস ও নির্যাতনের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তাদের এসব কর্মকাণ্ড খুব পরিকল্পিতভাবে করেছিল। গণহত্যা ও নির্যাতন করে তারা সব সময়ই যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছে। পরবর্তী সময়ে আবার তা অস্বীকারও করেছে। এই আচরণের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের মিল রয়েছে। হল্যান্ডসহ ইউরোপের বহু দেশে এ ধরনের ফ্যাসিবাদী দল রয়েছে।

প্রথম আলো  আওয়ামী লীগ ও বিএনপিও তো একে অপরের প্রতি অসহিষ্ণু আচরণ করে। সরকার সব সময় বিরোধী দলের ছাত্র, শ্রমিকসহ সব সংগঠনের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করে থাকে।
পিটার কাস্টার্স  বিরোধী দলের ওপর হামলা ও নির্যাতনকে আমি বলব অগণতান্ত্রিক আচরণ। জনমত, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের চাপে তারা অনেক সময় এ ধরনের অসহিষ্ণু আচরণ থেকে সরে আসে। আলোচনার মাধ্যমেও অগণতান্ত্রিক আচরণ থেকে তাদের সরিয়ে আনা যায়। তবে এ কথাও বলব, তাদের চিন্তার কাঠামো এত কঠিন যে তারা কখনো নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসে না। যুক্তি-তর্ক ও চাপ দিয়েও কোনো কাজ হয় না। নিজেদের মতাদর্শ ছাড়া বাকি সবাইকে তারা ভুল হিসেবে চিহ্নিত করে। এটি গণতন্ত্রের সহায়ক নয়।

প্রথম আলো  যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সঙ্গে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে মোকাবিলা করার প্রসঙ্গটি যুক্ত করতে গেলে জটিলতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে কি না?
পিটার কাস্টার্স  এই দুটি বিষয়কে অবশ্যই একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি, ফ্যাসিবাদী শক্তির সঙ্গে আলোচনা না করে তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত। তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি উচ্ছেদ এবং রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক শক্তির উন্মেষ ঘটানোও জরুরি। গণতান্ত্রিক দলগুলো যদি নিয়মিতভাবে অগণতান্ত্রিক আচরণ শুরু করে, তাহলে ফ্যাসিবাদী শক্তি বিকশিত হয়। আমার সঙ্গে আপনার মতের পার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু তাকে ভুল হিসেবে প্রমাণ করে দমন করার চেষ্টা করা ঠিক নয়।

প্রথম আলো  আন্তর্জাতিকভাবে তো জামায়াত যথেষ্ট শক্তিশালী।
পিটার কাস্টার্স  বাংলাদেশের ভেতরে আর্থিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেই জামায়াত ক্ষান্ত হয়নি, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা প্রভাব ও যোগাযোগ গড়ে তুলেছে। লন্ডনে তাদের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত যুদ্ধাপরাধের বিপক্ষে সেমিনার করছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা যখন আক্রমণের শিকার হয়, তখন তারা পুরোনো মতাদর্শ ও বিশ্বাসকে আগলে ধরে রাখতে চায়। লন্ডনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এ কারণে ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ছে। জামায়াত লন্ডনে মসজিদ স্থাপন করে সেখান থেকে তহবিল সংগ্রহ করছে। লেবার পার্টিসহ সেখানকার প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোতে জামায়াতের লোক ঢুকে পড়েছে। ইতালিতেও বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে। জামায়াত সেখানেও তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তারের চেষ্টা করবে। যেসব প্রবাসী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান তাঁদের এবং মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতিশীল মানুষকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। বাংলাদেশ সরকারেরও উচিত প্রবাসীদের কাজে লাগিয়ে ইউরোপে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা, সেখানকার সরকারগুলোর ওপর প্রভাব সৃষ্টিকারী সংগঠন ও সংস্থাগুলোর কাছে বিষয়টি তুলে ধরা।

প্রথম আলো  বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কতটুকু সফল হবে বলে মনে করেন?
পিটার কাস্টার্স  বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে প্রভাবশালীরা এ ব্যাপারে আন্তরিক। সরকারের বাইরে বুদ্ধিজীবীরাও সরকারকে এ ব্যাপারে জনমত তৈরি ও আইনি সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে সম্প্রতি ঢাকায় যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়ে গেল, তাতে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য হেলমুট কোল ও সুইডেনের পার্লামেন্ট সদস্য সেসিলিয়া উইকস্ট্রম এসেছিলেন। দুজনই ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তাঁরা বাংলাদেশকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব বুদ্ধিজীবী এসেছিলেন, তাঁরা আন্তর্জাতিক পরিসরে যথেষ্ট প্রভাবশালী। তাঁরা যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে জনমত তৈরি করবেন বলে বাংলাদেশ সরকারকে আশ্বাস দিয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিকভাবে বর্জন করেছে বলে মনে হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি যথেষ্ট অনুকূলে রয়েছে। সরকার আন্তরিকভাবে এগিয়ে গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব। তবে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে আর্ন্তজাতিক ভাবে গ্রহনযোগ্য করতে হলে সাবধানে এগুতে হবে। কেননা এ নিয়ে বেশ কিছু জটিলতাও রয়েছে।

প্রথম আলো  কী ধরনের জটিলতা?
পিটার কাস্টার্স  মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে ইইউর কঠোর অবস্থান। নতুন কোনো দেশ ইইউর সদস্য হতে চাইলে তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন করে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করার শর্ত দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকারের প্রশ্নে তারা মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে তা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করা কঠিন হবে। ফলে বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে অনেক সতর্কভাবে এগোতে হবে।

প্রথম আলো  এ ব্যাপারে আপনার অবস্থান কী?
পিটার কাস্টার্স  আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যুদ্ধাপরাধের বিচারে কারও মৃত্যুদণ্ড হলে সেটি ঐতিহাসিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। কেননা যুদ্ধাপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধ। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে গণহত্যার পুনরাবৃত্তি হতে পারে।

প্রথম আলো  ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সমর্থন পেতে বাংলাদেশ কী করতে পারে?
পিটার কাস্টার্স  ইউরোপীয় পার্লামেন্ট একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে দুবার রেজুলেশন নিয়ে নীতিগত অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তার কোনো ফলোআপ হয়নি। বাংলাদেশের সুযোগ রয়েছে ইইউকে এই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া। ইইউর কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে নীতিগত অবস্থান ঘোষণা করার দাবি তুলতে হবে। ইইউ মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তাদের বোঝাতে হবে এটি সাধারণ অপরাধ নয়। গুরুতর অপরাধ। এই বিষয়টিতে যদি তাদের আপত্তিও থেকে থাকে তাহলে আলোচনার মাধ্যমে বাকি বিষয়ে সমর্থন আদায় সম্ভব করা যাবে বলে আমার ধারণা।

প্রথম আলো  আপনাকে ধন্যবাদ।
পিটার কাস্টার্স  ধন্যবাদ।

1 July 2010

সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশিদের কাছে জামায়াতের নালিশ

ওয়াসেক বিল্লাহ্ | তারিখ: ০২-০৭-২০১০


জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় তিন নেতার গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের কাছে নালিশ করছে দলটি। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বিক্ষোভ করেছেন জামায়াতের প্রবাসী নেতা-কর্মীরা। জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনেও বিক্ষোভ করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অভিযোগ আনছেন।

দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের গ্রেপ্তারের বিষয়টিকে দলটির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান হিসেবে দেখছে জামায়াত। তাঁদের গ্রেপ্তারের পর দলের জ্যেষ্ঠ নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, এ টি এম আজহারুল ইসলাম, তাসনীম আলমসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলার পর জামায়াতের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্কও বিরাজ করছে।

পাশাপাশি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে তাঁর সহযোগিতা চেয়েছেন জামায়াতের নেতা কামারুজ্জামান ও কর্মপরিষদের সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ্ মোহাম্মদ তাহের।

খালেদা জিয়া কী বলেছেন জানতে চাইলে আবদুল্লাহ্ মোহাম্মদ তাদের বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) বিস্ময় ও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে কী করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ করে জানাবেন বলে আমাদের বলেছেন।’

বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ: আবদুল্লাহ্ মোহাম্মদ তাহের প্রথম আলোকে বলেন, ‘জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনায় দেশের ভেতরে-বাইরের মানুষ উদ্বিগ্ন। আমরা এর প্রতিবাদে দেশে মিছিলও করতে পারছি না। মিছিল শুরু করলেই পুলিশ এসে তাড়া করে। এ অবস্থায় আমরা বা আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুবান্ধব যারা আছি, তারা বিদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।’

জামায়াতের নেতারা বিদেশিদের কী বলছেন জানতে চাইলে তাহের বলেন, ‘আমাদের ওপর নির্যাতন চলছে, হয়রানিমূলক মামলা দিচ্ছে, পুলিশ নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে—আমরা তাঁদের এ কথাগুলো জানানোর চেষ্টা করছি।’

দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ও বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগকারী জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকেই আমাদের কাছ থেকে খোঁজ-খবর নিচ্ছে, জানতে চাইছে। আমাদের নেতাদের কী কারণে ধরা হয়েছে, তাঁদের কোথায় রাখা হয়েছে—এসব বিষয়ে দূতাবাসগুলো খোঁজ-খবর নিচ্ছে। ঢাকার জাতিসংঘ কার্যালয় থেকেও আমাকে টেলিফোন করা হয়েছে, খোঁজ নিয়েছে।’

বিদেশে প্রতিবাদ: মুহাম্মদ কামারুজ্জামান জানান, গত বুধবার ইংল্যান্ডে বাংলাদেশি দূতাবাসের সামনে অবস্থান করে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্ক শহরেও প্রতিবাদ করা হয়েছে। জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনেও প্রতিবাদ জানানোর প্রস্তুতি চলছে।

কারা এসব কর্মসূচি পালন করছে জানতে চাইলে কামারুজ্জামান বলেন, ‘প্রবাসী যারা আছে, তাদের মধ্যে যারা আমাদের ভালোবাসে তারাই এসব করছে।’

আবদুল্লাহ্ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘যেসব দেশে প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালন করা যায়, সেসব দেশে আমরা কর্মসূচি পালন করব। এর বাইরেও নানা দেশে ঘরোয়া পর্যায়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সৌদি আরবেও আমাদের কাজ চলছে।’

দেশে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা: গতকাল জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা দলীয় কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠকে দেশে যথাসম্ভব কর্মসূচি পালন করার কথা বলেন নেতারা। একজন নেতা বলেন, দেশের ভেতরে আন্দোলন না হলে বিদেশে আন্দোলন দিয়ে কিছু হবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার পরিকল্পিতভাবে জামায়াতকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে। সরকার আমাদের ওপর সর্বাত্মক অভিযান শুরু করেছে। পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে। তবে জামায়াত গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করে যাবে। সরকারকে কোনো রকম সুযোগ দেওয়া হবে না।’

মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের লোকদের চরম ধৈর্য ধারণ করতে বলেছি। সরকার বাড়াবাড়ি করুক, আমাদের তরফ থেকে যেন কোনোরূপ সুযোগ তৈরি করে দেওয়া না হয়, সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখতে কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

30 June 2010

যুদ্ধাপরাধ-মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার - জামায়াতের লন্ডন ষড়যন্ত্র সরকারের চুপ থাকার রহস্য কী?

ফজলুল বারী
সিডনি থেকে

গোলাম আযম পালিয়ে যাবেন বিলাতে! বা যাবেন বৈধ পথে! ওখানে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবেন! তিনি পালিয়ে গেলে, সরকার আর যুদ্ধাপরাধ-মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার-বিচারের সম্মুখীন করতে পারবে না! লন্ডন নকশার পুরো বিষয়টি এখন মোটামুটি প্রকাশিত। কিন্তু সরকার বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত চুপ। লন্ডনে হাউস অব কমন্সে যুদ্ধাপরাধ আইনকে চ্যালেঞ্জ করে সেমিনারের আয়োজন করেছে জামায়াতের ছায়া সংগঠন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেওয়া আত্দস্বীকৃত যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মইনুদ্দিন আছেন এর নেপথ্যে। জাস্টিস কনসার্ন নামের একটি জামায়াতী ছদ্মবেশী সংগঠন, ইউরো বাংলা নামের একটি জামায়াতী পত্রিকাও নেপথ্যে থেকে সেমিনারের কাজকর্ম করে যাচ্ছে। এ বিষয় নিয়েও রহস্যজনকভাবে মুখে কলুপ এঁটে বসে আছে সরকার। পুরো বিষয়টি অনেকের কাছেই মনে হচ্ছে বিশেষ তালগোলে।

জনগণের কাছে পরিচিত চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের কুলশিরোমণি গোলাম আযম। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে পাকিস্তানের পক্ষে রাজাকার-আলবদরদের নিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রধান নেতা ছিলেন। তাঁর জামায়াত নামের দল, ইসলামী ছাত্রসংঘ নামের ছাত্র সংগঠন দেশের ভেতরে লাখ লাখ নিরীহ মানুষ খুন-জেনোসাইড, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ, রাহাজানির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় টের পেয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যান গোলাম আযম। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার আগ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশে ঘুরে তদ্বির চালিয়েছেন, যাতে দেশগুলো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেয়। যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্রদ্রোহী এমন একজন ব্যক্তি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর দেশে ফিরে আসেন। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব না থাকলেও তাঁকে আর পাকিস্তান ফিরে যেতে হয়নি। এরপর বাংলাদেশের আদালতকে ব্যবহার করে তাঁর নাগরিকত্বের ব্যবস্থা করা হয়েছে। '৯০-এর স্বৈরাচার এরশাদের পতন-পরবর্তী সময়ে ডামাডোলের ভেতর নিজেকে ঘোষণা করেন জামায়াতের আমির। যে দেশ তিনি চাননি, সেই দেশের রাজনীতিতেই ফিরে আসেন আনুষ্ঠানিকভাবে।

কিন্তু এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নয়, প্রথম প্রতিবাদ করেন মুক্তিযুদ্ধের শহীদ রুমির মা। লেখিকা, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের মধ্যে নতুন ঘৃণা প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে দেন। তাঁর আন্দোলনে নতুন স্বপ্ন দেখায় মুক্তিযোদ্ধাদের। নতুন প্রজন্মকে চিনতে শেখায় যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম, তাঁর দোসরদের। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গোলাম আযমসহ চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী বিচারে ফাঁসির রায় দেয় শহীদ জননীর নেতৃত্বাধীন গণ-আদালত। এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার। গণ-আদালতের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেয় শহীদ জননীসহ ২৪ বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে। খালেদা জিয়ার দেওয়া সেই রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ মাথায় নিয়ে মরতে হয়েছে ক্যান্সার আক্রান্ত শহীদ জননীকে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আজকের বিশেষ ট্রাইব্যুনালসহ সব সরকারি আয়োজন তাঁর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনের ফসল।

সরকার আসলে কী চায়
সরকারের পক্ষ হতে বারবার বলা হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতেই হবে। কোনো শক্তি এ বিচার ঠেকাতে বা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে পারবে না। এখন হাতের মুঠোয় থাকা গোলাম আযমই যদি না থাকে তাহলে কী বিচারের পুরো আয়োজনটিই হাস্যকর-প্রশ্নবিদ্ধ হবে না? প্রশ্নটি মুখে মুখে সবার। চলতি পরিস্থিতির পেছনে সরকারের দায়দায়িত্বই বা কী? গোলাম আযমের পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল না। সরকার যেখানে তাঁর বিচারের কথা বলছে, সেখানে প্রশাসনের কারা কিভাবে উদ্যোগী হয়ে তাঁর পাসপোর্টটি নবায়ন করে দিয়েছে? ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশন প্রথম প্রত্যাখ্যান করে গোলাম আযমের ভিসার আবেদন। তাঁর লন্ডনপ্রবাসী ছেলেরা সেখানে আপিলে জিতে ব্যবস্থা করে ভিসার। যতটা জানা যায়, ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনের পক্ষে এ ব্যাপারে সরকারি পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। জানতে চাওয়া হয়েছিল যুদ্ধাপরাধী, যাদের বিচারের কথা চলছে তাদের কোনো তালিকা আছে কি না।

পররাষ্ট্র দপ্তরের তরফে তাদের কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি। এ কারণে খুব স্বাভাবিকভাবে লন্ডনের আপিলে বলা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ সরকারই কিছু বলছে না, সেখানে কেন ভিসা দেবে না ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশন? এর আগে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে গিয়েছিলেন জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী। এ নিয়ে মিডিয়ায় হৈচৈ হলে সরকারের তরফে বলা হয়, সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীদের তালিকাটি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে পেঁৗছতে দেরি হওয়ায় ঘটনাটি ঘটেছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে আদৌ কী তৈরি করা হয়েছে এমন কোনো তালিকা? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন কোনো তালিকা করে থাকলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘুরে তা ঢাকার দূতাবাসগুলোতে পেঁৗছাতে বাধা কোথায়? সরকারের কিছু বাকবাকুম মন্ত্রী নানা ইস্যুতে কারণে-অকারণে বিস্তর কথা বলেন। এসব কথাবার্তায় মাঝেমধ্যেই থাকে সমন্বয়ের অভাব। যেমন_এক প্রতিমন্ত্রী এর মধ্যে বলেছেন, সন্দেহজনক যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় নাম নেই মীর কাশেম আলীর। ভিত্তি কি এ ধরনের কথাবার্তার? মীর কাশিম আলীর একাত্তরের ভূমিকা কি জানে না দেশের মানুষ?

ফাঁস লন্ডন ষড়যন্ত্র!
লন্ডনে বাংলাদেশের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হাইকমিশন আছে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচারকে চ্যালেঞ্জ, প্রশ্নবিদ্ধ করতে জামায়াত যে হাউস অব কমন্সের মতো জায়গায় গোপনে একটি সেমিনার আয়োজনের কাজ এগিয়ে নিয়েছে_সেটি প্রকাশ-ফাঁস করেছেন ডেভিড বার্গম্যানের মতো একজন সাংবাদিক। বিডিনিউজের মাধ্যমে প্রকাশিত ডেভিডের রিপোর্টে আবার প্রমাণ আছে, লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন সেমিনারটির কথা জানে। বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে সেমিনারে দাওয়াত করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির সফর নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন বলে তিনি সেখানে যেতে রাজি হননি। হাইকমিশনার কী যথাসময়ে বিষয়টি সরকারকে জানিয়েছেন? জানানোরই কথা। মানুষের ঘাড়ে তো মাথা একটাই থাকে। কিন্তু সরকার কেন বিষয়টি গোপন রাখতে অথবা চেপে যেতে চেয়েছে? এ বিষয়টির খোলাসা হওয়া দরকার।

ডেভিড বার্গম্যানের রিপোর্টে প্রকাশ পেয়ে গেছে, কথিত সেমিনার নিয়ে জামায়াতের ছদ্মবেশী সংগঠন জাস্টিস কনসার্নের লুকোচুরির বৃত্তান্ত। নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় আনুগত্য গোপন করে হাউস অব কমন্সের বেশ কিছু সদস্যকে তারা বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে। ডেভিড যখন কনসার্নের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তখন তারা আমতা আমতা করেছে। তারা দিয়েছে 'চিনি না', 'জানি না', 'আমি না', জাতীয় উত্তর। একাত্তরে পালিয়ে যাওয়া যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মইনুদ্দিন ছাড়াও গত কয়েক বছরে লন্ডনে জামায়াত-শিবিরের বিশেষ একটি সংঘবদ্ধ অবস্থান গড়ে উঠেছে। গোলাম আযমের যেমন চার ছেলে সেখানে থাকেন, তেমনি মতিউর রহমান নিজামীসহ অনেক জামায়াতী নেতাও সাংগঠনিক-অর্থনৈতিক ভিত্তির মতো সেখানে গড়ে তুলেছেন আশ্রয় নেওয়ার পর পারিবারিক সম্পর্ক। লন্ডনভিত্তিক প্রবাসী বাঙালিদের অর্থায়নে যে বেসরকারি বিমান সংস্থা কাজ শুরু করেছে ঢাকায়, সেটির সঙ্গেও জামায়াতের লোকজন সক্রিয়ভাবে জড়িত। সেখানকার প্রবাসী বাঙালি মিডিয়া সাংবাদিকদের মধ্যেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আছেন, যাঁরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে। ডেভিডের রিপোর্টে শুধু এসেছে এক ইউরো বাংলা পত্রিকার কথা।

সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর এক রকম গর্তে ঢুকে গিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। যুদ্ধাপরাধের বিচারে পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাসসহ নানা প্রস্তুতির সঙ্গে নীরবে চলতে থাকে তাদের আত্দরক্ষার ক্রিয়াকৌশল। কিন্তু পুরো বিষয়টি নিয়ে সরকারের প্রশ্নবিদ্ধ ধীরে চল নীতি এর মধ্যে তাদের আবার মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। তাদের রক্ষার আনুষ্ঠানিক দায়দায়িত্বও নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে সক্রিয় মাঠে ছিল জামায়াত। ২৭ জুনের হরতালও তাদের রাজধানীসহ সারা দেশে রাজনৈতিক পুনর্বাসনের নতুন সুযোগ করে দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সর্বশেষ বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রধান বাধা বিএনপি। কিন্তু কোনো শক্তিই বিচার আটকাতে পারবে না_এমন ঘোষণার পরও এ নিয়ে সরকারি কর্মকাণ্ডে সৃষ্ট সংশয় কাটছে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন করে আসছিল শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সংগঠন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। গত নির্বাচনের আগে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের ভূমিকাটিও ছিল বিশেষ সরব-সক্রিয়। কিন্তু এ সংগঠনগুলো কেন এখন পুরো বিষয়টি নিয়ে আশ্চর্য নীরব? যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে তহবিল সংগ্রহ, আন্তর্জাতিক মতামত গঠনসহ জামায়াতের নানা প্রস্তুতির খবর আগেই জানা যাচ্ছিল। লন্ডনের সেমিনার ষড়যন্ত্রটি ছিল তাদের প্রস্তুতির বড় একটি ধাপ। ডেভিডের রিপোর্টে অসৎ উদ্দেশ্যটি প্রকাশ-ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর বিলাতপ্রবাসী সচেতন মানুষ তা প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছেন। পুরো বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারি নীরবতার কারণ সরকারকেই বলতে হবে।

প্রথম আলোর লন্ডন প্রতিনিধিকে হুমকি

প্রথম আলো ডেস্ক | তারিখ: ৩০-০৬-২০১০


লন্ডনে যুদ্ধাপরাধীদের মানবাধিকার সম্মেলন নিয়ে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন ছাপা হওয়ায় প্রথম আলোর লন্ডন প্রতিনিধি তানভীর আহমেদকে টেলিফোনে হুমকি দিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধীরা।

২৫ জুন প্রথম আলোর শেষের পাতায় ‘জামায়াতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বর্জন’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার পর লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইউরো বাংলার নির্বাহী সম্পাদক ও শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কামাল শিকদার টেলিফোনে প্রথম আলোর লন্ডন প্রতিনিধির কাছে ওই প্রতিবেদন লেখার কারণ জানতে চান ও মামলা করার হুমকি দেন।

অভিযোগ থাকলে তানভীর আহমেদ তা লিখিতভাবে কামাল শিকদারকে জানাতে বলেন। জবাবে কামাল শিকদার হুমকি দিয়ে বলেন, অতীতে গার্ডিয়ান ও বিবিসিকেও প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য ক্ষমা চেয়ে সংশোধনী দিতে হয়েছে। প্রথম আলোকেও ক্ষমা চাইতে হবে। এরপর অজ্ঞাত নম্বর থেকে নাম-পরিচয় গোপন করে প্রথম আলোর লন্ডন প্রতিনিধিকে টেলিফোনে কে বা কারা একাধিকবার হুমকি দেয় এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। তানভীর আহমেদ বিষয়টি স্থানীয় পুলিশকে অবহিত করেন।

24 June 2010

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার: বিদেশে প্রচারণায় নেমেছে জামায়াত, সরকার সতর্ক



শ্যামল সরকার | তারিখ: ২৫-০৬-২০১০


একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে জামায়াতে ইসলামী বহির্বিশ্বে নানামুখী তর‌্যাপরতা শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছে সরকার।

প্রাথমিকভাবে তারা ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ত্রুটিপূর্ণ এবং এ আইনে বিচার হলে ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার রক্ষা হবে না বলে প্রচারণা চালাচ্ছে।

এ অবস্থায় সরকার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী কামাল হোসেন, আমীর-উল ইসলাম ও রোকনউদ্দিন মাহমুদের সহায়তা নিচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিষয়ে সরকারকে এখন বাড়তি সতর্কতা নিতে হচ্ছে।

আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, সম্প্রতি আইন কমিশনের কার্যালয়ে কামাল হোসেন, আমীর-উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদসহ তাঁরা আইনটির চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। সবাই একমত হয়েছেন, সংশোধন করার পর আইনে এখন কোনো ত্রুটি নেই। এতে মানবাধিকার সুরক্ষাসহ ন্যায়বিচারের সব সুযোগ রয়েছে বলে তাঁরা অভিমত দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধের বিচারে এসব বিশিষ্ট আইনজীবী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতেও রাজি আছেন বলে জানান আইনমন্ত্রী।

যোগাযোগ করা হলে কামাল হোসেন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন। ১৯৭৩ সালের আইনের দক্ষ ও নিরপেক্ষ প্রয়োগের বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন। অপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে যাতে পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার না ঘটে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতেও তিনি ওই বৈঠকে অভিমত দেন।
সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্র জানায়, জামায়াতের সহযোগিতায় গত ২৩ জুন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে একটি সেমিনার হয়। যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ অন হিউম্যান রাইটসের (এপিজিএইচআর) নামে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ওই সেমিনারের উদ্দেশ্য নিয়ে খোদ যুক্তরাজ্যেই এখন বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। বেরিয়ে এসেছে এই সেমিনারের অন্যতম উদ্যোক্তা ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা কামাল সিকদার ও চৌধুরী মঈনউদ্দিন। মঈনউদ্দিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তিনি যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ ইসলামি ফোরাম অব ইউরোপের প্রতিষ্ঠাতা।

সূত্র জানায়, এসব উদ্যোগের পেছনে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে গঠিত প্যানেলের প্রধান আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক সক্রিয় রয়েছেন। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। আবদুর রাজ্জাকের আইন পেশার কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে গত রাতে জানানো হয়, গত ২০ জুন তিনি আমেরিকা গেছেন এবং ৪ জুলাই তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

সরকারি সূত্র স্বীকারও করেছে, এ অবস্থায় যুক্তরাজ্যসহ মধ্যপ্রাচ্যসহ পশ্চিমা দেশ ও মুসলিম দেশসমূহে সরকারের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরতে পক্ষে রোকনউদ্দিন মাহমুদ এবং আমীর-উল ইসলামকে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা এখন যুক্তরাজ্যে আছেন। সেসব দেশে তাঁরা কী বক্তব্য দেবেন, তা ঠিক করার কাজে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, কামাল হোসেন, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, আমীর-উল ইসলাম ও ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন যুক্ত ছিলেন।

জানা যায়, সরকারের এই বক্তব্য প্রচারে বিদেশে সব বাংলাদেশি হাইকমিশন এবং দূতাবাসকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সব হাইকমিশন ও দূতাবাসকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতে ইসলামী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার করাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে প্রচারণা চালাচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তারা মূলত ১৯৭৩ সালের আইনটি ত্রুটিপূর্ণ বলে প্রচার করছে। সরকারও প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন, সরকার এখন আইনের ব্যাখ্যাসহ বিভিন্ন তথ্যচিত্র ও বক্তব্য প্রচারের কার্যক্রম চালাচ্ছে। বিশিষ্ট আইনজীবীদের এ কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক: এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত তদন্ত সংস্থা, আইনজীবী প্যানেলের সদস্যদের নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে। আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ এতে সভাপতিত্ব করেন। আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আইন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আনোয়ারুল হকসহ তদন্ত সংস্থা ও আইনজীবী প্যানেলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এখন থেকে আইন প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখবে। তিনি প্রয়োজনীয় বিষয়ে কমিটির কাছে সুপারিশ করে তা সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।

আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিচারের পথে অনেক অগ্রগতি হলেও তা তদন্তের স্বার্থে বলা যাবে না। তদন্ত সংস্থা, আইনজীবী প্যানেল ও বিচারকদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা, জনবল ও সরঞ্জাম দ্রুত সরবরাহ করা হবে বলেও জানান তিনি। আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, দেরি হলেও এ সরকারের মেয়াদেই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবে। সরকার সবকিছু স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় শেষ করতে চায়।

জামায়াতের সম্পৃক্ততায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যুদ্ধাপরাধ সেমিনার আয়োজন!

কালের কণ্ঠ ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার-বিষয়ক একটি পার্লামেন্টারি কমিটি স্বীকার করেছে, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে এমন একটি গ্রুপের সহায়তায় তারা বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়ে হাউস অব লর্ডসে একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত ও তার তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

ওই সেমিনারে আন্তর্জাতিক আইনি মানদণ্ডের সঙ্গে ১৯৭৩-এর আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন সংগতিপূর্ণ কি না, তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। এর আয়োজক লর্ড অ্যাভেবারি। সেমিনারে বক্তব্য দেবেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের বক্তারা। তবে কবে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হবে সে কথা জানায়নি বিডিনিউজ।

গত মার্চে ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের ওয়ার ক্রাইমস কমিটি ১৯৭৩-এর আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আইনি মতামত পাঠায়। তাদের মতে, এটি করা হলে যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক আইনের মানদণ্ড অনুযায়ী হবে।

তাদের এই সুপারিশে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইতিপূর্বেকার উদ্বেগেরই প্রতিফলন ঘটেছে। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে মানবাধিকার সংস্থাটি এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাদের এই উদ্বেগের কথা জানিয়েছিল।

বাংলাদেশ সরকার বরাবর বলে আসছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হবে। কিন্তু কিভাবে তা নিশ্চিত করা হবে সে ব্যাপারে সরকার এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।

পার্লামেন্টারি হিউম্যান রাইটস গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান লর্ড অ্যাভেবারি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারবিষয়ক সেমিনারের আমন্ত্রণপত্র আমার নামে সবার কাছে পাঠানো হলেও এ ব্যাপারে করণিক সহায়তা দিয়েছে 'জাস্টিস কনসার্ন' নামের একটি সংগঠন। তারা চিঠির উত্তরও রেকর্ড করেছে, যাতে কারা সেমিনারে উপস্থিত থাকবেন, বক্তব্য দেবেন তাঁদের তালিকা আমাদের কাছে থাকে।'

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, মাত্র দুই মাস আগে 'জাস্টিস কনসার্ন' আত্দপ্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইংল্যান্ডে এর অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে সংগঠনটির সম্পৃক্ততা রয়েছে।
জাস্টিস কনসার্নের ওয়েবসাইটটি নিবন্ধিত হয়েছে জনৈক এম কে এ শিকদারের নামে। তিনি কামাল শিকদার নামেও পরিচিত। কামাল শিকদার যুক্তরাজ্যভিত্তিক জামায়াতপন্থী সাময়িকী 'ইউরো বাংলা'র নির্বাহী পরিচালক।

যুক্তরাজ্যপ্রবাসী কামাল শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে স্বীকার করেছেন, ১০ বছর আগে ছাত্রাবস্থায় তিনি জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। তবে তিনি নিজের নামে 'জাস্টিস কনসার্ন'-এর ওয়েবসাইট নিবন্ধন করানোর কথা অস্বীকার করে বলেন, কামাল শিকদার খুবই প্রচলিত একটি নাম। এটা যে কারোর নাম হতে পারে।

ওয়েবসাইট নিবন্ধনের নথিপত্রে দেওয়া ই-মেইল ঠিকানাটি তাঁর_এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'জাস্টিস কনসার্ন আমার নাম ব্যবহার করেছে কি না, সেটা তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে।' তিনি ওই সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে বলেন, 'জাস্টিস কনসার্ন সম্পর্কে শুধু এটুকুই জানি যে, আমি একটি অনুষ্ঠানে যোগদানের আমন্ত্রণপত্র পেয়েছি।'

জাস্টিস কনসার্নের চেয়ারপারসন ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া ফুয়াদ। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তাঁরও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তিনি লন্ডনের ইস্ট এন্ডে সুপরিচিত 'বাংলাদেশ ফোরাম ইউরোপ'-এরও নির্বাহী সমন্বয়কারী। 'ইসলামিক ফোরাম ইউরোপ'-এর মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জাস্টিস কনসার্নের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এর ওয়েবসাইটে একটি সেমিনারে অতিথি বক্তা হিসেবে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ছবি রয়েছে।

ইসলামিক ফোরাম ইউরোপের প্রতিষ্ঠাতা যুক্তরাজ্যপ্রবাসী চৌধুরী মঈনউদ্দীন। ১৫ বছর আগে ব্রিটেনের চ্যানেল ফোর টেলিভিশনে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে বাংলাদেশে ১৯৭১-এর ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডে মঈনউদ্দীনের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য ছিলেন। মঈনউদ্দীন অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জাস্টিস কনসার্নের চেয়ারপারসন আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া বিডিনিউজকে জানান, প্রাথমিকভাবে লর্ড অ্যাভেবারি সম্মত হন যে, সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি কমিটি এবং জাস্টিস কনসার্ন যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করবে। তবে সেমিনারের আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর ব্যাপারে লর্ড অ্যাভেবারির বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা কোনো আমন্ত্রণপত্র পাঠাইনি। এমনকি আমি জানি না, কারা এই সেমিনারে উপস্থিত থাকছে।'

জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জাস্টিস কনসার্ন বা বাংলাদেশ ফোরাম ইউরোপের সংশ্লিষ্টতার কথাও অস্বীকার করেন তিনি। জাস্টিস কনসার্নের ওয়েবসাইট নিবন্ধনকারী কামাল শিকদারকেও তিনি চেনেন না বলে জানান। তবে কামাল শিকদার বলেছেন, তাঁরা পরস্পরের পরিচিত।

সেমিনার আয়োজনের ব্যাপারে লর্ড অ্যাভেবারি বলেন, 'জামায়াতের সঙ্গে জাস্টিস কনসার্নের কথিত সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমাকে জানানো হয়েছে, এই কারণে কিছু সংগঠন সেমিনারে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।'

এই সেমিনার আয়োজনে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠন জড়িত থাকায় যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিতের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনজীবীদের উদ্বেগকে বাংলাদেশ সরকার আমলে নেবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে কাজ করছেন এমন নিরপেক্ষ কর্মীদের কোয়ালিশন 'ওয়ার ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম'-এর রায়হান রশিদ বিডিনিউজকে বলেন, বাংলাদেশ সরকার বা সে দেশের অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জামায়াত-সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সঙ্গ নিয়ে সেমিনার আয়োজন সঠিক উপায় নয়।

লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদুর রহমান খানকে সেমিনারে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। আয়োজকদের জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির লন্ডন সফরের কারণে তিনি ব্যস্ত আছেন।

সেমিনারে আমন্ত্রিত অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আইনবিষয়ক উপদেষ্টা ক্রিস হল বিডিনিউজকে জানান, সেমিনার আয়োজনে জাস্টিস কনসার্নের সম্পৃক্ততার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। শুধু লর্ড অ্যাভেবারির সঙ্গেই তাঁর কথা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশ সরকার গত মার্চের শেষ দিকে ট্রাইব্যুনাল, তদন্ত সংস্থা এবং আইনজীবী প্যানেল নিয়োগ করেছে।

21 June 2010

রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে লন্ডন যাওয়ার চেষ্টায় গোলাম আযম, আপিল জেতার পর ভিসা পাওয়ার অপেক্ষায়

লন্ডন সংবাদদাতা

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। জানা গেছে, ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য গোপনে তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যের ভিসা পাওয়ার জন্য সব আইনি প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। জানা গেছে, লন্ডনে পেঁৗছামাত্র তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন জানাবেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গোলাম আযমের দেশত্যাগের বিষয়টি কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে মনিটর করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সমন্বয় করছেন গোলাম আযমের ইংল্যান্ড প্রবাসী ছেলে নাবিল আল আযমী। এমনকি দলের বাংলাদেশ অংশের নীতিনির্ধারণী মহলকে এ ব্যাপারে অন্ধকারে রাখা হয়েছে।

সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি জোরালো হয়ে উঠলে প্রথমবার গোলাম আযমকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। সে সময় নির্বাচনে বিজয়ী হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে_আওয়ামী লীগের এ রকম ঘোষণায় উদ্বিগ্ন পরিবারের সদস্যরা ইংল্যান্ডে গোলাম আযমের রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের সম্ভাব্যতা যাচাই করেন।

২০০৮ সালের ২৮ এপ্রিল গোলাম আযম ভিসার জন্য বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনে আবেদন করেন। আবেদন প্রক্রিয়া গোপন রাখা হয় এবং বাহক মারফত আবেদনপত্র পেঁৗছে দেওয়া হয়। পরে ব্রিটিশ দূতাবাসের গুলশান ১-এ অবস্থিত ভিসা ফ্যাসিলিটেশন সেন্টারে (ভিএফএস) এসে গোলাম আযম তাঁর অঙ্গুলির ছাপ দিয়ে যান। ভিএফএসে গোলাম আযমের উপস্থিতি গোপনীয়তার সঙ্গে সম্পন্ন হয়। উল্লেখ্য, ব্রিটিশ দূতাবাসের এই ভিসা ফ্যাসিলিটেশন কেন্দ্রটি একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক সংস্থা দ্বারা পরিচালিত। ২০০৮ সালের ভিসার আবেদনটি ব্রিটিশ হাইকমিশন প্রত্যাখ্যান করলে নাবিল আযমীর পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যে 'অ্যাসাইলাম অ্যান্ড ইমিগ্রেশন ট্রাইব্যুনাল'-এ আপিল করা হয়। গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হলে, গোলাম আযম আবার ভিসার জন্য আবেদন করলে সে আবেদনও প্রত্যাখ্যাত হয়।
এ সময় নাবিল আযমী অ্যাসাইলাম অ্যান্ড ইমিগ্রেশন ট্রাইব্যুনালে আবার আপিল করেন। এবার আপিল করার সময় আপিলের রায় যাতে গোলাম আযমের পক্ষে আসে, এ জন্য নাবিল আযমীর ব্যবস্থাপনায় জামায়াত সমর্থিত কয়েকজন ইমিগ্রেশন অ্যাডভাইজার এবং পাকিস্তানি একজন নাগরিককে যুক্ত করা হয়।
আইনি লড়াইয়ের পর ইমিগ্রেশন বিভাগের বিচারক গত এপ্রিল মাসের শুরুতে গোলাম আযমকে যুক্তরাজ্যে তাঁর ছেলে নাবিল আযমীর কাছে যাওয়ার জন্য ভিসা দিতে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে আদেশ দেন।

লন্ডনের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এই আদেশটি যাতে দ্রুত নিষ্পন্ন হয় এ জন্য আদেশের কপি গোলাম আযমের পক্ষ থেকে ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লন্ডনে জামায়াতের সঙ্গে জড়িত এই সূত্রটি জানিয়েছে, ভিসা পেলে গোলাম আযম যাতে নির্বিঘ্নে দেশত্যাগ করতে পারেন, সে জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের প্রশাসনের ভেতরে কিছু লোক কাজ করছেন; এমনকি গোলাম আযমের পাসপোর্টের মেয়াদ ২০০৯ সালের জুলাই মাসে শেষ হয়ে গেলে সম্প্রতি তাঁর পাসপোর্টটিও সরকারের কোনো বাধা ছাড়াই দ্রুত নবায়ন করা হয়েছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।

লন্ডনের তরুণ ইমিগ্রেশন আইনজীবী মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া এই প্রতিবেদককে বলেন, 'আপিল বিভাগে জেতার পর গোলাম আযমের ভিসা পেতে আর কোনো অসুবিধা নেই। তিনি ইতিমধ্যে ভিসা পেয়ে গেছেন বলে আমরা ধারণা করছি। আমরা যত দূর জানি, যুক্তরাজ্যের বিচার বিভাগে ভিসা পাওয়ার জন্য নাবিল আযমী যে আপিল করেছেন এবং বিজয়ীও হয়েছেন, সেটি বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ জানেন না। এমনকি সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে বাংলাদেশে অবস্থিত কোনো দূতাবাসকে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সতর্কীকরণ বার্তাও দেওয়া হয়নি। গোলাম আযম যুক্তরাজ্যে এলে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে এখানে রেখে দেওয়া খুব কঠিন কাজ নয়। তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় দাবি করলে তাঁর আবেদনটি এ দেশের আইন অনুসারে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। সাধারণত ৭০ বছরের বেশি বয়সী কোনো ব্যক্তি রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করলে মানবিক কারণে তাঁর আবেদন বিবেচনা করা হয়।'

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে লন্ডনে জনমত সংগঠনের অন্যতম নেতা এবং আমারব্লগডটকম-এর প্রধান নির্বাহী সুশান্ত দাসগুপ্ত এই প্রতিবেদককে বলেন, 'গোলাম আযমের চার ছেলে লন্ডনে বাস করেন। তাঁরা এখানকার জামায়াত নেতা এবং আন্তর্জাতিক লবিগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। আমরা আশঙ্কা করছি, গোলাম আযম যদি কোনোক্রমে বাংলাদেশ ত্যাগ করে এ দেশে এসে পেঁৗছান, তাহলে তাঁকে আর কখনোই বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে বিচার করা যাবে না।'

এ ব্যাপারে কালের কণ্ঠ অফিস থেকে ২০ জুন সন্ধ্যা ৭টা ৪৪ মিনিটে লন্ডনে নাবিল আযমীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে এক ব্যক্তি প্রথমে নিজেকে তাঁর চাচা পরিচয় দিয়ে এই প্রতিবেদকের কাছে রিপোর্টের বিষয়বস্তু জানতে চান। প্রতিবেদক এ ব্যাপারে নাবিল আযমীর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা পোষণ করলে তিনি জানান, নাবিল আযমী ব্যস্ত আছেন। তাঁর নাম জানতে চাওয়া হলে পরে তিনি নিজেকে গোলাম আযমের ছোট ছেলে সালমান আল আযমী পরিচয় দেন। গোলাম আযমের লন্ডন যাওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রথমে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে অস্বীকার করেন। পরে তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশন সম্পূর্ণ অনায্যভাবে গোলাম আযমকে ভিসা দিতে অস্বীকার করলে তাঁরা লন্ডনে পারিবারিকভাবে আপিল করেন এবং মাস দুই আগে তাঁরা সে আপিলে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি আরো জানান, আপিলের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ হাইকমিশন গোলাম আযমের পাসপোর্ট চাইলে তা জমা দেওয়া হয়েছে। দূতাবাস ভিসা দিয়েছে কি না_এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।
গোলাম আযম লন্ডনে স্থায়ীভাবে থাকার চেষ্টা করবেন কি না_এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এটি নিছকই পারিবারিক ভ্রমণ। ভিসা পাওয়ার পর সরকার যদি তাঁকে দেশের বাইরে যেতে বাধা দেয়, তাহলে পারিবারিকভাবে তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে এখনো কোনো চিন্তাভাবনা করা হয়নি। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করে গোলাম আযমের বিচার শুরু হলে তাঁরা লন্ডন থেকে আইনি সহায়তা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা করছেন কি না_এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ রকম কোনো পরিকল্পনা এখনো তাঁদের নেই।

এদিকে লন্ডনের সূত্রটি নিশ্চিত করেছে, যদি নাবিল আযমীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গোলাম আযম ভিসা পেয়ে ইংল্যান্ডে পেঁৗছতে পারেন, তাহলে সেখানে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার পক্ষে আবেদন করবেন তাঁর আরেক ছেলে আমীন আল আযমী। পারিবারিকভাবে বাবাকে সন্তানের সঙ্গে রাখার ব্যাপারে সাধারণ মাইগ্রেশন আইন অথবা রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন, এই দুইভাবেই আবেদনের আইনগত ও রাজনৈতিক বিষয় খতিয়ে দেখা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করা হবে বলেই প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করা হলে এ থেকে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত জামায়াতের বাকি নেতারাও ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মহলে রাজনৈতিক সহমর্মিতা লাভ করবেন বলে তাঁরা ধারণা করছেন। এ ব্যাপারে আমীন আল আযমী ইতিমধ্যেই কয়েকজন ইমিগ্রেশন আইনজীবীর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন বলেও সূত্রটি জানিয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে গোলাম আযম একাধিকবার লন্ডনে গিয়ে আমীন আল আযমীর তত্ত্বাবধানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন।
এ ব্যাপারে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) শফিউল্লাহ বীর উত্তম এমপি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে দালাল আইন করেছিলেন। সেই আইনে সব চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। গোলাম আযমসহ চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা তখন দেশের বাইরে পালিয়ে থেকে গ্রেপ্তার এড়িয়ে ছিলেন। আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধুর সেই উদ্যোগ এখনো বলবৎ আছে। সুতরাং গোলাম আযমসহ চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের অবিলম্বে সরকারের হেফাজতে নিয়ে আসা দরকার। এসব চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে, সে জন্য দেশের সব বিমান ও স্থলবন্দরে সতর্কতা জারি করাই যথেষ্ট নয়। বিদেশি সব দূতাবাসেও অবিলম্বে তাদের তালিকা পাঠানো প্রয়োজন, যাতে কোনো দেশ তাদের ভিসা না দেয়।'

গোলাম আযমের বিদেশ ভ্রমণের উদ্যোগের কথা শুনে ওয়্যার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ডা. এম এ হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, 'আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো কোনোভাবেই এই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ভিসা প্রদান করতে পারে না। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো জেনেভা কনভেনশন এবং জেনোসাইড কনভেনশনে সই করেছে। তারা কোনোভাবেই একজন যুদ্ধাপরাধীকে ভিসা দিতে পারে না।'

তিনি বলেন, 'গোলাম আযম এ দেশের প্রধান যুদ্ধাপরাধীদের একজন। তিনি যদি কোনোক্রমে দেশের বাইরে যেতে পারেন, তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রহসনে পরিণত হবে। ১৯৭১ সালে আমরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধীদের দেশের বাইরে যেতে দেওয়ায় তাদের আর বিচারের মুখোমুখি করতে পারিনি। গোলাম আযম যদি এখন দেশের বাইরে যেতে পারেন, তাহলে তাঁর বিচার করাও সম্ভব হবে না।'
তিনি অবিলম্বে সব চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।


[]

11 May 2010

কালান্তরের কড়চাঃ ব্রিটেনের নির্বাচনেও জামায়াতপন্থী ও তাদের বর্ণবাদী দোসরদের ভরাডুবি

আবদুল গাফফার চৌধুরী

ইংরেজিতে একটা কথা আছে, 'সিলভার লাইনিং ইন দ্য ডার্কেস্ট ক্লাউড' (ঘন কালো মেঘের কোনায় রুপালি আলোর রেখা)। প্রবাদটি ব্রিটেনের এবারের নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে প্রযোজ্য বলে অনেকেই মনে করন। যাঁরা আশা করেছিলেন, নির্বাচনে লেবার পার্টির সম্ভাব্য পরাজয় সত্ত্বেও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি বা লিব ডেম এবার পার্লামেন্টে অধিক আসন পাবে এবং লেবারের সঙ্গে কোয়ালিশন করে সরকার গঠন দ্বারা টোরিদের ক্ষমতায় আসা ঠেকাবে, তাঁরা আশাহত হয়েছেন। লিব ডেম নির্বাচনে ভালো করতে পারেনি। তবে হাঙ পার্লামেন্ট হওয়ায় দুটি বড় দলের সঙ্গে কোয়ালিশন করার ব্যাপারে তাদের দরকষাকষির শক্তি বেড়েছে।

আজ ১০ মে (সোমবার) সকাল ৮টায় বসে যখন এই লেখা লিখছি, তখন পর্যন্ত জানি, লিব ডেমের সঙ্গে টোরিদের কোনো ডিল এখনো হয়নি। তবে আলোচনা চলছে। ডিল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যদি ডিল হয় এবং টোরি-লিব ডেম সরকার গঠিত হয়, তাহলে একটাই সান্ত্বনা হবে, সরকারে উদারনৈতিক লিব ডেমের অবস্থানের ফলে নতুন টোরি প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন হয়তো রাথলেস থ্যাচারাইট পলিসি বা কঠোর থ্যাচার নীতিতে পুরোপুরি ফিরে যেতে পারবেন না।

যদি তিনি পারেন তাহলে ব্রিটেন ও ইউরোপের জন্য চরম দুর্দিন ঘনিয়ে আসবে। সাম্প্রতিক মহামন্দা থেকে রিকভারির জন্য ব্রাউন ফর্মুলা অনুযায়ী ইউরোপ ধীরে হলেও যেভাবে আগাচ্ছে, তা হয়তো ব্যাহত হবে। আর তা হলে বর্তমান গ্রিক ট্র্যাজেডির ছায়া সারা ইউরোপে ছড়াবে। এই আশঙ্কার ঘনকৃষ্ণ মেঘের কিনারে ক্ষীণ রুপালি আশার রেখা হচ্ছে সম্ভাব্য টোরি সরকারে লিব ডেমের সম্ভাব্য উপস্থিতি।

ব্রিটেনের বর্তমান নির্বাচনী ফলাফলে আরেকটি সিলভার লাইনিং আছে। তা হলো, বাঙালি অধ্যুষিত বৃহত্তর পূর্ব লন্ডনের বিভিন্ন কেন্দ্রে বিশেষ করে জামায়াতের শক্তিশালী ঘাঁটি টাওয়ার হ্যামলেটস ও নিউহ্যাম এলাকায় ছদ্মবেশী বাংলাদেশি জামায়াত প্রার্থীদের পার্লামেন্ট ও পুরসভাগুলোর (কাউন্সিল) নির্বাচনে পরাজয় ও সম্পূর্ণ ভরাডুবি। আবার ব্রিটেনের কট্টর বর্ণবাদী দল বিএনপি (ব্রিটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি) এ নির্বাচনে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাদের নেতা নিক গ্রিফিন শুধু পরাজিত হননি, পরাজিত প্রার্থী হিসেবে তৃতীয় স্থানে নেমে গেছেন। একই অবস্থা হয়েছে এককালের বিপুল জনপ্রিয়তার অধিকারী এবং ব্রিটেনে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি জামায়াতপন্থীদের বর্তমান নেতা হিসেবে পরিচিত জর্জ গ্যালাওয়ের (রেসপেক্ট পার্টির নেতা)। তিনি এবার প্রগতিশীল লেবার প্রার্থী জিম ফিজপেট্রিকের কাছে গোহারা হেরেছেন। পরাজিত প্রার্থী হিসেবে তাঁর স্থানও নিক গ্রিফিনের মতো তৃতীয় স্থানে।

লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা ব্রিটেনের এবারের নির্বাচনে মৌলবাদী ও বর্ণবাদী ফ্যাসিস্টদের এ পরাজয়ের খবরের হেডিং দিয়েছে 'Council and Parliamentary defeats for far right parties' (পার্লামেন্ট ও কাউন্সিল নির্বাচনে চরম ডানপন্থী দলগুলোর পরাজয়)। লেবার পার্টির বামপন্থী এমপি হিসেবে ইরাকযুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করে যে জর্জ গ্যালোয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন এবং লেবার পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর দলত্যাগ করে রেসপেক্ট পার্টি নামে নতুন দল গঠন করে আগের নির্বাচনে বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনেই লেবার দলের সিটিং এমপি ও প্রার্থী উনা কিংকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন, এবারের নির্বাচনে তাঁর শোচনীয় পরাজয় কাউকে বিস্মিত করেনি। তিনি গত কয়েক বছর ধরেই তাঁর প্রগতিশীল বাম চরিত্র হারিয়ে লন্ডনের বাংলাদেশী জামায়াতপন্থী ও তাদের সমমনা উগ্র মৌলবাদী দলগুলোর সঙ্গে ভিড়ে গিয়ে তাদের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন।

বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের ধর্মীয় উগ্র মৌলবাদীদের_বিশেষ করে বাংলাদেশের জামায়াতি ও জামায়াতপন্থীদের অভ্যুত্থান কোনো আকস্মিক ব্যাপার নয়। এটা পূর্বপরিকল্পিত এবং বাংলাদেশ, সৌদি আরব ও পাকিস্তান থেকে পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের পরাজয়ের পর মইনউদ্দীনসহ কয়েকজন প্রধান বাংলাদেশি যুদ্ধাপরাধী ও ঘাতক ব্রিটেনে পালিয়ে আসে এবং বিভিন্ন মসজিদে ধর্মপ্রচারকারী পরিচয়ের আড়ালে আশ্রয় গ্রহণ করে জামায়াতি রাজনীতির কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে।
এদের জামায়াতি পরিচয় যাতে ধরা না পড়ে, সে জন্য এরা দাওয়াতুল ইসলাম এবং এ ধরনের বিভিন্ন নামে সংগঠন গড়ে তোলে। বলা হতে থাকে_এগুলো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। কোনো কোনোটির উদ্দেশ্য নিছক ধর্ম প্রচার। ফলে ব্রিটিশ সরকারের সমর্থন ও সাহায্যও এরা আদায় করতে সমর্থ হয়। এরা তাদের প্রধান ঘাঁটি স্থাপন করে পূর্ব লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেলে ইস্ট লন্ডন মসজিদে এবং সেখানে লন্ডন মুসলিম সেন্টার (এলএমসি) নামে একটি শক্তিশালী কেন্দ্র গড়ে তোলে। এ কেন্দ্রে তারা প্রিন্স চার্লস এবং কেন লিভিংস্টোনের মতো লন্ডনের সাবেক জনপ্রিয় মেয়রকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এনে তাঁদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট আদায়ে সক্ষম হয়। প্রিন্স চার্লস এবং কেন লিভিংস্টোন দুজনেই লন্ডন মুসলিম সেন্টারে এসেছিলেন এই সরল বিশ্বাসে যে এটি একটি এথনিক রিলিজিয়াস সেন্টার এবং এথনিক মুসলিম কমিউনিটির সামাজিক উন্নয়নই এদের লক্ষ্য। পরে তাঁদের এই ধারণা দূর হয়।
পূর্ব লন্ডনে ছদ্মবেশী জামায়াতিদের এই প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছিল সরলপ্রাণ ধর্মভীরু অসংখ্য বাংলাদেশি পরিবার। তাদের নারী-পুরুষ, এমনকি তরুণ-তরুণীরাও এই সেন্টারে যাতায়াত শুরু করে এবং সেন্টারের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে। এ কর্মকাণ্ড পরিচালনার অর্থ ব্যয়ের প্রধান উৎস ছিল পেট্রোডলার। বাংলাদেশের বহু পরিবার, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের নানা ধরনের আর্থিক সাহায্যের প্রলোভন দেখিয়ে, চাকরির ব্যবস্থা, ইমিগ্রেশন সমস্যা সমাধানে সাহায্যের নামে এই সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত করা হতে থাকে বলে অভিযোগ শোনা গেছে।

কিছুদিনের মধ্যে এই এলএমসির মুখোশ উন্মোচিত হয় এবং ধরা পড়ে, এটা বাংলাদেশি জামায়াতিদের গোপন রাজনৈতিক তৎপরতার একটি প্রধান বিদেশি আড্ডা। সৌদি আরব ও পাকিস্তানের সাহায্য-সহযোগিতাও এর পেছনে রয়েছে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বা অন্যান্য জামায়াত-নেতা ব্রিটেনে এলে এই ইস্ট লন্ডন মসজিদই হতো তাদের তথাকথিত 'ওয়াজ মাহফিলের' প্রধান কেন্দ্র। এখান থেকেই তাদের রাজনৈতিক প্রচার-প্রোপাগান্ডা চালানো হতো এবং বাংলাদেশকে তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করার গোপন ষড়যন্ত্রেও ঘাঁটি হিসেবে এটি অনেকের কাছে চিহ্নিত হয়।

কিছুদিনের মধ্যেই এরা এত শক্তি সংগ্রহ করে যে প্রকাশ্যেই স্বরূপে আবির্ভূত হতে দ্বিধা করেনি। ততদিনে জর্জ গ্যালাওয়ে এদের খপ্পরে পড়েছেন এবং এদের শক্তিশালী সমর্থন লাভের লোভে তাঁর রেসপেক্ট পার্টির টিকিটে এদের বিভিন্ন কাউন্সিলে নির্বাচন-প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। নিজেও বাংলাদেশ সফরে গিয়ে জামায়াতি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আসেন। ইরাকযুদ্ধ-বিরোধী জনপ্রিয় বাম নেতা জর্জ গ্যালাওয়ে কিছুদিনের মধ্যে পরিচিত হন পূর্ব লন্ডনে কট্টর ডানপন্থী, মৌলবাদী এবং বাংলাদেশের জামায়াতপন্থীদের প্রভাবশালী অভিভাবক হিসেবে।

গ্যালোয়ের রেসপেক্ট পার্টির নমিনেশন নিয়েই ছদ্মবেশী জামায়াতপন্থীদের একটা অংশ টাওয়ার হ্যামলেটস, নিউহ্যাম কাউন্সিলের আগের বারের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যায় জিতে প্রকাশ্যেই তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করে। টাওয়ার হ্যামলেটস বারায় এরা বিভিন্ন বাঙালি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে কাউন্সিলের আর্থিক সাহায্যের গ্রান্ট কমিয়ে মসজিদ, ধর্মীয় শিক্ষা ও মৌলবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর বরাদ্দ বাড়াতে শুরু করে। পূর্ব লন্ডনের জনপ্রিয় বৈশাখী মেলা যাতে অনুষ্ঠিত হতে না পারে, সে জন্য নানা নেপথ্য তৎপরতা চালাতে থাকে।

এই জামায়াতি কর্মকাণ্ডের প্রধান ঘাঁটি হয়ে ওঠে পূর্ব লন্ডনের নিউহ্যাম বারা। এই কাউন্সিল জামায়াতপন্থীরা প্রায় দখল করে নিয়েছিল। এখান থেকেই জামায়াতপন্থী সংগঠনগুলো ইশতেহার ছড়াত, গণতন্ত্র ইসলামবিরোধী, বৈশাখী মেলার অনুষ্ঠান হারাম, মেয়েরা হিজাব ও নেকাব না পরলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে, বাঙালি বলে নিজের পরিচয় দেওয়া ইসলামের অবমাননা ইত্যাদি। পূর্ব লন্ডনের বহু বাংলাদেশি নারী অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের সময় তাঁদের বলা হয়েছে, তাঁরা বা তাঁদের বাংলাদেশের আত্দীয় নারীরা যদি আওয়ামী লীগ বা কোনো সেক্যুলারপন্থী দলকে ভোট দেন, তাহলে তাঁদের স্বামী তালাক হয়ে যাবে। এ কথা তাঁরা যেন তাঁদের বাংলাদেশের আত্দীয়দের জানিয়ে দেন।

ইস্ট লন্ডন মসজিদকেন্দ্রিক এই ছদ্মবেশী জামায়াতি তৎপরতা এবং তথাকথিত লন্ডন মুসলিম সেন্টারের কর্মকাণ্ডই ধীরে ধীরে পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে এবং তাঁরা এই উগ্র মৌলবাদী এবং বিশেষ করে বাংলাদেশবিরোধী চক্রান্ত প্রতিহত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হন। এবারের ব্রিটিশ নির্বাচনে মৌলবাদী ও বর্ণবাদীদের পরাজিত করার জন্য পূর্ব লন্ডনসহ ব্রিটেনের আরো অনেক স্থানে সাদা-কালো উভয় সম্প্রদায় বিশেষ করে বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে যে ঐক্য দেখা দেখা গেছে, তা আগে কখনো দেখা যায়নি।

এরই ফল নির্বাচনে সর্বত্র জামায়াতপন্থী প্রার্থীদের এবং বর্ণবাদী বিএনপির সম্পূর্ণ ভরাডুবি। পূর্ব লন্ডনে এবার জামায়াতিদের নির্বাচনী লক্ষ্য ছিল টাওয়ার হ্যামলেটস এবং নিউহ্যাম এ দুটি কাউন্সিল সম্পূর্ণ দখল করা এবং পার্লামেন্টে প্রথম বাংলাদেশি এমপি হিসেবে একজন জামায়াতি অথবা জামায়াতপন্থীকে নির্বাচিত করা। তাহলে ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির ওপর তাদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ ভণ্ডুল করা এবং বাংলাদেশে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক রাজনীতি ধ্বংস করে মৌলবাদী রাজনীতির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সফল করার কাজে ব্রিটিশ রাজনীতিকে ব্যবহার করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে বলে তারা ধরে নিয়েছিল।

প্রগতিশীল ব্রিটিশ নাগরিক সমাজ এবং বাংলাদেশি কমিউনিটির সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে তাদের সব স্বপ্ন এবং চক্রান্ত ভণ্ডুল হয়ে গেছে। নিজেদের পরিচয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হলে একটি ভোটও পাবে না, এ কথা জেনে তারা রেসপেক্ট পার্টি ছাড়াও টোরি দলে, এমনকি লিব ডেমেও অনুপ্রবেশ করে তাদের প্রার্থী পরিচয়ে নিজেদের প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। তাতে ভবি ভোলেনি।

ব্রিটেনের এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশি কায়দায় মসজিদ ও ধর্মীয় স্লোগান ব্যবহার, অপপ্রচার, মিথ্যা প্রচারসহ এমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই যার আশ্রয় জামায়াতিরা নেয়নি। বেথনাল গ্রিন ও বো পার্লামেন্টারি কেন্দ্রে বাংলাদেশি লেবার প্রার্থী রোশনারা আলীর মতো বিদুষী তরুণীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কুৎসা প্রচারেও তারা দ্বিধা করেনি। তা সত্ত্বেও রোশনারা ১২ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রথম বাঙালি সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। রোশনারা মৌলবাদবিরোধী এবং বাংলাদেশের সেক্যুলার গণতান্ত্রিক রাজনীতির একজন দৃঢ় সমর্থক।

ব্রিটিশ নির্বাচনে যা কখনো হয়নি অর্থাৎ রাজপথে মিছিল অথবা র‌্যালি করা_জামায়াতিরা তাদের প্রার্থীকে জেতানোর জন্য মরিয়া হয়ে সেই মিছিল এবং র‌্যালিও এবার করেছে। সচেতন ভোটদাতারা তাদের কোনো প্রচারণার ফাঁদেই পা দেয়নি। টাওয়ার হ্যামলেটসে রোশনারা আলী তো এমপি হয়েছেনই, কাউন্সিল নির্বাচনেও রেসপেক্ট দলীয় জামায়াতপন্থীরা নিদারুণভাবে হেরেছেন। আগে এই কাউন্সিলে তাদের সদস্য ছিলেন ১২-১৩ জন, এবার মাত্র একজন।

জামায়াতি ও জামায়াতপন্থীদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি ছিল নিউহ্যাম কাউন্সিল। এবারের নির্বাচনে তারা একটি আসনেও জয়ী হয়নি। আগে তাদের সদস্যসংখ্যা ছিল ২০ জন। নিউহ্যাম কাউন্সিলের লিটল ইলফোর্ড ওয়ার্ডে বিশিষ্ট সমাজসেবী খলিল কাজি (ব্রিটিশ সরকারের খেতাবপ্রাপ্ত) ও রহিমা রহমান বিপুল ভোটে জিতেছেন। খলিল কাজি একজন সেক্যুলারিস্ট এবং আওয়ামীপন্থী সমাজসেবী।

অনুরূপভাবে সেন্ট্রাল লন্ডনে ক্যামডেনের কাউন্সিল নির্বাচনে শেখ রেহানার বড় মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আসিফ আলী, আবদুল কাদির এবং ওয়েস্টমিনস্টার কাউন্সিলের নির্বাচনে লন্ডনের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মোশতাক কোরেশীর মেয়ে পাপিয়া কোরেশী, আওয়ামীপন্থী যুবনেতা আবদুল আজিজ সহজ বিজয় অর্জন করেছেন। সর্বত্র জামায়াতপন্থী ও বর্ণবাদীদের পরাজয় হয়েছে।

ব্রিটেনের এবারের নির্বাচনে একটি ব্যাপার ছিল লক্ষণীয়, ব্রিটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি বা বর্ণবাদী বিএনপির সঙ্গে একাধিক নির্বাচন কেন্দ্রে, বিশেষ করে বৃহত্তর পূর্ব লন্ডনের বার্কিং ও টাগেনহাম কেন্দ্রে জামায়াতপন্থীদের দহরম-মহরমের খবর। এই বার্কিং কেন্দ্রের পার্লামেন্টারি নির্বাচনেই বর্ণবিদ্বেষী বিএনপি নেতা নিক গ্রিফিন শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছেন। বার্কিং থেকে খবর পেয়েছি, বর্ণবাদী এবং 'কিপ ব্রিটেন হোয়াইট' আন্দোলনের এই নেতার পরাজয়ের খবর পেয়ে অনেক বাংলাদেশি ছেলেমেয়ে নাকি বার্কিংয়ের রাস্তায় বেরিয়ে হাততালি দিয়ে সমস্বরে রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতা পড়েছে_'মেঘের কোলে রোদ হেসেছে/বাদল গেছে টুটি/আজ আমাদের ছুটি, ও ভাই/আজ আমাদের ছুটি।'

আমার পাঠকদের অনেকে হয়তো সহজে বিশ্বাস করতে চাইবেন না, কিন্তু আমার বার্কিংয়ের বাঙালি বন্ধুরাই আমাকে জানিয়েছেন, সত্যি সত্যি ঘটনাটি ঘটেছে।

লন্ডন, ১০ মে, সোমবার, ২০১০।


খবরের লিংক

21 April 2010

মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ




শরিফুল হাসান | তারিখ: ২১-০৪-২০১০


বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব। অথচ বর্তমান সরকারের ১৫ মাসে ওই দেশে গেছেন মাত্র ১৬ হাজার ৯২১ জন বাংলাদেশি কর্মী। একই সময়ে সেখান থেকে ফিরেছেন ৩১ হাজার ৩০৬ জন। আগের বছরগুলোতে গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ লোক সৌদি আরবে গেছেন। জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানি খাতে গত তিন দশকের মধ্যে কখনোই এমন বিপর্যয় হয়নি।

একই অবস্থা কুয়েতেও। গত ১৫ মাসে কুয়েতে গেছেন মাত্র ২১ জন কর্মী। অথচ মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এই দেশটিতে গড়ে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ হাজার বাংলাদেশি যেতেন। মধ্যপ্রাচ্যের বাকি চার দেশের মধ্যে কাতার, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও জনশক্তি রপ্তানি কমেছে। তবে কিছুটা বেড়েছে বাহরাইনে।
৭০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির মধ্যে ৪০ লাখই থাকেন মধ্যপ্রাচ্যে। এর মধ্যে সৌদি আরবে প্রায় ২০ লাখ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৪ লাখ, ওমান ও কুয়েতে আড়াই লাখ করে পাঁচ লাখ, বাহরাইনে দেড় লাখ ও কাতারে এক লাখ ২৪ হাজার।

জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অভিযোগ, কিছু বাংলাদেশি মধ্যপ্রাচ্যে খুন, ধর্ষণসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে, সৌদি আরবে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গাদের অপরাধপ্রবণতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। এসবের পাশাপাশি গত ১৫ মাসে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে একটি মহল দেশে-বিদেশে এক ধরনের নেতিবাচক প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু সরকার কূটনৈতিকভাবে এর জবাব দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সফরের পরও পরিস্থিতি বদলায়নি।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সংকট উত্তরণে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসগুলোতে চিঠি পাঠিয়েছে। তাতে কেন হঠাৎ করে এভাবে জনশক্তি রপ্তানি কমে যাচ্ছে, তার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে।

জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বায়রার যুগ্ম মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচার চলছে। দূতাবাসগুলো এর জবাব দিতে পারছে না। এমনকি দূতাবাসগুলোর কোনো গণমাধ্যম শাখাও নেই। ফলে বাংলাদেশ সম্পর্কে এখন মধ্যপ্রাচ্যে একটি ভুল ধারণা জন্মাচ্ছে। ফলে তারা বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়া রাতারাতি কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনশক্তি খাতকে বাঁচাতে হলে যেকোনো মূল্যে মধ্যপ্রাচ্যের বাজার ঠিক করতেই হবে। এ জন্য সরকারের সম্ভাব্য যা যা করণীয়, সবই করা উচিত।

বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ সরকার জনশক্তি রপ্তানি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। কাজেই এ খাতের সব সমস্যাই সমাধান করা হবে। তবে রাতারাতি সেটি সম্ভব নয়।

মন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবে রোহিঙ্গারা নানা সমস্যা করছে। কুয়েতে কিছু বাংলাদেশি বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিল। এসব কারণে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সৌদি আরবে লোক যাওয়া বন্ধ হয়নি। বরং তারা কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া আধুনিক (বায়োমেট্রিক্স) করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাকি দেশগুলোর বাজার খুব শিগগিরই আরও ভালো হবে বলে আশা করেন তিনি।

মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়গুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম এশিয়া শাখার মাধ্যমে দেখভাল করা হয়। এ বিষয়ে জানতে ওই শাখার মহাপরিচালক মোহাম্মদ জাফরের সঙ্গে গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক বিষয়সহ অন্যান্য বিষয় দেখে। মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টি একান্তই প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় দেখভাল করে। কাজেই তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।

বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জাফর আহমেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর জন্য রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তার সবই নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরের পর সেখানকার পরিস্থিতি ইতিবাচক। কুয়েত লোক না নিলেও সেখানে এখন কর্মীরা আকামা পরিবর্তন করতে পারছেন। আরব আমিরাত খুব শিগগির আরও লোক নেবে। মন্দা, কিছুসংখ্যক বাঙালির অপরাধসহ নানা কারণে বাজার কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে খুব শিগগির বাংলাদেশ আবার বাজার ফিরে পাবে। এ জন্য করণীয় সব কিছুই করা হবে।

আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সৌদি আরবে: বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত কতজন বিদেশে চাকরি নিয়ে গেছেন, সে হিসাব সংরক্ষিত আছে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে।

সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৮ সালেও এক লাখ ৩২ হাজার ১২৪ জন কর্মী এবং ২০০৭ সালে দুই লাখ চার হাজার ১১২ জন কর্মী সেখানে গিয়েছিলেন। ২০০৬ সালে এ সংখ্যা ছিল এক লাখ নয় হাজার ৫১৩। ১৯৭৬ সাল থেকে গত ৩৩ বছরের সংরক্ষিত হিসাব থেকে দেখা গেছে, ’৭৬ সালের পর প্রতিবছরই সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ছিল। আশির দশকে প্রতিবছর গড়ে সেখানে গেছেন ৫০ থেকে ৬০ হাজার লোক। ১৯৯২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই গড়ে গেছেন এক থেকে দেড় লাখ কর্মী। কিন্তু ২০০৯ সালের শুরু থেকে হঠাৎ করেই এ সংখ্যা রাতারাতি কমে যায়।

বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়া রাতারাতি কমিয়ে দিলেও বিশ্বের একমাত্র হিন্দুপ্রধান দেশ নেপাল ও ভারত থেকে লোক নিচ্ছে সৌদি আরব। শুধু জনশক্তি রপ্তানি কমানো নয়, সৌদি আরব বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাজের অনুমতিপত্রও (আকামা) বদল করতে দিচ্ছে না। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ছয় থেকে সাত লাখ কর্মীকে।

সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতের নেতাদের এখানে প্রচণ্ড দাপট। মূলত তাঁরা বিভিন্ন সময়ে সৌদি সরকারকে বোঝাচ্ছেন, বাংলাদেশে ইসলামি দলগুলোর বিরুদ্ধে নিপীড়ন চলছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার-প্রক্রিয়া শুরুর পর নিপীড়ন বেড়েছে। ফলে খুব সহজে বাজার স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

দরজা বন্ধ কুয়েতে: গত ৩৩ বছরে কুয়েতের জনশক্তি রপ্তানির চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৯৭৬ থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত গড়ে প্রতিবছর ১০ হাজার লোক কুয়েতে গেছেন। ’৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধে কুয়েতের পক্ষে অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের সুনাম বেড়ে যায়। এরপর ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গড়ে গেছেন ২৫ হাজার লোক। ২০০১ সালের পর তা বাড়তে থাকে এবং প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ হাজার লোক কুয়েতে যেতে থাকেন। তবে ২০০৯ সালে এসে এ ধারা এক প্রকার বন্ধই হয়ে যায়। ২০০৯ সালে মাত্র ১০ জন লোক কুয়েতে গেছেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়েত সফর করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী কুয়েতের আমিরের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান। তবে এখনো ইতিবাচক কোনো সাড়া মেলেনি।

অন্য চার দেশের অবস্থা: ২০০৮ সালে ২৫ হাজার ৪৪৮ জন কর্মী কাতারে, ৫২ হাজার ৮৯৬ জন কর্মী ওমানে এবং চার লাখ ১৯ হাজার ৩৫৫ জন কর্মী সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন। আর গত ১৫ মাসে ১৪ হাজার ১৬৬ জন কাতারে, ৪৮ হাজার ৬১৪ জন ওমানে ও তিন লাখ ১৪ হাজার ৬২৩ জন সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন। আগের বছরের তুলনায় এই তিন দেশে জনশক্তি রপ্তানি ১৫ মাসে এক লাখ ২০ হাজার কমেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে একমাত্র বাহরাইনেই জনশক্তি রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। ২০০৮ সালে বাহরাইনে গিয়েছিলেন ১৩ হাজার ১৮২ জন কর্মী। আর ২০০৯ সালে ২৮ হাজার ৪২৬ জন কর্মী দেশটিতে গেছেন। গত তিন মাসে দেশটিতে গেছেন আরও পাঁচ হাজার কর্মী।

বায়রার সভাপতি গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরবের অবস্থা খুবই খারাপ। এই বাজার চালু করতে না পারলে ভবিষ্যৎ খুবই সংকটাপন্ন। এ জন্য এখনই জোর কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পরও কেন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না, এখন কী করলে সমস্যার সমাধান হবে, সে বিষয়গুলো খুঁজে বের করা দরকার।


খবরের লিংক