4 May 2011

যুবকের প্রতারণা: গ্রাহকদের ২১০০ কোটি টাকা ফেরত দিতে কমিশন হচ্ছে

আবুল কাশেম

বহুল আলোচিত যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) প্রতারিত গ্রাহকদের ২১০০ কোটি টাকা ফেরত দিতে কমিশন গঠন করছে সরকার। যুবকের প্রতারিত দুই লাখ ৬৭ হাজার ৩৩০ জন গ্রাহকের পাওনা ২১৪৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা আগামী দুই বছরের মধ্যে পরিশোধে কাজ করবে এ কমিশন। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, যুবক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দখলে নিয়ে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে তা বিক্রি করে পাওয়া অর্থ থেকে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধের উদ্যোগ নেবে কমিশন।

জানা গেছে, দুই সদস্যের এ কমিশনের চেয়ারম্যান হচ্ছেন বিসিএস ১৯৭৭ ব্যাচের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব রফিকুল ইসলাম। আর সদস্য পদে যোগ দেবেন প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের সদস্য মজনুন হাসান। আজ অর্থ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী এ কমিশন গঠন করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় শক্তি প্রয়োগ করে প্রতারিত গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষমতাও দেওয়া হবে কমিশনকে। কমিশন দুই বছরের মধ্যে প্রতারিত গ্রাহকদের ২২০০ টাকা ফেরত দেওয়ার কাজ শেষ করবে। বৃহস্পতিবার এ কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি হবে। কমিশনের চেয়ারম্যান পদে অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব রফিকুল ইসলামকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আর সদস্য পদে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের সদস্য মজনুন হাসানকে।'

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কমিশন গঠন সম্পর্কে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'একটি দীর্ঘমেয়াদি (তিন বছর) পূর্ণকালীন এক অথবা তিন সদস্যের একটি কার্যকর কমিশন অবিলম্বে গঠন করা প্রয়োজন।' প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দ্রুত গতিতে এবং উপযুক্ত ক্ষমতায়নের মাধ্যমে গঠিত নতুন কমিশনের প্রথম কাজ হতে পারে আইনসিদ্ধ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যুবক ও যুবকসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং এর তালিকাভুক্ত অন্যান্য সম্পত্তির ওপর কমিশন নিয়োজিত ব্যক্তিদের দখল ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। দীর্ঘমেয়াদি পূর্ণকালীন কমিশনকে একটি উপযুক্ত কাঠামোর মাধ্যমে জনবল, আর্থিক সংস্থান, অফিস ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করে বিজ্ঞপ্তি প্রচারের পর প্রথম কর্তব্য হিসেবে কমিশন চেয়ারম্যান যুবক ও যুবকসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারেন। নবগঠিত কমিশনের চেয়ারম্যানকে হাইকোর্টের একজন বিচারপতি অথবা সরকারের সচিবের পদমর্যাদায় বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। কমিশন তদন্ত কমিটির সুপারিশ আমলে নিয়ে কাজ করবে। এ ছাড়া কমিশন প্রয়োজনে অধিকতর তদন্তও করতে পারে। এ জন্য কমিশনকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়া হবে।

ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি সংবাদমাধ্যমে যুবকের গ্রাহকদের তথ্য প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিলে যুবক হাউজিং অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড ও যুবকসংশ্লিষ্ট অন্য চারটি প্রতিষ্ঠানের দুই লাখ ৬৭ হাজার ৩৩০ জন গ্রাহক দালিলিক প্রমাণসহ মোট ২১৪৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা পাওনা দাবি করে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ রয়েছে। অবশ্য ২০০৬ সালে অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রমের দায়ে যুবকের কর্মকাণ্ড বাতিল করার সময় বেসরকারি এই সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছিল, ২০০৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই লাখ ৬৭ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে তারা ৩৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা জমা নিয়েছে।

১৯৯৪ সালে সদস্যদের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের মধ্য দিয়ে যুবক এর কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৯৭ সালে জয়েন্ট স্টক কম্পানিজে নিবন্ধন পাওয়ার পর যুবক প্রায় ২০ ধরনের ব্যবসা শুরু করে। ২০০৬ সাল নাগাদ সংস্থাটি টেলিকমিউনিকেশন, হাউজিং অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট, পর্যটন, স্বাস্থ্য, সিরামিকস, সামুদ্রিক খাদ্য, আইটি, নার্সারি, এগ্রো-বায়োটেক ইন্ডাস্ট্রি ও ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের ব্যবসা শুরু করে। ২০০৬ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আলাদা তদন্তে যুবকের গ্রাহকদের প্রতারিত হওয়ার ঘটনা বেরিয়ে আসে। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ ও তাদের ঋণ দেওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে এক সপ্তাহের সময় দিয়ে ২০০৬ সালের মে মাসে যুবককে নোটিশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০০৬ সালের জুলাই মাসে আমানতকারীসহ অন্যদের সব অর্থ ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে ওই সময়সীমা ২০০৭ সালের মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক যুবকের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনেও নথি পাঠায়। তবে কমিশন বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলে নথি ফেরত দেয়। পরে যুবকের গ্রাহকদের জমা করা অর্থ পরিশোধ ও হয়রানি বন্ধ, সম্পত্তি হস্তান্তরে স্থগিতাদেশ এবং প্রশাসক নিয়োগ করে স্থায়ী সমাধানের জন্য ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তদন্ত কমিশন গঠন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয় অর্থমন্ত্রীর কাছে।

দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা: নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

বহুল আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির সিনিয়র এএসপি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান চৌধুরীর করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম এইচ এম ফজলুল বারী গতকাল বুধবার তা মঞ্জুর করেন।

অস্ত্র আটকের ঘটনায় অস্ত্র এবং চোরাচালান আইনে করা দুটি মামলায়ই জামায়াতের এই শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

ঢাকা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চট্টগ্রাম আনা হলে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে_এ আশঙ্কায় নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি চান তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত নিজামীকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।

এর আগে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান চৌধুরী গতকাল দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিভিন্ন আসামি ও সাক্ষীর দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মতিউর রহমান নিজামীর ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। তাই তাঁকে গ্রেপ্তার দেখাতে আবেদন জানিয়েছিলাম। কয়েক দিনের মধ্যে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।'

উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত মতিউর রহমান নিজামী বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। গত বছর ২১ জুলাই পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ২০০৪ সালে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের সময় নিজামী তৎকালীন জোট সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের শুনানির সময় অতিরিক্ত মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম সেন্টু আদালতে বলেন, 'শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সিইউএফএল জেটি ঘাটে খালাসের সময় নিজামী এ ব্যাপারে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেননি। এমনকি সিইউএফএলসহ সরকারি বিভিন্ন মাধ্যম তাঁর কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনো অনুমতি না দিয়ে তাদের নিবৃত্ত করেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় নিজামী ঘটনায় জড়িত।'

গতকাল সকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে গিয়ে গভর্নমেন্ট রেকর্ড অফিসারের (জিআরও) কাছে নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনপত্র জমা দেন। এরপর তা মহানগর হাকিম এইচ এম ফজলুল বারীর খাস কামরায় নিয়ে যাওয়া হলে তিনি প্রকাশ্য আদালতে শুনানির নির্দেশ দেন। পরে বিকেলে প্রকাশ্যে শুনানি শেষে আবেদন গ্রহণ করা হয়।

প্রসঙ্গত ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলী থানাধীন সিইউএফএল জেটি ঘাট থেকে দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে করা দুটি মামলা আদালতের নির্দেশে তিন বছর ধরে সিআইডি অধিকতর তদন্ত করছে। আগামী ১৫ মের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ২০ জন সাক্ষী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

অধিকতর তদন্ত শুরু হওয়ার পর সিআইডি নিজামী ও লুৎফুজ্জামান বাবর ছাড়াও এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, পরিচালক উইং কমান্ডার শাহাবুদ্দিন, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, ফিল্ড অফিসার আকবর হোসেন খান, সরকারি সার কারখানা সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহসীন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এনামুল হককে গ্রেপ্তার করেছে।

25 April 2011

সংগ্রাম সম্পাদকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা

Mon, Apr 25th, 2011 4:49 pm BdST

ঢাকা, এপ্রিল ২৫ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক আবুল আসাদকে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রাণনাশের হুমকির মামলায় আদালতে তলব করা হয়েছে।

সোমবার এ পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এ বি সিদ্দিকের দায়ের করা মামলায় এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম এ জি এম আল মাসুদ।

মামলার আরজিতে বলা হয়, বাদির বকেয়া বেতন- ভাতা বাবদ ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৬ টাকা না দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি তাকে প্রাণনাশ করার হুমকি দিচ্ছেন। বাদির একমাত্র মেয়ের চিকিৎসার জন্য পাওনা টাকা চাইতে গেলে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বলা হয়, "কোন টাকা দেয়া হবে না। মামলা করে টাকা নেন।"

আগামি ১ জুন আবুল আসাদকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য দিন রাখা হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান বাদির আইনজীবী এস এম দৌলত-ই-খুদা।

মামলার আরজিতে আরো উল্লেখ করা হয়, হুমকির বিষয়ে বাদি গত ৫ এপ্রিল রমনা থানায় আবুল আসাদের বিরুদ্ধে একটি সাধারন ডায়েরি করেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/পিবি/কেএমএস/১৬৫০ ঘ.