16 March 2011

কারমাইকেল ও কক্সবাজার কলেজে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষ, আহত ৪০, গ্রেপ্তার ৩৩ শিবিরকর্মী

কালের কণ্ঠ ডেস্ক

স্নাতক শ্রেণীর নবীন ছাত্রছাত্রীদের স্বাগত জানানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল মঙ্গলবার রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও কক্সবাজার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির সংঘর্ষে মোট ৮০ জন আহত এবং ৩৩ শিবিরকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৯ মার্চ পর্যন্ত কারমাইকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে ছাত্রছাত্রীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রংপুর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, গতকাল স্নাতক প্রথম বর্ষের নবীন ছাত্রদের স্বাগত জানানোর জন্য ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে মিছিল করে। কিন্তু ছাত্রশিবির স্বাগত মিছিল না করে বহিরাগত পরিবেষ্টিত হয়ে ক্যাম্পাসে সভা করতে থাকে। ছাত্রলীগকর্মীরা এ সময় ছাত্রশিবির নেতাদের কাছে বহিরাগতদের বের করে দেওয়ার অনুরোধ জানালে উভয় পক্ষে কথা কাটাকাটি ও পরে সংঘর্ষ হয়। পরে উভয় সংগঠন পরস্পরকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া দেয়। এ সময় শিবিরকর্মীরা জিএল ছাত্রাবাস থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে ছাত্রলীগকর্মী শিশির, সুমন ও কামালকে বেধড়ক পেটায়। তারা দৃক নিউজের রংপুর সংবাদদাতা সেলিম মাহফুজকে মারধর করে এবং অন্য সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এতে ১০ সাংবাদিকসহ ৪০ জন আহত হয়। এ ঘটনায় সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও পার্শ্ববর্তী লালবাগ এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পুলিশ মহানগর শিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক আলামীন হাসান, মহানগর শাখার দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান তুহিন, জিএল হোস্টেল শাখার সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিসহ শিবিরের ২১ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে ১৯ মার্চ পর্যন্ত কলেজ বন্ধ এবং গতকাল সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে চারটি ছাত্রাবাসের ছাত্রদের হলত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার সূত্রপাত অনুসন্ধানে কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাককে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

ঘটনার জন্য উভয় ছাত্র সংগঠন পরস্পরকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছে। এ ঘটনায় কলেজ ও আশপাশের এলাকায় দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় বিপুল পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

এদিকে আমাদের কক্সবাজার অফিস জানিয়েছে, সেখানকার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে গতকাল সকালে প্রথম বর্ষ স্নাতকের নবীন ছাত্রদের স্বাগত জানানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরকর্মীদের মধ্যে দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পুলিশ, সংবাদকর্মীসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সলিমুর রহমানসহ পাঁচজনকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১২ শিবির ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়ার জন্য কলেজের প্রশাসনিক ভবনের গেটে শিবির ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয়। শিবিরকর্মীরা রীতিমতো ল্যাপটপ নিয়ে বসে শিক্ষার্থীদের ছবি ও নামধাম তালিকাভুক্ত করা শুরু করে। একপর্যায়ে উভয় ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা লাইনে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ করার চেষ্টা করলে প্রথমে কথা কাটাকাটি এবং পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। শিবিরকর্মীরা বেশ কিছু ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে মারধর করে। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সলিমুর রহমান, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুজিবুল আলমসহ কয়েকজন সাংবাদিক ও পুলিশ সদস্য আহত হন। আহতদের বেশির ভাগই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে। সংঘর্ষের সংবাদ পেয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশ কলেজ ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১২ শিবির ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করে। এ ব্যাপারে আহত পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর উনুমং বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। উল্লেখ্য, প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর এ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটিতে দুই দশক ধরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের আধিপত্য বিরাজ করে আসছিল।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন