12 March 2011

প্রতারণা করে শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়াচ্ছে ফুলকুঁড়ি আসর

কুদরাত-ই-খুদা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় | তারিখ: ১৩-০৩-২০১১

রাজশাহী নগরের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতারণা ও কৌশলের আশ্রয় নিয়ে শিশু সংগঠন ‘ফুলকুঁড়ি আসরে’ ভেড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফুলকুঁড়ি আসর ছাত্রশিবির পরিচালিত শিশু সংগঠন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। অভিভাবকেরা এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

শিক্ষক, অভিভাবক ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে নগরের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে শ্রেণীকক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে ফুলকুঁড়ি আসরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন। পরে শিক্ষার্থীদের হাতে সদস্য ফরম ধরিয়ে দেন। এই ফরমে ফুলকুঁড়ি আসরের পরিচিতি, আদর্শ ও উদ্দেশ্য, মূলমন্ত্র, স্লোগানসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ রয়েছে। একই সঙ্গে রয়েছে সদস্য হওয়ার আবেদনপত্র। ফুলকুঁড়ি আসরের কেন্দ্রীয় প্রধান পরিচালক বরাবর ওই আবেদনপত্রে লেখা রয়েছে, ‘ভাইয়া, আস্সালামু আলাইকুম। আমি ফুলকুঁড়ি আসরের আদর্শ, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচির সাথে একমত হয়ে এর সদস্য হতে চাই। আমার অভিভাবকের এতে কোন আপত্তি নেই। আমি নিজে এ সংগঠনের নিয়ম শৃংখলা ও আইন মেনে চলবো এবং অন্যের কাছে ফুলকুঁড়ির আহ্বান পৌঁছে দিতে চেষ্টা করবো।’ আবেদনপত্রে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামসহ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, টেলিফোন বা মুঠোফোন, ই-মেইল, অভিভাবকের স্বাক্ষর ইত্যাদি বিষয় পূরণের জন্য নির্ধারিত জায়গা রাখা হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক জানান, ১৭ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের অনুমতি না নিয়েই বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন কয়েকজন তরুণ। তাঁরা শ্রেণীকক্ষে গিয়ে ‘সুন্দর হাতের লেখা’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। পরে বিজয়ীদের পুরস্কারও দেওয়া হয়। এরপর ফুলকুঁড়ি আসরের উদ্দেশ্য বর্ণনা করে সদস্য ফরম ধরিয়ে দেওয়া হয়। কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে ফরম পূরণ করে নেওয়ার পর অভিভাবকদের স্বাক্ষরের জন্য নির্ধারিত জায়গায় শিক্ষার্থীদের দিয়েই স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়। নগরের অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা এই কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক জানান, অভিভাবকদের না জানিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এভাবে ফুলকুঁড়ি আসরের সদস্য ফরম পূরণ করানো অবশ্যই অন্যায়। আবার অভিভাবকদের স্বাক্ষরও করিয়ে নেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। অভিভাবকেরা এ ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে একে মিথ্যাচার ও প্রতারণা হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

বিশিষ্ট নাট্যকার এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের সভাপতি মলয় ভৌমিক বলেন, ফুলকুঁড়ি আসর যে জামায়াত-শিবিরের শিশু সংগঠন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই করে নিজেদের সংগঠনে ভেড়ানোর মাধ্যমে জামায়াত-শিবিরের ‘নীল নকশা’ বাস্তবায়ন করাই তাঁদের উদ্দেশ্য।

ফুলকুঁড়ি আসরের সদস্য ফরমের শেষ পৃষ্ঠায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হিসেবে ‘১১৪/২, সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোড, মৌচাক, ঢাকা-১২১৭’ লেখা রয়েছে। সেখানে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোন নম্বর, ই-মেইল ও ওয়েবসাইটের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে উল্লিখিত মুঠোফোন নম্বরে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

ফুলকুঁড়ি আসর ছাত্রশিবির পরিচালিত সংগঠন কি না, সে ব্যাপারে শুক্রবার রাতে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে রাজশাহী মহানগর শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ফুলকুঁড়ি আসর একটি শিশু সংগঠন। ফুলকুঁড়ি আসর তাদের মতো করে কাজ করে আর আমরা আমাদের মতো করে কাজ করি। ফুলকুঁড়ি আসরের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ততা নেই বলে তিনি দাবি করেন।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, কোমলমতি শিশুদের দলে ভেড়ানোর জন্য প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন