9 March 2011

সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে ফতোয়ার হুমকি আমিনীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফতোয়াকে বেআইনি ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পর মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেছেন, ফতোয়া নিয়ে শুনানির অধিকারই নেই সুপ্রিম কোর্টের। রায় বিরুদ্ধে গেলে সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধেই ফতোয়া দেওয়া হবে।

গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ফজলুল হক আমিনী এ কথা বলেন। হাইকোর্টের রায় বহাল না রাখার দাবিতে গতকাল সকালে হাইকোর্টের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা ও কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন ডাকেন।

কোর্টের যদি শুনানির অধিকারই না থাকে তাহলে আপিল করেছেন কেন_জানতে চাইলে আমিনী বলেন, 'প্রচলিত নিয়মে আমরা আপিল করেছি। তবে তাঁদের (বিচারিক আদালত) বুঝতে হবে, কোরআনের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার, এর ওপর শুনানির অধিকার কোর্টের নেই।'

রায় বিরুদ্ধে গেলে কী করবেন_জানতে চাইলে মুফতি আমিনীর জবাব, 'রায় বিরুদ্ধে গেলে সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেব।'

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে হাইকোর্ট এক রায়ে ফতোয়া দেওয়াকে অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে গত ৩ মার্চ তাঁর দলের দুই নেতা মুফতি মোহাম্মদ তৈয়্যব ও আবুল কালাম আযাদ সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। তিন কার্যদিবস ধরে মামলার শুনানি চলছে। আজ বৃহস্পতিবারও শুনানি চলবে।

আমিনী অভিযোগ করেন, মানববন্ধন কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসা ৬০ জন কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। পুলিশ কাউকে সেখানে দাঁড়াতেই দেয়নি। অবস্থা দেখে অন্যরা সরে গেলে কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। তিন ঘণ্টা পর পুলিশ গ্রেপ্তারকৃতদের ছেড়ে দেয়।

চারদলীয় জোটের এ নেতা বলেন, কোরআন রক্ষার স্বার্থে তিনি হরতাল ডেকেছেন। সরকার যদি মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক ডেকে নীতিমালা পরিবর্তন করে, তাহলে তিনি হরতাল প্রত্যাহার করবেন। মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত নারী উন্নয়ন নীতিমালায় উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার দেওয়াকে সরাসরি কোরআনের ওপর আঘাত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে আমিনী বলেন, 'কোরআনের ওপর হাত দিয়ে এর চেয়ে প্রতাপশালী সরকার আইয়ুব খানও টিকতে পারেনি, এ কাজ করে শেখ হাসিনা নিজেও শেষ হবেন, বাংলাদেশকেও শেষ করবেন।'

ফজলুল হক আমিনী অভিযোগ করেন, আন্দোলন থেকে সরে যেতে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তাঁকে ভয় দেখাচ্ছেন। তিনি বলেন, 'কিছু গোয়েন্দা রিং করে আমাকে ভয় দেখান। বলেন হুজুর আপনার বয়স হয়েছে, এখন জেলে গেলে সহ্য করতে পারবেন না। জুলুম করে, ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থেকে দূরে সরানো যাবে না।'

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল লতিফ নেজামী, মাওলানা শফিক উদ্দিন, মুফতি মোহাম্মদ তৈয়্যব, মুফতি ফয়জুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জামায়াতের মহিলা বিভাগের প্রতিবাদ

নারী উন্নয়ন নীতিমালায় সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকারের বিধান রাখার প্রতিবাদ জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি বেগম শামসুন্নাহার নিজামী। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, পবিত্র কোরআনে আল্লাহ যে উত্তরাধিকার আইন ঘোষণা করেছেন, তা চিরন্তন। কোরআনের আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ দেশবাসী বরদাশত করবে না।

হরতালে বিজেপির সমর্থন

মন্ত্রিসভায় নারী উন্নয়ন নীতিমালা অনুমোদনের প্রতিবাদে ইসলামী ঐক্যজোটের ডাকা ৪ এপ্রিলের হরতালে সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ ও মহাসচিব শামীম-আল মামুন বলেন, কোরআনের সুস্পষ্ট আইন অস্বীকার করে নতুন আইন প্রণয়ন করার অর্থই হচ্ছে পবিত্র কোরআনকে অস্বীকার করা। সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে তাঁরা বলেন, অবিলম্বে নারী নীতি বাতিল ও ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করা না হলে সরকারকে চরম খেসারত দিতে হবে।

পৃথক বিবৃতিতে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড-বেফাক সহসভাপতি মাওলানা আশরাফ আলী, মহাসচিব মাওলানা আবদুল জব্বার, বাংলাদেশ ন্যাশানাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গনি ও মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভঁূইয়া বলেন, সংবিধানের দোহাই দিয়ে ফতোয়া নিষিদ্ধ হলে ধর্মপ্রাণ মুসলমান সে সংবিধানকে ও সরকারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবে। নারী উন্নয়ন নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে গেলে দেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন