2 March 2011

আল-কায়েদা ও জেএমবি যোগাযোগ: আরসিইউডি জঙ্গিগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক, সমন্বয়কারী

টিপু সুলতান | তারিখ: ০২-০৩-২০১১

আবদুর রশিদ চৌধুরী। আরসিইউডির চেয়ারম্যান। ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম উদ্যোক্তা। এআরওয়াইয়ের বাংলাদেশে প্রস্তাবিত টেলিভিশনের সাবেক প্রধান

ধর্মভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের আড়ালে মূলত জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা ও দেশি-বিদেশি জঙ্গি সংগঠনের সমন্বয়ের কাজ করছে রিসার্চ সেন্টার ফর ইউনিটি ডেভেলপমেন্ট (আরসিইউডি)। কথিত গবেষণাপ্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রশিদ চৌধুরী ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম উদ্যোক্তা। এ ছাড়া তিনি ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিমের ঘনিষ্ঠজন। সেই সূত্রে আবদুর রশিদ দুবাইভিত্তিক পাকিস্তানি কোম্পানি এআরওয়াইয়ের বাংলাদেশে প্রস্তাবিত টেলিভিশনের প্রধানের দায়িত্ব পান। এআরওয়াই পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ছাড়াও আল-কায়েদা ও তালেবানের মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সহযোগী বলে অভিযোগ আছে।
আবদুর রশিদ দাবি করেন, আরসিইউডির মাধ্যমে তাঁরা সারা বিশ্বের মুসলিম ঐক্য নিয়ে কাজ করতেন। তবে প্রথম আলোর হাতে আসা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আরসিইউডি থেকে বিভিন্ন সময়ে নিষিদ্ধঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জন্য সদস্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, আরসিইউডি মূলত জামায়াতুল মুসলেমিন নামের অপর একটি ধর্মভিত্তিক সংগঠনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। আবার জেএমবি ও ইয়েমেনভিত্তিক আল-কায়েদার মধ্যে সংযোগ ও সমন্বয়কারী হিসেবে আরসিইউডির নাম এসেছে। এই সংগঠনের অন্তত তিন সদস্য গত বছর ইয়েমেনে আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হন। তাঁদের মধ্যে আবদুর রশিদের জামাতা তেহজীব করিমও রয়েছেন। আর তেহজীব ও তাঁর বড় ভাই রাজীব করিম দুজনই বাংলাদেশে জেএমবির সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের সঙ্গে আল-কায়েদার আরব উপদ্বীপের নেতা আনোয়ার আল-আওলাকির সরাসরি যোগাযোগ ছিল বলে রাজীব যুক্তরাজ্যের আদালতে বলেছেন। গত সোমবার রাজীব যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমান উড়িয়ে দেওয়াসহ সন্ত্রাসমূলক চারটি অভিযোগে ব্রিটিশ আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ১৮ মার্চ তাঁর সাজা ঘোষণা করা হবে।

যেভাবে সন্ধান: জঙ্গি তৎপরতার ওপর অনুসন্ধান করতে সিলেটে গিয়ে ২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে আরসিইউডির ব্যাপারে প্রথম তথ্য পান এই প্রতিবেদক। সিলেট অঞ্চলে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিযুক্ত এক কর্মকর্তা শুধু জানান, সংগঠনটির কার্যালয় ধানমন্ডিতে। ওই কর্মকর্তা বিষয়টি তখন ঢাকায় নিজ দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। ২০০৯ সালের মার্চে ওই দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার প্রধানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘আরসিইউডির বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে।’

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের শুরুর দিকে আরসিইউডির জন্ম। তবে আবদুর রশিদ বলেছেন, এটি ২০০৩-০৪ সালে যৌথ মূলধনি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে (জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অ্যান্ড ফার্মস) নিবন্ধিত হয়। শুরুতে এর কার্যালয় ছিল রাজধানীর ধানমন্ডির ৭ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে। ২০০৬ সালের শেষ দিকে সেখান থেকে আরসিইউডির কার্যালয় স্থানান্তর করা হয় আজিমপুরে।

প্রায় এক বছরের চেষ্টার পর গত বছরের ৪ জুন এ প্রতিবেদক আরসিইউডির চেয়ারম্যান আবদুর রশিদের সাক্ষাৎ পান। সর্বশেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কয়েক দফা কথা হয়েছে। প্রতিবারই তিনি জেএমবি ও জামায়াতুল মুসলেমিনের সঙ্গে আরসিইউডির সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন।

রশিদ দাবি করেন, আরসিইউডি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এখানে সপ্তাহে এক দিন সক্রিয় সদস্যদের নিয়ে বৈঠক, ধর্মীয় আলোচনা বা তালিম এবং মাঝেমধ্যে সভা-সেমিনার, কর্মশালার আয়োজন করা হতো। এখন আর এটি সক্রিয় নয় বলে তিনি দাবি করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত বছর গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবির আমির সাইদুর রহমান বলেছেন, আরসিইউডি মূলত জামায়াতুল মুসলেমিনের একটি এনজিও। এর মূল কাজ হচ্ছে, মূল সংগঠনের জন্য কর্মী সংগ্রহ ও উগ্র ধর্মীয় মতবাদে উদ্বুদ্ধ করা।

ইয়েমেনে আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া মাইনুদ্দীন শরিফ বলেছেন, আরসিইউডির কার্যালয় আজিমপুরে আবদুর রশিদের বাসার নিচের তলায়।

আবদুর রশিদ বলেন, ‘ধানমন্ডি অফিস বন্ধের পর কিছুদিন কেউ কেউ আমার বাসায়ও আসত। নিচতলা খালি ছিল, তাই সেখানে বসত। বেশি লোক হতো না। ২০-২৫ জন করে লোক একত্র হতো। তরুণেরাই বেশি আসত, বয়স্কও কিছু লোক থাকত।’

আরসিইউডি থেকে জেএমবির সামরিক কমান্ডার: ২০০৮ সালের ১৫ নভেম্বর রাজধানীর মিরপুরের কালশী থেকে জেএমবির কথিত সামরিক শাখার কমান্ডার হানিফ ওরফে কালামকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, তখন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে হানিফ জানান, তিনি জামায়াতুল মুসলেমিনের সদস্য হিসেবে আরসিইউডিতে যুক্ত হন। আরসিইউডির সভায় জামায়াতুল মুসলেমিনের পরিচয়ে জেএমবির লোকজন যেত। তারা সেখান থেকে ধর্মের প্রতি বেশি আবেগপ্রবণদের জেএমবিতে সদস্য হতে অনুপ্রাণিত করত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জামাআতুল মুসলেমিনের সদস্যরা আসতেন আরসিইউডির কার্যালয়ে। হানিফ ও তাঁর সহপাঠী জাহিদ ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময় আরসিইউডির এজাজের (পরে জেএমবির নেতা) দাওয়াতে জেএমবিতে যোগ দেন। তাঁরা তিনজনই জামায়াতুল মুসলেমিনের সদস্য ছিলেন। গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে হানিফ বলেন, ‘জেএমবিতে যোগ দেওয়ার পরপর আমাকে এহসার হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আমি পার্থিব কাজকর্ম ছেড়ে সাংগঠনিক কাজে সম্পৃক্ত হই।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জেএমবির আমির সাইদুর রহমানও গত বছর রিমান্ডে বলেছেন, হানিফ আরসিইউডি থেকে জেএমবিতে এসেছেন।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বৈঠক: জিজ্ঞাসাবাদে হানিফের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরসিইউডির মূল কার্যালয়ে ছাড়াও রাজধানীতে একেক সপ্তাহে একেক স্থানে বৈঠক হতো। এর মধ্যে ভাষানটেক এলাকায় এজাজের বাসা, বাড্ডায় লিটনের বাসা, গ্রিন রোড এলাকায় রেজোয়ানের (এখন ইয়েমেনের কারাগারে বন্দী) বাসায়, পুরান ঢাকায় রিপনের বাসা, বনানী ডিওএইচএসে মাহমুদার বাসা অন্যতম। হানিফ জানান, কাঁচপুর ব্রিজ ও মেঘনা ব্রিজের মধ্যবর্তী স্থানে আরসিইউডির একটি শাখা অফিস আছে।

আরসিইউডির চেয়ারম্যান রশিদ দাবি করেন, হানিফকে তিনি চেনেন না। হানিফ যাঁদের নাম বলেছেন, তাঁদেরও চেনেন না। তবে তিনি স্বীকার করেন, আরসিইউডিতে সাপ্তাহিক আলোচনা হতো। এর মধ্যে বনানী ডিওএইচএসে বদরুন রশিদের বাসায় শুধু নারী সদস্যদের নিয়ে তালিম হতো। বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্ত্রী বদরুন রশিদ মারা গেছেন।
আরসিইউডির চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে আরও বলেন, ধানমন্ডির অফিসে প্রতি মাসে তিন-চারটি বৈঠক হতো। প্রতি বৈঠকে ২০-২৫ জন থাকত; তারা তরুণ, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। আলোচকদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিও থাকতেন।

এসব আলোচনায় কারা বয়ান করতেন এবং কারা আসত—এ প্রশ্নের জবাবে রশিদ বলেন, ‘সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল।’ কিন্তু এখানে এমন আলোচনা হবে বা কবে, কখন হবে, তা মানুষ কীভাবে জানত—এ প্রশ্ন করলে তিনি চুপ থাকেন।

জেএমবিকে সহায়তা: সূত্র জানায়, জেএমবির আমির সাইদুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে বলেছেন, আরসিইউডির পক্ষ থেকে জেএমবিকে বেশ কিছু জিহাদি বই ছাপিয়ে দেওয়া হয়। ইয়েমেনের আল-কায়েদার সঙ্গে জেএমবির যোগাযোগ তৈরি, ইয়েমেনের নাগরিক আহমেদের সঙ্গে বৈঠক, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য পাহাড়ে জমি কিনতে কয়েক দফায় ৭৪ লাখ টাকা অনুদান—সবই করে দেন আরসিইউডির সায়েফ ও সাদ্দাম।

তবে আরসিইউডির চেয়ারম্যান এসব অস্বীকার করেছেন। কিন্তু ইয়েমেনে আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ঢাকার মাইনুদ্দীন শরিফও সম্প্রতি গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, আরসিইউডিতে সাদ্দাম নামের একজনকে তিনি চিনতেন। মাইনুদ্দীন এ প্রতিবেদককে বলেছেন, তিনি আবদুর রশিদের জামাতা তেহজীব করিমের মাধ্যমে ২০০৬ সালে আরসিইউডির সঙ্গে যুক্ত হন। রশিদের বাসার নিচতলায় তাঁদের বৈঠক হতো।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মাইনুদ্দীন ঢাকায় একটি গোয়েন্দা সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, আরসিইউডি দেশে একটা নাশকতার পরিকল্পনা করছিল, এটা টের পাওয়ার পর তিনি আর সেখানে যাননি।

কে এই রেজাউল রাজ্জাক: আবদুর রশিদ প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, আরসিইউডির মূল উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করা রেজাউল রাজ্জাক। তবে রেজাউল কাগজপত্রে কোনো পদে ছিলেন না। তিনি আরও জানান, ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলার পর এক রাতে রেজাউলকে ধানমন্ডির বাসা থেকে প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থা তুলে নিয়ে যায়। ওই রাতেই রেজাউলের স্ত্রী তাঁকে টেলিফোনে তা জানান। পাঁচ-ছয় দিন পর রেজাউলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। রেজাউল পরে রশিদকে বলেছিলেন, গোয়েন্দারা তাঁকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।

আবদুর রশিদ স্বীকার করেছেন, তিনি ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালে একজন উদ্যোক্তা ছিলেন। ইসলামী ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ব্যাংকের দেশি উদ্যোক্তাদের তালিকায় আবদুর রশিদ চৌধুরীর নাম আছে। তবে কোনো ছবি নেই। তিনি জানান, তাঁর মতো রেজাউল রাজ্জাকের বাবা আবদুর রাজ্জাক লস্করও ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। সেই সূত্রে লস্করের সঙ্গে রশিদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। রশিদ জানান, রেজাউল রাজ্জাক ঢাকায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এআইইউবি) শিক্ষক।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি এআইইউবি কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে জানায়, রেজাউল রাজ্জাক গত বছরের জুন থেকে আর সেখানে নেই। তাঁর স্থানীয় কোনো ঠিকানাও নেই। চাকরির ফাইলে তাঁর আমেরিকার ঠিকানা দেওয়া আছে।

আরেকটি সূত্র জানায়, গত বছর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে রেজাউলের ব্যাপারে এআইইউবিতে খোঁজখবর নেওয়া হয়। এরপর তিনি সেখানকার চাকরি ছেড়ে দেন। রেজাউল রাজ্জাক এখন ইসলামী ব্যাংকিং নিয়ে পিএইচডি করতে মালয়েশিয়ায় আছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

আবদুর রশিদ জানান, আরসিইউডির সেক্রেটারি হলেন আবুল কালাম আল আজাদ (৩৫)। তিনি পিএইচডি করতে ২০০৬-০৭ সালের দিকে সস্ত্রীক বিদেশে যান। তাঁর আগে আবুল কালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। রশিদ দাবি করেন, কালাম কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, তাঁর বাড়ি কোথায়, সেটা তিনি ভুলে গেছেন। আরসিইউডির আর কে কে ছিলেন, সেটা তাঁর মনে নেই। কাগজপত্র সব সেক্রেটারি কালামের কাছে রয়েছে। এ ছাড়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকও আরসিইউডিতে জড়িত, তাঁর নামও ভুলে গেছেন বলে দাবি করেন রশিদ।
কাগজপত্র নিয়ে লুকোচুরি: সংগঠনের সদস্য ও কর্মকর্তাদের নামের তালিকা ও অন্যান্য কাগজপত্র দেখতে চাইলে আবদুর রশিদ দাবি করেন, সেগুলো তাঁর কাছে নেই। তিনি গত বছরের ৪ জুন বলেছিলেন, ২০০৬ সালে র্যাবের একটি দল ধানমন্ডিতে আরসিইউডি কার্যালয়ে গিয়ে কাগজপত্র দেখে আসে। এরপর ভয় পেয়ে অফিস সেক্রেটারি চলে গেছেন। সংগঠনের কাগজপত্র তাঁর কাছে। অফিস সেক্রেটারির নাম-ঠিকানা ভুলে গেছেন বলে দাবি করেন আবদুর রশিদ। তিনি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বলেছেন, সংগঠনের কাগজপত্র তাঁর কাছে নেই, সেক্রেটারি আবুল কালামের কাছে আছে।

কিন্তু আপনার বাসায়ও তো বৈঠক হতো, সেখানে কারা অংশ নিত? এ প্রশ্নের জবাবে রশিদ বলেন, ‘কারা আসে কারা যায়, তার হিসাব রাখার জন্য আমরা একটি রেজিস্টার খাতা বানাই। যারা যারা আলোচনায় আসত, সবাই নামধাম লিখত। পরে যে ওই খাতাটা কোথায় গেল, সেটা বলতে পারি না।’

এআরওয়াইয়ের সঙ্গে সংযোগ: চট্টগ্রামে আটক ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাবউদ্দিন আহমদ আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, ২০০৪ সালে অস্ত্রের চালান ধরা পড়ার আগে এআরওয়াইয়ের দুই কর্মকর্তা দুই দফায় ঢাকায় এসে এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিমের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁদের একজন এআরওয়াই ডিজিটাল নেটওয়ার্কের (এর অধীন আটটি টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নাম সালমান ইকবাল।

সাহাবউদ্দিন আদালতকে বলেছেন, ঢাকায় আসার পর এনএসআইয়ের তৎকালীন এক কর্মকর্তার বেয়াই ও এআরওয়াইয়ের সালমান ইকবাল টিভি চ্যানেলের জন্য নির্ধারিত স্থান (সাইট) পরিদর্শন করতে যান।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, এনএসআইয়ের কর্মকর্তার ওই বেয়াই হলেন আরসিইউডির আবদুর রশিদ চৌধুরী। আবদুর রশিদ প্রথম আলোর কাছে তা স্বীকার করে বলেন, আবদুর রহিম তাঁর পূর্বপরিচিত। রহিমই তাঁকে এআরওয়াই টেলিভিশনের বাংলাদেশের প্রধান হিসেবে যুক্ত করান। সালমান ইকবালের সঙ্গে হোটেল শেরাটনে বৈঠকের কথাও স্বীকার করেন তিনি। অবশ্য শেষ পর্যন্ত এআরওয়াই টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে চালু হয়নি।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন