16 January 2011

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত: গবেষণা, বই জালিয়াতি ও ভুয়া সনদ দিয়ে পদোন্নতির চেষ্টা

কুদরাত-ই-খুদা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় | তারিখ: ১৭-০১-২০১১

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অন্যের গবেষণাপত্র ও বই জালিয়াতি করে নিজের নামে প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে। এসব প্রকাশনা দেখিয়ে তিনি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার চেষ্টাও করছেন। তিনি আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু ইউনুছ খান মুহম্মদ জাহাঙ্গীর। ক্যাম্পাসে তিনি জামায়াতপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। এর আগে ২০০১ সালে এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উঠলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর কাগজপত্র তলব করেছিল।

জানা গেছে, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক ও একজন গবেষক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগকারী ব্যক্তিরা হলেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম ও রেজাউল করিম এবং কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষক মোস্তাক মোহাম্মদ ও এ এস মোহাম্মদ আলী।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, আবু ইউনুছ খান মুহম্মদ জাহাঙ্গীর বিভিন্ন ব্যক্তির গবেষণাপত্র, প্রকাশিত বইয়ের কোনো কোনো অংশ হুবহু ও কোনো অংশ আংশিক ঘুরিয়েফিরিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মালিকানাধীন বা প্রতিষ্ঠানের জার্নালে নিজের নামে প্রবন্ধ আকারে প্রকাশ করেছেন। তাঁরা প্রকাশিত এমন সাতটি প্রবন্ধের বিষয়ে অভিযোগ আনেন।

অভিযোগে বলা হয়, ওই সব প্রবন্ধ দেখিয়ে মুহম্মদ জাহাঙ্গীর ২০০৯ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আবেদন করেন। আবেদনপত্রে সংযুক্ত ফাজিল পরীক্ষার নম্বরপত্রে উল্লিখিত ‘পাস’ ফলাফলকে তিনি দ্বিতীয় বিভাগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা বেআইনী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর আগে ঠিক একই ধরনের ঘটনায় (‘পাস’ ফলাফল বদলে প্রথম বিভাগ উল্লেখ করায়) একই বিভাগের শিক্ষক মুজিবর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত হয়েছিলেন।

দুদকে কাগজপত্র তলব: বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ১৯৯৭ সালে মুহম্মদ জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালের জুলাই মাসে তিনি একই বিভাগের অধীনে এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তি হন। একই সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি না নিয়ে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) অধীনে পরিচালিত অগ্রণী স্কুলে আরবি বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি সাত বছর বিনা ছুটিতে সরকারি বেতন-ভাতা ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেলোশিপ গ্রহণ করেছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্টে অবৈধ। অভিযোগকারী ব্যক্তিরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী চাকরি করা কোনো ব্যক্তি এমফিল বা পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হলে অবশ্যই তাঁকে কমপক্ষে এক বছরের শিক্ষাকালীন ছুটি নিতে হবে। তিনি তা করেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, দুদক ২০০১ সালে তাঁর এসব কাগজপত্র তলব করেছিল। কিন্তু কিছুদিন পর বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এলে বিষয়টি আর এগোয়নি। দুদকে কাগজপত্র তলব করার বিষয়টি আবু ইউনুছ খান মুহম্মদ জাহাঙ্গীর স্বীকারও করেছেন।

দ্বিতীয় তদন্ত কমিটি: গত ৬ ডিসেম্বর সিন্ডিকেট কৃষি অনুষদের ডিন সোহরাব আলীকে আহ্বায়ক করে উচ্চতর কমিটি গঠন করে। কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এর আগেও এসব অভিযোগ তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মাহবুবর রহমানকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করেছিল। মাহবুবর রহমানের সঙ্গে গতকাল মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ওই কমিটির কাছে আবু ইউনুছ খান মুহম্মদ জাহাঙ্গীর তাঁর দোষ স্বীকার করেছিলেন। কমিটি সুপারিশসহ প্রতিবেদনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে জমাও দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য কৃষি অনুষদের ডিন সোহরাব আলীকে আহ্বায়ক করে আরেকটি কমিটি করেছে।

আবু ইউনুছ খান মুহম্মদ জাহাঙ্গীরের সঙ্গে গতকাল বিকেলে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে রোববার (আজ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেন। তখনই তাঁর বক্তব্য জানা জরুরি বলে জানালে তিনি অভিযোগগুলো শোনেন এবং সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহান বলেন, আগের কমিটি সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিয়েছে। এখনকার কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন