বিশেষ প্রতিনিধি | তারিখ: ২৮-০৯-২০০৯
এবার খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) প্রশিক্ষণকেন্দ্রের সন্ধান পেয়েছে র্যাব। সেখান থেকে জেএমবির চট্টগ্রাম বিভাগের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা আবদুর রহিম ওরফে জাহিদ ওরফে সাইফুল্লাহকে (২৬) গ্রেপ্তারের পর র্যাব বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আরও চারজন জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
কয়েক দিন ধরে অভিযান চালিয়ে খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা ও গাজীপুর থেকে এই জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ২০টি ডেটোনেটর, দেশীয় প্রযুক্তিতে গ্রেনেড তৈরির ১৪টি লোহার খোল, এক প্যাকেট বিস্ফোরক (প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ), বোমা তৈরির আরও কিছু উপাদান ও ৪৯টি ধর্মীয় পুস্তক উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজন জঙ্গিকে গতকাল রোববার ঢাকায় র্যাব সদর দপ্তরে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়। এঁদের মধ্যে আবদুর রহিম গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর কুমিল্লার চান্দিনায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমাবেশে বোমা হামলা প্রচেষ্টায় জড়িত ছিলেন বলে সাংবাদিকদের সামনে স্বীকার করেছেন। রহিমের বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার থানার ছুটনা গ্রামে। বাবার নাম জয়নাল আবেদীন।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে বলেন, র্যাব গোয়েন্দা তত্পরতার মাধ্যমে তথ্য পায় যে জেএমবি পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা থানার শান্তিপুরে দুর্গম পাহাড়ে চার একর জমি নিয়ে প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করেছে। এরপর গত শনিবার র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার একটি দল চট্টগ্রামের র্যাব-৭-এর সহায়তায় খাগড়াছড়ির ওই পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে রহিমকে গ্রেপ্তার করে।
বড় পর্দায় ওই জঙ্গি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের আলোকচিত্র সাংবাদিকদের দেখানো হয়। তাতে দেখা যায়, পাহাড়ের ওপর একটি পুরোনো মাটির ঘর ও একটি নতুন টিনের ঘর আছে। আশপাশে কোনো জনবসতি নেই।
র্যাব জানায়, রহিম তথ্য দিয়েছেন, জেএমবির আমির মাওলানা সাইদুর রহমানের নির্দেশে ও শুরা সদস্য সাহেদ ওরফে ওসমানের তত্ত্বাবধানে এই প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। সাত-আট মাস আগে মাটিরাঙ্গার শান্তিপুরের আল মদিনা পোলট্রি ফার্মের মালিক দেলোয়ার হোসেন ওরফে সজীবের (৩২) মাধ্যমে এই জমি কেনা হয়।
কর্নেল মিজানুর রহমান বলেন, রহিমকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার রাত আড়াইটায় মাটিরাঙ্গা থেকে দেলোয়ার ও তাঁর পোলট্রি ফার্মের কর্মচারী ইউনুস আলীকে (২০) র্যাব গ্রেপ্তার করে। দুজনই জেএমবির সাধারণ সদস্য (গায়েরে এহসার)। তাঁদের বাড়ি মাটিরাঙ্গার শান্তিপুরে।
রহিমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ভোরে র্যাবের পৃথক দল গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে দেলোয়ার হোসেন ওরফে দুলাল (২৩) এবং কুমিল্লা সদর থানার দীঘিরপাড় এলাকা থেকে মনির ওরফে রিপনকে (২৫) গ্রেপ্তার করে। র্যাব জানায়, এই দুজনও জেএমবির সাধারণ সদস্য। এর মধ্যে দেলোয়ারের বাড়ি শেরপুরের নকলা থানার গোয়ালেরকান্দা গ্রামে। রিপনের বাড়ি কুমিল্লায়।
র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার হওয়া রহিম জেএমবির আত্মঘাতী বোমা হামলা পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নে দায়িত্বশীলদের একজন। তিনি ২০০৮ সালে কুমিল্লায় এক অভিযানে র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে বোমা মেরে পালিয়ে যান। তাঁর বিরুদ্ধে দেবিদ্বার থানায় তিনটি মামলা আছে।
গ্রেপ্তারকৃত রহিম গতকাল র্যাব সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তাঁকে তিন দিন আগে মাটিরাঙ্গায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে। তিনি ২০০৪ সালে কুমিল্লার জনৈক তানজিমের মাধ্যমে জেএমবিতে যোগ দেন। সংগঠনের সিদ্ধান্তে ২০০৫ সালে মাটিরাঙ্গায় আল-মদিনা পোলট্রি খামারে তিনি চাকরি নেন।
রহিম জানান, জেএমবির বর্তমান শুরা সদস্য ও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রধান ওসমানের নির্দেশে তাঁরা গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর কুমিল্লার চান্দিনায় নির্বাচনী সমাবেশে বোমা হামলা করে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং এর আগে স্থানীয় মোস্তাক ওরফে মোশাররফের বাড়িতে বোমা মজুদ করেন। কিন্তু ওই দিন র্যাবের অভিযানের মুখে পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। তাঁদের সঙ্গী নাঈম ধরা পড়েন। রহিম ও ওসমান র্যাবের ওপর বোমা ছুড়ে পালিয়ে যান।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন