4 January 2011

রাজধানীতে চার জেএমবি জঙ্গি গ্রেপ্তার: সবাই তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। রবিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-২ যৌথভাবে এ অভিযান চালায়। গ্রেপ্তারকৃত চারজনই শিক্ষিত ও তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশেষ পারদর্শী। একজন ইংরেজি মাধ্যমের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ‘এ’ লেভেলের ছাত্র।

র‌্যাব জানায়, এ চারজন তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) ব্যবসার আড়ালে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) দাওয়াতি কার্যক্রম ও সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল। জেএমবিতে জড়িত অভিযোগে এর আগে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র গ্রেপ্তার হলেও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের কোনো ছাত্র গ্রেপ্তারের নজির নেই বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেÑদারুল এহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ ও দাওরা বিভাগের সম্মান চতুর্থ বর্ষের ছাত্র এস এম আবদুল গণি (২৫) ও আরবি সাহিত্যের সম্মান তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবু হুরায়রা বিন আমান ওরফে শামস (২৪), ধানমণ্ডি একাডেমিয়া কোচিং সেন্টারের ‘এ’ লেভেলের ছাত্র শাহনেওয়াজ আল মারুফ (২২) এবং সফট্ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র এস এম আশরাফুজ্জামান। আশরাফ বতর্মানে একটি মোবাইল ফোন অপারেটর কম্পানিতে কর্মরত।

গ্রেপ্তারের পর গতকাল সোমবার উত্তরা র‌্যাব সদর দপ্তরে তাঁদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল জানান, জঙ্গিরা আইটি সেকশনে জনবল বাড়িয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে সদস্য সংগ্রহসহ সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করছেন। রবিবার সন্ধ্যায় কলাবাগান বাসস্ট্যান্ড থেকে জেএমবির দাওয়াতি শাখার সদস্য এস এম আবদুল গণিকে আটক করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যানুযায়ী ওই রাতেই কলাবাগানের আশরাফ আলীর বাড়িতে ‘স্ফটিক’ নামে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে দলের দাওয়াতি শাখার শাহনেওয়াজ আল মারুফ ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আহ্বায়ক এস এম আশরাফুজ্জামান ও রিক্রুটিং-প্রশিক্ষণ বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক আবু হোরায়রা বিন আমান ওরফে সামসকে আটক করা হয়। সেখান থেকে তিনটি কম্পিউটার, একটি মোটরসাইকেল, ৬১ হাজার ৮১৯ টাকা, ৩০টি গোপনীয় তথ্যের সিডিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবি সদস্যরা তাঁদের জঙ্গি কার্যক্রমের বিস্তৃতি ঘটাতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে টার্গেট করে সদস্য সংগ্রহ করার কথা স্বীকার করেছেন।

র‌্যাব সূত্র জানায়, আবু হুরায়রা বিন আমানের বাবা মৃত আমানউল্লাহ। গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার লালদারীতে। হুরায়রা জেএমবির উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে তাঁদের নির্দেশে সংগঠনের নতুন সদস্য রিক্রুট এবং প্রশিক্ষণ কাজ চালাচ্ছিলেন। এ ছাড়া জেএমবি নেতৃস্থানীয় লোকদের তাঁর ঢাকার বাসায় আত্মগোপনে থাকার সুযোগ করে দিতেন। হিযবুত তাহরীর ও তানজিম নামক একটি সংগঠনে যোগদানের দাওয়াত পেলেও ২০০৭ সালের শুরুতে তিনি জেএমবির নেতা মোস্তাফিজের মাধ্যমে জেএমবিতে জড়ান। গত বছরের প্রথমে বান্দরবানে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার সময় তিনি সহযোগী গণিসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

আরেক সদস্য আশরাফুজ্জামান একজন কম্পিউটার সফট্ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। ২০০৮ সালে আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ালেখা শেষে একটি মোবাইল কম্পানিতে আইটি ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি আবু হুরায়রাকে জেএমবির বিভিন্ন রিক্রুটিং ও প্রশিক্ষণ বিষয়ে সহায়তা দিতেন। কলাবাগানের নিজ বাসা আইটি ফার্মের ব্যানারে আশরাফ জেএমবির দাওয়াতি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন