নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম | তারিখ: ০২-০১-২০১১
দক্ষিণ আফ্রিকায় রপ্তানির জন্য প্রস্তুত ৪০ হাজার শার্ট (শিশু পোশাক) ছিনতাইয়ের অভিযোগে পুলিশ দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। চট্টগ্রামের একটি গুদাম ও ঢাকার উত্তরা থেকে ছিনতাই হওয়া সব পোশাকও উদ্ধার করা হয়েছে। চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর আটজন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সাজ্জাদ হোসেন দুবাইতে বসে এই ছিনতাইয়ের সমন্বয় করেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া সন্ত্রাসীর নাম রুবেল ও কাভার্ড ভ্যানের চালক মোহাম্মদ জহির। এঁদের মধ্যে রুবেল পলাতক আসামি সাজ্জাদের বাহিনীর সদস্য। রুবেলের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা আছে। তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তাকারীদের এখন হত্যার হুমকি দিচ্ছেন সাজ্জাদ।
সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে শহরতলির আতুরার ডিপোর পশ্চিম হাজিপাড়ার জনৈক বাহাদুরের গুদাম থেকে ছিনতাই হওয়া সাড়ে সাত হাজার শার্ট জব্দ করা হয়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রুবেল তিনতলা গুদাম ভবন থেকে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ পুকুরটি ঘেরাও করে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আজ রোববার আদালতে আবেদন করা হবে। বাকি সাড়ে ৩২ হাজার শার্টসহ একটি কাভার্ড ভ্যান গত শুক্রবার ঢাকার উত্তরা থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় চালক জহিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চান্দগাঁও থানার খতিজা এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড এক্সেসরিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৪০ হাজার তৈরি শার্ট পার্শ্ববর্তী মোনেনো ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইনে পাঠানো হয়। পোশাক পরিবহনের সময় সিঅ্যান্ডবি রাস্তার মাথায় তিন সন্ত্রাসী গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ওই গাড়িটি পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল দুটি মোটরসাইকেল আরোহীসহ আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী।
সূত্র জানায়, সাজ্জাদের নির্দেশে তাঁর জুনিয়র বাহিনীর প্রধান সরওয়ার ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দেন। তাঁর বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় তিনটি হত্যাসহ আটটি মামলা আছে। ছিনতাইয়ে অংশ নেওয়া আরও তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন, তিনটি হত্যাসহ নয়টি মামলার আসামি মহিন, একাধিক মামলার আসামি মেক্সন ও টিটন। এদের মধ্যে মহিন ও মেক্সন অস্ত্র পরিচালনায় পারদর্শী। খতিজা এন্টারপ্রাইজের পরিচালক জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় রপ্তানি করতে স্কুলের শিশুদের জন্য ৪০ হাজার শার্ট তৈরি করা হয়। জাহাজীকরণের আগেই সন্ত্রাসীরা তৈরি পোশাকবাহী গাড়িটি ছিনতাই করে।
চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর আট খুনের মামলায় শিবির ক্যাডার সাজ্জাদসহ চার সন্ত্রাসীর মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ২০০৮ সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের একটি আদালতে এই রায় দেওয়া হয়। রায়ের আগেই সাজ্জাদ দুবাইতে পালিয়ে যান।
বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সাজ্জাদ দুবাইতে বসে ৪০ হাজার শার্ট ছিনতাইয়ের সমন্বয় করেন। পুলিশ তাদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। তাঁর বাহিনীর একজন গ্রেপ্তার হওয়ায় সাজ্জাদ স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে ফোন করে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন।
ওসি দাবি করেন, ‘আমরা সাজ্জাদের জুনিয়র বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত করেছি। এরা বায়েজিদ ও পাঁচলাইশ এলাকায় ব্যাপক চাঁদাবাজি ও শিল্পাঞ্চলে ছিনতাই-ডাকাতি করছে। এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাজ্জাদের বাহিনীর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমরা যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত আছি। কারণ, মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে সাজ্জাদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন।’
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন