27 December 2010

হাটহাজারীতে বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে: আক্রমণের কৌশল বদলে সংগঠিত হচ্ছে জেএমবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও হাটহাজারী প্রতিনিধি

কৌশল পরিবর্তনের মাধ্যমে সারা দেশে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। এ ক্ষেত্রে তারা আগের পন্থা 'আক্রমণ' থেকে পিছিয়ে এসেছে। এখন শুধু 'দাওয়াত'-এর মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ করছে তারা। তবে আত্মরক্ষার্থে সংগঠনের সদস্যদের নিজেদের সঙ্গে বোমা রাখতে পারবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকলে এই বোমার ব্যবহার করতে হবে।

শক্তিশালী পাঁচটি বোমাসহ চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা পুলিশের হাতে গত রবিবার গ্রেপ্তার জেএমবি সদস্য শামীম হাসান (২২) পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। মাসুম নামের এক যুবক বর্তমানে চট্টগ্রামে জেএমবিকে সংগঠিত করছে বলে শামীমের দাবি। আর শামীম এই দলে বোমা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করত। ইতিমধ্যে মাসুম ও শামীম ১১ জনকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছে। শামীমকে ২০০৮ সালে একটি জঙ্গি মামলায় সাত বছরের সাজা দিয়েছিলেন আদালত।

এদিকে হাটহাজারীর জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা গ্রেনেড আকৃতির পাঁচটি বোমা গতকাল সোমবার নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কর্ণফুলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুর রশিদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি দল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করে।

আমিনুর রশিদ জানান, মূলত লোহার পাইপের ভেতরে করে বোমাগুলো বানানো হয়। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হলেও এসব বোমা খুবই শক্তিশালী। ধারণা করা হচ্ছে, বাইরে থেকে এসব বোমা বানিয়ে হাটহাজারীতে আনা হয়েছিল।

হাটহাজারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে জানান, পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার শামীমসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হামলার শিকার পুলিশের এসআই ওমর ফারুক বাদী হয়ে এসব মামলা করেন। বিস্ফোরক আইন ও সন্ত্রাস দমন অধ্যাদেশে করা এসব মামলায় শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

জেএমবির সদস্য হিসেবে শামীম যাদের নাম প্রকাশ করেছে তাদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। এর মধ্যে হাটহাজারী উপজেলার ফটিকা গ্রামের মনোয়ার ও মোশাররফ নামে দুজনকে শনাক্ত করা গেছে। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ জেএমবির বাকি সদস্যদের নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

শামীমের দেওয়া বিভিন্ন তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, চার বছর ধরে জেএমবির সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করছে শামীম। প্রাথমিক অবস্থায় লালমনিরহাট এলাকায় জেএমবির হয়ে তৎপরতা চালালেও পরে তাকে নীলফামারীর জলঢাকা এলাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল। গত নভেম্বরের মাঝামাঝিতে জেএমবি নেতা মাসুম তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসে।

ওসির ভাষ্য মতে, শামীম পুলিশকে জানিয়েছে আপাতত কোনো নাশকতার জন্য নয়, আত্মরক্ষার্থে এসব বোমা তাদের আস্তানায় রাখা হয়েছিল। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে একটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। সংগঠনের অর্থের জোগান দিত মাসুম। তবে কখন, কিভাবে এই টাকা আসত তা সে জানত না।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন