শহীদুল হুদা অলক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র জামায়াত নেতা আতাউর রহমানই আগামী নির্বাচনে দলীয় সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন_এমন প্রচার থাকলেও শেষ মহূর্তে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে জামায়াত আনুষ্ঠানিকভাবে সাবেক এমপি ও সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক লতিফুর রহমানকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। প্রার্থী সমর্থন নিয়ে সংগঠনের ভেতরে চলা তুমুল তৎপরতার অংশ হিসেবে প্রার্থী পরিবর্তনকে ঘিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জামায়াত। গত উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী সমর্থন নিয়ে বিভক্তির পর আবারও নতুন করে জামায়াত নেতাদের দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াতের একাধিক নেতা বিভেদের কথাটি স্বীকারও করেছেন।
প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা চাঁপাইনবাবগঞ্জ দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। জামায়াত-বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সুযোগে মধ্যখানে একবার আওয়ামী লীগ ছাড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেয়র পদটি বহু বছর ধরে তাদেরই দখলে। সে কারণে জামায়াতের কেন্দ্রীয় এবং জেলা নেতারা আগামী মেয়াদেও এ পৌরসভা জামায়াতের দখলে থাকুক এমন তৎপরতা চালিয়ে আসছিলেন। তবে প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে খোদ দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে মতানৈক্যের কারণে তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জামায়াত নেতা জানান, বতর্মান পৌর মেয়র অধ্যাপক আতাউর রহমানের অনুসারীরা চেয়েছিলেন তিনিই মেয়র প্রার্থী হিসেবে বহাল থাকুক। আতাউর রহমানও সেই লক্ষ্যে কাজ করে আসছিলেন। কিন্তু জেলা জামায়াতের একাংশ তাঁর বিরোধিতায় মুখর হয়ে উঠলে তাঁর ইচ্ছে পূরণের ক্ষেত্রে অন্তরায় ঘটে। জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, এ নিয়ে জামায়াতকে কয়েক দফা বৈঠক করতে হয়েছে। এমনকি কেন্দ্রের হস্তক্ষেপও চাইতে হয়েছে। জামায়াত নেতারা জানান, আতাউর রহমান দলীয় সমর্থন নিয়ে পৌর মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর নিজের ভাগ্য বদলালেও দলে এর আশানুরূপ প্রভাব পড়েনি। নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী তিনি দলের পক্ষে কাজ করেননি। এমনকি সংকটাপন্ন সময়েও তিনি দলের পাশে সক্রিয়ভাবে দাঁড়াননি। এদিকে জামায়াতের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির বিদ্রোহী নেতা রফিকুল ইসলাম বুলবুলকে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক লতিফুর রহমান সমর্থন দিলে জামায়াতের আতাউর রহমান অংশ সমর্থন দিয়ে বসেন জেলা জাসদের সভাপতি রফিকুল ইসলামকে। তখন থেকেই প্রকট আকার ধারণ করে জামায়াতের লতিফ গ্রুপ ও আতাউর গ্রুপ। জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, 'জেলা কর্মপরিষদের বৈঠকে শুক্রবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোনো বিভক্তির খবর আমার কাছে নেই। আর এ রকম হওয়ার কোনো সুযোগও নেই।' পৌর জামায়াতের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ওমর ফারুক বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হলে তাঁকে বহিষ্কারের মতো কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে জামায়াতের গঠনতন্ত্রে। আর জামায়াত এমন একটি সুশৃঙ্খল দল, যেখান থেকে একবার কোনো নেতা-কর্মীর বিচ্যুতি ঘটলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা অসম্ভব। সমর্থন পাওয়া সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক লতিফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কোনো বিভেদ সৃষ্টি হয়নি। আমাদের সংগঠনের নিয়ম হচ্ছে_কেউ কোনো পদ চাইলে পাবেন না। আবার কাউকে দায়িত্ব দিলে অস্বীকার করা যাবে না। সংগঠন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রার্থী ঘোষণার সময় আতাউর সাহেব সঙ্গে ছিলেন। তিনি আমার জন্য কাজ করবেন।' এ ব্যাপারে বর্তমান মেয়র আতাউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য চেষ্টা করে তাঁর সেলফোনে পাওয়া যায়নি।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন