11 December 2010

রিমান্ডে মুফতি হান্নানের তথ্য: জোট আমলে তাঁকে সহযোগিতা করতেন মাওলানা মুহীউদ্দীন

মাসুদ কার্জন

জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান দাবি করেছেন, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে জোটের শরিক দলের নেতা মাওলানা মুহীউদ্দীন খান তাঁকে নানাভাবে সহায়তা করেন। হান্নানের নামে দায়ের করা শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানোর ক্ষেত্রেও মুহীউদ্দীনের ভূমিকা ছিল। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নান রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছেন বলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র মতে, বানিয়ারচর গির্জায় বোমা হামলাসহ জঙ্গি বিষয়ে নানা তথ্য যাচাই করতে হান্নানকে মালিবাগ সিআইডি সদর দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পাশপাশি তাঁর মদদদাতাদের ব্যাপারে জানার চেষ্টা চলছে। গত মঙ্গলবার গোপালগঞ্জ থেকে মুফতি হান্নান ও তাঁর সহযোগী আরিফ হাসান সুমনকে ঢাকায় সিআইডি সদর দপ্তরে আনা হয়।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দ কালের কণ্ঠকে জানান, শুধু বানিয়ারচর গির্জায় হামলার মামলাই নয়, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন বিষয়েও মুফতি হান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জানতে চাওয়া হচ্ছে তাঁর মদদদাতাদের ব্যাপারেও।

জানা গেছে, হান্নান জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, 'আগের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিভিন্ন বোমা হামলার মামলায় ফেরার হই। পরে চারদলীয় জোট সরকারের সময় আবারও সক্রিয় হয়ে প্রকাশ্যে আসি। ওই জোটের শরিক বিশেষ করে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতাদের কাছ থেকে সহমর্মিতা পাই। তৎকালীন ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা মাসিক মদীনার সম্পাদক মাওলানা মুহীউদ্দীন খান এ ক্ষেত্রে অনেক সহযোগিতা করেছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফেরার অবস্থায় তাঁর সঙ্গে কয়েকবার দেখাও করি। ওই সময় তিনি সরকারের প্রভাবশালী অনেকের কাছে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করে দিয়েছিলেন। কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রেখে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলাটি রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানোর ক্ষেত্রে তিনি অনেক সাহায্য করেছিলেন।'

সিআইডি সূত্রে জানা যায়, বর্তমান ওলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কার্যকরী সভাপতি মুহীউদ্দীন খানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন আফগানিস্তান ফেরত 'যোদ্ধা' মুফতি হান্নান।

হান্নান আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আহত হয়েছিলেন। পরে দেশে ফিরে হরকাতুল জিহাদ গঠনে ভূমিকা রাখেন। জানা যায়, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানভিত্তিক বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। ২১ আগস্টের হামলাসহ চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন গ্রেনেড হামলায় তাঁর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে।

সূত্র জানায়, বানিয়ারচর গির্জায় বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় যথাক্রমে ৭ ও ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয় হান্নান ও তাঁর সহযোগীর। ঈদের আগে এ দুই জঙ্গিকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর অঞ্চলের বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত তা মঞ্জুর করেছিলেন। কিন্তু ওই সময় তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। মঙ্গলবার একই আদালতে হাজির করে হাকিমকে অবহিত করে তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়। সূত্র মতে, মুফতি আবদুল হান্নান ও আরিফ হাসান সুমন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বানিয়ারচর গির্জায় বোমা হামলা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়ায় তাঁদের এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ মামলার অন্য আসামি শনাক্তসহ তথ্য যাচাইয়ে তাঁদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে
২০০১ সালের ৩ জুন সাপ্তাহিক প্রার্থনার দিনে বানিয়ারচর ক্যাথলিক গির্জায় বোমা বিস্ফোরণে ১০ জন নিহত ও অর্ধশত মানুষ আহত হয়। এ ব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা দুটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ১৪ জন করে। সিআইডি প্রায় ১০ বছর ধরে তদন্ত করলেও মূল আসামি শনাক্তসহ তদন্তকাজ শেষ হয়নি।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন