8 November 2010

আহত ৩০, শিবিরের ছয় নেতা-কর্মী আটক ফরিদপুর মেডিকেলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ, ওসমানী মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট ও ফরিদপুর অফিস | তারিখ: ০৯-১১-২০১০

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে গতকাল সোমবার ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের দলে বেড়ানোকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় শিবিরের মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতিসহ ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের এক পক্ষের হামলায় অপর পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় কলেজের ছাত্রাবাসের ১৪টি কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়।
ওসমানী মেডিকেল কলেজের প্রশাসন, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয় ৫ নভেম্বর। নতুন শিক্ষার্থীদের দলে বেড়ানোকে কেন্দ্র করে গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ছাত্রলীগ ও শিবিরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বাগিবতণ্ডা হয়। এরপর উভয় পক্ষ ক্যাম্পাসে শক্তি বৃদ্ধি করে। শিবিরের মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি নাফিস রিয়াজুজ্জামান ও কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল বিরুনি ১০টার দিকে হাতাহাতি ও বাগিবতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
এর পরপরই শিবিরের ৩০ থেকে ৪০ জন নেতা-কর্মী সংগঠিত হয়ে কলেজ করিডরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালান। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কলেজ ক্যানটিনে অবস্থান নেন। এ সময় শিবিরের নেতা-কর্মীরা কলেজ মিলনায়তনের সামনে প্রদর্শনী স্টল, দেয়ালপত্রিকাসহ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক প্রচারণার স্ট্যান্ড ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা শিবিরের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।
সংঘর্ষে ছাত্রলীগের মেডিকেল কলেজ শাখার সহসভাপতি রতিন হালদার, সাংগঠনিক সম্পাদক মোশাররফ হোসেনসহ ২২ জন নেতা-কর্মী আহত হন। তাঁদের মধ্যে ওই দুই নেতা এবং কর্মী পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী শাহেদ হোসেন, শামসুল আরেফিন ও আয়নুল মাহমুদ, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসাদ, সাফিন ও মল্লিককে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অপর শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সংঘর্ষে শিবিরের ছয়জন কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন শান্ত, মাহমুদ, জালাল, সাজেদুল, খালেদ ও ইমরান। তাঁদের সিলেটের বিভিন্ন বেসরকারি হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
খবর পেয়ে পুলিশ ও র্যা বের সদস্যরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ বেধড়ক লাঠিপেটা শুরু করলে ছাত্রলীগ ও শিবিরের কর্মীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। পুলিশের লাঠিপেটায় একটি জাতীয় দৈনিকের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও কয়েকজন অভিভাবক আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কলেজ শাখার শিবিরের সভাপতি নাফিস রিয়াজুজ্জামান, শিবিরকর্মী শিক্ষানবিশ চিকিৎসক নাজমুল হোসেন ও আবদুল্লাহ ইউসুফ জামিল, পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল সাদাত, তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জালাল হোসেন ও প্রথম বর্ষের ছাত্র হাসান মুরাদকে আটক করে। কলেজ ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ লোহার রড, দা, হকিস্টিক ও ক্রিকেটের স্ট্যাম্প উদ্ধার করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিবিরের একজন নেতা জানান, নতুন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিতে গেলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গত বৃহস্পতিবার থেকে বাধা দিয়ে আসছেন। সোমবারও (গতকাল) বাধা দেওয়ায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। শিবিরের এই নেতার দাবি, সংঘর্ষে তাঁদের অন্তত ১০ জন কর্মী আহত হয়েছেন।
মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল বেরুনি খান বলেন, ভর্তি-কার্যক্রম বানচাল করতে শিবির পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে।
সিলেট কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুজিবুর রহমান জানান, উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার সময় লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল ফরহাদ হোসেনের মাথায় ইট লেগেছে। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ মৃদু লাঠিপেটা করে। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার নওরোজ আহমদ বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষের দেওয়া অভিযোগ অনুযায়ী পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে। ক্যাম্পাসে পুুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কলেজের উপাধ্যক্ষ হারুন-উর-রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ওই ঘটনায় ঘণ্টা খানেক ভর্তি-কার্যক্রম বন্ধ ছিল। একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংঘর্ষের ঘটনায় সিলেট কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, গত রোববার ছিল কলেজের ১৫তম ব্যাচের কোর্স সমাপনী অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে রাত দুইটার দিকে ছাত্রলীগের মেডিকেল কলেজ শাখার এক পক্ষের কয়েকজন কর্মী কলেজের শহীদ মিনারে আড্ডা দিচ্ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, রাত আড়াইটার দিকে দাউদ চৌধুরীর (মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক) নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে শহীদ মিনারে অবস্থানরত কর্মীদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। এরপর তাঁরা ছাত্রাবাসের কক্ষে কক্ষে গিয়ে বেশ কয়েকজন ছাত্রকে ঘুম থেকে তুলে মারধর করেন। এ সময় হামলাকারীরা ছাত্রাবাসের ১৪টি কক্ষের জানালার কাচ ও আসবাব ভাঙচুর করেন।
হামলায় ১৫ জন আহত হন। আহত ছাত্রদের মধ্যে আটজনকে ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অবশিষ্ট সাতজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, আহত ছাত্রদের অনুরোধে তাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
শিক্ষার্থীরা জানান, রাত সাড়ে তিনটার দিকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ স ম জাহাঙ্গীর চৌধুরী ক্যাম্পাসে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। সকালে পুলিশ ছাত্রাবাসের সব কক্ষে তল্লাশি চালায়।
আহত ছাত্রদের দাবি, হামলাকারীরা ছয়টি মুঠোফোন সেট ও একটি ল্যাপটপ লুটে নিয়ে গেছে।
এ নিয়ে গতকাল কলেজের একাডেমিক কমিটির জরুরি সভা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঘটনার তদন্তে কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক নাজির আহম্মেদকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটি গতকাল থেকেই কাজ শুরু করেছে।
ছাত্রলীগের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি হূদয় রঞ্জন বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনাকে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বলা যাবে না। তবে কলেজে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
দাউদ চৌধুরী বলেন, ‘রোববার রাতের ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। আমি ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই।’
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ স ম জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, কলেজের পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন