তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার
কক্সবাজারে জামায়াত-শিবির নেতাদের মাধ্যমে পরিচালিত এনজিও 'ওয়ার্ল্ড অ্যাসেম্বলি ফর মুসলিম ইয়ুথ_ওয়ামি'-এর হয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সরকারি প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) অনেক শিক্ষক। গতকাল শুক্রবার থেকে শহরের একটি আবাসিক হোটেলের সম্মেলন কক্ষে শুরু হয়েছে তিন দিনের একটি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান। প্রথম দিনে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন পিটিআইয়ের তিনজন প্রশিক্ষক। টাকার বিনিময়ে তাঁরা প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
কক্সবাজার পিটিআইয়ের তত্ত্বাবধায়ক রফিকুল ইসলাম তালুকদার এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ইনস্টিটিউটের বাইরে এ ধরনের কোনো কর্মসূটিতে যেতে চাইলে আমাকে জানানো দরকার। কিন্তু আমাকে কেউ কিছু জানায়নি।'
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজনে যাবতীয় দায়িত্ব পালন করছেন জামায়াত-শিবিরের দায়িত্বশীল নেতা-কর্মীরা।কক্সবাজারের হোটেল অ্যালবাট্রসের হলরুম ও প্রশিক্ষণার্থীদের থাকার রুম ভাড়া নেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন মাওলানা সাবি্বর নামের এক জামায়াত নেতা।
হোটেলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ওয়ামির নামে তিন দিনের জন্য আমাদের হোটেলের হলরুম এবং ১০টি কক্ষ ভাড়া নেওয়া হয়েছে। মাওলানা সাবি্বর নামে একজন এ কাজে আমাদের কাছে এসেছিলেন।'
গতকাল প্রশিক্ষণ দেন পিটিআইয়ের সন্তোষ কুমার দে, উত্তম কুমার দাশগুপ্ত ও শামসুল আহসান। প্রশিক্ষক উত্তম কুমার দাশগুপ্ত কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রতিটি বিষয়ে ৫০০ টাকা করে ভাতার বিনিময়ে আমরা ওয়ামির প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে থাকি। আমরা বাংলা, ইংরেজি, গণিতসহ বিভিন্ন বিষয় পড়াই।' এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সরকারি ছুটির দিনে আমরা এসব করে থাকি, তাই অনুমতি নিই না।'
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ওয়ামি ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি নিবন্ধিত হয়। তবে জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে ওয়ামি কক্সবাজারে কাজ শুরু করে। বিশেষ করে এনজিওটি মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় রোহিঙ্গাদের নানা সুযোগ-সুবিধার জন্যই কর্মসূচি নিয়ে থাকে। বিভিন্ন সময় শিক্ষক-ছাত্রদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। শিক্ষাবিষয়ক প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত এসব কর্মসূচিতে জামায়াত-শিবিরকর্মী ও সমর্থক ছাড়া অন্য কেউ থাকে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
জেলা জামায়াতের একজন প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'এটা আসলে জামায়াতেরই এনজিও। আবদুল্লাহ তাহেরের মাধ্যমে যার যাত্রা, তা জামায়াতের হবে না তো আওয়ামী লীগের হবে?'
গতকাল থেকে যে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে ওয়ামির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, সেটি 'পিটিআই' কর্মসূচি। তবে পিটিআই কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা এ ব্যাপারে অবহিত নন বলে জানিয়েছেন।
বর্তমানে ওয়ামির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগর শিবিরের সাবেক সভাপতি আলমগীর মুহাম্মদ ইউসুফ। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের দাওয়া বিভাগের সেক্রেটারিও ছিলেন। ইউসুফ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ওয়ামি কঙ্বাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ, নাইক্ষ্যংছড়ি, রামু ও কঙ্বাজার সদরে ওয়ামি একাডেমি নাম দিয়ে শিক্ষা সম্প্রসারণের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। তারই অংশ হিসেবে আমরা ওয়ামি একাডেমীর শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করি। পিটিআইয়ের প্রশিক্ষকরাই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালিয়ে থাকেন।' ওয়ামির সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি চুপ থাকেন।
কঙ্বাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) হুমায়ুন কবির বলেন, 'আমি রীতিমতো বিস্মিত। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক কিভাবে বিনা অনুমতিতে এ রকম এনজিওর কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন?' বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন