নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
৩৭ মামলার আসামি, দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার নাসিরকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে! গতকাল শুক্রবার তাকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানোর উদ্দেশে সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম কারাগার থেকে পুলিশ পাহারায় বের করে নেওয়া হয়। কিন্তু তাকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি কুমিল্লা কারাগারে প্রায় আট ঘণ্টা পর পেঁৗছেছে বলে জানা গেছে।
কুমিল্লায় নেওয়ার পথে পুলিশ পাহারায় জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত নগরীর চকবাজার এলাকার আল হেরা হোটেলে কয়েকজন সহযোগীর সঙ্গে নাসির বৈঠক করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ও হোটেল কর্তৃপক্ষ এ বৈঠকের অভিযোগ অস্বীকার করলেও তাদের বক্তব্যে অমিল পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গতকাল শুক্রবার হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তেমন কোনো যানজট ছিল না। চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লার দূরত্ব ১২৮ কিলোমিটার। এটুকু দূরত্ব যেতে আট ঘণ্টা সময় লাগার কথা নয় বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার রফিকুল কাদের গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শিবির ক্যাডার নাসিরকে আরো তিনজন বন্দিসহ সকালে পুলিশ পাহারায় কুমিল্লা পাঠানো হয়েছে। পথিমধ্যে সে কিছু করেছে কি-না তা আমাদের জানার কথা নয়। কারণ তাকে আনা নেওয়ার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা এসব দেখাশোনা করেন।'
অন্যদিকে কুমিল্লা কারাগারের ডেপুটি জেলার সাখাওয়াত হোসেন জানান, বিকেল ৪টার দিকে নাসির পুলিশ পাহারায় কুমিল্লা কারাগারে পেঁৗছে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম আদালতে বিচারাধীন একটি মামলায় হাজির করাতে গত বুধবার সন্ধ্যায় নাসিরকে কুমিল্লা কারাগার থেকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে কারাগারে আছে নাসির। চট্টগ্রাম কারাগারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে শাস্তিস্বরূপ ২০০৯ সালের মে মাসে তাকে সর্বশেষ কুমিল্লা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এর আগেও তাকে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা কারাগারে বেশ কয়েকবার স্থানান্তর করা হয়েছে। এসব আনা-নেওয়ার পথে ইতিপূর্বে একাধিকবার চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকার হোটেল কস্তুরিকা ও আল হেরাতে নাসির বৈঠক করেছে। এমনকি ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ ও মুক্তিযোদ্ধা গোপাল কৃষ্ণ মুহরিকে হত্যার জন্য নাসির এ হোটেলের নিচে অবস্থিত খাবার হোটেল কস্তুরিকায় অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে নির্দেশ দিয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে।
হোটেল কস্তুরিকার মালিক তসবি জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছিল, নাসির প্রায়ই এখানে বৈঠক করত। এক ব্যবসায়ীকে ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত বছর গ্রেপ্তার হওয়া তসবি জাহাঙ্গীর বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ১০টার দিকে সাদা মাইক্রোবাস নিয়ে পুলিশের একটি দল চকবাজার উর্দু গলির হোটেল আল হেরার সামনে অবস্থান নেয়। দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত পুলিশের মাইক্রোবাসটি সেখানেই ছিল। এ সময় সেখানে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যদের কাছে এ প্রতিবেদক তাঁদের অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে তাঁরা জানান, মোবাইল চুরির তদন্ত করতে তাঁরা এখানে এসেছেন। এর পরই তড়িঘড়ি করে সেখান থেকে সরে পড়েন পুলিশ সদস্যরা।
পরে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের ওই দলের নেতৃত্বে থাকা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আল হেরা হোটেলের পঞ্চম তলার একজন বোর্ডারের একটি প্যান্ট চুরি হয়েছে। আমি ওই প্যান্ট চুরির বিষয়ে তদন্ত করার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম।' মাত্র একটি প্যান্ট চুরির ঘটনার জন্য তিন থেকে চার ঘণ্টা ওই হোটেলে অবস্থানের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'তিন ঘণ্টা নয়, আমি দেড় ঘণ্টা সেখানে ছিলাম। কাজ শেষ করে চলে এসেছি।' শিবির ক্যাডার নাসির সেখানে ছিল কি-না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'কোনো নাছিরকে আমি চিনি না।'
গতকাল বিকেলে আল হেরা হোটেলের ম্যানেজার বাবু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পুলিশ বিশেষ কাজে এখানে এসেছিল।' বিশেষ কাজটি কি প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'এত কিছু বলতে পারব না কারণ তখন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন আমির হোসেন। তবে আমি শুনেছি পাঁচতলার একজন বোর্ডারের মালামাল চুরির ঘটনার তদন্তে পুলিশ এখানে এসেছিল।' ওই হোটেলের কয়েকজন কর্মচারীর কাছে জানতে চাইলে তাঁরা জানান, নাসির হোটেলে আসেনি।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন