নিজস্ব প্রতিবেদক
জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার দায়ে পাকিস্তানি নাগরিকসহ আরো দুজনকে গ্রেপ্তার হয়েছে র্যাবের বিশেষ দল। গতকাল মঙ্গলবার র্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইং ও র্যাব-১-এর যৌথ অভিযানে বিমানবন্দর রেলস্টেশন-সংলগ্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা উভয়েই ক্ষুদ্র ও মাঝারি পাল্লার অস্ত্র চালনায় বিশেষভাবে পারদর্শী বলে র্যাব জানিয়েছে। এদের একজন ২১ আগস্টের হামলায় গ্রেনেড সরবরাহকারী পাকিস্তানি শীর্ষ জঙ্গি মাজেদ ভাটের সহযোগী।
এর আগে শনিবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেল থেকে জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য পাকিস্তানি নাগরিক খুররম খৈয়াম ওরফে সেলিম ও তার দুই সহযোগী আবদুল মালেক ও ইমরান গ্রেপ্তার হয়।
গতকাল গ্রেপ্তারকৃত সাফি সামিউল্লাহ ওরফে মোস্তাক (৩০) নিজেকে জঙ্গি সংগঠন হিযবুল মুজাহিদীনের সক্রিয় সদস্য এবং বাংলাদেশি নাগরিক আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম (৪৫) লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। গোলাম মোহাম্মদ ২১ আগস্টের হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের সরবরাহকারী পাকিস্তানি শীর্ষ জঙ্গি মাজেদ ভাটের সহযোগী বলে র্যাব কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। তবে তারা কী উদ্দেশ্যে ঢাকায় অবস্থান করছিল, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি।
গতকাল র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা পাকিস্তানের দুটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। বাংলাদেশ, ভারত, কাশ্মীর ও আফগানিস্তানে এদের অবাধ বিচরণ রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করে বাংলাদেশে তাদের অবস্থানের কারণ ও অন্যান্য কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি দেশের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে লস্কর-ই-তৈয়বার একজন সক্রিয় সদস্য বাংলাদেশ হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে যাবে। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গতকাল বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় এ দুজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।
গোলাম মোহাম্মদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সে মাত্র ১৪ বছর বয়সে দেশত্যাগ করে কাজের খোঁজে ভারতের কলকাতায় যায়। এরপর সেখানে দিনমজুরের কাজ শুরু করলেও পরে ইসলামী জিহাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০০০ সালে লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে যুক্ত হয়। তখন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর হয়ে পাকিস্তানে গিয়ে লস্কর-ই-তৈয়বার তত্ত্বাবধানে বিশেষ জঙ্গি প্রশিক্ষণ নেয়। পরে ২০০৩ সালে সংগঠনের নির্দেশে সে ঢাকায় আসে।
র্যাবের গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২১ আগস্টের হামলায় গ্রেনেড সরবরাহকারী হিসেবে চিহ্নিত ও হিযবুল মুজাহিদীনের সক্রিয় সদস্য আবদুল মাজেদ ভাটের সঙ্গে গোলাম মোহাম্মদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। ঢাকায় কিছুদিন অবস্থান শেষে তার নির্দেশেই সে লস্কর-ই-তৈয়বার সমন্বয়কের দায়িত্ব নিয়ে কলকাতায় গিয়েছিল। ২০০৬ সালে মাজেদ ভাট গ্রেপ্তার হলে অন্য শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে সে দেশে ফিরে আসে। বাংলাদেশে আসার পর সে বিভিন্ন সময়ে সাতক্ষীরা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চবি্বশ পরগনায় অবস্থান করে লস্করের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে আসছিল। লস্করের শীর্ষ নেতা শাকিল শাহেদ পাকিস্তান থেকে মাজেদ ভাটের স্ত্রীর ভরণপোষণের অর্থ গোলাম মোহাম্মদের মাধ্যমে পাঠাত। গোলাম মোহাম্মদ অত্যাধুনিক একে-৪৭ রাইফেল, স্নাইপার গান ও মর্টার চালনায় বিশেষ পারদর্শী বলে জানা যায়।
পাকিস্তানি নাগরিক সাফি র্যাব কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ১৯৮০ সালে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে তার জন্ম। পরে সে ২০০১ সালে জঙ্গি সংগঠন হিযবুল মুজাহিদীনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পাকিস্তানে যায়। লস্করের মোজাফ্ফরাবাদ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তিন মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ গ্রহণকালে সে প্রায় সব ধরনের ক্ষুদ্র ও মাঝারি পাল্লার অস্ত্র চালনায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। সে হিযবুল মুজাহিদীনের হয়ে ৯ বছর ধরে কাজ করছে। সমপ্রতি বাংলাদেশে আসার পর গোলাম মোহাম্মদের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সহায়তায় এখানে অবস্থান করছিল।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন