11 October 2010

চবিতে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ফের সক্রিয় শিবিরের 'মশার কয়েল শুভেচ্ছা

রাজীব নন্দী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে দুই বছর ধরে। কিন্তু বহাল তবিয়তে সাংগঠনিক কাজ করে যাচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির। ভর্তি পরীক্ষার তথ্য ও পরীক্ষার ফলাফল জানিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম থেমে নেই তাদের। কৌশল পাল্টিয়ে প্রতিবছরের প্রথম বর্ষের ভর্তিচ্ছুদের জন্য দেওয়া 'লাল গোলাপ শুভেচ্ছা' এবার পরিণত হয়েছে, 'মশার কয়েল শুভেচ্ছা'য়! বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসনও এসব জানে।

জানা গেছে, শাহজালাল হলে ২২ জন শিবিরের সাথী দায়িত্ব পালন করছে। হল শাখার সভাপতির নাম শামসুদ্দীন ফরহাদ। গ্রামের বাড়ি ফেনী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ভর্তি পরীক্ষায় ফেনী থেকে আসা বেশির ভাগ ভর্তিচ্ছুর 'সুবিধা-অসুবিধা' দেখভাল করার দায়িত্ব বর্তেচ্ছে তাঁর ওপর। খোঁজ-খবর নেওয়া, দাওয়াতি কার্যক্রম, বায়তুল মাল আদায় সবই চলছে। তবে ব্যতিক্রমী আয়োজনটি হচ্ছে হলের যেসব কক্ষে ভর্তিচ্ছুরা আছে, সেই কক্ষগুলোতে গিয়ে শিবিরের পক্ষ থেকে একটি করে মশার কয়েল দিয়ে আসা হচ্ছে! এভাবেই প্রথমবর্ষে ভর্তি হয়নি কিন্তু শিবিরের ক্যাডার আর নেতাদের হাতে চিহ্নিত হয়ে গেছে অনেক ভর্তিচ্ছু।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, শুধু শাহজালাল হলেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি ছাত্র হলেই চলছে শিবিরের গোপন-প্রকাশ্য তৎপরতা। শিবিরের ঘাঁটি বলে পরিচিত সোহরাওয়ার্দী হলে 'স্কলার্স ফোরাম' নাম দিয়ে চলছে শিবিরের ভর্তি পরীক্ষা সহযোগিতা। এ এফ রহমান আলাওল হলে শিবিরের কার্যক্রম তেমন নেই।

শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শামসুদ্দীন আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মশার কয়েল দেওয়া তো দোষের কিছু না।' রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ক্যাম্পাসে আমরা কোনো বৈঠক বা সাংগঠনিক সভা করছি না। 'তবে শিবিরের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ডা. ফখরুদ্দীন মানিক সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরে সাংগঠনিক সফরে এসেছেন। নগর জামায়াত কার্যালয়েই বাধ্য হয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সভা করেছিলাম।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলা অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিবিরের সাথী পর্যায়ের এক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, কেন্দ্রীয় সেক্রেটারির সঙ্গে সর্বশেষ সভায় আমরা বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। এসবের মধ্যে আছে_চবির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অন্তত দুই হাজার শিক্ষার্থীকে সাংগঠনিক আওতায় কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা, গোপনে বায়তুল মাল আদায়ের কৌশল নির্ধারণ, চারটি ফ্যাকাল্টির শিবিরের কমিটি পুনর্নির্ধারণ আর সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রের সঙ্গে লোকাল ইউনিটের দূরত্ব ও বিদ্রোহের প্রবণতা কমাতে ঘন ঘন কেন্দ্রীয় নেতাদের সফর ইত্যাদি।

প্রক্টরিয়াল বডি ও হল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ আসাদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা বিভিন্ন সময় শিবিরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুনি। সব সময় চেষ্টা করি এসব বন্ধ করতে। কিন্তু বর্তমানে চারটি ছাত্র হলে শিবির-ছাত্রলীগ সহাবস্থানে আছে। চাইলেও আমাদের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব হয় না।'

শাহজালাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক এস এম সালামত উল্লা ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শিবিরের রেজাল্টশিট টানানোর আগে ছাত্রলীগও টানিয়েছিল। ছাত্র সংগঠনের কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা ছাত্রলীগের রেজাল্টশিট ছিঁড়ে ফেলি। শিবিরের বিষয়টিও আমরা একইভাবে দেখব। কিন্তু গোপনে তৎপরতা কিংবা রুমে রুমে গিয়ে কেউ যদি শিবিরের পক্ষে কাজ করে তা ঠেকাব কেমন করে? শিবির যদি গরু জবাই করে বড় করে মেজবান দেয়, তা টের পাওয়া যায়, মশার কয়েল দিয়ে এলে তা কিভাবে টের পাব?

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন