নিজস্ব প্রতিবেদক
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকানোর বিষয় নিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছিল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের। বিএনপি নেতারা প্রথম দিকে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে না হলেও কৌশলী ভূমিকা রাখার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছিলেন। গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কামারুজ্জামান এ তথ্য দিয়েছেন।
কামারুজ্জামানের দেওয়া তথ্যের কথা উল্লেখ করে গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রথম দফায় জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর নানা পরিকল্পনা এঁটেছিল জামায়াত-শিবির। ইসলামী ছাত্রশিবিরকে চাঙ্গা করে তাদের দিয়ে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দায়িত্বও বণ্টন করে দেওয়া হয়েছিল নেতা-কর্মীদের মধ্যে। লক্ষ্য ছিল, যেকোনো প্রকারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানো। তাদের ধারণা ছিল, অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারলেই যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়ায় অন্তত ধীরগতি আসবে। এসব কিছুর মধ্যস্থতাকারী ছিলেন কামারুজ্জামান।
পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার উপপরিদর্শক জিল্লুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, দুই দিনের রিমান্ডে এনে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে কামারুজ্জামান স্বীকার করেছেন, দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ার পরপরই তিনি নিজ উদ্যোগে কিছু পদক্ষেপ নেন। ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠালগ্নে জড়িত থাকার সুবাদে সংগঠনটির ওপর তাঁর আলাদা নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। ওই সুবাদে শিবিরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে করণীয় ঠিক করে দায়িত্বও ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন কামারুজ্জামান। পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা ও আইনজীবীর সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে একাধিকবার কথা হয়েছিল তাঁর। যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে সহযোগিতা ছাড়াও গ্রেপ্তার বা বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হলে আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতার ব্যাপারে কথা হয়েছিল ওই নেতার সঙ্গে।
গোয়েন্দারা জানান, বিএনপির সিনিয়র অনেক নেতাই যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে প্রকাশ্যে না হলেও কৌশলী ভূমিকা রাখার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছিলেন বলে দাবি করেছেন কামারুজ্জামান।
সূত্রমতে, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে কামারুজ্জামানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বিএনপি ছাড়াও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি তাদের সহযোগিতা চেয়েছিলেন কি না। কামারুজ্জামান তা অস্বীকার করেন। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদকারীরা হিযবুত তাহ্রীরের নেতাদের দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও দেখিয়ে আবার জানতে চান, 'কে মিথ্যা বলছেন, ওনারা, না আপনি?' এ কথা শুনে আর কিছু বলেননি কামারুজ্জামান।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে জামায়াতের কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কারাগার থেকে নেওয়া হয়। কখনো দুজনকে পাশাপাশি বসিয়ে আবার কখনো আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদকারীরা একপর্যায়ে কাদের মোল্লার কাছে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চান। কাদের মোল্লা দাবি করেন, এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। পরে তাঁকে এ-সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজ ও পত্রিকার কাটিং দেখানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা জানতে চান, এসব লোককে তিনি চেনেন কি না। কাদের মোল্লা নেতিবাচক উত্তর দেন। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা তখন বলেন, যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন