কমল দে, চট্টগ্রাম
বহুল আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর নাম অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। মামলার তদন্তকারী সংস্থা অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অস্ত্র খালাসের ঘটনার সঙ্গে নিজামীর সংশ্লিষ্টতার সাক্ষ্য-প্রমাণ পেয়েছে। সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, নিজামীর বিরুদ্ধে সরকারি সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সংরক্ষিত জেটি ঘাটে অস্ত্রবাহী ট্রলার ভেড়ানো এবং অস্ত্র খালাসের অনুমতির ব্যাপারে অভিযোগ আনা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির একজন কর্মকর্তা জানান, আগস্ট মাসের শেষ দিকে ঢাকার সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে তৎকালীন শিল্পসচিব ড. শোয়েব আহম্মদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তিনি ১৬১ ধারায় জবানবন্দিও দেন। এতে ড. শোয়েব বলেন, সিইউএফএলের জেটিতে অস্ত্র খালাসের বিষয়টি তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীকে জানানো হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, বিষয়টি নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে হবে না।
সিআইডির ওই কর্মকর্তা জানান, ড. শোয়েব এবং বিসিআইসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছেন। ইমামুজ্জামান আজ মঙ্গলবার মহানগর হাকিমের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে পারেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাকিরাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন। এর পর সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের মতো নিজামীকেও গ্রেপ্তার দেখানো হবে (শ্যোন অ্যারেস্ট)।
সূত্রটি আরো জানায়, ড. শোয়েব ও ইমামুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান চৌধুরী। এ ছাড়া অস্ত্র উদ্ধারের রাতে সিইউএফএল রেস্ট হাউসে অবস্থানকারী ভারপ্রাপ্ত শিল্পসচিব নুরুল আমিনকেও সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
মামলায় সরকার নিয়োজিত কেঁৗসুলি ও মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, '১৬৪ ধারার জবানবন্দি যেকোনো মামলার অন্যতম ভিত্তি। ১৬১ ধারার জবানবন্দিতে সাক্ষীরা কী বলেছেন তা চিন্তা না করে আমরা ১৬৪ ধারার জবানবন্দির অপেক্ষায় আছি। তাঁদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির পর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।'
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামে সিইউএফএল জেটি ঘাট থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ওই সময় শিল্পমন্ত্রী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী। সিইউএফএল শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
উল্লেখ্য, আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্ত শুরু হলে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহসীন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এনামুল হকসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে গত বছরের ৮ মার্চ থেকে সিআইডি কার্যালয়ে রেখে টানা চার দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করে সিআইডি। সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, সিইউএফএল জেটি ঘাটে অস্ত্র খালাসের বিষয়টি তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো নির্দেশনা না দেওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। কোনো তদন্ত কমিটি গঠন কিংবা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) পর্যন্ত করা হয়নি।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন