Sun, Sep 26th, 2010 2:35 pm BdST
আল আমীন দেওয়ান
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম, সেপ্টেম্বর ২৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- একাত্তরের ১০ নভেম্বর। এখন যা পাহাড়তলী বধ্যভূমি নামে পরিচিত, সেখানে এক এক করে জবাই করা হচ্ছিলো বাঙালিদের। জবাইয়ের দৃশ্য গুণতে গুণতে জ্ঞান হারাতে বসেছিলেন প্রাণে বেঁচে যাওয়া সেই সময়ের ওয়াসার মালামাল সরবরাহকারী গোফরান ভূঁইয়া।
বধ্যভূমির কাছেই টিলার ওপর জঙ্গলে বসে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ১২শ ৫২টি জবাইয়ের দৃশ্য দেখেছিলেন তিনি। দেখেছিলেন অসংখ্য মৃত মানুষ এনে স্তূপ করতে।
পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা সেদিন চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর বধ্যভূমিতে হত্যা করেছিল কয়েক হাজার বাঙালিকে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল শনিবার ওই বধ্যভূমিতে যায়, সাক্ষ্য নেয় প্রত্যক্ষদর্শী বিভিন্ন জনের।
গোফরান ভূঁইয়ার বয়স এখন ৬৮ বছর। একাত্তরের ১০ নভেম্বর ভোরে পাহাড়তলীর পাঞ্জাবী লেইন এলাকায় আকবর শাহ মাজারের নিচে নিজের মুদি দোকান থেকে বিহারিরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। বধ্যভূমি থেকে পালিয়ে তিনি পাহাড়ের জঙ্গলে আশ্রয় নেন। নিরাপদ স্থানে সরে পড়তে অপেক্ষা করতে থাকেন রাত নামার।
গোফরান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ঘুমের মধ্যে আজও সেই জবাই দৃশ্য দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দেয়। লাইনে দাঁড় করিয়ে একসঙ্গে ৫-১০ জন করে জবাই করছিলো বিহারিরা। কিছু সময় পরপর লাশ এনে জড়ো করছিলো বধ্যভূমিতে।"
"গুনেছিলাম তখন ১২শ ৫২টি জবাই দৃশ্য। এখনো মনে আছে", বলেন তিনি। এর পরপরই বললেন, "আমার জায়গা জমি-টাকাপয়সা যা আছে সব দিয়ে দেবো। এই বিচারের জন্য আমি সব করতে রাজি আছি।"
গোফরান ছাড়া আরো কয়েকজন জানালেন সেই সময়ের কথা। ১০ নভেম্বর বর্তমান চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা থেকে সাবেক রেল কর্মচারী কাজী আমিনুল ইসলাম ও তার বড় ভাই কাজী আনোয়ার হোসেনসহ মোট ৪০ জনকে বধ্যভূমিতে ধরে আনে বিহারিরা। তবে পরিচিত বিহারীর সহায়তায় প্রাণে বাঁচেন তারা।
আমিনুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সেদিন চোখের সামনে অনেককে জবাই হতে দেখেছি।"
স্বজন হারানো মুক্তিযোদ্ধা গাজী সালেহ উদ্দিন ঊনচল্লিশ বছর ধরে আগলে রেখেছেন একটি ছবি; বধ্যভূমিতে কঙ্কালের স্তূপের।
একাত্তরের ১০ নভেম্বর পাঞ্জাবী লেইন এলাকা থেকেই তার ছোটভাই, চাচা ও দুই চাচাতো ভাইসহ ১২০ জনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। বয়সে ছোট হওয়ায় তার ছোটভাই গাজী কামাল উদ্দিন বেঁচে গেলেও বাকিরা কেউ ফিরে আসেনি।
ছেলের খোঁজে বেরিয়ে বাবা আলী করিমও হারিয়ে যান চিরতরে। তাকেও হত্যা করা হয় এই বধ্যভূমিতে। কারো লাশও উদ্ধার করা যায়নি।
সালেহ উদ্দিন সাদা কালো ওই ছবি দেখেন, আর ভাবেন, হয়তো ছবির এই কঙ্কাল স্তূপেই আছে তার বাবা, চাচা ও দুই চাচাতো ভাইয়ের দেহাবশেষ।
সালেহ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বধ্যভূমিতে লাশের পর লাশ ছোট টিলার মত স্তূপ হয়ে পড়ে ছিলো দিনের পর দিন।
তিনি জানালেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের শুরুর দিকে ছবিটি তুলেছিলেন ফখরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এএডি/এমআই/১৪৩০ ঘ.
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন