কমল দে, চট্টগ্রাম
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের রাজাকার কমান্ডার সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) অমানুষিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তিনবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। প্রতিবারই তিনি বেঁচে যান। তবে শেষবারের আক্রমণে তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ির চালক নিহত এবং তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন। সাকার নির্যাতনে অতিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধারা গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালে সেপ্টেম্বরে সাকা চৌধুরী বিয়ে করে অনুষ্ঠান থেকে বের হওয়ার সময় আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। এর আগে জুলাই ও আগস্টে মুক্তিযোদ্ধারা নগরীর গুডস হিলের বাসার সামনে সাকা চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। সর্বশেষ হমলায় আহত হয়ে সাকা চৌধুরী উন্নত চিকিৎসার জন্য সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে লন্ডন যান। ১৯৭৫ সালে পটপরিবর্তনের পর তিনি দেশে ফিরে আসেন।
বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণাকেন্দ্রের চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম শহরে সম্মুখ সমরে অংশ নেওয়া ডা. মাহফুজুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা যখন পরিকল্পনা অনুযায়ী কাউকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন বুঝে নিতে হবে সেই ব্যক্তি উচ্চপর্যায়ের খুনি হানাদার। সেই বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধারা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পর পর তিনবার হত্যার চেষ্টা করেছিল।
সর্বশেষ হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রুপ কমান্ডার এস এম মাহবুব-উল-আলম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কালের কণ্ঠকে জানান, নগরীর চকবাজার জয়নগর এলাকায় অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা ইকবালের বাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠক থেকে সাকা চৌধুরীকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী ইনামুল হক দানু, ইঞ্জিনিয়ার আফসার উদ্দিন চৌধুরী ও জাসদ নেতা সংসদ সদস্য মাঈনুদ্দিন খান বাদল। ওই বৈঠকেই যেকোনো মূল্যে সাকা চৌধুরীকে হত্যার নির্দেশ দিয়ে তাঁকে (মাহবুব-উল-আলম) গ্রুপ কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এস এম মাহবুব জানান, হত্যার দায়িত্ব নেওয়ার পর সাকা চৌধুরীর গতিবিধির ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধারা। এর মধ্যে খবর আসে, সেপ্টেম্বর মাসের কোনো এক বৃহস্পতিবার দেওয়ানবাজার এলাকার বাসিন্দা ডা. ছমিউদ্দিনের মেয়ের সঙ্গে সাকা চৌধুরী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন। তবে ছমিউদ্দিনের মেয়ে এ বিয়েতে রাজি নন। একপ্রকার জোর করেই তাঁকে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাই ডা. ছমিউদ্দিনের ছেলে আজিজ এগিয়ে আসেন মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করতে। মাহবুব-উল-আলমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক ভুঁইয়া ও শচীন্দ্রনাথ সেন ওরফে কামাল এ হামলার প্রস্তুতি নেন। ঘটনার দিন বিকেল ৫টায় তিনজন মুক্তিযোদ্ধা গ্রেনেড, স্টেনগান ও রিভলবার নিয়ে চন্দনপুরা পেচুমিয়া গলির ড্রেনে অবস্থান নেন। সন্ধ্যা ৬টায় সাকা চৌধুরী গাড়িতে ওই বাসায় যান। আকদ পর্ব শেষ করে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে সাকা চৌধুরী গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ডা. ছমিউদ্দিনের ছেলে আজিজ টর্চ জ্বালিয়ে সংকেত দিলে মুক্তিযোদ্ধারা গাড়ি লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলার পাশাপাশি গুলিবর্ষণ শুরু করে। সাকা চৌধুরী মারা গেছেন মনে করে মুক্তিযোদ্ধারা বাড়ি ফিরে যান। পরে বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকার খবরে জানা যায়, সাকা নন, তাঁর গাড়িচালক মারা গেছে।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন