Fri, Sep 24th, 2010 11:42 pm BdST
চট্টগ্রাম, সেপ্টেম্বর ২৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের গ্রহণযোগ্যতা ও ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছেন, এটা কিসের আদালত?
একাত্তরের অপরাধ তদন্তে শুক্রবার ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের চট্টগ্রামে আসার পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কোনো অ্যাক্ট নেই, সিআরপিসি নেই, এটা কিসের আদালত?
তদন্ত দল রাউজান উপজেলার বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার সাক্ষ্য পাওয়ার পর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এসে নগরীর নিজ বাসভবন গুডস হিলে রাত ৮টার দিকে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দিন কাদের অবশ্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। তার দাবি, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের আরো বলেন, "ট্রাইবুন্যাল এমন কোনো সার্কাস দেখাবে না যাতে বিচার ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্যতা হারায়। বিচার ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্যতা হারালে সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশের স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।"
ট্রাইবুনালের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, "ট্রাইব্যুনাল আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে করবে না কেন?"
এ বক্তব্যের ব্যাখা দিয়ে সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের বলেন, "আমি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুজনেরই একটা ঝুঁকি আছে। ৭১ সালে আমরা দুজনই হিন্দুস্থান যাই নি এবং আমাদের কোনো মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেই। তাই ট্রাইবুন্যালের সামনে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছি।"
দেশে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার অনুকূল পরিবেশ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, "সরকারকে দায়িত্বশীল বক্তব্য দিতে হবে। সরকার এমন কোনো পথে হাঁটবে না যাতে চট্টগ্রামের মানুষ নিজেদের জাতীয় সত্ত্বা থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রয়াস পায়।"
ট্রাইবুন্যালের তদন্ত পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, "৩৯ বছরে যে ঘটনার সাক্ষী-প্রমাণ পাওয়া গেল না তারা ছয় ঘণ্টায় তার প্রমাণ পেয়ে গেলেন?"
ট্রাইব্যুনালকে সঠিক তদন্তের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "ট্রাইব্যুনাল যেন স্থায়ী থাকে। কয়েকটি বিচার করে যেন তাদের কাজ শেষ না হয়।"
কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে একাত্তরের ১৩ এপ্রিল রাউজানের গহিরায় তার বাড়িতেই হত্যা করা হয়। একই এলাকায় সালাউদ্দিন কাদেরের বাড়ি।
নতুন চন্দ্র সিংহের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন কি না� এমন প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, "৭১ সালের এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে আমি পাকিস্তান চলে যাই। যাওয়ার আগে ঢাকায় শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম।"
"মরহুম ফজলুল কাদের চৌধুরীর জ্যৈষ্ঠ সন্তান হিসেবে আমি গর্ব বোধ করি। আমার বাবা অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিলেন। তখন আমি কোনো রাজনীতি করতাম না", বলেন তিনি।
চট্টগ্রামকে সা�প্রদায়িক স�প্রীতির শহর হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বিনীত অনুরোধ করছি, যেন এমন কোনো উস্কানি দেওয়া না হয় যাতে সা�প্রদায়িক স�প্রীতি নষ্ট হয়।"
নূতন চন্দ্র সিংহের বড় ছেলে সত্য রঞ্জন সিংহ ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে তার প্রস্তাবক ছিলেন দাবি করে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশনে সেই ফরম রক্ষিত আছে।
রাউজান থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো হত্যা মামলার বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।
সত্য রঞ্জন সিংহ ১৯৭২ সালের ২৯ জানুয়ারি নূতন চন্দ্রকে হত্যার অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের ও তার বাবা ফজলুল কাদেরকে আসামি করে রাউজান থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সম্পর্কে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, "যতদূর জেনেছি তারা আমার প্রতিপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। কোনো সাধারণ মানুষের সাক্ষ্য নেননি। নিহতের পরিবারের কেউ বলেননি আমি ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল ঘটনাস্থলে ছিলাম। প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহ বলেছেন তারা শুনেছেন।
তদন্ত দলের কাছে নূতন চন্দ্রের হত্যার ঘটনা তুলে ধরেন তার ছেলে প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহ।
ফজলুল কাদের চৌধুরীকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, "শুনেছি এতে প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহ জড়িত ছিলেন।
"শুধু একজনের বাবার হত্যার বিচার করলে হবে না। আমিও বাবা হত্যার বিচার চাই।"
ফজলুল কাদের মুক্তিযুদ্ধের পর কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গত ২৫ মার্চ তদন্ত সংস্থা, আইনজীবী প্যানেল ও ট্রাইব্যুনাল গঠনের ঘোষণা দিলে বহু প্রতীক্ষিত এই বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
এরপর বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজমীসহ দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল তাদের গ্রেপ্তার রাখারও নির্দেশ দিয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/সিএম/এএডি/এজে/জিএনএ/১১৩৬ ঘ.
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন