28 September 2010

'হুঁশিয়ার, কাসেম সাব আ গেয়া'

Tue, Sep 28th, 2010 2:46 pm BdST

আল আমীন দেওয়ান
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম, সেপ্টেম্বর ২৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামে রাজাকার-আল বদরদের প্রধান নির্যাতন কেন্দ্র ছিলো আন্দরকিল্লার ফরেস্ট গেটের টেলিগ্রাফ হিল রোডের ডালিম হোটেল।

মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর তত্ত্বাবধানে চলতো ওই নির্যাতন কেন্দ্র। সেখানে হাত-পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় পিটিয়ে ভেঙে দেওয়া হতো বন্দিদের হাত-পা। ইট দিয়ে থেতলে দেওয়া হতো মুখ।

একাত্তরে ছাত্রসংঘের নেতা এবং বর্তমানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য মীর কাসেমের সঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত ইসলামীর বর্তমান নায়েবে আমির আফসার উদ্দিনও এ নির্যাতন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে ছিলেন বলে মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি।

যদিও তারা দুজনই একাত্তরে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল কয়েকদিন আগেই ডালিম হোটেলসহ চট্টগ্রামে গণহত্যা ও নির্যাতনের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে। তদন্ত দল জানায়, মীর কাসেমের বিরুদ্ধে অভিযোগের পক্ষে সাক্ষ্য পাওয়া গেছে।

নির্যাতন কেন্দ্রটিতে বন্দি থাকা তৎকালীন চট্টগ্রাম জয়বাংলা বাহিনীর উপ-প্রধান মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং কয়েকজন নির্যাতিতের স্বজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন একাত্তরের কথা।

নির্যাতন কেন্দ্রে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ২৩ দিন ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। একাত্তরের ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রামের কদমতলীর বাড়ি থেকে তাকে ধরে আনে বদর বাহিনীর সদস্যরা। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে মুক্তি পান তিনি।

নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে জাহাঙ্গীর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "নির্যাতনে অর্ধমৃত মুক্তিযোদ্ধাদের হাতের লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আফসার উদ্দিন গর্ব করে বলতো- 'রাজাকার দেখেছিস, আমি রাজাকার'। নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অর্ধমৃত মুক্তিযোদ্ধা ও অন্য বন্দিদের মেরে ফেলতে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেখিয়ে দিতো সে।"

জাহাঙ্গীর জানান, বন্দি অবস্থায় আফসার উদ্দিন একদিন তাকে রেডিওতে স্বাধীনতাবিরোধী একটি কথিকা পাঠ করতে বলেন। জাহাঙ্গীর অস্বীকৃতি জানালে তার ওপর আরো ভয়াবহ নির্যাতন চলে।

নিজের থেতলে দেওয়া ঠোঁট দেখিয়ে এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, "আফসার উদ্দিন এখন এই দেশেই রাজনীতি করছে। তাকে ধরে জিজ্ঞেসাবাদ করা হলে প্রমাণের জন্য তদন্ত দলের বেশি কষ্ট করতে হবে না। প্রয়োজনে আমার মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।"

"মীর কাসেম যখন ডালিম হোটেলে আসতো, তখন বদর সদস্যরা পাহারায় থাকা অন্যদের বলত 'কাসেম সাব আ গেয়া, তোম লোক বহুত হুঁশিয়ার'। সে আসার পর বন্দিরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়তো।"

হৃদরোগে ভুগছেন জাহাঙ্গীর। এর মধ্যেই বললেন, "এখনো বেঁচে আছি এই কুলাঙ্গারদের কুকীর্তির সাক্ষী হয়ে। আফসার উদ্দিনকে আমার মুখোমুখি করলে মীর কাসেম আলীর অপকীর্তির প্রমাণ সেই হাজির করবে।"

নির্যাতন কেন্দ্রে এ পীযূষ দাস নামে একজন ভয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে জানিয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, তাকে দিয়ে লাশ সরানো হতো।

"মীর কাসেম এলে ঘোষণা দিতো পীযূষই। তবে পরে তাকেও মেরে ফেলা হয়", বলেন তিনি।

একাত্তরের ২৫ নভেম্বর গণতন্ত্রী পার্টির চট্টগ্রাম জেলার তখনকার সভাপতি সাইফুদ্দিন খানসহ সাত জনকে ডালিম হোটেলে রাজাকাররা ধরে নিয়ে আসে। পরে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের মুক্ত করে।

সাইফুদ্দিন খানের স্ত্রী নূরজাহান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "হাত-পা বেঁধে আমার স্বামীসহ সব বন্দিদের বীভৎস নির্যাতন করা হতো। এখানে নির্যাতন করে করে মেরে ফেলা হয় অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে।"

নুরজাহান খানের ভাই রেজা আহম্মদ বলেন, "কেন্দ্রটির তত্ত্বাবধানে থাকা সেই সময়ের ছাত্রসংঘের নেতা মীর কাসেম আলীর নির্দেশেই ডালিম হোটেলে মুক্তিযোদ্ধা ও অন্য বন্দিদের ওপর নির্যাতন চালানো হতো।"

গত শনিবার এই ডালিম হোটেলে নূরজাহান খান ও রেজা আহম্মেদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের কাছে একাত্তরে রাজাকার ও আল বদর বাহিনীর মানবতাবিরোধী বিভিন্ন বীভৎসতার সাক্ষ্য দেন।

তবে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আফসারউদ্দিন নিজেকে উল্টো মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন।

তিনি সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। তখন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে কিছু না করার জন্য আমিই অনুরোধ করেছিলাম।"

নিজেকে মুক্তিযাদ্ধা দাবি করলে কীভাবে রাজাকারদের অনুরোধ করেন- প্রশ্ন করা হলে কেনো উত্তর দেননি এ জামায়াত নেতা।

তিনি বলেন, "সে সময় আমি ফরিদপুর ছিলাম। সাংবাদিকরা এসব নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করছে।"

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এএডি/এএনএস/এমআই/১৪৩৬ ঘ.

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন