24 September 2010

আর কী ঘোড়ার ডিম সাজা দেবে : সাকা চৌধুরী

রফিকুল বাহার

প্রায় ৬২ বছর আগে ১৯৪৯ সালের ১৩ মার্চ চট্টগ্রাম নগরীর গুডস হিলে জন্ম নেওয়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী হিসেবে অধিক পরিচিত) বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। ১৯৭৯ সাল থেকে ৩২ বছর ধরে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সরাসরি বিরোধিতা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে 'মানবতাবিরোধী অপরাধের'। এ অপরাধ প্রমাণের জন্য গঠিত কমিটি প্রাথমিকভাবে যে ১২ জনের নাম ঘোষণা করেছে, তাঁদের মধ্যে তাঁর নাম রয়েছে ৭ নম্বরে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্তদল গতকাল শুক্রবার তাঁর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে গিয়ে এ অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ফটিকছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী গতকাল বিকেলে কথা বলেছেন কালের কণ্ঠের সঙ্গে।

কালের কণ্ঠ : তদন্তদল চট্টগ্রামে। অথচ আপনি ঢাকায়। আপনার তো আজ চট্টগ্রামেই থাকার কথা ছিল।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী : আমার চট্টগ্রামে থাকার কথা ছিল না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা থাকায় আমাকে ঢাকায় থাকতে হয়েছে। প্রতি বৃহস্পতিবার আমি চট্টগ্রাম চলে যাই, ঢাকায় ফিরি রবিবার। আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম যাচ্ছি।

কালের কণ্ঠ : আপনার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আসছে বলে তদন্ত কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন।

সাকা চৌধুরী : রাজনীতি যখন করি, অভিযোগ আসতেই পারে। ওয়ান-ইলেভেনের পর প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও অনেক গুরুতর অভিযোগ এসেছিল। সংখ্যাঘরিষ্ঠের সমর্থন নিয়ে রাজনীতি করি। স্বাভাবিকভাবেই আমারও অনেক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আছে। আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক এই ট্রাইব্যুনাল কমিটির কার্যক্রম স্থায়ী হওয়া উচিত। আশা করব, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পরে যেসব মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড হয়েছে, তার বিরুদ্ধেও এই তদন্ত কমিটি কাজ করবে।

কালের কণ্ঠ : কুণ্ডেশ্বরীর সেই খুনের ঘটনায় আপনার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ।

সাকা চৌধুরী : (হেসে) হ্যাঁ। উপন্যাস আকারে এই অভিযোগের কাহিনী পড়েছি। এতে রূপবানের কল্পকাহিনীর রূপবান খুঁজে পেয়েছি। এর চেয়ে বেশি সম্পৃক্ত ছিলাম না। তদন্ত কমিটির কৃতিত্বের প্রশংসা করতে হয়। তাদেরকে সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শাওনের পিস্তলের গুলিতে ইব্রাহীম খুন হওয়ার ঘটনা তদন্ত করতে দেওয়া উচিত। কারণ এই ঘটনার কোনো কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। পুলিশ যেখানে এক মাস আগে খুন হওয়া রাজনৈতিক কর্মীর খুনিকে বের করতে পারছে না, সেখানে ৩৯ বছর আগের ঘটনার রহস্য কিভাবে বের করবে?
কালের কণ্ঠ : নিজেই গুলি করে সমাজসেবক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা করেছেন আপনি।

সাকা চৌধুরী : আমার তো কোনো অস্ত্রই ছিল না। গুলি করব কিভাবে। গুলি যদি করেই থাকি, তাহলে অস্ত্র কোত্থেকে এল?

কালের কণ্ঠ : মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার বয়স কত ছিল?

সাকা চৌধুরী : ২০ থেকে ২১ বছর। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম।

কালের কণ্ঠ : আপনার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরীর কারণে পাকিস্তান আর্মির সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।

সাকা চৌধুরী : যোগাযোগ কিভাবে থাকবে? বাবা তো শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান বা মেম্বার ছিলেন না। বরং নির্বাচন নিয়ে ইয়াহিয়ার সঙ্গে ওনার চরম বিরোধ ছিল। আর ইয়াহিয়ার অধীনেই ছিল পাকিস্তান আর্মি।

কালের কণ্ঠ : তাহলে ১৯৭১ সালের এই খুনের অভিযোগের ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?

সাকা চৌধুরী : আমি মনে করি, সরকার '৭১ সালের সেই সব নৃশংস ঘটনার সমাধান চায়। আবার সরকারের একটি উদ্দেশ্যও আছে। সেই উদ্দেশ্য আস্তে আস্তে দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার হবে। যারা আমার ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মতো ওই ৯ মাসে ইন্ডিয়া যাননি, মুক্তিযোদ্ধার সনদ গ্রহণ করেননি, তাদের সবার অবস্থা আমার মতো। আমরা সবাই মানবতাবিরোধী ঝুঁকিতে আছি।
কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আপনি বিশ্বাস করেন না?

সাকা চৌধুরী : বিশ্বাসের সুযোগ নেই। ছাত্রজীবনে রাজনীতি করিনি। তবে আমার বন্ধু-বান্ধব সবাই সে সময় ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন করেছে। আমার বাসা ছিল ছাত্রলীগের আড্ডাখানা। আমাদের গাড়ি নিয়ে ছাত্রলীগের অনেকে নির্বাচন করতে গেছে। আমি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি ১৯৭৮ সালে।

কালের কণ্ঠ : তদন্ত কমিটি যদি প্রমাণ পায় আর বিচারে আপনার সাজা হয়?

সাকা চৌধুরী : হলে হবে। উদ্বিগ্ন বা উৎকণ্ঠিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। রাজনীতিবিদের সবচেয়ে বড় সাজা হলো নির্বাচনী পরাজয়। আজ পর্যন্ত পার্লামেন্ট নির্বাচনে হারিনি। আর কী ঘোড়ার ডিম সাজা দেবে। আমাকে সাজা দেওয়ার এই উৎসাহকে চট্টগ্রামের মানুষ বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ হিসেবেই দেখবে। ৩২ বছর ধরে চট্টগ্রামবাসীসহ সারা দেশের মানুষ আমার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে। এমন কী ঘটনা ঘটেছে যে তাদের আস্থার সংকট দেখা দেবে?

কালের কণ্ঠ : আপনার সবচেয়ে বড় দোষ কী বলে আপনি মনে করেন?

সাকা চৌধুরী : আমি যা বিশ্বাস করি, তা নির্দ্বিধায় বলে ফেলি। এতে দু-চারজন মনে কষ্ট পেতে পারে। এই নিয়ে পরে আমি দুঃখিত হই।

কালের কণ্ঠ : আপনার কোন গুণ মানুষকে আকৃষ্ট করে?

সাকা চৌধুরী : নিজের গুণ সম্পর্কে তেমন কিছু বলতে পারব না। তবে কোনো কিছু সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে পড়াশোনা করে বলার চেষ্টা করি। নেহায়েত গলাবাজির স্বার্থে গলাবাজি কম করি।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন