4 August 2010

জামায়াতের নতুন সদস্য সংগ্রহ কমে গেছে, নেতারা বিব্রত

ওয়াসেক বিল্লাহ্ | তারিখ: ০৫-০৮-২০১০

জামায়াতে ইসলামীর সদস্য সংগ্রহ অভিযানে এবার তেমন সাড়া পড়েনি। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর ফরম পূরণ করে সহযোগী সদস্য হওয়ার সংখ্যা অনেক কম। কেন্দ্রীয় নেতারা এ নিয়ে খুবই বিব্রত, কথাই বলতে চান না। বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোথাও কোথাও গত বছরের অর্ধেক, কোথাও তার চেয়ে কম লোক জামায়াতের ফরম পূরণ করেছেন। ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন সহযোগী সদস্য সংগ্রহের জন্য গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করে জামায়াত। দলীয় সূত্রমতে, এ বছর জামায়াতের সহযোগী সদস্যের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমেছে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দল সম্পর্কে জনগণের মধ্যে নানা রকম ভুল ধারণা আছে। আমাদের প্রগতিবিরোধী, নারী স্বাধীনতাবিরোধী, জঙ্গিবাদী মনে করে অনেকে। এটা আমরা বুঝি। গণমাধ্যমের ধারাবাহিক নেতিবাচক প্রচারও এ জন্য দায়ী। মানুষের মনের এসব ভুল ভাঙাতে হবে। আমরা সে চেষ্টাই করছি।’

এ বিষয়ে সামগ্রিক প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্বে ছিলেন জামায়াতের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, কর্মপরিষদের সদস্য ইজ্জত উল্লাহ্ প্রমুখ। এবার সহযোগী সদস্য কত হলো জানতে চাইলে ইজ্জত উল্লাহ্ বলেন, ‘আমি তো আপনাকে এসব তথ্য দিতে পারব না। সেক্রেটারি জেনারেলকে বলুন। তিনি বললে আমি আপনাকে পুরো ফাইল দিয়ে দেব।’

ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এ নিয়ে এখন কোনো কথা বলব না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নূরুল আমীন বেপারী মনে করেন, যতটা না পারলৌকিক আবেগ, তার চেয়ে বেশি জাগতিক স্বার্থের কারণে অনেক মানুষ জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছিলেন। বিগত জোট সরকারের আমলে জামায়াত অনেককে চাকরি ও বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে জামায়াতের পক্ষে আর কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

পাশাপাশি প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতিও জামায়াতের নতুন লোক সংগ্রহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলেও মনে করেন নূরুল আমীন। তিনি বলেন, জামায়াত একটি স্বাধীনতাবিরোধী দল। এখন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে। এর একটি প্রভাব জনমনে পড়তে বাধ্য।

রাজধানীতে সহযোগী সদস্য কমেছে ৫০ হাজারের বেশি: ঢাকা মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ২০০৯ সালে ঢাকা মহানগরে সদস্য ফরম পূরণ করে সহযোগী হয়েছিলেন দুই লাখেরও বেশি লোক। এ বছর হয়েছেন দেড় লাখের মতো। এর কারণ জানতে চাইলে আবদুল হালিম বলেন, ‘এবার নানা বাধাবিপত্তি ছিল। গতবার তা ছিল না।’
চট্টগ্রাম-খুলনায় কমেছে ৫০ শতাংশ: চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের অফিস সেক্রেটারি আবু বকর সিদ্দিক জানান, এবার তাঁদের সহযোগী সদস্য হয়েছেন ১৫ হাজারের মতো। গত বছর এ সংখ্যা ছিল দ্বিগুণেরও বেশি।

খুলনা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ জানান, এবার ১০ হাজারের কিছু বেশি লোক সহযোগী সদস্য হিসেবে ফরম পূরণ করেছেন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২০ হাজারেরও বেশি। তিনি বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার (শিবিরের হামলায় ছাত্রলীগের নেতা ফারুক হত্যা) পর পুলিশের অভিযানের কারণে দেশে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। সব মিলিয়ে দেশের পরিস্থিতি প্রতিকূল অবস্থায় ছিল। তবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আমাদের নিয়ম অনুযায়ী বাসায় বাসায় গিয়ে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। যাঁরা একমত পোষণ করেছেন, তাঁরা সদস্য হয়েছেন।’

রংপুরেও কমেছে: জেলা জামায়াতের আমির মাহাবুবুর রহমান বেলাল জানান, এ বছর তাঁর জেলায় সহযোগী সদস্য হয়েছেন ৩৬ বা ৩৭ হাজার। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৬০ হাজারের মতো। এত কমল কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এবার উদ্যোগটাই দুর্বল ছিল। তা ছাড়া আবহাওয়াটাও ভালো ছিল না।’

অন্য জেলার অবস্থাও করুণ: কেন্দ্রীয় নেতাদের মতো জেলা পর্যায়ের অনেক নেতাও গণসংযোগ অভিযানের ফলাফল বলতে চাননি। যেসব জেলার নেতারা কথা বলেছেন, এর মধ্যে একটি ছাড়া সবগুলোতেই এবার সদস্য সংগ্রহ অনেক কমে গেছে।

এসব জেলার মধ্যে একটি নরসিংদী। জেলা জামায়াতের আমির আবদুস সাত্তার গণসংযোগ কর্মসূচির ফলাফল বলতে রাজি হননি। কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘আমাদের কিছু বিধিনিষেধ আছে।’

নড়াইলের অবস্থাও খারাপ। ২০১০ সালে এই জেলায় ফরম পূরণ করে জামায়াতের সহযোগী সদস্য হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। এবার তা নেমে এক হাজারের নিচে চলে এসেছে। জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আশেক এলাহী বলেন, ‘এবার কাজ করতে পারিনি নানা সমস্যার কারণে।’ তাহলে জামায়াতের প্রতি কি মানুষের আগ্রহ কমে গেছে?—এ কথার জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা বলার সুযোগ নাই। রাজনৈতিক সমস্যার কারণে অনেকে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারেনি।’

জয়পুরহাট জেলা জামায়াতের আমির ফজলুর রহমান জানান, এবার গণসংযোগ অভিযানে তাঁর জেলায় সহযোগী সদস্য হয়েছেন ১০ হাজারের কিছু বেশি। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২০ থেকে ২৫ হাজার।

কিশোরগঞ্জ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি রমযান আলী জানিয়েছেন, এ বছর তাঁদের সহযোগী সদস্য হয়েছেন সাড়ে তিন হাজারের কিছু বেশি। গতবার এই সংখ্যা অনেক বেশি ছিল।
বাগেরহাট জেলা জামায়াতের আমির মশিউর রহমান বলেন, এবার তো প্রতিকূল পরিবেশ। গোটা জেলায় দুই হাজারের কিছু বেশি সদস্য হয়েছেন। গত বছর ১০ হাজারের বেশি সহযোগী সদস্য হয়েছিলেন।

সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের দায়িত্বশীল এক নেতা ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার একজন সদস্য জানিয়েছেন, এ বছর সিরাজগঞ্জে সহযোগী সদস্য হয়েছেন পাঁচ হাজারের কিছু বেশি। গত বছর তা ছিল ১২ হাজার।

জামায়াতের শক্তিশালী অবস্থান আছে এমন জেলার একটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। জেলা জামায়াতের আমির রফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর তাঁদের জেলায় সহযোগী সদস্য হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি। তবে আগের বছর কত ছিল, এটা তিনি বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আপাতত এ বছরেরটাই লিখুন।’

নাটোর জেলা জামায়াতের আমির ইউনুস আলীর কাছে এবার জনসংযোগ অভিযানের ফল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে ছয়টি মামলা হয়েছে। জনসংযোগের সংখ্যা দূরে থাক, জান বাঁচানোই এখন কঠিন হয়ে গেছে।’

শুধু পাবনায় কমেনি: জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর জেলা পাবনায় সহযোগী সদস্যের সংখ্যা গতবারের তুলনায় কমেনি বলে জানিয়েছেন জেলা জামায়াতের আমির আবদুর রহিম। তিনি জানান, এবার সেখানে সহযোগী সদস্য হয়েছেন ১৩ থেকে ১৪ হাজার। গত বছরও একই রকম ছিল।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন