পার্থ সারথি দাস
যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে রেলপথ ও রেল স্টেশনগুলোতে নাশকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যেকোনো নাশকতা ঠেকাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও নিয়েছে। ২৪ ঘণ্টার প্রতিটি মুহূর্তে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে রেলওয়ের তিনটি নিরাপত্তা সংস্থাকে। জনবল সংকট মোকাবিলায় দৈনিক ভিত্তিতে পাহারাদারও নিয়োগ করা হচ্ছে। কমপক্ষে ১০০টি অপরাধপ্রবণ এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে বিশেষভাবে সতর্ক রাখা হয়েছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে রেললাইনে নাশকতার পরিকল্পনা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে এরই মধ্যে এর কিছু আলামত পাওয়ায় রেল কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার ব্যাপারে এ উদ্যোগ নিয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে শিবিরকর্মীরা রাজধানীর সঙ্গে দেশের অন্যান্য স্থানের যোগাযোগ অচল করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। মহাসড়ক অবরোধ করে হাজার পাঁচেক গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে এবং রেললাইনের স্লিপার তুলে দিয়ে মাসখানেক তারা এই অচলাবস্থা বহাল রাখতে চায়। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া শিবিরকর্মীরা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে এমন তথ্যই দিয়েছে।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ২০ ও ২১ জুলাই পর পর তিনটি নাশকতার আলামত পাওয়া গেছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০ জুলাই ফেনীর মুহুরীগঞ্জ থেকে একটু দূরে এবং ২১ জুলাই মুহুরীগঞ্জে রেললাইনের ওপর স্লিপার রেখে দেওয়া হয়। চালক আগেভাগে দেখতে পাওয়ায় দুটো ট্রেন অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। এ ছাড়া একটি লাইনের ফিস প্লেটও খুলে রাখা হয়। এসব আলামত ধরা পড়ায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ লিখিত নোটিশ ও দফায় দফায় টেলিফোনে সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছে।
রেলওয়ে মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে এরপরই পূর্ব ও পশ্চিম জোনের ব্যবস্থাপক, জিআরপি পুলিশ, সুপারিনটেনডেন্ট অব রেলওয়ে পুলিশ (এসআরপি) ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে এ ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়। ২২ জুলাই থেকে এ ব্যপারে চিঠি ও ফোনে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ গত ২৭ জুলাই ঢাকায় ডিআইজির (রেলওয়ে পুলিশ রেঞ্জ) দপ্তরে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় সভায় রেলপথ ও স্টেশনের নিরাপত্তা রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. আখতারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, '২২ জুলাই থেকে আমরা নিরাপত্তার বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিচ্ছি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে রেলের নিরাপত্তা বিঘি্নত করার আশঙ্কা থেকেই আমরা এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। অতীতে নাশকতামূলক ঘটনা ঘটেছে এমন স্থানগুলোতে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। এসব স্থানের নিরাপত্তার ওপর আমরা জোর দিচ্ছি।
জানা গেছে, পাঠানো নির্দেশনায় রেল স্টেশন ও রেলপথে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। রেললাইনের আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা স্লিপার একত্র করে তা নিজেদের আয়ত্তে আনা, স্টেশন বা রেলপথ এলাকায় সন্দেহজনক আচরণকারীদের প্রতি লক্ষ রাখা, কোনো কোনো এলাকায় কম গতিতে ট্রেন চালানো, চালকদের সতর্ক থাকা, কোনো ধরনের নাশকতার ইংগিত পেলে তা নিজে মোকাবিলা করা, তা করতে ব্যর্থ হলে নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আবহিত করে তাদের সহযোগিতা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
নিরাপত্তা রক্ষার জন্য রেল নিরাপত্তা বাহিনী ও জিআরপি (গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ) এবং রেলওয়ে গ্যাংক বিভাগকে সর্বদা সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনটি সংস্থাই জনবল সংকটের কারণে নিরাপত্তার বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর মধ্যে গ্যাংক-এর জনবল সংকট সবচেয়ে বেশি। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের অধীনে কারিগরের নেতৃত্বে ওয়েম্যানদের নিয়ে গঠিত এই গ্যাংক গঠন করতে প্রয়োজনীয় ওয়েম্যান পাওয়া যাচ্ছে না। ওয়েম্যানের চার হাজার ৯০টি পদের মধ্যে দুই হাজার ৯৫টিই শূন্য রয়েছে। নাশকতা ঠেকাতে বিশেষ 'পাহারা' কার্যক্রম চালাতে এখন বিভিন্ন স্থানে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে পাহারাদার নিয়োগ করা হচ্ছে বলে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন।
রেল নিরাপত্তা বাহিনীও জনবল সংকটের কারণে বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিপাকে রয়েছে। সংস্থার কমান্ডান্ট মো. এনামুল হক কালের কণ্ঠকে জানান, আমরা বারবার ওপর মহল থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি পাচ্ছি। আজও (রবিবার) রেলওয়ে পূর্ব বিভাগের ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে এ ধরনের চিঠি পেয়েছি। কিন্তু জনবলের সংকট ও এস্কট দেওয়াসহ অন্যান্য কাজের চাপ থাকায় এই বিশেষ কাজটি করতে গিয়ে আমরা সমস্যায় আছি। তিনি আরো বলেন, সংস্থায় পূর্বাঞ্চলে দুই হাজার ২৪টি পদের মধ্যে ৫০০ পদই শূন্য। একই অবস্থা পশ্চিম জোনেও।
রেল নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমান্ডান্ট (পূর্ব) মো. আমীনুর রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রেলপথের নিরাপত্তা রক্ষায় রেল নিরাপত্তা বাহিনী ও জিআরপি পুলিশকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।'
3 August 2010
যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করার তৎপরতা: নাশকতা ঠেকাতে রেলের নিরাপত্তা জোরদার
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন