নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা | তারিখ: ০৪-০৮-২০১০
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল মঙ্গলবার সকালে আবাসিক হল ছেড়ে চলে গেছেন। গতকাল ক্যাম্পাসে কোনো মিছিল-সমাবেশ হয়নি। তবে বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহারসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা ক্যাম্পাসে হামলা-ভাঙচুরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মদদপুষ্ট বাহিনীকে দায়ী করে উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন।
এদিকে সোমবারের ঘটনায় হাটহাজারী থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা মামলায় ৭০ জন এবং পুলিশের মামলায় ৭৬ জনকে আসামি করা হয়। সোমবার আটক ২৪১ জনের মধ্যে ৫৪ জনকে এ দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক তাঁদের মধ্যে ২৯ জনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তাঁদের মধ্যে ২৪ জন বিস্ফোরক মামলার আসামি।
পুলিশ সূত্র জানায়, কারাগারে পাঠানো আসামিদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সালাহউদ্দিন কাদের ও সাবেক সভাপতি জাবেদ ইকবাল রয়েছেন। অন্যদের বেশির ভাগই শিবিরকর্মী বলে পুলিশ জানায়। পুলিশ দাবি করছে, সাধারণ ছাত্রদের আড়ালে শিবির এবং হিযবুত তাহ্রীরের কিছু কর্মী সোমবার ভাঙচুরে নেতৃত্ব দেন।
জেলা পুলিশ সুপার জেড এ মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে।
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘পাঁচ দিন পর্যন্ত আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু সোমবার মুখোশ পরে লাঠি হাতে কিছু চিহ্নিত শিবির ক্যাডার সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঢুকে পড়েন। তাঁদের উদ্দেশ্যই ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করা।’
সংবাদ সম্মেলন: বর্ধিত বেতন-ফি বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে গতকাল বিকেলে নগরের চেরাগী পাহাড়ের ইসলামাবাদী মেমোরিয়াল হলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা সোমবার ক্যাম্পাসে হামলা, ভাঙচুর ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের জন্য উপাচার্যের মদদপুষ্ট বাহিনীকে দায়ী করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিক্ষার্থী রুচি ভট্টাচার্য।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘উপাচার্যের মদদপুষ্ট একটি বাহিনী ক্যাম্পাসে ভাঙচুরের ঘটনা সাজিয়ে আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আন্দোলনের প্রথম দিন ২৬ জুলাই মানববন্ধন করে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করেও আমরা ব্যর্থ হই। এ সময় প্রক্টর জসীম উদ্দীনকে স্মারকলিপি দিই। পরে ৩১ জুলাই আবার উপাচার্যকে লিখিতভাবে দাবি-দাওয়া জানানোর চেষ্টা করেও পারিনি।’
গত সোমবার উপাচার্য আবু ইউসুফ বলেছিলেন, ‘আন্দোলনের একটি রোডম্যাপ আছে। তারা আমাকে আগে স্মারকলিপি দেবে, তারপর আলোচনায় বসব। তা না করে সরাসরি আন্দোলনে চলে গেছে। এটা তো হয় না।’
সংবাদ সম্মেলনে বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহার ছাড়াও উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ, ক্যাম্পাসে মত প্রকাশের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং মামলা ও আন্দোলনকারী ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। এসব দাবিতে কাল বৃহস্পতিবার শহীদ মিনার চত্বরে সংহতি সমাবেশের আয়োজন করা হবে।
প্রসঙ্গত, বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহারের দাবিতে ২৬ জুলাই আন্দোলন শুরু হয়। গত সোমবার এই আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। ওই দিন পুলিশ শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে লাঠিপেটা করে। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস শেল ও রাবার গুলি ছুড়ে। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মুখোশধারী কিছু যুবক ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
এ পরিস্থিতিতে সোমবার জরুরি সিন্ডিকেট ডেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আর ছাত্রদের ওই দিন বিকেলে এবং ছাত্রীদের গতকাল সকাল ১০টার মধ্যে আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সকালের মধ্যে ছাত্রীরা হল ছেড়ে চলে যান। ফলে নীরবতা নেমে আসে গোটা ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসে গতকাল এক প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটার প্রতিবাদ: শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন করেছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রেপ্তার সব ছাত্রের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিসহ পাঁচ দফা দাবিতে মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। এতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যায্য দাবির আন্দোলনে কর্তৃপক্ষ পুলিশ লেলিয়ে শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করছে। দাবি না মেনে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মূল দাবি আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
দাবি আদায়ে ৫ আগস্ট আচার্য বরাবর স্মারকলিপি পেশ ও ৭ আগস্ট অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সংহতি সমাবেশ করবে প্রগতিশীল জোট। এর আগে সন্ত্রাসবিরোধী ছয় ছাত্রসংগঠন ও ছাত্র ইউনিয়ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। একই ঘটনার প্রতিবাদে এবং
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন