প্রশান্ত কর্মকার | তারিখ: ২৫-০৮-২০১০
পণ্য রপ্তানির আড়ালে লন্ডনে ৭৫ কেজি হেরোইন পাচারের মামলায় বিডি ফুডের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা মোমিন ছাড়া বাকি পাঁচ আসামিকে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দ্বিতীয় দফায় সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্র জানায়, বিডি ফুডের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা মোমিনসহ যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চাওয়া হয় তাঁরা হলেন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন, ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক মিঠু, কর্মচারী নাজমুল হায়দার বুলবুল, অভিযুক্তদের আরেক কোম্পানি গ্রিন হ্যাভেনের মালিক আবুল বাশার সেলিম ও তাঁর সহযোগী কাজী জাফর রেজা। বদরুদ্দৌজা তাঁর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন বাতিল করার আবেদন করেন। আদালত তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে বাকি পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার আদেশ দেন।
আদালতের আদেশ অনুসারে আসামি আবুল বাসার ও জাফর রেজাকে আজ বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মইনউদ্দিন ও আবু বকর সিদ্দিকীকে ২৬ আগস্ট জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর নাজমুল হায়দার বুলবুল একই ঘটনায় দায়ের মতিঝিল থানার মামলায় কারাগারে আটক থাকায় তাঁকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সূত্র জানায়, চার বছর ফাইলবন্দী থাকার পর সিআইডি বদরুদ্দোজা মোমিনসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য গত ১ মার্চ আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। আদালত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিলে আসামিরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। এরপর সে আদেশ স্থগিত হয়ে যায়।
এরপর গত ২৬ মে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক এরশাদ আলীকে পরিবর্তন করে পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ হোসেনকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সিআইডির এই পরিদর্শক মোহাম্মদ হোসেন গত ২৯ জুন বদরুদ্দৌজা মোমিনসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। সিআইডির আবেদনে বলা হয়, এই মামলায় জড়িত আসামি বদরুদ্দৌজা মোমিন, মো. মাইনুদ্দিন, কাজী জাফর রেজা, মোখলেসুর রহমান, আবু বকর সিদ্দিক ও আবুল বাসার জামিনে আছেন। এ মামলায় পাচার করা হেরোইনের উৎস, মামলার ঘটনায় জড়িত অন্যান্য সহযোগী আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করাসহ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। মহানগর হাকিম ৪ জুলাই আবেদনটি গ্রহণ করেন।
মামলাটি এ পর্যন্ত পাঁচ দফা তদন্তকারী বদলের পর এখন ষষ্ঠ তদন্তকারী মামলাটি তদন্ত করছেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া বদরুদ্দোজা মোমিনসহ ১০ আসামির নয়জন জামিনে আছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামলার আলামত হিসেবে লন্ডনে আটক হেরোইন পরীক্ষাসহ অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের জন্য তদন্ত কর্মকর্তার যুক্তরাজ্য যাওয়ার অনুমতি না মেলায় তদন্ত প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে। এরপর মামলাটি ফাইলবন্দী অবস্থায় পড়ে ছিল। ফলে তারিখের পর তারিখ পড়লেও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আর জমা হয়নি আদালতে। এই ফাঁকে মামলায় গ্রেপ্তার করা নয় আসামি জামিনে মুক্তি পান।
আদালত সূত্র জানায়, লন্ডনের দুটি সমুদ্রবন্দর দিয়ে সবজি ও ঘরের মেঝেতে ব্যবহার করা যায় এমন টাইলস রপ্তানির আড়ালে ৭৫ কেজি হেরোইন উদ্ধারের পর ২০০৬ সালের ২১ এপ্রিল সিআইডির সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট দীপক গুপ্ত বাদী হয়ে রাজধানীর মতিঝিল ও সূত্রাপুর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করেন। এসব মামলায় বিডি ফুডসের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা মোমিন, কর্মচারী নাজমুল হায়দার বুলবুল, ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক মিঠু, ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন, তাঁদের সহযোগী বিমানের কার্গো-শ্রমিক নয়ন ও অভিযুক্তদের আরেক কোম্পানি গ্রিন হ্যাভেনের মালিক আবুল বাশার সেলিম ও তাঁর সহযোগী কাজী জাফর রেজা, দেলোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান ভূঁইয়া ও ইমদাদুল হক আজাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রধান আসামি বদরুদ্দোজা ২০০৮ সালের ৮ জুন মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছাড়া পান। এর পরপরই জামিন পান রেজা, মাইনুদ্দিন, নয়ন ও আবু বকর।
বিডি ফুডসের ব্যবস্থাপক মাইনুদ্দিন, কর্মচারী নাজমুল হায়দার বুলবুল, বিমানের কার্গো-শ্রমিক নয়ন ও গ্রিন হ্যাভেনের অংশীদার কাজী জাফর রেজা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাঁদের জবানবন্দিতে স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে, হেরোইন পাচারের সঙ্গে বিডি ফুডসের মালিকসহ গ্রেপ্তার হওয়া সবাই জড়িত ছিলেন।
বিডি ফুডসের চেয়ারম্যান বরুদ্দোজা মোমিনকে ২০০৬ সালের ১৪ মে রাতে গ্রেপ্তার করে কয়েক দফায় ১৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি পুলিশ।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন