22 August 2010

রানী ভবানী কলেজের ছাত্রীরা উল্লসিত

রেজাউল করিম রেজা, নাটোর

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোরকা পরতে কাউকে বাধ্য না করার ব্যাপারে হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়ায় উল্লসিত নাটোরের রানী ভবানী সরকারি কলেজের ছাত্রীরা। আদালত এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করায় তাঁরা আনন্দ প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া নাটোরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষও হাইকোর্টের অদেশে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

রানী ভবানী সরকারি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শারমিন খাতুন, একাদশ শ্রেণীর প্রিতিকা, দ্বাদশ শ্রেণীর খায়রুন নাহার কহিনূর বলেন, কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করায় ছাত্রীদের চলাচল এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ সহজ হবে। তারা বলেন, আমরা এতদিন ভয়ের মধ্যে ছিলাম। কলেজে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে আড়াইশ' ছাত্রী কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণ চেয়ে শিক্ষা সচিবের বরাবরে আবেদন করে। এখন হাইকোর্ট রুল জারি করায় আমরা আশান্বিত হয়ে উঠেছি।

রানী ভবানী মহিলা কলেজের কম্পিউটার বিষয়ের শিক্ষক বিকাশ জ্যোতি কুণ্ডু বলেন, 'ছাত্রীরা শিক্ষা সচিব বরারব অভিযোগ পাঠানোর পর গত ১৬ আগস্ট কলেজ অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক কলেজ হোস্টেলের প্রধান গেটের তালা বন্ধ করে দেড় শতাধিক ছাত্রীর কাছ থেকে জোর করে একটি আবেদনপত্রে সই করিয়ে নেন। সেখানে লেখা ছিল অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্যি নয়।'

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক। বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করা অধ্যক্ষ মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি কম্পিউিটার শিক্ষক বিকাশ জ্যোতি কুণ্ডুর অনৈতিক কাজ সমর্থন করলে আজ এ অবস্থা হতো না। ১৬ তারিখে আমি নাটোরেই ছিলাম না। তাহলে ছাত্রীদের কাছ থেকে সই নিলাম কী করে!' হাইকোর্টের আদেশের কথা জানেন না দাবি করে তিনি বলেন, নাটোরে ফিরে এ বিষয়ে কথা বলবেন।

এদিকে হাইকোর্টের আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করে নাটোর এন এস সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের বোরকা পড়ে আসার নির্দেশ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও খেলাধুলা বন্ধ করে দেওয়া কোনেভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ নিজে থেকে বোরকা পড়ে এলে সেটি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু এটা বাধ্যতামূলক করা সমীচীন নয়।'

চাঁদপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ মকবুল হোসেন সরকার বলেন, 'বাংলাদেশ শরিয়া আইন দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে না। সুতরাং কলেজ ইউনিফর্মের বাইরে বোরকা পড়া বাধ্যতামূলক করার কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করার মাধ্যমে ছাত্রীদের মেধা বিকাশের পথ রুদ্ধ করা কোনভাবে সমর্থন করা যায় না।' দিঘাপতিয়া এম কে কলেজের উপাধ্যক্ষ আহমেদুল হক চৌধুরী স্বপন এবং নাটোর সরকারি বালক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইকবাল হোসেন বোরকা পড়া বাধ্যতামূলক করার কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন