21 August 2010

চবি ক্যাম্পাসে শোডাউন: শিবিরের তিন নেতা গ্রেপ্তার

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

ক্যাম্পাস বন্ধ থাকা অবস্থায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার ও শোডাউনের ঘটনায় শিবিরের সাধারণ সম্পাদকসহ তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুর দেড়টায় ছাত্রলীগকর্মী জহিরুল ইসলামকে মাটিতে ফেলে পিঠে ও ঘাড়ে ছুরি দিয়ে কোপানো হয়। এই ঘটনাকে 'বন্ধ ক্যাম্পাসে শিবিরের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা' বলে পুলিশ মন্তব্য করেছে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে শিবির।

আহত ছাত্রলীগকর্মী জহিরুল ইসলামকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর ক্যাম্পাসে ১০ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ শাখা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনকেও চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়। এ ঘটনায় শিবির ছাত্রলীগকে দায়ী করেছিল।
গতকালের হামলা ও গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাটহাজারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিউদ্দিন সেলিম গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আহত ছাত্রলীগকর্মী জহিরুল ইসলাম প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। এ ঘটনার পর চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ নিয়াজী, ক্যাম্পাস শাখার সভাপতি তোফায়েল আহমদ ও ক্যাম্পাস শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম রাসেলকে সন্দেহভাজন দেখিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের বিরুদ্ধে ২ আগস্ট ক্যাম্পাসে পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও তাণ্ডবের ঘটনায় মামলাও দায়ের আছে। গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাদের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।

ক্যাম্পাস পুলিশের ফাঁড়ি ইনচার্জ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান, গতকাল দুপুর সোয়া ১টায় সমাজবিজ্ঞান অনুষদসংলগ্ন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সামনে জহিরুল ইসলামকে কে বা কারা ছুরিকাঘাত করে ফেলে চলে যায়। তাঁর পিঠে ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি জখমের আলামত ছিল। খবর পেয়ে ফোর্স নিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। ১০ প্লাটুন পুলিশ ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয়েছে।

কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহাম্মদ শামসুদ্দীন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কোপানোর ঘটনাটি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফল। শিবির কোনোভাবেই এ ঘটনায় জড়িত নয়।' তাহলে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার পরও শিবির নেতারা সেখানে কী করছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বিভাগ থেকে সনদপত্র তুলতে তাঁরা ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলেন। ঝামেলা এড়াতে প্রধান প্রবেশপথ ব্যবহার না করে বিকল্প পথ ২ নং গেট বাজার এলাকা দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময়ই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।'

ক্যাম্পাসে বসবাসকারী ও প্রত্যক্ষদর্শী বিবিএর শিক্ষার্থী দিয়াজ ইরফান চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের মূল সড়কগুলোতে শিবির সেক্রেটারি নেছার আহমদ নিয়াজীর নেতৃত্বে শিবির ক্যাডাররা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে চড়ে শোডাউন করে। এরপর দুপুরেই শুনি হামলার ঘটনা।' শোডাউনের বিষয়টি অস্বীকার করে শিবির সভাপতি মোহাম্মদ শামসুদ্দীন বলেন, 'মোটরসাইকেল চালালেই কি শোডাউন হয়? মোটরসাইকেল একটি প্রয়োজনীয় যানবাহন, আমরা প্রয়োজনেই মোটরসাইকেল চালাই।'

ছাত্রলীগের সহসভাপতি আনিসুজ্জামান ইমন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মোটরসাইকেলে চড়ে শোডাউনের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করা শিবিরের পুরোনো কৌশল। যেকোনো হামলার সময়ই তারা তা করে। ক্যাম্পাসে একা পেয়েই জহিরুলের ওপর হামলা করা হয়েছে।' সন্ধ্যা ৬টায় প্রক্টর ড. জসীম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হবে। বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত ও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।'

প্রসঙ্গত, গত ২ আগস্ট পুলিশের সঙ্গে বর্ধিত বেতন ফি প্রত্যাহার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের পর ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে সব আবাসিক ছাত্র হল, ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন