কমল দে, চট্টগ্রাম
ইসলামী ছাত্রশিবিরের নিষ্ক্রিয় নেতা-কর্মীদের দলে টানছে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর। সদস্য সংগ্রহে মেধাবী কর্মীদের দিয়ে 'হাউস টিউটর' বা 'গৃহশিক্ষক' কৌশলও নিয়েছে তারা। অভিজাত পরিবারের সন্তানদের গৃহশিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে তারা ওই বাসার সদস্যদের হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার কাজ করছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা শাখার বিশেষ অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য। বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া হিযবুত তাহ্রীরের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা।
সিএমপির গোয়েন্দা শাখার সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'হিযবুত তাহরীর কর্মীরা সূক্ষ্ম কৌশলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা শিবিরের নিষ্ক্রিয় কর্মীদের নিজেদের পক্ষে সংগঠিত করার পাশাপাশি আরো কিছু পদ্ধতি নিয়েছে। গৃহশিক্ষক হিসেবে কাজ করা হিযবুত তাহরীর কর্মীদের আমরা শনাক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।'
সিএমপির পাঁচলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার রেজাউল মাসুদ জানান, গত ৩০ এপ্রিল বায়েজীদ বায়তুল কাদের জামে মসজিদে লিফলেট বিলির সময় গ্রেপ্তার হওয়া চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ছাত্র রাশেদুল আহমেদ মজুমদার জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিল, স্কুলে পড়া অবস্থায় সে শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর শিবিরের কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়নি। কিন্তু চুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর হিযবুত তাহরীরের নেতাদের মাধ্যমে এ সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
পুলিশের অনুসন্ধান দলের অন্যতম সদস্য ও গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক শাহজাহান ভঁূইয়া জানান, পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করেছে, তারা একসময় কোনো না কোনোভাবে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। বিভিন্ন কারণে রাজনীতি থেকে সরে গেলেও পরে তারা হিযবুত তাহ্রীরে যোগ দেয়। আর হিযবুত তাহ্রীরের নেতারাও তাদের টার্গেট করেন। বিশেষ করে হিযবুত তাহরীরের ইন্টারনেট ব্যবহার, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সংগঠন পরিচালনা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সেমিনার আয়োজন_এসব তরুণদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। প্রথম দিকে তারা কৌতূহলবশত এসব সেমিনারে অংশ নিলেও পরে হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
গত ২৯ মে নগরীর মুরাদপুর এলাকা থেকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হিযবুত তাহরীরের আঞ্চলিক নেতা আমিরুজ্জামান ওরফে পারভেজ গোয়েন্দা কার্যালয়ে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন, হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা একসময় শিবির করত। কিন্তু বর্তমানে যেহেতু হিযবুত তাহ্রীরের নেতা হিসেবে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাই আগের ইতিহাস বলতে রাজি নন।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে সম্পৃক্ত গোয়েন্দা শাখার পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, বর্তমানে হিযবুত তাহরীরের অনুসারী বাড়ানোর বিশেষ পন্থা হলো হাউস টিউটর। নগরীর অভিজাত এলাকার বিভিন্ন বাসায় গিয়ে তারা টিউশনি করছে। আর টিউশনির ফাঁকে ফাঁকে তারা পরিবারের সদস্যদের কাছে তাদের মিশন ও আদর্শের কথা প্রচার করে। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বাধা পেলে তারা টিউশনি ছেড়ে দেয়। কিন্তু বাধা না পেলে নিজেদের অনুসারী হিসেবে ওই পরিবারের সদস্যদের দলের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে কত পরিবার এভাবে হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে, সেটি এখনো গোয়েন্দা শাখা নিশ্চিত হতে পারেনি।
গোয়েন্দা পুলিশের এ তথ্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর (দক্ষিণ) সভাপতি দেলোয়ার হোসেন গতকাল রবিবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শিবিরের সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে সবাই জামায়াতের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়। কিন্তু কেউ হিযবুত তাহ্রীরে যোগ দিয়েছে, এমন নজির নেই। তবে একসময় মনে মনে শিবিরকে সমর্থন করেছিল এমন কেউ এখন হয়তো হিযবুত তাহরীর করছে।'
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন