5 August 2010

জঙ্গিদের মতো শিবিরেরও আছে বোমা তৈরির বিশেষ শাখা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

জেএমবি, হুজি বা জঙ্গি সংগঠনগুলোর আদলে নিজেরাই বোমা তৈরি করছে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরাও। এর জন্য শিবিরের প্রশিক্ষিত একটি 'উইং' বা শাখাও রয়েছে। তাদের কাজ হলো, বিস্ফোরক দিয়ে বোমা তৈরি করা। এ ছাড়া শিবিরের সঙ্গে চরমপন্থী সংগঠনগুলোর বোমা বা অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও বিশেষ যোগাযোগ রয়েছে। শিবিরের মধ্যে যারা অস্ত্র ও বিস্ফোরক সম্পর্কিত কাজে পারদর্শী, সংগঠন থেকে তাদের 'ইনসেনটিভ' বা প্রণোদনা দেওয়া হয়। অস্ত্র চালনা ছাড়াও বোমা তৈরিতে পারদর্শী শিবিরের এ রকম কর্মী বাহিনীর সন্ধানে নেমেছেন গোয়েন্দারা।
মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তারকৃত শিবিরের চার নেতার বিরুদ্ধে অস্ত্র, বিস্ফোরক, সন্ত্রাস দমন আইনে মোহাম্মদপুর থানায় পৃথক তিন মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার প্রত্যেককে ৯ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
র‌্যাবের একটি সূত্র জানায়, এর আগে বিভিন্ন সময় জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে শিবিরের যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলেও এবারই প্রথম চরমপন্থীদের সঙ্গে তাদের কানেকশন আবিষ্কার হয়েছে, যা তাদের কাছে একেবারেই নতুন মনে হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করা এবং জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এ সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে এর কিছু আলামতও গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। শিবিরের মেস থেকে উদ্ধারকৃত শাটারগানটি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। এ ধরনের অস্ত্র সাধারণত চরমপন্থীরা ব্যবহার করে। ফলে চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি অনেকটাই স্পষ্ট। এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজন চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে।
সূত্রমতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দখলদারিত্ব বজায় বা নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের চিন্তা মাথায় রেখে শিবির নিজেদের মধ্য থেকে বাছাই করে নিজস্ব বাহিনী বা উইং তৈরি করে। তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। সাধারণত শিবিরের নেতা-কর্মীদের জন্য ধর্মীয় আচার অনুসরণ করা বা সংগঠনের কাছে নিয়মিত রিপোর্ট দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও এই উইংয়ের সদস্যদের জন্য কোনো কিছু বাধ্যতামূলক নয়। তারা অন্য শিবিরকর্মী থেকে আলাদা থাকে। এমনকি শিবিরের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া অন্য কেউ এই উইংয়ের সদস্যদের চেনেও না। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান কালের কণ্ঠকে জানান, উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক দেখে ধারণা করা হচ্ছে, শিবিরের এসব নেতা-কর্মী নিজেরাই বোমা তৈরি করছিল। গ্রেপ্তারকৃতদের সঙ্গে আরো অনেকে থাকতে পারে। এ ধরনের বোমা এর আগে জঙ্গি সংগঠনগুলো তৈরি করত বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ বিষয়ে কিছু ধারণা পাওয়া গেছে। রিমান্ডে এনে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। শিবিরের মধ্যে এ ধরনের সদস্য বা কর্মী যারা আছে, তাদেরও খোঁজা হচ্ছে।
র‌্যাবের অপর একটি সূত্র জানায়, মোহাম্মদপুরের জহুরী মহল্লা থেকে উদ্ধারকৃত ছয়টি বোমাই দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি, যা শিবিরের নেতা-কর্মীরা নিজেরাই বানিয়েছিল। তবে গ্রেপ্তারকৃতরা বোমা তৈরিতে পারদর্শী কি না তা এখনো পরিষ্কার হয়নি। র‌্যাবের অভিযানের সময় শিবিরের ওই মেস থেকে পাঁচ প্যাকেট সালফার, পটাশসহ অন্যান্য বিস্ফোরকদ্রব্য ছাড়াও ১২টি পেনসিল ব্যাটারি, একটি লাল রঙের স্কচটেপ, ২০ গজ সাদা, কালো ও লাল রঙের বৈদ্যুতিক তার উদ্ধার করা হয়। এসব উপাদানের সবই বোমা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া রাজধানীর পান্থপথে স্কয়ার হাসপাতাল এলাকার পেছনের অংশে অস্ত্র বিস্ফোরকের আরেকটি বড় চালান ছিল। র‌্যাবের অভিযানের আগেই তা সরিয়ে ফেলা হয়।
আমাদের আদালত প্রতিবেদক জানান, গ্রেপ্তারকৃত শিবিরের মোহাম্মদপুর থানা শাখার সভাপতি আব্দুল জায়েদ বিন সাবিত, বাঙলা কলেজ শাখার সভাপতি সুলতান মোহাম্মাদ রিপন, মতিঝিল থানা শাখার সাবেক সভাপতি আলমগীর হোসেন এবং জায়েদের সহযোগী ও মোহাম্মদপুর থানার ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মো. ইমরান মাসুমকে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। মোহাম্মদপুর থানায় দায়েরকৃত তিন মামলায় তাদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. আলী হোসাইন তিন মামলায় তিন দিন করে প্রত্যেককে ৯ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন