নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছাত্রশিবিরের চার ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করেছেন র্যাব গোয়েন্দারা। মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, র্যাব মোহাম্মদপুরের আজিজ মহল্লায় শিবিরের মেস থেকে একটি সাটার গান, পাঁচ রাউন্ড গুলি, ছয়টি তাজা বোমা, বিস্ফোরকসহ বোমা তৈরির বিপুল সরঞ্জাম ও জিহাদি বই উদ্ধার করে। র্যাব গোয়েন্দারা জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এরই মধ্যে ঢাকাকে চার ভাগে ভাগ করে নাশকতার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এ জন্য তারা অস্ত্র, গোলাবারুদ সংগ্রহ ও মজুদ করছিল। গ্রেপ্তারকৃতরা এ রকম একটি এলাকার দায়িত্বে ছিল। নাশকতা সফল করতে ঢাকার বাইরে থেকে শিবির ক্যাডারদের জড়ো করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে দুর্ধর্ষ কয়েকজন শিবির ক্যাডারের মধ্যে। পুরো বিষয়টি তদারকির দায়িত্বে আছেন শিবিরের কেন্দ্রীয় কয়েক নেতা। এর অংশ হিসেবে বোমা তৈরি করতে চরমপন্থী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিল তারা। বোমা বানানোর জন্য এক চরমপন্থী নেতাকে টাকাও দিয়েছিলেন শিবির নেতারা।
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারকৃতরা হলো_ছাত্রশিবিরের মোহাম্মদপুর থানা শাখার সভাপতি আবদুল জায়েদ বিন সাবিত, বাঙলা কলেজ শাখার সভাপতি সুলতান মোহাম্মাদ রিপন, মতিঝিল থানা শাখার সাবেক সভাপতি আলমগীর হোসেন এবং জায়েদের সহযোগী ও মোহাম্মদপুর থানার ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মো. ইমরান মাসুম। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরের ওই মেস থেকে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন লিফলেট, ১৩টি ব্যাংক স্লিপ, তিনটি চাঁদা আদায়ের রসিদ, একটি বিদেশি কলিং কার্ড, পাঁচটি মোবাইল ফোনসেট (সিমসহ), ১০৫টি সাংগঠনিক বই এবং এক লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান কালের কণ্ঠকে জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের নাশকতার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল।
র্যাব সূত্র আরো জানায়, মঙ্গলবার রাতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার রতনপুর গ্রাম থেকে শিবির ক্যাডার আবদুল্লাহ জায়েদ বিন সাবিতকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সাবিত জানায়, শিবিরের কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক গোলাম মর্তুজার নির্দেশে সে কয়েকটি ককটেল ও বিস্ফোরক পান্থপথে অবস্থিত স্কয়ার হাসপাতালের পেছনের এলাকায় মাটির নিচে লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু অভিযান চালিয়ে সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি। পরে সাবিতের দেওয়া তথ্যানুযায়ী মিরপুর ১ নম্বর এলাকা থেকে সুলতান মাহমুদ রিপনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে রিপন জানায়, জামায়াত নেতাদের গ্রেপ্তারের পর কিছু অস্ত্র, বোমা ও বিস্ফোরক তার তত্ত্বাবধানে রাখার জন্য দেওয়া হয়। এগুলো কল্যাণপুরে তাদের একটি মেসে ছিল। ধরা পড়ার ভয়ে কিছুদিন আগে সেগুলো কল্যাণপুর গার্লস স্কুল মাঠের পাশের একটি নর্দমায় ফেলে দেওয়া হয়। রিপন আরো জানায়, সে দুটি অস্ত্র এবং ককটেল বানানোর জন্য বিস্ফোরক ও কিছু টাকা মতিঝিল থানা শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আলমগীর হোসেন রাজুর কাছে দেয়।
তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী র্যাব রাতেই পল্টন থেকে রাজুকে আটক করে। সে জানায়, শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম মর্তুজা পল্টনে তার 'নাগরিক রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপারস' অফিসে এসে বলেছিলেন, দলের বড় নেতারা আটক হয়েছে। এতে তৃণমূল সদস্যরা ভীত হয়ে পড়েছে। তাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য এবং বিভিন্ন মিটিং, মিছিলে ব্যবহারের জন্য ককটেল প্রয়োজন।
র্যাবের কাছে রাজু আরো জানায়, সর্বহারা দলের নজরুল নামে একজনের সঙ্গে তার পরিচয় আছে। সে ককটেল বানাতে পারে। মর্তুজার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে তা নজরুলকে দিয়েছিল সে।
শিবিরের বক্তব্য : চার শিবির ক্যাডারের গ্রেপ্তারকে সাজানো নাটক বলে দাবি করেছেন শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম ও সেক্রেটারি জেনারেল ডা. ফখরুদ্দীন মানিক। গতকাল এক বিবৃতিতে তাঁরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, র্যাব ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অস্ত্র, বোমা ও গানপাউডার রেখে তাদের গ্রেপ্তার করেছে। ছাত্রশিবিরকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে উল্লেখ করে তাঁরা অভিযোগ করেন, কতিপয় গণমাধ্যম বাড়াবাড়ি করছে।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন