নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার
কক্সবাজারে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা একাট্টা হয়ে আটক আট শিবির ক্যাডারকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন পুলিশের হাত থেকে। বৃহস্পতিবার আপত্তিকর পোস্টার লাগানোর সময় তাদের আটক করে সদর উপজেলার ঈদগাঁও পুলিশফাঁড়িতে নিয়ে আসা হলে সেখান থেকে তাদের ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। তবে 'ভবিষ্যতে জামায়াত-শিবির অত্র এলাকায় সরকারবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড এমনকি মিছিল-সমাবেশও করবে না'_এ রকম অঙ্গীকারনামা দেওয়ার পর পুলিশ তাদের ছাড়তে রাজি হয়।
শিবির ক্যাডারদের ছাড়িয়ে নিতে জিম্মাদার হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা এস টি এম রাজা মিয়া, সহসভাপতি মাস্টার মোজাম্মেল হক ফরাজী ও মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার নুরুল আজিম। জিম্মানামায় মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগ নেতারা উল্লেখ করেন, 'আটককৃতরা স্থানীয় আলমাসিয়া মাদ্রাসার ছাত্র। তাদের মধ্যে কয়েকজন পরীক্ষার্থীও রয়েছে। তদুপরি সবাই স্থানীয় বিধায় পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই।' ওই জিম্মানামায় সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন বিএনপির ঈদগাঁও সাংগঠনিক উপজেলা শাখার সভাপতি মমতাজুল ইসলাম, জামায়াতের স্থানীয় সাংগঠনিক উপজেলা আমির মো. সৈয়দ নূর, নায়েবে আমির রুহুল আমিন ও সেক্রেটারি ডা. আমির সুলতান।
তবে এ রকম লিখিত জিম্মানামায়ও পুলিশ আট শিবির ক্যাডারকে ছাড়তে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত জামায়াত নেতা ও শিবির ক্যাডাররা লিখিত একটি অঙ্গীকারনামা দেয়। এতে তারা এলাকায় সরকারবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড ও মিছিল-সমাবেশ করবে না বলে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। এই অঙ্গীকারনামায় আটক ব্যক্তিরা ছাড়াও জামায়াতের উপরিউক্ত তিন নেতা স্বাক্ষর করেন। আর তাতে সাক্ষী হয়েছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির ওই নেতারা ছাড়াও ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজি সৈয়দ আলম।
ঈদগাঁও পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ দারোগা মসরুরুল হক গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কালের কণ্ঠকে জানান, 'স্বয়ং মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতারাই পুলিশের কাছে এসে জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের ছাড়িয়ে নিতে চাইলে কী আর বলা থাকে? তবু আমি যা-ই করেছি, তা আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েই করেছি।' তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ঈদগাঁও বাসস্টেশন এলাকায় গোপনে পোস্টার লাগানোর সময় আট শিবির ক্যাডারকে আটক করা হয়।
আটক ক্যাডাররা হলো ঈদগাঁও সাংগঠনিক উপজেলা শিবির সভাপতি হাফেজ মোর্শেদুর রহমান, সেক্রেটারি লায়েক ইবনে ফাজেল এবং কর্মী তৈয়ব উদ্দিন, আবদুল্লাহ, মোকতার আহমদ, শামসুদ্দিন, গিয়াসুদ্দিন ও মোহাম্মদ রাশেদ।
এ ব্যাপারে জিম্মাদার আওয়ামী লীগ নেতা এস টি এম রাজা মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আটককৃতরা সবাই শিবির ক্যাডার তা সত্যি। কিন্তু তারা আর জামায়াত-শিবির করবে না বলে মৌখিক এবং সরকারবিরোধী কর্মসূচি পালন করবে না বলে লিখিত অঙ্গীকার করায় তাদের ছাড়িয়ে এনেছি। তদুপরি তাদের কয়েকজন পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা স্থানীয় হওয়ায় অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারিনি।'
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন