17 July 2010

জামায়াত নেতাদের মুখোমুখি করা হবে ভাগ্নে শহীদকে, গণহত্যার কথা জানতে সিআইডি কর্মকর্তারা আলোকদীতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের ১২ জন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ছাড়াও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবীদের ওপর হামলার পরিকল্পনা ছিল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির। সেই সঙ্গে উত্তরাঞ্চলে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্ননা ছিল তাদের। জামায়াত ইসলামীর নেতারা এসব ঘটনায় নেপথ্য ভূমিকা পালন করছিলেন। জেএমবির সামরিক কমান্ডার গ্রেপ্তারকৃত ভাগ্নে শহীদ এসব তথ্য দিয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করতে গতকাল শুক্রবার তাকে ঢাকায় আনা হয়। মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে রিমান্ডে থাকা জামায়াতের শীর্ষ তিন নেতা ও জেএমবির আমির সাইদুরের মুখোমুখি করা হবে ভাগ্নে শহীদকে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার আগে বগুড়া থেকে ঢাকায় আনার পর ভাগ্নে শহীদকে আলাদাভাবে একদফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে তার দেওয়া বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। গত রাতেই তাকে জেএমবি ও জামায়াত নেতাদের মুখোমুখি করার কথা।

এদিকে ঢাকার পল্লবীর দুয়ারীপাড়ার আলোকদী গ্রামে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির একটি দল গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সিআইডির চার সদস্যের দলটি ছয় ঘণ্টার বেশি সময় ওই গ্রামে অবস্থান করে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক নুরুল ইসলাম সিদ্দিকী ছাড়াও বিশেষ পুলিশ সুপার শেখ মারুফ হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিউর রহমানসহ চারজন সেখানে যান। মতিউর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, বিকেল ৪টায় তাঁরা ঘটনাস্থল যান। কমপক্ষে ২০ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা।

অপর একটি সূত্র জানায়, গণহত্যার ঘটনায় তদন্তকারী দল ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দেয়। অনেক প্রত্যক্ষদর্শী তদন্তকারীদের কাছে ঘটনার বর্ণনার পাশাপাশি আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার আগ্রহও প্রকাশ করেন। তদন্তকারীদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অনেকে কেঁদেও ফেলেন। কেউ কেউ আবার নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামানদের ফাঁসির দাবিতে স্লোগানও দেন।

এই মামলায় রিমান্ডে থাকা জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের ভূমিকা, তাঁদের দলীয় পদবি ইত্যাদি নানা বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে। সিআইডি কর্মকর্তারা জামায়াতের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত দৈনিক সংগ্রামের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রকাশিত বেশ কিছু কপি সংগ্রহ করেছেন।

সাইদুর বনাম জামায়াত নেতারা : গোয়েন্দা কার্যালয়ে জেএমবির আমির সাইদুর ও জামায়াতের তিন নেতার মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। সূত্র জানায়, সাইদুর গতকালও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদকে উদ্দেশ করে বলেন, তিনি ইসলামী আন্দোলন করেন কিন্তু ইসলামী কোনো শিক্ষা নেই। সাইদুর দাবি করেন, নবী করিম (সা.) সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। কিন্তু জামায়াত নেতারা আলিশান বাড়ি ও গাড়িতে চড়েন। এ কথা শুনে মুজাহিদ সাইদুরের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, এখন উটের যুগ নেই, তাই গাড়িতে ঘুরতে হয়। মুজাহিদ দাবি করেন, তিনি যে গাড়িটি ব্যবহার করেন, তা পার্টির দেওয়া। আর পার্টি থেকে প্রতি মাসে তাঁকে চলার জন্য ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

একইভাবে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর কাছেও রাজধানীর অভিজাত এলাকায় তাঁর বাড়ির কাহিনী জানতে চান সাইদুর। আবার জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে উদ্দেশ্য করে সাইদুর বলেন,
'আপনার হাটবাজারে ক্যানভাস করার কথা কেউ ভোলেনি। আপনি সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী। এখন নিজের মতো করে ইসলামের ব্যাখা দিয়ে চলছেন।'

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন