17 July 2010

বগুড়া পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ভাগ্নে শহীদ : জেএমবি ১০ বছরের সাংগঠনিক পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া ও বাগমারা (রাজশাহী) প্রতিনিধি | তারিখ: ১৭-০৭-২০১০

১০ বছরের সাংগঠনিক পরিকল্পনা নিয়ে তাঁরা মাঠে নেমেছেন। ওই পরিকল্পনায় নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ—জেএমবির ভেঙে পড়া সাংগঠনিক কমান্ড পুনর্গঠনের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তাঁরা একটি রাজনৈতিক দলের কাছে সহায়তা চেয়েছিলেন। কিন্তু কৌশলগত কারণে দলটি তাঁদের ফিরিয়ে দেয়। জেএমবির ভারপ্রাপ্ত আমির আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ বগুড়ায় রিমান্ড চলাকালে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানান।

জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, শায়খ আবদুর রহমান, বাংলা ভাইসহ জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর মাওলানা সাইদুর রহমান দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেন। তাঁর গ্রেপ্তারের পর ভাগ্নে শহীদও একই পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে থাকেন। এ জন্য তাঁরা একটি রাজনৈতিক দলের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু কৌশলগত কারণে দলটি তাঁদের ফিরিয়ে দেয়।

বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) হুমায়ুন কবির বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ভাগ্নে শহীদের দেওয়া তথ্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ভাগ্নে শহীদকে গত সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর কাছ থেকে তিনটি গুলিসহ একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি মামলা হয়েছে। এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত বুধবার তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আবদুর রশিদ জানান, জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিনে ভাগ্নে শহীদ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিলেও এখন আর মুখ খুলছেন না তিনি। এসএসসি পাস ভাগ্নে শহীদ ইসলামি ও জিহাদি বই ছাড়াও প্রচুর বই পড়েছে।

এসপি হুমায়ুন কবির জানান, ভাগ্নে শহীদের বিরুদ্ধে কতগুলো মামলা রয়েছে, তা জানার জন্য সারা দেশের থানাগুলোতে জরুরি বেতার বার্তা পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, ময়মনসিংহে সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ মামলাসহ সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে চারটি মামলার তথ্য জানা গেছে। মামলাগুলো ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।

এসপি আরও জানান, দলের সাংগঠনিক প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর ভাগ্নে শহীদ সব নেতাকে কিছুদিন আত্মগোপনে থেকে জনগণের সঙ্গে মিশে সদস্য সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর তিনি নিজেও আত্মগোপনের জন্য ঢাকায় চলে যান। কিছুদিন এক আত্মীয়র বাড়িতে আত্মগোপন করে থাকেন তিনি। সেখান থেকে দিনাজপুর ফেরার পথে ভাগ্নে শহীদ বগুড়ায় গ্রেপ্তার হন।

বাগমারার মূর্তিমান আতঙ্ক ভাগ্নে শহীদ: ‘ভাগ্নে শহীদ, কিলার মোস্তাকসহ অন্য জঙ্গিরা আমাকে বাড়ি থেকে ধরে টর্চার সেলে (নির্যাতনকেন্দ্র) নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আমার পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে নির্যাতন চালায় শহীদ। আমার হাতের সব আঙুল থেঁতলে দেওয়া হয়। আমি তাঁর পায়ে ধরে বলি, স্যার, আমি সর্বহারা নই, কেউ আপনাদের মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। কিন্তু তার পরও আমাকে রেহাই দেয়নি শহীদ।’ কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই ভাগ্নে শহীদের নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন রাজশাহীর বাগমারার হাসানপুরের ফজলুর রহমান।

এলাকাবাসী জানান, ভাগ্নে শহীদ বাগমারায় ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। তাঁর গ্রেপ্তারের খবরে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে স্বস্তি নেমে আসে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভাগ্নে শহীদ সব সময় বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। তাঁদের মতে, জঙ্গি আতাউর রহমান সানি ও জামাই আবদুল আওয়ালের চেয়েও বেশি ভয়ংকর ছিলেন ভাগ্নে শহীদ।
আবদুস সালাম নামের নির্যাতিত এক ব্যক্তি বলেন, শহীদের নেতৃত্বে হামিরকুৎসা নির্যাতনকেন্দ্রে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে।

কালুপাড়ার রফিকুল ইসলাম বলেন, ভাগ্নে শহীদের নেতৃত্বে তাঁকে বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়। টর্চার সেলে নিয়ে ভাগ্নে শহীদ তাঁর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালান। নির্যাতন চালিয়ে তাঁকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, বাংলা ভাই বাগমারা থেকে চলে যাওয়ার পর শহীদ দলের হাল ধরেন। এলাকার ক্যাডারদের সঙ্গে তিনিই নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জেএমবি নিষিদ্ধ হওয়ার পরও শহীদের বাগমারায় যাতায়াত ছিল। ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলার আগে বাগমারায় যে গোপন বৈঠক হয়েছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন শহীদ। তাঁরা এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও তাঁদের দপ্তরে পাঠিয়েছিলেন।

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুণ অর রশিদ জানান, ওই সময় ভাগ্নে শহীদের কী ধরনের তৎপরতা ছিল, তা তাঁর জানা নেই। কারণ তিনি ওই সময় এ থানায় ছিলেন না। তবে ভাগ্নে শহীদের নামে থানায় কোনো মামলা বা অভিযোগ রয়েছে কি না, তা খোঁজ করে দেখা হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন