1 July 2010

কঠোর অবস্থানের চিন্তা জামায়াতে: বিএনপির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়

সেলিম জাহিদ

শীর্ষস্থানীয় তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করে দীর্ঘমেয়াদি রিমান্ডে নেওয়ায় হরতাল কর্মসূচি দেওয়াসহ ময়দানে 'শক্ত ভূমিকা' নেওয়ার চিন্তা করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রিমান্ডে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হয়, তার ওপরই মাঠের ভূমিকার ধরন নির্ভর করবে।'

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শীর্ষস্থানীয় তিন নেতাকে গ্রেপ্তারের পর দলের ভবিষ্যৎ করণীয় প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত টানা বৈঠক করেছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটির প্রভাবশালী নেতারা।

জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে নায়েবে আমির অধ্যাপক নাযির আহমদ, মাওলানা আবদুস সুবহান, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. শফিকুর রহমান, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী, আবু নাছের মোহাম্মদ আবদুজ্জাহের, কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি অধ্যাপক তাসনীম আলম, ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, সহকারী সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল, মাওলানা আবদুল হালিমসহ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, আন্দোলন কর্মসূচির প্রশ্নে জামায়াত তাদের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপির সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করবে। গত বুধবার রাতেই জামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে রাত ১১টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা তাঁরা কথা বলেন।

সূত্র জানিয়েছে, কামারুজ্জামান গোটা পরিস্থিতি অবহিত করেন খালেদা জিয়াকে। এ সময় খালেদা জিয়া জামায়াতের দুই নেতার কাছে সরকারের হঠাৎ কঠোর অবস্থান নেওয়ার কারণ জানতে চান।

কামারুজ্জামান বিএনপির চেয়ারপারসনকে বোঝান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অভাবনীয় পরাজয়, সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস, ২৭ জুন স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালন এবং আবারও বিএনপি-জামায়াতের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সূচনায় সরকার নিশ্চিত হয়েছে যে সরকারবিরোধী আন্দোলন এগিয়ে যাবে। আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্যই সরকার উভয় দলের ওপর নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে।

এ বিষয়ে কামারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিএনপির চেয়ারপারসন সরকারের আকস্মিক কঠোর অবস্থান নেওয়ার কারণ বুঝেছেন। এখন তিনি নিশ্চয়ই করণীয় ঠিক করবেন।'

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, 'আমরা শক্ত ভূমিকা নেব। এখন আমরা দেখব রিমান্ডে ওনাদের সঙ্গে সরকার কী আচরণ করে।' কামারুজ্জামানও বলেন, 'তা তো বটেই।'
দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, 'আমরা ভায়োলেন্সে বিশ্বাস করি না। শুক্রবার আমাদের দুই দিনের কর্মসূচি শেষ হবে। নতুন কর্মসূচি আসবে।'

তিন নেতার মুক্তি দাবিতে হরতাল কর্মসূচি থাকবে কি না জানতে চাইলে আজহার বলেন, 'আমরা তো হরতাল চাই না। সরকার এভাবে জুলুম-নির্যাতন করলে অবশ্যই হরতাল দেব।'

তবে কামারুজ্জামান বলেন, 'সরকার চায় আমরা ধ্বংসাত্দক কাজ করি। কিন্তু আমরা সরকারের ফাঁদে পা দেব না। গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে যতটুকু প্রতিবাদ জানানো দরকার, ততটুকুই করব।'

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন